নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ পিএম, ১৪ জুন, ২০২০
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে শুরু থেকে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার করছে উন্নত বিশ্ব। করোনার সংক্রমণ ঠেকানো, কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ, সচেতনতা তৈরি থেকে শুরু করে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর জন্য এই সমস্ত প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। চলুন জেনে নেই এমন কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ে।
নন–কন্টাক্ট ইনফ্রারেড থার্মোমিটার
নন ইনভেসিভ এবং দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় নিরাপদ দূরত্ব থেকে প্রচুর মানুষের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে। একজনের শরীরে তাপমাত্রা যত বেশি, ইনফ্রারেড রশ্মি নির্গমণের মাত্রাও তত বেশি। লেজার এবং ইনফ্রারেড রশ্মির মাধ্যমে কোন স্পর্শ ছাড়াই যে কোনও স্থানের বা মানবদেহের তাপমাত্রা মুহূর্তেই বের করা সম্ভব। যা চলতি ভাষায় থার্মাল গান নামে পরিচিত।
থ্রিডি প্রিন্টেড ফেইস মাস্ক
গ্রিসের একটি প্রযুক্তি ল্যাবে থ্রিডি প্রিন্টেড ফেইস মাস্ক আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। দিন দিন দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। স্বাস্থ্য কর্মিীদের সুরক্ষা দিতে, তাদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীর চাহিদা মেটাতে নতুন এক উদ্ভাবন করছে দেশটি।
ফেসিয়াল রিকগনিশন প্রযুক্তি
করোনা সংক্রমণ এড়াতে রাশিয়ার শহরগুলো শুরু থেকেই লকডাউন করা হয়। এমন অবস্থায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা বাসিন্দাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে দেশটি। সেখানকার বাসিন্দাদের উপর নজরদারির জন্য বসানো হয়েছে ১০ হাজার ফেস ট্র্যাক ক্যামেরা। দেশটির নগর কর্মকর্তারা জানান, মানুষের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে মস্কো শহরে ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে। এসব ক্যামেরায় যুক্ত করা হয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার। মস্কোবাসীর মোবাইল ফোনের সাথে সংযুক্ত থাকবে ওই সব ক্যামেরা। আর এই প্রযুক্তির মাধ্যমে এমনও হয়েছে যে কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হওয়ার মাত্র ৩ সেকেন্ডের মধ্যে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং ডিজিটাল ম্যাপ
দক্ষিণ কোরিয়া তাদের প্রত্যেক বিদেশফেরত নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করে তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে। এ ছাড়া কোরীয় সরকার মোবাইল কোম্পানির তথ্য, ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ এআই দিয়ে বিশ্লেষণ করে কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্তের কাছাকাছি গিয়েছিলেন কি না, তা শনাক্ত করেছে। অলাভজনক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মার্চের এক প্রতিবেদনে এশিয়ায় প্রযুক্তির ব্যবহারের একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, সিঙ্গাপুরে সরকার বিগ ডেটা ব্যবহার করে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করেছে। সেখানে রোবট মানুষের বাসায় খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেয়। ভিয়েতনাম দেশীয় ও বিদেশি নাগরিকদের মোবাইল অ্যাপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ বা ট্র্যাক করছে। থাইল্যান্ডও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপকমাত্রায় পর্যবেক্ষণ করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ‘আরোগ্য সেতু’ নামের একটি অ্যাপ চালু করেছে। এটি ব্যবহারকারীর আশপাশে কোনো করোনা রোগী আছে কি না, তা জানিয়ে দেয়। আবার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করার বিষয়েও ব্যবহারকারীকে সতর্ক করে এই অ্যাপ।
রোবট
থাইল্যান্ডের হাসপাতালে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে তৈরি করা হয়েছে রোবট। দেশটির প্রকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী আক্রান্ত ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণ করতে এই মেডিকেল রোবটকে কনফিগার করেন। এপ্রিলে বোস্টনের এক ইউমেন হাসপাতালে রোবটের মাধ্যমে নতুন এক টেলিমেডিসিন সেবার প্লাটফর্ম চালু করা হয়। বোস্টন ডায়নামিকের রোবট আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে ভালো কাজ করছে। ইউরোপের দেশগুলো মধ্যে একটু ভালো অবস্থায় আছে জার্মানি। আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করায় দেশটিতে মৃত্যের সংখ্যা অনেক কম। দেশটিরে সুপার মার্কেট ও চেইন শপে হিউম্যানেইড রোবট স্থাপন করা হয়েছে। সেই রোবট ক্যাশ কাউন্টারে কাজ করছে।
ড্রোন
করোনা গ্রাস করেছে ভারতকেও। ভাইরাসের সংত্রমণ ঠেকাতে দেশটি পুরো লকডাউন। নতুন করে আবারও বাড়ানো হয়েছে লকডাউনের সীমা। এই লকডাউন চলার সময় মানুষের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে পুলিশ মাঠে নামিয়েছে ড্রোন। যার সাহায্যে চন্ডিগড় রাজ্যে পরিস্থিতি দেখছে পুলিশ। লাতিন আমেরিকার দেশে চিলিতে প্রবীণ ও অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দিতে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন