নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৩ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যে নতুন করে যুক্তে হলো ক্যানসার গবেষণা। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্নয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন হয়েছে বাংলাদেশে। এই পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আগে থেকেই ক্যানসার শনাক্ত করা যাবে। আর ক্যানসার আগে থেকে শনাক্ত হলে এর চিকিৎসাও হবে সহজ। ক্যানসার শনাক্তকরন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। ইতিমধ্যে ক্যানসার নির্ণয়ের গবেষণার ফলাফলের পেটেন্টের জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে আবেদনও করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) এর আওতায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে এক দল গবেষক নন-লিনিয়ার অপটিকস গবেষণায় ক্যানসার শনাক্তকরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এ উদ্ভাবনের বিস্তারিত জানাতে আগামীকাল বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করবে হেকেপ। এ উদ্ভাবনের বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ।
গবেষণা পদ্ধতি
এই গবেষণায় প্রধানের দায়িত্বে আছেন অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক। তিনি এই পুরো গবেষণা বিষয়ে গণমাধ্যমককে বলেন, গবেষণাটি মূলত ক্যানসার নির্ণয়ের সহজ এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি। তাঁরা হেকেপের সহায়তায় এই ভিন্নধর্মী গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। হেকেপের দেশি এবং বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গবেষণা কার্যক্রম দেখে ইউএসএ পেটেন্টের জন্য আবেদন করতে বলেন। আর এ ধরনের গবেষণা প্রথম বলে আগে এই বিষয়ে কোথাও তথ্য প্রকাশ না করার জন্য বলেন। আর এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
গবেষণার পুরো পদ্ধতি সম্পর্কে জানা গেছে, একজন রোগীর শরীরে কোনো যন্ত্র ব্যবহার না করে বর্তমান প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে নতুন একটি পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করা হবে। ফলে সম্ভাব্য ক্যানসারের ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। প্রাথমিক পরীক্ষার সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে।
এই ফলাফলের ফলে গত ৯ জুলাই ‘Method and system based on non-linear optical characteristics of body fluids for diagnosis of neoplasia’ শীর্ষক পেটেন্টের আবেদন বাংলাদেশ ও ইউএসএ পেটেন্ট অফিসে জমা দেওয়া হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ নতুন পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ক্যানসার রোগীদের রক্তে এমন কিছু অনুসন্ধান করা যাবে যাতে নন-লিনিয়ার ধর্মটি ক্যানসার রোগ বিষয়ে ধারণা দিতে পারবে। আর প্রকল্পটি যতি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, ক্যানসার রোগীর রক্ত ছাড়াও অন্য যেকোনো নমুনার নন-লিনিয়ার ধর্ম সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা যাবে। বর্তমানে রোগের উপসর্গ দেখা দিলেই রোগীরা চিকিৎসা নিতে যায়। সেক্ষেত্রে পার্টিকুলার ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়। তার মধ্যে বায়োপসি অন্যতম। এখন আশা করা যাচ্ছে যে, রক্ত পরীক্ষা দিয়েই রোগ নির্ণয় সম্ভব হলে দেশীয় চিকিৎসাপদ্ধতি অনেকটা এগিয়ে যাবে।
গবেষণার শুরু থেকে সম্ভাবনা
গত ২০১৬ সালের মার্চে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি হেকেপের আওতায় সিপি-৪০৪৪ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নন-লিনিয়ার বায়ো-অপটিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি গড়ে ওঠে। এ ল্যাবরেটরিতে ক্যানসার আক্রান্তদের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার ধর্মের সূচক পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়েছে। এতে ক্যানসার রোগ নির্ণয়ে বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় বাড়তি রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হয় না। এর আগের বছরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-লিনিয়ার অপটিকস রিসার্চ দলটি গবেষণার ব্যবহারিক দিক নিয়ে কাজ শুরুর কথা ভাবে। দলটি হেকেপের উইন্ডো ফোরের আওতায় ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রি সমন্বিত গবেষণার জন্য একটি উদ্ভাবনীমূলক পরিকল্পনা জমাও দেয়। পরিকল্পনাটি ছিল ক্যানসার রোগাক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের নন-লিনিয়ার ধর্ম পরিমাপ করে ক্যানসারের সম্ভাব্য উপস্থিতি ও অবস্থা চিহ্নিত করার একটি প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করা। সহজ কথায় বলতে, প্রচলিত বায়োকেমিক্যাল ক্যানসার নির্দেশক বায়োমার্কারের পরিবর্তে একটি অপটিক্যাল বায়োমার্কার উদ্ভাবন করাই তাদের উদ্দেশ্য। এই গবেষণার সুফল কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এখন অপেক্ষা শুধু সেটাই।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন