এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতির জন্য ভয়ঙ্কর ১৭ দিন

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আজ সকালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে তিনি নিউইয়র্কে গেছেন। আগামী ৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই ১৭ দিন প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকবেন না। আর এই ১৭ দিনই রোডমার্চসহ রাজপথে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারকে অচল করে দিতে চায় বিএনপি। গতকাল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই রোডমার্চ তখনই শেষ হবে যখন সরকারের পতন হবে।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আজ থেকে টানা ১৫ দিনের কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। এই ১৫ দিনের কর্মসূচি হবে বিভিন্ন এলাকায় রোডমার্চ এবং পর্যায়ক্রমে এই রোডমার্চ গুলো ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করবে বলেও বিএনপি নেতারা বলছেন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি দেশে নেই এই সুযোগটাই বিএনপি নিতে চাইছে।

বিএনপির একজন নেতা বলছেন, শেখ হাসিনা দেশে না থাকলেই আওয়ামী লীগ দুর্বল থাকে, সরকার দুর্বল থাকে। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আর এই সময় আন্দোলনের একটা গতি আনতে চায় বিএনপি। 

বিএনপির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আগামী ১৫ দিন বিএনপি রাজনীতিতে চমক দেখাবে। এই সময় জামায়াতও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। জামায়াত বিএনপির স্ট্রাইকিং ফোর্স এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অর্থাৎ একদিকে বিএনপি রোডমার্চের কর্মসূচি পালন করবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত রাখবে। অন্যদিকে জামায়াত বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করবে। এরকম একটি কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে একটি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। 

সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বলছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকলে তারা চিন্তাহীন থাকেন, ভার মুক্ত থাকেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এবং তাৎক্ষণিক সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। যেকোনো সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীকে পাওয়া যায় এবং তিনি এই ধরনের কঠিন এবং জটিল সিদ্ধান্ত সহজেই দিতে পারেন। 

একজন সরকারি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাও বলেছেন, দীর্ঘদিনের রাজনীতির অভিজ্ঞতা এবং দেশ পরিচালনায় দূরদর্শিতার কারণে যেকোনো সংকটে প্রধানমন্ত্রী বিচলিত হন না। বরং ঠান্ডা মাথায় সংকট সমাধানের চেষ্টা করেন। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী দেশে থাকবেন না এবং সময়ের একটা বড় পার্থক্য রয়েছে। এ কারণেই এই সুযোগটি বিএনপি নিতে চাইছে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে যদি তারা একটা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে সেটি হবে তাদের আন্দোলনের সফলতা। আর এই কারণেই বিএনপি হিসেবে-নিকেশ করে প্রধানমন্ত্রী যখন দেশে নেই তখনই কর্মসূচি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আজকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও এখন চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এই মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও এটি ডিজিটাল যুগ, সার্বক্ষণিকভাবে তিনি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, নেতাকর্মীদের ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এবং যেকোনো অরাজক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তিনি দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন।
 
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গণভবনে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও তিনি বিরোধী দলের আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করার জন্য জনপ্রতিনিধিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলেও সার্বক্ষণিকভাবে তিনি যোগাযোগের মধ্যে থাকবেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতির এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চাইছে। আগামী দুই সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী ১৫ দিন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ভয়ঙ্কর সময় হিসেবে সামনে আসতে পারে বলে মনে করছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

রাজনীতির খবর   বিএনপি   প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

১০ ডিসেম্বর ঘিরে ‘ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক’

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কি হতে পারে বাংলাদেশের ওপর তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলাপ আলোচনা। যদিও সরকার প্রকাশ্যে বলছে, ১০ ডিসেম্বর কিছুই হবে না। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কিছু আরোপ করবে না। কিন্তু কূটনীতিকপাড়ায় এ  নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছে। নির্বাচনের ব্যাপারে একই কথা বারবার বলছে। আবার অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে বাংলাদেশ আক্রান্ত হতে পারে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এক ধরনের আঘাতের পূর্বাভাস বলে অনেকে মনে করছেন। সেগুনবাগিচার কূটনীতিক পাড়ায় এ নিয়ে ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক বিরাজ করছে। 

অনেকে মনে করছেন, যদি আকস্মিক ভাবে এরকম কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কোন কিছু আরোপ করা হয় তাহলে সেটি আমাদের নির্বাচনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই রকম আতঙ্কের প্রধান কারণ হল ২০২১ সালের অভিজ্ঞতা। ওই বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে কেউই কোন কিছু জানতেন না। এটিকে অনেকেই বাংলাদেশের কূটনীতির একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করেন। ঠিক একই রকমভাবে এবারও যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাহলে এটি সরকারের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বাংলাদেশ ওয়াশিংটনের দিকে খোঁজখবর রাখছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ হচ্ছে, এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ থাকুক না থাকুক এটি নিয়ে যে সরকারের মধ্যে চিন্তাভাবনা আছে তা খুব স্পষ্ট। কারণ এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এই সময়টা যদি নির্বাচনের আগে না হত তাহলে হয়তো সরকার এটিকে আমলে নিত না।

বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু ভারতের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নাক গলাচ্ছে না এবং নির্বাচনের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন করছে, সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল নিতে পারে এবং সেই কৌশলের অংশ হিসাবে মানবাধিকার দিবসে কোন নিষেধাজ্ঞা বা অন্য কিছু আরোপ করে কি না সেটি নিয়ে কেউ কেউ চিন্তিত এবং এটি কূটনীতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। 

মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে আসন্ন রিপোর্ট সেখানে দুটি বিষয় থেকে পর্যবেক্ষক মহল নজর রাখবে। প্রথমত, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কি অবস্থান থাকে সেটি দেখার। কারণ এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কতটুকু উন্নত হল সে সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কি তা জানা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের এই মানবাধিকার রিপোর্টে।

দ্বিতীয়ত, এই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে যদি কোন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কারো বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কিনা সেটা দেখার বিষয়। যদি মানবাধিকার সম্পর্কে বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয় তাহলে সেটিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন কূটনীতিক মহল। তারা মনে করেন যে প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ব্যাপারে সবসময় নেতিবাচক মন্তব্যই থাকে এবং এটি তাদের একটি স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল না কেন মানবাধিকার রিপোর্টে কারোরই প্রশংসা করা হয়নি। যদিও এই মানবাধিকার রিপোর্টের কদিন আগে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের ওপর যে মার্কিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ১০ ডিসেম্বরে মার্কিন রিপোর্টে কি থাকে? তবে এটি ইতোমধ্যে একটি ডিপ্লোম্যাটিক প্যানিক তৈরি করেছে।

১০ ডিসেম্বর   আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   মানবাধিকার রিপোর্ট   বাংলাদেশ   ভারত   বাংলাদেশের নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

দুইশ এমপির নির্বাচনী বাগান তছনছ

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সমস্ত এমপিরা নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা তাদের এলাকা সাজিয়ে ছিলেন নিজেদের মতো করে। থানাগুলোর ওসি দিয়েছিলেন নিজের পছন্দের, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়েছিলেন একান্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত। এমনকি ডিসি, এসপি পর্যন্ত নিজেদের বশীভূত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন তারা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই সমস্ত এমপিদের নির্বাচনী সাজানো বাগান তছনছ করে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এই সমস্ত এমপিরা। 

গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতেছিলেন এ রকম প্রায় দুইশ এমপি এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। আওয়ামী লীগ ৭১ জনকে বাদ দিয়েছে, জাতীয় পার্টিও কয়েকজনকে বাদ দিয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ৭১ জন এমপি মনোনয়ন পাননি তাদের আবার ৬৩ জনই স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। অর্থাৎ দুইশর বেশি বর্তমান এমপি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠে। এমপিরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের পক্ষে রাখার জন্য তৎপর ছিলেন। এই জন্য তারা কেউ ডিও দিয়েছেন। কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেন দরবার এবং তদবিরও করেছেন। লক্ষ্য একটাই নির্বাচনে যেন প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আনুকূল্য পাওয়া যায়। বিশেষ করে ২০১৪ এবং ২০১৮ নির্বাচনের অভিজ্ঞতার পর অধিকাংশ এমপি মনে করতেন যে, নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রশাসনের নির্ভরতার কোন বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পাশে রাখতে হবে। আর সে কারণেই তারা চেষ্টা তদবির করে নিজেদের পছন্দের লোককে থানার ওসি বানিয়েছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বানিয়েছিলেন। এমন একটা পরিকল্পনা ছিল যে তারা এই সমস্ত প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে সহায়তা করবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে এ রকম আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন এটা তারা কখনও ভাবতে পারেননি। 

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। কাজেই প্রশাসনে রদবদলের কি দরকার—এরকম একটি ধারণাই তাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন একদিকে যেমন ওসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ঢালাও বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যদিকে জেলা প্রশাসকদের ব্যাপারেও কঠোর নজরদারি রাখছে। ইতোমধ্যে দুজন জেলা প্রশাসককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। যদি কোন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে, যদি তারা কোন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে অতিরিক্ত আনুগত্য দেখায় বা আনুকূল্য দেখায় সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা বলাই বাহুল্য। 

অন্যদিকে ওসিরাও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বদলি হতে শুরু করেছেন। এর ফলে যারা নতুন ওসির দায়িত্ব নেবেন, তারা একদিকে যেমন পক্ষপাতিত্ব করবেন না, অন্যদিকে পক্ষপাতিত্বের প্রলোভন থাকলেও এ ধরনের ঝুঁকি নিতে নেবেন না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ফলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একটি পথ সুষ্পষ্ট হয়েছে। কারণ যারা মাঠ প্রশাসনে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তারা কাউকে চিনবেন না এবং কারও পক্ষ অবলম্বন করবেন না বলেই ধারণা করা যেতে পারে। 

তাছাড়া এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় শক্তি হল স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। কাজেই দুই পক্ষই আওয়ামী লীগ, দুই পক্ষের সঙ্গে সরকারের সমর্থন রয়েছে। একপক্ষে গিয়ে নিজেরা বিপদে পড়তে চাইবেন না কেউই। আর এ কারণেই এবার নির্বাচনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হস্তক্ষেপ মুক্ত হবে বলে অনেকে ধারণা করছেন। ফলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তরতাজা স্বতন্ত্ররা, পাশে শেখ হাসিনা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

এবার নির্বাচনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। প্রায় ৮০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। এদের মধ্যে শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। তাতে কি! যারা বাতিল হয়েছে তারাও আপিল করেছেন আর যে ৭০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন তারা এবার নির্বাচনে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।

আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে বিভিন্ন নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকে বসিয়ে দেওয়া বা একটা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করছিলেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে স্ববিরোধিতাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান যেমন বলেছেন যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোন অস্তিত্ব নাই, তাদের বিরুদ্ধে দলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যেমন বলছেন যে, স্বতন্ত্র প্রার্থী যে কেউ হতে পারবে না, এটা দল ঠিক করে দেবে, তেমনটি বলেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং তিনি স্পষ্টতই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যারাই তার কাছে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নালিশ করতে তারাই উল্টো ধমক খাচ্ছে। কারণ তিনি বারবার বলে দিয়েছেন যে যার খুশি সে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তারা নিজ যোগ্যতায় জিতে আসবে। 

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভয়ভীতি দেখালে, তার নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিলে বা পেশিশক্তির প্রয়োগ করে তাকে ঠান্ডা করতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই বার্তা প্রশাসনে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলেছে যে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন করে সেটি নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে এবার নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে স্বস্তিতে এবং ফুরফুরে অবস্থানে রয়েছে। বহু আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে আছে এবং অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যদি একটা বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের বিভিন্ন নেতাদেরকে যারা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন তাদেরকে সুস্পষ্ট ভাবে তিনটি বার্তা দিয়েছেন। 

প্রথমত, কোন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় পার্টি ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও তাদেরকে স্ব স্ব প্রতীক নিয়ে উন্মুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের নেতাদের বলেছেন, আপনারা ১৫ বছর ক্ষমতায় আছেন, আপনাদের সংগঠন কোথায়? আর শেষ পর্যন্ত করুণা করে হলেও ১৪ দলের শরিকদের কিছু আসন দেওয়া হলেও জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ব্যাপারে সম্মত নন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বরং তিনি চান বেশি সংখ্যক প্রার্থী অংশগ্রহণ করুক বেশি ভোটাররা ভোট দিক। এর ফলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে এক বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোন কাজের জন্য তিরস্কৃত বা বহিষ্কৃত হবেন না। 

দ্বিতীয়ত, তাদেরকে প্রচারণা করার ক্ষেত্রে দলের প্রার্থীরা বাধা দেবেন না। 

তৃতীয়ত, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে বসিয়ে দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না। এই সমস্ত কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে একটা বিস্ফোরণ দেখা যাচ্ছে এবারের নির্বাচনে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কৌশলের একটি অংশই হল স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচনে প্রার্থী করা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যেন নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকেন, শক্তপোক্ত করতে পারেন সেটা তিনি মনেপ্রাণে চাইছেন। তার প্রধান লক্ষ্য হল নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা এবং জনগণের অভিপ্রায়ের যেন প্রতিফলন ঘটে সেটা নিশ্চিত করা। এর ফলে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্রতা সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

শেখ হাসিনা   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   স্বতন্ত্র প্রার্থী  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের কৌশল কি আত্মঘাতী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

৩০ নভেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। শেষদিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা। কারাগার থেকে বেরিয়েই এ বিএনপি নেতা যেভাবে ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, তা বিস্ময়কর। শাহজাহান ওমরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত, রওশন এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া, রেকর্ড পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগে চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়া ইত্যাদি সবই ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী কৌশল। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি আগামী নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ করতে চায়। ভোট উৎসব করতে চায়। সেজন্যই এতসব আয়োজন। বিএনপি এবং তার মিত্রদের বাদ দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার রাজনৈতিক কৌশলে শেষ পর্যন্ত কি আওয়ামী লীগ সফল হবে? নাকি এ কৌশল তাদের জন্য হবে বুমেরাং? এ কৌশলে আওয়ামী লীগের লাভ হলো না ক্ষতি?

বিএনপি-জামায়াত অংশ না নিলেও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী হয়েছে ২ হাজার ৭৪১ জন। প্রায় ৮০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীই ৪০০-এর ওপর। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হচ্ছে না। ওই নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব, নাশকতার কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণ এবং বহির্বিশ্ব এ নির্বাচন মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নেয়। ওই সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করে। এবার দেশি-বিদেশি সবাই ২০১৪-এর মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিনা ভোটে এমপি হওয়া যাবে না। প্রত্যেক আসনে ‘ডামি প্রার্থী’ দেওয়ার কৌশলের কথাও তিনি দলের নেতাকর্মীদের জানিয়েছিলেন। ব্যস, আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সবাই এটাকে সবুজ সংকেত হিসেবে মনে করেন। দলীয় মনোনয়ন যারা পাননি তারা ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়াটাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাম্পার ফলন হয়েছে এই নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও বুঝতে পেরেছেন এভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিস্ফোরণ দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরপর থেকে বারবার বলছেন, যথেচ্ছভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যাবে না। দল ঠিক করে দেবে কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ‘এ’ টিম আর আওয়ামী লীগ ‘বি’ টিমের লড়াই। কোথাও কোথাও ‘সি’ টিম, ‘ডি’ টিমও আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে যদি ক্ষমতাসীনরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে না পারে, তাহলে সমূহ বিপদ। এর ফলে বহু আসনে নৌকা প্রার্থীর বদলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের বিজয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ অবশ্য মনে করতেই পারে যেই জিতুক, এমপি তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী তাৎপর্য হবে ভয়াবহ। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই আওয়ামী লীগ হয়ে পড়বে বিভক্ত। একপক্ষ অন্যপক্ষের সঙ্গে মারামারি, খুনোখুনি করবে। একে অন্যের চরিত্র হনন করবে। সারা দেশে সংগঠনে সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হবেন, তখন তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানো হবে কঠিন। কেউ মন্ত্রী হতে চাইবেন, কেউ বিক্রি হবেন। কেনাবেচার বাজারে তারা আওয়ামী লীগের ওপরই যে চাপ সৃষ্টি করবেন না, তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারবে?

এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটগত ঐক্য নিয়ে এখন পর্যন্ত একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। একমাত্র হাসানুল হক ইনু ছাড়া ১৪ দলের আর কোনো নেতার আসন সংরক্ষিত নয়। ২০০৮-এর নির্বাচন থেকে গত তিনটি নির্বাচনী আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে করেছে। মহাজোট এবং ১৪ দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটের অংশ। জাতীয় পার্টি ছাড়া মহাজোটের শরিক অন্য সব দলই নৌকা প্রতীকে গত তিনটি নির্বাচন করেছে। এবার কী হবে? যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৪ দলের শরিকদের জন্য তারা আসন ছেড়ে দেবে। মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কটি আসন দেবে, তা কি ১৪ দলের শরিকরা মানবে? এ নিয়ে মনোমালিন্য, মান-অভিমান, তিক্ততার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কথাই ধরা যাক। দলটির প্রধান নেতা রাশেদ খান মেননের আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের জনপ্রিয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমকে। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই মেননকে বরিশালের একটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব দেবে। ওই আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন। আছেন বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন দলীয় সিদ্ধান্ত মানবে? আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংগঠন কি মেননের জন্য কাজ করবে, না বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য কাজ করবে? রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির আরেক নেতা ফজলে হোসেন বাদশার আসনেও হবে একই নাটক। এ লেজে-গোবরে অবস্থায় যদি আওয়ামী লীগের শরিকরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে আমি অবাক হব না। সেটা হবে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার আরেক সংকট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা ভালো করেই জানেন ভোটের বাজারে তারা মূল্যহীন। আওয়ামী লীগের প্রতীক এবং কর্মী-সমর্থকরাই তাদের ভরসা। সেই ভরসাতেও অপমান, উপেক্ষা সহ্য করে তারা অনেকটাই চাকরবাকরের মতো জোটে আছেন। কিন্তু এবার সত্যি তাদের একটা অপমানজনক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বড় উদারতা না দেখালে জোট নিয়ে এক অস্বস্তিতে পড়বে আওয়ামী লীগ। আলাদা আলাদা নির্বাচনের যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, তা তাকে বন্ধুহীন করতে পারে।

জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাত। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আচরণ, কথাবার্তা সবই ছিল সন্দেহজনক। গত দুই বছর ধরেই তিনি কখনো বিএনপির চেয়ে বড় বিরোধী দল, কখনো সুশীলদের চেয়েও বড় বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠতেন। এ কারণেই সরকার ‘রওশন এরশাদ’কে একান্ত আপনজন করে রাখত। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি যখন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কালক্ষেপণ করছিলেন, তখন রওশন এরশাদই ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জি এম কাদেরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। নির্বাচনমুখী নেতাদের সামলাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে নিশ্চয়ই সরকার খুশি হয়েছে। জি এম কাদেরের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া এবং সমঝোতার কারণেই রওশন এরশাদ জাপায় মাইনাস হয়ে গেলেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু জি এম কাদেরের প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়? জি এম কাদেরকে আস্থায় আনতে যেভাবে রওশন এরশাদকে টিস্যু পেপার বানানো হলো, তার ফল খারাপও হতে পারে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কী করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ভুলে যায়নি। ওই নির্বাচনে রওশন এরশাদই শেষ রক্ষা করেছিলেন। এবার জি এম কাদের যে এরশাদের পথে হাঁটবেন না, তা কে বলবে। সেরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনী মাঠে কে ধরে রাখবে? জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল কি ঝুঁকিপূর্ণ হলো না?

এবার নির্বাচনের আগে দুটি ‘কিংস পার্টি’ বেশ সরব হয়েছিল। একটি তৃণমূল বিএনপি, অন্যটি বিএনএম। দুটি দলেরই প্রধান টার্গেট ছিল বিএনপি থেকে লোক ভাঙানো। দুটি দলই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো দলই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। বিএনপি থেকেও বড় কোনো নেতা এসব দলে যোগ দেননি। এখন এই দুটি দল আওয়ামী লীগের দায়ে পরিণত হয়েছে। এরা ভোটে নয়, সমঝোতায় এমপি হতে চায়। সরকার তাদের ভোটে জিতিয়ে সংসদে আনবে এমন প্রত্যাশায় এরা নির্বাচনে এসেছে। এসব দলের যে সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীদের যোগ্যতা তাতে দুয়েকজন ছাড়া আর কেউ ভোটের মাঠে জামানত রাখতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ। এদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সরকারকে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করাটা কতটা জরুরি। ছোটখাটো অনিয়মও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করবে। গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। কাজেই এত বড় ঝুঁকি সরকার বা আওয়ামী লীগ কি নেবে? আবার ভালো নির্বাচনে এরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে, আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করবে।

আওয়ামী লীগ কেন শাহজাহান ওমরকে দলে ভেড়াল? এ থেকে আওয়ামী লীগ কী পেল? আদর্শহীন ব্যক্তিকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে ক্ষমতাসীনরা কি প্রমাণ করল না, তারাও ভাঙাগড়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের এরকম প্রক্রিয়ার যুক্ত হওয়া কি শোভন। এই কৌশলে কি লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো না?

নির্বাচন প্রসঙ্গ এলেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। সব দল অংশগ্রহণ করার পরও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এর প্রধান কারণ ছিল প্রার্থী এবং প্রশাসনের যোগসাজশ। অতি উৎসাহীদের দায়িত্বহীন কাণ্ড। এবার নির্বাচন অনেকটাই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ লড়াই। বিরোধীরা এ নির্বাচনে তৃতীয়পক্ষ। তাই এ নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ থাকার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাউকে জেতাতে বা হারানোর দায় নেই কারও। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র, যারা প্রার্থী তারা সবাই প্রভাবশালী। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রার্থীরা নানাভাবে ঘনিষ্ঠ। ক্ষমতার শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা কি শেষ পর্যন্ত জনগণের মতামতের ওপর নির্ভর করবে, না জয়ী হতে সব অপকৌশল প্রয়োগ করবে?

আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তপসিল ঘোষিত হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলও হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন এখনো অনেক দূরের পথ। এ পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে, তা সামাল দিতে পারবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল কি পারবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যেতে?


লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   শেখ হাসিনা   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কাদের-শাহ জাফর নাকি শমসের

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে কারা বিজয়ী হবে তা নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না তখন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আওয়ামী লীগ যে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটি নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে মজার যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল কারা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব পালন করবে। শেষ পর্যন্ত যদি ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রধান আকর্ষণ হবে কে হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল? 

এর আগে গত তিনটি নির্বাচনে একটিতে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল ছিল। অন্য দুটিতে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি বিরোধী দল হয়। ২০১৪ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে। আর ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও তারা তৃতীয় হয়েছিল। জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। যদিও ওই নির্বাচনকে বিএনপি গ্রহণযোগ্য মনে করে না। গ্রহণযোগ্য মনে না করলেও সেই নির্বাচনের পর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে গিয়েছিল এবং প্রায় পুরোটা সময় সংসদে থাকার পর তারা শেষ মুহূর্তে এসে পদত্যাগ করেছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও তিনটি রাজনৈতিক দল আলোচনা আছে। এই তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে দুটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় এসেছে সেই দুটি দল এবং জাতীয় পার্টি রয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময় আলোচনায় আসা দলগুলোর মধ্যে একটি হল বিএনএম। বিএনএম এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক বিএনপি নেতা শাহ্ আবু জাফর। তিনি ফরিদপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনএম এবার যে আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তার মধ্যে কয়েকটি আসনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে ফরিদপুরের আসনে বা শাহ্ আবু জাফর সহ আরও কয়েকটি আসনে তারা চমকে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ৮২টি আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও যদি বিএনএম দ্বিতীয় প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে শাহ্ আবু জাফর বিরোধী দলের নেতা হবেন। 

এই নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপিকে নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা এবং প্রত্যাশার জায়গা ছিল। তৃণমূল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা তিনশ আসনে প্রার্থী দিবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে পারুক না পারুক তৃণমূল বিএনপির অনেকগুলো আসনেই ভালো ফল করবে। বিশেষ করে তৃণমূল বিএনপির সভাপতি এবং মহাসচিব এই নির্বাচনে ভালো ফলাফল করবেন। তৃণমূল বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দল হন বা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী হতে পারেন বিরোধী দলের নেতা।

জাতীয় পার্টি গত দুবারের বিরোধী দল। এবারও জাতীয় পার্টির ২৮৭ টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পরই তারা সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থা আগের মতো নেই। তাছাড়া দলের মধ্যে নানা রকম বিভক্তি এবং অর্ন্তকলহ রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তারা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে দ্বিতীয় দল হয় সেক্ষেত্রে জিএম কাদের হবেন বিরোধী দলের নেতা।

জি এম কাদের   জাতীয় পার্টি   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   তৃণমূল বিএনপি   বিএনএম   শাহ্ জাফর  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন