ইনসাইড আর্টিকেল

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’ ব্যবস্থার প্রবর্তণ

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’ ব্যবস্থার প্রবর্তণ।

আজ ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার সেই ২৫ জানুয়ারি- একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই তারিখে এদেশের রাজনীতিতে রচিত হয়েছিল নতুন ইতিহাস, সূচনা হয়েছিল রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়। ওইদিন সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পেশকৃত সংবিধানের  চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়। এর মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন তথা ‘বাকশাল’ (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) গঠনের পথ উন্মুক্ত হয়। 

একইসঙ্গে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। অত্যন্ত অশ্চর্যজনক বিষয় যে, সে সময়ে ভেতরে ভেতরে সরকার বিরোধী চক্রের অনেকেই সরকার হঠানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যা, খুন, গুমসহ নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার সেই দিনে মাত্র ১১ মিনিটে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়েছিল। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিলটি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিলটি জাতীয় সংসদে ২৯৪ ভোটে পাশ হয়। এই বিলের বিরোধীতা করেন মাত্র ৩ জন বিরোধী, ১ জন স্বতন্ত্র সদস্য ‘ওয়াক আউট’ করেন। ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা অনেকেই মনে মনে করলেও জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে কেউ গলার সর উঁচু করতে সাহস করেননি, এমন কি প্রকাশ্যে খুব কম সংখ্যক সংসদ সদস্যই বিরোধীতা করেছিলেন।  

‘বাকশাল’ ব্যবস্থা প্রনয়ণ এবং জাতীয় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রসহ তাদের অনুসারীরা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করলেও- এর একটি সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল। যে কারণটি ছিল দেশ গঠনের দ্বিতীয় বিল্পব এবং হানাহানি, লোভ-লালসা থেকে অবসান। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নিবেদিত। ঠিক তখনও সক্রিয় ছিলো এই দেশবিরোধী চক্র। নিজেদের দেনা-পাওনা-চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ভেতরে ভেতরে ফুঁসে ওঠতে থাকে এই চক্রটি। ওই সময়ে চক্রটি সরকার হঠানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। বর্তমান বাংলাদেশেও এই চক্রটি এখনও বিদ্যমান। 

গণতান্ত্রিক সংসদীয় রাজনীতিক দলের সুযোগ নিয়ে সে সময় অনেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা গোপনে চক্রান্ত করে সরকার হঠানোর কৌশলে নিমত্ত হয়। স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন এবং বামপন্থী দলের কর্মীরা সরকার দলীয় অনেক নেতাকে হত্যা করে। তারা তখন সর্বত্র খুন, হানাহানি এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। রাজনৈতিক এমন অস্থিরতা বিরাজ দেখে- তা নিরসন করতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাকশাল’ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এছাড়া সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনার পিছনে রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়াও অর্থনৈতিক সংকট ছিল অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে মহাবিপর্যয় দেখা দেয়। পরপর কয়েক বছর বন্যা ও খরার কবলে পড়ে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর ফলে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তার উপর বিশ্বব্যাপি মুদ্রাস্ফীতির কারণে অত্যাধিক মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে আমাদানি করতে হয় এবং সে সময় রফতানিতেও ছিল বেহাল দশা। রফতানিকৃত পণ্যের সঠিক মূল্য না পাওয়া, কালোবাজারী ও চোরাচালান বেড়ে যাওয়া, দুর্নীতি ইত্যাদির ফলে তখন দেশে একটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। বিদেশ থেকে যেসব সাহায্য সহযোগিতা এসেছিল, সেগুলোরও সঠিক বন্টন হয়নি লুটেরা নেতাদের কারণে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। দেশব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতেও সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়।

সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিলেও সবাই যে সে নির্দেশ পালন করেছিল, তা বলা যায় না। তার ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার, শান্তিকমিটি ও চীনপন্থী বিভ্রান্ত বিপ্লবীদের নানা দল-উপদল রাষ্ট্রে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি শুরু করেছিল। দেশের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা নামে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে এরা বিরোধিতা করেছিল; বিশেষ করে পিকিংপন্থী বিভ্রান্ত বামধারার সশস্ত্র বিভিন্ন দল-উপদল, যারা স্বাধীন দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র প্রদর্শন, লুটপাট, থানা ও ফাঁড়িতে হামলা ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে গুপ্তহত্যাও শুরু করেছিল। নিঃসন্দেহে এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তৃত্বের প্রতি ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লুট হয়েছিল প্রায় ১৯টি থানা ও ফাঁড়ি। স্বাধীনতার প্রথম বছরে ৩৩৭টি ছিনতাই, প্রথম ১৬ মাসে ২৩০৫টি গুপ্তহত্যা এবং প্রথম দুই বছরের মধ্যেই ৪৯০৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল । এসব গুপ্তহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর সেটা করেছিল বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার দালালরা।

সেই সময় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। মার্কসবাদী এবং মস্কোপন্থীরা দেশের অভ্যন্তরে গোপনে উগ্র কার্যকলাপে ব্যস্ত ছিল। এরা সমগ্র দেশে গুপ্ত হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি করতে থাকে। ফলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ১৯৭৪ সালে এক অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে। ফলে সব দিক বিবেচনা করেই দেশ পুনর্গঠনে বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   

এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি  ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর নিকট তার প্রেরিত এক বাণীতে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করেন।

‘বাকশাল’ ব্যবস্থা ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়ে 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল)- নামে জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজে এবং সম্পাদক হন এম মনসুর আলী। বাকশাল গঠনের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় দল হিসেবে পরিগণিত হয়। আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পদক্ষেপকে তিনি তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’র সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বাকশালের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সবক’টি সংবাদপত্রও বিলুপ্ত করেছিলেন। সে সময় শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস- এ চারটি পত্রিকা সাময়িকভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়।

এর আগে ওই বছরের ৭ জুন বাকশালের গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটি, পাঁচটি ফ্রন্ট এবং এর কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল পদে প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর নাম ঘোষণা করেন। জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি ও আবদুর রাজ্জাককে দলের সেক্রেটারি করা হয়। বাকশাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে যে পাঁচটি ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো হলো- জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় ছাত্রলীগ। এর সেক্রেটারিরা হলেন যথাক্রমে ফণীভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, বেগম সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ এবং শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৫ জনকে নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি এবং ১১৫ জন সদস্য রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

বাকশাল-এর কার্যনির্বাহী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন যারা: 

কার্যনির্বাহী কমিটি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- চেয়ারম্যান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ, আবুল হাসানাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আবদুল মালেক উকিল, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, শ্রী মনোরঞ্জন ধর, ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, শেখ আবদুল আজিজ, মহীউদ্দিন আহমদ, গাজী গোলাম মোস্তফা, জিল্লুর রহমান- সেক্রেটারি, শেখ ফজলুল হক মনি-সেক্রেটারি  এবং আবদুর রাজ্জাক-সেক্রেটারি হিসেবে কমিটিতে ছিলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রাষ্ট্রপতি এবং চেয়ারম্যান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম- উপ-রাষ্ট্রপতি, এম মনসুর আলী- প্রধানমন্ত্রী এবং সেক্রেটারী জেনারেল, আবদুল মালেক উকিল-  স্পীকার, খন্দকার মোশতাক আহমদ- বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যমন্ত্রী, আবুল হাসানাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান- শিল্পমন্ত্রী, মুহম্মদ উল্লাহ- ভূমি রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী, আবদুস সামাদ আজাদ- কৃষিমন্ত্রী, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী- শ্রম, সমাজকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী, শ্রী ফণী মজুমদার- স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, ড. কামাল হোসেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন- গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, আব্দুল মান্নান- স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী, আবদুর রব সেরনিয়াবত- বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী, শ্রী মনোরঞ্জন ধর- আইন, সংসদ বিষয়াবলী ও বিচারমন্ত্রী, আব্দুল মমিন- খাদ্য, বেসামরিক সরবরাহ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, আসাদুজ্জামান খান- পাটমন্ত্রী, এম কোরবান আলী- তথ্য বেতারমন্ত্রী, ড. আজিজুর রহমান মল্লিক- অর্থমন্ত্রী, ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী- শিক্ষামন্ত্রী, তোফায়েল আহমেদ- রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন- চীফ হুইপ, আবদুল মমিন তালুকদার- সমবায় প্রতিমন্ত্রী, দেওয়ান ফরিদ গাজী- বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী- প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর- তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী, মোসলেম উদ্দিন খান- পাট প্রতিমন্ত্রী, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর- যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, কে এম ওবায়দুর রহমান- ডাক, তার ও টেলিফোন প্রতিমন্ত্রী, ডা. ক্ষিতীশচন্দ্র মণ্ডল- ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী, রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ- বন, মৎস্য ও পশুপালন প্রতিমন্ত্রী, এম বায়তুল্লাহ- ডেপুটি স্পীকার, রুহুল কুদ্দুস- রাষ্ট্রপতির প্রধান সচিব, জিল্লুর রহমান এমপি- সেক্রেটারী, মহিউদ্দিন আহমদ এমপি, শেখ ফজলুল হক মণি- সেক্রেটারী, আব্দুর রাজ্জাক এমপি- সেক্রেটারী, আনোয়ার চৌধুরী, বেগম সাজেদা চৌধুরী এমপি, বেগম তসলিমা আবেদ এমপি, জনাব আবদুর রহিম- দিনাজপুর, আব্দুল আওয়াল এমপি- রংপুর, লুৎফর রহমান এমপি- রংপুর, এ কে মুজিবুর রহমান এমপি- বগুড়া, ড. মফিজ চৌধুরী এমপি- বগুড়া, ডা. আলাউদ্দিন এমপি- রাজশাহী, ডা. আসহাবুল হক এমপি- কুষ্টিয়া, জনাব রওশন আলী এমপি- যশোর, শেখ আবদুল আজিজ এমপি- খুলনা, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ এমপি- খুলনা, মি. মাইকেল সুশীল অধিকারী- খুলনা, কাজী আবুল কাশেম এমপি- পটুয়াখালী, মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ এমপি- ফরিদপুর, শামসুদ্দিন মোল্লা এমপি- ফরিদপুর, শ্রী গৌরচন্দ্র বালা- ফরিদপুর, গাজী গোলাম মোস্তফা এমপি- ঢাকা, শামসুল হক এমপি- ঢাকা, সামসুদ্দোহা এমপি- ঢাকা, রফিক উদ্দিন ভূইয়া এমপি- ময়মনসিংহ, সৈয়দ আহমদ- ময়মনসিংহ, শামসুর রহমান খান এমপি- টাঙ্গাইল, নুরুল হক এমপি- নোয়াখালী, কাজী জহিরুল কাইউম এমপি- কুমিল্লা, ক্যাপ্টেন সুজাত আলী এমপি- কুমিল্লা, এম আর সিদ্দিকী এমপি- চট্টগ্রাম, এম এ ওয়াহাব এমপি- চট্টগ্রাম, শ্রী চিত্তরঞ্জন সূতার এমপি, সৈয়দা রাজিয়া বানু এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, শ্রী মং প্রু সাইন- মানিকছড়ির রাজা, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান, পীর হাবিবুর রহমান, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মোহাম্মদ ফরহাদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ, তৌফিক ইমাম- সচিব- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, নুরুল ইসলাম- সচিব, ফয়েজ উদ্দিন আহমদ- সচিব, মাহবুবুর রহমান- সচিব- সংস্থাপন বিভাগ, আবদুল খালেক- উপরাষ্ট্রপতির সচিব, মুজিবুল হক- সচিব- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, আব্দুর রহিম- রাষ্ট্রপতির সচিব, মইনুল ইসলাম- সচিব- পূর্ত গৃহনির্মাণ ও শহর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, সৈয়দুজ্জামান- সচিব- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আনিসুজ্জামান- সচিব, ড. এ সাত্তার- রাষ্ট্রপতির সচিব, এম এ সামাদ- সচিব- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আবু তাহের- সচিব- ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়, আল হোসায়নী- সচিব- বিদ্যুৎ শক্তি মন্ত্রণালয়, ডা. তাজুল হোসেন- সচিব- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মতিউর রহমান- চেয়ারম্যান- টিসিবি, মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান, কমোডর এম এই খান- বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান, মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান- মাহাপরিচালক বিডিআর, এ কে নাজির উদ্দিন আহমদ- গভর্নর- বাংলাদেশ ব্যাংক, ড. আবদুল মতিন চৌধুরী- উপাচার্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মাযহারুল ইসলাম- উপাচার্য- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মুহম্মদ এনামুল হক- উপাচার্য- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এটিএম সৈয়দ হোসেন- অতিরিক্ত সচিব, নুরুল ইসলাম- আইজিপি- পুলিশ, ড. নীলিমা ইব্রাহীম, ড. নুরুল ইসলাম- পরিচালক- পিজি হাসপাতাল, ওবায়দুল হক- সম্পাদক- বাংলাদেশ অবজার্ভার, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- সম্পাদক- ইত্তেফাক, মিজানুর রহমান- প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক- বিপিআই, আনোয়ারুল ইসলাম- যুগ্ম সচিব- রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, ব্রিগেডিয়ার এ এন এম নুরুজ্জামান- পরিচালক- জাতীয় রক্ষী বাহিনী, কামারুজ্জামান- সভাপতি- বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, ডা. মাজহার আলী কাদরী- বাংলাদেশ চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ছিলেন।


জাতির পিতা   বঙ্গবন্ধু   বাকশাল   প্রবর্তণ   ১৯৭৫ সাল   একদলীয় শাসন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

এবারের রমজানে পৃথিবীর কোন দেশে রোজার সময় কম, কোন দেশে বেশি?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৭ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস এই রমজান। তাই এই রমজান মাসে প্রতিটি মুসলিম উম্মাহর অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। এবারের রমজান মাসে বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মুসলিম রোজা রাখবেন।

ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস প্রায় ১০ দিন করে এগিয়ে আসে। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশে তীব্র গরমে রোজা শুরু হয় এবং শেষ দিকে অনেকটা শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে। সাধারণত, গ্রীষ্মকালে দিন অনেক বড় হয় এবং শীতকালের দিকে যত এগোয়, দিনের ব্যপ্তি তত কমতে থাকে। যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোজার বিধান মোতাবেক সেহেরি থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার যে রীতি  তা সময়ানুপাতে কম বা বেশি হয়ে থাকে।

যে দেশগুলোতে সবচেয়ে কম সময় রোজা

এবারের রমজানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে রোজা রাখার সময় হবে সবচেয়ে কম। চিলির মুসলিমরা গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ১১ ঘণ্টা রোজা রাখবেন অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া বিশ্ব মানচিত্রের দক্ষিণের দেশগুলো, যেমন-  নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও রোজার সময় কম। দেশগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে।

যেসব দেশে রোজার সময় সবচেয়ে দীর্ঘ

নরডিক দেশ আইসল্যান্ডে এবার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রোজা থাকবেন রোজাদাররা। দেশটিতে গড়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিট রোজা রাখতে হবে তাদের। তিউনিসিয়ার মুসলিমরা রোজা রাখবেন প্রায় ১৫ ঘণ্টা। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে।

যেসব দেশে রাতই হয় না, তারা কীভাবে রোজা রাখেন?

পৃথিবীর কিছু দেশের দিন ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে থাকে। তবে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তো রোজা রাখা সম্ভব না। তাহলে এক্ষেত্রে কী করেন তারা?  ফতোয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেসব দেশে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টার চেয়ে কম, তারা অন্য কোনও শহরের ইফতার ও সেহেরির সময় অনুসরণ করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মক্কা শহরের সময়সূচী অনুসরণ করে রোজা পালন করে থাকেন। এমন দেশের একটি হলো গ্রিনল্যান্ড। এখানকার মুসলিমরা সৌদি আরবের মক্কার সময় অনুসরণ করে সেহেরি ও ইফতার করেন।

রোজার সময়ের কিছু ব্যতিক্রম

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা আরও অদ্ভুত হয়ে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশচারী সুলতান আল নেয়াদি রমজান মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। এমতাবস্থায় তারা ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। এ বিষয়ে আল নেয়াদি বলেন, ‘আমাকে পরিব্রাজক হিসেবে গণ্য করা হবে। রোজা রাখা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।’ বাধ্যতামূলক না হলেও মক্কার সময় অনুসরণ করে কয়েকটি রোজা রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাধারণত, আইসল্যান্ড এবং গ্রীনল্যান্ডের মুসলমানরা প্রায় ২১ ঘন্টা রোজা রাখেন। নরওয়েতে ১৯ ঘন্টা এবং ব্রিটেনে ১৮ ঘন্টা রোজার সময়। কানাডার মুসলিমরা প্রায় ১৭ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এবং পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে রোজার সময় ১১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট।

এবারের রমজানে পৃথিবীর কোন দেশে রোজার সময় কম, কোন দেশে বেশি?

রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস এই রমজান। তাই এই রমজান মাসে প্রতিটি মুসলিম উম্মাহর অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। এবারের রমজান মাসে বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি মুসলিম রোজা রাখবেন।

ইংরেজি তারিখ অনুযায়ী প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাস প্রায় ১০ দিন করে এগিয়ে আসে। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশে তীব্র গরমে রোজা শুরু হয় এবং শেষ দিকে অনেকটা শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে। সাধারণত, গ্রীষ্মকালে দিন অনেক বড় হয় এবং শীতকালের দিকে যত এগোয়, দিনের ব্যপ্তি তত কমতে থাকে। যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোজার বিধান মোতাবেক সেহেরি থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার যে রীতি  তা সময়ানুপাতে কম বা বেশি হয়ে থাকে।


যে দেশগুলোতে সবচেয়ে কম সময় রোজা

এবারের রমজানে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলিতে রোজা রাখার সময় হবে সবচেয়ে কম। চিলির মুসলিমরা গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ১১ ঘণ্টা রোজা রাখবেন অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া বিশ্ব মানচিত্রের দক্ষিণের দেশগুলো, যেমন-  নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকাতেও রোজার সময় কম। দেশগুলোতে গড়ে প্রতিদিন ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে।

যেসব দেশে রোজার সময় সবচেয়ে দীর্ঘ

নরডিক দেশ আইসল্যান্ডে এবার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রোজা থাকবেন রোজাদাররা। দেশটিতে গড়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিট রোজা রাখতে হবে তাদের। তিউনিসিয়ার মুসলিমরা রোজা রাখবেন প্রায় ১৫ ঘণ্টা। এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে।

যেসব দেশে রাতই হয় না, তারা কীভাবে রোজা রাখেন?

পৃথিবীর কিছু দেশের দিন ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে থাকে। তবে ২০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তো রোজা রাখা সম্ভব না। তাহলে এক্ষেত্রে কী করেন তারা?  ফতোয়ার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেসব দেশে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের ব্যবধান ৩ ঘণ্টার চেয়ে কম, তারা অন্য কোনও শহরের ইফতার ও সেহেরির সময় অনুসরণ করতে পারেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মক্কা শহরের সময়সূচী অনুসরণ করে রোজা পালন করে থাকেন। এমন দেশের একটি হলো গ্রিনল্যান্ড। এখানকার মুসলিমরা সৌদি আরবের মক্কার সময় অনুসরণ করে সেহেরি ও ইফতার করেন।

রোজার সময়ের কিছু ব্যতিক্রম

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবস্থা আরও অদ্ভুত হয়ে থাকে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহাকাশচারী সুলতান আল নেয়াদি রমজান মাসে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। এমতাবস্থায় তারা ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। এ বিষয়ে আল নেয়াদি বলেন, ‘আমাকে পরিব্রাজক হিসেবে গণ্য করা হবে। রোজা রাখা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।’ বাধ্যতামূলক না হলেও মক্কার সময় অনুসরণ করে কয়েকটি রোজা রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

সাধারণত, আইসল্যান্ড এবং গ্রীনল্যান্ডের মুসলমানরা প্রায় ২১ ঘন্টা রোজা রাখেন। নরওয়েতে ১৯ ঘন্টা এবং ব্রিটেনে ১৮ ঘন্টা রোজার সময়। কানাডার মুসলিমরা প্রায় ১৭ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকবে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এবং পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলে রোজার সময় ১১ ঘন্টা ৩৫ মিনিট।

এছাড়াও, ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়াতে  রোজার সময়  ১২ ঘন্টা থেকে ১৩ ঘন্টা। জিম্বাবুয়ের হারারেতে  ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ এবং কেপ টাউন-এ ১১ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা।  আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স-এ ১২ ঘন্টা রোজার সময়। নিউজিল্যাণ্ডের ক্রাইস্টচার্চ- এ ১২ ঘন্টা, প্যারাগুয়ে এবং উরুগুয়েতে ১১ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা রোজার সময়।

(সূত্র: ট্র্যাভেল ব্লগ ওয়েগো, আল আরাবিয়া নিউজ, দ্য ন্যাশনাল)।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রমজানে আমরা কি করছি?

প্রকাশ: ০৮:১৯ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস এই রমজান। তাই এই রমজান মাসে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। এতে বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ হবে। সেই সঙ্গে মিথ্যা কথা না বলা, অপচয় ও অপব্যয় না করা, বেশি বেশি না খাওয়া, রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত না করাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কিন্তু আসলে রমজানে আমরা কি করছি- এটাই এখন বড় প্রশ্ন। 

তবে রমজান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা থেকে বিরত থাকা দরকার। এখানে সে ধরনের কিছু বিষয়ের কথা ইসলামের আলোকে বিস্তারিত তুলে ধরে হচ্ছে।

বিলম্বে ইফতার করা:  আল্লাহর রাসুল (সা.) দেরিতে ইফতার করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, সময় মতো দ্রুত ইফতার করলে উম্মাহ কল্যাণের ভেতর থাকবেন।

সেহেরি না খাওয়া: সেহেরি অনেক বরকতময় খাবার। রাসুল (সা.) সেহেরি খেতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেহেরি খেতে না পারলে অন্তত অল্প কিছু হলেও খেয়ে নেওয়া উত্তম।

কেনা-কাটায় ব্যস্ত না থাকা: রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রমজানের সময় যেন কোনোভাবে হেলায়-ফেলায় নষ্ট না হয়; সেদিকে সর্বাত্মক খেয়াল রাখতে হবে। অনেকে রমজানের শেষ দিনগুলোতে কেনা-কাটায় মেতে ওঠে। অথচ এমন না করা উচিত; বরং শেষ মুহূর্তের আমলে মগ্ন থাকা চাই।

মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ না করা: সত্য মুক্তি দেয় এবং মিথ্যা ধ্বংস ডেকে আনে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা মুসলমানদের কর্তব্য। এছাড়াও সব ধরনের পাপ থেকে দূরে থাকা চাই। এটা মুমিনের প্রাত্যহিক কাজ। তবু রমজানে বেশি সতর্কতা কাম্য।

অপচয় ও অপব্যয় না করা: অপচয় কিংবা অপব্যয় করা খুবই বাজে ও গর্হিত অভ্যাস। পবিত্র কোরআনে অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য স্থানে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে অপচয় রোধ করতে গিয়ে কৃপণতা অবলম্বন করবে। মহান আল্লাহ কৃপণদের পছন্দ করেন না। অপচয় ত্যাগ করার অর্থ হলো মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।

হক নষ্ট না করে কোরআন খতম করা: কোরআন তেলাওয়াতের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছ। পবিত্র কোরআনে কারিম অর্থসহ বুঝে বুঝে খতম করা ও কিংবা তেলাওয়াত করা উত্তম। খেয়াল রাখতে হবে যে, কোরআন তেলাওয়াতের সময় যেন কোরআনের হক নষ্ট না হয়। তাড়াহুড়ো কিংবা অসুন্দরভাবে খতম করা অনুচিত।

জামাতের ফরজ আদায়ে অলসতা না করা: রমজান মাসে রোজাদাররা সব কাজকর্ম স্থগিত রেখে দূরদূরান্ত থেকে নামাজের সময় মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে সমবেত হয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। এভাবে রোজাদার মুসল্লিরা মসজিদে নামাজ পড়তে এলে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে ওঠে। আর এতে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন নামাজ জামাতে আদায়ে অলসতা তৈরি না হয়। 

বেশি বেশি না খাওয়া: সেহেরি ও ইফতারে কিছুতেই এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত নয়, যা পরবর্তী সময় স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আবার এত অল্প আহারও করবে না যে রোজা রাখতে অসুবিধা হয়। কেননা স্বাস্থ্য-সচেতনতাও ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ইবাদত করার জন্য শক্তি ও স্বাস্থ্য প্রয়োজন। তাই সুস্থ-সবল মুমিন আল্লাহর অধিক প্রিয়।

রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত না করা: রিয়া হলো- লোকদেখানো ও আত্মপ্রদর্শনকারী কাজ বা আমল। রিয়া করা শরিয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম। শিরক হলো দুই প্রকার। শিরকে আকবার বা বড় শিরক। আর শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। আর এ রিয়া হলো ছোট শিরক। ফলে রিয়া থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।

বেশি বেশি না ঘুমানো: অনেকের ধারণা, যত বেশি ঘুম তত বেশি শরীর ভালো থাকবে। অথচ একজন সুস্থ ও প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট। এরচেয়ে বেশি সময় ঘুমালে কিন্তু তা নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। বেশি ঘুম মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথার কারণ হতে পারে। এমনকি দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিসের মতো অসুখও। তাছাড়া বেশি ঘুম হতে ডিপ্রেশনেরও কারণ।

পণ্যের দাম বাড়াতে সংকট তৈরি না করা: ভোক্তাদের জিম্মি করা জায়েজ নেই। কেউ তা করে ‘বিত্তশালী’ হয়ে গেলেও কোনো লাভ নেই। তার অবৈধ সম্পদ জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। দুনিয়ার জীবনেও তার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। উপরন্তু উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। মজুদদারি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার জন্য দারিদ্র্য অবধারিত।

অশ্লীল ছবি-নাটক ইত্যাদি না দেখা: বর্তমানে সব রকম নাটকের পূর্ণতা নারীদের ছাড়া হয় না। নারী দিয়ে নাটকগুলো সাজানো হয়। আর নারীদের ছবি দেখা স্পষ্ট হারাম। এসব নাটকের উদ্দেশ্য শিক্ষা, ইসলাম প্রচার কিংবা উপদেশ গ্রহণ নয়। বরং খেল-তামাশা ও অবৈধ আনন্দ উপভোগ করা। অতএব, এসব দেখা থেকে সব সময় বেঁচে থাকা জরুরি।

বেহুদা কাজে রাত না জাগা: রাতে দেরি করে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন নবীজি (সা.)। রাসুল (সা.) এশার নামাজের পর গল্পগুজব ও গভীর রাত পর্যন্ত সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর তাগিদ দিতেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ ও কল্যাণজনক কাজে রাত জাগতে নিরুৎসাহিত করা হয়নি। তাই কোনো গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কারণে রাত জাগতে মানা নেই। তবে অযথা গল্প-গুজব, অহেতুক নেট ব্রাউজিং ও গুরুত্বহীন কাজে সময় নষ্ট উচিত নয়। বরং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া আবশ্যক।

দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন না থাকা: ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমলের কথা রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা  উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহ তাআলা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ (জামিউস সাগির, হাদিস : ৩৯৩৩)

বিদআত না করা: ইসলামের পরিভাষায় বিদআত বলা হয়, দ্বিনের মধ্যে এমন বিষয় সৃষ্টি করা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল না; বরং পরে তা উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিদআতের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.) অত্যন্ত কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বিদআত জাহান্নামে নিয়ে যায় বলেছেন। তাছাড়া কিয়ামতের দিন বিতআতকারী চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। তাই সব সময় বিদআত থেকে দূরে থাকতে হবে।


রমজান  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা - ২৬ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৭:৪৭ এএম, ২৬ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন ঘুমন্ত বাঙালি জাতির উপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করে তখন ধানমণ্ডির ৩২ নং বাড়িতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করেন। ২৫ মার্চ রাত ১২টা ২০ মিনিটে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ - এতটা রক্তমাখা সূর্যোদয় হয়ত এদেশের মানুষ কখনো দেখেনি, কিন্তু এ এক নতুন সূর্য, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূর্য। হাজার বছরের সংগ্রামমুখর বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। দীর্ঘ পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালের এই দিনে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।  

বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক নতুন একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় এই মাসেই। এই মার্চ মাসেই বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর নারকীয় গণহত্যা চালায় তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী । উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র ষষ্ঠবিংশ পর্বে থাকছে ২৬ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।

১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র তৃতীয় খণ্ডে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর, অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি, যা তৎকালীন ইপিআরের ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্থানীয় একটি বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।

স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে পাকিস্তানের তৎকালীন পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘যখন প্রথম গুলিটি ছোড়া হল, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে ক্ষীণস্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হল আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ঘোষণায় বলা হয়, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের মানুষ যে যেখানে আছেন, আপনাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে’।’

ওয়্যারলেস বার্তায় বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লন্ডনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক ও দক্ষিণ এশিয়া করেসপনডেন্ট ডেভিড লোশাক লিখেছেন, ঘোষণাকারীর গলার আওয়াজ খুব ক্ষীণ ছিল। খুব সম্ভবত ঘোষণাটি আগেই রেকর্ড করা ছিল। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে দেশের সংবিধানেও।

২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয় ৷ আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের ইপিআর সদর দপ্তর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়্যারলেস মারফত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন ৷ চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান এদিন দুপুর ২টা ১০ মিনিটে এবং ২টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ৷

মুক্তিযুদ্ধ ও জনগণকে সংগঠিত করতে এই কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রই প্রাথমিক ভূমিকা পালন করে। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাভিত্তিক তারবার্তার আদলে স্বাধীনতা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কিত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেন এম এ হান্নান, সুলতানুল আলম, বেলাল মোহাম্মদ, আবদুল্লাহ আল-ফারুক, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, কবি আবদুস সালাম এবং মাহমুদ হাসান ৷

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী লিখেছেন, ২৬ মার্চ সকাল ৯টায় আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে প্রচার করা হয়। এদিন অস্ট্রেলিয়ার বেতারে (এবিসি) ঢাকার গণহত্যার খবর প্রচার করা হয়। এদিকে ঢাকায় সেনানিবাসের ভেতরে আদমজী কলেজ থেকে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে তাকে সারাদিন আটক রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় ৷

সন্ধ্যায় রেডিও পাকিস্তানে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাংলার চলমান আন্দোলনকে ‘দেশদ্রোহিতা’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগকে ‘নিষিদ্ধ’ করেন। রাতে গণহত্যা শুরুর পরপরই বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ শুরু করে বাঙালিরা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ও পিলখানা ইপিআরে সশস্ত্র প্রতিরোধ পাকিস্তানি সেনাদের ভারী অস্ত্রের সামনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। চট্টগ্রাম ও নওগাঁ, জয়দেবপুর বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয় এদিন।

এদিকে ২৫শে মার্চ রাতে শুরু করা গণহত্যা ২৬ মার্চেও চালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে ভবন, বস্তি, বাজারে ভারী মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। শহরের ঘনবসতির অনেক এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও গুলি করে বাঙালিদের হত্যা করা হয়।

২৫ তারিখ রাত থেকে ২৬ তারিখ ভোর পর্যন্ত ট্যাংক, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রকেট, ভারী মর্টার, হালকা মেশিনগানসহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মী হত্যার এক উন্মত্ততা চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৎকালীন ইকবাল হল, সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, মহসীন হল, ফজলুল হক হল, রোকেয়া হলসহ শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় আক্রমণ চালিয়ে ড. জি সি দেব, ড. মুনিরুজ্জামান, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য্য, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাসহ (আহত হয়ে পরে মারা যান) নয়জন শিক্ষককে ঘরে ঢুকে হত্যা করে পাকিস্তানিরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে চালানো হয় পৈশাচিক বর্বরতা। পরে হলের অন্তত একটি কক্ষে ছয়জন ছাত্রীর নগ্ন মরদেহ পা-বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই গণহত্যায় শহীদদের বেশিরভাগের মরদেহ বিভিন্ন হল সংলগ্ন মাঠে মাটিচাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালিয়ে দেওয়া হয়। সেনারা সকালে ক্যাম্পাসে থাকা জীবিত কর্মচারীদের দিয়ে শহীদদের মৃহদেহ গর্তে ফেলতে বাধ্য করে এবং তাদেরও লাশের স্তূপের পাশে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে খুন করে। 

২৫ মার্চ রাতে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক কতজনকে হত্যা করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা আজও হয়নি। যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় তেমন ১৯৫ জনের নাম আছে; যাদের মধ্যে জগন্নাথ হলের ৬৬ জন। সেদিন ভোরে অর্থাৎ ২৬ মার্চ, পাকিস্তানিদের গুলিতে ঘরের মাঝেই প্রাণ হারান মধুর ক্যান্টিনের প্রতিষ্ঠাতা মধুসূদন দের স্ত্রী যোগমায়া, সদ্যবিবাহিত বড় ছেলে রণজিৎ ও পুত্রবধূ রীনা রানী। অসুস্থ মধুসূদন দে লুকিয়ে থেকে প্রাণ বাঁচালেও ঘণ্টাখানেক পর পাকিস্তানিরা আবার ফিরে এসে তাকে ধরে নিয়ে জগন্নাথ হলের মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, শিক্ষকদের সঙ্গে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।

এদিন ভোর বেলা ৩৬ এলিফেন্ট রোডের বাসায় আগরতলা মামলার ২ নম্বর অভিযুক্ত পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। তার মরদেহ জিপে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই মৃতদেহ আর পাওয়া যায়নি।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’, বিবিসি, ডয়চে ভেলে, তোফায়েল আহমেদ-এর সাক্ষাৎকার)।


বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা   স্বাধীনতা দিবস   ২৬ মার্চ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর ‘অপারেশন সার্চলাইট’- ২৫ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০৩ এএম, ২৫ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর নারকীয় গণহত্যা।

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র, নিরপরাধ ও ঘুমন্ত সাধারণ বাঙালির ওপর যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার নজির। ২০১৭ সাল থেকে এ দিনটি ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করা হচ্ছে। একটি জনগোষ্ঠীর স্বাধিকারের দাবিকে চিরতরে মুছে দিতে ঢাকায় চালানো ওই হত্যাযজ্ঞের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’।

বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক নতুন একটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হয় এই মাসেই। এই মার্চ মাসেই বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর নারকীয় গণহত্যা চালায় তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী । উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র পঞ্চবিংশ পর্বে থাকছে ২৫ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। ২৫ মার্চ সকাল থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা পণ্ড হয়ে গেছে- এ খবর দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ায় বীর বাঙালি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে নেতার নির্দেশের অপেক্ষায়। বঙ্গবন্ধু বেশ কয়েকবার ঘর থেকে বেরিয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টকে দেওয়া সংবিধানের খসড়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পেশ করা এবং অনুমোদনের জন্য সময় নির্ধারণের কথা ছিল এদিন। ইয়াহিয়ার সহযোগী জেনারেল এসজিএমএম পীরজাদা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ফোন করে জানাবেন। সারাদিন ধরেই আওয়ামী লীগের নেতারা টেলিফোনের অপেক্ষায়, কিন্তু সেই ফোন আর আসেনি।

এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ভুট্টো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পরিস্থিতি সঙ্কটজনক’। ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠকের পরই জেনারেল ইয়াহিয়া গোপনে বৈঠক করেন পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের সামরিক প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান, চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ উচ্চপদস্থ সেনা কর্তাদের সঙ্গে।

এদিন বেলা ১১টার দিকে একটি হেলিকপ্টারে করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জানজুয়া, মেজর জেনারেল মিঠঠা খান, মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও মেজর জেনারেল ওমরসহ আরও কয়েকজন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা রংপুর, রাজশাহী, যশোর, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সেনানিবাস সফর করেন। বিকাল থেকেই পাকিস্তানি সেনারা হেলিকপ্টারে টহল দিতে থাকে, সব ধরনের সামরিক সংস্থার সদস্যদের বার্তা দিতে থাকে অবশ্যম্ভাবী এক সামরিক অপারেশনের জন্য প্রস্তুত থাকতে।

প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান কোনো রকম ঘোষণা ছাড়াই গোপনে সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে চলে যান। তিনি নিরাপদে পশ্চিম পাকিস্তানে নামতেই পূর্ব পাকিস্তানে তৎপর হয়ে ওঠে তার বাহিনী। এদিকে ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যায় বঙ্গবন্ধুর কাছে। রাত ৯টার দিকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে উপস্থিত দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বেশি আগ্রহী। এ অবস্থায় আমাদের পথ আমাদেরই দেখতে হবে। সবাইকে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

দাবানলের মত ঘরে ঘরে খবর পৌঁছে যায় যে ইয়াহিয়া ‘ঢাকা ছেড়ে পাকিস্তান পালিয়ে গেছে’। বাঙালি বুঝে ফেলে- কিছু একটা ঘটবে। রাতেই পথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা এবং গড়ে তোলে অসংখ্য ব্যারিকেড। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে করণীয় সম্পর্কে স্পষ্ট হলেও বাঙালি প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল ২৫ মার্চ। প্রতিরোধে সম্পৃক্ত থাকা ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু একটা হতে চলেছে সে আন্দাজ ছিল ষোলআনা। বিকাল থেকেই পথে পথে ব্যারিকেড দিয়ে বাংলার মানুষ জানান দিতে চেয়েছিল, কোনও আক্রমণ সহজ হবে না। সমান শক্তিকে প্রতিরোধ করবে জনতা। যখন বাঙালি প্রতিরোধ শুরু করছে, তখন প্রতিরোধের স্বর নিশ্চিহ্ন করতেই ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলার পরিকল্পনা হয়েছে।

রাত ১০টার দিকে ঢাকা সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনীর একটি বড় কনভয় যুদ্ধ সাজে শহরের দিকে রওনা হয়। শহরমুখী সেনাবাহিনীর মেকানিক্যাল কলামটি প্রথম প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় ফার্মগেইটে। সেখানে বড় বড় গাছের গুঁড়ি, অকেজো স্টিম রোলার এবং ভাঙা গাড়ির স্তূপ জমিয়ে রাখা হয়েছিল পথ আটকানোর জন্য। মুক্তিকামী বেপরোয়া প্রতিরোধোন্মুখ জনতার মাঝ থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান উঠছিল।

গুলি করে এ প্রতিরোধ ভেঙে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ট্যাংকগুলো সামনে এগিয়ে যায়। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রেসকোর্স ময়দানের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে সেনাবাহিনীর অন্তত ৮০টি সাঁজোয়া যানকে পূর্ণ যুদ্ধপ্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। রাত ১১টা ২০ মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি অংশ রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের চারিদিকে অবস্থান নিতে শুরু করে। এ আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে সারাদেশের জেলা ও সাব ডিভিশনে বেতার বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়।

রাত সাড়ে ১১টার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাদের কনভয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আক্রমণ শুরু করে। ব্যারাকে অবস্থানরত বাঙালি পুলিশ সদস্যরা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে পাল্টা গুলি করে। একই সময়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২২তম বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা পিলখানায় ইপিআর-এর ওপর হামলা করে। ব্যারাকে থাকা বাঙালি সেনারা চরম সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন।

পিলখানা ইপিআর ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাঁখারি বাজারসহ সমগ্র ঢাকাতে শুরু হয় প্রচণ্ড আক্রমণ; বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় রাতের অন্ধকারে গুলি, বোমা আর ট্যাংকের আওয়াজে প্রকম্পতি পুরো শহর। সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, এবং বস্তিবাসীর ওপর নজিরবিহীন নৃশংসতা চালায়।

রাত ১টার পর পাকিস্তানের সেনারা ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান নিয়ে ধানমণ্ডির বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। অনেকেই আত্মগোপনে যেতে বললেও বঙ্গবন্ধু যাননি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে না পেলে ওরা ঢাকা জ্বালিয়ে দেবে।’ মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন।

ইংরেজিতে ঘোষণার বক্তব্য ছিল—‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ  থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানেই আছো এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’ একইসঙ্গে তিনি বাংলায় যে বার্তা পাঠান সেটি হলো, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিআর ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে, আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি।’

বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার সম্পর্কে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে সৈয়দ বদরুল আহসান রচিত ‘ফ্রম রেবেল টু ফাউন্ডিং ফাদার’ বইকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। লেখকের বর্ণনায়, ‘কর্নেল জেড এ খানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটা দল ৩২ নম্বর ধানমণ্ডিতে গিয়েছিল। সেখানে পৌঁছাতেই সেনা সদস্যরা গুলি চালাতে শুরু করে। শেখ মুজিবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাঙালি পুলিশ সদস্য গুলিতে মারা যান।’

বঙ্গবন্ধু দোতলা থেকে চেঁচিয়ে বলে ওঠেন ‘ফায়ারিং বন্ধ কর।’

সাংবাদিক বি জেড খুসরু তার বই ‘মিথস অ্যান্ড ফ্যাক্টস বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার’- এ লিখেছেন ‘গুলি বন্ধ হওয়ার পরে কর্নেল খান বাসায় ঢোকেন। দোতলায় যান। মুজিব একটা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শেখ মুজিবকে কর্নেল নির্দেশ দেন তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। তিনি জানতে চেয়েছিলেন পরিবারকে বিদায় জানিয়ে আসতে পারেন কিনা। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি।’

খুসরু আরও লিখেছেন, ‘কর্নেলকে শেখ মুজিব জিজ্ঞাসা করেন, আসার আগে আমাকে জানানো হল না কেন? কর্নেল উত্তর দিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী আপনাকে দেখাতে চেয়েছিল যে আপনাকে গ্রেপ্তারও করা যেতে পারে।’

জেড এ খান ‘দা ওয়ে ইট ওয়াজ’ বইতে লিখেছেন, ‘শেখ সাহেবকে গ্রেপ্তার করার পরে ৫৭ ব্রিগেডের মেজর জাফর ওয়ারলেস মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, ‘বিগ বার্ড ইন কেইজ, স্মল বার্ডস হ্যাভ ফ্লোন’।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দিক সালিক লিখেছেন, ‘ওই রাতে মুজিবের সঙ্গে থাকা সব পুরুষকে আমরা গ্রেপ্তার করে এনেছিলাম। পরে চাকর বাকরদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আদমজী স্কুলে সবাইকে ওই রাতে রাখা হয়েছিল। পরের দিন ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’

গ্রেপ্তারের তিন দিন পরে বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে মেজর সালিক লিখেছেন, ‘পরে আমার বন্ধু মেজর বিলালের কাছে জানতে চেয়েছিলাম গ্রেপ্তার করার সময়েই মুজিবকে খতম করে দিলে না কেন? বিলাল বলেছিল, জেনারেল টিক্কা খান ব্যক্তিগতভাবে ওকে বলেছিলেন যে কোনও উপায়ে শেখ মুজিবকে জীবিত গ্রেপ্তার করতে হবে।’

গণহত্যার এই রাতে সেনাবাহিনী অগ্নিসংযোগ করে দৈনিক ইত্তেফাক, পিপলস, গণবাংলা ও সংবাদ-এর কার্যালয়ে।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদীর ‘৭১ এর দশমাস’, বিবিসি বাংলা)।


উত্তাল মার্চ   দিনগুলো   বাঙালি   ভয়ঙ্কর   অপারেশন সার্চলাইট   ২৫ মার্চ   ১৯৭১  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

২৫শে মার্চের কালো রাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৫ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থায় ২৫ মার্চের খবর প্রকাশ।

‘তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,- শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো- দানবের মত চিৎকার করতে করতে- তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা,- ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো।- রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।- তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা- অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের উপর।’- কবি শামসুর রহমানের কবিতার চরণগুলো শিরায় শিরায় ধমনীতে ধমনীতে শিহরণ তুলে মনে করিয়ে দেয় ১৯৭১ সালের সেই ভয়াল ২৫ শে মার্চের কালোরাত্রির কথা।   

অপারেশন সার্চলাইট, ২৫ শে মার্চ ১৯৭১। পৃথিবীর বুকে নৃশংসতম এক গণহত্যার নাম। বাঙালি যখন তার অধিকারকে আঁকড়ে ধরেছিল, বর্বর পাকিস্তানিরা তখনই বুঝতে পেরেছিল কোনো কিছু দিয়েই এই জাতিকে দমিয়ে রাখা যাবে না। তাই একাত্তরের সেই রাতে শুরু করে জঘন্যতম গণহত্যা। যা জন্ম দেয় মুক্তিযুদ্ধের। শুরু হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। 

আজ ভয়াল ২৫ মার্চ। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এইদিন শেষে এক ভয়াল বিভীষিকাময় রাত নেমে এসেছিল। মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালী জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালীদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

একাত্তর সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আটক হওয়ার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তিনি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকেই সেই ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। মধ্যরাতেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইপিআরের ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ডাক দেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র তা সম্প্রচার শুরু করে ২৬ মার্চ। তৎকালীন রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেতারের চট্টগ্রামের কয়েকজন কর্মী শহর থেকে অনেকটা দূরে নিরাপদ জায়গা হিসেবে কালুরঘাটে বেতারের ছোট্ট একটি কেন্দ্রে তাদের প্রথম অনুষ্ঠান করেন। ওই অনুষ্ঠানেই স্বাধীনতার সেই ঘোষণা প্রথম সম্প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধুর নামে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার পরিস্থিতি ও বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের ঘটনা ২৭ মার্চে বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশের পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ হয়। দিল্লির দ্য স্টেটসম্যান-এর খবর ছিল, ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে, সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে শেক মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপ। একটি গোপন বেতার থেকে প্রচারিত ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের পূর্বাংশকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে নতুন নামকরণ করেছেন।’ 

ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার রাত ১০টা ৩০মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী প্রদান করবেন এবং সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে।

এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সারাদেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সকল সিটি কর্পোরেশনগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এদিন বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। 

বাঙালীর স্বাধীনতার আকাঙ্খা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।

এই অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করে পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে, মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো ‘অপারেশন সার্চলাইট’ সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।

অপারেশন সার্চলাইট কিভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি।’ 

পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তাঁর কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হল আরো ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে। 

ঢাকার ইপিআর সদর দফতর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে উঠে বিভীষিকাময়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসাবে পাক সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চ লাইট শুরুর মুহূর্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহূর্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’

পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোন মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। 

বঙ্গবন্ধুর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।


২৫শে মার্চ   কালো রাত   স্বাধীনতা   ঘোষণা   বঙ্গবন্ধু   অপারেশন সার্চলাইট  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন