নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ অগাস্ট, ২০১৮
শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।
এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে মাহবুব তালুকদার এর ‘গণভবনে পঁচাত্তরের মধ্য আগস্ট’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।
গণভবনে পচাত্তরের মধ্য আগস্ট
মাহবুব তালুকদার
আমার লেখা ‘বঙ্গভবনে ৭ বছর` বইয়ে উনিশ’ শতকের মধ্য আগস্টের ঘটনায় বর্ণনা দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার অব্যবহিত পূর্বের দিনের ঘটনাবলী তাতে স্থান পেয়েছে। মৃতুর কয়েক ঘণ্টা পূর্বে গণভবনে জাতির জনকের সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাতের মুহূর্তগুলো স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। উল্লিখিত গ্রন্থে আমি যা দেখেছি, তাই লিখেছি। কিন্তু গণভবনকে কেন্দ্র করে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে, যা তখন ডায়রিতে লেখা হয়নি। সেসব অনুল্লিখিত তথ্য ও প্রকাশিত কিছু তথ্যের পুনরাবৃত্তি করে এই রচনা।
উনিশ শ` পঁচাত্তরের পঁচিশে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপদির দায়িত্বভাবে গ্রহণের পর আমি রাষ্ট্রপতির জনসংযোগ অফিসারের পরিবর্তে রাষ্ট্রপতির সহকারী প্রেস-সচিবের পদে নিযুক্ত হই। আমি তৎকালে সরকারের উপসচিব থাকায় পরিবর্তিত পদবিটি উপপ্রেস সচিব না হয়ে সহকারী প্রেস সচিব হওয়ায় প্রথমে কিছুটা ম্রিয়মান ছিলাম। কিন্তু জাতির পিতার সান্নিধ্য লাভের সুযোগ আমার জন্য পরম গৌরবের বিষয় ছিল। ফলে ঐসব নেতিবাচক অনুভূতি মন থেকে উবে গিয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল, আমি দেশের ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছি এবং ইতিহাস রচনার প্রতিটি মুহূর্তকে স্পর্শ করার সুযোগ লাভ করেছি।
পঁচাত্তরের চৌদ্দ আগস্ট দিনটি আরম্ভ হয়েছিল অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই। কিন্তু সন্ধ্যার পরের ঘটনাবলী মেনেই স্বাভাবিক ছিল না। সেদিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু ডেকেছিলেন রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব তোয়াব খান ও আমাকে। পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যে ভাষণ দেবেন তার খসড়া তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি কিঞ্চিত বিস্মিত হয়েছিলাম, তিনি কি তাহলে লিখিত ভাষণ দেবেন? তোয়াব খান কথাটা জিজ্ঞাসা করলেন তাঁকে। তিনি বললেন, ‘লেখা বক্তৃতা পড়ব না, মুখেই বলবো। তবে হাতের কাছে লেখা সমস্ত ডাটা ও ইনফরমেশন থাকতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু গণভবনস্থ কার্যালয় থেকে মাঝে-মাঝে দুপুরে ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বর রোডের বাসায় যেতেন। আবার কখনও গণভবনেই দোতলার একটি কক্ষে বিশ্রাম নিতেন। ১৪ আগস্ট দুপুরে তিনি গণভবনে ছিলেন, না বাসায় গিয়েছিলেন, তা মনে নেই।
বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর প্রথম অনুলেখক ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী ও তোয়াব খান। তারা উভয়ে বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল থেকে উনি শ’ চুয়ান্নর নির্বাচন পর্যপ্ত আত্মজীবনীর ডিকশেন নিয়েছিলেন। এটি টাইপকৃত বাধাই অবস্থায় আমার কাছে হস্তান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর পরবর্তীকালের আত্মজীবনী অনুলিখনের কাজ করছিলাম আমি। এসব কাগজপত্র আমার ব্রিফকেসে থাকত। চৌদ্দই আগস্ট বিফকেস থেকে নামিয়ে আমার অফিসের ড্রয়ারে আমি তা তালাবদ্ধ করে রাখি। ইচ্ছা ছিল, পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের পর গণভবনে ফিরে আমি। আত্মজীবনীর ভাষাগত পরিশুদ্ধির কাজ করব। কিন্তু তার আগেই ইতিহাসের নির্মম ও নৃশং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে গেল । ১৬ আগস্ট নিজের প্রাণবাজি রেখে পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করার জন্য আমি গণভবনে যাই। কিন্তু জনৈক মেজর ও অন্যান্য সামরিক ব্যক্তির ব্যুহ ভেদ করে আত্মজীবনীটি আমার টেবিলের তালাবদ্ধ ড্রয়ার থেকে নিয়ে আসা স্বম্ভব হয়নি। প্রাণের ভয় নয়, আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি বিনষ্ট করার ভয়ে মেজরের সামনে ড্রয়ার খুলতে পারিনি। চিরদিনের মতোই জাতির এই অমূল্য সম্পদ আমি হারিয়ে ফেলি। আজও সেদিনের ব্যর্থতার গ্লানি আমাকে মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করে। আমি জানি, শত মাথা কুটলেও মানুষটিকে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপিটি পাওয়া গেলে আমার শোকের সন্তাপ কিছুটা কমত।
উনিশ শ` পঁচাত্তরের চৌদ্দই আগস্ট দিনটি অন্যান্য দিনের মতো গতানুগতিক হলেও বিকাল থেকে দিনটি ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে। অনেক সময় বিকাল বেলা বঙ্গবন্ধু গণভবনের লেকে মাছগুলোকে আধার খাওয়াতেন। লেকের সিঁড়িতে তার দীর্ঘ দেহের ছায়া পড়লেই মাছের ঝাঁক ছুটে আসত খাবারের জন্য। আমাদের কয়েক জন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও অনেক অভ্যাগত এই দুর্লভ দৃশ্য দেখেছেন। চৌদ্দই আগস্ট বিকালে এহেন দৃশ্য দেখা যায়নি। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসকক্ষে ব্যস্ত ছিলেন। পরের দিন বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য চারটি স্বর্ণপদক প্রবর্তনের কথা ভেবেছিলেন তিনি। কিছু ফেলোশিপ প্রদানের কথাও ভেবেছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী প্রফেসর মোজাফফর আহম চৌধুরী, উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরী, শিক্ষা সচিব এম মোকাম্মেল হকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বিগত কয়েকদিন আলাপ-আলোচনা করেছেন তিনি।
বিকাল বেলা শিক্ষা সচিব আসবেন গণভবনে। তাঁর কাছ থেকে তথ্যাদি নিয়ে বক্তৃতার একটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেস সচিব তোয়াব খান। ন তিনি। কিছু ফেলােশিপ প্রদানের কথাও ভেবেছিলেন। শিক্ষামসী জাফফর আহমদ চৌধুরী, উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মতিন চৌধুরী,
এম. মোকাম্মেল হকের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য মুক দিন আলাপ-আলােচনা করেছেন তিনি। বেলা শিক্ষা সচিব আসবেন গণভবনে। তার কাছ থেকে তথ্যাদি নিয়ে টি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেস সচিব । নির্ধারিত সময়ে শিক্ষা সচিবের জন্য অপেক্ষা করছি। শিক্ষা সচিব যথাসময়ে আসছেন না দেখে আমার উদ্বেগ বাড়ল। আগেভাগে তথ্যাদি না পেলে বক্তৃতার খসড়া তৈরি হবে কী করে? ইতোমধ্যে প্রেস সচিব আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় জড়িয়ে গেলেন। দুঃসংবাদ এল, ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রামগতিতে ক্রাশ করেছে। তাতে কয়েক জন ১৮ সামরিক অফিসার নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে আমাদের কিছুটা মতদ্বৈধতা দেখা দিল। ভারতের রাষ্ট্রদূত সমর সেন তখন দিল্লিতে। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত বললেন, হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া ঠিক হবে না। তোয়াব খান বললেন, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রেসসচিব অত্যন্ত পেরেশানিতে পড়ে গেলেন। বঙ্গবন্ধু তার আগেই গণভবন থেকে বাসায় চলে গেছেন। চৌদ্দই আগস্ট সন্ধ্যার পরে বাসায় রওনা হন।
বঙ্গবন্ধু বাসায় চলে যাওয়ার পর-পর শিক্ষা সচিবের ফোন এল। জানালেন, অসুস্থতার জন্য তিনি গণভবনে আসতে পারছেন না। টেলিফোনে তিনি শিক্ষাখাতের ব্যয় ও উন্নয়ন সংক্রান্ত কতিপয় তথ্য লিখে নিতে বললেন। টেলিফোনে ডিকটেশন নিতে-নিতে আমার উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত হল।
তোয়াব খান রামগতির ঘটনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। পরে তার মনে হল, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে আসা প্রয়োজন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাসায় ফোন করলেন। বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুমি আমার অফিসে গিয়ে রেড টেলিফোনে আমাকে ফোন করো’। প্রেসসচিব বঙ্গবন্ধুর অফিসকক্ষে গিয়ে তাঁর নির্দেশ নিয়ে ফিরে এলেন। তাদের কী কথা হয়েছে আমি জানি না। কিছুক্ষণের মধ্যে ভারতীয় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের ফোন এল। প্রেসসচিব জানালেন দুর্ঘটনার খবরটা প্রচার করা উচিত হবে। নইলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
ভারতীয় কূটনীতিক বললেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে দিল্লীর সঙ্গে কথা বলেছেন।
প্রেসসচিব জানালেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমতাবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’
প্রেসসচিব যখন বঙ্গবন্ধুর কক্ষে কথা বলতে গেছেন, ঠিক তখনই তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর টেলিফোন করলেন। রাত তখন ন`টার কাছাকাছি। টেলিফোন করলে তিনি বললেন, ‘এত রাতে কী করছ ওখানে?’
বললাম, ‘অফিসের কাজ করছি। আগামীকাল বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন। তার বক্তৃতা তৈরি করছি।’
‘তোয়াব সাহেব কোথায়?’
‘তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে গেছেন তার অফিসের ফোনে। আমি কি তাঁকে কোনো মেসেজ দেব?’
‘না, দরকার নেই।’ -- তাহেরউদ্দীন ঠাকুর ফোন ছেড়ে দিলেন।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন মনে করি। চৌদ্দই আগস্টের রাতে গুলশানে আরেকটি নৈশভোজের আয়োজন হয়েছিল । ঐ নৈশভোজে যোগদান করেছিলেন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, রাষ্ট্রপতির সচিব আবদুর রহিম এবং অন্যতম সচিব ডক্টর এম.এ. সাত্তার। উভয় সচিব গণভবনের ডিনারে আমন্ত্রিত হলেও সে রাতে তারা গুলশানে গিয়েছিলেন। প্রেস সচিবকে অবশ্য গুলশানে যেতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আমার ধারণা, তাঁরা সবাই মাহবুব আলম চাষীর গুলশানস্থ বাসভবনে আমন্ত্রণে শামিল ছিলেন। রাষ্ট্রপতির দু`জন ঘনিষ্ঠ সহযোগী তথা সচিবদ্বয়কে তার কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখাই উদ্দেশেই যে ঐ কালো রাতে গুলশানে আরেকটি নৈশভোজের ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রেসসচিব তার অফিস প্রত্যাবর্তনের পর আমি নিজের অফিসকক্ষে এলাম। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের তথ্যগুলো সাজাতে গলদঘর্ম হলাম। ইতোমধ্যে ডিএফআই-এর নবনিযুক্ত চিফ কর্নেল জামিল এলেন আমার কক্ষে। ঈষৎ ভর্ৎসনা করে বললেন, ‘আমরা সবাই ডিনার টেবিলে বসে আছি। আপনার আর তোয়াব সাহেবের অফিসের কাজ শেষ হয় না, ব্যাপারটা কী।’
কর্নেল জামিলের সঙ্গে আমার পরিচয়, আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা নতুন বলা চলে। কিন্তু অল্পসময়ের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠতা নিবিড় হয়ে ওঠে। আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী কর্নেল জামিলের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বও ছিল। তিনি তার সামরিক জীবনের অনেক গল্প করতেন আমার কাছে। আমিও আমার অভিজ্ঞতাপ্রসূত বিভিন্ন ঘটনা শোনাতাম তাকে। তার তাগিদ পেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লাম এবং তোয়াব খানকে সঙ্গে করে ডিনারে যোগ দিতে এলাম। ডিনার টেবিলে আমি ও কর্নেল জামিল পাশাপাশি বসেছিলাম। আবার পুরনো দিনের গল্প জমে উঠেছিল আমাদের মধ্যে। তখন কি জানতাম মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কর্নেল জামিলকে শাহাদাত বরণ করতে হবে? চিরদিনের জন্য আমরা তাকে হারাব! শত্রুকবলিত বঙ্গবন্ধুর প্রাণ রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন কর্নেল জামিল। জাতির পিতার জন্য আত্মাহুতি দিয়ে কর্নেল জামিল শহীদের শিরোপা লাভ করলেন।
চোদ্দই আগস্ট রাত এগারোটার পর আমি কর্মস্থল গণভবন থেকে আমার বঙ্গভবনে রওনা হই। ফার্মগেট পেরিয়ে এয়ারপোর্ট রোড ধরে যেতে গাড়ির সামনে দুটি গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে কয়েক জন বিদেশীকে কন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে যেতে দেখে আমি কিঞ্চিত বিস্মিত হয়েছিলাম। তে তারা কোনোরকম সঙ্কেত পেয়ে আশ্রয় লাভের জন্য অত রাতে হোটেলে গিয়েছিলেন।
মধ্যরাতে বাসায় ফিরেও আমার অনেক কাজ করার বাকি ছিল। বঙ্গবন্ধুর একটি নিজস্ব টেপ রেকর্ডার আছে। সেটি আমার কাছে থাকে। তিনি কোথাও বক্তৃতা দিলে সভা থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে তাকে টেপ বাজিয়ে শোনাই। কোনো জায়গার কোনো অংশ বাদ দিতে হলে তিনি বলে দেন। আমরা সম্পাদিত অংশটুকু প্রস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে জানিয়ে দিই। প্রতিবারের মতো সে রাতেও টেপ রেকর্ডারটি চেক করলাম, দুপুরে কেনা নতুন ব্যাটারিগুলো ভরে টেপ রেকর্ডার চালিয়ে দেখলাম, সব ঠিক আছে।
রাতে আবার বসলাম বক্তৃতার খসড়া নিয়ে। কয়েকটা পাতা কাটাকাটি হয়েছিল। ঐ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকে দেয়া যায় না। ওগুলো ভাল করে আবার কপি করলাম। রাত প্রায় দেড়টায় আমার কাজ শেষ হল। পরদিন ভোরে ওঠার তাড়া আছে। সকাল বেলাই বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে আমাকে যেতে হবে।
পনেরোই আগস্ট প্রত্যুষে ঘুম ভাঙল এক দুঃস্বপ্ন চোখে নিয়ে। দূরে গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। কী ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারলাম না। এর মধ্যে টেলিফোন বেজে উঠল। আমার এক আত্মীয় ফোনে জানালেন, কারা যেন বলছে শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। নিতান্ত অবিশ্বাস্য মনে হল তার কথা। রেডিও অন করে নিজের কানে সেই ভয়াবহ কথাগুলো শুনেও বিশ্বাস করতে পারলাম না। প্রথমে মনে হল, কেউ ঠাট্টা করছে। কিন্তু রেডিওতে কে ঠাট্টা করবে? কেন করবে? তা হলে যা বলা হচ্ছে তাই কি সত্যি?
আমি বঙ্গবন্ধুর টেপ রেকর্ডারটা হাতে তুলে নিলাম। ওটা বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাভেজা কন্ঠে বললাম, ‘এ হতে পারে না। হতে পারে না।’
আজ এতদিন পরে শোকাচ্ছন্ন মনে তাকিয়ে আছি তাঁর একটি ছবির দিকে। মৃত্যুর পঁচিশ ঘণ্টা পূর্বে বঙ্গবন্ধু আমাকে তাঁর ফটোগ্রাফে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন। লিখেছিলেন, ‘শেখ মুজিব, ১১/৮/৭৫’ সম্ভবত এটিই তাঁর অটোগ্রাফকৃত শেষ ছবি।
আর একটি কথা। বঙ্গবন্ধুর সেই ব্যক্তিগত টেপ রেকর্ডারটি আমি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হওয়ার পর আমাকে ফেরত দিতে হয়েছিল । কিন্তু পুরনো ক্যাসেট ফেরত না দিয়ে নতুন ক্যাসেট কিনে সরকারিভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। পুরনো ক্যাসেটগুলোতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ তিনটি বক্তৃতা রেকর্ড করা আছে। তাঁর বজ্রকণ্ঠ উদাত্ত কণ্ঠস্বর আগের মতোই বাজে।
[রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ৭৯ থেকে ৮৩)]
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।