নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০১ পিএম, ০৬ নভেম্বর, ২০২০
আমাদের পরিচিত বা আপনজনদের অনেকের দেহে পেসমেকার লাগান আছে। পেসমেকার হলো এমন এক ধরনের ডিভাইস যেটি অনিয়ন্ত্রিত হৃৎস্পন্দন বা হার্ট বিট নিয়ন্ত্রণ করে। হৃৎপিণ্ডের ডান অ্যাট্রিয়াম প্রাচীরে উপর দিকে অবস্থিত বিশেষায়িত কার্ডিয়াক পেশিগুচ্ছে গঠিত ও স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রে নিয়ন্ত্রিত একটি ছোট অংশ যা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রবাহ ছড়িয়ে দিয়ে হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি করে এবং স্পন্দনের ছন্দময়তা বজায় রাখে তাকে পেসমেকার বলে। আবার মানুষের হৃৎপিণ্ডে সাইনো-অ্যাট্রিয়াল নোড হচ্ছে পেসমেকার। এটি অকেজো বা অসুস্থ হলে হৃৎস্পন্দন সৃষ্টি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কম্পিউটারাইজড বৈদ্যুতিক যন্ত্র দেহে স্থাপন করা হয় তাকেও পেসমেকার বলে। অর্থাৎ পেসমেকার দু ধরনের। একটি হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপী সাইনো অ্যাট্রিয়াল নোড, যা প্রাকৃতিক পেসমেকার নামে পরিচিত। অন্যটি হচ্ছে যান্ত্রিক পেসমেকার, এটি অসুস্থ প্রাকৃতিক পেসমেকারকে নজরদারির মধ্যে রাখে। এক পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটেনে যতো মানুষের অকাল মৃত্যু হয় তার অন্তত চার ভাগের এক ভাগের মৃত্যুর জন্যে দায়ী হৃদরোগ। এটাকে আমরা কম্পিউটারের বা কোন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের এক ধরণের চিপসের সাথে তুলনা করতে পারি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা অধিদফতরের একটি সংস্থা ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডিআরপিএ) একটি সাইবার্গ পোকামাকড় তৈরি করেছে যা পিউপাল পর্যায়ে পোকামাকড়ের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক ধরণের সেন্সর বা চিপস। যাতে সেই সেন্সরগুলি থেকে তথ্য প্রেরণ করতে পারে। পোকামাকড়ের গতিটি একটি মাইক্রো ইলেক্ট্রো-মেকানিকাল সিস্টেম (এমইএমএস) থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং এটি একটি পরিবেশ জরিপ করতে বা বলে, বিস্ফোরক এবং বিষাক্ত গ্যাসগুলি সনাক্ত করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। একই রকম উচ্চ-মূল্য এবং পাথ-ব্রেকিং কাটিয়া প্রান্তের ইমপ্লান্টেবল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের উপরও করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, মাইক্রোচিপ ইমপ্লান্টগুলি মানব দেহের অভ্যন্তরে পেসমেকারের মত করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হলেও এতে লাভ হচ্ছে যার দেহে এটা লাগান হবে তার চলা ফেরা থেকে অনেক কিছুই জানা যাবে। এতে তার প্রাইভেসীও নষ্ট হতে পারে, তাই এই বিতর্ক। যা হউক, হিউম্যান মাইক্রোচিপ ইমপ্ল্যান্ট (ঢুকিয়ে বা বসিয়ে দেওয়া) হ`ল একটি ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) ডিভাইস বা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্রান্সপন্ডার একটি সিলিকেট গ্লাসে আবদ্ধ এবং মানবদেহে ইমপ্ল্যান্ট করা হয়।
আরএফআইডি মাইক্রোচিপটি মূলত একটি ক্ষুদ্র, দ্বি-মুখী রেডিও, মোটামুটি ধানের একটি শস্যের আকার, ডিজিটাল তথ্য সঞ্চয় করতে সক্ষম। সাব-ডার্মাল ইমপ্ল্যান্টটিতে সাধারণত একটি অনন্য ১৬ অঙ্কের শনাক্তকরণ নম্বর থাকে যা বাইরের ডাটাবেসে থাকা তথ্যের সাথে যেমন ব্যক্তিগত পরিচয়, আইন প্রয়োগকারী, চিকিৎসা ইতিহাস, ওষুধ, এলার্জি এবং যোগাযোগের তথ্য লিঙ্ক করা যেতে পারে। এই প্রযুক্তিটি অন্য জিনিসগুলির সাথে সাথেই একজন ব্যক্তির পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা ও নিশ্চিত করা সম্ভব করে।
একটি আরএফআইডি ইমপ্ল্যান্ট সাধারণত ভিজিটিং কার্ডে চালিত সমস্ত তথ্য রাখতে সক্ষম। এটি সুরক্ষা চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এই তথ্যটি প্রেরণ করতে পারে।
এই জাতীয় মাইক্রোচিপ ইমপ্ল্যান্ট পোষা প্রাণীতেও ব্যবহৃত হয়েছে। এই চিপগুলি মানুষের ব্যবহারের জন্য কতটুকু উপযুক্ত তা নিয়ে কিছু বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
প্রযুক্তির সাম্প্রতিক বিকাশগুলি মানবদেহে ইমপ্ল্যান্ট করা আরএফআইডি ডিভাইসগুলির জন্য সম্ভাব্য নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। এগুলি এখন ব্যক্তিদের দূরবর্তী সনাক্তকরণ, দূরত্বে মানুষের জৈবিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ, দেহের অভ্যন্তরে রাসায়নিক বা জৈবিক উপাত্ত পরিমাপের ব্যবস্থা এবং জৈবিক ক্রিয়াকলাপ বা মানুষের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেক মোগল ইলন মাস্ক সম্প্রতি গল্পচ্ছলে বলেছেন যে, মস্তিষ্কের একটি চিপ ইমপ্ল্যান্ট গেলে পক্ষাঘাতগ্রস্ত লোকদের স্মার্টফোন বা রোবোটিক অঙ্গগুলির মতো প্রযুক্তি পরিচালনা করতে দিতে পারে তাদের চিন্তাভাবনা দিয়ে।
জিন সম্পাদনা বা এডিটিং করা একজন দেহ থেকে অস্থিমজ্জা সংগ্রহ করে সেটা থ্যালাসেমিয়ার মত অসুখে আক্রান্ত অন্য কারো দেহে প্রতিস্থাপন করা হলে যদি অসুখ ভাল হয়ে যায়, তাহলে মানবদেহে ইমপ্ল্যান্ট করা মাইক্রো চিপস অনেক বয়স্ক মানুষের জটিল অসুখের নিরাময় করতে না পারলেও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে তাতে সন্দেহ নেই। সন্দেহ হচ্ছে প্রায়োগিক দিক নিয়ে। একটা বন্ধুক যদি পুলিশ বা মিলিটারির হাতে থাকে তাহলে তা মানুষের নিরাপত্তা দেবার কথা। কিন্তু একইভাবে কোন আগ্নেয়াস্ত্র যদি কোন সন্ত্রাসীর হাতে থাকে তাহলে তা মানুষের জীবন সংহারের কারণ হতে পারে। অর্থাৎ আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির চেয়ে তার ব্যবহার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একই ভাবে চিপস কি মানব কল্যাণে ব্যবহার করা হবে না অকল্যাণে সেটা আসল কথা।
যা হউক, বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষও কি কম্পিউটার চিপস দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে, সেটা এখন নানান সমালোচনার মুখে পড়লেও মানব কল্যাণে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে আটকানো যাবে না। তাই এটা হলে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
তথ্যসুত্রঃ বিবিসি, অন্যান্য
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন