ইনসাইড আর্টিকেল

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’ ব্যবস্থার প্রবর্তণ

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’ ব্যবস্থার প্রবর্তণ।

আজ ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার সেই ২৫ জানুয়ারি- একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই তারিখে এদেশের রাজনীতিতে রচিত হয়েছিল নতুন ইতিহাস, সূচনা হয়েছিল রাজনীতির এক নতুন অধ্যায়। ওইদিন সংসদে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক পেশকৃত সংবিধানের  চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস হয়। এর মাধ্যমে দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন তথা ‘বাকশাল’ (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক লীগ) গঠনের পথ উন্মুক্ত হয়। 

একইসঙ্গে এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। অত্যন্ত অশ্চর্যজনক বিষয় যে, সে সময়ে ভেতরে ভেতরে সরকার বিরোধী চক্রের অনেকেই সরকার হঠানোর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যা, খুন, গুমসহ নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত থাকলেও ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার সেই দিনে মাত্র ১১ মিনিটে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস হয়েছিল। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বিলটি নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা বা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়নি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিলটি জাতীয় সংসদে ২৯৪ ভোটে পাশ হয়। এই বিলের বিরোধীতা করেন মাত্র ৩ জন বিরোধী, ১ জন স্বতন্ত্র সদস্য ‘ওয়াক আউট’ করেন। ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা অনেকেই মনে মনে করলেও জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে কেউ গলার সর উঁচু করতে সাহস করেননি, এমন কি প্রকাশ্যে খুব কম সংখ্যক সংসদ সদস্যই বিরোধীতা করেছিলেন।  

‘বাকশাল’ ব্যবস্থা প্রনয়ণ এবং জাতীয় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রসহ তাদের অনুসারীরা ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করলেও- এর একটি সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল। যে কারণটি ছিল দেশ গঠনের দ্বিতীয় বিল্পব এবং হানাহানি, লোভ-লালসা থেকে অবসান। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে নিবেদিত। ঠিক তখনও সক্রিয় ছিলো এই দেশবিরোধী চক্র। নিজেদের দেনা-পাওনা-চাহিদা পূরণ না হওয়ায় ভেতরে ভেতরে ফুঁসে ওঠতে থাকে এই চক্রটি। ওই সময়ে চক্রটি সরকার হঠানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে ওঠে। বর্তমান বাংলাদেশেও এই চক্রটি এখনও বিদ্যমান। 

গণতান্ত্রিক সংসদীয় রাজনীতিক দলের সুযোগ নিয়ে সে সময় অনেকেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এরা গোপনে চক্রান্ত করে সরকার হঠানোর কৌশলে নিমত্ত হয়। স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠন এবং বামপন্থী দলের কর্মীরা সরকার দলীয় অনেক নেতাকে হত্যা করে। তারা তখন সর্বত্র খুন, হানাহানি এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছিল। রাজনৈতিক এমন অস্থিরতা বিরাজ দেখে- তা নিরসন করতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাকশাল’ গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এছাড়া সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনার পিছনে রাজনৈতিক সমস্যা ছাড়াও অর্থনৈতিক সংকট ছিল অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে মহাবিপর্যয় দেখা দেয়। পরপর কয়েক বছর বন্যা ও খরার কবলে পড়ে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর ফলে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তার উপর বিশ্বব্যাপি মুদ্রাস্ফীতির কারণে অত্যাধিক মূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে আমাদানি করতে হয় এবং সে সময় রফতানিতেও ছিল বেহাল দশা। রফতানিকৃত পণ্যের সঠিক মূল্য না পাওয়া, কালোবাজারী ও চোরাচালান বেড়ে যাওয়া, দুর্নীতি ইত্যাদির ফলে তখন দেশে একটি মারাত্মক অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। বিদেশ থেকে যেসব সাহায্য সহযোগিতা এসেছিল, সেগুলোরও সঠিক বন্টন হয়নি লুটেরা নেতাদের কারণে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এসব কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। দেশব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতেও সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়।

সেই সময়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিলেও সবাই যে সে নির্দেশ পালন করেছিল, তা বলা যায় না। তার ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর ফেলে যাওয়া প্রচুর অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে আল-বদর, আল-শামস, রাজাকার, শান্তিকমিটি ও চীনপন্থী বিভ্রান্ত বিপ্লবীদের নানা দল-উপদল রাষ্ট্রে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি শুরু করেছিল। দেশের বেশ কয়েকটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে নানা নামে বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে এরা বিরোধিতা করেছিল; বিশেষ করে পিকিংপন্থী বিভ্রান্ত বামধারার সশস্ত্র বিভিন্ন দল-উপদল, যারা স্বাধীন দেশে প্রকাশ্য দিবালোকে অস্ত্র প্রদর্শন, লুটপাট, থানা ও ফাঁড়িতে হামলা ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে গুপ্তহত্যাও শুরু করেছিল। নিঃসন্দেহে এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তৃত্বের প্রতি ছিল একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। ১৯৭৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লুট হয়েছিল প্রায় ১৯টি থানা ও ফাঁড়ি। স্বাধীনতার প্রথম বছরে ৩৩৭টি ছিনতাই, প্রথম ১৬ মাসে ২৩০৫টি গুপ্তহত্যা এবং প্রথম দুই বছরের মধ্যেই ৪৯০৭টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল । এসব গুপ্তহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর সেটা করেছিল বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন বিদেশি সংস্থার দালালরা।

সেই সময় বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। মার্কসবাদী এবং মস্কোপন্থীরা দেশের অভ্যন্তরে গোপনে উগ্র কার্যকলাপে ব্যস্ত ছিল। এরা সমগ্র দেশে গুপ্ত হত্যা, লুণ্ঠন, রাহাজানি করতে থাকে। ফলে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ১৯৭৪ সালে এক অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে। ফলে সব দিক বিবেচনা করেই দেশ পুনর্গঠনে বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।   

এ সময় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি  ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর নিকট তার প্রেরিত এক বাণীতে ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুর সুস্বাস্থ্য ও সাফল্য কামনা করেন।

‘বাকশাল’ ব্যবস্থা ছিল রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়ে 'বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ' (বাকশাল)- নামে জাতীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন। এই দলের চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু নিজে এবং সম্পাদক হন এম মনসুর আলী। বাকশাল গঠনের মাধ্যমে এটি বাংলাদেশের একমাত্র জাতীয় দল হিসেবে পরিগণিত হয়। আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ পদক্ষেপকে তিনি তার ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’র সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বাকশালের দর্শন বাস্তবায়নের জন্য ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন দেশের সবক’টি সংবাদপত্রও বিলুপ্ত করেছিলেন। সে সময় শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনায় দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ অবজারভার এবং বাংলাদেশ টাইমস- এ চারটি পত্রিকা সাময়িকভাবে প্রকাশনার সুযোগ দেয়া হয়।

এর আগে ওই বছরের ৭ জুন বাকশালের গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী ও কেন্দ্রীয় কমিটি, পাঁচটি ফ্রন্ট এবং এর কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় দলের চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল পদে প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর নাম ঘোষণা করেন। জিল্লুর রহমান, শেখ ফজলুল হক মণি ও আবদুর রাজ্জাককে দলের সেক্রেটারি করা হয়। বাকশাল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে যে পাঁচটি ফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, সেগুলো হলো- জাতীয় কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় মহিলা লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় ছাত্রলীগ। এর সেক্রেটারিরা হলেন যথাক্রমে ফণীভূষণ মজুমদার, অধ্যাপক ইউসুফ আলী, বেগম সাজেদা চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ এবং শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৫ জনকে নিয়ে কার্যনির্বাহী কমিটি এবং ১১৫ জন সদস্য রাখা হয়েছিল কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

বাকশাল-এর কার্যনির্বাহী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন যারা: 

কার্যনির্বাহী কমিটি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- চেয়ারম্যান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ, আবুল হাসানাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আবদুল মালেক উকিল, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, শ্রী মনোরঞ্জন ধর, ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, শেখ আবদুল আজিজ, মহীউদ্দিন আহমদ, গাজী গোলাম মোস্তফা, জিল্লুর রহমান- সেক্রেটারি, শেখ ফজলুল হক মনি-সেক্রেটারি  এবং আবদুর রাজ্জাক-সেক্রেটারি হিসেবে কমিটিতে ছিলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি

কেন্দ্রীয় কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রাষ্ট্রপতি এবং চেয়ারম্যান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম- উপ-রাষ্ট্রপতি, এম মনসুর আলী- প্রধানমন্ত্রী এবং সেক্রেটারী জেনারেল, আবদুল মালেক উকিল-  স্পীকার, খন্দকার মোশতাক আহমদ- বাণিজ্য ও বহির্বাণিজ্যমন্ত্রী, আবুল হাসানাত মোহাম্মদ কামরুজ্জামান- শিল্পমন্ত্রী, মুহম্মদ উল্লাহ- ভূমি রাজস্ব ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রী, আবদুস সামাদ আজাদ- কৃষিমন্ত্রী, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী- শ্রম, সমাজকল্যাণ ও ক্রীড়ামন্ত্রী, শ্রী ফণী মজুমদার- স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, ড. কামাল হোসেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন- গণপূর্ত ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী, আব্দুল মান্নান- স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী, আবদুর রব সেরনিয়াবত- বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও বন, মৎস্য ও পশুপালন মন্ত্রী, শ্রী মনোরঞ্জন ধর- আইন, সংসদ বিষয়াবলী ও বিচারমন্ত্রী, আব্দুল মমিন- খাদ্য, বেসামরিক সরবরাহ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী, আসাদুজ্জামান খান- পাটমন্ত্রী, এম কোরবান আলী- তথ্য বেতারমন্ত্রী, ড. আজিজুর রহমান মল্লিক- অর্থমন্ত্রী, ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী- শিক্ষামন্ত্রী, তোফায়েল আহমেদ- রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন- চীফ হুইপ, আবদুল মমিন তালুকদার- সমবায় প্রতিমন্ত্রী, দেওয়ান ফরিদ গাজী- বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী- প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী, তাহের উদ্দিন ঠাকুর- তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী, মোসলেম উদ্দিন খান- পাট প্রতিমন্ত্রী, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মঞ্জুর- যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী, কে এম ওবায়দুর রহমান- ডাক, তার ও টেলিফোন প্রতিমন্ত্রী, ডা. ক্ষিতীশচন্দ্র মণ্ডল- ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রতিমন্ত্রী, রেয়াজ উদ্দিন আহমেদ- বন, মৎস্য ও পশুপালন প্রতিমন্ত্রী, এম বায়তুল্লাহ- ডেপুটি স্পীকার, রুহুল কুদ্দুস- রাষ্ট্রপতির প্রধান সচিব, জিল্লুর রহমান এমপি- সেক্রেটারী, মহিউদ্দিন আহমদ এমপি, শেখ ফজলুল হক মণি- সেক্রেটারী, আব্দুর রাজ্জাক এমপি- সেক্রেটারী, আনোয়ার চৌধুরী, বেগম সাজেদা চৌধুরী এমপি, বেগম তসলিমা আবেদ এমপি, জনাব আবদুর রহিম- দিনাজপুর, আব্দুল আওয়াল এমপি- রংপুর, লুৎফর রহমান এমপি- রংপুর, এ কে মুজিবুর রহমান এমপি- বগুড়া, ড. মফিজ চৌধুরী এমপি- বগুড়া, ডা. আলাউদ্দিন এমপি- রাজশাহী, ডা. আসহাবুল হক এমপি- কুষ্টিয়া, জনাব রওশন আলী এমপি- যশোর, শেখ আবদুল আজিজ এমপি- খুলনা, সালাহ উদ্দিন ইউসুফ এমপি- খুলনা, মি. মাইকেল সুশীল অধিকারী- খুলনা, কাজী আবুল কাশেম এমপি- পটুয়াখালী, মোল্লা জালাল উদ্দিন আহমদ এমপি- ফরিদপুর, শামসুদ্দিন মোল্লা এমপি- ফরিদপুর, শ্রী গৌরচন্দ্র বালা- ফরিদপুর, গাজী গোলাম মোস্তফা এমপি- ঢাকা, শামসুল হক এমপি- ঢাকা, সামসুদ্দোহা এমপি- ঢাকা, রফিক উদ্দিন ভূইয়া এমপি- ময়মনসিংহ, সৈয়দ আহমদ- ময়মনসিংহ, শামসুর রহমান খান এমপি- টাঙ্গাইল, নুরুল হক এমপি- নোয়াখালী, কাজী জহিরুল কাইউম এমপি- কুমিল্লা, ক্যাপ্টেন সুজাত আলী এমপি- কুমিল্লা, এম আর সিদ্দিকী এমপি- চট্টগ্রাম, এম এ ওয়াহাব এমপি- চট্টগ্রাম, শ্রী চিত্তরঞ্জন সূতার এমপি, সৈয়দা রাজিয়া বানু এমপি, আতাউর রহমান খান এমপি, খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস, শ্রী মং প্রু সাইন- মানিকছড়ির রাজা, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, আতাউর রহমান, পীর হাবিবুর রহমান, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মোহাম্মদ ফরহাদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ, তৌফিক ইমাম- সচিব- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, নুরুল ইসলাম- সচিব, ফয়েজ উদ্দিন আহমদ- সচিব, মাহবুবুর রহমান- সচিব- সংস্থাপন বিভাগ, আবদুল খালেক- উপরাষ্ট্রপতির সচিব, মুজিবুল হক- সচিব- প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, আব্দুর রহিম- রাষ্ট্রপতির সচিব, মইনুল ইসলাম- সচিব- পূর্ত গৃহনির্মাণ ও শহর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়, সৈয়দুজ্জামান- সচিব- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আনিসুজ্জামান- সচিব, ড. এ সাত্তার- রাষ্ট্রপতির সচিব, এম এ সামাদ- সচিব- যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, আবু তাহের- সচিব- ভূমি প্রশাসন ও ভূমি সংস্কার মন্ত্রণালয়, আল হোসায়নী- সচিব- বিদ্যুৎ শক্তি মন্ত্রণালয়, ডা. তাজুল হোসেন- সচিব- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মতিউর রহমান- চেয়ারম্যান- টিসিবি, মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ- বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খোন্দকার- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান, কমোডর এম এই খান- বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান, মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান- মাহাপরিচালক বিডিআর, এ কে নাজির উদ্দিন আহমদ- গভর্নর- বাংলাদেশ ব্যাংক, ড. আবদুল মতিন চৌধুরী- উপাচার্য- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মাযহারুল ইসলাম- উপাচার্য- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ড. মুহম্মদ এনামুল হক- উপাচার্য- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, এটিএম সৈয়দ হোসেন- অতিরিক্ত সচিব, নুরুল ইসলাম- আইজিপি- পুলিশ, ড. নীলিমা ইব্রাহীম, ড. নুরুল ইসলাম- পরিচালক- পিজি হাসপাতাল, ওবায়দুল হক- সম্পাদক- বাংলাদেশ অবজার্ভার, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু- সম্পাদক- ইত্তেফাক, মিজানুর রহমান- প্রাক্তন প্রধান সম্পাদক- বিপিআই, আনোয়ারুল ইসলাম- যুগ্ম সচিব- রাষ্ট্রপতির সচিবালয়, ব্রিগেডিয়ার এ এন এম নুরুজ্জামান- পরিচালক- জাতীয় রক্ষী বাহিনী, কামারুজ্জামান- সভাপতি- বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, ডা. মাজহার আলী কাদরী- বাংলাদেশ চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ছিলেন।


জাতির পিতা   বঙ্গবন্ধু   বাকশাল   প্রবর্তণ   ১৯৭৫ সাল   একদলীয় শাসন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন