নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৮ জুলাই, ২০২১
ভিডিও স্ট্রিমিং দুনিয়ার এক অনবদ্য রাজা বলা হয় তাকে। যার হাত ধরে বদলে গেছে বর্তমান সময়ের ছবি কিংবা ভিডিও কন্টেন্ট দেখার অভিজ্ঞতাগুলো। এখন আর আগের মত অপেক্ষা করতে হয় না নতুন ছবি কবে মুক্তি পাবে টিভির দুনিয়ায়, কবে নতুন গল্প গুলো ডিভিডি আকারে পাওয়া যাবে এলাকার কোন দোকানে। নতুন কিংবা পুরোনো যাই কিছু হোক এক ক্লিকে আপনি উপভোগ করতে পারেন আপনার মুঠোফোন কিংবা টিভিতেই। আমাদেরকে নতুন এই দুনিয়ায় সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া প্রধান দায়িত্ব যারা পালন করেছে নেটফ্লিক্স।
নেটফ্লিক্সে ফ্যান্টাসি, রোমান্স, টান টান রোমাঞ্চের কত গল্প এসে জড়ো হয়েছে। কিন্তু খোদ নেটফ্লিক্সের গল্প কিন্তু কম রোমাঞ্চকর নয়। অনুপ্রেরণাদায়ীও বটে। মার্ক র্যানডলফ আর রিড হেসটিংস—দুজনকেই বলা যায় এই গল্পের প্রোটাগনিস্ট, যা আপাতদৃষ্টে মনে হয়েছিল অসম্ভব, সেটাই সম্ভব করে দেখিয়েছেন দুই উদ্যোক্তা।
নেটফ্লিক্স তখন ডিভিডি ভাড়া দিত
স্ট্যাটিস্টা ডটকমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিশ্বে নেটফ্লিক্সের নিবন্ধিত সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২০ কোটি ৮০ লাখের বেশি। ফরচুন ডটকম জানাচ্ছে, ২০২০ সালে বিশ্বে যত ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয়েছে, তার শতকরা ১৫ ভাগ খরচ হয়েছে কেবল নেটফ্লিক্স দেখার পেছনে। এটিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম বলা হলে বাড়াবাড়ি হবে না।
অথচ ১৯৯৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্কটস ভ্যালিতে যখন সবে নেটফ্লিক্সের জন্ম হলো, তখন এটি ছিল দূরদূরান্তে সিনেমার ডিভিডি পৌঁছে দেওয়ার একটা ছোট্ট কোম্পানি। নেটফ্লিক্সের ওয়েবসাইটে গিয়ে নাম, ঠিকানা দিয়ে সিনেমার ডিভিডি অর্ডার করা হতো। মাত্র চার ডলারে একেকটি ডিভিডি নেওয়া যেত। পরিবহন খরচ বাবদ দিতে হতো আরও দুই ডলার। ছয় ডলারে গ্রাহক নিতে পারতেন একটি ডিভিডি। সিনেমা দেখা শেষে আবার নেটফ্লিক্সের পাঠানো প্যাকেটে পুরে ডিভিডি ফেরত দিতে হতো।
২০২১ সালে দাঁড়িয়ে নেটফ্লিক্স নামের প্রতিষ্ঠানটি আপনি যদি কিনে নিতে চান, তাহলে খরচ হবে অন্তত ৩ হাজার ৪৮ কোটি ডলার (নেটফ্লিক্সের বর্তমান মালিকেরা বিক্রি করতে চাইলে তবে তো কিনবেন)! টাকার অঙ্কে সংখ্যাটা প্রায় ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি!
রিড হেসটিংস ১৯৮৮ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। ১৯৯১ সালে তিনি পিওর সফটওয়্যার (পরবর্তী সময়ে নাম হয় পিওর আর্টিয়া) নামে একটি কোম্পানি চালু করেন। তাঁরা সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য নানা রকম টুলস বানাতেন। ১৯৯৭ সালে রিড তাঁর এই প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ৭০ কোটি ডলারের বিনিময়ে রেশনাল সফটওয়্যার করপোরেশনের কাছে বিক্রি করে দেন। সেখান থেকেই তিনি পেয়েছিলেন নেটফ্লিক্স শুরু করার পুঁজি।
অন্যদিকে মার্ক র্যানডলফ পড়াশোনা করেছেন ভূতত্ত্ব নিয়ে। একসময় তিনি রিডের প্রতিষ্ঠানেই মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যৌথভাবে রিডের সঙ্গে নেটফ্লিক্স প্রতিষ্ঠার আগেও তিনি ছয়-ছয়টি সফল প্রকল্পের উদ্যোক্তা ছিলেন। সেগুলো শূন্য থেকে বড় করেছেন আর কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে। মার্কর্যানডলফডটকম নামে তাঁর একটা নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। এখানে তিনি সরাসরি মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধান দেন, পরামর্শ দেন। সমস্যা সমাধান তাঁর কাছে বড় ‘বিনোদন’।
নেটফ্লিক্স যখন ডিভিডি ভাড়া দিত, সেই সময় এই ইন্ডাস্ট্রির ‘ডন’ ছিল ব্লকবাস্টার কোম্পানি। ২০০০ সালে নেটফ্লিক্সের সিইও ও অন্যতম উদ্যোক্তা রিড হেসটিংস গিয়েছিলেন ব্লকবাস্টারের দরবারে। ইচ্ছা ছিল, তাঁর অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো নেটফ্লিক্সকেও ব্লকবাস্টারের কাছে বিক্রি করবেন। তখন মাত্র ৫ কোটি ডলারের বিনিময়ে নেটফ্লিক্স বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা।
শুনে ব্লকবাস্টারের সিইও মুচকি হেসে বিদায় করে দিয়েছিলেন রিডকে। নেটফ্লিক্সের মতো ‘উঠতি কোম্পানি’কে তিনি কিনতে চাননি। সম্ভবত সেটাই ছিল ব্লকবাস্টারের সবচেয়ে বড় ভুল। কেননা, এর মাত্র সাত বছরের মাথায় ব্লকবাস্টার নানা ফন্দিফিকির করেও প্রতিযোগিতায় হেরে যায় নেটফ্লিক্সের কাছে। আর ২০১০ সালে দেউলিয়া হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ব্লকবাস্টার। মাথা উঁচু করে ডালপালা মেলে তরতর করে এগোতে থাকে নেটফ্লিক্স।
২০০৭ সালে নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং সার্ভিস দেওয়া শুরু করে। ডিভিডির বদলে ‘ওয়াচ নাউ’–এ ক্লিক করলেই দেখা যেত নেটফ্লিক্সের সব ছবি। তখন মাত্র এক হাজার ছবি ছিল। শুরুতে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফ্রি দেখা যেত নেটফ্লিক্স। এমনকি মাসে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রি দেখা যেত। ২০০৭ সাল শেষ হলো ৭৫ লাখ সাবস্ক্রাইবার নিয়ে। নেটফ্লিক্স দর্শকদের যুক্ত করতে জুড়ে দিল ‘মুভি রেটিং সিস্টেম’। বছর শেষে বিশ্বব্যাপী ১০ হাজার গ্রাহককে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে যুক্ততার ভিত্তিতে দেওয়া হলো ‘নেটফ্লিক্স প্রাইজ’।
২০১০ সারে নেটফ্লিক্স অ্যাপলের ডিভাইসে ঢুকে পড়ল অ্যাপ হিসেবে। আর ডিভিডির ব্যবসা তো ছিলই। তবে সাবস্ক্রিপশনের দাম বাড়াতেই যুক্তরাষ্ট্রের ৬ লাখ সাবস্ক্রাইবার হাওয়া হয়ে গেল। ২০০৬ সালে বাজারে আসা আমাজন ইনস্ট্যান্ট ভিডিও তত দিনে ঠেলেঠুলে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
বিষয়টা আমলে নিতে নতুন করে মিটিংয়ে বসল নেটফ্লিক্স। যে দেশে সাবস্ক্রাইবার বেশি, সেই দেশীয় কনটেন্টের ওপর জোর দিল তারা। অরিজিনাল কনটেন্ট বাড়াতেই ইঞ্জিন যেন নতুন করে স্টার্ট পেল। হু হু করে বাড়ল সাবস্ক্রাইবার। বাড়তি সাবস্ক্রিপশন ফি যেন কারও নজরেই পড়ল না। ২০১২ সালে নেটফ্লিক্স প্রাইমটাইম ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাওয়ার্ড পেল। ২০১৩ সালে মামি অ্যাওয়ার্ডের জন্য ৩১টা মনোনয়ন পেয়ে সাড়া ফেলে দিল। একের পর এক আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে পুরস্কার এল তাদের ঝোলায়।
ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি হলো। ২০১৬ সাল নাগাদ ১৯০টি দেশে পৌঁছে গেল। অফলাইনে ডাউনলোড করে দেখার ব্যবস্থা যোগ হলো। ২১টা ভাষায় কনটেন্ট দেখা যেত সেখানে। এইচবিওর সবচেয়ে হিট সিরিজগুলো কিনে নিল তারা। ২০১৯ সালে তো চার-চারটা একাডেমি পুরস্কারও পকেটে পুরে নিল। এরপর আর নেটফ্লিক্সকে কে পায়!
সামান্য ভুল লিখলাম। আঙুল ফুলে কলাগাছ না লিখে ‘আঙুল ফুলে শতবর্ষী বটগাছ’ লিখলে বোধ হয় আরেকটু সঠিক হতো। অতিমারিকালে ফুলেফেঁপে প্রতিযোগিতায় ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া নেটফ্লিক্সের ব্যবসা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করেছে বিবিসি। ২০২০ সালে কেবল প্রথম তিন মাসেই নেটফ্লিক্স পেয়েছে নতুন ১ কোটি ৬০ লাখ সাবস্ক্রাইবার, যা প্রত্যাশার দ্বিগুণের বেশি। এই লেখা যখন লিখা, তখন বিশ্বব্যাপী নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ২০ কোটি ৭৬ লাখ। আর আপনি যখন এই লেখা পড়ছেন, ততক্ষণে হয়তো সংখ্যাটা বেড়ে গেছে আরও।
লকডাউনে নেটফ্লিক্সের শেয়ারের দাম এক লাফে সাড়ে তিন গুণ বেড়েছে। ই–মার্কেট বিশেষজ্ঞ এরিক হ্যাগস্ট্রম বলেন, ‘নেটফ্লিক্স ওটিটি ব্যবসার ইতিহাসে একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। ঘরে থাকা মানুষের একটা বড় অংশ নেটফ্লিক্সের ভোক্তা। আর যাঁরা ভোক্তা নন, তাঁরা সম্ভাব্য ভোক্তা (পটেনশিয়াল কাস্টমার)।’
নেটফ্লিক্সের এই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আগ্রহকে সামাল দিতে ইউরোপ আর আমেরিকায় এর কনটেন্টগুলোর ভিডিও কোয়ালিটি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে; যেন ইন্টারনেট বর্ধিত ভোক্তাদের চাপ সামাল দিতে পারে। নেটফ্লিক্সের কাস্টমার কেয়ারে হাজার হাজার নতুন নিয়োগ নেওয়া হয়েছে ভোক্তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য। তবু সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদ্বন্দ্বী ডিজনি প্লাস আর আমাজন প্রাইমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখন সবচেয়ে বেশি মানুষের ঘরে ঢুকে পড়েছে নেটফ্লিক্স।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
পরিবেশের ওপর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার প্রভাব মোকাবিলার একটি উপায় হয়তো খুঁজে পেয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা।
ক্রমবর্ধমান বিপুল পরিমাণ খাদ্যচাহিদা পূরণে চাষাবাদের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। কিন্তু জমি তো সীমিত।
এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা একটি নতুন হাইব্রিড খাদ্য উদ্ভাবন করেছেন। ধানের ভেতরে গরুর মাংসের সমন্বয়ে এই হাইব্রিড খাদ্য গঠিত।
গবেষণাটি ম্যাটার নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমোলিকুলার ইঞ্জিনিয়ার সোহেয়ন পার্ক।
গবেষণাগারে উদ্ভাবিত খাবারটি দেখতে মাংসের কিমা ও ভাতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণের। তবে খাবারটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান।
বিজ্ঞানসংক্রান্ত খবরাখবর প্রকাশকারী ওয়েবসাইট সায়েন্স অ্যালার্টকে গবেষণাটি সম্পর্কে বিজ্ঞানী পার্ক বলেন, কোষ-কালচারড প্রোটিন চাল থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পাওয়ার কথা ভাবুন। ভাতে এমনিতেই উচ্চমাত্রায় পুষ্টি উপাদান আছে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ থেকে কোষ যুক্ত করে এই পুষ্টি উপাদানকে আরও বাড়ানো যায়।
পার্ক আরও বলেন, এই খাদ্য তৈরি একটু শ্রমসাধ্য ব্যাপার। তবে এই খাদ্য একদিন খাবারের ওপর চাপ কমাতে পারে।
গবেষণা দলের ভাতকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো—এটি মানুষের প্রধান একটি খাদ্য। এতে ৮০ শতাংশ শ্বেতসার, ২০ শতাংশ প্রোটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান আছে।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এই খাবার দেখতে গোলাপি রঙের। গবেষকেরা বলেছেন, এই চাল সস্তা, নিরাপদ, আরও টেকসই পরিবেশসম্মত মাংসের বিকল্প হতে পারে। জলবায়ু সংকটের মধ্যে মানুষ যেভাবে খাচ্ছে, তাতে একটা বদল আনতে পারে এই চাল।
মন্তব্য করুন