ইনসাইড আর্টিকেল

ইতিহাসের পাতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ২৩ জুন, ২০১৮


Thumbnail

বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে, জাগরণের সঙ্গে, উন্নয়নের সঙ্গে যে রাজনৈতিক দলটির নাম জড়িয়ে আছে সেটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পাকিস্তান সৃষ্টির দু বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন টাঙ্গাইলের শামসুল হক। জেলে থাকা অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলটির যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। আজ ২৩ জুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া এই দলটি পালন করতে যাচ্ছে তাদের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এই ৬৯ বছরের যাত্রা ছিল কণ্টকাকীর্ণ। বাংলার জনগণের অধিকার আদায় করতে গিয়ে বারবার নিপীড়ণ-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দলটির কর্মীরা, নানান রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেকবার ভাঙ্গনের মুখেও পৌঁছে গিয়েছিল দলটি। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণের শপথ বুকে নিয়ে, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে দিয়ে এখনো সগৌরবে টিকে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তো আওয়ামী লীগেরই ইতিহাস। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে বঞ্চিত করতে শুরু করে তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে। এছাড়া সাংস্কৃতিক দিক থেকেও পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে ছিল বিশাল পার্থক্য, যে কারণে পাকিস্তান থেকে বাঙালি জনগোষ্ঠীর বেরিয়ে আসাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছিল। আর বাঙালিদের মুক্তি সংগ্রামে একচ্ছত্র ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে একটিই দল – আওয়ামী লীগ।

১৯৫৫ সালের ১৭ জুন ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসন দাবি করেন। সে বছরেই ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’। এখনো আওয়ামী লীগ সেই ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। এর আগে যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয় দলটি যা পূর্ব বঙ্গের জনগণের মধ্যে তাদের বিপুল জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেয়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজেদের জন্মলগ্ন থেকেই দেশের জনগণের অধিকার আদায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় লড়াই করে আসছে। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উভয় সময়েই তাদের ওপর নির্ভর করেছে সাধারণ জনগণ। জনগণের অধিকার আদায়ে লড়তে গিয়ে বারবার কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে নিক্ষিপ্ত হতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের। পাকিস্তান সরকারের ২৩ বছরের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু মোট ৪ হাজার ৬৭৫ দিন অর্থ্যাৎ ১৪ বছর কারাভোগ করেন। ইতিহাসের পাতা ঘাটলে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু প্রথম জেলে যান ১৯৩৮ সালে। এরপর ১৯৪৮ সালে ও ১৯৪৯ সালে ৩ বার তিনি কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পরও বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে যেতে হয়। এরপর ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৪ ও ১৯৬৫ সালেও তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করে পাকিস্তানি অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠী। পূর্ব বাংলার জনগণের আশা-ভরসার প্রতিভূ হওয়ার কারণে পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাঁকে ভয় পেত।

বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ। এর আগে বছরের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয় এবং বঙ্গবন্ধু সভাপতি ও তাজউদ্দিন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি যেখানেই সমাবেশ করতে গেছেন সেখানেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের ধামাধরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে ১ নং আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। সে মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেলেও একই বছরের ১৭ জানুয়ারি তাঁকে সেনাবাহিনী জেলগেট থেকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায় যেখানে সেনা আইনে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে ও তাঁর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ৬ দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবি উত্থাপন করে। তীব্র আন্দোলনের মুখে সরকার ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। এর পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাকসু এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে দেওয়া এক বিশাল সংবর্ধনায় শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভুষিত করে।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে ২৯৮টি আসন লাভ করে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দুরভিসন্ধি ছিল ভিন্ন। সে কারণে ১৯৭১ সালের ১ মার্চ আকস্মিকভাবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। বঙ্গবন্ধু একে শাসকদের নতুন চক্রান্ত উল্লেখ করে ২ ও ৩ মার্চ সারা দেশে হরতাল আহবান করেন। এরপর ৭ মার্চ রাজনীতির কবি বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে এসে উচ্চারণ করেন সেই অপূর্ব কবিতা – ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

এরপর আসে ইতিহাসের ভয়াল সেই রাত্রি। বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ভয়ংকর পরিকল্পনা নিয়ে একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হবার আগে বাংলাদেশের স্বাদীনতার ঘোষণা বার্তা চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরীকে ওয়ারলেস যোগে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লিগ নেতা হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা বাণী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। নয় মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। ১৯৭২ সনের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এর দু দিন পর দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রী পরিষদ গঠন করা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শকুনদের দৌরাত্ন্য তখনো শেষ হয়নি। তারা তক্কে তক্কে ছিল স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের এদেশ থেকে নি:শেষ দিতে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। একই সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। এর মাত্র চার দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী জিয়াউর রহমান অস্ত্রের মুখে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। আবার বাংলার বুকে নেমে আসে এক অন্ধকার কালো অধ্যায়। সে সময় স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগের চলছে চরম দুর্দিন।

১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বহুধা বিভক্ত আওয়ামী লীগকে রক্ষায় হোটেল ইডেনে দলের কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী নির্বাচন করা হয়। তখনও শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আসতে পারেননি। অবশেষে ১৭ মে ১৯৮১ সালে স্বৈরাচারী সরকারের সকল ভ্রুকুটি ও রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন। একই বছরের মে মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হলে নভেম্বরে দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়। সে নির্বাচনে বিএনপির নজিরবিহীন কারচুপি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৩ কোটিরও বেশি ভোট পায়। দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজমান থাকে। এরই মধ্যে ১৯৮২ সালের মার্চে সেনা প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। মুজিব পরিবারের ঐতিহ্য অনুযায়ী স্বৈরাচারের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও পিতার মতো কারাবন্দী হওয়ার ভাগ্যই বরণ করেন। ১৯৮৩ সালে ছাত্রহত্যার প্রতিবাদ করলে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তাঁকে চোখ বেঁধে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তার হন সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরীর মতো নেত্রীরাও। ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে দেশে সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে দিয়ে শেখ হাসিনাকে মহাখালীর নিজ বাসায় অন্তরীন করে রাখা হয়। ১৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা মুক্তি পেলে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলতে থাকে। যা নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ১৯৯০ সালে তীব্র আকার ধারণ করে। এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টাও করা হয়। উত্তাল গণ আন্দোলনের মুখে নব্বইয়ের ৪ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করে।

১৯৯১ এর ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। ১৯৯৪ এ শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি চালিয়ে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে বিএনপির সন্ত্রাসীরা। কিন্তু তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ এবং দীর্ঘ একুশ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় তারা। তবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পথটাও সহজ ছিল না। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে গড়িমসি করলে ১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গড়ে ওঠে জনতার মঞ্চ। এই জনতার মঞ্চই হয়ে ওঠে অবৈধ বিএনপি সরকারের পতনের মূল কেন্দ্র। ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু প্রভৃতির মতো জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কিন্ত ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নজিরবিহীন কারচুপির ফলে নির্বাচনে পরাজিত হতে হয় স্বাধীনতার স্বপক্ষের এই দলকে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সারাদেশে সীমাহীন লুটতরাজ চালায়। সীমা ছাড়িয়ে যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে বিএনপির সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড হামলা চালালে আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২৩ নেতাকর্মী নিহত হন। অল্পের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি বেঁচে যান। এমনই রাজনৈতিক অস্থিরতায় ২০০৭ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমদের সরকার। শেখ হাসিনাকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে এ অবৈধ সরকার তাঁকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেপ্তার করে। কিন্তু তীব্র জনসমর্থনের মুখে এগারো মাস পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। জনগণের তীব্র অসহযোগিতার মুখে ২০০৮ সালে অবৈধ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় যাতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। নির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই দেশের উন্নয়ন আওয়ামী লীগ সরকারের ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।

২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার একুশ শতকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে শিক্ষা ও তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেয়। এসব খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর তা দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার প্রাপ্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরুস্কারের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ২০১০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশু মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার জন্য সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘ পদক, একই বছরের ১১ নভেম্বর নারী ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী গ্ল্যামারের বিচারে বর্ষসেরা নারীর সম্মান, ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, সর্বসাধারনের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিশ্বের দরবারে রোল মডেল হিসেবে উপস্থাপনের জন্য জাতিসংঘের সাউথ ভিশনারি পুরস্কার, নারী শিক্ষায় অবদানের জন্য ইউনেস্কোর কাছ থেকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ স্মারক লাভ করেন। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য ও সাহসী ভূমিকা পালনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার পান গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফোরামের কাছ থেকে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন এবং জাতীয় উন্নয়নে নারীদের মূল ধারায় আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ও তুলে দেওয়া হয়।

কেবলমাত্র বাংলাদেশেই সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ৯১ শতাংশ স্যানিটেশন কভারেজ অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। ২০১২ সালে ৪৮ হাজার দরিদ্র অসহায় মানুষকে আইনি সুবিধার আওতায় এনেছে সরকার। একই বছরে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় ১৬৩টি গুচ্ছগ্রামে ৭ হাজার ১৭২টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন এবং রাজধানী ঢাকার বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের পুনর্বাসনে সরকারি জমিতে ১ হাজার ৬৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারে সামাজিক সুবিচারের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

এ বছরের ১৮ মে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট–১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট মালিক দেশগুলোর এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে। এছাড়া কৃষি খাতে জোড় দিয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ছিটমহল সমস্যা সমাধান ও সমুদ্র সীমা বিজয়ের মতো অর্জনগুলোও আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরেই এসেছে। আর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার সরকারের হাত ধরেই।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাজা কার্যকর এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের মুকুটে দুটি অনন্য পালক। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের ফাঁসি কার্যকর করার মাধ্যমে বাঙালি তার পিতৃহত্যার অপরাধের কলঙ্ক মোচন করে, আর একই বছরের ২৫ মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার মাধ্যমে ৪০ বছরের পুরনো দায় থেকে মুক্তির পথে হাঁটে।

বাস্তবিকই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের একমাত্র দল যারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে কাজ করে চলেছে জন্মলগ্ন থেকেই। বঙ্গবন্ধু পরিবার যে এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নেতৃত্ব দিয়েছে এ কথা বলাই বাহুল্য। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, তা ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হাত ধরেই পুনুরুদ্ধার হয়। আর ইতিহাস সাক্ষী দেয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গৌরব রক্ষায় এ রাজনৈতিক দলটির কোনো বিকল্প নেই।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন