নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২৭ এএম, ২৩ জুন, ২০১৭
রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা হয় কিনা তা নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক চলছে। কোন দল কিভাবে চলে, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চা হয় কিনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে কিনা, নেতা নির্বাচন কিভাবে হয় অনেক আলোচনাই চলে। আমি আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও কাউন্সিল করি। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতা দখল করে। নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ভোটারদের ওপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে।
আমি যে সমস্ত এলাকায় নির্যাতন হয়েছি সে সমস্ত এলাকায় সফর করি। অনেক বাধা আসে চারদলীয় জোট সরকারের পক্ষ থেকে। আমার দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতায় চারদলীয় জোটের সন্ত্রাসী বাহিনী আক্রমন চালাতে থাকে। এ অবস্থায় দলকে সংগঠিত করা একান্তভাবে প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
আমি যখন সরকারে ছিলাম তখন প্রত্যেক জেলা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা করেছি। এক একদিন এক এক জেলার উপজেলা, ইউনিয়ন ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করি। কেন্দ্রীয় কমিটি, সভাপতিম-লী, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মতবিনিময়ের সভা করেছি। বিভাগীয় সম্মেলন করেছি। এই বিভাগীয় সম্মেলনে ইউনিয়ন, উপজেলা নেতারা বক্তব্য রেখেছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর যে নির্যাতন চলছিল তার প্রতিবাদে একটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন করা হয়। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কনভেনশন উপলক্ষে সমগ্র দেশ থেকে নেতৃবৃন্দ ঢাকায় আসে ও অংশগ্রহণ করে। নির্যাতিতদের তথ্য সরবরাহ করে ও নির্যাতিতদের নিয়ে আসে।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিনিধিরা যোগদান করেন। কানাডা থেকে মানবাধিকার কর্মী মি: স্লোন, নেদারল্যান্ডের সাবেক মন্ত্রী ... যোগ দেন। পাকিস্তান থেকে আসমা জাহাঙ্গীরের আসার কথা ছিল কিন্তু বাংলাদেশ তাঁকে ভিসা দেয় নাই বলে আসতে পারেন নাই।
২০০২ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সমগ্র দেশ থেকে কাউন্সিলার ও ডেলিগেট পাঁচ হাজার এবং সেই সাথে নেতাকর্মী মিলে চল্লিশ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকে। প্রত্যেক জেলার পক্ষ থেকে কাউন্সিলার ও ডেলিগেটরা বক্তব্য রাখেন ও লিখিত প্রতিবেদন পেশ করেন। অত্যন্ত বৈরী পরিবেশ ও প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী সম্মেলনের পূর্বে কতগুলো সাব কমিটি গঠন করা হয়। যেমন ১. গঠনতন্ত্র সাব কমিটি, ২. ঘোষণাপত্র সাব কমিটি, ৩. অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি, ৪. সম্মেলন পরিচালনা কমিটি, ৫. অভ্যর্থনা কমিটি, ৬. আপ্যায়ন কমিটি, ৭. অর্থ কমিটি, ৮. মঞ্চ কমিটি, ৯. প্রচার ও প্রকাশনা, ১০. নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি, ১১. সংস্কৃতি বিষয়ক কমিটি। কমিটিগুলো স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে। তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা, নীতিমালা গ্রহণ ও সম্মেলনে নির্বাচনের দায়িত্ব এই কমিশনের। সমঝোতা না হলে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন হয়। এই নিয়মে আওয়ামী লীগের সম্মেলন কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নির্বাচন হয়ে থাকে।
গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র এবং অর্থনৈতিক নীতিমালা কমিটির সুপারিশ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির কাছে পেশ করা হয়। এর পূর্বে প্রত্যেক জেলা কমিটির কাছ থেকেও মতামত সংগ্রহ করা হয়, তারই আলোকে কমিটি খসড়া প্রস্তাব কার্যকরী সংসদের কাছে পাঠায়। সেখানে বিস্তারিত আলাপ করে প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয় কাউন্সিলের জন্য। যেকোনো সংশোধন কাউন্সিল পাস করবে। কেন্দ্রীয় সংসদ সংশোধনীর সুপারিশগুলো প্রস্তুত করবে। সেখানে কাউন্সিলারদের আপত্তি থাকলে তা আমলে নেওয়া হয়ে থাকে। সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী কাউন্সিলে আয় ও ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে এবং বাজেট পাস করতে হবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও জাতীয় কমিটি বাজেট অনুমোদন করলে কাউন্সিলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সকল নিয়ম যথাযথভাবে মানা হয়। গঠনতন্ত্র মেনেই সংগঠন পরিচালনা করা হয়। সদস্য সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটা উপদেষ্টাম-লী আছে। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার বিশিষ্টজনদের সম্মতি সাপেক্ষে উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ নিয়মিত বৈঠক করে থাকে। সভানেত্রীর সভাপতিত্বে সাধারণত বছরে এক বা দুবার সভা হয়। ২০০২ সালের পর ছয়টা সভা করা হয়েছে। এসব সভায় উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের নিয়ে তিনটি সেল গঠন করা হয়। যথা
১. রাজনৈতিক সেল,
২. অর্থনৈতিক সেল ও
৩. সামাজিক সেল।
উপদেষ্টাম-লী থেকে একজন চেয়ারম্যান বাকি সবাই সদস্য। ২০০২ সালের কাউন্সিলের পর যে তিনটি সেল গঠন করি তার চেয়ারম্যান ছিলেন রাজনৈতিক সেল সামসুল হুদা হারুন (প্রয়াত), অর্থনৈতিক সেলÑ শাহ এ এম এস কিবরিয়া (নিহত) এবং সামাজিক সেল এ এস এইচ কে সাদেক (প্রয়াত)।
এসব সেলের কাজ হল সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা, দলের করণীয় সম্পর্কে উপদেশ দান ও ভবিষ্যাৎ কর্মসূচী কি হবে, রাষ্ট্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দলকে তা সরবরাহ করে থাকেন। এই সেলগুলোর মিটিং নিয়মিত করা হয়। লিখিত মন্তব্য, সুপারিশ দলকে দিয়ে থাকে।
কুড়িটা সাব কমিটি আছে। উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারপারসন ও কো-চেয়ারপারনস নির্বাচন করা হয়। কার্যকরী সংসদের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদক, সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করেন। পার্লামেন্টারি পার্টির সদস্য, যিনি জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য হবেন পদাধিকার বলে। যেমন জাতীয় সংসদের শিক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির যে সদস্য থাকবেন তিনি দলের এই সাব কমিটির সদস্য থাকবেন। এর ফলে দলের সাথে সংসদের গৃহীত কার্যক্রম ও দলের নীতিমালার আদান প্রদান সহজ হয়। দেশ ও জাতির উন্নয়নের কাজ দ্রুত করা যায়। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকে। কুড়িটা সাব কমিটি হচ্ছে:
১. অর্থ ও পরিকল্পনা,
২. আন্তর্জাতিক,
৩. আইন বিষয়ক,
৪. কৃষি ও সমবায়,
৫. তথ্য ও গবেষণা,
৬. ত্রাণ ও সামাজকল্যাণ,
৭. দপ্তর,
৮. ধর্ম,
৯. প্রচার ও প্রকাশনা,
১০. বন ও পরিবেশ,
১১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি,
১২. মহিলা বিষয়ক,
১৩. মুক্তিযুদ্ধ,
১৪. যুব ও ক্রীড়া,
১৫. শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক,
১৬. শিল্প ও বাণিজ্য,
১৭. শ্রম ও জনশক্তি,
১৮. স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা,
১৯. সংস্কৃতি,
২০. স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন বিষয়ক।
২০০২ সালের কাউন্সিলের পর ২০০৬ পর্যন্ত যে সভাগুলো হয়েছে:
প্রেসিডিয়াম সভা-৫৫, কার্যকরী সংসদের নিয়মিত সাধারণ সভা-১৭, কার্যকরী সংসদের জরুরী সভা-৫১, সম্পাদকম-লীর সভা-১৭, মোট=১৪০।
উপদেষ্টাম-লী, তিনটি সেল ও সাব কমিটিগুলোর মিটিং, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক অগণিত হয়েছে। দেশের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বা উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি সভা করে সুপারিশ কেন্দ্রকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এবং করেছে। সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে, মতবিনিময় হয়েছে।
সমমনা রাজনৈতিক দল বিশেষ করে ১৪ দলের সাথে নিয়মিত বৈঠক হয়েছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। কোন কোন সময় ইস্যুভিত্তিক বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সুনির্দ্দিষ্ট এজেন্ডা দেওয়া হয়েছে। যেমন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিল তখন কমিটি করে দুর্যোগ মোকাবিলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০০৫ সালের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চারদলীয় জোট সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে জাতীয় কনভেনশন করা হয়েছে। এই কনভেনশন চলার সময় নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পেয়েছে।
আমি আমার দলের মনোনয়ন বিষয়ে ফিরে আসি।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সকল তথ্য সংগ্রহ করে নেই। এরূপ একজন সাবেক ভিসি ড. আলাউদ্দীন আহমেদ সংসদ সদস্যকে দায়িত্ব দেই। এর মধ্যে সকল ভোট কেন্দ্রের ফলাফল ডাটাবেজ করে রাখি। সেখান থেকে ৩০% ভাগের কম ভোট কোন কোন কেন্দ্রে আমরা পেয়েছি তা আলাদা করি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের সকল ভোট কেন্দ্রের ফলাফল থেকে ৩০% ভাগের কম ভোটপ্রাপ্ত কেন্দ্রের নামগুলো সংগ্রহ করি। এছাড়া কোন আসন, ইউনিয়নে কেন্দ্রে কি পরিমান ভোট বেড়েছে, কমেছে ইত্যাদি তথ্যও সংগ্রহ করে প্রত্যেক আসনের আলাদা ফাইল তৈরি করা হয়। ড. আলাউদ্দিন, কম্পিউটার পারদর্শী কয়েকজন কর্মী নিয়ে কাজ করেন।
এই ভোটারদের মধ্যে নারী ভোটার, পুরুষ ভোটার, প্রত্যেক উপজেলা ও ইউনিয়নের নামসহ সকল তথ্য সংগ্রহ করি। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতি ছয় মাস পর পর সমগ্র বাংলাদেশে সার্ভে করাই, তথ্য সংগ্রহ করি। এই তথ্য সংগ্রহের কাজ এককভাবে কাউকে দেই নাই। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে টিম করে দেই। শিক্ষকরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টিমে ভাগ করে দেন, যাঁরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারপর তারা ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম পর্যন্ত সফর করেন এবং তথ্য সংগ্রহ করেন। শিক্ষকদের এই একনিষ্ঠ, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের তথ্য সংগ্রহ অব্যাহত থাকে।
আর একটা গ্রুপ করা হয় সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত। বিভিন্ন সময় তাদের পূর্বের কর্মক্ষেত্র যার যেখানে ছিল সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আনেন। প্রাইভেট কোম্পানী-যারা তথ্য সংগ্রহ করার পেশায় নিয়োজিত এ ধরনের দুটো গ্রুপ একটা দেশি ও অন্যটা বিদেশি-এদের দ্বারাও তথ্য সংগ্রহ করাই। আমেরিকার একটা গ্রুপ তথ্য সংগ্রহ করেছিল সিট হিসেবে এলাকা ভিত্তিক। কোন দলের কোন সিটে সমর্থক বেশি, ভোটার বেশি ইত্যাদি সে তথ্যও সংগ্রহ করি।
কতকগুলো ফরম তৈরি করা হয়। কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম, দশটা প্রার্থী সম্পর্কে। মোট নম্বর ১০০ প্রত্যেক প্রশ্নের সাথে নম্বর নির্দ্দিষ্ট করা হয়। এভাবে কোন প্রার্থী কত নম্বর পেল তা তালিকা করা হয়।
দলের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের নামে একটা চিঠি জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পাঠানো হয়। উপজেলাকে বলে দেওয়া হয় ইউনিয়ন থেকে মতামত সংগ্রহ করতে। তাদেরকে কতকগুলো প্রশ্ন পাঠানো হয় প্রশ্নগুলোরও সার্বিক অবস্থা বিশেষ করে যোগ্য প্রার্থীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সকল তথ্য সংগ্রহ করে প্রথমেই আমি যে তিনশত প্রার্থীকে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছিলাম তাদের সাথে সভা করি। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ছোট ছোট গ্রুপ করে বসি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের ভোটের পরিমাণ ও প্রতিদ্বন্দীর সাথে কম বা বেশি ব্যবধান এবং ৩০% ভাগের কম ভোট কোন কোন কেন্দ্রে পেয়েছেন তার তালিকাটা প্রার্থীকে সরবরাহ করি আলোচনার সুবিধার জন্য।
এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকতে পারতেন। তাঁরা কখনো থাকতেন কখনো থাকতেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকার কেন্দ্রীয় নেতা এবং সাংগঠনিক সম্পাদককে উপস্থিত থাকতে হতো। তাঁরা সাক্ষাৎকার স্থানে অথবা পাশের কামরায় তাদের সুবিধমত থাকতেন। কোনো প্রশ্ন দেখা দিলে তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করতেন। প্রায় তিন থেকে চার মাস সময় লাগে এই সাক্ষাৎকারের। প্রতিটি প্রতিবেদন দিয়েও সাহায্য করেন। যা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হয়। পরবর্তী বৈঠক শুরু করি প্রতিটি জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের নেতাদের সাথে।
প্রতিদিন সকাল ৯টায় বৈঠক শুরু হতো কয়েকটা এলাকা নিয়ে। জেলা ও উপজেলার সংখ্যা হিসেবে।
২০০৬ সালের জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩/এ সড়কের অফিসে সভা হয় ৪৮০ উপজেলা, পৌরসভাগুলো ও ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ বৈঠক শুরু করি। যাতে সকলে মন খুলে কথা বলতে পারে তার জন্য ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে নেওয়া হয়। সভাপতিম-লীর মাননীয় সদস্যবৃন্দ, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকতেন। তাঁদের সময় ও সুযোগমতো যে যখন পারতেন থাকতেন। নিজ এলাকা হলে তাঁদের আগ্রহ বেশি থাকত। তবে অনেকে নিয়মিত থেকে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন এ বৈঠক চলে।
দশটা প্রশ্ন, কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থীর নাম এবং কোন প্রার্থীকে কত নম্বর দিবেন তা উল্লেখ করে দশটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। শুরুতেই নেতাদের হাতে ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র দেওয়া হতো যা তারা পূরণ করে জমা দিতেন। এক ঘন্টা সময় ধরা হতো। কমপক্ষে পাঁচ জন প্রার্থী সম্পর্কে তথ্য ও নম্বর দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এরপর পর্যায়ক্রমে সকলের বক্তব্য দেবার সুযোগ দেওয়া হতো এবং সকলেই মনখুলে বক্তব্য দিতেন। আমরা তা নোট করে নিতাম। চা, নাস্তা, দুপুরের খাবার বিকেলের চায়ের ব্যবস্থা থাকত।
সবাই মন খুলে সংগঠন, নির্বাচন, প্রার্থী, দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা সকল বিষয়েই আলোচনা করেছেন। এই সকল তথ্য সংগ্রহ করে কোন কোন এলাকায় কোন কোন প্রার্থী কত নম্বর পেল ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হয়।
একটা বিষয় খুবই লক্ষণীয় ছিল আমাদের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের প্রার্থী সম্পর্কে মূল্যায়ন যা পেয়েছিলাম আর বিভিন্ন পর্যায়ে সার্ভে করে যে রিপোর্ট পেয়েছি তা ৯০% ভাগের ওপর মিল ছিল।
সকল প্রতিবেদন তথ্য দ্বারা রিপোর্ট তৈরি করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টরি বোর্ডের নিকট উপস্থাপন করি। সাথে সাথে সকল রিপোর্টগুলোও হাতের কাছে রাখি। সকলের হাতেই একটা করে খাতা দিয়ে দেই যাতে বোর্ড সদস্যরা তাদের মতামত লিপিবদ্ধ করতে পারেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি বোর্ড বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মনোনয়ন প্রথমে ঠিক করে।
আগ্রহী প্রার্থীদের কাছে নির্বাচনী ফরম বিক্রি করা হয়। ফরম বিক্রি করা হয়। ফরম ক্রয় ও জমা দেওয়া হয়। প্রার্থী যাঁরা হতে চান তাঁদের ফরম কিনতে হয় টাকা জমা দিয়ে এবং রশিদ নিতে হয়। এভাবে প্রথমে নিজেদের দলের মনোনয়ন নির্দ্দিষ্ট করি।
১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এর নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে তিনশত আসনকে চারভাগে ভাগ করি।
এ, বি, সি ও ডি। এই চার ভাগে ভাগ করে রাখি এ কারণে যে নির্বাচনে ঐক্য করতে হলে কোন সিট কি অবস্থায় আছে তা জানতে সুবিধা হবে।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ঐক্য, মহাজোট ঐক্যে সিট ভাগের সময় এই তথ্যগুলো কাজে আসবে। এই হিসাব বিবেচনায় রেখেই সিট ভাগ করা হয়েছিল। যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ড দলের মনোনয়ন ঠিক করে সেখানে মনোনয়ন বাণিজ্যের সুযোগ কোথায় ছিল? পার্লামেন্টারি বোর্ড এগারটা (১১) সভা করে। তারপর নিজ দলের আসনে প্রার্থী ঠিক করে। এরপর ঐক্য, মহাজোট ঐক্য করা হয়।
১৪ দলের থেকে রাশেদ খান মেনন, অধ্যাপক মোজাফফর আহম্মদ, হাসানুল হক ইনু, নুরুল ইসলাম, দিলীপ বড়–য়াসহ সকল নেতার নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের তালিকা সরবরাহ করেন।
জাতীয় পার্টি ও এলডিপির কর্নেল অলির পক্ষেও তালিকা দেওয়া হয়। ঐক্যের সিট বন্টন জলিল সাহেবের বাসায় বসে করা হয়। সেখানে সকল তথ্যসহ ড. আলাউদ্দীনের টিমও সহযোগিতা করার জন্য উপস্থিত থাকতেন। শরীক দলের প্রতিনিধিরা মিলে মহাজোটের নমিনেশন ঠিক করে দেয়। এভাবে মহাজোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ১/১১ পূর্বে যখন নমিনেশন ঠিক করা হয় তখন অবশ্য ড. কামাল হোসেন ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দলও এই মহাঐক্যজোটে নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা দেয়। তবে ২০০৮ এর নির্বাচনের ঐক্যে আর তাঁরা ছিলেন না।
প্রতিটি সভায় বক্তাদের বক্তব্যেও নোট নেয়া হতো। আমি নিজের নোট নিয়ে থাকি। সবসময়ে দলের একজন সমস্যা দ্বারা মিনিটস লেখা হয়। প্রদত্ত প্রতিবেদন, প্রশ্নের উত্তর থেকে প্রাপ্ত প্রার্থীর নাম ও প্রাপ্ত নম্বর নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী খাতায় লেখা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারি বোর্ডেও সকল তথ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে যা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক হয়। দলের কার্যকরী সংসদসহ সকল সভায় পূর্ব সভার মিনিটস অসুমোদন করাতে হয়। কোনো সংশোধন থাকলে তা উত্থাপন করা এবং সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আর কোন কোন অরাজনৈতিক দল এত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয় কিনা তা জানতে ইচ্ছা করে।
কারাগার, ঢাকা
তারিখ : ৭ জুন ২০০৮
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।