এডিটর’স মাইন্ড

একজন আত্মস্বীকৃত খুনি এবং মার্কিন ভিসানীতি

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৩ জুন, ২০২৩


Thumbnail

রাশেদ চৌধুরী। আত্মস্বীকৃত খুনি। বীভৎস হত্যাকারী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে কিছু ঘৃণ্য ব্যক্তি।

ইতিহাসের এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। আর এ নিকৃষ্টতম কাণ্ডটি যারা সরাসরি ঘটিয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম রাশেদ চৌধুরী। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের পর খুনি মোশতাক হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছিল। মোশতাকের অবৈধ সরকার জারি করেছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।

সেনা অসন্তোষ এবং বিশৃঙ্খলার মুখে ’৭৫ -এর ৩ নভেম্বর ক্ষমতাচ্যুত হয় মোশতাক। ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর ধারায় ৭ নভেম্বর ক্ষমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। জিয়া ছিলেন ১৫ আগস্ট ষড়যন্ত্রের অন্যতম কুশীলব। তাই ক্ষমতা দখল করে তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বহাল রাখেন।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের বিশেষ বিমানে বিদেশে পাঠিয়ে দেন। ক্ষমতায় থিতু হয়ে জিয়া খুনিদের কূটনৈতিক চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। এটি ইতিহাসের আরেক ভয়াবহ অধ্যায়। জিয়ার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন এরশাদ। তিনিও জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিদের দুধে-ভাতে রাখেন।

যারা কূটনৈতিক চাকরি করত তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরশাদের পতনের পরও খুনিদের গায়ে আঁচড় লাগেনি। ’৯১-এ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দেশে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি জয়ী হয় সেই নির্বাচনে। ’৯১-এর সংসদে আওয়ামী লীগ-বিএনপি একমত হয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থায় ফিরে যায়। কিন্তু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলে বিএনপি রাজি হয় না। ’৭৫-এর ঘাতকদের বিচারের পথ রুদ্ধই থেকে যায়। বেগম জিয়া খুনিদের আরেক দফা পদোন্নতি দেন। এ সময় খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ব্রাজিলে বদলি করা হয়। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। রাশেদ চৌধুরী এ সময় ব্রাজিল থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পাহারাদার। তাদের হাতেই যেন দায়িত্ব বিশ্ব মানবাধিকার রক্ষার। বিশ্বে কোনো দেশে গণতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি খুঁজে দেখে দেশটি। গণতন্ত্র মেরামত না করলে কানমলা দিয়ে দেয় অথবা কঠোর শিক্ষকের মতো ক্লাস থেকে বের করে দেয়। মানবাধিকারের একটু বিচ্যুতিও মার্কিন কর্তাদের নজর এড়ায় না। নানা স্যাংশন দিয়ে শাস্তি দেয়। মাঝেমধ্যে ভাবি, আহা। যুক্তরাষ্ট্র না থাকলে কী হতো বিশ্বের গণতন্ত্রের, কী হতো মানবাধিকারের। এরকম মানবাধিকার রক্ষকের দেশে ঢুকে পড়ল পৃথিবীর ইতিহাসের নিকৃষ্টতম খুনি। যে কি না নিজেই তার পৈশাচিকতার কথা বুক ফুলিয়ে বলে বেড়ায়। অনেকেই আহলাদে আটখানা হয়ে গেল। পালাবি কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কী না পরিশ্রম করে। কত না ডলার ব্যয় করে। তাদের দেশে গেছে এরকম নৃশংসতম আত্মস্বীকৃত খুনি! ব্যাটার তো আর বাঁচার পথ নেই। আমরা নিশ্চিত হলাম রাশেদ চৌধুরীর আর রক্ষা নেই। অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকলাম, কখন খবর পাব তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাশেদকে গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানো হয়েছে নাকি অন্য কোথাও। কিন্তু কী আশ্চর্য আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেল। বহাল তবিয়তে যুক্তরাষ্ট্রের এখানে-সেখানে অবাধে ঘুরে বেড়ায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন বিল ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মস্বীকৃত খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেন। ক্লিনটন বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ব্যস, ওই পর্যন্তই। আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বে এসে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু হয়। বিশেষ ট্রাইব্যুনালে না করে শেখ হাসিনা প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত নেন। চলে দীর্ঘ আইনি লড়াই। এ সময় কয়েকজন খুনিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। কিন্তু রশীদ, ডালিম, নূর চৌধুরীসহ কয়েকজন পলাতক। এদের মধ্যে মানবাধিকারের ঠিকাদার রাষ্ট্রের কোলে বসেছিল খুনি রাশেদ চৌধুরী। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া চলে দীর্ঘদিন। অন্যদিকে চলে বিদেশে পলাতক আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর কূটনৈতিক উদ্যোগ। সে সময় আবুল হাসান চৌধুরী ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরবর্তীতে একটি দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘আমার মনে আছে ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘তারা (অভিযুক্তরা) এ দেশে থাকুক তা আমি দেখতে চাই না। ’ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল হক ছিলেন আশাবাদী মানুষ। তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘প্রচলিত আইনে বিচার হলে বিদেশে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। খুনিদের ফেরত আনা সহজ হবে। ’ কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত রাশেদ চৌধুরী বহাল তবিয়তেই ছিল মার্কিন মুল্লুকে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ হন আইনমন্ত্রী। তিনি তার নিজের লেখা গ্রন্থেই (কারাগারে কেমন ছিলাম, পৃষ্ঠা-১৪১) স্বীকার করেছেন, তার সরকার সর্বোচ্চ আদালতে এ বিচার প্রক্রিয়াকে আটকে দিয়েছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন একদিকে এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করেন, অন্যদিকে পলাতক খুনিদের চাকরিতে পুনর্বহাল করেন। এদিকে ‘মানবাধিকার’ রক্ষক যুক্তরাষ্ট্রও ২০০৪ সালে আত্মস্বীকৃত খুনিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০৬ সালে দেয় নাগরিকত্ব। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। দ্রুত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দণ্ড কার্যকর না হওয়ার দুঃখ নিয়েই ২০০২ সালের ২৮ অক্টোবর পরপারে চলে যান সিরাজুল হক। পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার দায়িত্ব নেন আনিসুল হক। আপিল বিভাগের রায়ের পর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার যুক্তি আরও দৃঢ় হয়। এ সময় রাশেদ চৌধুরীসহ খুনিদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করে। যারা গ্রেফতার ছিল তাদের দণ্ড কার্যকর করা হয়। আমি আশা করেছিলাম দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অন্তত দ্রুত রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেবে। কিন্তু বহুবার রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লিখিত আবেদন করেছে বাংলাদেশ। হায় মানবাধিকার! এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নির্বিকার। যুক্তরাষ্ট্র কোনো অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয় ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট’ অনুযায়ী। গত ২৪ মে থেকে বাংলাদেশে এ আইনটি নিয়ে বেশ মাতামাতি চলছে। এ আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। কীভাবে একজন অভিবাসী মার্কিন নাগরিক হতে পারেন তার বিস্তারিত শর্ত আছে এ আইনে। একটি নির্দিষ্ট সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেই চলবে না, তাকে অন্তত ২০টি শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- কোনো ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি (তা যে দেশেরই হোক না কেন), মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী, হত্যাকারী, নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। শুধু তাই নয়, কোনো অভিবাসী যদি এ ধরনের কোনো তথ্য গোপন করে নাগরিকত্ব পান তবুও ভবিষ্যতে যদি প্রমাণ হয় যে তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা তথ্য গোপন করে নাগরিকত্ব পেয়েছেন তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিল করা হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বহিষ্কার করা হবে। সাফ কথা। আইনে এরকম নির্দেশনার মধ্যে কোনো তবে, যদি, কিন্তু নেই। মানবাধিকারে চ্যাম্পিয়ন দেশে তো এমনই আইন হওয়া চাই। কিন্তু রাশেদ চৌধুরীর বেলায় এ আইন কি প্রযোজ্য হয়েছে? না হয়নি। ২০১৮ এবং ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুবার চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ট্রাম্প বিষয়টি অ্যাটর্নি অফিসকে দেখতে বলেন। কিন্তু জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সবকিছু থমকে গেছে। এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলে বিষয়টি তাদের না, অ্যাটর্নি অফিসের। আইনমন্ত্রী নিজে মার্কিন অ্যাটর্নি অফিসে যোগাযোগ করেছেন। সময় চেয়েছেন। কিন্তু গত দেড় বছরে মার্কিন অ্যাটর্নি অফিস এ নিয়ে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত করেনি। ব্যস, এভাবেই চলছে। বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রই যখন একজন আত্মস্বীকৃত, সর্বোচ্চ আদালতে দণ্ডিতকে ফেরত দেয় না, তখন কানাডাও খুনি নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠায় না। কানাডার যুক্তি হলো- সে দেশে যেহেতু মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ তাই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তারা ফেরত দেবে না। রশীদ, ডালিমসহ অন্য পলাতক খুনিদেরও বিভিন্ন দেশ রাখছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র খুনিকে আশ্রয় দিয়েছে। পাঠক একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো, যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্টকে খুন করে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে আশ্রয় নিল, তাকে কতক্ষণ বাংলাদেশ রাখতে পারত? তাকে বাংলাদেশ নাগরিকত্ব দিলে কী কেলেঙ্কারি হতো? কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সব পারে। তারা যা করবে সেটিই সঠিক। তারা যা বলবে এ বিশ্বে সেটিই আইন।

এখন যখন মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের উচ্ছ্বাসের বন্যা, তখন খুনি রাশেদ চৌধুরীর ঘটনাটি আমার মনে পড়ল। এ কারণেই দীর্ঘ ইতিহাস এক ঝলক স্মরণ করলাম। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের ঘোষণার পর প্রধান দুই দলের নেতারা এটি তাদের ‘বিজয়’ বলে চিৎকার, চেঁচামেচি করছেন। আওয়ামী লীগের নেতা ওবায়দুল কাদের আবিষ্কার করেছেন ‘ফখরুলের ঘুম হারাম হয়েছে। ’ মির্জা ফখরুলও কম যান না। তিনি গবেষণা করে পেয়েছেন ‘আওয়ামী লীগের সুর নরম হয়ে গেছে। ’ নতুন ভিসানীতি ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় গিয়ে ধন্য হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র যা চেয়েছিল তা ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর একনিষ্ঠ আনুগত্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব। বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর প্রভুত্ব। এক ভিসানীতি নিয়ে রাজনীতিতে যে মাতম শুরু হয়েছে তাতে মনে হতেই পারে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ বোধহয় যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে আছে। মার্কিন ভিসা না পেলে বাংলাদেশে যেন লঙ্কাকাণ্ড ঘটে যাবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও অভয় দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘যারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তাদের জন্য ভিসানীতি উদ্বেগের নয়। ’ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে খুব জানতে ইচ্ছা করে যে, রিকশাচালক দিনমান রোদে পুড়ে রিকশা চালান, তিনি তো সুষ্ঠু ভোট চান। ওই রিকশাচালক কি মার্কিন ভিসা পাবেন? কিংবা গ্রামের তরুণ মেধাবী অনেক কষ্টে লেখাপড়া করছে অথবা গ্রামের খেতমজুর কিংবা ড. ইউনূসের ঋণে নিঃস্ব হওয়া বিধবা নারী? তারা তো সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে। তারা কি মার্কিন ভিসা পাবে? এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যারা ভিসা আবেদন করেন তাদের অনেকেই প্রত্যাখ্যাত হন। যাদের যুক্তরাষ্ট্র নানা কারণে ভিসা দেয় না তাদের নামের তালিকা কি ফলাও করে প্রকাশ করে? কিন্তু এক্ষেত্রে করা হবে। তাদের প্রকাশ্যে অপমানিত করা এ ভিসানীতির একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে কোন দেশে বছরে কতজনকে ভিসা (নন-ইমিগ্র্যান্ট) দেওয়া হয় তার সংখ্যা পাওয়া যায়। ওই তালিকায় দেখা যায়- ২০১৩ সালে ২৮ হাজার ৮০ জন বাংলাদেশের নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দিয়েছিল। ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ২৫ জনকে ভিসা দেওয়া হয়। গত বছর বাংলাদেশ থেকে মার্কিন ভিসা পেয়েছেন ২৯ হাজার ২০২ জন। গত ১০ বছরে আনুমানিক প্রায় ২ লাখ বাংলাদেশি মার্কিন ভিসা পেয়েছেন। প্রায় সমান সংখ্যক আবেদনকারী প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। অর্থাৎ ভিসা নীতিমালা সাধারণ নাগরিকদের কোনো মাথাব্যথার বিষয় নয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা গুরুত্বপূর্ণ, হোমরাচোমরা তাদের জন্য এ ভিসানীতি অস্থিরতা তৈরি করেছে। প্রশাসনের যে বড় কর্তা যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানদের পড়ান, সেখানে স্ত্রী থাকেন। কর্তা ঢাকায় এক ব্যাচেলর জীবনযাপন করেন। সব টাকা সেখানে পাঠিয়ে ‘সততা’র চাদরে নিজেদের ঢেকে রাখেন। এ ভিসানীতি তাদের উতালা করেছে। যেসব রাজনীতিবিদ কানাডায় সেকেন্ড হোম বানিয়ে, বেগমপাড়ায় রাজবাড়ী বানিয়েছেন। সন্তান-স্ত্রীকে সেখানে রেখেছেন। দেশের কিছু একটা হলেই উড়াল দেবেন। মার্কিন ভিসানীতি তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। যে ব্যবসায়ী হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এখন আওয়ামী লীগের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগ হয়েছেন। ব্যাংক ফোকলা বানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডায় টাকা পাচার করে নব্য মুজিব সৈনিক হয়েছেন; মার্কিন ভিসানীতি তার জন্য দম বন্ধ করার মতো খবর। যুক্তরাষ্ট্র জেনে-বুঝেই এ ভিসানীতি করেছে। গণতন্ত্র, ভোট, মানবাধিকার দেশের আপামর জনগণ নষ্ট করে না। এসব ধ্বংস করে মুষ্টিমেয় কিছু মতলববাজ, লুটেরা, সুবিধাবাদী। এরা সব দলে আছে। সব সরকারের সময়েই প্রশাসনে এরা খবরদারি করে। এরাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। মার্কিন ভিসানীতি এদের লক্ষ্য করেই করা হয়েছে। এ কারণে এ ভিসানীতি ধন্যবাদ পেতেই পারে। এরা যদি গণতন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে জল ঘোলা না করে তাহলে গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের এ দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় মার্কিন নীতি এবং আইন অনেকটা জলের মতো। মার্কিন প্রশাসন একে যখন যে পাত্রে রাখে সেই আকার ধারণ করে। যেমন ভিসানীতি যে আইনের দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছে সেই আইন অনুযায়ী খুনি রাশেদ চৌধুরীর নাগরিকত্ব পাওয়ার কথা নয়। অথচ ঘৃণ্য ঘাতক বহাল তবিয়তেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিপোর্ট করার কথা। তিনি তো বেশ আছেন। একজন সামরিক কর্মকর্তা, তিনি র‌্যাবে থাকার সময় ‘ক্রসফায়ারের’ জন্য আলোচিত ছিলেন। এক-এগারোর সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন কোন নীতিমালায়? নিঃশর্ত মার্কিন অনুগতদের জন্য এ বিশ্বে সাতখুন মাফ। অনুগত হয়ে হামিদ কারজাইয়ের সীমাহীন দুর্নীতি কোনো অপরাধ নয়। কিন্তু মার্কিন বশ্যতা স্বীকার না করায় চিলির আলেন্দেকে প্রাণ দিতে হয়। তাই প্রশ্ন, এ আইন ও নীতি কি বাংলাদেশে সমভাবে সবার জন্য প্রয়োগ হবে? মার্কিন নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশে যারা সুশীল সেজে বসে আছেন, যারা এক-এগারোর মতো আবার একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চান, বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে দীর্ঘস্থায়ী একটি অগণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করতে চান- এরা গণতন্ত্রের শত্রু, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রধান বাধা। তারা কি এ নীতির আওতায় আসবেন? সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে-বিপক্ষে কারা তা কে নির্ধারণ করবে? এ দেশে অনুগত মার্কিন ভৃত্যগণ? এসব প্রশ্নের কারণ হলো- অতীত অভিজ্ঞতা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থে পক্ষপাতপূর্ণভাবে আইন ও নীতিমালা প্রয়োগ করেছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদেরই অবমুক্ত করা দলিলে। এসব দলিল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পিএল ৪৮০ এর ১০৩ (ঘ) (৩) ধারা প্রয়োগ করে বাংলাদেশে ৭৪-এ গম পাঠায়নি যুক্তরাষ্ট্র। কিউবায় চটের বস্তা রপ্তানি করা হয়েছে অভিযোগে সে সময় পিএল ৪৮০ এর ওই ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল। অবমুক্ত দলিলে পাওয়া যায় হেনরি কিসিঞ্জার এবং তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব স্টেট টম অ্যাডামের কথোপকথন। যাতে বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়া উভয়েই কিউবায় পণ্য রপ্তানি করলেও কিসিঞ্জার ইন্দোনেশিয়াকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশে ৭৩ হাজার টন গম পাঠানো বন্ধ করেন।

মার্কিন অবমুক্ত দলিলে পাওয়া যায় ’৭৫-এর খুনিরা ১৯৭৩ থেকেই মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করেছিল। ১৯৭৩ সালের ১১ জুলাই মেজর রশীদ মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে জিয়াউর রহমানের পক্ষ থেকে সমরাস্ত্র কেনার ব্যাপারে কথা বলে। মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন কর্মকর্তা নিউবেরির নিশ্চয়ই জানার কথা, একজন মধ্যস্তরের সেনা কর্মকর্তা এভাবে অস্ত্র কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসতে পারে না। ১৯৭৪ সালে খুনি ফারুক বাংলাদেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনার কথা মার্কিন দূতাবাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস ইউজিন বোস্টার ওয়াশিংটনে ২১৫৮ নম্বর তারবার্তার মাধ্যমে এ তথ্য জানান। মার্কিন দলিলেই প্রকাশ করা হয়েছে ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডির আগে খুনি ফারুক একাধিকবার মার্কিন দূতাবাসে গেছে। অথচ মার্কিন ঘোষিত নীতি হলো- তারা কোনো রাষ্ট্রে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল এবং সামরিক অভ্যুত্থান সমর্থন করে না। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত, তাঁকে সপরিবারে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সম্মতি ছিল। শুধু বাংলাদেশ কেন, বহু রাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে তাদের পছন্দের পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুতে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রতিবাদ করেনি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল চায়নি। খুনিদের নাগরিকত্ব দিয়েছে। একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- একটি দেশ নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত আগ্রহী হয়, যখন একটি দেশ নিয়ে নীতিমালা করে, সে দেশে তখনই বড় বিপর্যয় হয়। ক্ষমতা বদল হয়। মার্কিন সমর্থনপুষ্ট সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা হয়। অবশ্য যেসব দেশে দৃঢ়ভাবে তাদের আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়ায়, যে দেশের নেতারা জনগণকে এ ব্যাপারে সজাগ এবং ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন, তারা মার্কিন ইচ্ছার বিপরীতে অবস্থান নিতে পারেন। যেমন ছিল মাহাথিরের মালয়েশিয়া, এখন যেমন তুরস্ক। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের নির্বাচনে এরদোগানকে হারাতে সব চেষ্টাই করেছিল। কিন্তু রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দৃঢ় নেতৃত্ব এবং জনপ্রিয়তা তা প্রতিরোধ করেছে। মার্কিন অভিপ্রায়ের কথা আরেক দৃঢ়চেতা নেতা শেখ হাসিনা ভালো করেই জানেন। এ জন্যই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কঠোর উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু ভিসানীতির পর আওয়ামী লীগের কিছু নেতার আত্মতুষ্টি আনন্দ আমাকে বিচলিত করেছে। আওয়ামী লীগের অতি মার্কিন ভক্তরা কি তা ’৭৫-এ বাংলাদেশ দেখেছে। শঙ্কা হয় বাংলাদেশ কি তাহলে আরেকটি আগস্ট ট্র্যাজেডির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আবার অনির্বাচিত সরকার?

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

কিউবার প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যার বন্ধু, তার শত্রুর দরকার নেই।’ এ কথাটি যে কত বড় সত্য তা বাংলাদেশ এখন খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। জো বাইডেনের সঙ্গে সেলফি, নৈশভোজে আমন্ত্রণের পর গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের ওপর যখন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেছিলেন। সেদিনই তিনি জাতিসংঘে ভাষণ দেন। ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারির কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত এমনই। তাদের হাস্যোজ্জ্বল চেহারার আড়ালে থাকে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের ভয়ংকর প্রতিজ্ঞা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ শুরুর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিল, বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাইডেনের মিষ্টি কথা স্রেফ সৌজন্যতা। ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চমৎকার’ সম্পর্ক ব্লিঙ্কেনের এমন মধুর বাণী স্রেফ কথার কথা। ভারত কিংবা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের মত বদলাতে পারেনি। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র তার এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে সত্যি কি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় বসাতে চায়? যারা হবে তাদের একান্ত অনুগত। যেমনটি তারা করেছে পাকিস্তানে।

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতার হাতবদলের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, আগামী তিন মাসের মধ্যে একটি নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কি না, হলেও তা কীভাবে হবে এ নিয়ে এখন নানা বিতর্ক, নানা আলোচনা। বিশেষ করে গত শুক্রবার কয়েকজনের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা নতুন মাত্রা পেয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে একটি অসাংবিধানিক বা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। গণতন্ত্রের মৃত্যু হবে। বাংলাদেশকে একাধিকবার এরকম দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। বাংলাদেশকে কি আবার সেই পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা তারই যেন এক বার্তা।

বিএনপি একদফা দাবিতে আন্দোলন করছে। প্রতিদিনই সমাবেশ, রোডমার্চের মতো নানা কর্মসূচিতে ব্যস্ত ১৬ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়, এমন একটি অনড় অবস্থান নিয়েছে দলটি। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও একই দাবিতে আন্দোলন করেছিল। বিএনপির তীব্র আন্দোলনের পরও সরকার সে সময় নির্বাচন করতে সক্ষম হয়। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন সবাই মনে করেছিল এ সংসদ বেশি দিন টিকবে না। দ্রুতই আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ শেষ পর্যন্ত পূর্ণ মেয়াদে কার্যকর থাকে। এটিই বাংলাদেশে ’৭৫-পরবর্তী প্রথম সংসদ যেখানে দেশের প্রধান দুটি দলের (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) একটির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও মেয়াদ পূর্ণ করে। এর আগে ১৯৮৬-এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। ’৮৭-তে সংসদ ভেঙে দেন এরশাদ। ’৮৮-এর নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই বর্জন করে। ’৯০-এ গণআন্দোলনে এরশাদের পতন হলে, ওই সংসদও বিলুপ্ত হয়। ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একতরফা নির্বাচন করে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দলগুলো তখন একাট্টা হয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছিল। বিরোধী দলের দাবিতে উপেক্ষা করে বেগম জিয়া একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের আন্দোলনের মুখে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বেগম জিয়া সংসদ ভেঙে দিতে বাধ্য হন। ওই সংসদ একটি কাজ করেছিল। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সন্নিবেশিত করেছিল, যা ২০১১ সালে সংবিধান থেকে অপসারিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছিল দলীয় সরকারের অধীনেই কিন্তু ওই নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপিদলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জন করছে দলটি। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন এবং দুর্নীতি পশ্চিমাদের জন্য বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা চরমে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হতে হবে, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করেনি। কিন্তু ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের শর্ত জুড়ে দিয়ে নির্বাচন কে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটাই এখন বিএনপির শক্তির প্রধান উৎস। বিএনপি মনে করছে, ২০১৪ সালের মতো এবার আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করলে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা তা মেনে নেবে না। ফলে এ নির্বাচনের আগে-পরে নানা নিষেধাজ্ঞা দেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গুটিয়ে নেবে। একতরফা নির্বাচন করলেও সরকার টিকতে পারবে না—এমন হিসাবেই বিএনপি নেতারা ফুরফুরে আত্মবিশ্বাসী। নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত ২০ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনকে লেখা এক চিঠিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বাজেটের অজুহাত দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিক চিঠিতে বলা হলেও এর পেছনে অন্য তাৎপর্য আছে। গত ৬ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে। ওই সফরে তারা প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেন। নির্বাচন নিয়ে আপাতত বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা নেই, এমন ধারণা থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ সিদ্ধান্ত নিল বলে আমার ধারণা। ইইউ শুধু যে বাংলাদেশে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই নয়, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি ইস্যুতে হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে সম্প্রতি গৃহীত এক প্রস্তাব বাংলাদেশের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। সেখানে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধা পায়। এ রপ্তানি সংকুচিত হলে কিংবা জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশ বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে। এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রতিদিন কমছে। এরকম পরিস্থিতিতে ইইউ বাণিজ্য সংকোচন নীতি নিলে তা হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো। তাহলে কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুঝেশুনেই হুমকি দিয়ে রাখল। ইইউ গণতন্ত্রকে মানবাধিকারের অন্যতম শর্ত মনে করে। নির্বাচন পর্যবেক্ষক না পাঠানোর সিদ্ধান্ত কি আগামী নির্বাচন ব্যাপারে তাদের অনাস্থার প্রকাশ। একতরফা নির্বাচন করলে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবেই কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ যদি নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয়, তাহলে একতরফা (বিএনপিকে বাদ দিয়ে) নির্বাচনের ভার কি সরকার বইতে পারবে? ২২ সেপ্টেম্বরে কয়েকজনের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুখে যে যাই বলুক, একটা ভয় সঞ্চারিত হয়েছে সরকারের ভেতর। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে। বিএনপি ছাড়া নির্বাচন যে যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না, এটা এখন স্পষ্ট। প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন নিয়েই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের শেষ অবস্থান জানাবেন। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন চায় না, এমন বক্তব্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেই দেওয়া হচ্ছে। ‘বাংলাদেশে একটি তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র—এমন অভিযোগ এসেছে শাসক দলের পক্ষ থেকেও। যদিও যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যাই বলা হোক না কেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার জন্য বিশ্ব মোড়লের যে ভূমিকা আছে, তার অস্বীকার করবে না কেউই। বিএনপি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান অবলীলায় একবিন্দুতে মেলানো যায়। বিএনপি বলছে, তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আর পরোক্ষভাবে পশ্চিমারা বলছে, বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তাহলে বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জন করে আর পশ্চিমা দেশগুলো যদি বলে বাংলাদেশের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। সে ক্ষেত্রে কী হবে? গণতন্ত্র কি নির্বাসনে যাবে? দেশে আবার একটি অসাংবিধানিক শাসন কায়েম হবে?

কয়েকজন বাংলাদেশির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের ওপর মার্কিন ভিসা নীতিতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের নিষেধাজ্ঞা দেবে।’ মার্কিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী। ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ি নিয়ে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছেন। আত্মমর্যাদা এবং সম্মানের অবস্থান ধরে রেখেছেন। কিন্তু সরকারের মধ্যে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের বিপরীত কর্মকাণ্ড করছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা বিতর্কিত, বিভ্রান্তিকর। সকালে তারা এক কথা বলে, বিকেলে বলে আরেক কথা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী যেন মতামত দেওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বললেন, ‘নির্বাচনের আগে আর কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসবে না।’ এ তথ্য তিনি কোত্থকে পেলেন? আবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্কে বসে বললেন, তিনি নাকি ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ‘ভেরি মাচ হ্যাপি (খুব খুশি)।’ একাধিকবার তিনি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তা দায়িত্বহীনই শুধু নয়, কূটনীতির জন্য বিপজ্জনকও বটে। বিশেষ করে দিল্লিতে জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলার পর ড. মোমেন যা বলেছেন, তারপর তিনি কীভাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকেন, তা ভেবে পাই না। যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রতিনিয়ত ভুল বার্তা দিয়ে তিনি সরকারকে বিভ্রান্ত করছেন কি না, সে প্রশ্ন এখন উঠতেই পারে। সরকারের ভেতর বেশ কিছু মার্কিনপ্রেমী আসলে খুনি মোশতাকের ভূমিকায় অবতীর্ণ কি না, তা ভাবতেই হবে। আওয়ামী লীগের কিছু হাইব্রিড নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ান। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের কারও সঙ্গে ফটোসেশন করেই, সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার বার্তা দেন। সকাল-বিকেল মার্কিন দূতাবাসে ধরনা দেন। পিটার ডি হাসকে রাজার মর্যাদা দিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে ধন্য হন। এরা এখন কী বলবেন? ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চটানো যাবে না’—আওয়ামী লীগে সারাক্ষণ যারা এ বার্তা দেন, ব্লিঙ্কেনকে মেইল দিয়ে যেসব নব্য আওয়ামী নেতা ‘মার্কিন বশীকরণ’ বটিকা আবিষ্কারের ঘোষণা দেন, তাদের মতলব কী? এরা আসলে কার এজেন্ট। দলের ভেতর এসব অপরিণামদর্শী বাচালদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি পারবেন দেশে একটি নির্বাচন করতে? নাকি মার্কিন অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন চলছে সরকারের ভেতরেই?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ভিসা নিষেধাজ্ঞা: প্রশাসনের মধ্যে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রথম পর্যায়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার পরপরই প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের মধ্যে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মহল টেলিফোনে একে অন্যকে জিজ্ঞেস করছেন যে, কারা কিভাবে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এলেন। এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা দেখা গেছে। তবে লক্ষণীয় ব্যাপার যে প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক ব্যক্তি ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এক ধরনের ভয় এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

অন্যদিকে বিচার বিভাগের কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এমন তথ্য পাওয়ার পর বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া প্রশাসনের মধ্যে এক ধরনের ভয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং তারা সামনে কি হয় এই নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ভাষণের পর নিউইয়র্কের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। 

তিনি এটিও বলেছেন যে, বাংলাদেশে যারা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধা প্রদানের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেবে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের উদ্বেগ কতটুকু নিরসন করতে পারবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলা ইনসাইডার বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে দেখেছে যে, ভিসা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব রাজনীতিবিদদের ওপর অনেক কম পড়েছে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। বরং তারা মনে করছে যে, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞাকে মাথায় রেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামনে আরও চাপ দেবে, এটাকে মাথায় নিয়েই কাজ করতে হবে। 

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই অবস্থানটি সঠিক ছিল। কিন্তু মাঝখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিভিন্ন ব্যক্তিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের যে নাটক করেছিল সেটি সরকারের জন্য ক্ষতিকারক হয়েছে বলে তারা মনে করেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বরং কঠোরভাবে নির্বাচনের রোড ম্যাপ বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে ভিসা নীতির যে প্রভাব প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর পড়েছে সেই প্রভাব নিরসন না করতে পারলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে বলে তারা মনে করছেন। 

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা স্বীকার করেছেন যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন সামনের দিনগুলোতে এক ধরনের অস্বস্তিতে কাটাবে এবং ভিসা নীতির ভয়ে সাধারণ কাজ করতে গিয়ে আতঙ্ক বোধ করবে। এর প্রভাব পড়বে প্রশাসনের ওপর। নির্বাচনের তিন মাস আগে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে বিরোধী আন্দোলন আরও চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়াতে হবে এবং সাধারণ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এই অবস্থানের বিপরীতে অবস্থান নিতে হবে। তা না হলে এই ভিসা নীতির আতঙ্ক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করবে।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আগামী ১০০ দিন বাংলাদেশে কি ঘটতে পারে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আমি জ্যোতিষী নই। ভবিষ্যৎ গণনা আমার কাজ না। বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে কি ঘটতে পারে কোন জ্যোতিষীর পক্ষেও এখন বলা সম্ভব কিনা আমার সন্দেহ । হয়তো তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের একটি ধারণা পাওয়া যেতেই পারে। ১০০ দিনের মধ্যে দেশে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ ব্যাপারে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হবে কিনা, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে কি বিএনপি অংশ নেবে? বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন করা কি আদৌ সম্ভব হবে? সেরকম একটি নির্বাচন কি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পাবে? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে। অফিসে, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে, চায়ের আড্ডায়, হাটে-বাজারে এসব নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। অজানা এক গন্তব্যে বাংলাদেশ।

নির্বাচন হবে কিনা, তা যেমন রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর অনেকখানি নির্ভরশীল। তেমনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগামী ১০০ দিন কতগুলো ‘এক্স ফ্যাক্টর’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু’দলই রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ চাইছে। মাঠের দখলের লড়াই এখন দৃশ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত এখন শুধু আওয়ামী লীগ, বিএনপির শক্তি এবং নেতৃত্বের দক্ষতার উপর নির্ভরশীল নয়। পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই দেশের নির্বাচন এবং রাজনৈতিক গতি প্রবাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই যেমন ধরা যাক, বেগম জিয়ার অসুস্থতা। কাগজে কলমে এখনও বেগম জিয়া বিএনপির চেয়ারপারসন। যদিও তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে আছেন গত পাঁচ বছর ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে ৭৮ বছর বয়সী এই প্রবীন মানুষটি নানা রোগ শোকে আক্রান্ত। হাসপাতালে আছেন বেশ কিছুদিন ধরে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে আছেন তিনি এবং তার দল। দুটি দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়ে কারান্তরীণ ছিলেন দুই বছরের বেশি সময়। সরকারের বিশেষ বিবেচনায় তিনি কারাগার থেকে ‘ফিরোজায়’ গেছেন বটে। কিন্তু নানা শারীরিক সমস্যা তাকে রীতিমতো গ্রাস করে ফেলেছে। বিএনপি নেতারা মাঝে মধ্যেই বলেন ‘বেগম জিয়া জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।’ তার উন্নত চিকিৎসার দাবী বেশ পুরনো। বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এনিয়ে সরকারের কাছেও দেন দরবার করছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এব্যাপারে সরকার সায় দেয়নি। অনেকেই বেগম জিয়ার শেষ পরিণতির অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের মধ্যেই বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার কিছু হলে দেশে কি হবে? আগামী ১০০ দিনের মধ্যে কি বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটবে? জীবন-মৃত্যু সৃষ্টিকর্তার হাতে। কিন্তু নির্বাচনের আগে যদি এরকম কোন ঘটনা ঘটে তাহলে দেশের পরিস্থিতি কি হতে পারে? অনেকেই মনে করেন এরকম অবস্থায় বিএনপির কর্মীরা প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠতে পারেন। বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা ভাঙ্গচুর, জ্বালাও পোড়াও ঘটিয়ে দেশে সৃষ্টি করতে পারে এক অশান্ত পরিবেশ। ঘেরাও, সন্ত্রাসী তান্ডব করে দেশে তৈরী হতে পারে এক অরাজক পরিস্থিতি। সরকার সেরকম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা তা নিয়েও অনেকে শংকিত। নির্বাচনের আগে এরকম একটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা দেশে সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করতে পারে। নির্বাচনও বাধাগ্রস্থ করতে পারে। একটা সংকটময় পরিস্থিতিতে তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ পেতে পারে বলে অনেকের ধারনা। তবে আশাবাদী মানুষরা এনিয়ে শঙ্কিত নয় নানা কারণে। বেগম জিয়াকে যখন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তখনও অনেকে শংকিত ছিলেন। অনেকেই মনে করেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাবে। তেমন কিছুই শেষ পর্যন্ত হয়নি। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ে বেগম জিয়া দোষী সাব্যস্ত হন। দন্ড কার্যকর করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। তখন বিএনপির অচল করে দেয়ার হুমকি কাজে দেয়নি। বেগম জিয়ার অনাকাঙ্খিত কিছু হলে, এবারও বিএনপির নেতা-কর্মীরা কতদূর কি করতে পারে তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ আছে। কেউ কেউ মনে করেন চার/পাঁচদিন বড়জোড় এক সপ্তাহের একটা ঝড় তুলবে। তারপর সব কিছু ঠিকঠাক হবে। ঠিক হোক না হোক বাংলাদেশের আগামী ১০০ দিনের অনিশ্চয়তার যাত্রায় বেগম জিয়া একটা বড় ‘এক্স ফ্যাক্টর’। 

বেগম জিয়ার মতোই ড. ইউনূস ইস্যুও আগামী ১০০ দিনের অভিযাত্রার গতিপথ পাল্টে দিতে পারে যে কোন সময়ে। যেভাবে শ্রম আদালতে মামলা এগুচ্ছে তাতে ড. ইউনূসের রায় যে নির্বাচনের আগেই হবে তা  মোটামুটি নিশ্চিত। শ্রমিকদের এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবীদকে কারাগারে যেতে হবে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেগম জিয়ার মতো জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা নন। তার বিরাট দল, বিশাল কর্মী বাহিনীও নেই। কিন্তু বেগম জিয়ার চেয়েও ড. ইউনূস অনেক বেশি প্রভাবশালী। ড. ইউনূস ইস্যুতে ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট অবস্থান নিয়েছে। শতাধিক নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন। হিলারী ক্লিনটন এবং বারাক ওবামার মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ড. ইউনূস ইস্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। এমনিতেই গত দুবছর ধরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট সম্পর্ক নানা অস্বস্তি এবং টানাপোড়েন চলছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমেরিকা কি কি করবে তার তালিকা প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা, সহায়তা কমানোর হুমকি, সামরিক সহায়তা হ্রাস সহ নানা হুমকি আর ধমকের মধ্যে আছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এক বাঁচাল পররাষ্ট্র মন্ত্রী একাই বেসামাল কথা বলে কূটনীতির মাঠকে কর্দমাক্ত করে ফেলছেন। এই অবস্থায় ড. ইউনূস ইস্যু কি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ নিয়ে যাবে? কিছুদিন ধরেই সরকার প্রধান বলছিলেন ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাকে হয়তো ক্ষমতায় দেয়তে চায় না।’ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন ‘এখানে কেউ কেউ তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্র যে তার স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে এটা প্রমাণিত সত্য। বাংলাদেশে যেমন আমেরিকার অনেক স্বার্থ আছে, তেমনি ড. ইউনূসের ব্যাপারে তাদের আছে আলাদা আবেগ এবং পক্ষপাত। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের পরিকল্পনায় কি ঘি ঢালবে ড. ইউনূস ইস্যু? বাংলাদেশে আগামী ১০০ দিনের ঘটনা প্রভাব কোন দিকে মোড় নেবে তা অনেকটা নির্ভর করে ড. ইউনূসের মামলার রায়ের উপর। 

১০০ দিন পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়? এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে সম্পূরক প্রশ্নও জুড়ে দেয়া যায় যুক্তরাষ্ট্র যা চায় সব সময় কি পায়? আগামী ১০০ দিনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েনের পরিণতিও বোঝা যাবে। 

দেশের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পিয়াজ আলুর মূল্য নির্ধারণ করে আরেকটা অযোগ্যতার প্রমাণ রেখেছে। ঐ দামে কোথাও এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্তারা নির্লজ্জের মতো দায়িত্ব জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছে। মানুষ ফুঁসে উঠছে। অনেকেই মনে করেন, নির্বাচন, বিরোধী দল নয় সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ। গত ১৫ বছর মানুষ খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছিল। ক্ষমতার পালা বদল, কিংবা বিরোধী দলের দাবী দাওয়া বিষয়ে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে স্বপ্ন দেখতো। ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতো। কিন্তু পঁচা শামুকে পা কাটার মতো, ডেঙ্গু, দ্রব্যমূল্য, দূর্নীতি সরকারের উপর জনগনের আস্থা নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যজনক হলো এসব সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেবল অযোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন না। অসত্য বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। সংকটকে পাত্তা দিচ্ছেন না। অশান্ত, ক্ষুদ্ধ জনগণ কি করতে পারে, তা বাংলাদেশ বহুবার দেখেছে। নির্বাচনের আগে জনগণকে তাঁতিয়ে তুলতে অনেকেই চাইবে। সরকারের ভেতর কিছু অর্থব, দায়িত্ব জ্ঞানহীনরা সেই অস্ত্রই যেন তুলে দিচ্ছে বিরোধী পক্ষের হাতে। দেশে স্যালাইনের হাহাকার, দেখার কেউ নেই। মশা নিয়ন্ত্রণের নামে নজিরবিহীন জালিয়াতি এবং লুণ্ঠনের পরও কেউ কেউ দাঁত কেলিয়ে হাসেন। বাজারে আগুন নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী এবং সচিবের বক্তব্য মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে এসব ঘটনা বিস্ফোরণ সৃষ্টি করতে পারে। আগামী ১০০ দিনে এসব প্রতিকূলতার দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে সরকারকে। বিএনপি এখন এক দফা দাবীতে আন্দোলন করছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দলটির টানা কর্মসূচী রয়েছে। বিএনপি নেতারা অক্টোবরের মধ্যে আন্দোলনকে একটা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু একা বা নাম সর্বস্ব কিছু সঙ্গী সাথীকে নিয়ে আন্দোলন করে বিএনপি এক দফা আদায় করতে পারবে, এটা বিএনপির নেতারাও বিশ্বাস করেন না। বিএনপি তাদের আন্দোলনের সাফল্যের জন্য এসব এক্স ফ্যাক্টরের উপরই নির্ভরশীল। বেগম জিয়ার কিছু হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে, বিএনপির একদফা আদায় সহজ হবে। কিংবা ড. ইউনূস ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর চূড়ান্ত নাখোশ হবে। বাংলাদেশের উপর নানা নিষেধাজ্ঞা দেবে। শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধ করবে। ব্যস। এক দফা আদায়ের পথ সুগম হবে। এরকম সব যদি, তবে, কিন্তুর উপর ভর করে বিএনপি আন্দোলন করছে। তাই জো বাইডেনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সেলফি থেকে বিএনপির কর্মীরা হতাশ হন। আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রী যখন গ্রামের চাওয়ালার মতো শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষায় সেলফির গল্প শোনান, তখন তারা উজ্জীবিত হন। তাই ১০০ দিনে দেশের বা বিএনপির গন্তব্য নির্ধারণে ক্ষমতা বিএনপির নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে চারপাশের ঘটনা প্রবাহের উপর। বিএনপি না পারলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কিন্তু ঠিকই পারে ১০০ দিনের ঘটানা প্রবাহের গতিপথ নির্ধারণ করতে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চায় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। সংবিধান সম্মুন্নত রাখা। সংবিধান অনুযায়ী এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নির্বাচন। আগামী ১০০ দিনে এই লক্ষ্যে অবিচল থেকে দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হবে দলটিকে। এজন্য প্রথম এবং প্রধান কাজ জনগণের আস্থা অর্জন। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি। কিন্তু তার মন্ত্রী সভা এবং চারপাশে কিছু ব্যক্তির চেহারা দেখলেই সাধারন মানুষ ইদানিং ক্ষুদ্ধ হয়ে যায়। আগামী  ১০০ দিনের জন্য এসব অনাকাঙ্খিত ভাঁড় এবং দূর্বৃত্তদের ক্ষমতা কেন্দ্র থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। সরকারের ভেতর থেকে বা সরকারের সুবিধাভোগী ১০০ জনকে বাদ দিলেই সরকারের চেহারাটা আবার চমৎকার হবে। এসব অযোগ্য চাটুকার লুটেরাদের ভার এখন আর কোন ভাবেই সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব হবে না। 

দলেও একটা শুদ্ধি অভিযান করতে হবে। হাইব্রিড, উদ্বাস্তু, শেকড়হীনদের সরিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসাতে হবে জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিম, মির্জা আযমের জনপ্রিয় নেতাদের। প্রকৃচি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা হঠাৎ বনে যাওয়া নাদুস নুদস জনবিচ্ছিন্ন নব্য নেতাদের ঘরবন্দী করতে হবে। ত্যাগী পরিক্ষীত দিতে হবে রাজপথের দায়িত্ব। জনগণের কাছে যেতে হবে পরিচ্ছন্ন নেতাদের। টিন চোর, কাবিখা চোর, নিয়োগ বাণিজ্য করা, টেন্ডারবাজ, মুখোশধারী রাজাকারদের বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে পরিচ্ছন্ন, বিতর্কহীন, কলুষমুক্ত প্রার্থীদের। তাহলেই মানুষ আশাবাদী হবে। ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ভোট উৎসবে যোগ দেবে। আসলে ১০০ দিন পর বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে কিনা তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের উপরই। আওয়ামী লীগ কি পারবে, মুষ্টিমেয় কয়েকজন অর্থপাচারকারী, ব্যাংক লুটেরা, সিন্ডিকেট, দূর্নীতিবাজ, অযোগ্য, অর্থব চাটুকার, মুখোশধারী রাজাকারদের হাত থেকে দল এবং সরকারকে মুক্ত করতে। তাহলেই বন্দরে নিরাপদে নৌকা ভিড়বে। 


সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

প্রাক পর্যবেক্ষণের পরেই মার্কিন নিষেধাজ্ঞা?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটুকু অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে, নির্বাচনের পরিবেশ কতটুকু আছে তা পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে আসছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এবং ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এর যৌথভাবে স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষা (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন বলে জানা গেছে। নানা কারণে এই প্রতিনিধি দলের সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। বিশেষ করে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান বারবার পুনরুক্ত করছে। 

আগামী নির্বাচনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা চায়। আর এরকম নির্বাচন যদি না হয়, নির্বাচনকে যদি বাধাগ্রস্ত করা হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা সহ একাধিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে এমন ঘোষণা আসছে। তবে নির্বাচনের আগেও এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিনিধি দল আসছে সেই প্রতিনিধি দলের রিপোর্ট এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে বলেই কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল যদি সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে দেখেন যে আলাপ-আলোচনা এবং সমঝোতার মাধ্যমে বাংলাদেশে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটা অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব তাহলে তারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাবে। আর যদি তারা দেখে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ সম্ভব নয় তাহলে তারা সরকারকে বিভিন্ন রকম পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাতে পারে। পাশাপাশি এই প্রতিনিধি দল যদি পর্যবেক্ষণ করে দেখে যে, নির্বাচনের পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ এবং এখানে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়ার কোনো পরিবেশ নেই তাহলে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ব্যাপারে চূড়ান্ত অবস্থান কি হবে তা নির্ভর করছে এই স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্ট এর ওপর। এই রিপোর্টটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক মহল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল এসে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, নির্বাচন কমিশন সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবেন এবং একটা মতামতের চেষ্টা করবেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কতগুলো সরাসরি অবস্থান রয়েছে। তারা সরাসরি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সরাসরি সমর্থন করতে পারে না। তারা সরাসরি কোনো রাজনৈতিক আলোচনার মধ্যস্থতাও করতে পারে না। তবে বাংলাদেশে যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় এটি তাদের প্রত্যাশার জায়গা। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুটি কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। প্রথমত তারা মনে করছে, এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা যাতে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করে। ফলে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছে, যদি এক তরফা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে অস্ত্রগুলো আছে সেই অস্ত্রগুলো প্রয়োগ করবে। এখন দেখার বিষয় পর্যবেক্ষণ দল ঢাকায় এসে কি মনোভাব নিয়ে যান।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   ভিসা নীতি   প্রাক পর্যবেক্ষণ দল  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

পাঁচ বিষয়ে অনড় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশের ব্যাপারে পাঁচটি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনোরকম সমঝোতায় পৌঁছতে চাচ্ছে না। এ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানের এতটুকু পরিবর্তন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এম আবদুল মোমেন। সেখানে তারা বিভিন্ন মার্কিন কূটনৈতিক কর্মকর্তার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করছেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলেট এর সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়াও পররাষ্ট্র দফতরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সাথেও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠক করেছেন। উজরা জেয়ার সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক কূটনৈতিকদের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই সমস্ত কোন বৈঠকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে একমত হচ্ছে না। তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করছে না। যে সমস্ত বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনড় রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নির্বাচনে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো। এই জন্য রাজনৈতিক সংলাপ দরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের রাজনৈতিক সংলাপে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করবে না। সংলাপ প্রক্রিয়ার জন্য মধ্যস্থতার ভূমিকাতেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবতীর্ণ হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা রাজনৈতিক সমঝোতাকে স্বাগত জানায় এবং রাজনৈতিক সংলাপের প্রতিও তাদের আগ্রহ রয়েছে। 

২. ড. ইউনূস ইস্যু: ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান ফৌজদারী মামলার কার্যক্রম গুলোর স্থগিত চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার বিষয়ক ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি উজয়া জেয়া সরাসরি ভাবে পররাষ্ট্র সচিবকে জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন। ড. ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার এমন একটি মন্তব্য করা হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর সেই বক্তব্যকে সমর্থন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূস ইস্যুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। 

৩. মানবাধিকার ইস্যু: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদিলুর রহমান খান এবং অধিকার সহ অন্যান্য মানবাধিকার ইস্যুতে তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেনি। বরং মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে আরও দায়িত্বশীল সংবেদনশীল এবং যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে এবং এই ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ছাড় দেবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে। 

৪. নিখোঁজ ৭০ জনের ব্যাপারে তদন্ত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে ৭০ জন নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তির ব্যাপারে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো গ্রহণযোগ্য সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। এই ৭০ জনের ব্যাপারে সঠিক তথ্য তারা নির্বাচনের আগে নিশ্চিত করতে চায়। আর এ ব্যাপারেও তারা কোন ছাড় দিতে আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। 

৫. সাইবার সিকিউরিটি আইন: সাইবার সিকিউরিটি আইনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী। এই আইনের বিষয়েও তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি না। তারা মনে করে, এ ধরনের আইন  সরকারের বাতিল করাই উচিত। 

এইসব বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের যে মতদৈত্যতা সেই মতদৈত্যতার জায়গা থেকে ২ দেশ এখনও একটা সম্মানজনক সমঝোতার জায়গায় আসতে পারেনি।

বাংলাদেশের নির্বাচন   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   নিউইয়র্ক   পররাষ্ট্রমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন