এডিটর’স মাইন্ড

বিএনপির জন্য ‘লাল কার্ড’

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৩ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

২৪ আগস্ট ১৯৫৪। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ তম প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ার একটি ব্যতিক্রমী আইনে স্বাক্ষর করেন। ‘দ্য কমিউনিস্ট পার্টি কন্ট্রোল এ্যাক্ট’ শিরোনামে এই আইনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মুক্ত মত প্রকাশের দেশে একটি রাজনৈতিক দলকে রাষ্ট্রীয় ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা যায় কিনা, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয় সেসময়। কিন্তু আইনটির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল ‘গণতন্ত্র এবং সন্ত্রাস এক সাথে চলতে পারে না। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের আর কোন পথ নেই।’ ১৯৫৪ সালের এই আইনটির অনেকগুলো ধারা বাতিল হয়েছে। অনেক রাজ্যই এই আইনকে বাতিল করেছে। কিন্তু এখনও আইনটি বহাল আছে। আইন অনুযায়ী বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মুক্ত গণতান্ত্রিক দেশটিতে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র একা নয়। বিশ্বের বহুদেশে সন্ত্রাসবাদকে লালন, সংবিধান লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রের জন্য বিপদজ্জনক হওয়ায় বহু রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়েছে এবং হচ্ছে। অনেক দেশেই একটি রাজনৈতিক দল প্রচন্ড জনপ্রিয় হবার পরও সন্ত্রাসবাদকে লালন করার অপরাধে সংগঠন করার অধিকার হারায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের পাশের দেশ কানাডা। ১৯৪০ সালে সে দেশে উগ্র ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ‘ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টিকে’ নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ একই, উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদকে লালন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতে ৪০টিরও বেশী সংগঠন নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ সংগঠন গুলোর সবগুলোই সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত। মাওইস্ট কমিউনিস্ট সেন্টার অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট অব বোরোল্যান্ড, পিপলস লিবারেশন আর্মি, পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল সোসালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ডের মতো সংগঠন গুলো ভারতের অখন্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে। এজন্য এসব সংগগঠনকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

ভুটান শান্তির দেশ। কিন্তু ৮০’র দশকে দেশটিতে রাজনৈতিক সন্ত্রাস ও সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। এসময় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল ভুটান পিপলস পার্টি। জনপ্রিয় থাকার পরও দলটিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এখনও ভুটানে পিপলস পার্টি নিষিদ্ধ। ২০০৩ সালে ভুটানে নিষিদ্ধ করা হয় কমিউনিস্ট পার্টিকেও। ঐ সংগঠনের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ রয়েছে। কম্বোডিয়ায় ২০১৭ সালে সরকার উৎখাতে সহিংস রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করে ‘কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টি।’ রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ সহ নানা অভিযোগে রেসকিউ পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। রাষ্ট্রের সংবিধান বিরোধী তৎপরতা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে মিশরে ২০১৪ সালে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর মধ্যে একটি ‘এ্যন্টি ক্যু এলায়েন্স’ অন্যটি ‘ইনডিপেনডেন্ট পার্টি।’ মিশরে বিভিন্ন সময়ে এক ডজন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই জার্মানীতে নাৎসী মতাদর্শের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এখনও নাৎসীবাদের প্রতি নূন্যতম সহানুভূতির প্রমাণ পেলে, একটি রাজনৈতিক দলকে সাথে সাথে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯২ সালে এরকম তিনটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দলগুলো হলো, জার্মান অলটারনেটিভ ন্যাশনাল অফনেসিভ, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট। একই অভিযোগে ১৯৯৫ সালে ট্রি জার্মান ওয়ার্কাস পার্টিকেও নিষিদ্ধ করা হয়।

সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে ২০১৮ সালে হংকং ন্যাশনাল পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়। উগ্র ডান প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির কারণে নেদারল্যান্ডে ১৯৯৮ সালে সেন্টি পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়। এরকম বহু উদাহরণ আছে।

এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি নিঃসন্দেহে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একটি রাজনৈতিক সংগঠন। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই রাজনৈতিক সংগঠনটির কার্যক্রম দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র এবং আইন বিরোধী। বিএনপির প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াটিই অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক চেতনার পরিপন্থী। ক্যান্টনমেন্টে এই দলের সৃষ্টি। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা সংবিধান লঙ্ঘনকারী। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী। দেশে গণতান্ত্রিক শাসন পুনরায় চালু হবার সাথে সাথেই দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা উচিত ছিলো। কিন্তু হয়নি। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালের দুবার এই দলটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়। তবে, ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। সন্ত্রাসবাদকে লালন করেছে। ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে সহিংসতার নৃশংস পথ বেছে নেয়। নাৎসী কায়দায় চালায় সংখ্যালঘু এবং নিরীহ জনগণের ওপর পৈশাচিক তাণ্ডব। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে জড়িত। আদালতে এটি প্রমাণিত। শুধু এই অপরাধেই দলটিকে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিলো। অবশ্য রাষ্ট্র বিএনপিকে লাল কার্ড না দেখালেও ২০০৮ এর নির্বাচনে দেশের জনগণ ঠিকই বিএনপিকে হলুদ কার্ড দেখায়। কিন্তু এখান থেকেও বিএনপি শিক্ষা নেয়নি। ২০১৩ সালের নির্বাচনের আগে আবার বিএনপি সারাদেশে জ্বালাও পোড়াও এবং অগ্নি সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। যে কারণে ১৯৫৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইন করে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ  করেছিল। যে অপরাধে ১৯৯০ সালে ভুটানে নিষিদ্ধ হয়েছিল ভুটান পিপলস পার্টি। মিশরে ২০১৪ সালে যে অপকর্মের দায়ে ইনডিপেনডেন্ট পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়-বিএনপিও সেই একই অপরাধ করেছিল ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে। কিন্তু তখন বিএনপির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সাংবিধানিক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এটা সরকারের ব্যর্থতা। 

অনেকেই ধারণা করেছিল ২০১৫’র তথাকথিত আন্দোলনের পর বিএনপির বোধদয় হবে। তারা অনুভব করবে যে, এদেশের জনগণ জ্বালাও পোড়াও এর সহিংস রাজনীতি পছন্দ করে না। ২০১৮’র নির্বাচনের পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বেছে নেয়। ২০২২ থেকে দলটি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ এবং নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে থাকে। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপি প্রমাণ করে, তারা আসলে একটি সন্ত্রাসী দল। অতীত থেকে বিএনপি শিক্ষা নেয়নি। এতটুকু বদলায় নি।  ব্যালটের মাধ্যমে নয় বরং সন্ত্রাস ও অগ্নি সংযোগের মাধ্যমে তারা একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। যারা পেটাচ্ছে তাদের পরিচয়ও আর গোপন নেই। এরা সবাই বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। এদের নাম ঠিকানাও সবাই এখন জানে। মানুষ কত অমানবিক, পৈশাচিক হলে এভাবে সাপের মতো মানুষেকে পেটাতে পারে। এই ভিডিও দেখলে যে কারো বুক কেঁপে উঠবে। দুঃস্বপ্ন তাড়িত হবে যেকোন মানুষ। বিভৎস কায়দায় মানুষ মারার দৃশ্যের পর যদি নিহত মানুষটির অবুঝ শিশুর কান্নার দৃশ্যটি দেখেন, তাহলে আপনি আবেগ আটকে রাখতে পারবেন না। কান্নার বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবনে আপনি সিক্ত হবেনই। কোন মানুষ এই অপরাধ সহ্য করতে পারে না। বিএনপি নেতা কর্মীরা যেভাবে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল আক্রমণ করেছে, তা বিস্ময়কর। কদিন আগে ইসরায়েল গাজায় এভাবেই একটি হাসপাতাল আক্রমণ করেছিল। ঐ হামলাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। বিশ্ব বিবেক স্তব্ধ হয়েছিল ইসরায়েলের বর্ববতায়। ঠিক একই বর্বরতা বিএনপি করেছে হাসপাতাল আক্রমণ করে। এটি জঘন্য অপরাধ। এই হামলার মাধ্যমে বিএনপি তার রাজনৈতিক অধিকার হারিয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশের সংবিধানের সংরক্ষক, বিচার বিভাগের প্রধান। একটি প্রতিষ্ঠান। তার বাসভবনে হামলা আসলে সংবিধানের ওপর আঘাত। সংবিধানের ওপর কোন রাজনৈতিক দল যদি আঘাত করে তাহলে সেই রাজনৈতিক দল সংবিধান লঙ্ঘনকারী, রাষ্ট্রদ্রোহী। একটি রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন কোন স্বাধীন দেশে থাকতে পারে না। 

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বহুমত থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মতবাদকে ধারণ করবে, লালন করবে। তাদের চিন্তা, চেতনা এবং আদর্শের পক্ষে জনমত তৈরী করবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের বক্তব্য নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। বেশীর ভাগ জনগণ যে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি পছন্দ করবে, নির্বাচনে তাদের ভোট দেবে। জনগণের ভোটে যারা জয়ী হবে তারা সরকার গঠন করবে। যারা সরকার গঠন করতে পারবে না, তারা সরকারের মন্দ কাজের সমালোচনা করবে। ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেবে। নতুন করে জনমত তৈরী করবে। এটাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। যেখানে পুলিশকে সাপের মতো পিটিয়ে মারা, হাসপাতালে আগুন কিংবা নিরীহ মানুষকে কষ্ট দেয়া কোন রাজনীতি? এটা কোন রাজনীতি হবে পারে না, এটা সন্ত্রাসী তৎপরতা। এধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে এরা থামবে না। সন্ত্রাস আর গণতান্ত্রিক রাজনীতি পাশাপাশি চলতে পারে না। গণতন্ত্রের প্রধান শত্রু সন্ত্রাসবাদ। 

২৮ অক্টোবর বিএনপি প্রমাণ করেছে, তারা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। খেলার যেমন নিয়ম আছে। নিয়ম না মানলে লাল কার্ড দেখানো হয়। রাজনীতিরও তেমনি নিয়ম আছে। আইন ও নিয়ম না মানলে একটি রাজনৈতিক দলকেও শাস্তি পেতে হয়। বিএনপি ২০০৮ সালে হলুদ কার্ড পেয়েছে। ২৮ অক্টোবরে বিএনপির অপরাধ ভয়ংকর। এখন তাদের আর শুধু সতর্ক করার (হলুদকার্ড) সুযোগ নেই। একটি লালকার্ড তাদের অবশ্যই প্রাপ্য। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের কৌশল কি আত্মঘাতী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

৩০ নভেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। শেষদিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা। কারাগার থেকে বেরিয়েই এ বিএনপি নেতা যেভাবে ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, তা বিস্ময়কর। শাহজাহান ওমরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত, রওশন এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া, রেকর্ড পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগে চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়া ইত্যাদি সবই ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী কৌশল। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি আগামী নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ করতে চায়। ভোট উৎসব করতে চায়। সেজন্যই এতসব আয়োজন। বিএনপি এবং তার মিত্রদের বাদ দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার রাজনৈতিক কৌশলে শেষ পর্যন্ত কি আওয়ামী লীগ সফল হবে? নাকি এ কৌশল তাদের জন্য হবে বুমেরাং? এ কৌশলে আওয়ামী লীগের লাভ হলো না ক্ষতি?

বিএনপি-জামায়াত অংশ না নিলেও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী হয়েছে ২ হাজার ৭৪১ জন। প্রায় ৮০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীই ৪০০-এর ওপর। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হচ্ছে না। ওই নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব, নাশকতার কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণ এবং বহির্বিশ্ব এ নির্বাচন মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নেয়। ওই সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করে। এবার দেশি-বিদেশি সবাই ২০১৪-এর মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিনা ভোটে এমপি হওয়া যাবে না। প্রত্যেক আসনে ‘ডামি প্রার্থী’ দেওয়ার কৌশলের কথাও তিনি দলের নেতাকর্মীদের জানিয়েছিলেন। ব্যস, আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সবাই এটাকে সবুজ সংকেত হিসেবে মনে করেন। দলীয় মনোনয়ন যারা পাননি তারা ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়াটাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাম্পার ফলন হয়েছে এই নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও বুঝতে পেরেছেন এভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিস্ফোরণ দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরপর থেকে বারবার বলছেন, যথেচ্ছভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যাবে না। দল ঠিক করে দেবে কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ‘এ’ টিম আর আওয়ামী লীগ ‘বি’ টিমের লড়াই। কোথাও কোথাও ‘সি’ টিম, ‘ডি’ টিমও আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে যদি ক্ষমতাসীনরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে না পারে, তাহলে সমূহ বিপদ। এর ফলে বহু আসনে নৌকা প্রার্থীর বদলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের বিজয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ অবশ্য মনে করতেই পারে যেই জিতুক, এমপি তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী তাৎপর্য হবে ভয়াবহ। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই আওয়ামী লীগ হয়ে পড়বে বিভক্ত। একপক্ষ অন্যপক্ষের সঙ্গে মারামারি, খুনোখুনি করবে। একে অন্যের চরিত্র হনন করবে। সারা দেশে সংগঠনে সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হবেন, তখন তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানো হবে কঠিন। কেউ মন্ত্রী হতে চাইবেন, কেউ বিক্রি হবেন। কেনাবেচার বাজারে তারা আওয়ামী লীগের ওপরই যে চাপ সৃষ্টি করবেন না, তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারবে?

এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটগত ঐক্য নিয়ে এখন পর্যন্ত একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। একমাত্র হাসানুল হক ইনু ছাড়া ১৪ দলের আর কোনো নেতার আসন সংরক্ষিত নয়। ২০০৮-এর নির্বাচন থেকে গত তিনটি নির্বাচনী আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে করেছে। মহাজোট এবং ১৪ দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটের অংশ। জাতীয় পার্টি ছাড়া মহাজোটের শরিক অন্য সব দলই নৌকা প্রতীকে গত তিনটি নির্বাচন করেছে। এবার কী হবে? যদিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৪ দলের শরিকদের জন্য তারা আসন ছেড়ে দেবে। মনোনয়ন প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কটি আসন দেবে, তা কি ১৪ দলের শরিকরা মানবে? এ নিয়ে মনোমালিন্য, মান-অভিমান, তিক্ততার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কথাই ধরা যাক। দলটির প্রধান নেতা রাশেদ খান মেননের আসনে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের জনপ্রিয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমকে। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই মেননকে বরিশালের একটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব দেবে। ওই আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আছেন। আছেন বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন দলীয় সিদ্ধান্ত মানবে? আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংগঠন কি মেননের জন্য কাজ করবে, না বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য কাজ করবে? রাজশাহীতে ওয়ার্কার্স পার্টির আরেক নেতা ফজলে হোসেন বাদশার আসনেও হবে একই নাটক। এ লেজে-গোবরে অবস্থায় যদি আওয়ামী লীগের শরিকরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে আমি অবাক হব না। সেটা হবে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার আরেক সংকট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা ভালো করেই জানেন ভোটের বাজারে তারা মূল্যহীন। আওয়ামী লীগের প্রতীক এবং কর্মী-সমর্থকরাই তাদের ভরসা। সেই ভরসাতেও অপমান, উপেক্ষা সহ্য করে তারা অনেকটাই চাকরবাকরের মতো জোটে আছেন। কিন্তু এবার সত্যি তাদের একটা অপমানজনক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বড় উদারতা না দেখালে জোট নিয়ে এক অস্বস্তিতে পড়বে আওয়ামী লীগ। আলাদা আলাদা নির্বাচনের যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, তা তাকে বন্ধুহীন করতে পারে।

জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাত। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আচরণ, কথাবার্তা সবই ছিল সন্দেহজনক। গত দুই বছর ধরেই তিনি কখনো বিএনপির চেয়ে বড় বিরোধী দল, কখনো সুশীলদের চেয়েও বড় বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠতেন। এ কারণেই সরকার ‘রওশন এরশাদ’কে একান্ত আপনজন করে রাখত। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি যখন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কালক্ষেপণ করছিলেন, তখন রওশন এরশাদই ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জি এম কাদেরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। নির্বাচনমুখী নেতাদের সামলাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে নিশ্চয়ই সরকার খুশি হয়েছে। জি এম কাদেরের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া এবং সমঝোতার কারণেই রওশন এরশাদ জাপায় মাইনাস হয়ে গেলেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু জি এম কাদেরের প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়? জি এম কাদেরকে আস্থায় আনতে যেভাবে রওশন এরশাদকে টিস্যু পেপার বানানো হলো, তার ফল খারাপও হতে পারে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কী করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ভুলে যায়নি। ওই নির্বাচনে রওশন এরশাদই শেষ রক্ষা করেছিলেন। এবার জি এম কাদের যে এরশাদের পথে হাঁটবেন না, তা কে বলবে। সেরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনী মাঠে কে ধরে রাখবে? জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল কি ঝুঁকিপূর্ণ হলো না?

এবার নির্বাচনের আগে দুটি ‘কিংস পার্টি’ বেশ সরব হয়েছিল। একটি তৃণমূল বিএনপি, অন্যটি বিএনএম। দুটি দলেরই প্রধান টার্গেট ছিল বিএনপি থেকে লোক ভাঙানো। দুটি দলই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো দলই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। বিএনপি থেকেও বড় কোনো নেতা এসব দলে যোগ দেননি। এখন এই দুটি দল আওয়ামী লীগের দায়ে পরিণত হয়েছে। এরা ভোটে নয়, সমঝোতায় এমপি হতে চায়। সরকার তাদের ভোটে জিতিয়ে সংসদে আনবে এমন প্রত্যাশায় এরা নির্বাচনে এসেছে। এসব দলের যে সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীদের যোগ্যতা তাতে দুয়েকজন ছাড়া আর কেউ ভোটের মাঠে জামানত রাখতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ। এদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সরকারকে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করাটা কতটা জরুরি। ছোটখাটো অনিয়মও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করবে। গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। কাজেই এত বড় ঝুঁকি সরকার বা আওয়ামী লীগ কি নেবে? আবার ভালো নির্বাচনে এরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে, আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করবে।

আওয়ামী লীগ কেন শাহজাহান ওমরকে দলে ভেড়াল? এ থেকে আওয়ামী লীগ কী পেল? আদর্শহীন ব্যক্তিকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে ক্ষমতাসীনরা কি প্রমাণ করল না, তারাও ভাঙাগড়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের এরকম প্রক্রিয়ার যুক্ত হওয়া কি শোভন। এই কৌশলে কি লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো না?

নির্বাচন প্রসঙ্গ এলেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। সব দল অংশগ্রহণ করার পরও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এর প্রধান কারণ ছিল প্রার্থী এবং প্রশাসনের যোগসাজশ। অতি উৎসাহীদের দায়িত্বহীন কাণ্ড। এবার নির্বাচন অনেকটাই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ লড়াই। বিরোধীরা এ নির্বাচনে তৃতীয়পক্ষ। তাই এ নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ থাকার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাউকে জেতাতে বা হারানোর দায় নেই কারও। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র, যারা প্রার্থী তারা সবাই প্রভাবশালী। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রার্থীরা নানাভাবে ঘনিষ্ঠ। ক্ষমতার শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা কি শেষ পর্যন্ত জনগণের মতামতের ওপর নির্ভর করবে, না জয়ী হতে সব অপকৌশল প্রয়োগ করবে?

আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তপসিল ঘোষিত হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলও হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন এখনো অনেক দূরের পথ। এ পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে, তা সামাল দিতে পারবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল কি পারবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যেতে?


লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   শেখ হাসিনা   নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কাদের-শাহ জাফর নাকি শমসের

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে কারা বিজয়ী হবে তা নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না তখন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আওয়ামী লীগ যে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটি নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে মজার যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল কারা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব পালন করবে। শেষ পর্যন্ত যদি ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রধান আকর্ষণ হবে কে হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল? 

এর আগে গত তিনটি নির্বাচনে একটিতে বিএনপি প্রধান বিরোধী দল ছিল। অন্য দুটিতে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। ২০০৮ এর নির্বাচনে বিএনপি বিরোধী দল হয়। ২০১৪ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে। আর ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলেও তারা তৃতীয় হয়েছিল। জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। যদিও ওই নির্বাচনকে বিএনপি গ্রহণযোগ্য মনে করে না। গ্রহণযোগ্য মনে না করলেও সেই নির্বাচনের পর বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংসদে গিয়েছিল এবং প্রায় পুরোটা সময় সংসদে থাকার পর তারা শেষ মুহূর্তে এসে পদত্যাগ করেছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে বিএনপি না থাকলেও তিনটি রাজনৈতিক দল আলোচনা আছে। এই তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে দুটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় এসেছে সেই দুটি দল এবং জাতীয় পার্টি রয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময় আলোচনায় আসা দলগুলোর মধ্যে একটি হল বিএনএম। বিএনএম এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক বিএনপি নেতা শাহ্ আবু জাফর। তিনি ফরিদপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনএম এবার যে আসনগুলোতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তার মধ্যে কয়েকটি আসনে তারা ভালো ফলাফল করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে ফরিদপুরের আসনে বা শাহ্ আবু জাফর সহ আরও কয়েকটি আসনে তারা চমকে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ৮২টি আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও যদি বিএনএম দ্বিতীয় প্রধান দল হিসেবে আবির্ভূত হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সেক্ষেত্রে শাহ্ আবু জাফর বিরোধী দলের নেতা হবেন। 

এই নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপিকে নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা এবং প্রত্যাশার জায়গা ছিল। তৃণমূল বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, তারা তিনশ আসনে প্রার্থী দিবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। তিনশ আসনে প্রার্থী দিতে পারুক না পারুক তৃণমূল বিএনপির অনেকগুলো আসনেই ভালো ফল করবে। বিশেষ করে তৃণমূল বিএনপির সভাপতি এবং মহাসচিব এই নির্বাচনে ভালো ফলাফল করবেন। তৃণমূল বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত প্রধান বিরোধী দল হন বা দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী হতে পারেন বিরোধী দলের নেতা।

জাতীয় পার্টি গত দুবারের বিরোধী দল। এবারও জাতীয় পার্টির ২৮৭ টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। আওয়ামী লীগের পরই তারা সবচেয়ে বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির অবস্থা আগের মতো নেই। তাছাড়া দলের মধ্যে নানা রকম বিভক্তি এবং অর্ন্তকলহ রয়েছে। এরকম পরিস্থিতিতে তারা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জায়গা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচনে দ্বিতীয় দল হয় সেক্ষেত্রে জিএম কাদের হবেন বিরোধী দলের নেতা।

জি এম কাদের   জাতীয় পার্টি   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   তৃণমূল বিএনপি   বিএনএম   শাহ্ জাফর  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

নানক-নাছিম বনাম ফেরদৌস-সাকিব

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে গত ২৬ নভেম্বর। এবারের নির্বাচন বড়ই অদ্ভুত নির্বাচন। এই নির্বাচনে একটিই ফলাফল হতে পারে। সেটি হলো আওয়ামী লীগের বিজয়। বিএনপি এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ যেসব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের একটাই লক্ষ্য, ‘বিরোধী দল’ হওয়া। তবে এই নির্বাচন টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের। পশ্চিমা বিশ্ব নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন। আওয়ামী লীগকে যেমন একদিকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে, তেমনি নির্বাচন যেন ‘অংশগ্রহণমূলক’ হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যদি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ না হয়, তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। এই নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য আরেক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এবারের ভোট ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আবর্জনা পরিষ্কারের এক সুবর্ণ সুযোগ। যেহেতু নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি নেই, তাই আওয়ামী লীগ পরিচ্ছন্ন, দলের জন্য নিবেদিত প্রাণদের প্রার্থী করার এক বিরল সুযোগ পেয়েছিল। মনোনয়নের আগে এরকম একটি সুস্পষ্ট বার্তাও ছিলো।

২৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা দেখে আমি একদিকে উচ্ছসিত, অন্যদিকে আতঙ্কিত। আমি উচ্ছ্বসিত একারণে যে মাঠের নেতাদের, কর্মীবান্ধব সংগঠকদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, এস.এম কামাল। এরা এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীদের জন্য এটি একটি বিরাট বিজয়। এর ফলে কর্মীরা উচ্ছ্বসিত, উজ্জীবিত। গত পাঁচ বছর যারা সংগঠনকে আগলে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে এরা অন্যতম। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ নানা রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে সবচেয়ে আতঙ্কের রোগ হলো অনুপ্রবেশকারী, চাটুকার, সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম। হঠাৎ গজিয়ে ওঠা অর্বাচীন নেতাদের কারণে কর্মীরা হতাশ এবং বিরক্ত। ত্যাগী পরীক্ষিতদের একটা বড় অংশ নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল সর্বত্রই অনুপ্রবেশকারীদের দাপট রীতিমতো মহামারী পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এরকম বাস্তবতায় সংগঠনের জন্য নিবেদিত প্রাণ, দুঃসময়ের যোদ্ধারা যদি নির্বাচন থেকেও দূরে থাকতেন, তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি গভীর সংকটে পড়ত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি মনোনয়ন প্রদানে মাঠের নেতা, দুঃসময়ে কান্ডারী, ত্যাগী পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করেছেন। জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজম ছয়বারের এমপি। এবারও তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। মনোনয়ন পেয়েছেন কঠিন সময়ে দলের জন্য কাজ করা আলাউদ্দিন নাসিম চৌধুরীসহ বেশ ক’জন। এই মনোনয়ন প্রাপ্তরা সংগঠন গোছাতেই শুধু অবদান রাখবেন না, কর্মীদের ভোটের মাঠে নামাতেও উৎসাহ যোগাবেন। এই সব মাঠের কর্মীবান্ধবদের প্রার্থী হবার কারণে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, ভোট খরা কাটবে। 

নানক-নাছিমের মনোনয়ন আমাকে আরেকটি কারণে আশাবাদী করেছে। রাজনীতিতে আদর্শে অবিচল থাকলে লক্ষ্য অর্জন যে করা যায়, এরা সেই সত্যটিকে নতুন করে প্রমাণ করলেন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এরা মনোনয়ন বঞ্চিত হন। নিশ্চয়ই একারণে তারা দুঃখিত হয়েছিলেন, বেদনার্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই বঞ্চনা তাদের আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। তারা হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেননি। রাজনীতি থেকে সরে যাননি। কিংবা অনেকের মতো ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হয়ে নিজেদের লোভের উদগ্র প্রকাশ ঘটাননি। বেদনাকে চাপা দিয়ে রাজনীতিতে আরো নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন নানক, নাছিম, রহমান, কামাল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর যখন ভাগ-বাটোয়ারার রাজনীতির আগ্রাসন তখন তারা সংগঠনে মনোযোগী হয়েছেন। হতাশ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দলের সভাপতির দেয়া দায়িত্ব পালন করেছেন নিষ্ঠার সাথে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নেতার অভাব হয় না। বিচিত্র সব নেতাদের নাদুস-নুদুস শরীরে মঞ্চ ভেঙে পড়ে। কাজের নেতা নয়, এরা সব মতলবী নেতা। নানক, নাছিমরা কাজের নেতা। তাই তাদের মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগ রক্ষা পেয়েছে। কর্মীরা অন্তত নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগটা পাচ্ছে। এটা টানা ক্ষমতায় থাকা দলের জন্য একটা বড় সুখবর। 

তবে এই মনোনয়ন তালিকায় কয়েকজনের মনোনয়ন প্রাপ্তি আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে, আতঙ্কিত করেছে। এদের মধ্যে আলোচিত দুইজন হলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ সাকিব আল হাসান এবং চিত্রনায়ক ফেরদৌস।

বিশ্বে ক্রিকেটারদের রাজনীতিতে আসা নতুন ঘটনা নয়। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অর্জুনা রনাতুঙ্গা ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। মন্ত্রীও হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয় ছিলো এক অভূতপূর্ব বিস্ময়। এই বিজয় রনাতুঙ্গাকে দিয়েছিল জাতীয় বীরের মর্যাদা। কিন্তু রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি তুখোড় এই অধিনায়ক। সেদিক থেকে ব্যতিক্রম ইমরান খান। ইমরান খান প্রায় একাই পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ১৯৯২ সালে। তার নেতৃত্ব গুণ সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছিল। তিনিও হয়ে উঠেছিলেন পাকিস্তানিদের ‘জাতীয় বীর।’ ক্রিকেট থেকে অবসরের পর ইমরান খান সমাজ সেবায় মন দেন। ক্যান্সারে মারা যাওয়া মায়ের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে তিনি গড়ে তোলেন বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ক্যান্সার হাসপাতাল। পাকিস্তানের মানুষের হৃদয়ে জয় করেন ইমরান; স্পষ্ট কথাবার্তা বলে, সততার নজির স্থাপন করে। তিনি মুসলীম লীগ কিংবা পিপলস পার্টিতে যোগ দিতে পারতেন। এরকম প্রলোভনও ছিলো। কিন্তু প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নিজেই একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। ইমরান খানের নেতৃত্বে তেহরিক-ই-ইসলাম ধীরে ধীরে বিকশিত হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইমরান হন প্রধানমন্ত্রী। ২০২২ সালে নানা ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু এখনও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান জনপ্রিয় নাম। আমাদের সাকিব আল হাসান অবশ্য অর্জুনা রনাতুঙ্গা কিংবা ইমরান খানের ধারে কাছেও নন। বিশ্বকাপ জয় তো দূরের কথা, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে তিনি কোন অন্ধকার টানেলে নিয়ে গেছেন তা নিয়ে দিব্যি বিতর্ক হতে পারে। সাকিব মেধাবী ক্রিকেটার কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এ যাবৎ কালের সেরা খেলোয়াড়, এনিয়েও বিতর্ক নেই। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বারবার বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কখনো দর্শকদের সাথে অশোভন আচরণ করে, মারমুখী হয়ে। এখনও খুঁজলে আম্পায়ারের দিকে তার তেড়ে-ফুড়ে আসার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যাবে। বুকির সাথে যোগাযোগ, তামিমের সাথে বিরোধ, অখেলোয়াড় সুলভ আচরণ নিয়ে সব সময় আলোচনায় সাকিব আল হাসান। এবার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির নেপথ্যে সাকিবের রাজনীতি দায়ী-এমনটা বিশ্বাস করেন দেশের বেশীরভাগ ক্রিকেট ভক্ত। বিশ্বকাপের পর তার শাস্তি পাওয়ার কথা, তিনি পেলেন পুরস্কার। গত দুবছর ক্রিকেটের চেয়ে তার মনোযোগ ছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যে, টাকা পয়সা উপার্জনে। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রকদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে তিনি যা খুশী তাই করেছেন, বাধাহীনভাবে। দেশের জন্য, জনগণের জন্য একটি মহৎ কাজের উদাহরণ নেই এই ক্রিকেটারের জীবনে। তাকে কেন মনোনয়ন দিতে হবে? ক্রিকেটের জন্য সাকিব প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ মানলাম, কিন্তু রাজনীতির জন্য, দেশের জন্য তিনি আদৌ কি প্রয়োজনীয়? এই নির্বাচনে যদি বিএনপি আসতো, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের শঙ্কা থাকতো তাহলে সাকিবের মনোনয়ন প্রাপ্তির একটি যৌক্তির কারণ হয়তো খুঁজে পাওয়া যেত। তাকে এমন একটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, যে আসনটির বর্তমান এমপি একজন ত্যাগী পরীক্ষিত কর্মী। যার গোটা পরিবারের ত্যাগ এবং আদর্শের লড়াই আওয়ামী লীগের জন্য অনুকরণীয়। ৭৫ এর পর যারা আওয়ামী লীগকে ধ্বংসস্তুপ থেকে টেনে তোলার জন্য কঠোর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন, সাইফুজ্জামান শিখর সেই পরিবারের উত্তরাধিকার। এক-এগারোর সময় শিখরের নিষ্ঠা, দলের নেতার প্রতি আনুগত্য আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। কঠিন সময়ে সাকিব আল হাসান কি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন? ত্যাগীরা শুধু ত্যাগ স্বীকার করবেন, সুবিধাবাদীরা ক্রীম খাবেন?

বাংলাদেশের ক্রিকেটে যেমন এখন ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার চেয়ে ঘোর অমানিশা সিনেমায়। শাকিব খান আর নতুন কয়েকজন সৃষ্টিশীল নির্মাতার পাগলামীতে আমাদের সিনেমা এখন কোন মতে শ্বাস নিতে পারছে। সিনেমার অধিকাংশ তারকাদের কাজ নেই। তাই তারা নানা কাজে ব্যস্ত। রাজনীতিতে নগদ নারায়ণের সৌভাগ্য ভান্ডার আছে, সেজন্য পরিত্যক্ত তারকাদের একটি বড় অংশকে এখন ক্ষমতাসীন দলের চারপাশে ঘুর ঘুর করতে দেখা যায়। গত ১৫ বছরে শোবিজে যতজন আওয়ামী লীগ হয়েছেন, দেশে ততগুলো ব্রিজ হয়েছে কিনা আমার সন্দেহ। অথচ এই সব শোবিজের সুবিধাবাদীরা দুঃসময়ে কি করে তা নিজেই দেখেছি। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হন বিচারপতি লতিফুর রহমান। এই সময় বিএনপি তাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য নির্মাণ করে ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ নামে একটি ধারাবাহিক প্রামাণ্য চিত্র। অধ্যাপক ডা: বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন উপস্থাপক আর মাহি.বি.চৌধুরী নির্মাতা। এটিএন বাংলায় প্রচারের সাথে সাথে এনিয়ে হৈ চৈ পরে যায়। আওয়ামী লীগের কাছে ছিলো এটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। পাল্টা একটা প্রামাণ্য চিত্র নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়। দায়িত্ব পরে আমার উপর। প্রতিদিন একটি করে মোট ২১টি প্রামাণ্য চিত্র বানিয়েছিলাম ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ শিরোনামে। ঐ অনুষ্ঠানের জন্য একজন উপস্থাপক খুঁজতে আমরা শোবিজের তারকাদের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলাম। তাদের বলেছিলাম আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলার দরকার নেই, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলুন। শমী কায়সার ছাড়া সবাই আমাদের মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন, আমরা শিল্পী। এসব বিতর্কে জড়াতে চাই না। এখন দেখি তারাই মস্ত বড় আওয়ামী লীগার। সারাজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করা শমী কায়সার অবশ্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েছেন, সুসময়ে স্তুতি গানে চ্যাম্পিয়ন ‘অবসর প্রাপ্ত’ শিল্পী ফেরদৌস। হঠাৎ বৃষ্টির জন্য আলোচিত এবং জনপ্রিয় হন শিল্পী। এরপর তিনি বাংলা চলচিত্রের জন্য কি করেছেন, তা ফেরদৌসই ভালো বলতে পারবেন। তবে, টানা ১৫ বছর তিনি বিরামহীনভাবে চাটুকারিতার কসরত করেছেন। তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ধানমন্ডিতে। আমি যদ্দুর জানি, ফেরদৌস ধানমন্ডিতে থাকেন না। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত এই আসনে একজন বহিরাগতকে মনোনয়ন দেয়ার তাৎপর্য আমি বুঝতে পারিনি। ধানমন্ডিতে কোন যোগ্য লোক নেই? সাকিব আল হাসানকে নিয়ে একটা উন্মাদনা আছে। তার একটা ভক্তকূল আছে। কিন্তু ফেরদৌসের বসন্তকাল চলে গেছে বহু আগে। ফেরদৌসকে নিয়ে ধানমন্ডির আসনে কোন উচ্ছ্বাস নেই, তা আমি হলফ করে বলতে পারি। এই সাবেক নায়ক ধানমন্ডির কয়টা রাস্তার নাম বলতে পারবেন? আওয়ামী লীগের ক’জন কর্মীকে চেনেন? ধানমন্ডি সম্পর্কে তিনি কি জানেন? এই নির্বাচনে এরকম ‘অতিথি পাখি’দের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে আওয়ামী লীগ কি বার্তা দিলো? আদর্শ চুলায় যাক, একটু চেষ্টা তদ্বির করলেই আওয়ামী লীগের মতো দলের মনোনয়ন পাওয়া কোন ব্যাপারই না। কিন্তু তারপরও আমি আশাবাদী। ত্যাগী পরীক্ষিত আদর্শবানদের কাছে সব সময়ই পরাজিত হয় সুবিধাবাদী চাটুকাররা। শেষ পর্যন্ত নানক-আযম-নাছিমরাই দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের জন্য লড়বে। বসন্তের কোকিলরা উড়ে যাবে কঠিন সময়ে। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

যুক্তরাষ্ট্রের ‘নীরবতা’র ভয়ঙ্কর কূটনীতি

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরব কূটনীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। একথা বলেছিলেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা। এখন বাংলাদেশের ব্যাপারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছেন। কূটনৈতিক পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে সাইলেন্ট ডিপ্লোমেসি। আর এই নীরব কূটনীতি যে কোনো দেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। 

গত দুই বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে অত্যন্ত সরব অবস্থানে ছিলেন। তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছিলেন কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে এবং এই নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক। স্পষ্টতই সরকারের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করছিল যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কূটনীতিক গত দুই বছরে বাংলাদেশ সফর করেছেন। সরকার এবং বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও এই সময় ছিলেন সরব। 

গত বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অত্যন্ত সরব এবং ব্যস্ত সময় কাটান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এবারে যে নির্বাচন হচ্ছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফর্মুলা অনুযায়ী নয়, এটা সহজেই বলা যায়। কারণ এই নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো অংশগ্রহণ করছে না। কাজেই মার্কিন সংজ্ঞা অনুযায়ী এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, একটি নির্বাচনে যদি ৪০ শতাংশ বা তার বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকে তাহলে সেই নির্বাচনটি অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচিত হবে। সেজন্যই এবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সবগুলো আসনেই ৪৫০ জনের কাছাকাছি স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবার দাঁড়িয়েছেন। ফলে এবার নির্বাচনে কোথাও কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবেন না। ভোট যুদ্ধ হবে সব আসনেই। তারপরও এই ফর্মুলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুশি কি না তা এখন পর্যন্ত অস্পষ্ট। 

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যখন নিয়মিত ব্রিফিং হচ্ছে সেই ব্রিফিংয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের তাগিদ পুনর্ব্যক্ত করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ছুটিতে গিয়েছিলেন। ছুটি থেকে তিনি দেশে ফেরার পর শুধুমাত্র বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তিনি নতুন মার্কিন শ্রমনীতি নিয়ে কথা বলেছেন বলে ধারণা করা হয়। অন্য সময়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললেও এখন তিনিও নীরবতা পালন করছেন। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি নতুন শ্রমনীতি ঘোষণা করেছেন এবং এই শ্রমনীতি ঘোষণার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিক কল্পনা আক্তারের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছেন। এরপর ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক বার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার কমার্স এই নতুন শ্রমনীতির টার্গেট বাংলাদেশ হতে পারে এবং বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছেন৷ যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে, বাংলাদেশ শ্রমনীতির টার্গেট হবে না। 

কিন্তু বিভিন্ন সূচকগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন, গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলনের প্রস্তুতি, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা ইত্যাদি বিষয়গুলোর দিকে গভীরভাবে নজর রাখছে এবং এই সমস্ত নজর রাখার ফলে বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা সুস্পষ্ট এবং দৃশ্যমান অবস্থান নির্বাচনের পরপরই স্পষ্ট হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। শেষ পর্যন্ত যদি নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্তুষ্টমূলক না হয় তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক কিছুই করতে পারে এমন শঙ্কার কথাও প্রকাশ করা হচ্ছে বিভিন্ন সময়। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার অর্থ বুঝতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বাংলাদেশের নির্বাচন   শ্রমনীতি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

মান্না কেন বড়শিতে বিঁধলেন না

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রায় দু সপ্তাহ নীরব থাকার পর মাহমুদুর রহমান মান্না আবার সরব হয়েছেন। আবার রাস্তায় এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। কিন্তু গত দু সপ্তাহ তিনি কোথায় ছিলেন? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এ সময় মান্না সরকারের সাথে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দেন দরবার করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেন দরবারের রফা হয়নি। সেই কারণেই মান্না এখন আবার সরব হয়েছেন। আবার বিরোধী দলের লড়াকু সৈনিক হিসেবে মাঠে নেমেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না যা চেয়েছিল তা দেওয়া সম্ভব হয়নি। 

তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, একদিকে যেমন মান্না সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন, অন্যদিকে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার সাথেও যোগাযোগ করেছিলেন। তারেক জিয়ার যে টোপ সেটি বেশি মাত্রায় লোভনীয় হওয়ার কারণে তিনি সরকারের টোপ গেলেননি। আর এ কারণেই মাহমুদুর রহমান মান্না আবার আগের অবস্থানে ফিরে গেছেন। 

২৮ অক্টোবর বিএনপির তাণ্ডব, নাশকতার পর বিএনপি ব্যাকফুটে চলে যায় এবং এই ব্যাকফুটে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপির কোনো কোনো নেতা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে গেলে সামনে চলে আসেন মাহমুদুর রহমান মান্না। মাহমুদুর রহমান মান্না নিজে থেকেই সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে চান এমনটাই বলেছিলেন। এরপর সরকারের সঙ্গে তার কয়েক দফা বৈঠক হয়, যেসব বৈঠকে মান্না নির্বাচনকালীন সরকারে তার মন্ত্রিত্ব, বগুড়ার একটি আসনে তার নিশ্চিত বিজয় সহ আরও বেশ কিছু দাবিদাওয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার থেকে তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় যে, নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কোন মন্ত্রীদের রাখার সুযোগ নেই। 

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে বগুড়া আসন থেকে তিনি জিতবেন কি জিতবেন না এটি সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করে ভোটারদের অভিপ্রায়ের ওপর। ভোটাররা যদি ভোট না দেন তাহলে সরকার কাউকে জিতিয়ে আনতে পারে না। অন্যদিকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে হাতছাড়া করতে চাননি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। আর এ কারণেই মান্না যেন শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে থাকেন এই জন্য তাকে লোভনীয় অফার দেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতে তার জন্য অনেকগুলো সুখবর আছে এমন আশ্বাসও দেওয়া হয়। সবকিছু হিসাব নিকাশ মিলিয়ে মান্না শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়ার বড়শিতে বিদ্ধ হচ্ছেন এমন কথা রয়েছে। 

মান্না অবশ্য সরকারের বড়শিতে বিদ্ধ না হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল যে তিনি যেভাবে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন বা বিএনপি নির্বাচনে আসবেন বলে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশ আন্দোলনকে শেষ পর্যন্ত দেখা এবং নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করার নীতিতে বিশ্বাসী। দলছুট হয়ে কেউই ঝুঁকি নিতে চাননি এবং বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত হতে চাননি। অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা দেখেছেন, যারা বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন তারাই রাজনীতিতে এতিম এবং পরিত্যক্ত হয়েছে। এ কারণেই বিএনপির মধ্যে যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী, তারাও ঝুঁকি নেওয়ার সাহস পাননি। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত মান্নার মিশনও ব্যর্থ হয়েছে। মিশন ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি আবার বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। কিন্তু মান্নারা সব সময় সুযোগসন্ধানী। সুযোগের রাজনীতি তাদের কাছে শুধু মাত্র কিছু পাওয়া না পাওয়ার হিসেব। যখন তার পাওয়া না পাওয়ার হিসেব মেলেনি, তখন তিনি আর সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যাননি। নিশ্চয়ই সরকারের কাছ থেকে তিনি যা পেতেন তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে।

মাহমুদুর রহমান মান্না  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন