১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ’৭১ সালের এই দিনে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেয়। সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলায় এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম মন্ত্রিসভা দায়িত্ব গ্রহণ করে। বৈধ্যনাথতলার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মুজিবনগর’। ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম এ সরকারকে ‘মুজিবনগর সরকার’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। আমার বিবেচনায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১০ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল সময়কালটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমএমএ এবং এমপিরা বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম নির্বাচিত হন উপরাষ্ট্রপতি। আর তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১১ এপ্রিল বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর তাজউদ্দীন আহমদই তার (বঙ্গবন্ধুর) দেখানো পথে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যান। স্বাধীন বাংলাদেশকে বাস্তবতায় রূপ দেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাজউদ্দীন আহমদ অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর প্রধান এ সেনাপতি ধীরে ধীরে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। একসময় তাজউদ্দীন আহমদ ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে ছিটকে পড়েন। অনেকের সঙ্গে আমিও একমত, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসতই। জাতির পিতা সেভাবেই বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে সংগঠিত করেছেন। ’৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করেছিলেন। এ বাস্তবতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ’৭১-এর পর থেকেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি কুচক্রী মহল বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের তুলনা করার অর্বাচীন ও অপ্রয়োজনীয় চেষ্টা করে। ফলে, তাজউদ্দীন আহমদের কৃতিত্ব বড় করলে বঙ্গবন্ধুর অবদান খাটো করা হবে এরকম একটি ভ্রান্ত এবং বিভ্রান্তিকর ধারণা আওয়ামী লীগের মধ্যে পেয়ে বসে। এ কারণেই স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে উপেক্ষিত হতে থাকেন তাজউদ্দীন আহমদ, মুজিবনগর সরকার। তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার ৯ মাসে বহুমাত্রিক যুদ্ধ করেছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারে খুনি মোশতাক চক্রের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুদ্ধ। মুজিব বাহিনীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব। এসব প্রতিকূলতা জয় করে এগোতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারকে। অনেক ক্ষেত্রে তাজউদ্দীন আহমদ কঠোর ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আপস করেননি। কোনো ছাড় দেননি। এ জন্যই বাংলাদেশ বিজয় লাভের পর তাজউদ্দীন আহমদের বিরোধিতাকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে, চাটুকার এবং ষড়যন্ত্রকারীরা ঘিরে ফেলে বঙ্গবন্ধুকে। খুনি মোশতাক আর বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ছাত্রনেতারা একজোট হন তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে। তাকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিপক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বী বানানোর ষড়যন্ত্র ক্রমেই সফল হতে থাকে। তাজউদ্দীন চাটুকারিতা করতে পারেন না। ভুল তথ্য দিয়ে নেতাকে বিভ্রান্ত করতে পারেন না। নেতাকে অপ্রিয় সৎ পরামর্শ দিতে পিছপা হন না। ফলে ধীরে ধীরে তিনি অপ্রিয় মানুষ হতে থাকেন। খুনি মোশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ওবায়দুর রহমানের মতো চাটুকার তোষামোদকারী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর চারপাশে জাঁকিয়ে বসেন। তাজউদ্দীন সম্পর্কে এত নেতিবাচক এবং অসত্য তথ্য বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হয়, একপর্যায়ে দুই নেতার সম্পর্কে অস্বস্তি তৈরি করে। সৃষ্টি হয় দূরত্ব। বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন আহমদের কাছে কখনো শুনতে চাননি ’৭১-এর ৯ মাস যুদ্ধের মেরুকরণ। কার কী ভূমিকা ছিল। বরং তাকে নানা মনগড়া কল্পকাহিনি শুনিয়েছে খুনি মোশতাক এবং ছাত্রনেতারা। অভিমানী, ব্যক্তিত্ববান তাজউদ্দীনও যেচে বঙ্গবন্ধুকে সেই সময়ের ঘটনাগুলো বলেননি। ফলে মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু একপক্ষীয় খণ্ডিত বক্তব্য পেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকাকালে কখনো মুজিবনগরের আম্রকাননে যাননি। তাকে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের আত্মপ্রকাশের স্থানে না যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা হয়েছিল। দুই নেতার দূরত্বের মধ্যেই ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দীন আহমদকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন বঙ্গবন্ধু। তাজউদ্দীন উপেক্ষার শেষপ্রান্তে গিয়ে দাঁড়ান। রাজনীতিতে কোণঠাসা হতে হতে তিনি অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়েন। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর তাজউদ্দীন গ্রেপ্তার হয় প্রমাণ করেন নেতার যোগ্য সহচরদের আসল পরিচয় দুঃসময়ে। ৩ নভেম্বর ’৭৫-এ জেলে শহীদ হয়ে তিনি প্রমাণ করেন, আদর্শবানরা কঠিন সময়ে প্রাণ দেয়, চাটুকাররা বিশ্বাসঘাতক হয়। ৭৫-পরবর্তী সময়ে জোহরা তাজউদ্দীন যদি আওয়ামী লীগের হাল না ধরতেন, তাহলে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তাজউদ্দীনের পুনর্মূল্যায়নও হতো না। আজ তাজউদ্দীন জাতীয় চার নেতার সম্মান পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বগাথা আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন। কিন্তু আমার কাছে তাজউদ্দীন আহমদ শুধু একজন ব্যক্তি নন, একটি প্রতীক। সৎ মেধাবী, আদর্শের প্রশ্নে অটল নেতাকর্মীদের প্রতীক তাজউদ্দীন। যেসব রাজনীতিবিদ চাটুকারিতা আর তোষামোদ করে পদ-পদবি হাসিল করতে চান না, তারাই তাজউদ্দীন। নেতার ভালোর জন্য নেতাকে যৌক্তিক সমালোচনা এবং অপ্রিয় পরামর্শ দিতে যারা পিছপা হন না, তারাই তাজউদ্দীন। নেতার নির্দেশ বাস্তবায়নে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকে তারাই তাজউদ্দীন। রাজনীতিতে যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত, আদর্শবান তারাই তাজউদ্দীন। কঠিন সময়ে যারা পালায় না বা রংবদল করে না, দৃঢ় প্রত্যয়ে নেতার আদর্শের জন্য লড়াই করে, তারাই তাজউদ্দীন। যে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য তাজউদ্দীন আহমদের মতো নেতাকর্মীরা অমূল্য সম্পদ। এরাই দলকে এগিয়ে নেয়। বিজয়ী করে। আওয়ামী লীগে সারা দেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন তাজউদ্দীন আহমদের মতো নিঃস্বার্থ, ত্যাগী কর্মী, নেতা। এরাই আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা। এদের জন্যই ’৭৫-এর পর কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আমি এক অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করি। দুঃসময়ে তাজউদ্দীনরাই লড়াই করে আর সুসময়ে তারা দূরে সরে যায়, উপেক্ষিত হন। অনাদরে অবহেলায় দীর্ঘশ্বাস নেন। সুসময় এলেই আওয়ামী লীগে ভিড় করে অতিথি পাখিরা, চাটুকার, সুবিধাভোগীরা। আগে এসব মতলববাজ শুধু ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশে ঘুরঘুর করত। এখন তৃণমূল পর্যন্ত এরা ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃসময়ের তাজউদ্দীনরা সুসময়ে এসে নব্য মোশতাকদের কাছে ভীষণ কোণঠাসা। আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে এসেছে কতগুলো কঠিন সময় পার করে। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। আওয়ামী লীগে বিভক্তি, আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন। ’৯১-এর নির্বাচনে বিপর্যয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবে নির্যাতিত আওয়ামী লীগ। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ২০০৭ সালে এক-এগারো। এই প্রতিটি কঠিন সময়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি ধারা লক্ষ করেছি। একটি ধারার নেতাকর্মীরা কঠিন সময়ে নেতার পাশে অবিচল থেকেছে। নেতার নির্দেশ পালন করেছে। আদর্শের জন্য লড়াই করেছে। নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করেও আপস করেনি। আরেকটি ধারা, কঠিন সময়ে পালিয়েছে। আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে নেতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। নেতার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে। আপস করেছে। এর বাইরে আওয়ামী লীগে একটা অদ্ভুত প্রজাতি রয়েছে। এরা অনেকটা সাইবেরিয়া থেকে আসা শীতের পাখিদের মতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে। ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশ দখল করে। মধু খায়। মধুর কথায় নেতাদের বশীভূত করে। তাদের চাটুকারিতা আর ভণ্ডামিতে নেতারা সম্মোহিত হন। তখন কঠিন দিনের তাজউদ্দীনদের চেনে না নেতারা। গত ১৪ বছরে এই ‘নব্য’রাই ক্ষমতাবান হয়ে গেছে। বিভিন্ন সংকটে যারা লড়াই করেছে তারা এখন বিতাড়িত। বিভিন্ন সংকটে যারা বিভ্রান্ত ছিলেন, তারাও এখন নব্য আওয়ামী লীগারদের পেছনে চলে গেছে। এদের কেউ কেউ অবশ্য এখন নব্য আওয়ামী লীগারদের মতো বীভৎস তোষামোদির পথ বেছে নিয়েছে। ফলে ন্যায়নিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এখন বহুদূরে। শুধু সরকারে না, তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো এখন হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগারদের দখলে। এটা আওয়ামী লীগের জন্য অশনিসংকেত। যখনই সুবিধাবাদী, তোষামোদকারী, চাটুকাররা আওয়ামী লীগে প্রভাবশালী হয়েছে, তখনই মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি বিপর্যয়ে পড়েছে। বিপর্যয়ে অপাঙ্ক্তেয় ত্যাগীরা এসে হাল ধরেছে, চাটুকার নব্য মোশতাকরা হয় পালিয়েছে না হয় দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি সংকটের কথা বলছেন। ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন। নির্বাচনে আগে চক্রান্ত হবে বলে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করছেন। এখনই সময়। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীদের চিহ্নিত করার। চাটুকারদের দূরে সরিয়ে ত্যাগী পরীক্ষিতদের সামনে আনার। নব্য মোশতাকরা যেন সরকারপ্রধানকে ঘিরে ফেলতে না পারে, তা নিশ্চিত করার। ক্ষমতাকেন্দ্রে মতলববাজদের হটিয়ে যোগ্যদের আনার এই তো সময়। না হলে দেরি হয়ে যাবে। নব্য আওয়ামী লীগাররা শুধু ক্রিম খাবে। এরাই নব্য মোশতাক। আর দুঃসময়ের কাণ্ডারিরা সংকট উত্তরণে মরণপণ লড়াই করবে। যেমন করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালে। মুজিবনগর দিবসে তাই ত্যাগী, আদর্শবান, নির্ভীক নেতাকর্মীদের দিন। নব্য মোশতাক আর লুটেরাদের প্রতিহত করার দিন। আওয়ামী লীগ কি পারবে সেটা করতে?
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে
যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি।
কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন।
সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ
অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে
(বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ছবি প্রকাশ না
হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা মেজর (অব.) হাফিজ বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। মেজর হাফিজ এখন যা বলছেন,
বিষয়টি যদি তেমনি সাদামাটাই হতো, তাহলে সাকিব নাটক তিনি এতদিন গোপন করতেন না। তিনি
যদি তখন এটাকে ‘সরকারের চক্রান্ত’ মনে করতেন, তাহলে তখনই তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে
দিতেন সরকার তাকে কেনার চেষ্টা করছে। সরকারকে বেইজ্জত করার এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া
করবেন কেন? এ নিয়ে হৈচৈ করে তিনি বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করতেন। তারেক রহমানের
ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনএম কেলেঙ্কারি, সাকিবের সঙ্গে
ফটোসেশনের ঘটনা গোপন কুঠিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।
এখন যখন দুষ্ট লোকেরা তার এসব গোপন
প্রণয়ের দুর্লভ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তখন মেজর (অব.) হাফিজ এসবকে
চক্রান্ত বলছেন। এখন কেন? যখন এসব খেলা চলছিল তখন কেন হাফিজ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন?
হাফিজ উদ্দিন যখন বিদেশ থেকে এসে স্বল্পমেয়াদে কারাবরণ করে ‘পবিত্র’ হলেন, তখন বিএনপি
নেতাদের উল্লাস চাপা থাকেনি। বিএনপির নেতারা মনে করলেন বিএনপিতে আরেক খাঁটি সোনা পাওয়া
গেল। নবরূপে আত্মপ্রকাশের পর নব্য জ্যোতিষীর মতো তিনি ঘোষণা করলেন, বিএনপি নাকি খুব
শিগগির ক্ষমতায় আসছে। অল্পদিনের মধ্যে সরকার পতনের বিষয়টিও তার জ্যোতিষী বিদ্যায় ধরা
পড়ল। বিএনপির আধমরা নেতাকর্মীরা খানিকটা হলেও উদ্ভাসিত হলেন। আবার কিছু একটা হবে, এই
স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন বিএনপির হতাশাগ্রস্ত কর্মীরা। নির্বাচনের আগে হাফিজ উদ্দিন
কী বলেছিলেন, তা ভুলে গেলেন অনেকে।
আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই। ৭ জানুয়ারির
নির্বাচনের আগে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি
বিএনপির আন্দোলনের কৌশলের সমালোচনা করেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক
নয় বলে মন্তব্য করেন। মেজর (অব.) হাফিজের ইউটার্ন যে দেনা-পাওনার হিসাব না মেলাজনিত,
এটা বুঝতে সাকিবের সঙ্গে বিএনপি এই নেতার ছবি ভাইরাল হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কর্মীদের
অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওই ছবি প্রকাশের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারলেন যে,
তারা মেজর (অব.) হাফিজের কাছে ধোঁকা খেয়েছেন। ধোঁকা যে শুধু বিএনপি খেয়েছে এমন নয়।
মেজর (অব.) হাফিজও ‘ডাবল’ ধোঁকা খেয়েছেন। প্রথম ধোঁকা হলো, যে প্রলোভনে তাকে কিংস পার্টিতে
ভেড়ানোর কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত সেই উপঢৌকন তাকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ধোঁকা, বিএনপিতে
আবার যখন তিনি জাঁকিয়ে বসতে শুরু করলেন, তখনই গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে বেইজ্জত
করা হলো। বিএনপির জন্য এ ঘটনা ছোট ধোঁকা। গত কুড়ি বছর ধোঁকায় ধোঁকায় জর্জরিত বিএনপি।
বারবার ধোঁকা খেতে খেতে দলটি রীতিমতো গর্তে পড়েছে। ভুল লোককে বিশ্বাস করে বিএনপি ধোঁকা
খেয়েছে। ভুল বন্ধুকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে বিএনপি
বিপর্যস্ত হয়েছে।
২০০১ সালের অক্টোবরে জামায়াতকে সঙ্গে
নিয়ে ভূমিধস বিজয় লাভ করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী ৪২
বছর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ অচিরেই মুসলিম লীগে পরিণত হবে।
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিএনপি নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা
বাড়াতে সংবিধানে সংশোধন করে। ভোটার তালিকায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের নাম সংযোজন করে।
ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন তার পুত্রের পরামর্শে সাতজনকে ডিঙিয়ে
মঈন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেন। মঈন ইউ আহমেদ বিএনপিকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য
করবে, এমন ভাবনা থেকেই তাকে সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু এই জেনারেল বিএনপিকে এমন ধোঁকা
দেয় যে, দলটির কোমরই ভেঙে যায়।
এখনো ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘ ১৭ বছর থাকা
দলটি সেই ভাঙা কোমর আর সোজা করতে পারেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা
চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু এরকম ব্যক্তিত্ববান রাষ্ট্রপতি বিএনপির
পছন্দ নয়। বিএনপি বেছে নিল পদলেহী একান্ত অনুগত ব্যক্তিত্বহীন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের
মতো রাষ্ট্রপতি। অধ্যাপক বদরুদ্দোজাকে সরিয়ে ইয়াজউদ্দিনের মতো জি হুজুর মার্কা রাষ্ট্রপতি
বানিয়ে বিএনপি খুশিতে আত্মহারা। এরকম একান্ত বাধ্যগত রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান
করে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ক্ষমতার সুবাস পেতে শুরু করলেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন
তাদের ধোঁকা দিলেন। বড় ধোঁকা। এই ধোঁকায় বিএনপির সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল। বিএনপি
আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইয়াজউদ্দিনের মতো ব্যক্তিত্বহীনরা যে কঠিন সময়ে কোনো সাহায্য
করতে পারে না, এটা বুঝতে বিএনপি অনেক দেরি করে ফেলেছিল। বিএনপির ‘ধোঁকা’ গল্পের এখানেই
শেষ নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।
২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি
নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। এ সময় ব্যাকফুটে থাকা আওয়ামী
লীগ, নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার
প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের
দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর বিএনপি কেন জাতীয়
সংসদ নির্বাচন বর্জন করল? সেই ‘ধোঁকা’। বিএনপিকে কেউ কেউ বুঝিয়েছিল, কোনোভাবেই নির্বাচনে
যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে না গেলেই সরকারের পতন ঘটবে। একতরফা নির্বাচন দেশে-বিদেশে
গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যস। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার খোয়াব দেখে, বিএনপি আন্দোলন
শুরু করল। অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর, গান পাউডার দিয়ে গণপরিবহনে আগুন দিয়ে একটা ত্রাসের
রাজত্ব সৃষ্টি করল। জাতীয় পার্টিও মনে করল, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না। এরশাদও নির্বাচন
থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। রওশন এরশাদ থাকলেন নির্বাচনের পক্ষে। ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে
নির্বাচিত হলেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু সরকারের পতন হলো না। আওয়ামী লীগ দিব্যি পাঁচ বছর
দেশ পরিচালনা করল।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক
বছর পর আবার ধোঁকা খেল বিএনপি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেন
খালেদা জিয়া। তিনি নিজেও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থান
করে তিনি ধমক দিলেন, গাড়ি পোড়ালেন, বোমাবাজি আর আগুন সন্ত্রাস করে জনজীবন বিপর্যস্ত
করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু জনগণ প্রত্যাখ্যান করল এই সহিংস রাজনীতি। একপর্যায়ে বিএনপির
সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল সাধারণ জনগণ।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি
মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এক-এগারো সরকারের সময়। ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ২০০৭ সালে
এই মামলা করে। বিএনপির আইনজীবীরা এই মামলা নিয়ে খালেদা জিয়াকে ধোঁকা দিলেন। বারবার
মামলার তারিখ নেন, কথায় কথায় হাইকোর্টে যান। মামলাটি বিএনপির আইনজীবীরা এমন নাজুক জায়গায়
নিয়ে যান যে, খালেদা জিয়ার শাস্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। ২০১৮ সালে মামলার
রায়ের আগে তিনি লন্ডনে গেলেন পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে। শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকে পরামর্শ
দিলেন মামলার রায় পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) যেন লন্ডনেই অবস্থান করেন। রায়ে দণ্ড
হলে একটা সমঝোতা করে দেশে ফেরার পরামর্শ দিলেন তারা। কিন্তু ধোঁকাবাজরা খালেদা জিয়াকে
দিলেন ভুল পরামর্শ। তারা বললেন, দেশেই ফিরতে হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টাও জেলে
রাখতে পারবে না। এর মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলেই নাকি জনবিস্ফোরণ
ঘটবে। খালেদা জিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনলেন না, শুনলেন ধোঁকাবাজদের কথা। দেশে ফিরলেন।
মামলার রায়ে দণ্ডিত হলেন। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হলো টানা দুই বছর। বিএনপি
একটা টুঁ শব্দ করতে পারল না। আইনি লড়াইয়েও খালেদা জিয়া হেরে গেলেন। ধোঁকাবাজদের খপ্পরে
পরে খালেদা জিয়ার রাজনীতি আজ শেষ হয়ে গেছে। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন
হচ্ছে। তার ভাই সরকারের কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করছেন। বিএনপির আন্দোলন বা আইনি লড়াইয়ে
নয়, সরকারের করুণায় খালেদা জিয়া এখন তার সব রাজনৈতিক অর্জন বিসর্জন দিয়ে ফিরোজায় থাকছেন।
এই ধোঁকা বিএনপিকে কোমায় নিয়ে গেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে ধোঁকা
খেয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৮ সালে ধোঁকা খায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে
অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি কোনো শর্ত ছাড়াই। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও
বিএনপি নেতারা উচ্চারণ করেননি সরকারের সঙ্গে সংলাপে। ওই নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে লাথি দিয়ে বিদায় করে সারা
জীবন ‘বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে বিশ্বাসী ড. কামাল হোসেনকে নেতা মানে বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের
নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ওই নির্বাচনে মাত্র ছয় আসন পেয়ে লজ্জায়
ডুবে যায় দলটি। বিএনপি নেতারাই বলেন, এটা ছিল স্রেফ ধোঁকা। আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায়
আনতে সাজানো নাটকে বিএনপিকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল, এমন কথা বিএনপি নেতারাই প্রকাশ্যে
বলেন। ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে কীভাবে ধোঁকা দিল এ গল্প করে বিএনপি নেতারাই লজ্জায়
মুখ লুকান।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি ‘তওবা’ করে। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০২১ সালের শেষ থেকে শুরু করে আবার আন্দোলন। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখায়। আস্তে আস্তে পশ্চিমাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গাঢ় হয়। বিএনপি নেতারা সকাল-সন্ধ্যা কূটনীতিকপাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাতরাশ সারেন, নৈশভোজে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দূতের বাসায়। বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একতরফা নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবে না ইত্যাদি নানা আতঙ্ক বাণী চারদিকে উচ্চারিত হতে থাকে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন ইত্যাদি নিয়ে চলে তুলকালাম তর্কবিতর্ক। বিএনপি নেতারা খুশিতে আত্মহারা। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। অতি আত্মবিশ্বাসে ২৮ অক্টোবর সহিংস হয়ে ওঠে তারা। তারপর নির্বাচন। আবার ধোঁকা খায় বিএনপি। বিএনপি মনে করেছিল, একতরফা নির্বাচন করলেই মার্কিন অ্যাকশন শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞা আসবে। কিন্তু কোথায় নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ অভিনন্দন বাণীতে ভরিয়ে তুলল নতুন সরকারকে। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ জানাল বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী দেশ। বিএনপি ধোঁকা খেল আবারও। এবার ধোঁকায় একেবারে গর্তে পড়ে গেছে দলটি। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বারবার কেন ধোঁকা খায় বিএনপি? এর কারণ একটাই, আদর্শহীন রাজনীতি এবং যে কোনো ধরনের ক্ষমতায় যাওয়ার উদগ্র বাসনা। বিএনপিতে যদি ন্যূনতম আদর্শ চর্চা থাকত, তাহলে এভাবে বারবার প্রতারিত হতো না। ভুল মানুষের হাত ধরে ভুল পথে পা বাড়াত না। আদর্শহীন রাজনীতির পরিণতির উদাহরণ বিএনপি।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আদালত হাইকোর্ট
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি। কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর এখন সবচেয়ে সুসময় কাটাচ্ছে। টানা ১৫ বছরের বেশী সময় ক্ষমতায়। বাঁধাহীন ভাবে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। মাঠে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার মতো কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। সংসদেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ। কোথাও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। আওয়ামী লীগের কোন চাপ নেই, নেই উৎকণ্ঠা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটি আরো নির্ভার। কিন্তু এই সুসময়ে আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে একটু ভয়ও হয়। এই আওয়ামী লীগ কি সেই আওয়ামী লীগ?
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী তারা। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। আদর্শের প্রশ্নে তারা কখনও আপস করেননি। কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগে অনাহূত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা জায়গা পান না, এমপি হতে পারেন না। মন্ত্রিসভা তো অনেক দূরের কথা। অথচ তাদের চেয়ে কম উজ্জ্বল নেতারা এখন মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। দলে এবং সরকারে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের কি অপরাধ কেউ জানে না। অথচ কর্মীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়েই তারা থাকতে চান এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। হৃদয়ে ক্ষোভ হতাশা থাকলেও মুখে তাদের হাসি থাকে। তারা তাদের দুঃখ হতাশার কথা কাউকে বলেন না।