নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১১ পিএম, ১৩ জানুয়ারী, ২০১৯
কিছুদিন থেকেই ওজন বাড়তে শুরু করেছে হাফিজ সাহেবের। এদিকে শরীরে বেশ অবসন্নবোধ হয়, ক্লান্তিভাব আসে। হঠাৎ খেয়াল করলেন চুল পড়ছে বেশি, ত্বকও কেমন যেন রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে ভয় পেলেন যখন টের পেলেন তার গলার নিম্নাংশ ফুলতে শুরু করেছে। প্রথমে গুরুত্ব দিলেন না। পরে স্ত্রী আর সন্তানদের চাপে যেতে হলো চিকিৎসকের কাছে। টিএসএইচ পরীক্ষা করালেন চিকিৎসক, হাফিজ সাহেবের থাইরয়েড ধরা পড়লো। হঠাৎ এমন রোগ কেন তা ভেবে কোনো কূলকিনারা পেলেন না তিনি। চিকিৎসক জানালেন তার এই সমস্যাটি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। গুরুত্বের অভাবে রোগ এখন বেশ জটিল পর্যায়ে। তার রোগের পরীক্ষা আরও আগেই হওয়া দরকার ছিল।
ঠিক এই কারণেই নিজ উদ্যোগে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিজেকেই করতে হবে। কোনো সামান্য উপসর্গ বা সচেতনতার খাতিরেই হেলথ চেকআপগুলো করা দরকার।
কেন করাবেন চেকআপ
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনযাপনের ধরনই বদলে গেছে। আর সে কারণে শরীরে দানা বাঁধে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। বর্তমান ব্যস্ততার যুগে আমরা নিজেদের জন্য তেমন একটা সময়ই রাখতে পারি না। ঘরের তৈরি খাবারের পরিবর্তে খেতে হয় বাইরের খাবার। সেই সঙ্গে মানুষের মধ্যে বেড়েছে উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা। আর আমরা এখন সাধারণত কায়িক পরিশ্রম খুবই কম করি, হাঁটাহাঁটিও কম করি। ফলে বিভিন্ন অসুখবিসুখ বেশি হচ্ছে। এছাড়া অসুস্থ হওয়ার কিছু বংশগত কারণও অবশ্যই রয়েছে। এই যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি।
একটা কথা আমাদের মানতেই হবে যে, রোগবালাই শরীরে বাসা বাঁধার পরে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করাটা অবশ্যই শ্রেয়। তাই বছরে একবার হলেও চিকিৎসকের কাছে যাবেন চেকআপ করাতে। প্রাথমিক অবস্থায় কোনো রোগ নির্ণয় সম্ভব হলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই সুস্থ জীবন এবং দীর্ঘায়ূর জন্য নিয়মিত চেকআপ করতে হবে।
আমাদের বেশিরভাগ মানুষের প্রবণতা হচ্ছে রোগ হওয়ার পর তারপর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। তবে আগে থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিৎ। যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক আকার ধারণ করার ঝুঁকি কমে যায়। এজন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থেকে সতর্ক করে দেয়। ফলে আগে থেকেই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই মানুষের ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত চেকআপ জরুরি।
কী কী চেকআপ করবেন
আপনার রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাপ, কিডনির কার্যক্রম এগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এছাড়া কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার পরিমাণ, হিমোগ্লোবিন টেস্ট, কিডনি, আই-চেকআপ করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চতা এবং ওজন দেখে ডায়েট প্রেসক্রিপশন করাতে হবে।
১. নিয়মিত আপনার শরীরের হিমোগ্লোবিন, সাদা কণিকা (সেল) এবং প্লেটলেট পরীক্ষা করান। এটা সিবিসি চেকআপ। রক্ত যন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা হয়। হিমোগ্লোবিনের সর্বনিম্ন মাত্রা ১৩ গ্রাম পার ডিএল। এর নিচে নামলে রোগী অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ভাইরাস জ্বরে প্লেটলেটের পরিমাণ বেড়ে গেলে ডেঙ্গুর আশঙ্কা তাকে।
২. ডায়াবেটিসের পরীক্ষা নিয়মিত করাতে হবে। গত তিনমাসে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কেমন ছিল জানার জন্য এইচবিএওয়ানসি (HBA1C) পরীক্ষা। এইচবিএওয়ানসির মাত্রা ছয় এর নিচে হলে ভালো হয়, সাত পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। সাত দশমিক আট পর্যন্ত অতিরিক্ত এবং এর উপরে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই ধরা হয়। অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন।
৩. শরীরে থাইরয়েড গ্রন্থির পরিমাপ দেখার জন্য রয়েছে টিএসএইচ (TSH) পরীক্ষা। শরীরের হাইপারথাইরোয়েডিজম আছে কি না সেটি নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা উচিৎ।
৪. রক্তে চর্বির পরিমাণও পরীক্ষা করানো উচিৎ। এজন্য সিরাম লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা। এর মাধ্যমে ট্রাইগ্লিসারাইট, লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল), হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রটিন (এইচডিএল) এবং সম্পূর্ণ কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখা হয়। কোলেস্টেরলের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে, তাই নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা করান।
৫. নিয়মিত কিডনির কার্যক্ষমতা নির্ণয় করা উচিৎ। কিডনি ফাংশন টেস্টে রক্তের ইউরিয়া, সিরাম ক্রিয়েটিনিন, সিরাম ইলেকট্রোলাইটস এগুলো দেখা হয়। কিডনির রোগের ক্ষেত্রে সিরাম ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তৈরি হয়। কিছু কারণে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন, রক্তক্ষরণ, প্রভৃতি কারণে ইউরিয়া এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বাড়তে পারে। টেস্টে অস্বাভাবিক মাত্রা দেখা দিলে নেফ্রোলোজিস্টের কাছে যেতে হবে।
৬. সিরাম ইউরিক এসিড পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তের ইউরিক এসিডের পরিমাণ দেখা হয়। ইউরিক এসিড বাড়লে শরীরে তীব্র ব্যথা হতে পারে। ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যান। নয়তো কিডনিতে এবং গাট বা জয়েন্টে সমস্যা হতে পারে।
৭. নিয়মিত লিভার ফাংশনও পরীক্ষা করিয়ে লিভারের কার্যক্ষমতা দেখা হয়। এর মধ্যে সিরাম বিলুরুবিন, এসজিপিটি (SGPT) ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। কেউ জন্ডিসে আক্রান্ত কি না এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়। সঙ্গে সিরাম অ্যালবুমিনও দেখা হয়। যা স্বাভাবিক তাপমাত্রার নিচে থাকলে শরীরে পানি আসতে পারে।
৮. আমাদের কাছে হেপাটাইটিস বি একটি মহামারি রোগ। এইচবিএসএজি (HBSAG) এবং অ্যান্টিএইচবিএস (HBS) পরীক্ষার মাধ্যমে হেপাটাইটিস বি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় এটি সক্রিয় বা নিস্ক্রিয় অবস্থায় ধরা পড়লে অবশ্যই গ্যাসট্রোএনটেরোলোজিস্টের কাছে যেতে হবে।
৯. নিয়মিত ইসিজি(ECG) করানো দরকার। এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের অবস্থা পরীক্ষা করা হয়। মূলত এরিদমা বা ইসক্যামিক হৃদরোগ আছে কি না এই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা হয়।
১০. শরীর ঠিক রাখতে নিয়মিত এক্সরে চেস্ট করান। এতে বুকের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতঙ্গ কী অবস্থায় থাকে সেটি দেখা যায়। শ্বাসনালীর সংক্রমণ বা নিউমোনিয়া শনাক্তকরণেও এই পরীক্ষা। এছাড়া হৃদযন্ত্র স্বাভাবিকের চেয়ে বড় কি না, ফুসফুসে পানি জমাও পরীক্ষা হয়। আর আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে পিত্তথলিতে পাথর, ভেতরের অঙ্গগুলোর সঠিক গঠন দেখা হয়। গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের গঠনগত অবস্থা বোঝার জন্য নিয়মিত আল্ট্রাসনোগ্রাম করান।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/এমআর
মন্তব্য করুন
ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে সহজ নিয়মিত হাঁটা। কতুটুকু হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে– খুব বেশি নয়, দিনে কমপক্ষে ৭ হাজার কদম হাঁটার অভ্যাসই অকাল মৃত্যুঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
এছাড়া, দিনে কমপক্ষে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ ধাপ হাঁটলে হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস পায়। তবে এর চেয়ে বেশি হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
নতুন গবেষণা আরও বলা হয়েছে, যারা দিনে ৯ হাজার ধাপ হাঁটেন, হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে তাদের মৃত্যুঝুঁকি হ্রাস পায় ৬০ শতাংশ। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘গালফ নিউজ’ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
সম্প্রতি ‘জার্নাল অব আমেরিকান কার্ডিওলজি’তে প্রকাশিত এই গবেষণাটি পূর্বের অন্যান্য ১২টি গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে করা হয়েছে। এটিকে ‘মেটা অ্যানালাইসিস’ বা ‘মেটা স্টাডি’ বলা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৭ হাজার ধাপ হাঁটলে হৃদরোগ কমার সম্ভাবনা প্রায় ৫১ শতাংশ। এই গবেষণায় পরামর্শ দেয়া হয়েছে, দিনে ২৫০০ থেকে ২৭০০ কদম হাঁটলে স্বাস্থ্যের পক্ষে প্রাথমিক উপকারিতা শুরু হয়। পরিমিত হাঁটার এই অভ্যাস রক্তে শর্করার বৃদ্ধি কমাতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করে।
নতুন গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ২৭০০ কদম হাঁটলে হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায় ১১ শতাংশ। প্রতিদিন ৭০০০ ধাপ হাঁটা এটিকে ৫১ শতাংশে উন্নীত করে। আর প্রতিদিন যদি ৯০০০ কদম হাঁটা যায়, তাহলে হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকি হ্রাস পায় ৬০ শতাংশ।
সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন আপনার কত কদম হাঁটা উচিত? এই প্রশ্ন যদি আপনার মনে এসে থাকে, তাহলে তার নিশ্চিত উত্তর নিয়ে হাজির হয়েছে নতুন এই গবেষণা।
মন্তব্য করুন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নতুন
উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক বলেছেন, কোয়ালিটিফুল চিকিৎসক তৈরিতে আমরা কোনো
আপস করবো না। ভবিষ্যতের জন্য চিকিৎসক তৈরিতে মানের দিক থেকে কোনো ছাড় না দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।
গতকাল রোববার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে এক বৈজ্ঞানিক
অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই অধিবেশনের
আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক
ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ।
উপাচার্য বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে
৪ হাজার ৮০৭ জন রেসিডেন্ট চিকিৎসক আছেন। এরমধ্যে ১০০ জন বিদেশি রেসিডেন্ট। তাদের ডিগ্রিটা
যেন ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেওয়া হয়। আমরা তাদের পরীক্ষার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবো
না’।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে এনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি এখানকার দায়িত্ব চেয়ে নেইনি। আমার ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভরসার পাশাপাশি আমার প্রতি ওনার কিছু চাওয়াও আছে। আমি চেষ্টা করবো এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণায় বিশ্বে একটি অনুকরণীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়তে’।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক
মন্তব্য করুন
অপারেশন থিয়েটারে হেঁটে গিয়েছিল শিশু তাসনিয়া, পরে নিথরদেহ পেল বাবা। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে তনয়া (১২) নামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর আদ-দ্বীন হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে গিয়ে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যু হয় গত ৭ জানুয়ারি। শুধু তাই নয়, রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করতে গিয়ে মৃত্যু হয় দশ বছর বয়সী ছেলে আহনাফ তাহমিনের।
শুধু তাসনিয়া কিংবা আহনাফের মতো কোমলমতি শিশুই নয়, দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে, ভুল আর অবহেলা জনিত চিকিৎসায় মৃত্যুর মিছিল। প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারাদেশের কোথাও না কোথাও থেকে এমন খবর আসছে। গত এক বছর ধরে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটছে। এর মাঝেই বিশ্বজুড়ে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।
বলা হয়ে থাকে, একজন মানুষের সুখের আসল সূত্র সত্যিকার অর্থেই তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপর নির্ভর করে। মানুষ হিসাবে সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে একটি ভালো সামাজিক অবস্থানে স্থিত থাকাই সকলের আরাধ্য। কিন্তু তবুও পৃথিবীর বহু মানুষ যেমন নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন তেমনি নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কেও তারা অসচেতন। আবার পুঁজিবাদের বিকাশের কারণে স্বাস্থ্যসেবা লাভ ক্রমশ অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে। দরিদ্র মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা থেকে।
আর এ লক্ষ্যেই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে ও সকলের জন্য স্বাস্থ্য পরিসেবার সুযোগ বৃদ্ধিতে ১৯৫০ সালের ৭ এপ্রিল থেকে পালন করা হচ্ছে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস'। ১৯৪৮ সালের ৭ এপ্রিল গঠন করা হয় জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করা এবং জীবন রক্ষার শপথে পরিচালিত সংস্থাটির প্রথম সম্মেলনেই ৭ এপ্রিল থেকে প্রতি বছর নিয়মিত 'বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস' পালন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিপাদ্য বিশ্ববাসীর সামনে নিয়ে আসে, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রত্যেক দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থাগুলো নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। অসম এই পৃথিবীতে সকলের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর বিশ্ব গড়ার ও মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ বৃদ্ধি করাই এ দিবসটি উদযাপনের মূল উদ্দেশ্য। একদিকে যেমন নিত্য নতুন রোগ শোক মানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। অন্যদিকে গরীব মানুষের স্বাস্থ্য সেবা লাভের পথ হচ্ছে রুদ্ধ। স্বাস্থ্য সেবা এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। এখন থেকে বঞ্চিত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান এখন এই বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করুন
পূর্ণাঙ্গরূপে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল শিগগিরই চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক।
শনিবার (৬ এপ্রিল) আয়োজিত বিএসএমএমইউয়ের অধীন এই সুপার স্পেশালাইজড
হাসপাতাল দ্রুত পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সভা শেষে
তিনি এ কথা জানান।
এসময় উপাচার্য জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দেশের শ্রেষ্ঠতম
চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়
যোগ্য ও দক্ষ জনবল নিশ্চিত করা, সামগ্রিক যন্ত্রপাতির জোগান নিশ্চিত করা, সঠিকভাবে
পরিচালনা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আজ শনিবার উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন
মো. নূরুল হক চার
ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে অবস্থান করেন। এসময় তিনি অ্যাক্সিডেন্ট
অ্যান্ড ইমারজেন্সি সেন্টার, কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সেন্টার,
ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি, হোপাটোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি,
প্যানক্রেটিক ডিজিস অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার, কার্ডিওভাসকুলার অ্যান্ড
স্টোক সেন্টার, প্যাথলজি ল্যাব, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, ব্যবস্থাপনা বিভাগ পরিদর্শন
করেন। পরে তিনি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সভায় মিলিত হন।
এসময় উপাচার্যের সঙ্গে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম
আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন, উপ-পরিচালক (প্রকল্প) সহযোগী
অধ্যাপক ডা. নূর-ই-এলাহী মিম প্রমুখ।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নূরুল হক
মন্তব্য করুন
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর, বাংলা নববর্ষ ও সাপ্তাহিক ছুটি
মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটির কবলে পড়তে যাচ্ছে দেশ। এ অবস্থায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে
হাসপাতালগুলোতে কর্মরতদের ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রোববার (৩১ মার্চ) ডা. আবু হোসাইন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত এক
নির্দেশনায় বলা হয়, ছুটিকালীন কর্মস্থলে পর্যাপ্ত জনবল ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার
জন্য ঈদের
আগে ও পরে সমন্বয় করে জনবলকে পর্যায়ক্রমে ছুটি দেয়া যেতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিরবিচ্ছিন্ন জরুরি চিকিৎসা কার্যক্রম
ও জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অনুকূলিতভাবে ছুটি মঞ্জুর করবেন।
সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালককে অবহিত করে কেবল ঈদের
ছুটির সময়ে নিজ জেলার মধ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনবল সমন্বয় করতে পারবেন।
জরুরি বিভাগে সার্বক্ষণিক চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করার পাশাপাশি
জরুরি বিভাগ ও লেবার রুম, ইমারজেন্সি ওটি সার্বক্ষণিক চালু রাখতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আন্তঃবিভাগে ইউনিট প্রধানগণ প্রতিদিন
তদারকি করবেন। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমূহে জরুরি ল্যাব, এক্স-রে সেবা সার্বক্ষণিক চালু
রাখতে হবে।
ছুটি শুরু হওয়ার আগেই ছুটিকালীন সময়ের জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ, আই ডি
ফ্লুয়িড কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী মজুদ ও তাৎক্ষণিকভাবে সরবরাহের ব্যবস্থা
রাখতে হবে। এক্ষেত্রে স্টোর কিপার অথবা ছুটিকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফকে অবশ্যই নিজ
জেলা ও উপজেলায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে, অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস সার্বক্ষণিক চালু
রাখতে হবে।
ছুটিকালীন হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী
সংস্থাকে আগাম পত্র দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদেরকে ছুটিকালীন সেবা
প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং ঈদের
দিন কুশল বিনিময় করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠান প্রধান ছুটি নিলে অবশ্যই বিধি মোতাবেক কাউকে দায়িত্ব
দিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে; একইসঙ্গে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ঈদের দিন রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন
তদারকি এবং রোগীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
অপারেশন থিয়েটারে হেঁটে গিয়েছিল শিশু তাসনিয়া, পরে নিথরদেহ পেল বাবা। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে তনয়া (১২) নামের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর আদ-দ্বীন হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খৎনা করাতে গিয়ে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যু হয় গত ৭ জানুয়ারি। শুধু তাই নয়, রাজধানীর মালিবাগের জেএস হাসপাতালে সুন্নতে খৎনা করতে গিয়ে মৃত্যু হয় দশ বছর বয়সী ছেলে আহনাফ তাহমিনের।