‘তথ্য প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতা কারও চরিত্র হননের লাইসেন্স দেয় না। ব্যক্তি আক্রমণ, মিথ্যা অপপ্রচার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নয়।’ গত সোমবার (২২ মে) দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি সচিন দত্ত এ মন্তব্য করেন। ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’ শিরোনামে বিতর্কিত প্রামাণ্যচিত্র ইস্যুতে এক মামলায় বিচারপতি দত্তের এ উক্তি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এক আদেশে বিবিসিকে হাই কোর্টে তলব করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে বিবিসি ওই প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করে গত ১৭ জানুয়ারি। প্রামাণ্যচিত্রটি ছিল গুজরাট সহিংসতা নিয়ে। প্রামাণ্যচিত্রে সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করা হয়। তথ্যচিত্রটি ছিল অনেকটাই একপেশে এবং পক্ষপাতদুষ্ট। ভারত সরকার বিবিসিকে কোনো প্রতিবাদ পাঠায়নি। কঠোর ভাষায় ওই বিতর্কিত প্রামাণ্যটি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ‘আপত্তিকর’ ভিডিওটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে ফেলার নোটিস দেওয়া হয়। ফেসবুক, ইউটিউব বাধ্য ছেলের মতো বিতর্কিত এ প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে ফেলে। এটুকু করেই ভারত সরকার সন্তুষ্টির ঢেকুর তোলেনি। আয়কর বিভাগ এক মাসের মধ্যে (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিবিসির দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের ভারতীয় কার্যালয়ে অভিযান চালায়। সর্বশেষ ২২ মে দিল্লি হাই কোর্ট এ ধরনের ‘ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক’ প্রামাণ্যচিত্র প্রচারের অভিযোগে বিবিসির সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সমন জারি করলেন। এ মামলা তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘৃণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
ঠিক দুই বছর আগে প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল বাংলাদেশকে ঘিরেও। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ব্যাপারে একটি মনগড়া, প্রতিহিংসামূলক এবং অসত্য প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ করে আলজাজিরা। ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার মেন’ শিরোনামে ওই প্রামাণ্যচিত্রটিতে জোর করে অসংলগ্নভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জড়ানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভুলেভরা এক প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিল আলজাজিরায়। কাতারভিত্তিক এ টেলিভিশন চ্যানেলটি ওই প্রতিবাদলিপিকে পাত্তা দেয়নি। এটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহল প্রামাণ্যচিত্রটিকে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এখন অবধি। ফেসবুক, ইউটিউবে এর নানা খন্ডিত অংশ এবং পুরোটা প্রচার হচ্ছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে এ বিদ্বেষমূলক, হিংসাত্মক প্রামাণ্যচিত্রটি নামিয়ে ফেলার কোনো উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়নি। ভারত দেশের স্বার্থরক্ষায় ‘প্রধানমন্ত্রী’ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করেছে। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখেছে। ভারত পেরেছে, বাংলাদেশ পারেনি কেন? সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা মিচকে ষড়যন্ত্রকারীরা মিনমিন করে বলে ‘ভারত অনেক বড় দেশ। অনেক জনসংখ্যা, তাদের সঙ্গে কি আমরা পারি।’ তাদের এ কথা শুনে মনে হয় তারা বোধহয় দূর গ্রহে বাস করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নিজেদের দেশের আত্মমর্যাদার ব্যাপারে কতটা সচেতন তা তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যেই দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতার ‘ওলটপালট’ করতে পারে জেনেও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনা করছেন। এ সমালোচনা একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের স্বার্থে, মর্যাদার জন্য। সরকারে বিভিন্ন পদে যেসব ব্যক্তি বসে আছেন তারা কি এ থেকে এতটুকু সাহসী, দৃঢ় হতে পারেন না? তারা পারছেন না এ কারণে যে, তারা ষড়যন্ত্রকারী।
ভারত যখন মতপ্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টেনে ধরেছে। বিবিসির মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রভাবশালী মিডিয়াকে তলব করেছে, তখন বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হাঁটু গেড়ে ফেসবুককে কুর্নিশ করছে। গত ১১ মে ফেসবুকের চাকর-বাকরদের সঙ্গে বৈঠক করেন একদা জাসদের বিভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লবী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। ফেসবুকের লোকজনকে তিনি জামাই আদর করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আপত্তিকর, ঘৃণাসূচক, চরিত্র হননের কনটেন্টগুলো বন্ধের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেননি। প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, ফেসবুক বাংলাদেশে অফিস করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ফেসবুক এটাও বলেছে, কনটেন্ট মনিটরিং সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ফেসবুকের এসব আপত্তিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী খুশিতে বাকবাকুম। তিনি বলেছেন, ‘ফেসবুক বর্তমানে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত অনুরোধ রাখছে।’
বাংলাদেশ এখন যে গুজবের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে তা মূলত ফেসবুক এবং ইউটিউবের কারণে। শুধু গুজব নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর প্রধান বাহনে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাস্তানাবুদ হচ্ছে। বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে বিকৃতি এবং কুৎসার বীভৎস উৎসব। লন্ডনে পলাতক বিএনপি নেতা তারেক জিয়ার অর্থে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স থেকে কিছু সাইবার সন্ত্রাসীর ভয়ংকর তথ্যসন্ত্রাস এবং কদর্য আক্রমণের শিকার আজ বাংলাদেশ। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে এগুলো বোধহয় সরকারবিরোধী অপপ্রচার। কিন্তু যেভাবে একযোগে এসব নোংরা আবর্জনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে গোটা বাংলাদেশই দূষিত এবং দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। অথচ অবিরত এসব অশ্রাব্য প্রচারণা বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কোনো উদ্যোগ নেই। নেই কোনো মাথাব্যথা। তাহলে কি সাইবার-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্টদের গোপন যোগাযোগ রয়েছে? এ প্রশ্ন উঠছে এ কারণে যে, সাইবার-সন্ত্রাসীদের আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য যারা কাজ করছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো আওয়াজ নেই বিদেশে বসে মিথ্যাচার প্রচারকারীদের। কদিন আগে দেখলাম এক প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা দেওয়া হলো। কিন্তু তারপর আর রিপোর্ট নেই। সংশ্লিষ্ট বমি উগলানোর ইউটিউব চ্যানেল কার্ডটি পর্যন্ত নামিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগ আমলে একাধিক ব্যাংকের মালিক বনে যাওয়া এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রিপোর্ট আসছে বলে ঘোষণা চলল কয়েক দিন। কিন্তু রিপোর্ট আর আসে না। সরকারের সঙ্গে হঠাৎ করে ঘনিষ্ঠ হওয়া কিছু ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা লক্ষ্য করলাম। কেন? একটু খোঁজখবর নিলেই দেখা যায় এর পেছনে রয়েছে ভয়ংকর সর্বনাশা ষড়যন্ত্র। ১৪ বছর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে। এ সময় অনেক ব্যবসায়ী ফুলেফেঁপে উঠেছেন। নাম-পরিচয়হীন ব্যক্তিরাও হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মুদির দোকানদার ব্যাংক থেকে শতকোটি টাকা লোপাট করেছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যাদের টিকিটি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি তারাই এখন ক্ষমতার চারপাশে ফেভিকলের মতো সেঁটে আছেন। এসব অনুপ্রবেশকারী, হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগার একদিকে যেমন সীমাহীন দুর্নীতি করছেন, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করছেন, তেমনি ভবিষ্যতে তাদের লুণ্ঠিত সম্পদকে নিরাপদ করতে লন্ডনে যোগাযোগ করছেন। সাইবার-সন্ত্রাসীরা তাদের ব্ল্যাকমেল করছে। এদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই এরা বিদেশে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। লুণ্ঠিত সম্পদের ছিটেফোঁটা দিয়ে ওইসব সংবাদ বন্ধ করছেন। শুধু যে অর্থ দিচ্ছেন তা-ই নয়, সরকারের অনেক স্পর্শকাতর গোপন তথ্যও তারা তুলে দিচ্ছেন সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে। অন্যদিকে যেসব ব্যবসায়ী তিল তিল করে ত্যাগে, শ্রমে মেধায় দেশের উন্নয়নের অংশীদার হয়েছেন তারা সাইবার-সন্ত্রাসীদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন না। এসব কুৎসিত মিথ্যাচারের কাছে নতিস্বীকার করছেন না দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাই তাদেরও এখন টার্গেট করা হয়েছে। এখন অবিরাম কুৎসিত প্রচারণা চলছে। বিটিআরসি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কাজ যেন শুধু তামাশা দেখা। গণকণ্ঠে যারা বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন সেই বিপ্লবীরাই এখন বর্তমান সরকারের মন্ত্রী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দেখভালের দায়িত্ব তাদেরই। তখন তারা নিজেরাই বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচার করতেন গণকণ্ঠে। আর এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেখ হাসিনা ও তাঁর বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে কুৎসিত অপপ্রচারের পথ করে দেন। এরা ষড়যন্ত্রকারী। প্রধানমন্ত্রীর জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য সফর ছিল কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক অর্বাচীন প্রতিমন্ত্রী বিমানে আরও কজন মন্ত্রী এবং সফরসঙ্গীকে নিয়ে এক সেলফি তুললেন। মনে হচ্ছে পিকনিকে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনিই ছবিটা ছেড়ে দিলেন। তিনি কি ইচ্ছা করেই সাইবার-সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিলেন? তার এ ছবি তোলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেওয়া যেমন আপত্তিকর, অনুচিত, তার চেয়েও গর্হিত হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার পর এটি নিজের আইডি থেকে অপসারণ করা। শুধু এ প্রতিমন্ত্রী কেন? প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এমন অনেকে যাচ্ছেন তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। এরা সাইবার-সন্ত্রাসীদের তথ্যের অন্যতম উৎস। এদের পাঠানো ছবি, তথ্যকে রংচং দিয়ে বিদেশ থেকে ফেসবুক আর ইউটিউবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সত্যিকারের বিশ্বস্তদের বিরুদ্ধে যে মাত্রায় নোংরামি চলছে তা যে কোনো দেশের মানদন্ডে ঘৃণিত, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেশে বসে কেউ যদি এর একাংশও করে তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তা অপরাধ। কিন্তু বিদেশে বসে করলে? বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত একাধিকবার এ ধরনের কনটেন্ট বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু বিটিআরসি এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, ফেসবুক এবং ইউটিউবের ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আমার মাঝে মাঝে ভ্রম হয়, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা আসলে কার প্রতিনিধিত্ব করছেন? সরকারের না সাইবার-সন্ত্রাসীদের? বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তারেক জিয়া একজন দন্ডিত ফেরারি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির এ পলাতক নেতা দন্ডিত। হাই কোর্ট এক আদেশে ওই ফেরারি ব্যক্তির কোনো বক্তব্য বাংলাদেশে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন এ পলাতক ব্যক্তি লাইভে এসে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে উসকানি দিচ্ছেন। কর্মিসভা করছেন, মিটিং করছেন, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মিথ্যাচার করছেন। এসব প্রচারণা বন্ধে যারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন না তারা তো আদালত অবমাননা করছেন। পচা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রী মন্ত্রীর বদৌলতে, বিটিআরসির পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আশীর্বাদে বিএনপি-জামায়াত এখন সোশ্যাল মিডিয়া দখল করে নিয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোও সাইবার-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। আজ পর্যন্ত শুনিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স কিংবা কানাডায় বাংলাদেশের দূতাবাস এদের অপতৎপরতা সম্পর্কে ব্যবস্থা নিতে সে দেশের সরকারকে অনুরোধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা তো দূরের কথা, নোংরামির প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি দূতাবাসগুলো। কদিন আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরকম ২২ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন দূতাবাসে। তালিকা পাওয়ার পর কোনো দূতাবাসের তৎপরতা নেই। সরকারের ঘরেই এভাবে সর্বনাশ বসবাস করছে। বাংলাদেশে ফেসবুকের গ্রাহক ৫ কোটির বেশি। ফেসবুক, ইউটিউবের জন্য বাংলাদেশ এক বিরাট বাজার। তাদের আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত সহজ। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে ঠিক একই অবস্থা হয়েছিল ভারতসহ বিভিন্ন দেশে। বর্ণবাদ, হিংসাত্মক প্রচারণা, বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে দেশে দেশে অভিযুক্ত হয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন দেশে ফেসবুকের বিরুদ্ধে সহস্রাধিক মামলা হয়েছে। প্রায় সব মামলাতেই ফেসবুক আত্মসমর্পণ করেছে। ফেসবুক মার্কিন প্রতিষ্ঠান। মার্কিন আইন অনুযায়ী মানহানিকর কোনো তথ্য প্রকাশিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলায় হেরে গেলে দিতে হয় বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ। মামলার ক্ষতিপূরণ কে দেবে, এ নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু নিউইয়র্কের এক ক্ষতিপূরণ মামলায় আদালত জানিয়ে দেন ফেসবুক তার দায় এড়াতে পারে না। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ফেসবুককেই। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষিত হিসেবে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। যে দেশ ফেসবুকে ভুয়া তথ্য, ব্যক্তিগত আক্রমণ, বর্ণবাদ, হেইট ক্রাইমের বিরুদ্ধে যত সোচ্চার হয়েছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছেই নমনীয় হয়েছে। ফেসবুক পৃথিবীর কোনো দেশেই স্বেচ্ছায় অফিস করেনি। স্বপ্রণোদিত হয়ে করও দেয়নি। যেসব দেশ তাদের আইন, রীতির ব্যাপারে দৃঢ় ছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। ব্রাজিলে একজন গর্ভবতী নারীর ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন তার এক প্রতিবেশী। ওই নারী তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ক্ষুণেœœর অভিযোগে মামলা করেন। ব্রাজিলের আদালত ফেসবুককে ওই ছবি অপসারণের নির্দেশ দেন। কর্তৃপক্ষ আদালতের রায় অস্বীকার করে। আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন, ফেসবুক যদি আদালতের নির্দেশ না মানে তাহলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। সরকার ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে এক মাসের মধ্যে ব্রাজিলে নিজস্ব অফিস করতে বলে। ২১ দিনের মাথায় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্রাজিলে অফিস করে। ওই ছবিও অপসারণ করে। মেক্সিকোর একজন মন্ত্রীকে মাদক ব্যবসায়ী বলে মন্তব্য করেন মার্কিন এক সিনেটর। তার এ বক্তব্য দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী এক মেক্সিকান নাগরিক। মন্ত্রী মামলা করেন। মেক্সিকো সরকার এ নিয়ে শক্ত অবস্থান নেয়। অবশেষে মাথানত করে মেক্সিকোতে অফিস করে ফেসবুক। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকককে যৌন ব্যবসার স্বর্গ বলে মন্তব্য করা হয়েছিল। থাইল্যান্ড সরকার তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। দুই দিনের মধ্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চায়। ওই কনটেন্টটি অপসারণ করে এবং তিন মাসের মধ্যে থাইল্যান্ডে নিজস্ব অফিস করার অঙ্গীকার করে। এরকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। ফেসবুক কিংবা ইউটিউব যখন একটি দেশে অফিস করে তখন তাকে সে দেশের আইনকানুন মানতে হয়। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা জবাবদিহিতার আওতায় না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফেসবুক তো একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি। আগে তারা ভ্যাট, করও দিত না। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার উদ্যোগে এবং এনবিআরের সঠিক পদক্ষেপের কারণে এখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশে কিছু ভ্যাট ও কর দিচ্ছে বটে। কিন্তু এখনো অনেক টাকার কর ফাঁকির অভিযোগও আছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে হইচই চলছে। এ আইনটি বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোর মতো। এটি দিয়ে কেবল প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা যায়, সাইবার-সন্ত্রাসীদের দমন করা যায় না। সাইবার- সন্ত্রাসীদের দমন করতে দরকার ডাটা প্রটেকশন আইন। সব উন্নত দেশে এটি আছে। সম্প্রতি ‘গাইডলাইন অ্যান্ড ডিজিটাল মিডিয়া ইথিকস কোড’কে আইনে পরিণত করছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত। দেশটির তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়াকে আরও দায়িত্বশীল এবং জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্যই এ নীতিমালা।’ এ নীতিমালা অনুযায়ী সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ তদন্তে ফেসবুক, ইউটিউব বা টুইটার কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সহযোগিতা করতে হবে। এ ধরনের আপত্তিকর কনটেন্ট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। ভারত সরকারের এ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতে ফেসবুকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহন। তিনি ভারতের আইনের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি নিয়ে দর কষাকষির সুযোগ নেই।’ ভারতে যখন মার্কিন টেক জায়ান্ট একান্ত অনুগত তখন বাংলাদেশে তার রূপ অন্যরকম। তার চেয়েও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। ডাটা প্রটেকশন আইন নিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে, এমনটি শুনছি বহুদিন। কিন্তু এটি হচ্ছে না। আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর মনোযোগ লাভজনক প্রকল্পে। আইন করে তার কী লাভ? সম্প্রতি সরকার ওটিটি গাইডলাইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। ‘রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফরমস ২০২১’ শিরোনামে এ নীতিমালার ব্যাপারে অংশীজনের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এখানে ফেসবুকও তাদের মতামত দিয়েছে। বিটিআরসি খসড়া নীতিমালার ব্যাপারে ৪৫টি মতামত পর্যালোচনা করছে। এর মধ্যে ৩৩টি মতামতই হলো মেটা বা ফেসবুকের। বাংলাদেশে যাদের অফিস নেই, যারা এ দেশের আইনের ঊর্ধ্বে, ধরাছোঁয়ার বাইরে, তাদের মতামত দেওয়ার অধিকার আছে? বিটিআরসি তাদের মতামত নেয় কেন? ফেসবুক, ইউটিউবকে আইনের আওতায় আনতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং কর্তৃপক্ষের এত অনীহা কেন? সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের স্বার্থেই কি তাদের এ উদারতা। বিরোধী আন্দোলন নয়, বরং সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সরকারকে বিব্রত করছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পিশাচের চিৎকার চেঁচামেচিতে দেশের জনগণ অস্থির। শেখ হাসিনা যদি স্যাংশন দেওয়া দেশের কাছ থেকে কিছু কিনবেন না বলে দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে ৫ কোটি গ্রাহকের দেশের মন্ত্রী কেন সাহস করে বলতে পারেন না বাংলাদেশে অফিস না করলে ফেসবুক, ইউটিউব কাউকেই ব্যবসা করতে দেব না। ফেসবুক, গুগলকে এমন সতর্কবার্তা দিতে মন্ত্রীরা কেন শরম পান? নাকি তাদের অন্য মতলব আছে?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিউইয়র্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
তৃণমূল বিএনপি নির্বাচন বিএনপি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত সরকার শওকত মাহমুদ
মন্তব্য করুন
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ দেখতে চায় বিএনপি। আর এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং এক রকমের প্রচ্ছন্ন চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো চাপ নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংহত থাকুক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হোক। কারণ গণতন্ত্র হলো উন্নয়ন এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। আর সে কারণেই তারা বাংলাদেশে একটি অর্থবহ ও অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।
কিন্তু এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রধান বাধা হলো- আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, দুটি রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধী অবস্থান। বিএনপি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এই দাবিতে তারা এক দফা আন্দোলন করছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় নাই। সংবিধান সম্মতভাবেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। বিএনপি মনে করছে,দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে ভোট অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ হবে না। এখন এরকম একটি অচল অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আর এই সংকট কাটিয়ে তোলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দুইটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান এবং দূরত্ব কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো কাজ করছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো উদ্যোগ নেবে না এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাও গ্রহণ করবে না। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সংলাপ এবং সমঝোতাকে সমর্থন করে। তবে মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাই বলুক না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন মহলের সঙ্গে একটি অর্থবহ নির্বাচন কিভাবে করা যায়- তা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। আর এই সমস্ত আলাপ-আলোচনায় বেশ কিছু সম্ভাব্য প্রস্তাবনার বিভিন্ন দিক নিয়েও তারা কথাবার্তা বলছেন।
সুশীল সমাজের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিকরা একাধিক বৈঠক করেছেন। সংবিধান কাঠামোর মধ্যে কিভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়- সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে। বিএনপির সঙ্গেও তারা রাজনৈতিক সমঝোতার পথ নিয়ে কথা বলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গেও ‘আওমীলীগ কতটুকু পর্যন্ত ছাড় দেবে’-তা নিয়েও কথা বলছে। এই সবকিছু মিলিয়ে তারা একটি অর্থবহ নির্বাচনের পথ খুঁজছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের প্রধান দাবি হচ্ছে, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন শেখ হাসিনা- এই দাবি থেকে তারা সরে আসবে না। অন্যদিকে বিএনপির বক্তব্য হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক বা যেটাই হোক না কেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকতে পারবেন না। অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী করলেও কোনো আপত্তি নেই। এইরকম একটা পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা যায় কিনা, সেই সম্ভব্যতা যাচাই করছেন- এ নিয়ে সুশীল সমাজের অন্তত দুইজন প্রতিনিধি মার্কিন দূতাবাসের সাথে কথাও বলেছেন বলে জানা গেছে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি দশ সদস্যের নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর কথা বলেছেন, যে উপদেষ্টামণ্ডলীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপির বাইরে একদম নিরপেক্ষ ব্যক্তিরা থাকবেন; যারা প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেবেন এবং এই পরামর্শের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন পরিচালনা করবেন।
তবে বিএনপির নেতারা বলছেন, বর্তমান সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রয়েছে। উপদেষ্টারা কার্যত প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বা ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে পারবে না। তাই এই প্রস্তাবে তারা রাজি নয়।
সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজের কয়েকজন রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে একটি একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায় কিনা, তার সাংবিধানিক বিধি-বিধানগুলো খুঁজে দেখছে। তবে বিএনপির এটিতেও সায় নাই। বিএনপি মনে করে, বর্তমান রাষ্ট্রপতিও নিরপেক্ষ নয়।
আর এরকম পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে বলছে, তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) নির্বাচনের পুরো বিষয়টি তদারকি করবে এবং নির্বাচনে কোনো রকম কারচুপি, জালিয়াতি ইত্যাদি হলে সেটি তারা প্রতিহত করবে। আর এরকম ঘটনা ঘটলে নির্বাচনকেও স্বীকৃতি দেবে না।
এরকম একটি প্রস্তাবনা নিয়ে তারা (পশ্চিমা দেশগুলো) বিএনপিকে নির্বাচনে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। এখন দেখার বিষয়, এই প্রস্তাবে বিএনপি সায় দেয় কিনা।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
মির্জা
আজম। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা। ছয়বারের এমপি। জীবনে কোনো সংসদ নির্বাচনে
পরাজিত হননি। ১৯৯১ ও ২০০১
সালে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও
তিনি জয়ী হয়েছেন। জামালপুরে
দলমত নির্বিশেষে তিনি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন
করেছেন। সেই জামালপুরে গত
১১ সেপ্টেম্বর ঘটল এক কাণ্ড।
সেখানকার জেলা প্রশাসক (ডিসি)
মো. ইমরান আহমেদ, প্রশাসনের মাঠ কর্মকর্তা থেকে
আওয়ামী লীগের নেতা বনে গেলেন।
আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনার
জন্য তিনি জনগণের কাছে
উদাত্ত আহ্বান জানালেন। জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌরসভায় নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে তিনি
এ চাঞ্চল্যকর বক্তব্য রাখেন। ডিসি শুধু এ
সরকারকে আবার ক্ষমতায় আনার
অঙ্গীকারই করেননি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আগামী সরকারও গঠন করে ফেলেছেন।
ওই সরকারে মির্জা আজমকে মন্ত্রীও বানিয়ে ফেলেছেন। মো. ইমরান বলেছেন,
‘আমি আশা করি, সামনের
নির্বাচনের পর আমাদের সম্মানিত
প্রধান অতিথি (মির্জা আজম) অবশ্যই একজন
মন্ত্রী হিসেবে এ জেলায় আরও
ব্যাপক উন্নয়ন করবেন। এটা আমি আশা
করি এবং বিশ্বাস করি,
এটা হবে ইনশাআল্লাহ।’ মির্জা
আজমকে জেতানোর জন্য কোনো আমলার
দরকার নেই। কোনো কারসাজি
করারও প্রয়োজন নেই। ২০১৮ সালের
নির্বাচনের আগেও আমলাদের এমন
চেষ্টাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। ওই নির্বাচনে দেশে
যে-কটি আসনে ভোটাররা
দিনভর ভোট দিয়েছে, তার
মধ্যে মির্জা আজমের আসন একটি। তাহলে
এবার কেন? এ জনপ্রিয়
নেতাকে বিতর্কিত করার জন্যই কি
এ আয়োজন। জামালপুরের এ জেলা প্রশাসকই
এরকম কদর্য চাটুকারিতায় ভরপুর বক্তব্য রাখেননি। কিছুদিন ধরেই মাঠ প্রশাসনে
এবং পুলিশে এ ব্যাধিটি ছড়িয়ে
পড়েছে। কদিন আগে অর্থমন্ত্রীর
নির্বাচনী এলাকা, লাঙ্গলকোটের ওসি ফারুক হোসেন
আগামী নির্বাচনে অর্থমন্ত্রী আ হ ম
মুস্তফা কামালকে ‘আবার নির্বাচিত করার
জন্য মিনতি করেন’। অথচ
অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন কি না, তারই
ঠিক নেই। গত ১৫
আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভায় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই
অনুষ্ঠানে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি
শ্যামল চন্দ্র ধর বর্তমান সরকারকে
ফের নির্বাচিত করতে ভোট চান।
নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে,
ততই ডিসি, এসপি, ওসি, ইউএনওদের নির্বাচন
নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য আলগা প্রেম
বাড়ছে। শুধু মাঠ প্রশাসন
নয়, বড় আমলারাও আওয়ামী
লীগের জন্য গদগদ হয়ে
উঠছেন। কোনো কোনো অতিউৎসাহী
আমলা এখন শেখ হাসিনার
চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার
হয়ে গেছেন। কোথাও কোথাও এসব সরকারি কর্মকর্তা
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জেতানোর ফর্মুলা আবিষ্কারে ব্যস্ত। এসব সরকারি কর্মকর্তা
এবং কর্মচারী কি আসলে আওয়ামী
লীগের উপকার করছেন না ক্ষতি করছেন?
নির্বাচনে জয়ী হতে কি
আওয়ামী লীগের আমলাদের দরকার? নাকি এসব আমলা
মতলববাজ। নিজেদের সুবিধা আদায়ের জন্য তারা আওয়ামী
লীগকে বিতর্কিত করছে। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি
করছে। এসব ঘটনার ফলে,
আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে।
অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন
নিয়ে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে
হবে তা নিয়ে জাতীয়
এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলছে নানা বিতর্ক।
বিএনপি বলছে, এ সরকারের অধীনে
অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন
সম্ভব নয়। বিএনপি মহাসচিব
একাধিক বক্তৃতায় অভিযোগ করেছেন, সরকার তার পক্ষের লোকজন
দিয়ে প্রশাসন সাজিয়েছে। সুশীল সমাজ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা
নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বলা
হচ্ছে, নির্বাচনে যদি প্রশাসন হস্তক্ষেপ
করে তাহলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য
হবে না। যুক্তরাষ্ট্র আগামী
নির্বাচন সামনে রেখে ভিসা নিষেধাজ্ঞার
হুমকি দিয়ে রেখেছে। এর
বিপরীতে সরকার বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষ
থাকবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে দেশ-বিদেশে
সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেছেন। আগামী নির্বাচন কেমন হয় সেদিকে
চোখ সবার। এরকম পরিস্থিতিতে এসব
অতিউৎসাহীদের বাচালতা গোটা নির্বাচনকেই অনিশ্চিত
করে তুলবে। সরকার যতই বলুক, নিরপেক্ষ
নির্বাচন হবে, এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন
কর্মকর্তাদের কারণে তা কারও কাছেই
বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। যারা এসব
চাটুকারিতা করছে, তারা গণতন্ত্রকেই আসলে
সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আমি মনে করি প্রশাসনে
অতি রাজনীতিকরণ এবং দলীয়করণের কারণেই
বড় আমলা থেকে শুরু
করে মাঠ প্রশাসন তাদের
নিরপেক্ষতা এবং যোগ্যতা হারাচ্ছে।
এ প্রবণতা দীর্ঘদিনের। এখন প্রশাসনের দলীয়করণের
বিষয়টি ‘জায়েজ’ হয়ে গেছে। এখন
প্রশাসনে পদোন্নতি কিংবা পদায়ন করা হয় রাজনৈতিক
পরিচয় দেখে। মেধা এবং যোগ্যতার
ভিত্তিতে পদোন্নতির চর্চা নেই বললেই চলে।
একজন উপসচিব জানেন, তিনি ‘আওয়ামী লীগ’ এ পরিচয়
সামনে এলে তার পদোন্নতি
হবে। যুগ্ম সচিব মনে করছেন
যত চাটুকারিতা করবেন, সরকারের স্তুতি করবেন, তত দ্রুত তার
পদোন্নতির দরজা খুলে যাবে।
সচিব হতে গেলে এখন
দক্ষতা লাগে না, তার
কাজের মান কিংবা নেতৃত্বের
যোগ্যতা যাচাই করা হয় না।
দেখা হয় তিনি সরকারের
কতটা আপনজন। তাই প্রশাসনের সব
পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়ার এক বীভৎস প্রতিযোগিতা
শুরু হয়েছে। রাজাকার পরিবারের সন্তানও এখন নিজেকে ছাত্রলীগের
কর্মী পরিচয় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে
ছাত্রদল কিংবা শিবির করে এখন আওয়ামী
লীগে রূপান্তরিত হওয়া আমলার সংখ্যা
কম নয়। যে যেভাবে
পারছে নিজেকে অতি বড় আওয়ামী
লীগার প্রমাণে ব্যস্ত। কেউ কবিতা লিখছেন,
কেউ আওয়ামী নেতাদের চেয়েও জ্বালাময়ী ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। যারা প্রশাসনে সত্যিকারের
আওয়ামী পরিবার থেকে এসেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনে ছাত্রলীগ করেছেন, তারাই এখন এসব নব্য
আওয়ামী লীগের দাপটে কোণঠাসা। এসব নব্য আওয়ামী
লীগার প্রশাসনে একটি সিন্ডিকেট করেছে।
এ সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ সচিব হয়
না, কারও ভালো পোস্টিং
হয় না। তাদের ভাবসাব,
কথাবার্তায় মনে হয়, শেখ
হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নয়, তারাই আবার
আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবে। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে নির্লজ্জ চাটুকারদের প্রভাব পড়েছে মাঠপর্যায়ে। আরেকবার ক্ষমতায় এলেই আমলাতন্ত্রের রাষ্ট্রক্ষমতা
দখলে ষোলোকলা পূর্ণ হবে। ২০১৮ সালের
নির্বাচনে এ আমলারাই পরিকল্পিত
ষড়যন্ত্র করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ
করে। এর মাধ্যমে তারা
ক্ষমতাকেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অধিকাংশ
মন্ত্রণালয়ে সচিবরা মন্ত্রীদের পাত্তাই দেন না। মাঠে
ডিসি, ইউএনওরা জনপ্রতিনিধিদের কথাই শোনেন না।
কদিন আগে আওয়ামী লীগের
একজন নেতা বলছিলেন, ‘মাঠে
এখন আওয়ামী লীগ নেই। আমলা
লীগ আছে।’ কিছু কিছু আমলা
মুখে আওয়ামী লীগের কথা বলে আসলে
আওয়ামী লীগকেই বিকলাঙ্গ করছে। এরা শুধু সরকারের
জন্য নয়, আওয়ামী লীগের
জন্যও বিপজ্জনক। এরা এখন আওয়ামী
লীগকে জয়ী করার কথা
বলছে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য।
আগামী নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত
আওয়ামী লীগ জয়ী হয়
তাহলে তারা বলবে ‘আহ,
কী ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের
প্রার্থীকে জেতালাম। আমি না থাকলে
তো এবার আওয়ামী লীগের
প্রার্থীর ভরাডুবি নিশ্চিত।’ ব্যস, দ্রুত গতিতে তার পদোন্নতির অভিযাত্রা
শুরু হবে। লাগামহীন দুর্নীতির
লাইসেন্স পাবে। ওই আমলার ভাগ্যের
চাকা খুলে যাবে। সাধারণ
জনগণ বলবে, এমপির কোনো দাম নেই।
সব ক্ষমতার মালিক আমলাই। আর যদি কোনো
কারণে ভোটে আওয়ামী লীগের
প্রার্থীর বিপর্যয় হয়, প্রার্থী হেরে
যায়, তখন ওই মাঠ
কর্মকর্তা দুরকম অবস্থান গ্রহণ করবেন। প্রথম অবস্থান, যদি আওয়ামী লীগ
জয়ী হয় এবং ওই
প্রার্থী হেরে যায়। তখন
মাঠ আমলা বলবে, কী
যে পরিশ্রম করলাম। আমি চেষ্টা করেছি
বলেই এ ভোট পেয়েছে।
না হলে তো জামানত
বাজেয়াপ্ত হতো। আর ওই
প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ
উভয়ই হারে, তখন গিরগিটির মতো
মুহূর্তে তিনি রূপ বদল
করবেন। বলবেন, আসলে আমিই তো
আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়েছি। গোপনে গোপনে আমি তার সর্বনাশ
করেছি। অর্থাৎ নির্বাচনের ফলাফল যাই হোক, তার
লাভ এবং লাভ। নির্বাচনের
তপশিল ঘোষণার আগেই যেসব সরকারি
কর্মকর্তা ভোট চেয়ে চাটুকারিতার
অরুচিকর প্রদর্শনী করলেন, সরকারকে বিব্রত করলেন, তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু
নেই। তাদের শুধু প্রত্যাহার করা
হয়েছে। জামালপুরের ডিসি প্রবাসী কল্যাণ
মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন। ওসিদেরও
শাস্তি হলো প্রত্যাহার। তারা
অচিরেই ‘নির্যাতিত’ পরিচয়ে ভূষিত হবেন। আওয়ামী লীগের জন্য তাদের জীবন
উৎসর্গের কাহিনি তারা বলে বেড়াবেন
প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে। কদিন পর আবার
তাদের পদোন্নতি হবে, ভালো পোস্টিং
হবে। আওয়ামী লীগের সৈনিক হিসেবে তারা বুক ফুলিয়ে
ঘুরে বেড়াবেন। এ অবস্থা বন্ধ
করা দরকার এখনই। যোগ্য এবং পেশাদার কর্মকর্তারাই
আসলে সরকার এবং দেশের জন্য
মঙ্গলকর। অযোগ্য চাটুকাররা শুধু নিজেদের স্বার্থ
খোঁজে। সরকার এবং দেশের কোনো
কাজে তারা যাবে না।
সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী একজন
সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী কোনো
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারেন না। এটা শাস্তিযোগ্য
অপরাধ। তাই নির্মোহভাবে তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যাহার
কোনো শাস্তি নয়। সরকারকে মনে
রাখতে হবে, আমলারা কোনোদিন
কারও হয় না। বঙ্গবন্ধুর
পায়ের কাছে বসে থাকা
আমলা খুনি মোশতাকের শপথ
পাঠ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। জিয়াকে খুশি করতে যে
আমলা স্যুট-প্যান্ট ছেড়ে সাফারি এবং
সানগ্লাস পরা শুরু করেন,
এটাই জাতীয় পোশাক হওয়া উচিত বলে
বক্তৃতা দেন, সেই আমলাই
এরশাদের রাজকবি সভাই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য
হয়েছিলেন। এরশাদের সঙ্গে আমৃত্যু থাকার অঙ্গীকার করা আমলা স্বৈরাচারের
পতনের পর বিএনপির টিকিটে
এমপি হতে সময় নেননি।
এখন যারা আমলাতন্ত্রে আওয়ামী
সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন, দুঃসময়ে
তারা হয় পালাবেন অথবা
ভোল পাল্টাবেন। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে অনেক কঠিন কাজ
করা যায়। আমলাতন্ত্রে পেশাদারিত্ব
প্রতিষ্ঠার কাজটি কঠিন, কিন্তু জরুরি। আওয়ামী লীগই পারে যোগ্যতা
এবং মেধার ভিত্তিতে আমলাতন্ত্রের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। এতে সিংহভাগ সরকারি
কর্মচারী খুশি হবেন। সরকার
গুটিকয়েক সুবিধাবাদী চাটুকার আমলাদের হাতে জিম্মি থাকবে
না। মেধাবী, স্মার্ট আমলাতন্ত্র গড়তে—এ সিদ্ধান্ত
নিতে হবে এখনই। তার
জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে চাকরি শৃঙ্খলা
বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। আমলাদের আওয়ামী লীগে রূপান্তর বন্ধ
করা।
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল :
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপি থেকে একঝাঁক নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছে—এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপির ভিতর। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় নেতারা নন, বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী নেতারা এমনকি বিভাগীয় জেলা পর্যায়ের নেতারাও তৃণমূল বিএনপিতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপির মধ্যে যে সমস্ত নেতারা এখন নিষ্ক্রিয় রয়েছেন তাদের একটি বিরাট অংশ তৃণমূল বিএনপিতে যেতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করছেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ দেখতে চায় বিএনপি। আর এ লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং এক রকমের প্রচ্ছন্ন চাপ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কোনো চাপ নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সংহত থাকুক, বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকশিত হোক। কারণ গণতন্ত্র হলো উন্নয়ন এবং উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত। আর সে কারণেই তারা বাংলাদেশে একটি অর্থবহ ও অবাধ, সুষ্ঠ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়।