নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ১১ অগাস্ট, ২০১৮
শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।
এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে এম আর আখতার মুকুল এর ‘লন্ডনে মুজিব হত্যার সংবাদ কীভাবে পৌঁছাল’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।
লন্ডনে মুজিব হত্যার সংবাদ কীভাবে পৌঁছাল
এম আর আখতার মুকুল
সিংহ রাশিতে জন্ম আমার। তাই সমগ্র জীবনটাই হোচ্ছে শুধু উত্থান-পতন। কখনই এক নাগাড়ে বেশিদিন সুখ আমার সহ্য হয় না। এই লন্ডন মহানগরীতে এর ব্যতিক্রম হলো না। মাত্র বছর খানেক আগেও আমি ছিলাম বাংলাদেশ হাই কমিশনের একজন কূটনীতিবিদ। তখন আমার বাসা ছিল লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা `হ্যামস্টেড`-এ। কার্যোপলক্ষ্যে প্রতিনিয়তই আমার যাতায়াত ছিল ব্রিটিশ ফরেন অফিস, কমনওয়েলথ সচিবালয়, বুশ হাউস-এর বি বি সি, আর ফ্রিট স্ট্রিট-এর সংবাদপত্র অফিসগুলোতে। সন্ধ্যার পর পার্টি ও নৈশভোজের আমন্ত্রণ না থাকালে প্লে-বয় কিংবা ভিক্টোরিয়া ক্লাবে আমার যাতায়াত ছিল নিয়মিত। মাঝে-মধ্যে নাটক দেখার বাতিক ছিল। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ‘উইক-এন্ড’ কাটাবার জন্য সপরিবারে গাড়িতে চলে যেতাম লন্ডনের বাইরে।
হঠাৎ করেই আমার জীবনের ছন্দ পতন হল। স্বল্পকালের ব্যবধানে এখন আমি পূর্ব লন্ডনের সর্ড-উইচ হাই স্ট্রিট-এর এক বিরাট চামড়ার কারখানার একজন সাধারণ শ্রমিক। ফ্যাক্টরির নাম একজি ফ্যাশানস। মালিক হচ্ছেন সিলেটের জনৈক বঙ্গ সন্তান। এখানে আমার কাজ প্রতিদিন সকালে পাঁচ তলা থেকে কাঁধে করে। চামড়ার গাড়ি চার তলায় নামিয়ে সেগুলোকে অর্ডার মোতাবেক কাটিং করা । কখনও ‘বোমা জ্যাকেট` কখনও বা মেয়েদের ওভারকোট। কাজে কোনো ফাঁকি দিলে নিজেরই আর্থিক ক্ষতি। কারণ এখানে কাজ হচ্ছে পিস ওয়ার্ক পদ্ধতিতে । অর্থাৎ যে শ্রমিক যত বেশি কাজ করবে, তার তত বেশি কামাই হবে। এক কথায় বলতে গেলে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ । তাহলে তো গোড়া থেকেই কথাগুলো গুছিয়ে বলতে হয়।
সেদিনের তারিখটা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। আমি তখন লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রেস কাউন্সিলারের দায়িত্বে। সকালে গার্ডিয়ান কাগজে একটি ডবল কলাম বিজ্ঞাপন দেখে চমকে উঠলাম। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ‘বাংলাদেশের ডিকটেটরকে সরিয়ে (‘রিমুভ`) ফেলতে সাহায্য করুন। বিজ্ঞাপনদাতা হিসাবে যে সংস্থায় নাম ছাপা হয়েছে, সেই নামের কোনো সংস্থ অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। সকাল থেকেই মনটা খুব অস্থির হয়ে রইল।
কিন্তু হাই কমিশনে কারো সঙ্গে আলাপ পর্যন্ত করতে সাহস হলো না। প্রথমেই হাই কমিশনার শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আবদুস সুলতানের কথা। এ সময় স্থানীয় বিখ্যাত ‘রিজেন্ট পার্কে মূলত সৌদি সরকারের টাকায় একটি মসজিদ তৈরি হচ্ছিল। লন্ডনে মুসলিম দেশগুলোর সমস্ত রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনাররা এই মসজিদ কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই সুবাদে আমাদের হাই কমিশনারও এই কমিটিতে ছিলেন একজন সিনিয়র মেম্বার। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্যদের মতো তারও উৎসাহের ভাটা পড়ল। ফলে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে আমাকেই মসজিদ কমিটির পরবর্তী বৈঠকগুলোতে যোগ দিতে হল। কিন্তু প্রথম দিনের বৈঠকে যাওয়ার আগে মাননীয় হাই কমিশনার আমাকে এ মর্মে ব্রিফিং দিলেন যে, ‘বেশি কিছু মাতবেন না। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মিয়া মমতাজ দৌলতানা যে লাইনে কথা বলবেন, আপনিও সেই মোতাবেক কথা বলবেন এবং ভোট দিবেন।’
আমি কিন্তু এ ধরনের ব্রিফিং-এ হতবাক হয়নি। মুহূর্তে আমার মনে পড়ল অখণ্ড পাকিস্তানি জামানার কথা। দুর্দান্ত প্রতাপশালী স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল (অব)। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় মরহুম আবুল হাশিমের পরামর্শে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ধকল এড়িয়ে পুরনো মুসলিম লীগ দলটাকেই দখল করে বসেন। পদ্ধতিটা ছিল খুবই অভিনব। পশ্চিম পাকিস্তানের হোমড়া-চোমড়া মুসলিম লীগাররা ছাড়াও চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী, ময়মনসিংহের মোনেম খা, রংপুরের আবুল কাশেম, খুলনার খান এ. সবুর প্রমুখের মতো পাকিস্তানের যেসব মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ সামরিক জান্তাকে সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারণ করেছিল, আইয়ুব খান তাদের দিয়ে করাচির ক্লিফটন বিচ-এ মুসলিম লীগের এক বিরাট কনভেনশন আহবান করিয়ে নিজেই পার্টি দখল করে বসলেন। এ থেকেই আইয়ুব খানের মুসলিম লীগের নামকরণ হল ‘কনভেনশন মুসলিম লীগ’।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে পার্টির কাউন্সিল অধিবেশন আহবান করে দলকে পুনর্গঠিত করলেন। সংবাদপত্রের ভাষায় এই পুর্নগঠিত উপ-দলের নামকরণ হল ‘কাউন্সিল মুসলিম লীগ`। এই কাউন্সিল লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল পাঞ্জাবি নেতা মিয়া মমতাজ। দৌলতানা আর অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ময়মনসিংহের সৈয়দ আবদুস সুলতান। সৈয়দ সাহেব আইয়ুব-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সময় মুসলিম লীগ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিলেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ টিকিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রস্তাবিত গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সীমান্ত অতিক্রম করলেন।
কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ভদ্রলোক আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না । ময়মনসিংহ জেলার আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে সৈয়দ সাহেবের স্থান হল না। সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনোরঞ্জন ধর, জিল্লুর রহমান, রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া, ডা. আজিজুর রহমান মল্লিক এবং আবদুল মোমেন প্রমুখের পর `নব্য আওয়ামী লীগের’ সৈয়দ আবদুস সুলতানকে ময়মনসিংহ জেলার (সদর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ) কোটায় মন্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করার প্রশ্নই উঠল না।
নিয়তির পরিহাসই বলতে হয়। আলোচ্য ঘটনা প্রবাহের জের হিসাবে লন্ডনে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার হলেন সৈয়দ আবদুস সুলতান। আবার কিছুদিনের ব্যবধানে খণ্ডিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হলেন সেই-ই মিয়া মমতাজ দৌলতানা। এখন দু’জন হচ্ছেন দুই দেশের নাগরিক। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক?
তাই গার্ডিয়ান` পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে মাননীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে কোনো আলাপই করলাম না। এরপর ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব ফারুক চৌধুরীর কথা। সিলেটের এক খান্দানি বংশের সন্তান ফারুক সাহেব উচ্চ শিক্ষিত ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। যদিও ১৯৭২ সালে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেটে অপারেশনের সময় এই চৌধুরী সাহেব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কষ্টের কথা চিন্তা করে হাসপাতালের করিডোরে নিজেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।` তবুও একথা উল্লেখ করতে হয় যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভদ্রলোক ঢাকায় পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বহাল তবিয়তেই কাজ করে গেছেন। তাই বলতে বাধা নেই যে, আমি জনাব ফারুক চৌধুরীকে একজন সহকর্মীরূপে পছন্দ করলেও কোনো সময় একান্ত আপনজন হিসাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
সবশেষে হাই কমিশনের গোয়েন্দা প্রধান জনাব নূরুল মোমেন খান মিহির । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি যখন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, তখন জনাব খান জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার । (এন এস আই) প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নেতৃবন্দের আস্থাভাজন হয়েছিলেন। আবার দুজনে একই সঙ্গে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকশিনে। তখন আমাদের মধ্যে চমৎকার সমঝোতা। সপ্তাহের প্রতি সন্ধ্যায় অবসর মুহূর্তে আমরা দুজন একই সঙ্গে। একেবারে মানিকজোড়। সমস্ত রাত্রির প্রাইভেট পার্টি থেকে শুরু করে ম্যাকলিয়ড রোডের ভিক্টোরিয়া ক্লাব পর্যন্ত দুজনার একই সঙ্গে যাতায়াত। খান সাহেবের নতুন গাড়ি ‘অডি-৮০’ আর আমার নতুন জাপানি ‘ডাটসন-১৬০০` নিয়ে আম সমস্ত লন্ডন একেবারে চষে ফেললাম। কখনো উত্তর লন্ডনে শেফিক তালেয়ার বাসায় আডডায়। কখনো কর্পোরেশনের সীমানা ছাড়িয়ে মেথুয়েন রোডে গাফফার চৌধুরীর বাড়িতে, আবার কখনো বা পশ্চিম লন্ডনের শেফার্ড বুশ-এ গাউস ‘এলাহাবাদ রেস্টুরেন্টে’।
এসবের পরেও একটি `কিন্তু` থেকে গেল। ১৯৭৫ সালের মাঝামারি, বাংলাদেশে `বাকশাল` গঠনের প্রাক্কালে দুজনের চিন্তারাজ্যে বেশ কিছুটা ফারাক হয়ে গেল। ‘বাকশাল` গঠনের ব্যাপারে আমার মনে তখনো নানা প্রশ্ন। মানসিক দ্বন্দ্বে আমি জর্জরিত। বাকশালের বিপক্ষে কিছু না বললেও, প্রকাশ্যে বাকশাল কে সমর্থনের জন্য সেচ্ছায় এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হলাম । তাই, সত্যি কথা বলতে হলে, ১৪ আগস্ট সকালে অফিসে যেয়েও ‘গার্ডিয়ান` পত্রিকায় এই বিশেষ বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে নুরুল মোমেন খান-এর সঙ্গে কোনো আলাপই করলাম না।
একমাত্র হাই কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের প্রধান এবং আমার একান্ত সুহৃদ লুৎফুল মতিন-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় আগ্রহী হলাম। ভদ্রলোক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি মিশন থেকে ডিফেক্ট করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন। এ সময় তাঁর সহকর্মী ছিলেন পি আই এ-র ইস্তাম্বুল অফিস থেকে ‘ডিফেক্ট` করা। জনসংযোগ অফিসার মহিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী।
সে যাই হোক। আলোচ্য দিন সকালে লুৎফুল মতিনকে তার অফিসে পেলাম। । কার্যোপলক্ষ্যে তিনি জেনেভার বাইরে গিয়েছিলেন। তাই আর আলাপ আলোচনা হল না।
দুপুরে আমরা হাইকমিশন থেকে দল বেঁধে কাছেই লাঞ্চ করতে গেলাম। দলের সদস্যরা হচ্ছেন ডেপুটি হাই কমিশনার ফারুক চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, জুলফিকার আলী ভুট্টোর এককালীন প্রাইভেট সেক্রেটারি ও প্রাক্তন কুটনীতিবিদ কায়সার রশীদ চৌধুরী, কায়সার-তনয়া জিনাত, নুরুল মোমেন খান এবং আমি।
খেতে বসে অনেক আলাপ হল। কিন্তু আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কথায় কথায় একজন সরাসরি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘আচ্ছা, আপনারা কেউ বলতে পারেন বঙ্গবন্ধু আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন?’
হঠাৎ করে জবাবটা দিলেন জিয়াউল হক টুলু।
‘বঙ্গবন্ধুর নীতির জন্য আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মোটামুটি সন্তুষ্ট। আমার তো মনে হয় বঙ্গবন্ধু সরকার আরও বছর দশের জন্য ক্ষমতায় থাকবে।’
এবার গাফফার চৌধুরী ঠোঁট-কাটা কথা বললেন, ‘এভাবে বাংলাদেশ চলতে পারে না। শেখ মনি আরও শক্তিশালী হলে আগামি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বছর সরকার টিকতে পারে কিনা সন্দেহ।’
গাফফারের এ ধরনের জবাবে বুকটা আমার ধক করে উঠল। তা`হলে কি সাম থিং রং সাম হোয়ের? এবার সবাই আমাকে ধরে বসল। আমার মুখ থেকে সেচ একটা জবাব বের করবেই।` এরকম এক সমাবেশে কোনো কথা না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এদের চাপাচাপিতে আকস্মিকভাবে একটা হেঁয়ালি ধরনের জবাব দিলাম।
‘তা`হলে শোনেন। প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে বসে আমার জবাব সঠিক হবে কিনা জানি না। সঠিক না হলেই খুশি হব। আমার তো মনে হয়, ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’
প্রাসঙ্গিক বিধায় এখানে গাফফার সম্পর্কিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হচ্ছে। লন্ডনে পরিচিত মহলে তখন একথা প্রায় সবারই জানা ছিল যে, বেকার অবস্থায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে চৌধুরী সাহেবের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই ঢাকার সরকারি মালিকানাধীন পত্রিকাগুলোর লন্ডনস্থ সংবাদদাতার চাকুরির জন্য গফফার চৌধুরী প্রার্থী হলেন। এ ব্যাপারে সুরাহার লক্ষ্যে হপ্তা কয়েক আগে বাংলাদেশ বিমানে একটা ফ্রি রিটার্ন টিকিটের ব্যবস্থা করে আমিই চৌধুরী সাহেবকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু এ প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু হিসাবে একটু ভুল ছিল। গাফফার চৌধুরীর মতে শেখ মনির মাধ্যমে চাকুরির সুপারিশ না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিপত্তির সৃষ্টি হল। চাকুরিটা হয়েও হল না।
গাফফার চৌধুরীও তাঁর বরিশাইল্যা জেদ’ ছাড়লেন না। ঢাকায় স্বল্পকালীন অবস্থানকালে একটা চাকুরির জন্য শেখ মনির সঙ্গে দেখা তো দূরের কথা, যোগাযোগ পর্যন্ত করলেন না। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবার তিনি লন্ডনের পথে রওয়ানা হলেন। আসার দিনে আওয়ামী লীগের মুখপত্র দৈনিক জনপদ-এর প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে বাকশাল`-কে নিয়ে লেখা গাফফার চৌধুরীর সেই বিখ্যাত সম্পাদকীয় প্রকাশিত হল- ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু’।
লন্ডনে ফিরে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনায় নতুন বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশে এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও বুরোক্রেটদের কারসাজিতে গোপনে আরও একটা ‘বিপ্লব` হয়ে গেছে। এজন্যই ‘কোলাবরেটার’ আর রাজাকাররা এখন শুধু ক্ষমা প্রাপ্তই নয়, সমাজজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। অবশ্য গাফফারবিরোধিতা ছাড়াও আফসোস-এর সুর দারুণভাবে বিদ্যমান।
লন্ডনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টা। নীরব-নিঝুম। বাংলাদেশের ঘড়িতে এখন সকাল সাড়ে ৯টা। লন্ডনে এর শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। টয়লেট থেকে বেরিয়ে আবার বিছানায় সুযোগ পেলাম না। বিশ্রী শব্দ করে টেলিফোনটা বেজে উঠল। ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, ‘হ্যালো, হ্যালো। কে? মুকুল সাহেব? আমি কায়সার বলছি। কায়সার রশিদ চৌধুরী।’
‘তা` কায়সার ভাই এত রাতে? সকালে ফোন করলেও তো` পারতেন, কোনো জরুরি খবর আছে নাকি?’
‘হ্যা খুবই জরুরি কথা। আর ঘুমাতে যাবেন না। আমি এক্ষুণি আসছি।’
‘হ্যালো, হ্যালো-----’
ফোনের লাইনটা খুট করে কেটে গেল। আমি একাকী বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলাম।
মিনিট দশেক পরেই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই কায়সার ভাই হুড়মুড় ঘরে ঢুকলেন।
‘মুকুল সাহেব, এখন মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ করার সময়। ঢাকার খবর ভালো না।
‘কায়সার ভাই, যা জানেন সবকিছু খুলেই বলুন। কসম খোদার বলছি, আমি খুব একটা উত্তেজিত হব না। বাংলাদেশে কি মিলিটারি ক্যু হয়েছে? বন্ধবন্ধু বেঁচে আছেন তো?’
‘মুকুল সাহেব, গতকাল দুপুরে ‘পাব’-এ লাঞ্চ খাওয়ার সময় আপনি আর গাফফার যা ভবিষ্যৎ বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, সেটাই হয়েছে। ব্রিটিশ ফরেন অফিসের খবর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে ‘ওরা’ হত্যা করেছে। তবে মিলিটারি ক্যু হয়েছে কিনা জানি না।’
আমি পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। শুধু চোখের সামনে বারবার করে ভেসে উঠল ধবধবে পাঞ্জাবি পরিহিত সৌম্য চেহারার মুজিব ভাই-এর। অমায়িক হাসিমাখা মুখখানা। মনে পড়ল লন্ডনে পোস্টিং হওয়ার পর ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডিতে বত্রিশ নম্বরের দোতলায় বঙ্গবন্ধু সঙ্গে আমার একান্তে শেষ সাক্ষাৎকারের কথা। সেদিন দরজা বন্ধ করে শেখ হাসিনার ঘরে দু’জনের মাঝে অনেক কথা হল। ‘তাহলে শেষ পর্যন্ত তুইও আমারে ছাইড়া ছইল্যা যাইতাছস?’
‘মুজিব ভাই, আমি দেশে থাকতে পারলাম না বইল্যা মাফ কইরা দিয়েন। বেয়াদবি নিবেন না। আসলে আপনি কিন্তু আবার `বাস মিস’ করছেন। আমার তো আর ধানমণ্ডি গুলশানে বাড়ি নাই। ব্যাংক ব্যালেন্সও নাই। আমি হইতাছি ছা-পোষা মানুষ। আমি বাঁচতে চাই।’
একটা পশমি আলোয়ান গায়ে বঙ্গবন্ধু বিছানায় কাত হয়ে শুয়েছিলেন। আমাকে ডেকে মাথার কাছে বসালেন। এরপর তার হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে দিতে বললেন। সবে মাত্র গোটা দুয়েক আল ফুটিয়েছি, এমন সময় বলে উঠলেন `আমার হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা, কর্মী আর অফিসারদের মধ্যে একমাত্র তুই-ই এধরনের কথাবার্তা সাহস কইর্যা বলছস। আমি কিন্তু সবকিছুই আন্দাজ করতে পারি। শুধু মুখ ফুইট্যা বলি না।’
মিনিট খানিক দু`জনেই চুপচাপ। এর পরে বঙ্গবন্ধু হঠাৎ করে আমার হাতটা টেনে গেঞ্জির নিচে তার বুকের উপর নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘বলতে পারস কয়টা গুলি আমার এই বুকটা ছেদা কইর্যা ফেলাইব? ভালো কইর্যা বুকটা একটু হাতাইয়্যা দে।
এরপর দুজনেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আবার ঘরে কবরের নিস্তব্ধতা।
একটু পরেই মুজিব ভাই উঠে নিজেকে সামলে নিলেন। বললেন, বউ পোলাপান সব সঙ্গে লইয়া লন্ডন যাইবি। তোর পরিবারের কেউ যেন বাংলাদেশে না থাকে বুঝছো। ফরেন অফিসেও তোর শত্রু রইছে।’
বিদায়ের সময় মুজিব ভাইকে কদমবুচি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বললেন, ‘বাংলাদেশে যখন ফেরত আইবি, তখন আমারে আর পাইবি না। আমার কবর যেখানেই থাকক জিয়ারত কইরা একটা সাদা ফুল দিয়া আসিস।
‘তবে তোরে আইজ আরও একটা কথা কইয়া দেই। তুই তো` ১৯৪৬ সাল থাইক্যা আমারে দেখতাছোস। সে-ই ক্যালকাটা পলিটিকস। আমি আছিলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য। ছাত্র রাজনীতিতে দিনাজপুর জেলা থাইক্যা দবিরুল ইসলাম আর তুই ছিলি আমাগো অন্ধ সাপোর্টার। হেই জন্য নুরুল আমিনের টাইম-এ দিনাজপুরে জেলও খাটোস এক বছর। পঞ্চাশ সালের রায়ট-এর বচ্ছর ঢাকায় আইলি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য। তারপর মানিক ভাই-এর ইত্তেফাকের জনের টাইম থাইক্যা তুই হইলি ফুল টাইম সাংবাদিক। পাকিস্তানের চব্বিশটা বছরই তুই আমার রাজনীতির সব কিছুই দেখছো। এরপর একাত্তর থাইক্যা তুই হইলি আমার বাংলাদেশ সরকারের অফিসার । যা আইজ তোরে একটা ভবিষ্যত বাণী কইয়া দিলাম। আমি যখন এই দুনিয়ায় থাকুম না, তুই তখন আমার সম্বন্ধে বই লিখবি। বুঝছোস, এইসব বই বেইচ্যা তোর হইবো রুজি-রোজগার। পোলাপান খাওয়াইতে পারবি।’
দরজার ছিটকানি খুলে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে আবার পিছনে ডাক এলো। তাঁর স্নেহমাখা হাসি। বললেন, ‘আমার মুকুল, তুই আর ফুটলি না। আর কথা শুইন্যা রাখ। আমার ফ্যামেলির সঙ্গে তাঁর স্পেশাল সম্পর্কের কথা, ভুলিস না। এই বাড়ির তিন-তিনটা `জেনারেশনের লগে তোর হইতাছে ভাই এর সম্পর্ক। ১৯৪৬ সাল থাইক্যা তুই আমারে চিনি। আমি তোর মুজিব ভাই আর রেণু তোর ভাবী। আবার কামাল-জামাল-রাসেল আর হাসিনা-রেহানা তোরে ‘মুকুল ভাই’ কইয়া ডাকে।
‘সব চাইতে বড় ডাকটা তুই শোনছোস? আমার নাতি মানে হাসিনার পোলা ‘জয়`ও কিন্তু তোরে ‘মগল ভাই’ কইয়া ডাকে। এই জন্যই তুই হইতাছোস এই বাড়ির হগলের ভাই’।
কথা ক`টা বলেই মুজিব ভাই তার স্বভাবসুলভ শিশুর মতো সরল হট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন। আমি তখন দরজার কাছে থকে দাঁড়ানো। তিনি এবার নিভে যাওয়া পাইপটা আবার ধরিয়ে এক গাদা ধূয়া ছেড়ে হঠাৎ গুরু গম্ভীর গলায় বললেন, ‘করি কি? মনে হইতাছে, মস্কো আমারে এখনও ঠিক মতো বিশ্বাস করে। আবার লাহোরের ইসলামি সম্মেলনে গেছিলাম বইল্যা দিল্লির `সাউথ ব্লক’ গোস্বা। আর নিক্সন-কিসিঞ্জারের আমলে ওয়াশিংটনের পলিসি তো বুঝতেই পারতাছোস। একেবারে এক ঠ্যাং-এ খাড়া। আমাগো মতো `ন্যাশনালিস্ট’গো বিপদ তো এইখানেই। আমি ঠিকই বুঝতে পারতাছি। চিলির পর বাংলাদেশ। আলেন্দের পর এবার আমার পালা। আমিও শ্যাষ দেইখ্যা ছাড়ুম। পারুম কিনা জানি না।’
‘আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। মনটা আমার কোন সে সুদূরে চলে গেল। হঠাৎ নেতার কথায় সম্বিৎ ফিরে এল। তিনি ধরা গলায় বললেন, ‘আমি যখন থাকুম না, যদি সম্ভব হয় ভাই হিসাবে এগো একটি খোঁজ-খবর নিস।’ সপরিবারে প্রেসিডেন্ট মুজিবকে হত্যার স্বল্প দিনের ব্যবধানে ঢাকা থেকে আমার জনৈক সাংবাদিক বন্ধু কার্যোপলক্ষে লন্ডনে এসে হাজির হলেন। বিবিসি এক্সটানাল সার্ভিসেস-এর বাংলা বিভাগে দেখা। খন্দকার মোশতাক তখন ক্ষমতায় টলটলায়মান। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানার জন্য। অস্থির হয়ে উঠলাম। বিবিসি`র নুরুল ইসলাম-এর সঙ্গে আমরাও বিকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য বেসমেন্ট-এর রেস্টুরেন্টে গেলাম। তিনজনে অনেক আলাপ হল। একটু পরে রেকর্ডিং-এর জন্য নূরুল ইসলাম উঠে গেলেও আমাদের কথাবার্তা অব্যাহত রইল। কথায় কথায় নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাংবাদিক বন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গোরস্থানে বঙ্গবন্ধুর লাশ দাফনের সংগৃহীত কাহিনী বললেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল থেকেই কারফিউ। বিকাল নাগাদ টুঙ্গিপাড়ার আকাশে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার এল। এর আগেও অনেকবার টুঙ্গিপাড়ার লোকজন হেলিকপ্টার নামতে দেখেছে। প্রতিবারই হাজার হাজার লোক টুঙ্গিপাড়ার কৃতী সন্তান শেখ মুজিবকে একনজর দেখার জন্য দৌড়ে গেছে।
কিন্তু এবার? কারফিউ-এর ভয়ে কেউই আর ঘর থেকে বেরুতে সাহসী হল না। বাংলাদেশ বেতারে তখন পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার গান আর মাঝে মাঝে সরকারি নির্দেশ ঘোষণা হচ্ছে।
হেলিকপ্টার থেকে ধীরে ধীরে বাংলার অগ্নিপুরুষ ও বর্তমান বিশ্বের। অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকে তার জন্মভূমিতে নামানো হলো। কিন্তু তিনি আর জীবিত নেই। এবার টুঙ্গিপাড়ায় নামল একটা বস্তাবন্দি লাশ।
[রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ৯৩ থেকে ১০১)]
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
৮
মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী
দিবস উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার
আদায়ের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য নারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও সংহতি জ্ঞাপন,
নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদমন
প্রতিহত করা এবং নারীর
বিরুদ্ধে নানামুখী আক্রমণ, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের অবসান
ঘটিয়ে নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
১৮৫৭
সালে সুতা কারখানার নারী
শ্রমিকেরা মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক
পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন। সেই মিছিলে চলে
সরকারি দমন-পীড়ন। প্রতিবাদে
নারীরা ক্রমেই সংগঠিত হতে থাকেন।
সর্বপ্রথম
১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক
নারী সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে
নেতৃত্বে দেন নিউইয়র্কের সোশ্যাল
ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ
থেকে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ক্লারা ছিলেন জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।
এরপর
১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে
অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক
না0রী সম্মেলন। ১৭টি
দেশ থেকে ১০০ জন
নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন।
এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বছরের ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালন
করার প্রস্তাব দেন।
এই
সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, পরের
বছর, অর্থাৎ ১৯১১ সাল থেকে
নারীদের সম-অধিকার দিবস
হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে
অংশ নেয় দেশের গণতান্ত্রিক
ও সমাজতন্ত্রীরা। এরপর ১৯১৪ সাল
বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ
পালিত হয় আন্তর্জাতিক নারী
দিবস।
১৯৭৫
সালে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং
দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে
আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা
পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে।
তবে,
শতবছরেরও পুরনো নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার
লড়াই অনেক সাফল্য অর্জন
করলেও নারী-পুরুষের সমতা
সুনিশ্চিত হয়নি। সমাজে এখনও নারীরা পশ্চাৎপদ
ও অবহেলিত। এই অবদমন আর্থিক
ক্ষেত্রে যেমন প্রকট, তেমনি
রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট। নারী বিষয়ক তথ্য-পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে এ
সত্য প্রতিভাত হয় যে, নারীরা
ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণের দিক
থেকে অনেক পিছিয়ে।
পশ্চিমা
কিছু কিছু দেশে সম্পদ,
অধিকার, ক্ষমতা ও অংশগ্রহণে নারী
ও পুরুষের সমতার বিষয়টি কিছুটা অগ্রসর হলেও উন্নয়নকামী দেশে
অসাম্য ভয়াবহ। অনেক দেশেই নারীরা
মানবিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ও
মানবিক অধিকার বঞ্চিত।
বাস্তবতা
হলো এই যে, নারীর
প্রতি কর্মক্ষেত্রে, পাবলিক প্লেসে, গৃহে, বিদ্যাপীঠে নিপীড়ন, নির্যাতন ও নৃশংসতা চলছে।
যৌন লালসার শিকার হচ্ছে শিশুরাও। নারী শ্রমিকের উপযুক্ত
মর্যাদা ও মজুরি দেওয়া
হচ্ছেনা।
নানা
গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে
বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক নির্যাতনের ভয়ংকর ঘটনার তথ্য। যৌতুক ও অর্থের জন্য
চলছে নারী হত্যা। সামগ্রিক
অপরাধের পরিসংখ্যানের সিংহভাগ জায়গা দখল করে রেখেছে
নিহত, নির্যাতিত, আহত নারী।
পাশবিক
বর্বরোচিত কায়দায় মধ্যযুগীয় নৃশংসতা যেমনভাবে নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া
হচ্ছে গ্রামে, গঞ্জে, গৃহকোণে, তেমনিভাবে নারীর সম্ভ্রম হানিকর বহু ঘটনা ঘটছে
শহরের শিক্ষিত সমাজের অভিজাত এলাকা, অফিস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দক্ষিণ
এশিয়ায় নারী নির্যাতন ও
পীড়ন সম্ভবত অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে।
দিল্লি, বেঙ্গালুরু, ঢাকা, করাচি, চট্টগ্রামে নারী নির্যাতনের রোমহষর্ক
ঘটনায় উত্তাল হয়েছে প্রতিবাদী মানুষ।
বিশ্ব
নারী দিবসে এসব সমস্যা ও
চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশে দেশে
কথা ও, প্রতিবাদ জারি
রেখেছে আন্দোলনকারীরা। নারীর অধিকার নিশ্চিত করে সমতাসূচক বাড়ানোর
জন্য নেয়া হচ্ছে নানা
কর্মসূচি। এইসব
আশাবাদী উদ্যোগ শুধু নারী দিবসেই
নয়, সারা বছরই গ্রহণ
করা জরুরি। সমাজের টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য
পুরুষের পাশাপাশি নারীকেও মর্যাদায়, সম্মানে, অধিকারে এগিয়ে আনা প্রগতি ও
মানবতার দাবি। কুসংস্কার, পশ্চাৎপদতা ও অবদমন থেকে
নারীর মানবিক উন্নয়ন ও উত্তরণ সভ্যতার
বিকাশের জন্যই জরুরি।
দক্ষিণ
এশিয়ার উন্নয়ন ও সুসভ্যতার আলোকিত
দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ নারী অগ্রগতিতে অনেকটুকু
এগিয়েছে, এটা সত্য। অনেকক্ষেত্রেই
বাংলাদেশের নারীরা অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। তারপরও নারীমুক্তি, নারী অধিকার, ক্ষমতায়ন
ও অংশগ্রহণের পথে বহুদূর যেতে
হবে বাংলাদেশকে। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য
তাই, 'নারী সমানাধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
নারী
মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়া যে
'অবরোধবাসিনী'র উদাহরণ টেনে
ছিলেন, নারী বিষয়ক পদক্ষেপের
মাধ্যমে তাকে নিয়ে আসতে
হবে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসের পাদপ্রদীপের
আলোয়। জাগরণের পথে সম্মিলিত পদভারে
সবাইকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল
ইসলামের অবিস্মরণীয় উক্তির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে
বলতে হব, 'জাগো নারী বহ্নি-শিখা '।
মন্তব্য করুন
অন্তর্জাতিক
বাণিজ্যিক সাহিত্যে ইংরেজি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা।
এই ভাষা বিশ্ব বাণিজ্যে
মূল্যবান ভাষা হিসেবে পূর্ণভাবে
স্থাপিত হলেও বাংলাদেশের প্রজন্মকালে
এই ইংরেজি ভাষার ব্যবহার ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এতে বুঝা যায়,
বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতা করে
এগিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু
বর্তমান প্রজন্মে কাছে এই ইংরেজি
ভাষার ফলে তাদের নিজস্ব
বাংলা ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে
নিমিষেই। কারণ
বিশ্ববাণিজ্যে, সামাজিক মাধ্যমে, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে
ইংরেজি ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত
হচ্ছে, যা দেশের নিজস্ব
বাংলা ভাষাকে ক্রমাগতভাবে ভুলে যাওয়ার একটি
গুরুত্বপূর্ণ কারন হয়ে দাঁড়াবে।
এই ইংরেজি ভাষা প্রচলনটি বর্তমান
তরুণ তরুণীদের চলমান জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা
রাখছে। কিন্তু বিদেশী এই ভাষা সারা
বছর দেশে প্রচলন থাকলেও
২১ ফেব্রুয়ারি কিংবা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এই দিনটি
আসলে বাংলা প্রচলন টা এক রকম
বেড়ে যায়। কেননা স্মার্ট
বাংলাদেশে শিক্ষিত তরুন তরুণনিদের মাতৃভাষার
এই দিনটি পালন করা হয়
হাঁসি আনন্দে ফুলে সুভাষিত করে।
আবার
তাদের কিছু মানুষের কাছে
স্মার্ট বাংলাভাষায় কথা বলতে হলে
ইংরেজি শব্দ মিস্রিত করে
তাদের মতামত প্রকাশ করে। কথার মাঝেই
কথার ছলে ইংরেজি শব্দকে
মিস্রিত করে ফেলে। তাদের
ভাষায় ইংরেজি মিস্রিত বাংলা ভাষায় কথা বলা হলে
বুঝা যায় যে হয়ত
তারা স্মার্ট নয়ত অধিক জ্ঞানের
অধিকারি।
এই ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে তাদের
ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষিত হয় বলে ইংরেজি
ব্যবহারেই তারা বেশি উৎসাহবোধ
করে। এতে করে চলমান
জীবনে বাংলাভাষা সংস্কৃতি যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে, তেমনি
পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বাংলাভাষা অনেকটাই
বিব্রত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
দি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এর তথ্য অনুসারে
বিশ্বজুড়ে আনুমানিক ১ দশমিক ৫
বিলিয়ন মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। তবে
৪০ কোটিরও কম মানুষের ফার্স্ট
ল্যাঙ্গুয়েজ এই ভাষা’।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ভাষা শিক্ষিত
তরুন তরুণীদের মুখে সবচেয়ে বেসি
শুনা যায়। তাহলে কি
ইংরেজি ভাষা বলার ফলে
বাংলাভাষাকে বিব্রত করা হচ্ছে, নাকি
ইংরেজি চর্চায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মাতৃভাষাকে হারিয়ে
ফেলা হচ্ছে?
বাংলাদেশে
প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষা হল ইংরেজি।
তাই প্রযুক্তিবিদ-ব্যবস্থাপকরা কার্যক্ষেত্রেও ইংরেজি প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু
দেশপ্রেমের স্থান থেকে প্রযুক্তি খাতে
এই ইংরেজি প্রয়োগ করলেও অনেক সময় বাংলা
প্রয়োগে তারা ব্যর্থ হয়।
তবে
দেশের স্বার্থে, প্রযুক্তির কল্যাণে, পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে একটি
উন্নত দেশ হিসেবে উপস্থাপন
করতে হলে এই ইংরেজি
ভাষা বলা বা ইংরেজি
ভাষায় নিজেকে নিয়োজিত রাখাটা এক প্রকার গুরুত্বপূর্ণ।
তার মানে এই নয়
যে, বাংলা ভাষাকে বিব্রত করে, গুরুত্বহীন মনে করে সেখানে ইংরেজি ভাষা গুরুত্ব দিতে
হবে।
এছাড়াও
বাস্তবতায় দেখা যায়, বিভিন্ন
শিক্ষা এবং পেশাদার ক্ষেত্রে,
ইংরেজি ভাষা একটি প্রধান
আবশ্যকতা হিসেবে মনোনিবেশ করছে। যার কারনে অনেকাংশে
এটি আমাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহার করতে
কষ্টকর বা অসম্ভাব্য হতে
পড়ছে।
যদিও
বর্তমান প্রজন্মের তরুন তরুণীদের কাছে
ইংরেজি ভাষা বেসি প্রচলনের
অন্যতম কারন হতে পারে
ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া।
যা কিনা এই ইংরেজি
ভাষা ইন্টারনেটে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়
একটি প্রধান মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে, যার কারনে তরুন
তরুনীরা এই ইংরেজি ভাষা
সম্পর্কে বেশি ধারণা পায়।
এবং এই ধারণার ফলে
তাদের নিজস্ব ভাষাকে ভুলে যাচ্ছে অনায়েসে।
এছাড়াও সারা
বিশ্বের বৃহত্তম এক দিক হল
বিজ্ঞান। রয়েছে প্রযুক্তি এবং শিক্ষা, এসবের
ক্ষেত্রে ইংরেজি একটি প্রধান ভাষা
হয়ে আছে। কেননা এসব
ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে
এবং দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে
হলে ইংরেজি ভাষা জানা গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগের জন্য হলেও ইংরেজি একটি প্রভাবশালী সরঞ্জাম কিন্তু পরবর্তী প্রজন্মের তাগিদে দেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি ভাষা লালন বন্ধ করতে হবে এবং বিদেশি সংস্কৃতি এসব ভাষা মোকাবেলায় দেশীয় সংস্কৃতিকে উপযোগী করতে হবে।
মাতৃভাষা তরুণ অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারী দিবস উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য নারীর প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও সংহতি জ্ঞাপন, নারীর আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবদমন প্রতিহত করা এবং নারীর বিরুদ্ধে নানামুখী আক্রমণ, সন্ত্রাস ও নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে নারীর মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।