ইনসাইড আর্টিকেল

কর্মযোগী বিজ্ঞানী স্যার পিসি রায়: জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:০৬ পিএম, ৩০ জুলাই, ২০১৮


Thumbnail

২ আগস্ট। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের এদিনে বর্তমান খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় বাড়ুলী গ্রামে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, যিনি স্যার পিসি রায় নামে সমধিক পরিচিত, জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মের প্রায় ০৩ মাস পূর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন (৭মে, ১৮৬১)। বহুভাষাবিদ, সমাজসেবী, সুপন্ডিত ও বিদ্যোৎসাহী হরিশ্চন্দ্র রায় চৌধুরীর তৃতীয় সন্তান প্রফুল্ল চন্দ্র। অত্যন্ত মেধাবী প্রফুল্ল চন্দ্র ৯ বছর পর্যন্ত নিজ গ্রামে তাঁর পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মিডল ইংলিশ স্কুলে পড়াশুনা করেন। পরে অন্য ভাইদের সাথে পড়াশুনার জন্য কলিকাতায় গমন করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ) বি.এ পড়াকালে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি নিয়ে বিলাত গমন এবং এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিএসসি ডিগ্রী অর্জন করে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। প্রায় এক বছর বেকার থাকার পরে তিনি ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে মাসিক ২৫০ টাকা বেতনে প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। রসায়ন শাস্ত্রের এ অধ্যাপক ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে মারকিউরাস নাইট্রাইট নামক যৌগিক পদার্থ আবিস্কার করেন। নাইট্রাইটস এর উপর বহুবিধ গবেষণা ও সাফল্যের জন্য তাকে মাস্টার্স অব নাইট্রাইটস বলা হত। তৎকালীন ভারতবর্ষে রসায়ন শাস্ত্রের এ জনক শুধু রসায়ন শাস্ত্র বা বিজ্ঞান নিয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা নিয়ে জীবন পার করেননি।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা রবির প্রখর আলোকচ্ছটায় যখন ভারতবর্ষ উদ্ভাসিত তখন জোছনার প্রদীপ্ত আলোর ন্যায় স্বীয় প্রতিভা, প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রফুল্ল চন্দ্র করেছেন বিভিন্ন দিককে আলোকিত। তিনি হয়েছেন প্রবাদ প্রতিম রসায়নবিদ, বিজ্ঞানী, উদ্ভাবক, গবেষক, শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী, বিজ্ঞানসেবী, সাহিত্যবোদ্ধা, স্বদেশী আন্দোলনকারী, ধর্ম সংস্কারক, শিল্পদ্যোক্তা, সমবায়ী, ফলিত অর্থনীতিবিদ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মী, আর্তসেবী, মানবদরদী, ইতিহাসবিদ এবং কর্মযোগী। এতবড় একজন বিজ্ঞানী নিজেই বলেছেন ‘I became a chemist by mistake’। প্রথম জীবনে তিনি ইতিহাস পড়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু পড়তে না পারায় সে খেদ মিটিয়ে লিখেছেন আত্মজীবনী Life and Experience of a Bengali Chemistসহ রসায়নের ইতিহাস। তিনি ইতিহাস সম্পর্কিত বই, প্রবন্ধ এবং ইতিহাস লিখনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। অধ্যাপক সতীশ চন্দ্র মিত্রকে উৎসাহ দিয়ে এ অঞ্চলের কালজয়ী ইতিহাস ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’ লিখনে অবদান রেখেছেন এবং নিজ অর্থে তা মুদ্রণ করেছেন।

বাঙালির শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাহস তো দূরের কথা, কল্পনা করাও যখন ছিল কল্পনাতীত। সে সময় নিজ বেতনের সঞ্চিত ৮০০ টাকা নিয়ে বসতগৃহে প্রেসিডেন্সি কলেজে চাকুরী করা অবস্থায় ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্ঠা করেন। এভাবে তিনি দেশীয় ও ভেষজ উৎপাদন দিয়ে কেমিক্যাল ও ঔষধ প্রস্তুত শুরু করেন। শুরুর দিকে এটি ছিল একটি সাহসী যুদ্ধ। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এর প্রতিষ্ঠায়। তাঁর ভাষায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠায় আমি কুলির মত কাজ করেছি’। কেমিক্যাল তৈরির জন্য তাঁর ৯১, আপার সার্কুলার রোডের বাসায় টিনের চালের গরুর হাড়ের স্তুপ রেখেছেন শুকানোর জন্য। শকুন-চিল এর কয়েকখানা নিয়ে যাচ্ছে, ছড়াচ্ছে এ পাড়ায় ও পাড়ায়। আর যায় কোথায়? পাড়াশুদ্ধ লোকজন দ্বারা আচার্যের বাড়ী ঘেরাও। একটাই বক্তব্য- পাড়া ছাড়ো। শেষ পর্যন্ত রফা। দূরে টালিগঞ্জের বাঁশবনে তা নিয়ে সালফিউরিক এসিড দিয়ে পুড়িয়ে তৈরি হলো ফসফেট অব সোডার মন্ড। ঔষধ ও কেমিক্যাল তৈরীর উপকরণ। সাজি মাটি দিয়ে সোডা তৈরি করেছেন। এভাবে সেখানে তৈরি হলো ন্যাপথলিন, ফিনাইল, সোডিয়াম বায়োসালফেট, সালফিউরিক এসিড, ক্যাফিনসহ অনেক কেমিক্যাল। গাছ-গাছড়া দিয়ে তৈরি হতে শুরু করল কালমেঘ, বাসক, জোয়ানের আরক এবং আরও নানা ঔষধ। উৎপাদন খরচ কম বলে দামও কম। সেই ছোট কারখানা থেকে দেশের অন্যতম বৃহৎ কেমিক্যাল ও ঔষধ কারখানা হতে সময় লাগেনি। ১৯০১ সালেই আয় হলো ২৩ হাজার ৩৭১ টাকা। ১৯১৫ সালে সে আয় দাঁড়ায় ৫ লক্ষ টাকায়। তিনি এভাবে ক্যালকাটা পটারী ওয়ার্কস, বেঙ্গল এ্যানামেল ওয়ার্কস লিঃ, বেঙ্গল সল্ট কোম্পানী লিঃ প্রতিষ্ঠা করে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পাশাপাশি অনেক শিল্প স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। এদেশে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্য বেঙ্গল ইনিসিয়েটিভ নামক আলোচনা সভার প্রতিষ্ঠা করেন। সাধারণের সম্পত্তি করার জন্য তিনি বেঙ্গল কেমিক্যালকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র প্রমুখ প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিকের যুগে একজন স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিকের সাহিত্য অঙ্গনে প্রবেশ থাকে না। কিন্তু আচার্য ছিলেন ব্যতিক্রম। সাহিত্য অঙ্গনে বিচরণ করেছেন। শেকসপিয়ারের উপর ধারাবাহিক প্রবন্ধ এবং বই লিখেছেন। একইসঙ্গে সমবায়, কৃষি উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, রসায়ন, ইতিহাস, প্রাণী বিজ্ঞান, সমাজ সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত লেখনী চালিয়েছেন। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে তিনিই এতদাঞ্চলে পথ প্রদর্শক। মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে বাংলায় বই প্রকাশের জন্য ১৮৯০ সালে তিনি নেচার ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে পরপর ৩ বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে পাটনায় প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞান, গবেষণা, শিল্প উদ্যোগ, ব্যবসা, সমাজ সংস্কার, দারিদ্র্য বিমোচনসহ বহু বিষয়ে তিনি প্রবন্ধ রচনা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রসারে ভূমিকা রাখেন। বঙ্গীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রকাশিত সাময়িকী ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় শুরুর থেকে তিন দশকের বেশী সময় নিয়মিত প্রবন্ধ লিখেছেন। এ পত্রিকায় তাঁর শেষ লেখা যখন বের হয়, তখন আচার্যের বয়স ৭৫। অথচ এ বয়সে তাঁর লেখার বিষয় ছিল ‘অন্ন সমস্যা ও গো-পালন’। অর্থাৎ এ বয়সেও কৃষির উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে তিনি অবদান রাখার প্রয়াস পেয়েছেন।

কৃষির উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করেছেন নিরলসভাবে। ফরিদপুর কৃষি ফার্মের মাধ্যমে ফরিদপুর জেলার কৃষকদের নিয়ে সমীক্ষা করেছেন। ফরিদপুরে গো-খাদ্য তথা ঘাসের সমস্যা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন। উন্নততর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষির ফলন বাড়ানোর প্রচেষ্টা নিয়েছেন। এমনকি ঐ সময় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য রাসয়নিক সারের ব্যবহার প্রচলন না থাকা সত্ত্বেও, লাভের কথা চিন্তা না করে তাঁর বেঙ্গল কেমিক্যাল থেকে উর্বীন সার তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে তা সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। কৃষিজাত পণ্য বিপণনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকের উন্নয়ন হবে, একথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। তাই সমবায় আন্দোলনে নিবিড়ভাবে আত্মনিয়োগ করেন। সমবায়ের মাধ্যমে মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলাই ছিল তাঁর ধ্যান। উৎপাদন সমবায় ও শিল্প সমবায় গঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রামে রাড়ুলী কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যাংক ফেব্রুয়ারি, ১৯০৯ মাসে নিবন্ধন লাভ করে। তাঁর একমাস পূর্বে অবিভক্ত বাংলায় মেদিনীপুরে প্রথম সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। বেঙ্গল কেমিক্যাল কর্মচারী সমবায় সমিতি, বঙ্গবাসী সমবায় ক্যান্টিন এন্ড স্টোর্স, বঙ্গীয় সমবায় সংগঠন সমিতি, বাঁধ নির্মাণ সমবায় সমিতি, জলসেচ সমবায় সমিতি, বিপণন সমবায় সমিতি, স্বাস্থ্য সমবায় সমিতি ইত্যাদি উৎপাদন, উপকরণ এবং বিপনন বিষয়ক অনেক সমিতি গঠনে তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেন। সমবায়ের মাধ্যমে হস্ত শিল্প ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে Indian Industrial Commission এর কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। তৎকালীন মরণঘাতী রোগ কালাজ্বর ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল কো-অপারেটিভ এন্টি ম্যালেরিয়াল সোসাইটি গঠন করে তিনি এর পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রয়াত শিক্ষকদের পরিবারকে সাহায্যের জন্য সমবায় মডেলে তিনি ‘টিচার্স বেনেভোলেন্ট ফান্ড’ গঠন করেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বেঙ্গল কো-অপারেটিভ অর্গানাইজেসন সোসাইটির সভাপতির দায়িত্বপালন করেন। সমবায়ের এ শীর্ষ সংগঠন সৃজনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। সমবায়ের প্রসারে তিনি দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত গমনে ক্লান্তিহীন ছিলেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার দূর্গম অঞ্চলে এক সমবায় ব্যাংক উদ্বোধনের জন্য ৭২ বছর বয়সে সারারাত হাতির পিঠে চেপে গমন করেছেন। সমবায় আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক হিসাবে তিনি আজীবন পরিশ্রম করেন।

কৃষি উৎপাদন, কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে সমবায় সৃজন ও সম্প্রসারণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, দূর্ঘটনা ও মৃত্যুর কারণে এসব দুঃস্থ পরিবারকে রক্ষার জন্য ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠা করেন। নাম দেন আর্য বীমা কোম্পানী। ১৯৩৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ভারতীয় বীমা সম্মেলনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দেশীয় বীমা কোম্পানী এবং এর গ্রাহকদের সুরক্ষার জন্য বৃটিশ সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করেছেন। বীমা আইনে এ বিষয়ে ধারা সংযোজনে সুপারিশ করেছেন।

আচার্যের সক্রিয় রাজনীতি করার সময় ও সুযোগ কোনটাই ছিলনা। অথচ ১৮৮৫ সালে বিলেতে থাকা অবস্থায় মাত্র ২৪ বছর বয়সে ‘India before and after Mutiny’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখে বৃটিশ সরকারের সমালোচনা করেন। ইংরেজ গোয়েন্দা পুলিশের খাতায় তাঁর সম্পর্কে রিপোর্ট ছিল ‘Revolutionary in the disguise of Scientist’। চরকায় কাটা ধুতি ও চাদর ব্যবহার করতেন। জেল খেটে বের হওয়া কর্মীর কর্মসংস্থানের জন্য আর্থিক সাহায্য করতেন। স্বদেশী আন্দোলন সমর্থন করেছেন। খাদির প্রসারে সহযোগিতা করেছেন। ফরিদপুরে গান্ধিজীর উপস্থিতিতে কংগ্রেস সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। বৃটিশ রাজের ভারত বিরোধী নীতির সমালোচনা করেন। মঞ্চেষ্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় আচার্য সম্পর্কে লেখা হয় ‘He is one of the bitterest critics of the British Govt’। তাঁর বিখ্যাত উক্তি হচ্ছে ‘Science can afford to wait but Swaraj can not’।

শিক্ষক এবং শিক্ষা সম্প্রসারণে আচার্যের তুলনা তিনি নিজে। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে National Council of Education এর সভাপতি নির্বাচিত হন। প্রেসিডেন্সি কলেজে চাকুরিকালে ‘The Congress of the Universities of the Empire’এ যোগদানের জন্য ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে ইংল্যান্ড গমন করেন এবং বৃটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভারতীয়দের আরও শিক্ষার সুযোগ এবং ভারতে আরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী পেশ করেন। পরবর্তীকালেও এ কংগ্রেসে যোগদান করে ভারতীয়দের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখেন। নিজ গ্রামে ১৯০৩ সালে পিতার নামে উচ্চ ইংরেজী স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি All Bengal Teachers’ Association (ABTA) এর প্রথম সম্মেলনেরও সভাপতি। All India Education Conference আয়োজন করেন। All India College and Universities TeachersÕ Conference এর উদ্যোক্তা ও সভাপতি ছিলেন। নারী শিক্ষা ও ভকেশনাল শিক্ষা সম্প্রসারণে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে তিনি Indian Science New Association গঠন করে এর প্রথম সভাপতি হন। বাগেরহাটে কলেজ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন, যা ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে তার নামে নামকরণ করা হয়। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। কুখ্যাত মাধ্যমিক শিক্ষা বিলের বিরোধিতা করেন। শিক্ষক হিসাবে তাঁর কোনো তুলনা নেই। রসায়ন শাস্ত্রে তাঁর ক্লাসে অন্য কলেজের ছাত্ররাও বক্তৃতা শুনতে আসত। তিনি ছিলেন প্রাঞ্জলভাষী একজন ছাত্রবৎসল শিক্ষক। অকৃতদার আচার্যের কোন সংসার ছিল না। ছাত্ররাই তাঁর সন্তান। বন্যা বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র সর্বাত্মক সহযোগিতার পাশাপাশি নিজে ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নিতেন এবং জনসাধারণকে অর্থ সাহায্য করতে উৎসাহ দিতেন। আর্তত্রাণে তাঁর এরূপ সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে মহাত্মা গান্ধী তাকে Doctor of Food সম্বোধনে অভিহিত করেন। আর্তের সেবা কাজের জন্য ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।

তিনি সমাজের বঞ্চনা ও অস্পৃশ্যতা নিবারণেও নিরলসভাবে কাজ করেন। সমাজ সংস্কারে সমিতি সৃজন করেছেন। প্রকাশ্য জনসভায় মেথরকে জড়িয়ে ধরেছেন। জাতিভেদ, শিশুবিবাহ, পণপ্রথা ইত্যাদি সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে আন্দোলন করেছেন। এজন্য কমিটি করেছেন, প্রবন্ধ লিখেছেন, সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করেছেন, ট্রাস্ট গঠন করেছেন। দিবারাত্র বহুবিধ কাজের সাথে নিরলসভাবে সম্পৃক্ত থেকেও নিরাসক্ত জীবনযাপন করেছেন। তাঁর কোনো ভৃত্য ছিল না। খাবার ছিল অতিসাধারণ। দিনের বেলা ভাত খেতেন না। কারণ দিনে ভাত খেলে ঘুম পাবে এবং কাজের সময় কমে যাবে। নিজের কাজ নিজে করতেন। বেঙ্গল কেমিক্যাল, লেখা বই এর রয়ালটি এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের বেতন সবমিলিয়ে মাসে তার প্রচুর আয় ছিল। কিন্তু ব্যয় ছিল মাসিক ১৬ টাকা তথা দৈনিক আট আনা। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসরের পর স্যার আশুতোষ মুখার্জীর অনুরোধে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এ সময় তিনি বেতন গ্রহণ করেননি। ১৯৩৬ সালে অবসর নেবার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বেতনবাবদ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে সঞ্চিত অর্থ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে দান করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁর এরূপ দানের ঘটনা অনেক। বাগেরহাট পিসি কলেজ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও খাদি সম্প্রসারণ, সমবায় সম্প্রসারণ, বন্যা ত্রাণ, নারী শিক্ষা, সমাজ সংস্কারসহ বহুবিধ উন্নয়নে তাঁর উল্লেখযোগ্য দান আছে। কর্মযোগী জ্ঞানতাপস এ বিজ্ঞানীর ৭০তম জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে। এ আয়োজনের জন্য সংগৃহীত হয় ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু খরচ হয়েছিল মাত্র ১২৭ টাকা। অবশিষ্ট টাকাও দান হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। মানবদরদী এ বিজ্ঞানীর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল তৈরি, হ্যান্ড বিল বা অন্যান্য বিষয়ে অনেক সরবরাহকারী টাকা গ্রহণ করেননি। এটাই তাঁর কাজের স্বীকৃতি। বেতনের টাকা দিয়ে তিনি বিজ্ঞান কলেজের জন্য ০৬টি ঘর তৈরি করেন। শর্ত একটি ঘরে তাকে আজীবন থাকতে দিতে হবে। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নাইট উপাধী অর্জনকারী এ বীর বাঙালী তাঁর সর্বস্ব দান করে ১৯৪৪ খ্রীস্টাব্দের আজকের দিনে পরলোক গমন করেন। তিনি চলে গেছেন, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টা, কাজ ও অর্জন এখন বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে। আসছে ২ আগস্ট বাংলাদেশের এ মহান বিজ্ঞানীর শুভ জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ জানাই।

লেখক: চেয়ারম্যান, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক

বাংলা ইনসাইডার/বিপি/জেডএ 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন