২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একটি অনন্য,
অসাধারণ দিন। এ দিনটি
শুধু একজন রাষ্ট্রপতির অভিষিক্ত
হওয়ার দিন নয়। গণতন্ত্র
কি অপূর্ব, কি বিশাল তা
উপভোগ করার দিন। ওইদিনের
একটি ছবি আমার হৃদয়ের
ফ্রেমে আটকে আছে। ছবিটিতে
দেখা যাচ্ছে, একটি হুডখোলা গাড়িতে
সস্ত্রীক বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ফুলশোভিত গাড়িটি টেনে নিয়ে যাচ্ছেন
বঙ্গভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। শেষবারের
মতো আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের দিকে ফিরে তাকালেন।
তার মুখে অমলিন হাসি।
রাজসিক বিদায় নিয়ে আবদুল হামিদ
বঙ্গভবন ত্যাগ করলেন। রাষ্ট্রপতির পালাবদলের এ আয়োজন শুধু
আবদুল হামিদকে সম্মানিত করেনি, এ দেশের জনগণকেও
সম্মানিত করেছে। গণতন্ত্রকে করেছে মহিমান্বিত। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে নানা কথা
শোনা যায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা
দেশগুলো প্রায়ই বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের সবক দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট এখন বিশ্ব গণতন্ত্রের
ঠিকাদারি নিয়েছেন। তার উদ্যোগে গত
দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র
গণতন্ত্র সম্মেলনের আয়োজন করছে। এ গণতন্ত্র সম্মেলনে
বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না। বাংলাদেশে
সংকুচিত গণতন্ত্র নিয়ে নানা আলাপ-আলোচনা শুনি। কান পাতলেই শোনা
যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে
নানা নসিহত। বাংলাদেশে গণতন্ত্র টিকবে কি না কিংবা
দেশে আদৌ গণতন্ত্র আছে
কি না, এ নিয়ে
নিদ্রাহীন উত্তেজনা সুশীল এবং কূটনীতিকদের। গণতন্ত্র
নিয়ে এরকম আর্তনাদের মধ্যেই
গণতন্ত্রের অপূর্ব এক রূপ দেখাল
বাংলাদেশ। মোঃ আবদুল হামিদের
রাজসিক বিদায়ের দৃশ্য যখন সরাসরি দেখছিলাম
টেলিভিশনের পর্দায়, ঠিক তখন আমি
স্মৃতিক্রান্ত হলাম। ২০২১ সালের ২০
জানুয়ারির একটি পালাবদলের দৃশ্য
আমার স্মৃতির অ্যালবামে ভেসে উঠল। বিতর্কিত
ও প্রশ্নবিদ্ধ এক নির্বাচনের মাধ্যমে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জো বাইডেন।
ফক্স নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ৬৩
ভাগ জনগণ মনে করেন,
ওই নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ২০২০-এর নভেম্বরের নির্বাচন
হলো এক জালিয়াতির নির্বাচন।
তিনি এটিও বলেছেন, ওই
নির্বাচনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রকে কবর দেওয়া হয়েছে।
এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকরা
ওই নির্বাচন মেনে নেননি। ২০২০-এর নভেম্বরের নির্বাচনের
পর নানা নাটকীয়তা, বিতর্ক,
উত্তেজনা, হানাহানির পর ২০ জানুয়ারি
শপথ নেন জো বাইডেন।
মার্কিন রীতি অনুযায়ী শপথ
অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকেন। পরাজিত প্রার্থীও থাকেন। এটাই গণতন্ত্রের গৌরব।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে
অভিষিক্ত হয়েছিলেন, তখন বারাক ওবামা
তাকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানিয়েছিলেন। শপথ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন
বেশি ভোট পেয়েও পরাজিত
হিলারি ক্লিনটন। কিন্তু ২০২১ সালের শপথ
অনুষ্ঠান ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই শপথ অনুষ্ঠানে
যাননি। নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট
হাউসে স্বাগত জানাননি ট্রাম্প। সকালেই তিনি তার সব
ব্যক্তিগত সামগ্রী সরিয়ে একটি সামরিক বিমানে
হোয়াইট হাউস থেকে বিদায়
নেন। যারা আমাদের সকাল-বিকেল গণতন্ত্রের শিক্ষা দেয়, তাদের প্রেসিডেন্ট
বদল হয় ঘৃণা, বিদ্বেষ,
অবিশ্বাস আর অভিযোগের আবর্জনার
মধ্যে। আর আমরা রাষ্ট্রপতি
বদলে বিশ্বের জন্য এক দৃষ্টান্ত
উপস্থাপন করলাম। সারা বিশ্বকে দেখিয়ে
দিলাম আমরাও পারি। নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের
গণতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছুর মধ্যেও গত প্রায় ১৫
বছর বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার
মধ্যে আছে। ধারাবাহিক গণতন্ত্র
যে পরমতসহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার মূল্যবোধ শক্তিশালী করে, রাষ্ট্রপতি আবদুল
হামিদের বিদায় তার প্রমাণ। গণতান্ত্রিক
প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলতে আমাদের
এ ধারাবাহিকতা অত্যন্ত জরুরি। অনির্বাচিত ভাড়াটে পাহারাদার দিয়ে গণতন্ত্র ঠিকঠাক
করা যায় না। গণতন্ত্র
নানা বাঁক পরিবর্তন করে,
হোঁচট খেয়ে আস্তে আস্তে
বিকশিত হয়। অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী
অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘সবচেয়ে
খারাপ গণতন্ত্রও অনির্বাচিত একনায়কতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার চেয়ে ভালো।’ তার
বক্তব্য আবারও সত্য প্রমাণিত হলো
বাংলাদেশে, আবদুল হামিদের বিদায়ের মধ্য দিয়ে। একজন
রাষ্ট্রপতি বিদায় আয়োজন আমাদের দুটি শিক্ষা দিল।
প্রথমত,
গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বেশি
প্রয়োজন ধারাবাহিকতা। গণতন্ত্র বহতা নদীর মতো।
বাধাহীন নদীর স্রোত যেমন
সব আবর্জনা সরিয়ে প্রবাহিত হবেই। গণতন্ত্র ঠিক তেমনি। অযথা
বাঁধ দিয়ে, নদী শাসন করে
যেমন নদীকে ঠিকঠাক করা যায় না,
নদী মরে যায়, ঠিক
তেমনি পণ্ডিতদের নির্দেশ আদেশ পরামর্শ দিয়ে
গণতন্ত্রকে শুদ্ধ করা যায় না।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র রীতিসম্মত, কেতাদুরস্ত করতে কম নিরীক্ষা
হয়নি। কিন্তু এসবের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার। গণতন্ত্রকে পবিত্র করতে উর্দি পরা
সামরিক একনায়করা ক্ষমতা দখল করেছেন। বুটের
তলায় পিষ্ট করেছেন সংবিধান, মানবাধিকার। ‘মিলিটারি ডেমোক্রেসি’ গণতন্ত্রকে পচা দুর্গন্ধময়, দূষিত
করেছে। জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্রের
নামে যুদ্ধাপরাধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসিত করেছেন। ক্যান্টনমেন্টে বসে দল গঠন
করেছেন। রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করতে গিয়ে কালো
টাকা পেশিশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছেন রাজনীতিতে। দূষিত রাজনীতি কখনো গণতন্ত্রকে বিকাশ
করতে পারে না। এরশাদ
ধর্মের ককটেলে গণতন্ত্রকে বিষাক্ত করেছেন। দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের রাজনীতিতে এনে, রাজনীতিকে ব্যবসা
হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে গণতন্ত্রের রক্ষক করা হয় সুশীল
মাস্টার মশাইদের। জনসম্পৃক্তহীন এ গণতন্ত্রের শিক্ষকরা
বিনাভোটে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বেসামাল হয়েছেন।
রক্ষকরা অতি লোভে যে
কী ভয়ংকর ভক্ষকে পরিণত হন, ২০০৭ সালের
এক-এগারো তার প্রমাণ। গণতন্ত্র
রক্ষার জন্য, গণতন্ত্রের নামে ৭৫-এর
পর থেকে বাংলাদেশে যতরকম
পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রই হোঁচট
খেয়েছে। হয়েছে বিপন্ন। বিভিন্ন সময়ে জনগণের নামে
যারা গণতন্ত্রকে মেরামত করার ঘোষণা দিয়েছেন,
তারাই জনগণের শাসনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছেন।
গণতন্ত্রকে আপন গতিতে চলতে
দিলে তা প্রস্ফুটিত হবেই,
আবদুল হামিদের বিদায় তার প্রমাণ। গত
১৫ বছর বাংলাদেশের নির্বাচন,
সুশাসন, জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে নানা অভিযোগ
আছে। আছে নানা ভুলত্রুটি।
কিন্তু এসব সংশোধনের জন্য
পশ্চিমা দাওয়াই দরকার নেই। প্রয়োজন নেই
সুশীল শিক্ষক। গণতন্ত্র এতই শক্তিশালী যে,
সে তার ক্ষতগুলোকে নিজেই
সারাতে পারে। পুকুরে মাছ চাষ যেমন
হাইব্রিড মাছের জন্ম দেয়, তেমনি
তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পশ্চিমাদের পাঠ্যপুস্তকের
গণতন্ত্র শুধু ‘হাইব্রিড গণতন্ত্র’ দেয়। মুক্ত গণতন্ত্র
দিতে পারে না। তাই
আবদুল হামিদের বিদায় আমাদের শেখাল অব্যাহত, বিরতিহীন গণতন্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তা।
রাষ্ট্রপতি
হিসেবে আবদুল হামিদ দায়িত্ব পালন করেছেন ১০
বছর ৪১ দিন। বাংলাদেশে
এত দীর্ঘ সময় কেউ রাষ্ট্রপ্রধানের
দায়িত্ব পালন করেননি। শুধু
বাংলাদেশ কেন, এ উপমহাদেশে
তার অর্জন তুলনাহীন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের শেষ পর্যায়ে গত
একুশের বইমেলায় তার একটি গ্রন্থ
প্রকাশিত হয়। ‘আমার জীবননীতি,
আমার রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্থটি আবদুল হামিদের জীবনীমূলক। মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়
পর্যন্ত তার জীবন ও
রাজনীতি সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি
তুলে ধরেছেন এ গ্রন্থে। আবদুল
হামিদ তৃণমূল থেকে উঠে আসা
একজন কাদামাটি গায়ে মাখা রাজনীতিবিদ।
ছাত্র হিসেবে মেধাবী নন। কিন্তু তিল
তিল করে রাজনীতিতে তিনি
হয়ে উঠেছেন এক অনুকরণীয়। তার
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দেশের রাজনীতিবিদদের
জন্য এক প্রয়োজনীয় শিক্ষা।
জনগণের সঙ্গে অকৃত্রিমভাবে মিশে থাকলে একজন
রাজনীতিবিদকে জনগণ কখনো প্রত্যাখ্যান
করে না। আবদুল হামিদ
তার বড় প্রমাণ। ১৯৭০
সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রাবস্থায় জাতীয় প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করেছিলেন। সবচেয়ে কম বয়সে প্রাদেশিক
পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন। সেখান থেকে শুরু। সর্বশেষ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন
২০০৮ সালে। জীবনে কোনো নির্বাচনে পরাজিত
হননি। এর কারণ ভাটির
জনগণ আবদুল হামিদকে তাদেরই একজন মনে করতেন।
একজন রাজনীতিবিদের অমরত্ব লাভের সূত্র দিয়ে গেছেন তিনি।
সূত্রটি হলো—জনগণের সঙ্গে
মিশে থাকতে হবে। জনগণের আপন
মানুষ হতে হবে। জনগণের
আপন মানুষের শেষটা কতটা বর্ণাঢ্য হতে
পারে, ২২তম রাষ্ট্রপতির বিদায়
আনুষ্ঠানিকতা তার প্রমাণ।
আবদুল
হামিদের রাজনৈতিক জীবনে দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো আদর্শের প্রশ্নে
অটল থাকা। বিচ্যুতি এবং বিভ্রান্তিহীন এক
রাজনৈতিক জীবন। আদর্শের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি
মাটি ও মানুষের এ
সন্তান। ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ-লালসার কাছে
আদর্শ বিকিয়ে দেননি। ৭৫-এ খুনি
মোশতাকের সঙ্গে হাত মেলাননি। বাকশালের
অতি বিপ্লবে হঠকারিতায় আবদুল হামিদের পা পিছলে যায়নি।
৯১-এর নির্বাচনের পর
ড. কামালের ‘সুশীল গণতন্ত্রে’ শিহরিত হননি। এক-এগারোর সময়
অগ্রজ নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সংস্কারপন্থি হননি।
সোজা সরল পথে চলেছেন
সারা জীবন। এমনকি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরও প্রলোভন ছিল।
নিজে ক্ষমতাবান হয়ে গণতন্ত্রের টুঁটি
চেপে ধরতে পারতেন। কিন্তু
তা করেননি। আস্থা, বিশ্বাস এবং আদর্শবাদিতার এক
অসামান্য নজির স্থাপন করে
বিদায় নিলেন আবদুল হামিদ। একজন রাজনীতিবিদ আদর্শের
প্রশ্নে অটল থাকলে যে
সম্মানের এভারেস্টে চড়তে পারেন, আবদুল
হামিদ তার প্রমাণ।
আবদুল হামিদের আলোকিত বিদায় আসলে অবাধ ও ধারাবাহিক গণতন্ত্রের বিজয়। বঙ্গভবন থেকে তার গর্বিত প্রস্থান তৃণমূলের ত্যাগী, সৎ, আদর্শবান রাজনীতিবিদদের আশার আলো। উর্দি পরা সামরিক জান্তা, স্যুট-টাই পরা সুশীল কিংবা লুটেরা কালো টাকার মালিকরা নয়—গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে পারে তৃণমূল থেকে উঠে আসা জনগণের আপন মানুষরা, রাজনীতিবিদরা। গণতন্ত্র সৌন্দর্য পায় রাজনীতিবিদদের হাতেই।
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।
প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই।
তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়?