আওয়ামী লীগ এখন রাজাকার খোঁজায় ব্যস্ত। দলের তৃণমূল নেতারা একে অন্যকে ‘তুই রাজাকার’ বলেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, তথ্য-প্রমাণসহ চিঠি দিচ্ছেন দলের হাইকমান্ডের কাছে। ‘রাজাকার’ নিয়ে অভিযোগের স্তুপ এখন দলের সভানেত্রীর কার্যালয়ে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নিজেই এক অনুষ্ঠানে বললেন, ‘আওয়ামী লীগে এখন একে অন্যকে রাজাকার বলছে।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শুনে ‘বহুব্রীহি’ নাটকের কথা মনে পড়ে গেল। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বহুব্রীহি নাটকের কথা মনে আছে? আলী যাকের পাগলাটে মানুষ। নানারকম পাগলামি করেন। সিদ্ধান্ত নিলেন পোষা পাখিকে ‘তুই রাজাকার’ শেখাবেন। সেজন্যই টেপরেকর্ডারে তুই রাজাকার রেকর্ড করে পাখির কাছে অবিরত শোনানো হলো। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। হতাশ আলী যাকের। এ সময় এলেন রাজাকার (আবুল হায়াত)। দেখে পাখি বলে উঠল ‘তুই রাজাকার’। হুমায়ূন আহমেদ এ নাটকটি লিখেছিলেন এমন একসময় যখন বাংলাদেশে রাজাকার, আলবদর, যুদ্ধাপরাধী ইত্যাদি শব্দগুলো নিষিদ্ধ ছিল। বেতার-টেলিভিশনে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ ছিল অপরাধ। পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল ‘পাকিস্তান হানাদার বাহিনী’ কথাগুলো।
ইতিহাস বিকৃতির এমনই একসময়ে হুমায়ূন আহমেদ ‘রাজাকার’ শব্দটি সামনে এনেছিলেন নিপুণ দক্ষতায়। ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশে ‘রাজাকার’ শব্দটিকে ঘৃণিত হিসেবে জনপ্রিয় করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বহুব্রীহি নাটকে। ১৯৯১ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে জামায়াত প্রকাশ্যে তাদের দলের আমির ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয় মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’। সে সময় তারুণ্যে ভরপুর ‘আজকের কাগজ’ একরাশ তরুণকে নিয়ে নতুন ধারার সাংবাদিকতা শুরু করে। ’৯১-এর ডিসেম্বরে ‘আজকের কাগজ’ প্রথম পৃষ্ঠায় ‘তুই রাজাকার’ শিরোনাম দিয়ে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের অপকর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রকাশ্যে আনে। ‘তুই রাজাকার’ শিরোনামে এ লেখার মূল আকর্ষণ ছিল শিশির ভট্টাচার্যের কার্টুন। একজন রাজাকারের কার্টুন, ’৭১-এ তার অপকর্মের ছোট্ট বর্ণনায় ‘তুই রাজাকার’ অসাধারণ জনপ্রিয়তা পায়। শেষ কার্টুন ছিল গোলাম আযমের। সারা দেশে হুমায়ূন আহমেদের ‘তুই রাজাকার’ শিশির ভট্টাচার্যের কার্টুনে নবজন্ম পায়। ‘তুই রাজাকার’ স্বাধীনতা -বিরোধীদের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় স্লোগানে পরিণত হয়। শহীদ জননীর নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে গঠিত হয় ‘গণআদালত’। এটিই রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে প্রথম গণঅভ্যুত্থান। এ আন্দোলনে প্রধান সংগঠন ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের জন্যই ‘গণআদালত’ সফল হয়েছিল। আওয়ামী লীগ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ করার অঙ্গীকার করেছিল। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগই একদিন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে।’ শহীদ জননীর এ আন্দোলনকে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। বেগম জিয়ার নেতৃত্বে তৎকালীন বিএনপি সরকার এ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ‘গণআদালত’ করার কারণে শহীদ জননীসহ একাধিক বিশিষ্টজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছিল। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। ’৭১-এর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিই বাংলাদেশে রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ’৭৫-এর পর দেশবাসীকে সংগঠিত ও উদ্বুদ্ধ করে। আর এ আন্দোলনের প্রধান শক্তি ছিল আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার দাবি সামনে নিয়ে আসে।
১৯৯৬-২০০১ সালে না পারলেও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও শুরু করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেখ হাসিনার সাহস ও দৃঢ়তার প্রমাণ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠায় এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এ বিচারের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের পথে পা রেখেছিল। কিন্তু ১৩ বছর পর এখন আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘তুই রাজাকার’ ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগই তার দলের অন্য সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার। অন্তত আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তা-ই মনে করেন। ২৭ অক্টোবর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের ‘রাজাকার’ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাই এখন একে অন্যের দিকে রাজাকারের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছেন।’ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘যার সঙ্গে বনবে না তাকে বলবে রাজাকারের ছেলে অথবা বলবে রাজাকারের নাতি বা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল তারা।’ ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, ‘এসব অভিযোগের স্তুপ হয়েছে আওয়ামী লীগে।’ ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে বিতর্ক হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। দফায় দফায় মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। মনোনয়ন ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কেউ মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তির আসল পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছেন, কেউ পুরনো ছবিও পোস্ট করছেন। এর সবই যে মিথ্যা তা নয়। কারণ ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড বেশ কিছু মনোনয়ন পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় আওয়ামী লীগে ‘রাজাকার’ গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যত প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাজাকারের অভিযোগ উঠেছে তা যদি সত্যি হয় তাহলে তা লোম বাছতে কম্বল উজাড়ের মতো ঘটনা হবে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের মূল সুর অনুধাবন করলে বোঝা যায়, অনেক অভিযোগই অসত্য। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে করা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটা সস্তা কৌশল। রাজাকার, বিএনপি বা জামায়াত বলে কাউকে কোণঠাসা করার কৌশলটি আওয়ামী লীগের কারও কারও পুরনো অভ্যাস। এ অভ্যাসটা এখন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। শুধু রাজনৈতিক কাজে নয়, প্রশাসনে, ব্যবসায় এ ব্যাধি সংক্রমিত হয়েছে। ধরা যাক, প্রশাসনে একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি মেধাবী, কারও সাতেপাঁচে নেই। প্রতিপক্ষ তাকে রাজাকারের আত্মীয় বানিয়ে দিল। ব্যস, তার পদোন্নতি বন্ধ হয়ে গেল। একসময় ওই দক্ষ মেধাবী কর্মকর্তা হয়ে গেলেন রাজাকার। ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়ার ব্যাধিটা শুরু অবশ্য রাজনীতি থেকে। আওয়ামী লীগের বিরোধিতা, সমালোচনা করা মানেই তিনি স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বুঝে না বুঝে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলে কৌশলটির প্রয়োগ ঘটিয়েছিল। খুব দ্রুত এর এমন অপপ্রয়োগ শুরু হলো যে একবার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও আওয়ামী লীগের অতিউৎসাহীরা ‘রাজাকার’ বানিয়ে ফেলেছিল। এ কাজের জন্য আওয়ামী লীগে উর্বর মস্তিষ্কের গবেষকের অভাব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিশ্বাস করে, বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে ধারণ করে কেউ আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডের সমালোচক হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগে কিছু চাটুকার সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় কিংবা কৃপালাভের জন্য প্রতিপক্ষকে রাজাকারের তকমা লাগিয়ে দেওয়ার এক খেলা শুরু করেছিল। এ খেলায় এখন আওয়ামী লীগই একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে।
এ কথা ঠিক, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীদের পুনরুত্থান ঘটে। প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ ’৭৫-’৯৫ সাল পর্যন্ত জামায়াত, স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ’৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এ সময় প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের সামনে আনার একটি প্রয়োজনীয়তা ছিল। পেশাদারি, মেধার পাশাপাশি তার অতীত ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও মধুর আশায় অনেক রাজাকার পরিবার আওয়ামী লীগে ভিড় করে। পাশাপাশি এ সময় অনেক চাটুকার ‘বঙ্গবন্ধু সৈনিক’ এবং ‘২১ বছরের ত্যাগী’ হয়ে যান। এর ফলে আসল শুভাকাক্সক্ষীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। এ সময় চাটুকারিতা ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উগ্র মানসিকতা দুটোই বেড়ে যায়। ক্রমে তা মহামারীতে রূপ নিয়েছে। কারও পদোন্নতি ঠেকাবেন, বলুন, ‘তুই রাজাকার’। কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে বাধা দেবেন বলুন, ‘তুই রাজাকার’। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বড্ড বেশি সমালোচনা করেছেন, বলুন, ‘তুই রাজাকার’। রাজাকার বললেই হলো। বাছবিচার ছাড়া এভাবে তকমা লাগানোর প্রবণতা এখন আওয়ামী লীগের ঘরেই হানা দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার একটি সঠিক, নির্ভুল তালিকা তৈরি করতে পারিনি। এ দেশে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট কেনাবেচা হয়। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে নিয়ে লিখতেও লজ্জা লাগে। তিনি রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করলেন ঘটা করে। সে তালিকায় দেখা গেল বহু মুক্তিযোদ্ধার নাম। মন্ত্রী নিজেই নিজেকে ‘বেকুব’ বললেন। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে তো এখন লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। যে দেশে কিছু টাকা খরচ করলেই মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, সে দেশে রাজাকার বানানো তো আরও সহজ। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ই এখন রাজাকার পুনর্বাসন কেন্দ্র বলে অনেকে অভিযোগ করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি। কিংবা আওয়ামী লীগের মধ্যেই কেউ কেউ এগিয়ে নিতে দেয়নি। বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়। এ প্রকল্প দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রয়াত হাসান হাফিজুর রহমান, আফসান চৌধুরীর মতো দৃঢ়চিত্তের গবেষকের কল্যাণে তা হয়নি। এ প্রকল্পের মাধ্যমেই ১৫ হাজার পৃষ্ঠার ১৫ খণ্ডের দলিল প্রকাশিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ : দলিলপত্র’কে নিজেদের মতো করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে জিয়ার নাম ঢোকানোর জন্য চাপ দিয়েছিল লেখক ও প্রকাশককে। কিন্তু হাক্কানি প্রকাশনী বিএনপি সরকারের ওই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি। ফলে বিপুলসংখ্যক বই গুদামে পড়ে ছিল। আওয়ামী লীগ এ উদ্যোগকে কেন এগিয়ে নিয়ে যায়নি, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের নির্মোহ, সত্যনিষ্ঠ ইতিহাস ও দলিল তৈরি আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী নিজে গবেষণামনস্ক একজন মানুষ। কদিন আগেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ’৭৫-এর পর নানারকম খেলা হয়েছে। যে-যার মতো ইতিহাস বিকৃতি করেছে। চিরদিনের জন্য এ বিকৃত ও মিথ্যাচার বন্ধ করা প্রয়োজন। আর এটা বন্ধের একমাত্র উদ্যোগ গবেষণা এবং তথ্য অনুসন্ধান। এখনো আফসান চৌধুরী, মুনতাসীর মামুনের মতো ইতিহাস অনুসন্ধানী গবেষক বাংলাদেশে রয়েছেন। যাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করলে এ জাতি ইতিহাস বিকৃতির অভিশাপ থেকে মুক্তি পেত। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে পথে যায়নি। বরং ইতিহাস বিকৃতি রুখতে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ ইতিহাসবিদ হয়ে গেছেন। কিছু লাভের আশায়, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইতিহাস বানিয়েছেন। ’৭১-এ ল্যাংটো হয়ে ডাঙ্গুলি খেলা বালক যখন ’৭১-এ তাজউদ্দীন আহমদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করে তখন তা ভয়াবহ। আওয়ামী লীগের কিছু নেতা আছেন যারা কথায় কথায় যাকে তাকে রাজাকার বানিয়ে দেন। রাজাকার বানানো এ ব্যাধির ধাক্কা এসে এখন লেগেছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে। তৃণমূলের কথা বাদই দিলাম। এখন রাজাকার বানানোর আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বড় নেতারাও। কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের পরিবারকে নিয়েও রাজাকার বিষয়ক কটূক্তি করা হলো। যদিও এ বক্তব্যের পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু কাউকে রাজাকার বানিয়ে দেওয়ার ভয়ংকর অসুখ যে কোন পর্যন্ত যেতে পারে এ থেকে তা অনুমান করা হয়েছে। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজাকার রোগের ভয়াবহতা আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে। ১৩ বছর টানা ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগে যে অনেক রাজাকার, মৌলবাদ এবং উগ্রসাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ঢুকে গেছে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। রংপুরের সৈকত মন্ডল, কিংবা সম্প্রতি চুল কাটার ফতোয়া দেওয়া ইউপি চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন হাওলাদার তার বড় প্রমাণ। এ রকম বহু উদাহরণ দেওয়া যায়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার বলেছেন। নিজ উদ্যোগে তালিকা করে দলে নেতাদের দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ এদের আওয়ামী লীগে এনেছেন এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতারা। তাদের জন্যই এসব অনুপ্রবেশকারীকে আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দেওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তারাও প্রভাবশালীদের বদান্যতায় পেয়েছেন। যে দলটি ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দেশি এজেন্ট রাজাকার, আলবদরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে সেই দলে একজনও রাজাকার সন্তান বা রাজাকার পরিবারের সদস্য জনপ্রতিনিধি হওয়া কাক্সিক্ষত নয়। তাই আওয়ামী লীগকে রাজাকারমুক্ত হতেই হবে। মনে রাখতে হবে স্বাস্থ্য নয় ব্যাধি সংক্রমক। একবার আওয়ামী লীগে বাসা বাধলে আওয়ামী লীগই নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ইতিহাস, গবেষণা, তথ্য-প্রমাণ ছাড়া যাকে তাকে যখন তখন ঘায়েল করার জন্য রাজাকার বলার সস্তা মানসিকতা থেকেও আওয়ামী লীগের উৎসাহীদের সরে আসতে হবে। অন্যকে ঘায়েল করার এ অস্ত্র আওয়ামী লীগের জন্যই বুমেরাং হয়ে যাবে। যার প্রমাণ এবার আওয়ামী লীগ পাচ্ছে।
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।