গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলমের। গতকাল তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করেছেন। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার সাবেরুল ইসলাম শুনানি শেষে তার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। ফলে আপাদত প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই জাহাঙ্গীর আলমের। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন তার জন্য একটিই পথ খোলা আছে। আর তা হলো হাইকোর্টে রিট আবেদন করা। সেটি জাহাঙ্গীর করবেন কি না তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, তাকে যারা আত্মহননের পথে ঠেলে দিচ্ছেন তাঁরা তাকে রিট করারও পরামর্শ দিতে পারেন। জাহাঙ্গীরপন্থীরা কেউ কেউ তাকে বুঝাচ্ছেন যে কোনো মূল্যে তাকে প্রার্থী হতে হবে। প্রার্থী হলেই তার রাজনৈতিক কদর বাড়বে। দর কষাকষি করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসা সম্ভব হবে। কিন্তু যদি এই অবস্থায় জাহাঙ্গীর প্রার্থী না হয় তাহলে তার আওয়ামী লীগের রাজনীতি তো শেষ হবেই, সাথে তার রাজনৈতিক অধ্যায়েরও পরিসমাপ্তি ঘটবে। এরকম পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর তার গডফাদারের সাথে পরামর্শ করার কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এবার গডফাদারও তার ফোন ধরছেন না, তাকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
উল্লেখ্য যে, একজন গডফাদারের হাত ধরেই আওয়ামী লীগের রাজিনীতিতে জাহাঙ্গীরের উত্থান। জাহাঙ্গীর ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। এসময় তিনি জুট ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল বিত্তের মালিক হন এবং আওয়ামী লীগের একজন অতি গুরুত্বপূর্ণ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। ঐ নেতার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠতার ফলে দ্রুত রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরের উত্থান হয় এবং তিনি গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান। ২০১৮ নির্বাচনে দলের ত্যাগী পরিক্ষিত নেতা আজমত উল্লাহকে বাদ দিয়ে জাহাঙ্গীরককে মনোনয়ন দেয়ার পেছনেও ঐ নেতার বড় ধরনের ভূমিকা ছিলো। কিন্তু মেয়ার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর যখন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেন তখন ঐ নেতা আর তার পাশে দাঁড়ান নি। বরং যে সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেন সেই সভায় তিনি নীরবতা পালন করেছিলেন।
অবশ্য এরপর জাহাঙ্গীরকে আবারও দলে ফিরিয়ে নেয়া আসার পেছনে তার গডফাদারের ভূমিকা ছিলো বলে কেউ কেউ মনে করেন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাধারণ ক্ষমার আওতায় জাহাঙ্গীর আবার দলের প্রাথমিক সদস্য পদ ফিরে পান। ঐ সময় তিনি সাধারণ ক্ষমার জন্য আবেদনে বলেছিলেন যে ভবিষ্যতে কোনোদিন দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ করবেন না কিন্তু জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পরপরই সিটি নির্বাচন নিয়ে তিনি যা করেছেন তা অমার্জনীয় বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এরকম পরিস্থতিতে ঐ গডফাদার জাহাঙ্গীরের পাশে আর দাড়াচ্ছেন না, তাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন, গডফাদারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাহাঙ্গীরের উত্থান ঘটেছিলো। তিনি এরকমই, সু-সমইয়ে পাশে থাকেন বটে তবে দুঃসময়ে তিনি দূরে সরে যান। এবারও জাহাঙ্গীর তার কঠিন সময়ে তার গডফাদারকে পাচ্ছেন না।
এখন প্রশ্ন হলোম জাহাঙ্গীরের রাজনীতির পরিণতি কি? জাহাঙ্গীর যেটা আশা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একটা দর কষাকষি করবেন। নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারেন, তিনি দলের একটা পদ-পদবি পাবেন। কিন্তু তার সেই আশায় গুড়েবালি। এখন জাহাঙ্গীরের উপর আওয়ামী লীগ বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে। জাহাঙ্গীরের এখন দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। কিন্তু এখন গাজীপুরের রাজনীতিতে যে অবস্থা তাতে জাহাঙ্গীর যদি প্রার্থী হয় তবে গোটা গাজীপুর আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অবস্থান করবে। জাহাঙ্গীরের তৃতীয় উপায় হলো আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে নির্বাচনে আজমত উল্লাহর প্রচারণায় অংশ নেয়া। কিন্তু তা কি জাহাঙ্গীর করবেন এই প্রশ্নই রাজনৈতিক অঙ্গনে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।