ইনসাইড আর্টিকেল

গুঞ্জন থেকে গুজব, গুজব থেকে গুরুতর কিছু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ১২ অগাস্ট, ২০১৯


Thumbnail

ধরা যাক আপনাকে প্রশ্ন করা হলো- ‘আপনি কি জানেন, গুজব বলে কোনো শব্দ আসলে অভিধানে নেই?’ উত্তরে কি বলবেন? আপনার উত্তর যদি হয়, ‘তাই না কি! সত্যি?’ তাহলে দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, যারা গুজবে কান দেয় বা গুজব ছড়ায়, আপনি তাদেরই একজন। কেননা আপনি নিশ্চয়ই নিশ্চিত রিউমার (Rumour) বা গুজব শব্দটি অবশ্যই ডিকশনারি বা অভিধানে আছে। হয়ত নিজ চোখে দেখেছেনও। তাহলে কেন বলতে পারলেন না, ‘না এটা হতে পারে না। এসব ফালতু কথা আমাকে বলবেন না।’ ক্ষমা করবেন পাঠক। আপনাকে আঘাত করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। গুজব বিষয়ক শিরোনাম দেখেই আপনি লেখাটি পড়ছেন। এজন্য আপনি অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। তবে আমার শঙ্কা ২৮ টি দেশের শতকরা ৬৩ জন মানুষকে নিয়ে যারা গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার খবরে এবং সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারেন না। বিশ্বের অন্যতম এবং আমেরিকার শীর্ষতম গণসংযোগ এবং বিপণন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ্যাডেল মেন ইন্টেলিজেন্স (Edel Man Intelligence) ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে ২৮টি দেশে গবেষণা শেষে তাদের প্রচারমাধ্যম এ্যাডেল মেন ট্রাস্ট বেরোমিটার (Edel Man Berometer) এ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। সুতরাং আমি আপনি বা আমরা সেই ৬৩% এর দলে থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

গুজবে কান দেবেন না বলাটা যত সহজ, গুজব থেকে কানটা দূরে রাখা তত সহজ নয়। ‘কাউকে বলবেন না’ শর্তে যে মনগড়া কথা বা ধারণা কাউকে বলা হয়, ডালপালাসহ তা ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। সোশ্যাল মিডিয়ার আবিস্কার গুজবকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। কোনো কোনো গুজব আবার সহিংসতা বাড়িয়ে ডেকে আনে বড় বিপদ। গুজবসৃষ্ট কিছু করুণ কাহিনী লিখেছেন মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি।

গুজব আসলে কি?

গুজবের সঠিক সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ কঠিন। কারণ গুজবের বিস্তৃতি ব্যাপক ও বৈচিত্রময়। প্রাচীনকাল থেকেই যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং নিজস্ব বাহিনীর মনোবল, উৎসাহ এবং তেজ বাড়ানোর জন্য সুকৌশলে গুজব রটানো হতো। রাজনীতি বা অপরাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার গুজব যা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অহরহ ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিক ভূবনে নিজস্ব পণ্যের পসার এবং প্রতিদ্বন্দ্বির পণ্যের কাটতি কমাতে গুজবের ওপর নির্ভর করে অনেকেই। শেয়ার বাজারে গুজব ছড়িয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধানো যায়। বিনোদন দুনিয়ায় গুজব ছড়িয়ে দর্শকশ্রোতার মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়। তাই ইচ্ছে করে গুজব ছড়ানো বিনোদন তারকারা, যাদের অনেকেই পরবর্তীতে ব্যাপক সফলতা লাভ করে সুপারস্টার হয়েছেন। তবে হালের আলোচিত বিষয় সামাজিক গুজব এবং সোশ্যাল মিডিয়া র্নিভর রাজনৈতিক গুজব। পদ্মাসেতুর জন্য রক্ত এবং মানুষের মাথা প্রয়োজন কিংবা প্রধানমন্ত্রীর ক্যানসার যার অন্যতম উদাহরণ। ব্যাপক গবেষণার পর বৃটেনের গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্লস ওয়ান (PLOS ONE) ২০১৬ সালের ৪ মার্চ সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর ওপর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করে এবং সবকিছু বিবেচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা উপস্থাপন করে। প্লস ওয়ানের গবেষণা মতে, ‘আপাতদৃষ্টিতে সত্য বা গ্রহণযোগ্য কিন্তু যার সত্যতা ও সঠিকতা সহজে নিরূপণ করা যায় না এবং যা অনেকরকম উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, কল্পনা, ধারণা ইত্যাদি তৈরি করে তা প্রকাশ বা প্রচারণাকে গুজব বলা যায়।

আমাদের অনেকের মাঝেই গুলিলিটি (Gulility) অর্থাৎ দ্রুত ও সহজে বিশ্বাস করার প্রবণতা কাজ করে। আমাদের চরিত্রের এই দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গুজব সৃষ্টি ও প্রচার করা হয়। আবার কোনো উদ্দেশ্য নয়, কেবল মজা করার জন্যেও অনেকে গুজব তৈরি ও প্রচার করে। এর নেপথ্যে রয়েছে এক নতুন ভোক্তাশ্রেণী যাদের পশ্চিমা বিশ্বে বলা হয় ‘তথ্যভোক্তা’ বা কনজিউমার অব ইনফরমেশন। বাংলাদেশের মিডিয়া জগতে একটা কথা চালু আছে যে ‘পাঠক খাবে না’ বা ‘দর্শক খাবে না’। বিষয়টি অনেকটা এরকমই। আরও সহজ করে বলতে গেলে বলা যায় যে, বর্তমান সমাজের একটা অংশ তথাকথিত ‘লাইক’, ‘শেয়ার’, ‘কমেন্টস’ ইত্যাদি দিতে এবং পেতে দারুণ পছন্দ করে। তাদের চাহিদা মেটাতে বা তাদের প্রতিক্রিয়া দেখতেও সমাজে গুজব ছড়ানো হয়, যার পিছনে হয়তবা রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোনো কারণ থাকে না।

গুজব সৃষ্টির কারণ ও পরিবেশ

প্রকৃত ঘটনা বা প্রকৃত সত্য না জানা ও আংশিক তথ্য জানা।

কোনোকিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, উত্তেজনা

কোনো তথ্য, সংবাদ, ঘটনা যখন গুরুত্বপূর্ণ ও মুখরোচক

কোনো গুজব যখন সত্য বলে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়

নিজের গুরুত্ব ও ইমেজ বৃদ্ধি করার আকাঙ্ক্ষা

সামাজিকভাবে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করার আকাঙ্ক্ষা

 

তথ্যসূত্র: সোশ্যাল সাইকো অনলাইন।

হোয়াইট হাউজকে হোয়াইট ওয়াশ

এপ্রিল মাসের এক তারিখে সাধারণত মুখরোচক মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মজা করার একটা প্রচলন রয়েছে প্রচ্যের দেশগুলোতে কিন্তু ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল দুপুর একটা সাত মিনিটে পৃথিবীর অন্যত্তম বৃহৎ ও আমেরিকার প্রভাবশালী বার্তা সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেস (এ পি) কোন মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে মজা করতে পারে- তা ছিল সবার ধারনার বাইরে। ফলে এক টুইট বার্তায় এ পি যখন প্রচার করলো যে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট হিসাবে বিবেচ্য খোদ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সুরক্ষিত অফিস ভবন হোয়াইট হাউজে বিস্ফোরন ঘটেছে এবং এতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আহত হয়েছেন, তখন বিশ্ববাসীর কপালে ক্ষণিকের জন্য হলেও ভাঁজ পড়ে ছিল। মূহর্তেই এই সংবাদ ভাইরাল হয় এবং এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুজিবাজারে। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দি টেলিগ্রাফের ২৩ এপ্রিল ২০১৩ এর তথ্য মতে এই টুইট বার্তা প্রকাশের সাথে সাথে আমেরিকার পুঁজি বাজার শেয়ারের দাম নামতে থাকে এবং  তিন মিনিটের মধ্যে বাজার থেকে ১৩৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বর্মান বাজার মূল্যে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা উধাও হয়ে যায়। বিশ্বের নির্ভরশীল অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ: শেয়ার মার্কেট গবেষনা সংস্থা স্ট্যান্ডর্ড এন্ড পুত্তরস্ (এস এন্ড পি)  এর এস এন্ড পি ৫০০ নামের শেয়ার বাজার সূচক ও নাটকীয়ভাবে নেমে যায়। এই ঘটনার ঠিক আট দিন আগে আর্থাৎ ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল বোস্টন শহরে বাৎসরিক মেরাথন দৌড়ে চলাকলে দৌড়ের শেষ সীমায় ১২ সেকেন্ড এবং ১৯০ মিটার ব্যবধানে রান্নাঘরে ব্যবহৃত প্রেসার কুকারে রাখা দুইটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলে ৬ জন প্রাণ হারান, ১২ জনের অঙ্গহানী হয় এবং কয়েকজন সাধারণ দর্শক আহত হয়। এই ঘটনার ৮দিনের ব্যবধানে হোয়াইট হাউজ উড়িয়ে দেওয়ার টুইট বার্তাটি তাই বিশ্বাসযোগ্যতা পায় এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে হোয়াইট হাউজের মূখপাত্র জে কারনী (Jey Carney) সংবাদমাধ্যমে উপস্থিত হন এবং এই টুইট বার্তা অসত্য এবং প্রেসিডেন্ট ওবামা সুস্থ আছে মর্মে নিশ্চিত করেন। এদিকে অ্যাসোসিয়েট প্রেস দ্রুততার সাথে তাদের টুইট আইডি হ্যাক করে হোয়াইট হাউজও প্রেসিডেন্টকে উড়িয়ে দেওয়ার গুজব ছড়ানোর বিষয়টি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরে। পরবর্তীতে অ্যাসোসিয়েট প্রেস আমেরিকার ন্যাশনাল পাবলিক রেডিও, বিবিসি এবং সিক্সটি মিনিটস এর মতো বহু প্রচার মাধ্যমের দুটি হ্যাক করার দাবী করে ‘সিরিয়াল ইলেকট্রনিক আর্মি’ নামক এক জঙ্গি সংগঠন, যা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের সমর্থক বলে স্বীকৃত।

চাঁদ নিয়ে চাপাবাজি

বর্তমান যুগে এসে আমরা চাঁদে মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর মূখ দেখার গুজব শুনেছি এবং এ নিয়ে উত্তেজনা এবং ভাংচুর প্রত্যক্ষ করেছি। অথচ অষ্টদশ শতকে আয়ারল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘দি এডিনবার্গ কোয়ারান্ট’ এ রীতিমত দাবি করা হয় চাঁদে ভীন গ্রহের প্রাণী বা এ্যালিয়েন (Aline) এবং  এ্যালিয়েনদের বাসস্থান ও সভ্যতা রয়েছে এই সূত্র ধরে ১৮৩৫ সালের ২১ আগস্ট আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ‘দি সান’(The Sun) অচিরেই চাঁদে জীবের উদ্ভিত্ব ও সভ্যতা খুঁজে পাওয়া সংক্রান্ত খবর প্রকশের ঘোষণা দেয়ে। এরপর ইংল্যান্ডের জন্ম নেওয়া লেখক, বিজ্ঞনী, গনিতবিদ, রসায়নবিদ এবং ব্লু প্রিন্টের জনক স্যার জন ফ্রেডিক ইউলিয়াম হার্সেল (Sir John Fedrick Herschel) এর ছয় পর্বের লেখা প্রকাশ করে। এই লেখা প্রকাশের আগে বৃটিশ জ্যোতিষী এবং খৃষ্টানদের চার্চ বিষয়ক কর্নধার থমাস ডিক (Thomas Dick) সৌর জগতে প্রায় বাইশ ট্রিলিয়ন বা বাইশ হাজার কোটি বাসিন্দা রয়েছে বলে দাবী করেন, যার মধ্যে শুধু চাঁদেই চারশত বিশ কোটিবাসিন্দা আছে বলে প্রকাশ করেন। তাঁর লেখা সে সময় বেশ জনপ্রিয় পায় ইউরোপ জুড়ে, অন্যদিকে জার্মানীর মিউনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ্যার অধ্যাপক ফ্রাঞ্জ ভন পাউলা গ্রুইথুসেনা (Frang Von Paula Gruithuisen) ১৮২৪ সালে  এক লেখায় চাঁদের জীবের অস্তিত্ব এমনকি এসব জীব থাকার জন্য বিল্ডিং এবং সবুজ চত্ত্বরও আছে বলে দাবি করেন। এই লেখা’ও প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর দশবছর পর দি সান পত্রিকার সাংবাদিক রিচার্ড এ্যাডামস্ লকী (Richard Adams Locke) চাঁদে এ্যালিয়েন থাকার এই ছয় পর্বের ধারাবাহিক প্রকাশ করেন ২৪ আগস্ট ১৮৩৫ সাল থেকে। পরবর্তীতে জানা যায়, এই ধারাবাহিকের জনক স্যার জন হার্সেল অপর বিজ্ঞানী ও ভ্রমণসঙ্গী ড. এনড্রিও গ্রান্ট (Andrew Grant) কে ব্যাখ্যা করেন এবং পিকটেশন দেন। পরে তা দি সান রিপোর্টার রিচার্ড এ্যাডাম লকী’র বরাতে পত্রিকায় লেখা হয়। এই লেখাটিকে চাঁদে জীবের বা প্রাণের অস্তিত্ব সংক্রান্ত সকল ধারণাকে বাতিল এবং পত্রিকার বিক্রি বাড়ানো তথা মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধারাবাহিক রিপোর্টে চাঁদে ছাগল, বন্য গরু, শিংযুক্ত ঘোড়া, উটপাখির মতো পাখি, বাঁদুড়, লেজবিহীন বড় ইঁদুর ইত্যাদির অস্তিত্ব থাকার তথ্যও প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের দূরবীক্ষণ যন্ত্রে স্যার জন হার্সেল এসব পশুপাখির পাশাপাশি চাঁদে গাছ, সমুদ্র ও বেলাভূমি দেখেছেন বলে দাবি করা হয়। এই ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশের পর ‘দি সান’ পত্রিকার চাহিদা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায় এবং এই বিক্রি বেশ কিছুদিন চলতে থাকে। অন্যদিকে প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে থাকেন স্যার জন। প্রশ্নকারীদের অধিকাংশের ধারণা ছিল সত্যিই চাঁদে জীবের অস্তিত্ব রয়েছে।

 

কুষ্ঠরোগ নিয়ে কুকথা

১৩৪৭ থেকে ১৩৫১- এই পাঁচ বছরে ইউরোপ এবং এশিয়ার সাড়ে ৭ থেকে ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যু ঘটে এক ধরণের প্লাগ বা কুষ্ঠশ্রেণির রোগে। এই মহামারি ইতিহাসে ‘কালোমৃত্যু’ বা (Black Death), মহাপ্লাগ (Great Plague) এবং কালো প্লাগ (Black Plague) হিসাবে ঠাঁই পেয়েছে। এই রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে তখন অনেক গুজব, কুসংস্কার ও কল্পকাহিনী প্রচারিত হয়। এছাড়াও মধ্যযুগে রোগমুক্তি ও সুস্থ থাকার আশায় ইহুদিরা খ্রিস্টান শিশুদের রক্তে গোসল করে বলে এক ধরণের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। যা বহু হৃদয়বিদারক রক্তপাত, দাঙ্গা ও ধর্মযুদ্ধ উসকে দেয়। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ১৩২১ সালে ফ্রান্সে। এ সময় গুজব রটে যে শরীরের মাংস পচে যাওয়া বা বা এক ধরনের কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ইহুদি রোগীরা ইচ্ছাকৃতভাবে পানিতে বিশেষত পানির কুয়ায় এই মাংস পচন বা কুষ্ঠরোগের জীবাণু মিশিয়ে দিচ্ছে। এতে আরও বলা হয় যে, মুসলমানদের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ইহুদিদের অর্থায়নে কুষ্ঠরোগীরা পানিতে রোগের জীবাণু ও বিষ মিশিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে একাধারে মুসলমান, ইহুদি, কুষ্ঠরোগী, অপরিচিত কোনো ব্যক্তি নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষকে নানা কায়দায় বিশেষত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন বর্ণনামতে, ১৩২১ সালের জুন মাসে ফ্রান্সের তৎকালীন সম্রাট পঞ্চম ফিলিপ সংবাদ পান যে কুষ্ঠরোগীরা ফ্রান্স ও জার্মানীর খ্রিষ্টানদের হত্যা কিংবা কুষ্ঠরোগের বিস্তার ঘটানোর জন্য কুয়া, নদীনালা ইত্যাদির পানিতে বিষ প্রয়োগ করছে বা কুষ্ঠ জীবাণুযুক্ত কাপড়, তৈজসপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর ইত্যাদি ধুচ্ছে। এই অপরাধে অনেককে আটক, হত্যা বা পুড়িয়ে মারার তথ্য পান সম্রাট পঞ্চম ফিলিপ। তিনি ২১ জুন ১৩২১ তারিখে সকল কুষ্ঠরোগীকে বন্দী ও তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার আদেশ দেন। এতে পরিস্থিতি আরও উতপ্ত হয়ে উঠে। এসময় ফ্রান্সের এ্যাকুইটেন অঞ্চলে কুষ্ঠ রোগী এবং ইহুদীদের বেশ কিছু বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পরে তাদের ধন-সম্পদ বা বাড়িঘর দখল করে নেয় অন্যরা। আরও গুজব রটানো হয় যে কুষ্ঠ রোগীরা তাদের প্রসাব, শরীরের পুঁজ ও রক্ত মিশিয়ে বিষ তৈরি করে পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে যেন খৃষ্টান সম্প্রদায় ধ্বংস হয়ে যায়। একাজে স্বয়ং শয়তান জড়িত বলেও অপপ্রচার চালান হয়। এ গুজবের শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটিয়ে আরও প্রচার করা হয় যে, কুষ্ঠ রোগীদের জন্য নির্ধারিত কলোনিতে ড্রামভর্তি রুটি পাওয়া গেছে যা ছিল বিষ ও জীবানু মিশানো এবং কুয়ার পানিতে ফেলার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত। এই গুজব দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা শুরু হয়। এই গুজবের পর ঠিক কতজন কুষ্ঠ রোগী বা ইহুদী প্রাণ হারায়, তার সঠিক কোন সংখ্যা জানা যায় নি। তবে বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে তাদেরকে বেঁধে গায়ে আগুন দেয়ার তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে একটি ঘটনায় সর্বোচ্চ ১৬০ জন হত্যার তথ্য পাওয়া যায়। এই গুজবের রেশ কাটতে অনেক বছর লেগেছিল।

গুজবের শিকার শিশুরা

পৃথিবীর বহুদেশে প্রাচীনকাল থেকেই শিশুদের গুম এবং হত্যা করার নানারকম ঘটনা এবং গুজবের তথ্য পাওয়া যায় বিভিন্ন সূত্রে। বিভিন্ন কারণে শিশুদের গুম এবং হত্যা করা হলেও মূলত নির্মাণ কাজ বিশেষত বড় কোনো স্থাপনা এবং সুনির্দিষ্টভাবে বড় কোনো সেতু নির্মানের সঙ্গে শিশুদের গুম এবং হত্যার যোগসূত্র পাওয়া যায় বিভিন্ন দেশে। প্রাচীনকালে ধারণা করা হত যে মাটি দেবতার সৃষ্টি। তাই এই মাটি খুঁড়তে হলে দেবতাকে তুষ্ট করতে হবে। মাটিই একটি ভারী বা সুউচ্চ স্থাপনার ভার বহন করে বিধায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মাটির দেবতাকে তুষ্ট করতে গিয়ে বিভিন্ন আচার ও আরাধনা করতো। ল্যাটিন আমেরিকার বহুদেশে মাটির নিচে খনিতে কাজ করা শ্রমিকরা আজও মাটির দেবতার প্রতি সম্মান জানায় প্রতিনিয়ত। ডিসকভারি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ইউটিউব চ্যানেলে খনির ভিতরে শ্রমিকদের মাটির দেবতার পূজা করার দৃশ্য দেখা যায়। প্রাচীনকালে পূজারীদের ধারণা ছিল যে, দেবতাকে তুষ্ট করার সবচেয়ে বড় উপকরণ হল তার প্রতি মানুষের বিশুদ্ধ রক্ত নিবেদন করা। যেহেতু শিশুদের পাপ ও পংকিলতার উর্ধ্বে বিবেচনা করা হয়, সেহেতু তাদের রক্ত বিশুদ্ধ এবং এই বিশুদ্ধ রক্তে দেবতা বেশি খুশী হবেন বিবেচনা করা হত। এ থেকেই শিশুদের গুম ও হত্যা করার কাহিনী, কল্পকাহিনী ও গুজবের সৃষ্টি ও প্রচার।

এবছর ৬ মার্চ মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোষ্টের তথ্যে জানা যায় যে, একদল গবেষক ৬ বছরের খনন কাজ শেষে ল্যাটিন আমেরিকান দেশ পেরু তে চীমু (Chimu) নামক একটি প্রত্নতাত্বিক স্থানের সন্ধান পেয়েছে যেখানে একসাথে ১৪০ জন শিশু এবং ২০০ পশুর কঙ্কাল রয়েছে। গবেষকদের ধারণামতে আনুমানিক ১৪৫০ সালের দিকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা উগ্র আবহাওয়া থেকে পরিত্রাণ পেতে এভাবে শিশুদের হত্যা করা হয়। ২০১৮ সালের ২জুলাই ভারতের মহারাষ্ট্রের একটি গ্রামে বেদে বা যাযাবর ধরনের ৫ ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রামবাসীর মতে তাদের একজন একটি ছোট মেয়ের সঙ্গে কতাহ বলছিল। এতে গ্রামবাসীর মনে সন্দেহ হলে তাঁরা এই দলটিকে আটক করে ও জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু সন্তোষোজনক জবাব না পাওয়ায় তাদের একজনকে একটি ঘরে আটক করে লাঠি ও পাথর দিয়ে পিটানো হয়। এই দৃশ্য হোয়াটস অ্যাপে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী বাকীদের ওপর চড়াও হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হ্লে গ্রামবাসী পুলিশকেও আক্রমণ করে। একই বছর ভারতে এপ্রিল মাসে ১জন, মে মাসে ৬ জন এবং জুন মাসে ৫জন গণপিটুনিতে মারা যায় (সূত্র বিবিসি)। উইকিপিডিয়ামতে ২০১৭ সালের মে মাসে ভারতের জাহড়খণ্ডে হোয়াটস আপে ছড়ানো শিশু অপহরণ ভিত্তিক গুজবের কারণে গণপিটুনিতে ৭জন প্রাণ হারায়। ২০১৮ সালের ১৮জুলাই দিল্লি-পাটনা রুটের একটি ট্রেনের বগিতে শিশু পাচারকারী দল সন্দেহে যাত্রীদের আক্রমণ করে বিহারের জনতা। মৃতপ্রায় অবস্থায় তাদের ২৯জনকে পুলিশ উদ্ধার করে। বাংলাদেশে গুজব ছড়িয়ে মানুষ হত্যা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ কোনো নতুন বিষয় নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ের এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচিত হচ্ছে। বিবিসি ২৪ জুলাই ২০১৮ তারিখে শিশু অপহরনের অভিযোগ তুলে ৩৮ জনকে পিটিয়ে হত্যার সংবাদ প্রকাশ করে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে নির্মানাধীন পদ্মা ব্রীজের মানুষের বিশেষত শিশুদের মাথা প্রয়োজন বলে সোশ্যাল মিডিয়া ও লোকমুখে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় ৮ জনকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত জনতা। বর্তমানে অপরাধী সনাক্তকরণ এবং বিচার প্রক্রিয়া চলছে। বন্ধ করা হয়েছে বেশকিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট।

শেষ কথা

লেবাননে জন্ম নেয়া আমেরিকার অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক এবং শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ জিয়াদ কে আব্দেল নূরের মতে মানুষকে যারা ঘৃণা করে, তারা গুজবের বহন করে, বোকারা তা প্রচার করে আর মূর্খরা তা বিশ্বাস করে। আসুন আমরা ঘৃণা ছড়ানো মানুষ, বোকা বা মূর্খের দলে না ভীড়ে সত্যের আলোয় উদ্ভাসীত হই।

বাংলা ইনসাইডার



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন