ভেবেছিলাম বাণিজ্যমন্ত্রীকে নিয়ে আর লিখব না। তার প্রলাপ নিয়ে মন্তব্য করাটা সময়ের অপচয়। কিন্তু গত বুধবার আমাদের ‘সর্বকালের সেরা’ বাণিজ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তাতে চুপ থাকা যায় না। ৮ নভেম্বর দুপুরে সচিবালয়ে জাতীয় ট্যারিফ পলিসির এক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী। টিপু মুন্সী নিজেই যেন জ্যালজ্যান্ত একটি ‘শব্দ বোমা’। তিনি যেখানেই যান, কথা বললেই বিস্ফোরনের শংকা থাকে। বেফাঁস কথা আর টিপু মুন্সী এখন সমার্থক। তিনি কথা বলবেন অথচ তা নিয়ে বিতর্ক হবে না, এ যেন অসম্ভব। বুধবারও তাই হলো। তিনি বললেন ‘আমার এলাকার নারীরা দিনে তিনবার লিপস্টিক লাগাচ্ছেন, চারবার স্যান্ডেল বদলাচ্ছেন।‘ বাণিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্য অশ্লীল, কুরুচীপূর্ণ এবং অসংলগ্ন। আমাদের মন্ত্রী মহোদয় কি সুস্থ আছেন? নাকি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এ ধরনের বেসামাল কথাবার্তা বলছেন? এমন সময় তিনি এসব দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছেন যখন জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। একদফা দাবীতে বিএনপি টানা কর্মসূচী পালন করছে। যে সময় গার্মেন্টস শ্রমিকদের রাজপথে নামার জন্য বিশেষ মহল ইন্ধন দিচ্ছে। নারী শ্রমিক অধ্যুষিত দেশের রপ্তানী আয়ের প্রধান এই উৎসকে ঘিরে চলছে নানা মুখী ষড়যন্ত্র। দেশে মুদ্রাস্ফীতি ১২ শতাংশ অতিক্রম করেছে। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের হাহাকার এখন ক্রমশ: ক্ষোভে রূপ নিতে শুরু করেছে। এরকম একটি সংকটময় এবং স্পর্শকাতর সময়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বালখিল্যতা কেন? তিনি কি জনগণের কষ্ট নিয়ে মশকরা করলেন? নাকি তার এই কথা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। জেনে বুঝে সরকারকে বিব্রত করতে তিনি এধরনের মন্তব্য করলেন। অথবা তার কথায় বিশেষ ইঙ্গিত আছে?
আওয়ামী
লীগের ‘বাণিজ্যমন্ত্রী’ ভাগ্য কখনোই ভালো না। বাণিজ্য
মন্ত্রীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের অতীত অভিজ্ঞতা তিক্ত।
খুনী মোশতাকও বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী থেকে বঙ্গবন্ধু সরকারকে
ডোবাতে এই বিশ্বাসঘাতক কি
কি করেছেন, তার তালিকা দীর্ঘ।
এনিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। তোফায়েল
আহমেদও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৬—২০০১ সালে
দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭
সালে ‘সংস্কার প্রস্তাব’ দিয়ে তোফায়েল আহমেদ শেখ হাসিনাকে মাইনাস
করতে চেয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগে সংস্কারপন্থী হিসেবেই
এখন পরিচিত। কর্ণেল (অব:) ফারুক খান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে টিকতে পারেননি বেশী দিন। তার
বদলে জাতীয় পার্টির জি.এম কাদেরকে
এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ইদানিং জি.এম কাদের
যে ভাষায় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন, তাতে ভাবতে কষ্ট
লাগে যে, তিনি এই
সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। তিনিও একজন বিভ্রান্ত রাজনীতবীদ।
এবার টিপু মুন্সী এই
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে যেন টানা ১৫
বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ
সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের মিশনে নেমেছেন। তার একমাত্র কাজ
এই সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত এবং বিব্রত করা।
তার নেতৃত্বে বাজার নিয়ে গত পাঁচবছরে যা
হয়েছে, তা রীতিমতো তামাশা।
তিনি নব্য মোশতাকের মতো
ইচ্ছে করে এসব করেছেন
কী না তা সময়ই
বলে দেবে। সিন্ডিকেট আছে, সিন্ডিকেট নেই—এরকম লুকোচুরি গল্প
ফাঁদিয়ে টিপু মুন্সী প্রধানমন্ত্রীকেও
বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করেছেন। তবে সব কিছু
ছাপিয়ে গেছে, টিপু মুন্সীর লিপস্টিক
তত্ত্ব। তিনি কীভাবে গুনে
দেখলেন, তার নির্বাচনী এলাকার
নারীরা তিনবার লিপস্টিক দেয়। কতজন নারীর লিপস্টিক
পর্যবেক্ষণ করে, তিনি এই
তথ্য আবিস্কার করলেন? তবে তিনবার বা
চারবার ঠোটে লিপস্টিক লাগানো
যে ভালো থাকার লক্ষণ
নয়, তা অর্থনীতিতে একটি
প্রমাণিত বিষয়। কিছুদিন আগে শ্রীলংকার তীব্র
অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল।
দেশটি হয়েছিল প্রায় দেউলিয়া। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, অভাবের
কারণে বহু নারী সে
সময় দেহ ব্যবসায় নাম
লিখিয়েছিল। এটি হয়ে উঠেছিল
তাদের আয়ের প্রধান উৎস। বেঁচে থাকার
জন্য নিরুপায় হয়েই এই পথ বেছে
নিয়েছিলেন লংকান নারীরা। এসময় শ্রীলংকায় নারীদের মধ্যে লিপস্টিক ব্যবহারের হার বেড়েছিল বহুগুন।
লিপস্টিক দিয়ে অনেকে খদ্দেরদের কাছে নিজেকে আকর্ষনীয়
করে তুলতে চাইতো। থাইল্যান্ডে দারিদ্রের সাথে লড়তে থাকা
নারীদের মধ্যে লিপস্টিক ব্যবহারের হার বেশী। মার্কিন
সমাজ বিজ্ঞানী জুলিয়েট শোর ১৯৯৮ সালে
‘দ্য ওভার স্পেন্ট’ গ্রন্থে
‘লিপিস্টিক তত্ত্ব’ সামনে এনেছিলেন। জুলিয়েট শোরের মতে ‘মানুষের আয়
কমে গেলে তারা দামী
বিলাস পণ্য কেনা কমিয়ে
দেয়, কম দামী বিলাস
পণ্য কেনে। এতেই বাড়ে লিপস্টিক
এর বিক্রি এবং ব্যবহার। জুলিয়েট
শোরের এই তত্ত্ব জনপ্রিয়তা
পায় ২০০০ সালে। মার্কিন
মন্দায় প্রসাধনী সংস্থা ‘এন্টি লডার’ ‘দ্য লিপস্টিক ইফেক্ট’
শব্দটি ব্যবহার শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রে
২০০১ সালে নাইন—ইলেভেনের
পর সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে লিপস্টিকের ব্যবহার বেড়েছিল শতকরা ১১ ভাগ। ২০০৮
সালে অর্থনৈতিক মন্দার সময়ও একই প্রবণতা দেখা
দেয়। এর ফলে তীব্র
অর্থনৈতিক সংকট এখন ‘লিপস্টিক
ইফেক্ট’ হিসেবেই পরিচিত।
লিপস্টিক
শুধু অর্থনৈতিক সংকটের প্রতীক নয়, এটা প্রতিবাদের
ভাষা হিসেবেও পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯১২ সালে নারী
স্বাধীনতার দাবীতে মেয়েরা রাস্তায় নামে গায়ে লাল
রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে। সেখান থেকে লাল লিপস্টিক
এখনও দ্রোহের প্রতীক। ২০১৫ সালে মেসিডোনিয়ায়
শুরু হয় সরকার বিরোধী
বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভে অংশ
নেয়া এক নারী ব্যরিকেডে
থাকা এক পুলিশে বর্মে
লাল চুমু একে দেন।
এই চুমুটিই মুহুর্তে হয়ে যায় সরকার
বিরোধী বিক্ষোভের প্রতীক। ২০১৮ সালে সরকারের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা হয়েছিল লিপস্টিক।
দেশটিতে নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও লাল লিপস্টিক মেখে
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনে আটকদের মুক্তি দাবী করেন। ২০১৯
সালে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হন চিলির নারীরা।
কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে, লাল
স্কার্ফ মাথায় দিয়ে, লাল লিপস্টিক ঠোটে
লাগিয়ে প্রতিবাদ করেন চিলির প্রায়
১০ হাজার নারী। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রীর লিপস্টিক তত্ত্ব কি সেই বার্তা
বাহক? তিনি কি অর্থনৈতিক
সংকটকে কবুল করলেন, তিনবার
লিপস্টিক লাগানোর তথ্য হাজির করে?
তীব্র আর্থিক সংকটে এখন নারীদের সৌন্দর্যের
সম্বল শুধু লিপস্টিক, এই
বার্তাটি দিয়ে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে
অবস্থান নিলেন? কারণ আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী
মস্ত বড় ব্যবসায়ী। দেশে—বিদেশে ঘুরেছেন বিভিন্ন সুশীল গোল টেবিলে, পাঁচতারকা
হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানে তাকে হরহামেশাই দেখা
যায়। তিনি অর্থনীতিতে ‘লিপস্টিক
তত্ত্ব’ জানবেন না, তা কি
করে হয়? তাই জেনে
বুঝেই তিনি প্রতীকী ভাষায়
সরকারের সমালোচনা করলেন। অথবা শ্রীলংকা কিংবা
ব্যাংককের নারীদের মতোই বাংলাদেশে নারীদের
লিপস্টিক ব্যবহার বেড়েছে বলে বাণিজ্যমন্ত্রী কুৎসিত
ইঙ্গিত করলেন? নাকি তিনি প্রতিবাদের
ভাষা হিসেবে ‘দিনে তিনবার লিপস্টিক’
লাগানোকে দেখার চেষ্টা করেছেন? বিএনপি—জামায়াত যেমন প্রকাশ্যে দাবী
করে, দেশের মানুষ ফুঁসে আছে সরকারের বিরুদ্ধে।
জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ। আমাদের মহান বাণিজ্যমন্ত্রী কি
সেই বার্তাকেই ধারণ করলেন? প্রতীকী
ভাষায় তিনি বুঝিয়ে দিলেন
বিরোধী দলের বক্তব্য সঠিক।
সরকারে থেকে তিনি সরকারের
বিরুদ্ধে স্যাবোটাজ করছেন? এজন্যই তিনি লিপস্টিক তত্ত্বের
কথা বললেন?
অথবা
তিনি বিভ্রমে আছেন। ক্ষমতা, চাটুকারদের বেষ্টনীর মধ্যে থেকে জনবিচ্ছিন এই
মন্ত্রী মানুষের কষ্ট বুঝতে অক্ষম।
মন্ত্রীত্ব তাকে এক রূপকথার
জগতে নিয়ে গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে,
তাতে মানুষ আর পারছে না।
কিন্তু আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী আছেন বিভ্রমে। তিনি
মানুষের কষ্ট, যন্ত্রণা বুঝতে অক্ষম। মানুষের কষ্ট নিয়ে নোংরা
তামাশা করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রীর লিপস্টিক তত্ত্বের প্রেক্ষিতে আমার প্রয়াত বাম
কবি নবারুন ভট্রাচার্যের সেই বিখ্যাত কবিতাটি
মনে পড়লো—
‘এই
ভাবেই
তুমি
বুলেট কে ভেবেছে লিপস্টিক
বোমার
ধোঁয়াতে দেখেছো মেঘের ব্যবসা
তাই
শিশুদের ছেঁড়া হাত
বুক
ফুটো মানুষ, থ্যাঁতলানো হাসপাতাল
নজরেই
পড়েনি তোমার।‘
সৈয়দ
বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
৩০ নভেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। শেষদিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের
‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা। কারাগার থেকে বেরিয়েই এ বিএনপি নেতা যেভাবে ঝালকাঠিতে
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, তা বিস্ময়কর। শাহজাহান ওমরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত,
রওশন এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া, রেকর্ড পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগে
চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়া ইত্যাদি সবই ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী
কৌশল। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি আগামী নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ করতে চায়। ভোট
উৎসব করতে চায়। সেজন্যই এতসব আয়োজন। বিএনপি এবং তার মিত্রদের বাদ দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু
ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার রাজনৈতিক কৌশলে শেষ পর্যন্ত কি আওয়ামী লীগ সফল হবে? নাকি
এ কৌশল তাদের জন্য হবে বুমেরাং? এ কৌশলে আওয়ামী লীগের লাভ হলো না ক্ষতি?
বিএনপি-জামায়াত অংশ না নিলেও এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দল। দল এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৩০০ আসনে প্রার্থী হয়েছে ২ হাজার ৭৪১ জন। প্রায় ৮০০ স্বতন্ত্র প্রার্থী, এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীই ৪০০-এর ওপর। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো হচ্ছে না। ওই নির্বাচনে বিনা ভোটে এমপি হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা শুনতে হয়েছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব, নাশকতার কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণ এবং বহির্বিশ্ব এ নির্বাচন মন্দের ভালো হিসেবে মেনে নেয়। ওই সংসদ মেয়াদ পূর্ণ করে। এবার দেশি-বিদেশি সবাই ২০১৪-এর মতো পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করেছিল। আওয়ামী লীগ সভাপতিও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গণভবনে ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিনা ভোটে এমপি হওয়া যাবে না। প্রত্যেক আসনে ‘ডামি প্রার্থী’ দেওয়ার কৌশলের কথাও তিনি দলের নেতাকর্মীদের জানিয়েছিলেন। ব্যস, আওয়ামী লীগের এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সবাই এটাকে সবুজ সংকেত হিসেবে মনে করেন। দলীয় মনোনয়ন যারা পাননি তারা ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হওয়াটাকে পবিত্র দায়িত্ব মনে করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাম্পার ফলন হয়েছে এই নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরাও বুঝতে পেরেছেন এভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিস্ফোরণ দলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এরপর থেকে বারবার বলছেন, যথেচ্ছভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া যাবে না। দল ঠিক করে দেবে কে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে। দলের সিদ্ধান্ত না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সারা দেশে আওয়ামী লীগের ‘চেইন অব কমান্ড’ রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচন হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ ‘এ’ টিম আর আওয়ামী লীগ ‘বি’ টিমের লড়াই। কোথাও কোথাও ‘সি’ টিম, ‘ডি’ টিমও আছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে যদি ক্ষমতাসীনরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে না পারে, তাহলে সমূহ বিপদ। এর ফলে বহু আসনে নৌকা প্রার্থীর বদলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের বিজয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগ অবশ্য মনে করতেই পারে যেই জিতুক, এমপি তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী তাৎপর্য হবে ভয়াবহ। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাতেই আওয়ামী লীগ হয়ে পড়বে বিভক্ত। একপক্ষ অন্যপক্ষের সঙ্গে মারামারি, খুনোখুনি করবে। একে অন্যের চরিত্র হনন করবে। সারা দেশে সংগঠনে সৃষ্টি হবে বিশৃঙ্খলা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এমপি হবেন, তখন তাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানো হবে কঠিন। কেউ মন্ত্রী হতে চাইবেন, কেউ বিক্রি হবেন। কেনাবেচার বাজারে তারা আওয়ামী লীগের ওপরই যে চাপ সৃষ্টি করবেন না, তা কি কেউ হলফ করে বলতে পারবে?
এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জোটগত ঐক্য নিয়ে
এখন পর্যন্ত একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। একমাত্র হাসানুল হক ইনু ছাড়া ১৪ দলের আর কোনো
নেতার আসন সংরক্ষিত নয়। ২০০৮-এর নির্বাচন থেকে গত তিনটি নির্বাচনী আওয়ামী লীগ জোটগতভাবে
করেছে। মহাজোট এবং ১৪ দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটের অংশ। জাতীয় পার্টি ছাড়া মহাজোটের
শরিক অন্য সব দলই নৌকা প্রতীকে গত তিনটি নির্বাচন করেছে। এবার কী হবে? যদিও আওয়ামী
লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১৪ দলের শরিকদের জন্য তারা আসন ছেড়ে দেবে। মনোনয়ন প্রত্যাহার
পর্যন্ত সময় আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ যে কটি আসন দেবে, তা কি ১৪ দলের শরিকরা মানবে?
এ নিয়ে মনোমালিন্য, মান-অভিমান, তিক্ততার পর্যায়ে চলে যেতে পারে। ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের
ওয়ার্কার্স পার্টির কথাই ধরা যাক। দলটির প্রধান নেতা রাশেদ খান মেননের আসনে আওয়ামী
লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের জনপ্রিয় নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমকে। আওয়ামী লীগ নিশ্চয়ই মেননকে
বরিশালের একটি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তাব দেবে। ওই আসনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী
আছেন। আছেন বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার
করবেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন দলীয় সিদ্ধান্ত মানবে? আওয়ামী লীগের
স্থানীয় সংগঠন কি মেননের জন্য কাজ করবে, না বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য কাজ করবে? রাজশাহীতে
ওয়ার্কার্স পার্টির আরেক নেতা ফজলে হোসেন বাদশার আসনেও হবে একই নাটক। এ লেজে-গোবরে
অবস্থায় যদি আওয়ামী লীগের শরিকরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তাহলে আমি অবাক হব না।
সেটা হবে এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার আরেক সংকট। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতারা
ভালো করেই জানেন ভোটের বাজারে তারা মূল্যহীন। আওয়ামী লীগের প্রতীক এবং কর্মী-সমর্থকরাই
তাদের ভরসা। সেই ভরসাতেও অপমান, উপেক্ষা সহ্য করে তারা অনেকটাই চাকরবাকরের মতো জোটে
আছেন। কিন্তু এবার সত্যি তাদের একটা অপমানজনক অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ
সভাপতি বড় উদারতা না দেখালে জোট নিয়ে এক অস্বস্তিতে পড়বে আওয়ামী লীগ। আলাদা আলাদা নির্বাচনের
যে কৌশল আওয়ামী লীগ নিয়েছে, তা তাকে বন্ধুহীন করতে পারে।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, ছিল দ্বন্দ্ব-সংঘাত। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের আচরণ, কথাবার্তা সবই ছিল সন্দেহজনক। গত দুই বছর ধরেই তিনি কখনো বিএনপির চেয়ে বড় বিরোধী দল, কখনো সুশীলদের চেয়েও বড় বুদ্ধিজীবী হয়ে উঠতেন। এ কারণেই সরকার ‘রওশন এরশাদ’কে একান্ত আপনজন করে রাখত। নির্বাচনের তপসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি যখন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে কালক্ষেপণ করছিলেন, তখন রওশন এরশাদই ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন। তিনিই প্রথম ঘোষণা করেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে। রওশন এরশাদ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জি এম কাদেরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। নির্বাচনমুখী নেতাদের সামলাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে নিশ্চয়ই সরকার খুশি হয়েছে। জি এম কাদেরের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়া এবং সমঝোতার কারণেই রওশন এরশাদ জাপায় মাইনাস হয়ে গেলেন বলে আমি মনে করি। কিন্তু জি এম কাদেরের প্রতি আওয়ামী লীগের আস্থা কি ঝুঁকিপূর্ণ নয়? জি এম কাদেরকে আস্থায় আনতে যেভাবে রওশন এরশাদকে টিস্যু পেপার বানানো হলো, তার ফল খারাপও হতে পারে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কী করেছিলেন, তা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ ভুলে যায়নি। ওই নির্বাচনে রওশন এরশাদই শেষ রক্ষা করেছিলেন। এবার জি এম কাদের যে এরশাদের পথে হাঁটবেন না, তা কে বলবে। সেরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনী মাঠে কে ধরে রাখবে? জাতীয় পার্টি নিয়ে আওয়ামী লীগের কৌশল কি ঝুঁকিপূর্ণ হলো না?
এবার নির্বাচনের আগে দুটি ‘কিংস পার্টি’ বেশ সরব হয়েছিল। একটি তৃণমূল বিএনপি, অন্যটি বিএনএম। দুটি দলেরই প্রধান টার্গেট ছিল বিএনপি থেকে লোক ভাঙানো। দুটি দলই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো দলই ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। বিএনপি থেকেও বড় কোনো নেতা এসব দলে যোগ দেননি। এখন এই দুটি দল আওয়ামী লীগের দায়ে পরিণত হয়েছে। এরা ভোটে নয়, সমঝোতায় এমপি হতে চায়। সরকার তাদের ভোটে জিতিয়ে সংসদে আনবে এমন প্রত্যাশায় এরা নির্বাচনে এসেছে। এসব দলের যে সাংগঠনিক অবস্থা এবং প্রার্থীদের যোগ্যতা তাতে দুয়েকজন ছাড়া আর কেউ ভোটের মাঠে জামানত রাখতে পারবে কি না, আমার সন্দেহ। এদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে সরকারকে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করতে হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করাটা কতটা জরুরি। ছোটখাটো অনিয়মও নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করবে। গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে। আন্তর্জাতিক মহল নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। কাজেই এত বড় ঝুঁকি সরকার বা আওয়ামী লীগ কি নেবে? আবার ভালো নির্বাচনে এরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলে, আওয়ামী লীগকেই দোষারোপ করবে।
আওয়ামী লীগ কেন শাহজাহান ওমরকে দলে ভেড়াল? এ থেকে আওয়ামী লীগ কী পেল? আদর্শহীন ব্যক্তিকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে ক্ষমতাসীনরা কি প্রমাণ করল না, তারাও ভাঙাগড়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের এরকম প্রক্রিয়ার যুক্ত হওয়া কি শোভন। এই কৌশলে কি লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হলো না?
নির্বাচন প্রসঙ্গ এলেই ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ আসে। সব দল অংশগ্রহণ করার পরও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে ওই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ। এর প্রধান কারণ ছিল প্রার্থী এবং প্রশাসনের যোগসাজশ। অতি উৎসাহীদের দায়িত্বহীন কাণ্ড। এবার নির্বাচন অনেকটাই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ লড়াই। বিরোধীরা এ নির্বাচনে তৃতীয়পক্ষ। তাই এ নির্বাচনে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ থাকার বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাউকে জেতাতে বা হারানোর দায় নেই কারও। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র, যারা প্রার্থী তারা সবাই প্রভাবশালী। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে প্রার্থীরা নানাভাবে ঘনিষ্ঠ। ক্ষমতার শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, তারা কি শেষ পর্যন্ত জনগণের মতামতের ওপর নির্ভর করবে, না জয়ী হতে সব অপকৌশল প্রয়োগ করবে?
আগামী কয়েকটা দিন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তপসিল ঘোষিত হয়েছে, মনোনয়নপত্র দাখিলও হয়েছে, কিন্তু নির্বাচন এখনো অনেক দূরের পথ। এ পথে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে, তা সামাল দিতে পারবে আওয়ামী লীগ? আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল কি পারবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ঠিকানায় দেশকে নিয়ে যেতে?
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com
আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
জি এম কাদের জাতীয় পার্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তৃণমূল বিএনপি বিএনএম শাহ্ জাফর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন শ্রমনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৩০ নভেম্বর ছিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিন। শেষদিনের সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিএনপি নেতা শাহজাহান ওমরের ‘নৌকা’ প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা। কারাগার থেকে বেরিয়েই এ বিএনপি নেতা যেভাবে ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হলেন, তা বিস্ময়কর। শাহজাহান ওমরের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত, রওশন এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া, রেকর্ড পরিমাণ স্বতন্ত্র প্রার্থী, আওয়ামী লীগে চার শতাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়া ইত্যাদি সবই ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী কৌশল। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি আগামী নির্বাচন ‘অংশগ্রহণমূলক’ করতে চায়। ভোট উৎসব করতে চায়। সেজন্যই এতসব আয়োজন। বিএনপি এবং তার মিত্রদের বাদ দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার রাজনৈতিক কৌশলে শেষ পর্যন্ত কি আওয়ামী লীগ সফল হবে? নাকি এ কৌশল তাদের জন্য হবে বুমেরাং? এ কৌশলে আওয়ামী লীগের লাভ হলো না ক্ষতি?
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে কারা বিজয়ী হবে তা নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ নেই। বিএনপি-জামায়াত জোট যখন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না তখন এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আওয়ামী লীগ যে আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে এবং সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, এটি নিয়ে কারও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে মজার যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হল কারা প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদের দায়িত্ব পালন করবে। শেষ পর্যন্ত যদি ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হয় তাহলে এই নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রধান আকর্ষণ হবে কে হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে গত ২৬ নভেম্বর। এবারের নির্বাচন বড়ই অদ্ভুত নির্বাচন। এই নির্বাচনে একটিই ফলাফল হতে পারে। সেটি হলো আওয়ামী লীগের বিজয়। বিএনপি এবং তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম সহ যে সব রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের একটাই লক্ষ্য, ‘বিরোধী দল’ হওয়া। তবে নির্বাচন টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জন্য চ্যালেঞ্জের। পশ্চিমা বিশ্ব নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই চায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীরব কূটনীতি অত্যন্ত বিপজ্জনক। একথা বলেছিলেন বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানরা। এখন বাংলাদেশের ব্যাপারেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ধরনের নীরবতা অবলম্বন করছেন। কূটনৈতিক পরিভাষায় একে বলা হচ্ছে সাইলেন্ট ডিপ্লোমেসি। আর এই নীরব কূটনীতি যে কোনো দেশের জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা।
প্রায় দু সপ্তাহ নীরব থাকার পর মাহমুদুর রহমান মান্না আবার সরব হয়েছেন। আবার রাস্তায় এসে সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। কিন্তু গত দু সপ্তাহ তিনি কোথায় ছিলেন? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, এ সময় মান্না সরকারের সাথে নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে দেন দরবার করেছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত দেন দরবারের রফা হয়নি। সেই কারণেই মান্না এখন আবার সরব হয়েছেন। আবার বিরোধী দলের লড়াকু সৈনিক হিসেবে মাঠে নেমেছেন। মাহমুদুর রহমান মান্না যা চেয়েছিল তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।