প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেদিন লন্ডনে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সেখানে রোড শো উদ্বোধন করলেন। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসী বাঙালি ও ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘বাংলাদেশে চমৎকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে।’ দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর যখন এই চমৎকার উদ্যোগ, সেদিন বাংলাদেশে ঘটল অন্যরকম এক ঘটনা। হঠাৎ করেই ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হলো। বলা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বাড়াতেই নাকি এমনটা করা হয়েছে। ভালো কথা। তাহলে, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের আগে কেন দামটা বাড়ানো হলো না? কিংবা প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এ মূল্যবৃদ্ধি করলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? এ প্রশ্ন করলাম এজন্য যে এ ঘটনা কি কাকতালীয় না স্যাবোটাজ, এ নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন রোডশো করছেন, সে সময় বাংলাদেশ অচল! গণপরিবহন বন্ধ। চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ। পণ্য পরিবহন বন্ধ। লঞ্চ বন্ধ। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উৎসাহিত হয়ে যারা বাংলাদেশমুখী হবেন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে কী বার্তা পাবেন? তারা জানলেন, এখানে কথায় কথায় ধর্মঘট করা যায়। চট্টগ্রাম বন্দরে মাল আটকে থাকে। বিপিসি জানাল, এ মূল্যবৃদ্ধি ছয় মাস পরও করা যেত। তাহলে এ তাড়াহুড়ো কেন? কেন এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হলো না? কেন গণশুনানি ছাড়াই মূল্যবৃদ্ধি? প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরের সময় কেন? এটা কি তাঁর আহ্বানকে ব্যর্থ করার জন্য?
প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে তেলেসমাতি কাণ্ড হলো, তাতে আমার মনে হয় সরকারের ভেতরে একটি শক্তিশালী অংশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। তাঁর শত্রুরাও এ কথা স্বীকার করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। এই তো সেদিন জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যতম প্রেরণাদায়ী প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিবেচিত হলেন। বাংলাদেশ যে এখন ক্ষুধা-দারিদ্র্য মুক্ত, এটা শেখ হাসিনার অবদান। কিন্তু শেখ হাসিনার অর্জন, তাঁর স্বপ্নগুলোকে বিনষ্ট করতে যেন একটি মহল তৎপর। আর সে মহলটি অন্য রাজনৈতিক দল নয়, খোদ সরকারের ভিতরই দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন এবং উন্নয়ন কৌশল খুব স্পষ্ট, স্বচ্ছ। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করেন, লালন করেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চান। এটাই তাঁর রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নও খুব সহজ এবং সোজাসাপটা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই জাতির পিতার সারা জীবনের স্বপ্ন। এজন্য তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন। জুলুম, নির্যাতন সহ্য করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল কথা ছিল জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সারা জীবন তিনি ছিলেন জনগণের পক্ষে। শেখ হাসিনাও তাই। জনকল্যাণ এবং জনগণের ক্ষমতায়ই তাঁর রাজনীতির মূল সুর। কিন্তু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরকারের একটি অংশ যা করল তা রীতিমতো নিষ্পেষণ। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। যারা এটা করেছে তারা একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে সরকারের প্রভাবশালীদের প্রকাশ্য ও গোপন প্রেম-প্রণয় রয়েছে। এরাই বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যা হলো তা ভয়ঙ্কর। প্রথমে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানালেন আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা। এরপর এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যা বললেন তা পিলে চমকানোর মতো। তাঁর মতে আমাদের দেশে ডিজেলের মূল্য কম হওয়ায় ডিজেল ভারতে পাচার হয়। তাহলে আমাদের সীমান্তরক্ষীরা ব্যর্থ? আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পাচার রোধে অক্ষম? সরকারের কাজ পাচার বন্ধ করা। পাচার রোধে মূল্যবৃদ্ধি যেন অনেকটা চোরের ভয়ে গহনা বেঁচে দেওয়ার মতো। আমাদের মন্ত্রীরাই পারেন এ রকম দায়িত্বহীন মন্তব্য করতে। কাল কি ওই মন্ত্রী বলবেন- রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে এজন্য গাড়ি চালাবেন না? কদিন পর এ রকম যুক্তিও কি দেওয়া হবে- রাস্তায় ছিনতাই হয় তাই ঘর থেকে বেরোবেন না? ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা যে শেখ হাসিনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র তা স্পষ্ট হলো এর পরের ঘটনাপ্রবাহে। মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবহন মালিক, কাভার্ড ভ্যান মালিক ইত্যাদি নানা মালিকের সমিতি একযোগে ধর্মঘটের ঘোষণা দিল। মন্ত্রীরা নির্বিকার! জনগণকে জিম্মি করা হলো। আমরা সবাই জানি এসব মালিক সমিতির নেতা কারা। এসব মালিক সমিতি সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সংগঠন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন এসব সমিতি সে দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে। আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এমপি পরিবহন খাতের গডফাদার। তাঁর ইশারায় মালিক-শ্রমিকরা এক ঘাটে পানি খান। অর্থাৎ সরকারের একটি অংশ জনগণকে জিম্মি করল। ৫ নভেম্বর শুক্রবার। সারা দেশে একযোগে ১৭টি ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা। এর মধ্যে গণপরিবহন বন্ধ। কিছু মন্ত্রীর কাজ হলো শুধু কথা বলা। এঁদের কথা এতই কর্কশ ও বিরক্তিকর যে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও আজকাল এদের কথায় কানে তুলা দেন। ব্যস, বকাউল্লা বকে গেলেন। পাতানো খেলার মতো বলতে থাকলেন ‘হুঁশিয়ার, সাবধান!’ মালিক সমিতির নেতারা মুচকি হাসলেন। তাঁরা জানেন এসব স্রেফ কথার কথা। যথারীতি মালিকপক্ষের দাবি মেনে নেওয়া হলো। সরকার কার প্রতিনিধি- জনগণের না মালিক পক্ষের? কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আছে যার দাম বাড়লে বাজারে চেইন রিঅ্যাকশন হয়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ল। সে ঢেউ আছড়ে পড়ল কাঁচাবাজারে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে যেন এক হরিলুটের খেলা চলছে। শাকসবজি, পিঁয়াজ-কাঁচা মরিচ থেকে চালের দাম নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে চলেছে। বাজার দেখার কেউ নেই। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সে আগুনকে আরও ভয়াবহ করল। করোনার সময় থেকেই মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এ সময় ডিজেলের দাম বাড়িয়ে জন অসন্তোষ সৃষ্টির জন্যই কি এ তৎপরতা? জনগণকে জিম্মি করতে দেওয়ার সুযোগ কেন মালিকদের দেওয়া হচ্ছে? টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। সব সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বলা হচ্ছে সরকার শক্তিশালী। বিপুল জনসমর্থন আছে সরকারের। ঘরে বাইরে সরকারের ক্ষমতা দৃশ্যমান বটে। কিন্তু এত বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয় মেয়াদে থাকা একটি সরকার কিছু সিন্ডিকেটের কাছে এত অসহায় কেন? শুধু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে লক্ষ্য করি যে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন এবং নির্দেশ দেন তার উল্টো কাজ করাটা যেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের একটা অংশের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এরা যেন শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কথাই ধরা যাক। দুর্গোৎসবে যা ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য। প্রধানমন্ত্রী সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জন্য শেখ হাসিনা যা করেছেন, অন্য কোনো সরকারপ্রধান তা করেননি। কিন্তু শেখ হাসিনার এ অর্জন ম্লান করতে যেন মরিয়া সরকারের প্রশাসন। প্রতি বছর দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে তিন স্তরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়। এবার রাখা হয়নি কেন? কুমিল্লার ঘটনার পর সরকারের ঘুম ভাঙল অনেক দেরিতে, কেন? সর্বত্র প্রশাসন এত নির্লিপ্ত, উদাসীন কেন? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করল? জাতির পিতা সারা জীবন অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করে গেছেন। শেখ হাসিনাও তা করেন। কিন্তু তাঁর সরকারের মন্ত্রী, আমলা, প্রশাসনের কজন এ চেতনা ধারণ করেন? প্রশাসনে এখন বকধার্মিকের আধিক্য চোখে পড়ে। এদের কারণেই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন তা কি আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ? এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৫০ বছরে বাংলাদেশ নতুন বন্ধু পেয়েছে, তার নাম পাকিস্তান। সরকারের ভিতর প্রভাবশালী একটি অংশ যেন পাকিস্তানের সঙ্গে রোমান্সের জন্য ব্যাকুল। পাকিস্তানের কাছে পাওনা টাকার হিসাবে নেই। বাংলাদেশে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে নজরদারি নেই। পাকিস্তানের জন্য পুরনো প্রেম যেন উথলে উঠেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের ভিতর যারা মরিয়া তারাই শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ।
বাংলাদেশে এখন লাজলজ্জাহীন তৈল মর্দন প্রতিযোগিতা চলছে। শেখ হাসিনাকে এমন কোনো উপাধি নেই যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। তাঁর প্রশংসা, স্তুতিতে মন্ত্রী, আমলারা মুখে ফেনা তোলেন। কিন্তু বাস্তবে কাজ করেন তাঁর নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী। শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। সরকারের একটি অংশের একমাত্র কাজ জনগণকে যে কোনো প্রকারে কষ্ট দেওয়া। করোনাকালে তার ভূরি ভূরি নজির আছে। গার্মেন্টস চলবে, গণপরিবহন বন্ধ কিংবা অর্ধেক গাড়ি চলবে- এর মতো উদ্ভট সিদ্ধান্ত শুধু জনগণকে কষ্ট দেওয়ার জন্যই। শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করা যাবে না। বাস্তবে দুর্নীতির এক নীরব প্রতিযোগিতা চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১৭ ফাইল গায়েব হলো। দু-এক দিন তোড়জোড় দেখলাম, এখন তা বন্ধ। ফাইল রক্ষার দায়িত্ব আমলাদের, অথচ পিয়ন-দারোয়ানদের নিয়ে টানাহেঁচড়া করে লোক দেখানো নাটক হলো। শেখ হাসিনা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চেয়েছেন তা-ও তিন মাস হলো। এটা ধামাচাপা দিতে আমলারা এখন চাটুকারিতায় আরও বেশি মনোযোগী হয়েছেন। অনেকেই বিভিন্ন সময়ে বলার চেষ্টা করেন, শেখ হাসিনা যা চান তা-ই হয়। কথাটা সঠিক নয়। শেখ হাসিনার অনেক আকাঙ্খার উল্টো কাজ করছে সরকারের একটি অংশ এবং প্রশাসন। শেখ হাসিনার আকাঙ্খাগুলোকে যদি প্রশাসন বুঝত তাহলে এভাবে ডিজেলের দাম বাড়াত না, এভাবে পূজামণ্ডপে হামলা হতো না। এভাবে ফাইল চুরির ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হতো না। শেখ হাসিনার একমাত্র শক্তি হলো জনগণ। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাকে প্রতিপক্ষ ভয় পায়। সরকারের ভিতর একটি অংশ এখন শেখ হাসিনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তাঁর জনপ্রিয়তা নষ্টের চক্রান্ত চলছে। এজন্য বাজারে ছড়ানো হয়- শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছুই হয় না। মন্ত্রীরা ঘুষ খান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে? আমলারা বেগমপাড়ায় বাড়ি বানান প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে? নীরবে পর্দার আড়ালে চলছে এক সর্বনাশা খেলা। এ খেলায় শেখ হাসিনার দুঃসময়ের আপনজনদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনে সৎ, যোগ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের আড়াল করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাকে বায়ু বাবলের মতো চাটুকার বলয় ঘিরে ফেলেছে। শুধু সরকার কেন, আওয়ামী লীগের একটি অংশও যেন শেখ হাসিনার বিপরীত স্রোতে চলছে। আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ বন্ধে গত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী না হলেও ৫০ বার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দলের নেতারা সে নির্দেশ কি মানছেন? শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া যাবে না। মন্ত্রী-এমপিরাই এ বক্তব্যের পর দ্বিগুণ উৎসাহে বিদ্রোহী প্রার্থী দিচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা। এরা মারামারি করছেন। খুনোখুনি করছেন। আওয়ামী লীগের বাইরের শত্রুর দরকার নেই। আওয়ামী লীগের প্রধান শত্রু এখন আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতি ত্যাগের, ভোগের নয়। তিনি যা বলেন তা করেন। ৪০ বছর দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রায় ১৮ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করছেন। একটি কলঙ্কের দাগ তাঁর গায়ে লাগেনি। তাঁর চরম শত্রুও শেখ হাসিনার সততা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে ওয়ার্ড নেতার বাসায় টাঁকশাল থাকে! গত ১৩ বছরে আওয়ামী লীগে যারা অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তারা কি শেখ হাসিনার অনুসারী? যখনই শেখ হাসিনা দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন, তখন বিএনপি-জামায়াত জুজুর ভয় দেখানো হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বিএনপিকে গালাগালি করেন। বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে বলেও খিস্তি করেন। বিএনপি নামের এক ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ দেখিয়ে নিজেদের অপকর্ম আড়ালের চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের কিছু নেতা। এরাই শেখ হাসিনার প্রতিপক্ষ।
মাঝেমধ্যে ’৭৫-এর আগের দৃশ্যপট চোখের সামনে ভেসে ওঠে। জাসদকে সামনের প্রতিপক্ষ দেখিয়ে খুনি মোশতাকরা দলে এবং সরকারে সিঁধ কাটছিল। কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি, পাটের গুদামে আগুন, সন্ত্রাসী তৎপরতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল। এসব ঘটিয়ে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে জাতির পিতার অসামান্য অবদানকে জনদৃষ্টির আড়াল করা হয়েছিল। শূন্য থেকে বঙ্গবন্ধু কীভাবে দেশকে গড়ে তুলছিলেন সে কথা জনগণকে বুঝতে দেওয়া হয়নি। জাসদকে মাঠে নামানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হিসেবে। বড় করে দেখানো হয়েছিল নানা বিশৃঙ্খলা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতেই ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘটানো হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমদরা ছিটকে পড়েছিলেন ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে। ষড়যন্ত্রকারীরা ঘিরে ফেলেছিল বঙ্গবন্ধুকে। দলে এবং সরকারে। আমরা কি সে রকম একটা পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে? পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মতো বড় পরিসরের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে বাংলাদেশে। এসবের সুফল পাবে এ দেশের জনগণ। বদলে যাবে বাংলাদেশ। তার আগে দেশে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যেখানে পদ্মা সেতুর নির্মাণে মানুষের আবেগকে হত্যা করা হচ্ছে বরং পিঁয়াজের দাম বাড়ায় জনগণ ক্ষুব্ধ। মেট্রোরেলের সুবিধার চেয়ে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ বিরক্ত। প্রধানমন্ত্রীর বন্দনা করতে করতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা অপশক্তি কি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত?
আমার এ উদ্বেগের কারণ একটাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা আর শেখ হাসিনা এখন সমার্থক। শেখ হাসিনা ছাড়া এই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ভরা। তাই শেখ হাসিনার আসল প্রতিপক্ষ কারা, তা এখনই চিহ্নিত করতে হবে। কারণ বাইরের শত্রুর চেয়ে ঘরের শত্রু ভয়ংকর!
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।