টানা তৃতীয়বারের
মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। সব জল্পনা-কল্পনার
অবসান ঘটিয়ে, পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করে গত ২৮ মে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত হন। তবে এবার তার জয় সহজসাধ্য ছিল না। নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে কঠিন পরিস্থিতি
মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। পশ্চিমাবিশ্ব মনেপ্রাণে এরদোয়ানের পরাজয় কামনা করেছিল। দেশের
রাজনৈতিক দলগুলো তার বিরুদ্ধে একট্টা হয়েছিল। তুরস্কের সংকটময় অর্থনীতি ব্যাকফুটে নিয়ে
গিয়েছিল ক্ষমতাধর এ প্রেসিডেন্টকে। নির্বাচনের আগে ভয়াবহ ভূমিকম্প তাকে আরও কোণঠাসা
করে; কিন্তু সব বাধা পেরিয়ে এরদোয়ান বিজয়ী হয়েছেন। তুরস্কের জনগণ তার ওপর আস্থা রেখেছে।
এ বিজয় শুধু এরদোয়ানের একার বিজয় নয়, এ বিজয় দেশে দেশে উন্নয়নের রূপকার অর্থনীতির রাজনীতিতে
বিশ্বাসী রাষ্ট্রনায়কদের বিজয়। তুরস্কের নির্বাচন পশ্চিমা শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের
ঐক্যের এক বার্তা। এ জয়ের পর এরদোয়ান বলেছেন, এ বিজয় তুরস্কের গৌরব এবং আত্মমর্যাদার
জয়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’
একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। গণমাধ্যমটি পূর্বাভাস দিয়েছে, ‘তুরস্কের
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মতো নিজ দেশে নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আবারও শেখ হাসিনা এবং
ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হতে পারেন।’ এরদোয়ানের রাজনৈতিক চিন্তা ও দর্শনের সঙ্গে
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শের বিস্তর ফারাক। এরদোয়ান ধর্মনিরপেক্ষ
তুরস্ককে একটি ইসলাম-ভাবাপন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা
প্রাণপণে অসাম্প্রদায়িক; ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের শেষ প্রদীপটি জ্বালিয়ে রেখেছেন। তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট ইসলামপন্থি এ কে পার্টি গঠন করেন। তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা পিতা মোস্তফা কামাল
আতাতুর্কের চেতনা ও আদর্শের বিপরীত এক রাজনৈতিক মেরূকরণ সৃষ্টি করেছেন এরদোয়ান। অন্যদিকে
শেখ হাসিনা জাতির পিতার দেখানো পথেই হাঁটছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠাই শেখ
হাসিনার রাজনীতির মূল লক্ষ্য; কিন্তু আদর্শিকভাবে দুই নেতা সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে
অবস্থান করলেও তাদের উন্নয়ন ও নাগরিক ভাবনার অনেক মিল। দুই নেতারই রাজনীতির প্রধান
লক্ষ্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। দুজনই তাদের মেয়াদে নিজেদের দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ঈর্ষণীয়
জায়গায় নিয়ে গেছেন। এরদোয়ান তুরস্কের ক্ষমতা কেন্দ্রে আছেন ২০ বছর। ২০০৩ সালে তিনি
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৭ ও ’১১ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে টানা তিন
মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা
পান। এ জনপ্রিয়তার কারণে কামাল আতাতুর্কের পর এরদোয়ান সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতায় পরিণত
হন। ২০১৪ সালের ১০ আগস্ট তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে
তুরস্কের সংবিধান পরিবর্তন হয়। সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থা
প্রবর্তিত হয়। ২০১৪ থেকে টানা দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রিসেপ
তাইয়েপ এরদোয়ান। ২০ বছরে তুরস্কের অর্থনীতি তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। জনগণের
জীবনমানের উন্নতি হয়েছে ব্যাপকভাবে। উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিয়েছেন দেশের সব অঞ্চলে।
এরদোয়ানের শাসনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আত্মমর্যাদার পররাষ্ট্রনীতি। ধীরে ধীরে
তুরস্ককে মুসলিমবিশ্বের কণ্ঠস্বরে পরিণত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চোখে
চোখ রেখে কথা বলেছেন। ন্যাটোর সদস্য হয়েও তিনি এ সামরিক জোটে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির
বিরোধিতা করেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্বের বাইরে নিজস্ব অবস্থান
নিয়েছেন। মুসলিমবিশ্বের ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এরদোয়ানের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের জনগণের কছে যেমন তিনি জনপ্রিয়, তেমনি বিশ্বনেতা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
তাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
বাংলাদেশেও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। টানা ১৪ বছরের বেশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর
দায়িত্বে। ৫২ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রে প্রায় ২০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন
শেখ হাসিনা। গত ১৪ বছরে তিনিও বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। একটি দরিদ্র, পরনির্ভর
রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে তিনি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। আশ্রয়ণ, কমিউনিটি
ক্লিনিক; আমার বাড়ি আমার খামারের মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে
প্রশংসিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর
পারমাণবিক প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। শেখ
হাসিনাকে বলা হয় আধুনিক, উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুত ধাবমান একটি সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রের
নির্মাতা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মাধ্যমে তিনি স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ করেছেন।
বিশ্বরাজনীতিতেও শেখ হাসিনা উজ্জ্বল। তার বিশ্ব শান্তির মডেল এবং ‘কমিউনিটি ক্লিনিক;
দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। তিনিই একমাত্র সরকারপ্রধান—যার
দুটি উদ্ভাবনী দর্শন জাতিসংঘে গৃহীত হয়েছে। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও নতজানু না থেকে
দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে ভারত ও চীনের সঙ্গে সমান্তরাল
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করে, তিনি কূটনৈতিক বিচক্ষণতার প্রমাণ রেখেছেন। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে
মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা ‘বিশ্বমানবতার’ প্রতীক ‘বিশ্বনেতা’ হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। মার্কিন চাপে নতজানু না হওয়ার কারণে শেখ হাসিনা বিশ্বে আলোচিত।
জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একক নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
বিশ্বে যে কজন
নেতা আলো ছড়াচ্ছেন, তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা এবং রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অন্যতম। দুই নেতার
জনপ্রিয়তা ও সাফল্যের যেমন মিল আছে, তেমনি তাদের টিকে থাকার সমস্যা এবং সমালোচনাগুলোও
প্রায় একই ধরনের। কঠিন এক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এরদোয়ান নির্বাচন করেছেন।
অর্থনৈতিক সংকট তার টানা তৃতীয়বার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়াকে সংশয়ের মধ্যে ফেলেছিল। ঠিক
একইভাবে, টানা ১৪ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্বাচনী
বছরে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে। অর্থনীতির সুখের দিনগুলো ঝাপসা হতে শুরু করেছে। বৈদেশিক
মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচার, বিদ্যুৎ সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে
মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এরদোয়ানের মতোই অর্থনৈতিক সংকটের বোঝা মাথায় নিয়েই তাকে নির্বাচনী
লড়াইয়ে যেতে হবে।
এরদোয়ানের বিরুদ্ধে
তুরস্কের বিরোধী দলগুলো জোট বেঁধেছিল। তাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে কেমাল কিলিচদারোগলুকে
বিরোধী পক্ষের একক প্রার্থী করা হয়েছিল। নির্বাচনে এত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় যে, প্রথম
দফা ভোটে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। নির্বাচন রানঅফে গড়ায়। বাংলাদেশেও
আগামী নির্বাচন ঘিরে বিরোধী জোট ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি করছে। যে কোনো মূল্যে শেখ হাসিনাকে
হটাতে চায় বিরোধীরা। এমনকি তারা ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনের পর জয়ী হলে জাতীয় সরকার গঠন
করবে।
তুরস্কের নির্বাচনে
বিরোধী জোটকে নানাভাবেই সমর্থন দিয়েছিল পশ্চিমাবিশ্ব। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল
তুরস্কে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হোক। বাংলাদেশের চিত্রটা প্রায় একইরকম। আওয়ামী লীগ সরকার
এবং শেখ হাসিনাকে সব ধরনের চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত দুই বছর ধরে এ চাপ ক্রমেই বাড়াচ্ছে
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রটি। বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বারবার সতর্কবার্তা দিচ্ছেন মার্কিন কর্তারা। সর্বশেষ গত
২৪ মে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা
করেছে। এ ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না করলে, ভোটে কারচুপি
করলে; ভোট প্রদানে বাধা প্রদান করা হলে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। শুধু যে
সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী ব্যক্তিই ভিসাবঞ্চিত হবেন এমন না, তার পরিবারের
সদস্যদেরও ভিসা দেওয়া হবে না। নতুন ভিসা নীতি নিয়ে এখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি
তর্কযুদ্ধ চলছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি এটি কার বিরুদ্ধে গেছে, তা প্রমাণের চেষ্টায় ব্যস্ত।
রাজনৈতিক বক্তৃতায় যে যাই বলুক না কেন, নতুন ভিসা নীতি সরকারের ওপর একটি মার্কিন চাপ।
বাংলাদেশে রাজনীতির বাতাসে গুজবের পরিমাণ ভয়ংকর রকম বেশি। নির্বাচন কীভাবে হবে তার
চেয়ে নির্বাচন আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী
দলগুলো যদি নির্বাচন বর্জন করে তাহলে সেই নির্বাচন কি করতে দেবে যুক্তরাষ্ট্র? এটি
এখন এক কোটি টাকার প্রশ্ন। নতুন ভিসা নীতি প্রশাসনে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং
কিছু রাজনীতিবিদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করেছে। ২০১৪ সালের মতো করে একটি নির্বাচন,
কিংবা বিএনপি ছাড়া একটি নির্বাচনের ঝুঁকি এখন আর আমলারা নেবেন কি না, তা নিয়েও রাজনৈতিক
অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা। এসব বাধা পেরিয়ে শেখ হাসিনা কি পারবেন সংবিধান অনুযায়ী
নির্বাচন করতে? জয়-পরাজয় পরের কথা, নির্বাচন অনুষ্ঠানই এখন বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
এরদোয়ানের দীর্ঘ
শাসনে সুশীল বুদ্ধিজীবীরা তার কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেছিল। তারা তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে
কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। এরদোয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে
বিরোধী মত দমনেরও। এসব অভিযোগ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলে পশ্চিমা গণমাধ্যম। নির্বাচনের আগে
তাকে একজন নিষ্ঠুর একনায়ক প্রমাণের চেষ্টায় মেতে ওঠে অনেকে। বাংলাদেশেও সুশীল সমাজ
এখন একই ভূমিকায়। প্রতিদিন ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ বলে আর্তনাদ করছেন কেউ কেউ। সরকারকে
টেনেহিঁচড়ে নামিয়ে ফেলার হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে; মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। রীতিমতো
হৈচৈ করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। সুশাসন, মানবাধিকার ও বিরোধী মত দমনের
মতো বিষয়গুলো করা হয়েছে আন্তর্জাতিকীকরণ। আর এ প্রচারণায় মদদ দিচ্ছে পশ্চিমাবিশ্ব।
এরদোয়ানের মতোই শেখ হাসিনাকে এসব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে নির্বাচনের আগে।
এরদোয়ান জনগণের
ওপর নির্ভর করেছেন। জনগণই তার আসল শক্তি। একাই তিনি স্রোতের বিপরীতে লড়েছেন। শেখ হাসিনাও
একাই। দলে কিংবা সরকারে তাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। চেনা-অচেনা শত্রুর বিরুদ্ধে
লড়ছেন তিনি। এরদোয়ান জিতেছেন; শেখ হাসিনা কি জিতবেন? ‘ইকোনমিস্ট’ পূর্বাভাস বলেছে—শেখ
হাসিনা জিতবেন; কিন্তু এ জয় সহজসাধ্য নয়। তুরস্ক ক্ষমতাধর দেশ। পশ্চিমারা তাদের বিরুদ্ধে
চক্রান্ত করে কিন্তু খবরদারি করতে পারে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে; তবে এখনো তুরস্কের
মতো ক্ষমতাবান হতে পারেনি। এখনো বাংলাদেশের ওপর খবরদারির চেষ্টা চলে। তুরস্ক ন্যাটোর
সদস্য। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নানা কৌশলগত কারণে দেশটির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ অতটা
সুবিধাজনক অবস্থানে নেই; কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের আছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। তারা হারে
না। পরাভব মানে না। বাংলাদেশে এখন লড়াইটা গণতন্ত্র থাকা না থাকার। সংবিধান রক্ষার।
সংবিধান সমুন্নত রাখার। এ লড়াইয়ে শেখ হাসিনাকে জিততেই হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।