নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৪ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোতে গত মাসে একজন ইঞ্জিনিয়ার জয়স্টিক ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে ছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে ভিডিও গেম খেলছেন মনে হলেও তিনি আসলে জাহাজ চালাচ্ছিলেন। তিনি খুব সতর্ক দৃষ্টিতে জাহাজের দিক পরিবর্তন দেখছেন। স্কটল্যান্ডের উপকূল থেকে হাজার মাইল দূরের বিশাল বড় এক কার্গো জাহাজ চালাচ্ছিলেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসেই।
কিন্তু কীভাবে সম্ভব এটি? অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়। আসলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে জাহাজটিকে। ফিনিশ এনার্জি অ্যান্ড টেকনোলজি ফার্ম ওয়ার্টসিলা চার ঘণ্টার এই পরীক্ষা পরিচালনা করছিল তাদের প্রায় অর্ধেক বিশ্বের কর্মচারীদের দিয়ে।
ওয়ার্টসিলা কোম্পানি বিশ্বাস করে তাদের এই উদ্ভাবণ অদূর ভবিষ্যতে মালিককে তার জাহাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা এনে দিবে এবং একই সঙ্গে জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে এর নির্গমন সীমিত করবে। একবিংশ শতাব্দীতে বাণিজ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার এই সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এমন প্রযুক্তি আবিষ্কারের কথা চিন্তা করেছে কোম্পানিটি।
নতুন প্রযুক্তির এই জাহাজগুলোতে কোনো ক্যাপ্টেন থাকবে না এবং হাজার হাজার মাইল দূর থেকে তা মানুষ নয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করবে।
বর্তমানে ই-কমার্সের যুগে শিপিংয়ের চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু জাহাজে সেকেলে প্রযুক্তিই রয়ে গেছে। এখনো অধিকাংশ জাহাজ ডিজেলের মাধ্যমে চলে। সড়কপথে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি চলে এসেছে কিন্তু জাহাজের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়নি। জাহাজকে প্রযুক্তি নির্ভর করার পাশপাশি চলছে দূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। মাত্র ১৬টা বড় জাহাজ যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে তা সারাবিশ্বের সবগুলো গাড়ি একসঙ্গে বের করে। একইসঙ্গে বড় বড় কোম্পানি মুনাফা বাড়াতে চেষ্টা করছে।
যেহেতু জাহাজের নতুন প্রযুক্তিতে ক্রু হিসেবে মানুষকে রাখতে হচ্ছে না তাই এগুলো অনেক খরচ বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ফলে জাহাজের মালিকেরাও এ প্রযুক্তির প্রতি সন্তুষ্টও।
দুটি জাহাজ এ মুহূর্তে তৈরি হচ্ছে। রন ও ইয়ারা বার্কেল্যান্ড। ৮০ মিটার লম্বা বার্কেল্যান্ড কন্টেনার বহনকারী জাহাজ, যা বিদ্যুচালিত। সামনের বছর ২০১৮ এর মাঝামাঝি সমুদ্রে ভাসতে পারে এই জাহাজ।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রতিবেদনে জানায়, স্বয়ংক্রিয় জাহাজ প্রত্যাশার তুলনায় অত্যন্ত দ্রুত বাজারে আসবে। এর কারণ হিসেবে তারা প্রযুক্তিগত ব্যয় কমে যাওয়া এবং শ্রমিকের অভাবকেই চিহ্নিত করেছেন।
বিজ্ঞানীরা জাহাজের ওজন কমাতে গ্লাস ফাইবার ও প্লাস্টিক ব্যবহার করার চিন্তা করছেন। এতে জাহাজে জ্বালানীও কম খরচ হবে বলে তারা আশা করছেন। সাধারণত তেলের ট্যাংকারের ৯০ শতাংশ ভারই থাকে এর কার্গোর। বিকল্প জ্বালানী হিসেবে সৌর বিদ্যুৎ ও বায়ুকল ব্যবহারর করা চিন্তা করা হচ্ছে।
জাহাজের সঙ্গে থ্রিডি প্রিন্টার রাখার কথা চিন্তা করছেন বিজ্ঞানীরা। যদি সমুদ্রে প্রতিকূল পরিবেশে কখনও জাহাজের কোনো যন্ত্রাংশ ভেঙে গেলে বা নষ্ট হলে তা থ্রিডি প্রিন্ট থেকে বের করে লাগিয়ে নেয়া যাবে।
শিশুর খেলনার মতো দূর থেকে পরিচালিত এ জাহাজ আধুনিক উপাদান দিয়ে তৈরি এবং সুর্য শক্তি দিয়ে চলবে, যা সমুদ্রের চিত্রই বদলে দিবে।
বাংলা ইনসাইডার/আরএইচবি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন