নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২১ জুলাই, ২০১৭
পয়লা জানুয়ারি, ২০৩০ সাল আপনি ঘুম থেকে উঠলেন। বাইরে কনকনে ঠান্ডা। অথচ ঘরের মধ্যে আরামদায়ক উষ্ণতা, মন যেমনটা চাচ্ছিল। আপনার মনের কথা বুঝে ঘরের তাপামাত্রা ঠিক করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এয়ার কন্ডিশনার ‘নেস্ট’। এটি জানে ঠিক কখন আপনার ঘুম ভাঙবে, এবং ঠিক তখনই আপনার মন ও শরীরের অবস্থা বুঝে পরিবেশ আরামদায়ক করে তুলবে। আর এই নেস্ট তৈরি করেছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গুগল।
আপনি রাস্তায় বের হলেন, একটি স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি আপনাকে আপনার কর্মস্থলে নিয়ে গেলো। এই স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সিটিও গুগলের তৈরি।
দুপুরের খাবারের পর আপনি আস্তে আস্তে হাঁটছেন, আপনার চোখে গুগল গ্লাস ২.০। সে বুঝতে পারে এটা শীতকাল। সে আরও জানে আপনি কোথায় কফি খেতে পছন্দ করেন, সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে নোটিফিকেশন দিল যে পাশেই একটি ক্যাফে রয়েছে, আপনি সেখানে যেতে পারেন।
এভাবেই ২০৩০ সালের পৃথিবীতে গুগল হবে মানুষের প্রতিদিনের প্রায় প্রতিটি কাজের সঙ্গী। আগামী এক যুগের মধ্যে পৃথিবীর সব কিছু চলে আসবে ইন্টারনেট সংযোগ এর আওতায় (ইন্টারনেট অব থিংস)। বেশির ভাগ যন্ত্রাংশের থাকবে নিজস্ব সেন্সর, যেগুলো সংযুক্ত থাকবে ক্লাউড সার্ভার এর সাথে। এগুলোর দ্বারা ব্যবহারকারির চলাফেরা, আচার-আচরণ, জীবন-যাপন, পছন্দ- অপছন্দ ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহ করবে গুগল, যাতে করে ব্যবহারকারির মনের মত করে সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। আর ওই পৃথিবীতে রাজত্ব করবে গুগল।
কেমন হবে গুগল ২০৩০ সালে? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আজকের তথ্য-প্রযুক্তির পৃথিবী অনেকটা পরিষ্কার অনুমান করতে পারে। গুগলের একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা ল্যরি পেজ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “গুগল যে শুধু সার্চ ইঞ্জিন নিয়েই ব্যস্ত তা নয়, বরং আমরা একটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি”।
ল্যরির ভাষ্য অনুযায়ী, গুগল সম্প্রতি সময়ে একটি “বিশ্ব-মস্তিষ্ক” তৈরিতে ব্যস্ত, যেটা হয়তো একসময় খেয়াল রাখবে সমগ্র মানব জাতির, সকল জায়গায়, সকল সময়ে। আর ২০৩০ সাল নাগাদ যদি গুগল এটা করে ফেলে, এটা হয়তো গণ্য হবে মানব জাতির জন্য এ যাবত কালের সর্বোচ্চ অর্জন, একই সঙ্গে সবচেয়ে ভয়াবহ অর্জন বলে ।
পক্ষে যুক্তি
ব্যাখ্যা করে হয়তো বলতে হবেনা, ‘বিশ্ব মস্তিষ্ক’ কীভাবে আমাদের জীবনকে আরো সহজ করে তুলবে। আমরা বলে ওঠার আগেই পেয়ে যাবো অনেক সুযোগ সুবিধা, পরামর্শ। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কারণে জ্বালানির অপচয় কমবে ঈর্ষণীয় ভাবে। মানুষ পাবে উন্নত জীবন যাত্রা।
তাহলে সমস্যা কী?
বিপক্ষে যুক্তি
যার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেনা, সে সৃষ্টি করে একনায়কতন্ত্র। শুধু জয়ীর জয়গান বাজতে থাকে সব জায়গাতে। যেমন ফেসবুক, সর্ববৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যার আছে ১.৮৬ বিলিয়ন ব্যবহারকারী। ৩১৯ মিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে টুইটার যেন ফেসবুক এর ধারে কাছেও নেই। তেমনি গুগল পৃথিবীর ৬৫ শতাংশ সার্চ সম্পর্কিত তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি সব সার্চ ইঞ্জিন মিলে ৩৫ শতাংশ এর তদারকি করছে। এখানেই তথ্যপ্রযুক্তিতে একনায়কতন্ত্রের সৃষ্টি। ভেবে দেখুন কতটা কঠিন হবে আপনার জন্য যদি কখনও আপনাকে গুগল ছেড়ে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে হয়, যেখানে সকল যন্ত্রই গুগল এর নিয়ন্ত্রণে। ইমেইল, ডকুমেন্টস ইত্যাদি স্থানন্তর করা, এন্ড্রয়েড বেস্ড(গুগলের অপারেটিং সিস্টেম) স্মার্টফোন বিক্রি করে আইফোন কেনা, ঘুম থেকে উঠে ঠাণ্ডায় কাপতে থাকা কারণ নতুন এয়ার কন্ডিশন জানেনা আপনার ঘুম থেকে ওঠার সময় এবং উষ্ণতার মাত্রা, এই সব কিছু আপনার জীবন কে দুর্বিষহ করে তুলবে। তাই আপনি বাধ্য হয়ে গুগল এর সাথেই থাকবেন।
জনপ্রিয় সিনেমা টারমিনেটর এ আমরা দেখেছি কীভাবে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষকে তার হুমকি মনে করে গোটা মানবজাতিকে মেরে ফেলার পায়তারা করে। মেট্রিক্স সিনেমাতে আমরা দেখেছি যে আমাদের জীবন আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি করা কৃত্রিম জগত, যার নিয়ন্ত্রণ রোবটদের হাতে। রজনীকান্ত খ্যাত হিন্দি সিনেমা ‘রোবট’ এ দেখিয়েছে যে একটি রোবট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পেয়ে ভালোবেসে ফেলে এক মানবীকে। তাকে পাওয়ার বাসনায় শুরু করে ধ্বংস-যজ্ঞ। এই সম্ভাব্য হুমকিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিন্স ও আমাদের এর জানান দিয়েছেন। যখন আমাদের সব কিছুই “বিশ্ব-মস্তিষ্ক” নিয়ন্ত্রণ করবে তখন এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায়না।
সম্প্রতি, ২০০ মানুষকে গুগল সেবা থেকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে কারণ তারা প্রতারণা করে পুনরায় বিক্রি করছিল গুগলের পিক্সেল স্মার্ট ফোন এর নকল ভার্সন। এই মানুষগুলো একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখল যে তারা তাদের জিমেইল এ লগ ইন করতে পারছে না, গুগল ডকুমেন্ট এ যেতে পারছে না। ধরুন তারা যদি আগামী বছরগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়, হয়ত দেখবে গুগল এর স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্সি তাদের যাত্রা করতে অনুমতি দিচ্ছেনা, প্রয়োজনীয় অ্যাপ ব্যবহার করতে পারছে না আরও অনেক কিছু। অন্যভাবে বলা যায় “ডিজিটাল মৃত্যু”।
যদিও কিছুদিন পর মানুষের প্রতিবাদের ভিত্তিতে গুগল নিষিদ্ধতা তুলে নিতে বাধ্য হয়, কিন্তু এই ঘটনা আমাদের অনুধাবন করাতে সক্ষম যে, গুগল আমাদের উপর কতটা ক্ষমতার অধিকারী হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে।
সব কিছুর সংক্ষিপ্ত করে যা বলা যায়, তা হলো, গুগলের সেবা প্রদান করতে মানতে হয়না তেমন কোন আইন এর ঝক্কি ঝামেলা। সেবার মান এ সমতা রাখারও কোনো অঙ্গিকার নামার উল্লেখ নেই কোথাও। আমাদেরকে প্রযুক্তি নির্ভর করার মাধ্যমে গুগল দিন দিন আর ক্ষমতাবান হচ্ছে। তাই আমাদের এখনি একটি আইনি ভিত্তি দার করাতে হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় যে গুগল তাঁর সেবায় রাখছে সমতা। কারো গোপন তথ্য নিয়ে যেন তাকে ব্ল্যাক মেইল না করা হয়, যেকোনো অসঙ্গতিকে যেন উচ্চস্বরে প্রতিহত করা যায় এই সবকিছু উল্লেখ থাকবে আইনি নথিতে।
পরিশেষে, পৃথিবী একসময় “গুগল পৃথিবী” তে পরিণত হবে। এই সব কিছু এই জন্য বলা হচ্ছে না যে গুগল আমাদের ক্ষতি করছে। তবুও সম্ভাব্য পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করা আমাদের সবারই উচিত। আর আজ গুগল না করলে, কাল অন্য কেউ করবে। আমাজন, ফেসবুক, অ্যাপেল ইত্যাদি প্রতি নিয়তই সেই চেষ্টা করছে। একসময় আমরা যেনো কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি না হয়ে যাই তার ভিত্তি কি এখনই তৈরি করা উচিত নয়!
সোর্সঃ ফিউচারইজম ডট কম।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন