‘তথ্য প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা কারও চরিত্র হননের লাইসেন্স দেয় না। ব্যক্তি আক্রমণ, মিথ্যা অপপ্রচার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়।’ গত সোমবার (২২ মে) দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সচিন দত্ত এ মন্তব্য করেন। ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ শিরোনামে বিতর্কিত প্রামাণ্যচিত্র ইস্যুতে এক মামলায় বিচারপতি দত্তের এ উক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এক আদেশে বিবিসিকে হাই কোর্টে তলব করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসি ওই প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করে গত ১৭ জানুয়ারি। প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল গুজরাট সহিংসতা নিয়ে। প্রামাণ্যচিত্রে সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হয়। তথ্যচিত্রটি ছিল অনেকটাই একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট। ভারত সরকার বিবিসিকে কোনো প্রতিবাদ পাঠায়নি। কঠোর ভাষায় ওই বিতর্কিত প্রামাণ্যটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ‘আপত্তিকর’ ভিডিওটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলার নোটিস দেওয়া হয়। ফেসবুক, ইউটিউব বাধ্য ছেলের মতো বিতর্কিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলে। এটুকু করেই ভারত সরকার সন্তুষ্টির ঢেকুর তোলেনি। আয়কর বিভাগ এক মাসের মধ্যে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের ভারতীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সর্বশেষ ২২ মে দিল্লি হাই কোর্ট এ ধরনের ‘ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক’ প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের অভিযোগে বিবিসির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলেন। এ মামলা তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
ঠিক দুই বছর আগে প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশকে ঘিরেও। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি মনগড়া, প্রতিহিংসামূলক এবং অসত্য প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে আলজাজিরা। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন’ শিরোনামে ওই প্রামাণ্যচিত্রটিতে জোর করে অসংলগ্নভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভুলেভরা এক প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিল আলজাজিরায়। কাতারভিত্তিক এ টেলিভিশন চ্যানেলটি ওই প্রতিবাদলিপিকে পাত্তা দেয়নি। এটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল প্রামাণ্যচিত্রটিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এখন অবধি। ফেসবুক, ইউটিউবে এর নানা খন্ডিত অংশ এবং পুরোটা প্রচার হচ্ছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এ বিদ্বেষমূলক, হিংসাত্মক প্রামাণ্যচিত্রটি নামিয়ে ফেলার কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়নি। ভারত দেশের স্বার্থরক্ষায় ‘প্রধানমন্ত্রী’ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। ভারত পেরেছে, বাংলাদেশ পারেনি কেন? সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা মিচকে ষড়যন্ত্রকারীরা মিনমিন করে বলে ‘ভারত অনেক বড় দেশ। অনেক জনসংখ্যা, তাদের সঙ্গে কি আমরা পারি।’ তাদের এ কথা শুনে মনে হয় তারা বোধহয় দূর গ্রহে বাস করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেদের দেশের আত্মমর্যাদার ব্যাপারে কতটা সচেতন তা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার ‘ওলটপালট’ করতে পারে জেনেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করছেন। এ সমালোচনা একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের স্বার্থে, মর্যাদার জন্য। সরকারে বিভিন্ন পদে যেসব ব্যক্তি বসে আছেন তারা কি এ থেকে এতটুকু সাহসী, দৃঢ় হতে পারেন না? তারা পারছেন না এ কারণে যে, তারা ষড়যন্ত্রকারী।
ভারত যখন মতপ্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে। বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রভাবশালী মিডিয়াকে তলব করেছে, তখন বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হাঁটু গেড়ে ফেসবুককে কুর্নিশ করছে। গত ১১ মে ফেসবুকের চাকর-বাকরদের সঙ্গে বৈঠক করেন একদা জাসদের বিভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লবী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। ফেসবুকের লোকজনকে তিনি জামাই আদর করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর, ঘৃণাসূচক, চরিত্র হননের কনটেন্টগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ফেসবুক বাংলাদেশে অফিস করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফেসবুক এটাও বলেছে, কনটেন্ট মনিটরিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ফেসবুকের এসব আপত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী খুশিতে বাকবাকুম। তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুক বর্তমানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অনুরোধ রাখছে।’
বাংলাদেশ এখন যে গুজবের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে তা মূলত ফেসবুক এবং ইউটিউবের কারণে। শুধু গুজব নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিকৃতি এবং কুৎসার বীভৎস উৎসব। লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক জিয়ার অর্থে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স থেকে কিছু সাইবার সন্ত্রাসীর ভয়ংকর তথ্যসন্ত্রাস এবং কদর্য আক্রমণের শিকার আজ বাংলাদেশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এগুলো বোধহয় সরকারবিরোধী অপপ্রচার। কিন্তু যেভাবে একযোগে এসব নোংরা আবর্জনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে গোটা বাংলাদেশই দূষিত এবং দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। অথচ অবিরত এসব অশ্রাব্য প্রচারণা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো মাথাব্যথা। তাহলে কি সাইবার-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে? এ প্রশ্ন উঠছে এ কারণে যে, সাইবার-সন্ত্রাসীদের আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যারা কাজ করছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ নেই বিদেশে বসে মিথ্যাচার প্রচারকারীদের। কদিন আগে দেখলাম এক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু তারপর আর রিপোর্ট নেই। সংশ্লিষ্ট বমি উগলানোর ইউটিউব চ্যানেল কার্ডটি পর্যন্ত নামিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আমলে একাধিক ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা চলল কয়েক দিন। কিন্তু রিপোর্ট আর আসে না। সরকারের সঙ্গে হঠাৎ করে ঘনিষ্ঠ হওয়া কিছু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা লক্ষ্য করলাম। কেন? একটু খোঁজখবর নিলেই দেখা যায় এর পেছনে রয়েছে ভয়ংকর সর্বনাশা ষড়যন্ত্র। ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী ফুলেফেঁপে উঠেছেন। নাম-পরিচয়হীন ব্যক্তিরাও হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মুদির দোকানদার ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যাদের টিকিটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তারাই এখন ক্ষমতার চারপাশে ফেভিকলের মতো সেঁটে আছেন। এসব অনুপ্রবেশকারী, হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগার একদিকে যেমন সীমাহীন দুর্নীতি করছেন, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন, তেমনি ভবিষ্যতে তাদের লুণ্ঠিত সম্পদকে নিরাপদ করতে লন্ডনে যোগাযোগ করছেন। সাইবার-সন্ত্রাসীরা তাদের ব্ল্যাকমেল করছে। এদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এরা বিদেশে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। লুণ্ঠিত সম্পদের ছিটেফোঁটা দিয়ে ওইসব সংবাদ বন্ধ করছেন। শুধু যে অর্থ দিচ্ছেন তা-ই নয়, সরকারের অনেক স্পর্শকাতর গোপন তথ্যও তারা তুলে দিচ্ছেন সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে। অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী তিল তিল করে ত্যাগে, শ্রমে মেধায় দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন তারা সাইবার-সন্ত্রাসীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন না। এসব কুৎসিত মিথ্যাচারের কাছে নতিস্বীকার করছেন না দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাই তাদেরও এখন টার্গেট করা হয়েছে। এখন অবিরাম কুৎসিত প্রচারণা চলছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন শুধু তামাশা দেখা। গণকণ্ঠে যারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সেই বিপ্লবীরাই এখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই। তখন তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার করতেন গণকণ্ঠে। আর এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তাঁর বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচারের পথ করে দেন। এরা ষড়যন্ত্রকারী। প্রধানমন্ত্রীর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর ছিল কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক অর্বাচীন প্রতিমন্ত্রী বিমানে আরও কজন মন্ত্রী এবং সফরসঙ্গীকে নিয়ে এক সেলফি তুললেন। মনে হচ্ছে পিকনিকে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনিই ছবিটা ছেড়ে দিলেন। তিনি কি ইচ্ছা করেই সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন? তার এ ছবি তোলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া যেমন আপত্তিকর, অনুচিত, তার চেয়েও গর্হিত হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার পর এটি নিজের আইডি থেকে অপসারণ করা। শুধু এ প্রতিমন্ত্রী কেন? প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এমন অনেকে যাচ্ছেন তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এরা সাইবার-সন্ত্রাসীদের তথ্যের অন্যতম উৎস। এদের পাঠানো ছবি, তথ্যকে রংচং দিয়ে বিদেশ থেকে ফেসবুক আর ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সত্যিকারের বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় নোংরামি চলছে তা যে কোনো দেশের মানদন্ডে ঘৃণিত, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশে বসে কেউ যদি এর একাংশও করে তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তা অপরাধ। কিন্তু বিদেশে বসে করলে? বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার এ ধরনের কনটেন্ট বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, ফেসবুক এবং ইউটিউবের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা আসলে কার প্রতিনিধিত্ব করছেন? সরকারের না সাইবার-সন্ত্রাসীদের? বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তারেক জিয়া একজন দন্ডিত ফেরারি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির এ পলাতক নেতা দন্ডিত। হাই কোর্ট এক আদেশে ওই ফেরারি ব্যক্তির কোনো বক্তব্য বাংলাদেশে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন এ পলাতক ব্যক্তি লাইভে এসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন। কর্মিসভা করছেন, মিটিং করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মিথ্যাচার করছেন। এসব প্রচারণা বন্ধে যারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তারা তো আদালত অবমাননা করছেন। পচা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী মন্ত্রীর বদৌলতে, বিটিআরসির পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আশীর্বাদে বিএনপি-জামায়াত এখন সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও সাইবার-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। আজ পর্যন্ত শুনিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিংবা কানাডায় বাংলাদেশের দূতাবাস এদের অপতৎপরতা সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে সে দেশের সরকারকে অনুরোধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা, নোংরামির প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি দূতাবাসগুলো। কদিন আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরকম ২২ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন দূতাবাসে। তালিকা পাওয়ার পর কোনো দূতাবাসের তৎপরতা নেই। সরকারের ঘরেই এভাবে সর্বনাশ বসবাস করছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের গ্রাহক ৫ কোটির বেশি। ফেসবুক, ইউটিউবের জন্য বাংলাদেশ এক বিরাট বাজার। তাদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত সহজ। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বর্ণবাদ, হিংসাত্মক প্রচারণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে দেশে দেশে অভিযুক্ত হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশে ফেসবুকের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। প্রায় সব মামলাতেই ফেসবুক আত্মসমর্পণ করেছে। ফেসবুক মার্কিন প্রতিষ্ঠান। মার্কিন আইন অনুযায়ী মানহানিকর কোনো তথ্য প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলায় হেরে গেলে দিতে হয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ। মামলার ক্ষতিপূরণ কে দেবে, এ নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু নিউইয়র্কের এক ক্ষতিপূরণ মামলায় আদালত জানিয়ে দেন ফেসবুক তার দায় এড়াতে পারে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফেসবুককেই। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষিত হিসেবে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যে দেশ ফেসবুকে ভুয়া তথ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ, বর্ণবাদ, হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে যত সোচ্চার হয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছেই নমনীয় হয়েছে। ফেসবুক পৃথিবীর কোনো দেশেই স্বেচ্ছায় অফিস করেনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে করও দেয়নি। যেসব দেশ তাদের আইন, রীতির ব্যাপারে দৃঢ় ছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ব্রাজিলে একজন গর্ভবতী নারীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন তার এক প্রতিবেশী। ওই নারী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণেœœর অভিযোগে মামলা করেন। ব্রাজিলের আদালত ফেসবুককে ওই ছবি অপসারণের নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় অস্বীকার করে। আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন, ফেসবুক যদি আদালতের নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সরকার ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে ব্রাজিলে নিজস্ব অফিস করতে বলে। ২১ দিনের মাথায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্রাজিলে অফিস করে। ওই ছবিও অপসারণ করে। মেক্সিকোর একজন মন্ত্রীকে মাদক ব্যবসায়ী বলে মন্তব্য করেন মার্কিন এক সিনেটর। তার এ বক্তব্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী এক মেক্সিকান নাগরিক। মন্ত্রী মামলা করেন। মেক্সিকো সরকার এ নিয়ে শক্ত অবস্থান নেয়। অবশেষে মাথানত করে মেক্সিকোতে অফিস করে ফেসবুক। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে যৌন ব্যবসার স্বর্গ বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। থাইল্যান্ড সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দুই দিনের মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চায়। ওই কনটেন্টটি অপসারণ করে এবং তিন মাসের মধ্যে থাইল্যান্ডে নিজস্ব অফিস করার অঙ্গীকার করে। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। ফেসবুক কিংবা ইউটিউব যখন একটি দেশে অফিস করে তখন তাকে সে দেশের আইনকানুন মানতে হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জবাবদিহিতার আওতায় না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফেসবুক তো একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে তারা ভ্যাট, করও দিত না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার উদ্যোগে এবং এনবিআরের সঠিক পদক্ষেপের কারণে এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে কিছু ভ্যাট ও কর দিচ্ছে বটে। কিন্তু এখনো অনেক টাকার কর ফাঁকির অভিযোগও আছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে হইচই চলছে। এ আইনটি বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো। এটি দিয়ে কেবল প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা যায়, সাইবার-সন্ত্রাসীদের দমন করা যায় না। সাইবার- সন্ত্রাসীদের দমন করতে দরকার ডাটা প্রটেকশন আইন। সব উন্নত দেশে এটি আছে। সম্প্রতি ‘গাইডলাইন অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া ইথিকস কোড’কে আইনে পরিণত করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যই এ নীতিমালা।’ এ নীতিমালা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ তদন্তে ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সহযোগিতা করতে হবে। এ ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। ভারত সরকারের এ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতে ফেসবুকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহন। তিনি ভারতের আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ নেই।’ ভারতে যখন মার্কিন টেক জায়ান্ট একান্ত অনুগত তখন বাংলাদেশে তার রূপ অন্যরকম। তার চেয়েও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, এমনটি শুনছি বহুদিন। কিন্তু এটি হচ্ছে না। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর মনোযোগ লাভজনক প্রকল্পে। আইন করে তার কী লাভ? সম্প্রতি সরকার ওটিটি গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফরমস ২০২১’ শিরোনামে এ নীতিমালার ব্যাপারে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এখানে ফেসবুকও তাদের মতামত দিয়েছে। বিটিআরসি খসড়া নীতিমালার ব্যাপারে ৪৫টি মতামত পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে ৩৩টি মতামতই হলো মেটা বা ফেসবুকের। বাংলাদেশে যাদের অফিস নেই, যারা এ দেশের আইনের ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার আছে? বিটিআরসি তাদের মতামত নেয় কেন? ফেসবুক, ইউটিউবকে আইনের আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং কর্তৃপক্ষের এত অনীহা কেন? সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের স্বার্থেই কি তাদের এ উদারতা। বিরোধী আন্দোলন নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকারকে বিব্রত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পিশাচের চিৎকার চেঁচামেচিতে দেশের জনগণ অস্থির। শেখ হাসিনা যদি স্যাংশন দেওয়া দেশের কাছ থেকে কিছু কিনবেন না বলে দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে ৫ কোটি গ্রাহকের দেশের মন্ত্রী কেন সাহস করে বলতে পারেন না বাংলাদেশে অফিস না করলে ফেসবুক, ইউটিউব কাউকেই ব্যবসা করতে দেব না। ফেসবুক, গুগলকে এমন সতর্কবার্তা দিতে মন্ত্রীরা কেন শরম পান? নাকি তাদের অন্য মতলব আছে?
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।