ইনসাইড আর্টিকেল

পিতা, আমরা তোমার কাছে ঋণী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:২০ এএম, ১৪ অগাস্ট, ২০১৮


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেন বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।

এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এর ‘পিতা, আমরা তোমার কাছে ঋণী’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।

পিতা, আমরা তোমার কাছে ঋণী

লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে ধর্মের বর্মে ভারত ভাগ করে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের অধীনে আমরা প্রথমবার স্বাধীন হয়েছিলাম। কিন্তু আমরা, পূর্ব বাংলার বাঙালিরা যে প্রকৃত পক্ষে স্বাধীন হইনি, বরং ব্রিটিশ শাসনাধীন উপনিবেশের গ্যাঁড়াকল থেকে উদ্ধার পেয়ে পাকিস্তানি শাসনাধীন উপনিবেশের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েছি, তা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পারলাম যখন দেখলাম পাকিস্তানের মনিঅর্ডার ফরম, পোস্টকার্ড, ইনভেলপ, বিভিন্ন প্রকার ফরম, চালান ইত্যাদি শুধু ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মুদ্রিত, বাংলা ভাষার স্থান কোথাও নেই। ‘সাতচল্লিশের স্বাধীনতা ও ভাষা আন্দোলন` নামের একটি কবিতায় আমি বাঙালি জাতির তকালীন অবস্থা যেভাবে প্রকাশ করেছি তা থেকে ৪টি লাইনের উদ্ধৃতি দিয়ে বাঙালি শিক্ষিতদের করুণ অবস্থা পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

ফরম পুরণ করতে সবাই খেতো হিমশিম,

বুদ্ধিজীবীর বুদ্ধিতেও ধরে গেল ঝিম।

দৌড়তে হতো ফরম নিয়ে উর্দু-ভাষীর কাছে,

রাতারাতি পিএইচডি`রাও মুগ্ধ হয়ে গেছে।

পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল একটি কলোনিরূপে রূপান্তরিত করার জন্য পশ্চিমা শাসকরা প্রথমেই বাঙালির মাতৃভাষা বাংলার ওপর আঘাত হানতে সচেষ্ট হয় এবং তার প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার মাধ্যমে। রাষ্ট্রভাষার দাবি রাষ্ট্রভাষার অন্দোলনে পরিণত হয় ১৯৪৯ সালের। ২৫ এপ্রিল সেই আন্দোলন জনসাধারণের পূর্ণসমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করে তীব্র আকার ধারণ করে। ভাষা আন্দোলনের কথিত অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমানসহ ২৪ জনকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। দু:খজনক হলেও সত্য যে, ব্যক্তিগত মুচলেকা প্রদানের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের ছাড়িয়ে নেন, কিন্তু শেখ মুজিব ছিল আদর্শ ও নীতিতে অটল। তাই ভাষা আন্দোলনের চরম মুহর্তেও (২১ ফেব্রুয়ারি ‘৫২) তিনি ছাড়া পাননি। ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৮/৯ বছরের ইতিহাসে সব ছাত্রনেতা ও কমীরই যে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন তা নয়। সরকার নেতৃস্থানীয় বহু ছাত্র-শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীকে বিভিন্ন প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আন্দোলনকে নেতত্বহীন করে দমিয়ে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল তা যেমন সত্য, শেখ মুজিব, গাজীউল হক প্রমুখের আপসহীন নেতৃত্বে বহু ছাত্রনেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও হত্যার বিনিময়ে অবশেষে ১৯৫৬ সালে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়, এটাও তেমনি ঐতিহাসিক সত্য।

প্রতিবন্ধকরূপে গণ্য করে তাঁকে বছরের পর বছর জেল-জুলুম ও নির্যাতনের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। তাঁর দলের বহু নেতা-কর্মীকেও কারাগার নিক্ষেপ করা হয়। বাঙালি বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনের ধারাবাহিকতাই ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে বাঙালির মুক্তিসনদ ৬-দফা ফর্মুলা পেশ করেন। প্রকৃত ৬-দফা ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। সর্বস্তরের বাঙালিরাই ৬-দফা ফর্মুলাকে লুফে নিল, কিন্তু আৎকে উঠল আইয়ুব খান ও অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা। আইয়ুব খান এটাকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে নস্যাৎ করার ফর্মুলা, এ অভিযোগে দেশরক্ষা আইনের অধীনে শেখ মুজিব ও তার সহকর্মিদের কারাগারে নিক্ষেপ করেন। শেখ মুজিব ও তাঁর দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মিদের অসংখ্যবার গ্রেফতার, অত্যাচার, নির্যাতন করেও সরকার ৬-দফার আন্দোলনকে দমন করতে পারেনি, বরং আন্দোলন উত্তরোত্তর তীব্র আকার ধারণ করে। বাধ্য হয়ে আইয়ুব জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা অর্পণ করে পর্দার অন্তরালে গমন করে। আন্দোলনের গতিকে মন্থর করার অভিপ্রায়ে ইয়াহিয়া খান লোকসংখ্যার অনুপাতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা প্রদান করে। এই ৬-দফার ভিত্তিতেই ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমা শাসকদের সব জরিপ রিপোর্টকে ভুল প্রমাণ করে বাঙালিরা এককভাবে আওয়ামী লীগকে গরিষ্ঠ সংখ্যক আসনে নির্বাচিত করে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার অধিকার প্রদান করে। প্রমাদ গোনে সামরিক শাসকরা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বাহিনী লেলিয়ে দেয়। গণহত্যা, নারী নির্যাতন ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে বাঙালিদের দমন করবার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ৯ মাসের যুদ্ধে বাঙালিরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়। পৃথিবীর বুকে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

১৯৬৯-এর দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে (ছাত্র জনতার সংমিশ্রণে) শেখ মুজিবকে কারাগার থেকে ছিনিয়ে আনে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার নিতে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানকে বাধ্য করে। পল্টন ময়দানের বিশাল জনসভায় সেদিন ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে `বঙ্গবন্ধু` উপাধিতে ভূষিত করে। সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের জনযুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জনের পর এ জাতি বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে `জাতির পিতা` রূপে বরণ করে নেয়। কারণ, ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বলে- `এই মহামানবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না।`

পিতা, পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের সব দু:সহ নির্যাতন উপেক্ষা করেও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতি হিসেবে আমরা সবাই বাঙালি চেতনাবোধে বিশ্বাসী, এই ধারণা তুমি আমাদের দিয়েছ; পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা তাদের স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে তাদের অপশাসনের মাধ্যমে আমাদের শোষণ করেছে, বঞ্চিত করেছে, এ সত্য তুমিই রাজনৈতিকভাবে আমাদের কাছে তুলে ধরেছ; অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার দৃঢ়তা তুমি আমাদের শিখিয়েছ। আমরা তোমার কাছে ঋণী। বাঙালি জাতি তোমার কাছে ঋণী। সুদীর্ঘ ২৪ বছর পাকিস্তানি দু:শাসনের বিভিন্ন মেয়াদে ১৪ বছর জেল-জুলুম সহ্য করে ৬-দফা ফর্মুলার দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তুমি পুরো বাঙালি জাতিকে তাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একই প্লাটফরমে আনতে সক্ষম হয়েছিল, যার পরিণতি ১৯৭০-এর নির্বাচনে অচিন্তনীয় বিজয়।

এই নির্বাচনের পথ ধরেই ১৯৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় লাভ বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এক অসাধ্য সাধন। আমরা সারা বাঙালি জাতি তার কাছে ঋণী। এটা ঐতিহাসিক সত্য, এ সত্যের মরণ নেই। তাই আসুন, দলমত নির্বিশেষে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা উদাত্তকণ্ঠে বলি— পিতা আমরা তোমার কাছে চিরঋণী। পরিশেষে ভারতের বিখ্যাত কবি ও লেখক অন্নদা শংকরের ভাষায় বলে এ পর্বের ইতি টানছি :

‘যতোদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান,

ততোদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

২। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের অন্ধকারপুরী থেকে স্বাধীন বাংলার মাটিতে তোমার আগমন। বিমান থেকে অবতরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিচালক, তোমারই হাতে তৈরি অকুতোভয় মুক্তি সৈনিক স্বাধীন বাংলাদেশের। প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের সঙ্গে তোমার কোলাকুলি, সে এক অভূতপূর্ব সুন্দর দৃশ্য আজও আমার চোখে ভাসে। ভেবেছিলাম তোমার নেতৃত্বে সব সাথীযোদ্ধাদের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে আমরা তোমার মনের মতো করেই গড়ে নিতে পারব। কিন্তু…….! এখানটায় আমার লেখা কবিতা ‘বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা থেকে উদ্ধৃতিসহ পাঠকদের বোঝাতে চাই:

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অতি কঠিন কাজ/ গঠনোন্নয়নে দেওয়া তিলোত্তমা সাজ/দৃপ্তপদে বঙ্গবন্ধু গ্রিবা উঁচু করে/তুলে নিলেন কঠিন সে কাজনিজ স্কন্ধ পরে। নিজ দেশের পূণ্য সে যে দেশের মাটি/সাধ ছিল তাঁরা গড়ে নেবেন অতি করে খাঁটি।/ কিন্তু কিছু হায়েনা ক্রীত বঙ্গ অর্বাচীনে/হত্যা করলো মুজিবকে আগস্টের এই দিনে।

রেডিওতে ভেসে আসছিল মেজর ডালিমের স্বর, ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন...। বিশ্বাস হচ্ছিল না। যথাসম্ভব দ্রুত তৈরি হয়ে অফিসে গেলাম । বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর সবার মুখে। গেলাম সেনাপ্রধানের অফিসে। সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ, উপ-প্রধান মোর জেনারেল জিয়াউর রহমান, সিজিএস বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ, ব্রিগেড অধিনায়ক কর্নেল সাফায়াত জামিল এবং আরো অনেককেই দেখতে পেলাম। পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে বৈঠক বসল। এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য দ্বারা বিদ্রোহিদের দমন করার জন্যে অনুমতি চাওয়া হল। জবাবে উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অজুহাতে ভারতীয় হস্তক্ষেপের কাল্পনিক ভয় দেখিয়ে সবাইকে নিরুৎসাহিত করতে সক্ষম হল। মনটা দমে গেল। দমে গেল এজন্যে যে, আমি তখন ছিলাম সেনাসদরে একজন কো-পরিচালক। আমার অধীনে কোনো যোদ্ধাবাহিনী (Fighting Force) ছিল না। একাত্তরে ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঘোষণার পর আর কোনো আদেশের অপেক্ষায় থাকিনি। ২৫ মার্চ রাত্রে ঢাকার গণহত্যার দু:সংবাদ শোনার পর পরই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেদিন ১৫ আগস্ট `৭৫ আমি নিরুপায়। যারা তাকে নিরাপত্তা দিতে পারতো, অন্তত পরবর্তীতে বিদ্রোহিদের দমন করে সরকার ও সংবিধানকে রক্ষা করতে পারত, তারা বিভ্রান্ত। অস্থির মনে ফিরে গেলাম নিজ অফিসে। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের চিত্র কল্পনা করার চেষ্টা করলাম। তাতে অস্থিরতা শুধু বাড়ল, চিন্তা শক্তি যেন সব অগোছালো হয়ে গেল। ঠিক করলাম বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাব। যত বাধাই থাকুক, একবার হলেও তাকে দেখতে চাই। অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জিপ নিয়ে ছুটলাম শহর পানে। বেলা তখন আনুমানিক ১০/১১টা হবে। পৌছে গেলাম বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাড়িতে। প্রাচীর ঘেরা বাড়ির লনে কাঠের অতিসাধারণ একটা কফিন ছাড়া আর কিছুই আমার নজরে পড়েনি। দ্রুতপদে কাফনের কাছে গিয়ে দেখলাম ঢাকনাটা আলতোভাবে লাগানো। আমি ঢাকনাটা সরিয়ে ফেললাম। শবদেহ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। মুখের কাপড় সরিয়ে নিলাম। বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, শতাব্দীর মহামানব, স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কফিনের ভেতর চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। অমন মহামানবের শবদেহ এত অবহেলায় পড়ে থাকতে পারে তা কল্পনাও করা যায় না। নিজেকে বড় অসহায় মনে হল। একাত্তরেও নিজেকে কখনোই এত অসহায় মনে হয়নি। তাহলে? চিন্তার খেই হারিয়ে ফেললাম। হঠাৎ গাড়ির শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলাম। সে অবস্থায় গভীর শ্রদ্ধাভরে আমি সামরিক স্যালুট প্রদান করলাম। মুখের কাপড় যথাস্থানে লাগিয়ে শেষ স্যালুট প্রদান করে ফিরে এলাম।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ও স্বাধীনতা উত্তর বিভাগীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে যখন সেনাবাহিনী থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলাম, তখন বঙ্গবন্ধু, তুমি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে যথাযথ অনুসন্ধানের পর আমাকে সরাসরি লে: কর্নেল র‌্যাংকে প্রমোশন দিয়ে আমার ইস্তফার আবেদন নাকচ করেছিলে। ইস্তফাপত্রে তুমি ইংরেজিতে দু`টি ছত্র লিখেছিলে—‘Allegations against Major Osman found baseless. His promotion is granted.’

সেদিন ১৫ আগস্ট তাই নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। মনে হল আমি এতিম হয়ে গেছি। দুই বৎসর বয়সে মাকে হারিয়েও এতিম হয়েছিলাম কি না বুঝতে পারিনি। কিন্তু সেদিন ৩২ নম্বরের সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল আমি সত্যি এতিম হয়ে গেছি। তারপর ৩রা নভেম্বর `৭৫ কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হল। ৭ নভেম্বর সকাল ৮ ঘটিকায় পাকিস্তান ফেরৎ সৈনিকরা আমাকে হত্যা করার জন্য আমার বাড়ি আক্রমণ করল। আমাকে না পেয়ে তারা ব্রাশফায়ারে হত্যা করল আমার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী নাজিয়া ওসমানকে। আমার দুই শিশু কন্যাকে অবশ্য তারা রেহাই দিয়েছিল। ১৯৭১-এর যুদ্ধক্ষেত্রে বোমার মাঝেও যাকে দেখেছি অবিচল, শক্রর অবস্থান থেকে মাত্র ৫০০ গজ ব্যবধানেও যিনি বিদেশি কূটনীতিকদের মুক্ত এলাকা দেখাতে ভয় পাননি, ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিল ৭১ বাংলাদেশ মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যিনি করেছেন সারা বাংলার নারী জাতির প্রতিনিধিত্ব, তাকে সেদিন প্রাণ দিতে হল নিজ ঘরে নিজ দেশেরই সৈনিকদের গুলিতে, সে কী মর্মান্তিক, কী হৃদয়বিদারক তা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। তারপর জিয়াউর রহমান অকালীন অবসর দিয়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করলেন। সব হারিয়ে ভগ্ন হৃদয়ে পিতা কেমন করে যেন আজো আমি বেঁচে আছি। কিন্তু তোমার কাছে আমার বা এ জাতির ঋণের বোঝা এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি, একটুও লাঘব করতে পারিনি, তার জন্যে ক্ষমা করো।


[রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ২৩৬ থেকে ২৪০)]

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন