ইনসাইড আর্টিকেল

চমেক হাসপাতালে সেবা, শয্যা বাড়লেও বাড়েনি জনবল

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

৬৬ বছরের পুরনো চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ছয় দশকে ধীরে ধীরে শয্যা বাড়লে ও জনবল কাঠামো রয়ে গেছে ৫ দশকের আগের মতো। সেই পাঁচশো শয্যার জনবল দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সেখানেও রয়েছে ঘাটতি। ৫শ’ শয্যার জন্য চমেকের অনুমোদিত ২ হাজার ৩৪৭ পদের বিপরীতে শূন্যপদ রয়েছে ৩২৮টি। চিকিৎসক, নার্সের ঘাটতি ছাড়াও হাসপাতালে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর অভাব। তবে লোকবলের ঘাটতি থাকলেও গত দুই বছরে বেড়েছে সেবার পরিমাণ। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে হাসপাতালের লোকবল বাড়াতে একের পর পদক্ষেপ নিচ্ছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রতিবারই আড়ালে রয়ে যাচ্ছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদের শূন্যতার বিষয়টি। 

চমেক সূত্রে জানা যায়, গত দুই বছর অর্থাৎ ২০২১ ও ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রোগীর হার বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। বড় অপারেশনের হার বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ছোট অপারেশনের হার বেড়েছে ২৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। বর্হিবিভাগে রোগীর হার বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগে রোগী বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কিন্তু সে অনুপাতে হাসপাতালে লোকবল রয়েছে ২ হাজার ১৯ জন। অর্থাৎ ২ হাজার ১৯ জন লোকবল দিয়ে চলছে ২ হাজার ২০০ শয্যার চমেক হাসপাতাল। যেখানে এ শয্যার বিপরীতে লোকবলের প্রয়োজন ছিল আরও চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। তারমধ্যেও পাঁচশো শয্যার বিপরীতে থাকা লোকবলেও ঘাটতি রয়েছে।  

চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ ৩৬০টি আর লোকবল রয়েছে ৩৩০ জন। পদ খালি রয়েছে ৩০টি যা ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। দন্ত চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ২৪টি। লোকবল আছে ২০টি। এখনো চার জন দন্ত চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। যা শতকরায় ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। নার্সের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১ হাজার ২৫৩টি। আর হাসপাতালে নার্স রয়েছে ১ হাজার ২০১ জন। আরও ৫২ জন নার্সের ঘাটতি রয়েছে হাসপাতালটিতে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ রয়েছে ৪৪টি কিন্তু লোকবল রয়েছে ৩৩টিতে। আরও ২৫ শতাংশ বা ১১টি পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য অনুমোদিত ৫৬৫টি পদের মধ্যে ১৮৫টি শূন্য রয়েছে। এছাড়াও প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদের অনুমোদিত পদসংখ্যা ২৪৮টি। কিন্তু শূন্যপদ রয়েছে ১৯৩টি। তারমধ্যে অফিস সহায়কের পদ খালি রয়েছে ১১৭টি ও ক্লিনারের ২২টি। অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত চট্টগ্রামের সরকারি এ হাসপাতালের পদ খালি রয়েছে ১৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। 

এদিকে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০২১ সালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৯১২ জন। প্রতিমাসে ১৭ হাজার ৪৯৩ জন। ২০২২ সালে সে হার ১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয় ২ লাখ ৪৭ হাজার ১২২ জন। আর প্রতি মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৫৯৪ জন। ২০২১ সালে বড় অপারেশন করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪২৫টি। প্রতি মাসে অপারেশন হয় ১ হাজার ২৮৫টি। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বড় অপারেশনের হার ৭৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৪৯২টি। যা প্রতি মাসে গড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৯১টিতে। একইভাবে ২০২১ সালে চমেকে ছোট অপারেশন হয় ১৯ হাজার ১৪৪টি। প্রতি মাসে ছোট অপারেশন হয় ১ হাজার ৫৯৫টি। এর পরের বছর ২০২২ সালে ছোট অপারেশনের হার বেড়েছে ২৩২ দশমিক ৯৬ শতাংশ যা সংখ্যায় ৬৩ হাজার ৭৪২টি। প্রতি মাসে ছোট অপারেশনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩১২ জনে। গত দুই বছরে ভর্তি রোগীর পাশাপাশি বর্হিবিভাগেও বেড়েছে রোগীর হার। ২০২১ সালে বর্হিবিভাগে রোগী ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৯৮৯ জন। প্রতিমাসে ৫০ হাজার ৭৪৯ জন রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয়। পরের বছর ৩৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ রোগীর হার বেড়ে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নেয় ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৮ জন। প্রতি মাসে যা ছিল ৭০ হাজার ৫৩০ জনে। একইসঙ্গে জরুরি বিভাগেও রোগী বেড়েছে ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ২০২১ সালে জরুরি বিভাগে রোগী ছিল ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯২২ জন। যা প্রতি মাসে ১৯ হাজার ৯৯৩ জন রোগী। ২০২২ সালে সে সংখ্যা প্রতি মাসে ২৪ হাজার ৪৮২ জন করে বছরে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ জন। 

অন্যদিকে, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৬৮৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়াও বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে প্রতিদিন ২ হাজার ৩৫১ জন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নেয় প্রতিদিন ৮১৬ জন করে। তারমধ্যে প্রতিদিন বড় অপারেশন করা হয়েছে ৭৬ জন রোগীর এবং ছোট অপারেশন করা হয়েছে ১৭৭ জনের। 

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান  বলেন, ‘পাঁচশো শয্যার জনবল দিয়ে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়াটা কঠিন হয়ে যায় আমাদের জন্য। তারপরেও আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আরও চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী নিয়োগ দিতে হলে অর্গানোগ্রাম পরিবর্তন করতে হবে। আমরা একটি নতুন অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজ করছি।'

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতি রয়েছে বেশি। এরপরে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ঘাটতি রয়েছে। এখন যে কম  আছে সেটা আমাদের পাঁচশো শয্যার জনবলের হিসেবে। এখন আমাদের হাসপাতাল ২২শ’ শয্যার অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়েনি। বিষয়গুলো আমরা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। এর বাইরে আমরা চাইছি যে আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির যেসকল কর্মচারীরা আছেন তারা যদি প্রশিক্ষিত হয় তাহলে হাসপাতালের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে। আমরা আরও উন্নত সেবা দিতে পারবো রোগীদের।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১৯৫৭ সালে আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম শহরের কেবি ফজলুল কাদের রোড অর্থাৎ বর্তমান ঠিকানায় এটি স্থানান্তরিত হয়। যেখানে শুরুতে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ১২০। পরবর্তীতে হাসপাতালটিকে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায়, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যায়, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩১৩ শয্যায় এবং ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়।


চট্টগ্রাম মেডিকেল   জনবল   সেবা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

মালেশিয়ায় রমজানে বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০২ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম উন্নয়নশীল দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১ শতাংশই মুসলিম। তবে বহুজাতিক ও বহুভাষী মানুষের দেশ মালয়েশিয়া। ফলে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি বৈচিত্র্যময়। জাতিগত বৈচিত্র্যের মধ্যেও রয়েছে মালয়েশিয়ানদের ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন। আর এই বন্ধন পবিত্র রমজানে আরও স্পষ্ট হয়।

রমজানের আগে থেকেই এই দেশটিতে শুরু হয় মাসটিকে উদযাপনের প্রস্তুতি। সাধারণত রমজান শুরু হওয়ার ঠিক এক সপ্তাহ আগের জুমার নামাজের আগেই নির্ধারণ করা হয় যে কোন দিন এলাকার সব মুসল্লি একত্র হয়ে মসজিদ ও তার চারপাশের আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করবেন। পরিচ্ছন্নতার এই কাজকে মালয় ভাষায় বলা হয় ‘গোটোং রোয়ং’ অর্থাৎ পারস্পরিক সহযোগিতায় কোনো কাজ করা। শুধু মসজিদই নয়, ঘরবাড়িও সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা হয়। বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মাঝেও এই বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কাজেই মালেশিয়ানদের সাথে বাঙালি মুসলিমদের সংস্কৃতির একটি মিল খুঁজে পাওয়া যায়।  

শাহরুন মোবারাকুন

মালয়েশিয়ায় রমজান মাসের আগমনী বার্তা সবার কানে পৌঁছে যায় সাইরেনের শব্দে। ‘শাহরুন মোবারাকুন’ বলে অভিবাদন জানিয়ে এবং উপহার বিনিময় করে শুরুতেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে মজবুত করে নেয় মালয়েশিয়ানরা। রোজা উপলক্ষ্যে সরকার এবং ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীতে।

দেশটিতে রমজান মাসজুড়েই কানায় কানায় পূর্ণ থাকে মসজিদ। তারাবিহসহ অন্য নামাজে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। তারাবি শেষে বিশেষ শিক্ষামূলক আসর বসে মালয়েশিয়ার মসজিদগুলোতে। সাহরির পর ঘুমানোর অভ্যাস নেই মালয়েশিয়ার মুসলমানদের। সূর্যাস্ত পর্যন্ত স্থানীয় মসজিদে ধর্মীয় আলোচনা শুনে সূর্য ওঠলে নিজ নিজ কাজে বেরিয়ে পড়েন তারা।

রমজানজুড়ে বিশেষ আয়োজন

সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানকে ঘিরে মালয়েশিয়ায় থাকে বিশেষ আয়োজন; যা চলে মালয়েশিয়ার শাহ আলম, পেনাং, কোয়ান্তান, মেলাকাসহ প্রতিটি রাজ্যে। এমনকি মারদেকা মাঠেও নেওয়া হয় ইফতারের বিশেষ উদ্যোগ।

ফ্রি ইফতার ব্যবস্থা

রমজান মাসে বেশ অতিথিপরায়ন হয়ে ওঠেন মালয়েশিয়ানরা। মসজিদগুলোতে বিনামূল্যে ইফতারির সুযোগ থাকে। মসজিদে মসজিদে ইফতারিতে বিনামূল্যে শরবত ও বুবুর বা নরম খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকে। চাল, মাংস, নারিকেলের দুধ, ঘি ইত্যাদি দিয়ে বুবুর ল্যাম্বাক তৈরি করা হয়। প্রায় পাঁচ দশক যাবত কুয়ালালামপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে খাবারটি বিতরণের প্রচলন চলে আসছে।

এছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে ফ্রি ইফতারের ব্যবস্থার কোনো কমতি নেই মালয়েশিয়ায়। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে বসে এই ফ্রি ইফতার করেন। এ যেন আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার বড় এক আয়োজন।

বাহারি খাবারে ইফতার

মালয়েশিয়ায় স্থানীয়রা বিভিন্ন প্রকারের হাতে বানানো পিঠা, হালুয়া জাতীয় নাশতা, সাদা ভাত, ফলমূলসহ মালয়েশিয়ান খাবার দিয়ে ইফতার করেন। সঙ্গে থাকে আম, তরমুজ, বাঙ্গি, কলা, পেঁপে, আপেল, আঙুর, কমলাসহ নানা রকমের মালয়েশিয়ান ফল।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের রমজান

দেশীয় খাবার ছাড়া ভিনদেশি খাবারে ইফতার জমে না বাংলাদেশিদের। সুদূর প্রবাসে থেকেও তাই তৃপ্তি মেটাতে ইফতারে বাঙালি খাবারই তাদের প্রথম পছন্দ। তাই মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান পালন করেন অনেকটা দেশীয় আমেজে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় রমজানে শ্রমিকদের নামাজ পড়ার ও রোজা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোতে দেশীয় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইফতারি তৈরি করা হয়।

ইফতারিতে খেজুর, জিলাপি, সরবত, জুস, হালিম, ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, লাচ্চিসহ নানা প্রকারের খাবার রাখা হয়। বাংলাদেশিরা যেখানে থাকেন, সেখানেই একসঙ্গে ইফতার করেন। তাই মালয়েশিয়ানদের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের আয়োজনটা বড় হয়। মালয়েশিয়ানরা অভিভূত হয় বাঙালিদের ইফতারির বিশাল আয়োজন দেখে।

ইফতারি বেচাকেনার মেলা

রমজান মাসে প্রতিদিন বিকালে মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়া, শাহ আলম, মারদেকাসহ প্রায় সব জায়গায় ‘বাজার রমাদান’ নামে ইফতারি বেচাকেনার মেলা বসে। বাজার রমাদানে বিভিন্ন প্রকারের মালয়েশিয়ান খাবারের সমারোহ ঘটে। তবে এসব খাবার প্রবাসী বাঙালিদের খুব একটা টানে না। ইফতারির আসল আইটেমগুলো তারা বাসায় নিজেরা তৈরি করেন বা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনেন।

দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

রমজানে মুসলমানদের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া মালয়েশিয়ার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতি বছর এ অপরাধে আটক হন অনেকে। এছাড়া পুরো রমজানে সরকারি নজরদারিতে জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য সময়ের থেকে কম রাখা হয়। ক্রেতাদের জন্য আকর্ষণীয় ছাড় ঘোষণা করে শপিংমলগুলো। রোজার দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যায় কেনাকাটার ধুম।

তারাবির নামাজে মুসল্লিদের ঢল

মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করা হয়। এ মাসে মসজিদগুলোতে প্রতি ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যায়। দেশটির ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। নামাজের পরে কোরআন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করেন মালয়েশিয়ানরা।

রমজান বাজার

সরকারি ঘোষণার পর মালয়েশিয়ায় রমজান বাজারের কার্যক্রম শুরু হয়। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় দুই বছর বাজারটি বন্ধ ছিল। রমজান বাজার চালু হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নিজেদের ইফতারসামগ্রী সেখান থেকে কিনে থাকেন। রমজান মাসে পাঁচ হাজার স্টলসহ মোট ৭২টি রমজান বাজারের অবস্থান থাকে রাজধানী কুয়ালালামপুরজুড়ে।

কুয়ালালামপুরের রমজান বাজার

টিটিডিআই, কাম্পং বারু, বাংসার, স্টেডিয়াম শাহ আলম, বুকিত বিনতাং, কেলানা জায়া, মেলাওয়াতী, মসজিদ ইন্ডিয়া, বান্দর তুন রাজাক, এসএস ১৩। যার মধ্যে অধিকাংশ বাজারই প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে শুরু হয়। এরপর গরম গরম সর্বোত্তম খাবার তৈরিতে ব্যস্ত থাকেন ব্যবসায়ীরা।

মালয়েশিয়ায় সাধারণত শুকনো খাবার বা খেজুর দিয়ে মুসলমানরা রোজা ভাঙেন। এছাড়া দেশিয় কিছু বিখ্যাত ইফতার আইটেম। মালয় লোকজনের কাছে একটি স্থানীয় ইফতার আইটেমের নাম হচ্ছে 'বারবুকা পুয়াসা'। এটি আখের রস এবং সোয়াবিনের দুধ দ্বারা তৈরি এক ধরনের বিশেষ মিষ্টান্ন সামগ্রী। এছাড়া মালয়েশিয়ার ইফতারে থাকে নাসি আয়াম, পপিয়া বানাস, আয়াম পেরিক, লেমাক লাঞ্জা ইত্যাদি। সঙ্গে বিভিন্ন স্থানীয় খাবার তো আছেই।

পণ্য ডিসকাউন্টের প্রতিযোগিতা

অবিশ্বাস্য হলেও মালয়েশিয়ায় মূল্য ১ টাকাও না বাড়িয়ে উল্টো পণ্যের দাম কমানোর প্রতিযোগিতায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। রমজান আসার আগে ভোজ্যতেল ও চিনি, মাছ, তরকারির যে দাম ছিল, রমজানেও তেমনই থাকে। তবে মালয়েশিয়ায় খোলাবাজারে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি হয় না। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চেইন সুপারশপ, হাইপার মার্কেটগুলোতে সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হয়। রমজান উপলক্ষে এসব চেইন সুপারশপগুলোতে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীতে ডিসকাউন্ট স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হয়। এসব সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে মাইডিন, জায়ান্ট, এনএসকে, ইকোনসেভ, সেগি ফ্রেশ, জায়াগ্রোসারি।

দেশটিতে পণ্যসামগ্রী, খাদ্যসামগ্রী, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, চেইন সুপারশপ ও হাইপার মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুণগতমান খুব কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করেন দেওয়ান বান্ডারায়া কুয়ালালামপুর (ডিবিকেএল) নামে সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিয়মের কোনো ব্যত্যয় দেখলে গ্রেফতারসহ জেল-জরিমানা করেন তারা। এ বাহিনীর ভয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি তো দূরের কথা, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখাসহ কোনো অনিয়ম করার সাহস পান না ব্যবসায়ীরা। ডিবিকেএল সবসময় বাজারে ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি করায় তাদের ফাঁকি দেওয়া দুঃসাধ্য।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

কী কী কারণে রোজা ভেঙে যায়?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail কী কী কারণে রোজা ভেঙে যায়?

মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস এই রমজান। তাই এই রমজান মাসে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। পবিত্র এই রমজান মাসে মুসলিম উম্মাহর সঠিকভাবে রোজা পালন করা উচিৎ। এতে বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ হবে। সেই সঙ্গে  সঠিকভাবে ইসলামিক বিধান মোতাবেক রোজা পালন করতে যে সকল বিষয়গুলো অবশ্যই জানতে হবে- তাই আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু।  

আমরা অনেকেই জানি না যে, কী কী কারণে রোজা ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। তাই যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় বা নষ্ট হয়, সেসব কারণগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

১. ইচ্ছাকৃত বমি করা বা মুখে বমি চলে আসার পর- তা পরিমাণে অল্প হলেও ইচ্ছা করে গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে। (সূত্র: সহীহ মুসলিম এবং মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)। 

২. কোনো কারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে মুখে চলে আসলে রোজা ভেঙে যাবে। ( সূত্র: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)। 

৩. মুখে পান বা অন্য কোনো খাবার রেখে ঘুমিয়ে পড়ার পর জেগে ওঠে কেউ যদি দেখে যে, সুবহে সাদেক হয়ে গেছে আর সেই পান বা খাবারের কিছু অংশ পেটে চলে যায়; তবে তার রোজা হবে না। পরে কাজা রোজা করতে হবে। তবে এ কারণে রোজা ভেঙে যাওয়ায় কাফফারা দিতে হবে না। (সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী -যাকারিয়া)। 

৪. ওজু করার সময় বা যে কোনো কারণে কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি গলা দিয়ে পেটে চলে যায়, ওই ব্যক্তির রোজা হবে না। এ রোজা পরে কাজা করতে হবে। আর কুলি করার সময় যদি রোজার কথা স্মরণই না থাকে এবং পানি মুখে নিয়ে খেয়ে ফেলে তবে রোজা ভাঙবে না।' (সূত্র: ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া)।

৫. নাক ও কানে তেল দেওয়ার দ্বারাও রোজা ভেঙে যাবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না।' (সূত্র: ফতোয়ায়ে হেদায়া)।

৬. যদি কোনো ব্যক্তি কারো ধমকের (ভয়ে) কারণে কিংবা রোজা রাখার কথা ভুলে গিয়ে কোনো কিছু খেয়ে ফেলার পর (না জানার কারণে) রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃত খাবার খেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। পরে এ রোজা কাজা করা জরুরি। (সূত্র:মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)। 

৭. পাথরের কণা, মাটি, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি অর্থাৎ সাধারণত যা আহারযোগ্য নয় কিংবা যেসব খাবার মানুষের কোনো উপকারে আসে না তা খেলেও রোজা ভেঙে যাবে। আর এ রোজা পরে কাজা করতে হবে। (সূত্র: ফতোয়ায়ে বাযযাযিয়া)।

৮. দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রী সহবাস করলে; এ সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রোজা ভেঙে যাবে। এই অবস্থায় রোজা ভঙ্গের ৫ পরিণাম কবিরা গুনাহ হবে; ফলে তাদের তাওবা করতে হবে;

রোজা বাতিল হয়ে যাবে; তাদের উভয়কে ওই দিনের অবশিষ্ট অংশ খাবার ও পাণীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে; ওই দিনের রোজা (রমজানের পরে) কাজা করতে হবে; কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। আর কাফ্ফারা হলো- একাধারে দুই মাস রোজা রাখা অথবা একজন গোলাম আজাদ করা কিংবা ৬০ জন মিসকিনকে একবেলা খাবার খাওয়ানো।

৯. সহবাস ছাড়া অন্য পন্থায় যৌনস্বাদ নেওয়ার জন্য বীর্যপাত ঘটালেও রোজা ভেঙে যাবে। এমনকি যদি কোনো রোজাদার যৌনস্বাদ নেওয়ার জন্য স্পর্শকাতর কোনো যুবতী যৌবনা নারী সংস্পর্শে আসে; তাকে চুম্বন করে; জড়িয়ে ধরে অথবা হস্তমৈথুন করে ইত্যাদির মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটায় তবে তার রোজা ভেঙে যাবে।

(সবার জানা উচিত যে, এই কর্মগুলি যেমনিভাবে রোজার মাসে হারাম তেমনিভাবে অন্য সময়গুলোতেও হারাম।)

১০. উপকারি কিংবা অপকারি, কম কিংবা বেশি, হালাল কিংবা হারাম খাবার; যা-ই হোক তা দিনের বেলায় নাক-মুখ দিয়ে গ্রহণ করলেও রোজা ভেঙে যাবে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আর পানাহার কর; যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কারভাবে দেখা যায়।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)। 

১১. রোজাদার যদি খাবারের বিকল্প উপায় হিসেবে- রক্ত গ্রহণ; শক্তিবর্ধক স্যালাইন গ্রহণ; এমন ইঞ্জেকশন যা আহারের কাজ করে অর্থাৎ গ্লুকোজ ইনজেকশন ইত্যাদি গ্রহণ করে তবে রোজা ভেঙে যাবে।

১২. অসুস্থতার কারণে ইনহেলার (Inhelar) ব্যবহার করলেও রোজা ভেঙে যায়। (সূত্র: ফতোয়ায়ে শামী -যাকারিয়া)। 

১৩. কোনো রোজাদার নারীর যদি ইফতারের আগ মুহূর্তেও হায়েজ (মাসিক) ও নেফাস (প্রসবজনিত রক্তক্ষরণ) হয়, তবে রোজা ভেঙে যাবে।

১৪. রোজাদার ব্যক্তির শরীর বা দেহ থেকে দুষিত রক্ত বের করলে রোজা নষ্ট হবে কি হবে না- তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে; তবে মূল কথা হলো- দিনের বেলায় রোজা থাকা অবস্থায় কোনো রোজাদারের জন্যই এ কাজ না করা উত্তম।

১৫. কোনো রোজাদার যদি তার কোনো কথা, কাজের কারণে মুরতাদ বা ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় (কাফের হয়ে যায়), তবে ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে তার রোজা বাতিল হয়ে যাবে। অতঃপর সে যদি তাওবা করে পুনরায় মুসলিম হয়, তাহলে এ রোজা রমজানের পরে কাজা করতে হবে। 

১৬. কোনো রোজাদার যদি ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বেহুশ থাকে, তবে তার রোজা শুদ্ধ হবে না। বরং তাকে ওই দিনের রোজা পরে কাজা করতে হবে।

১৭. রোজার নিয়তে গরমিল হলেও রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। নিয়ত প্রত্যেক ইবাদত তথা রোজার অন্যতম রোকন। আর সারাদিন সে নিয়ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে মনে জাগ্রত রাখতে হবে যে, আমি রোজাদার। যাতে রোজাদারের নিয়তে রাখা না রাখার বা রোজা বাতিল করার কোনো দৃঢ় সংকল্প না করে বসে।

১৮. রোজা না রাখার নিয়ত করলে এবং নিয়ত বাতিল করে দিয়ে সারাদিন খাবার না খেয়ে উপবাস করলেও রোজা বাতিল বলে গণ্য হবে। সুতরাং রোজা রাখার জন্য নিয়ত আবশ্যক।

এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বিত্র কোরআনে নির্দেশ করেছেন, ‘আর এ বিষয়ে তোমরা কোন ভুল করলে তোমাদের কোন পাপ নেই; কিন্তু তোমাদের অন্তরে সংকল্প থাকলে (পাপ হবে)। আর আল্লাহ অধিক ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ৫)। 

পরিশেষে আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজা যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। রোজা ভঙের বা নষ্টের কারণগুলো থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


রমজান   রোজা   মাসায়েল   রোজা ভঙ্গ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

চিকিৎসা ক্ষেত্রে যেসব কাজে রোজা ভাঙবে, যেসব কাজে রোজা ভাঙবে না

প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জন এবং মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য পেতে হলে শুধু পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকা যথেষ্ট নয়। বরং মিথ্যা, প্রতারণা, সুদ, ঘুষ, ঝগড়া-বিবাদসহ যাবতীয় অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং চোখ, কান, জিহ্বা ও হাত-পাসহ সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গুনাহ মুক্ত রাখতে হবে। হাদীস শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্যগ্রন্থ সহীহ মুসলিমে উল্লেখ আছে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোজা রাখবে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও ঝগড়া বিবাদ থেকে বিরত থাকে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার প্রতি মারমুখী হয়, তবে সে যেন বলে ‘আমি রোজাদার’।

প্রিয়নবী (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অশ্লীল কর্মকাণ্ড ও জাহেলি আচরণ পরিত্যাগ করতে পারে না, তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই। (সহীহ বুখারী) বিনা ওজরে রমজানের রোজা ভঙ্গ করা কবিরাহ গুনাহ এবং এর পরিণতি জাহান্নাম। রমজানুল মোবারকের একটি রোজা ভঙ্গ করে তার বিনিময়ে সারাজীবন রোজা রাখলেও ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজানের একটি রোজা ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোজা রাখলেও ঐ রোজার ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, সহীহ বুখারী)

ইসলামী স্কলার মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবীর দেওয়া তথ্যমতে পবিত্র রমজানুল মোবারকের রোজা পালনের সুবিধার্থে কিছু জরুরি ও আধুনিক চিকিৎসা সংক্রান্ত মাসআলা উপস্থাপন করা হলো:- 

১. রোজা অবস্থায় মুখে কোনো ঔষধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে। যদিও তা কম হয়।

২. সালবুটামল বা ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে রোগী যদি অতি অসুস্থ হয়ে পড়ে; সে ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহারের মাধ্যমে রোজা ভাঙ্গতে পারবে এবং পরাবর্তীতে কাজা রোজা করতে হবে। তবে কাফ্ফারা লাগবে না।

৩. রোজা অবস্থায় এন্ডোস্কপি করালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে কোনো নল বা পাইপের মাধ্যমে পেটের ভেতর ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

৪. নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করে গিলে না ফেললে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৫. কানে ড্রপ, ঔষধ, পানি বা তেল ইত্যাদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৬. চোখে ড্রপ বা মলম ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। এটা হাদীস দ্বারা প্রমানিত; যদিও তার স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়।

৭. নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

৮. নাকে ড্রপ বা পানি দিয়ে ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

৯. রোজা অবস্থায় রক্ত দিলে বা নিলে কোনো অবস্থাতেই রোজা ভঙ্গ হবে না।

১০. এনজিওগ্রাম করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

১১. ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

১২. ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না। 

১৩. রগে স্যালাইন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।

১৪. সাপেজিটরি-ভোল্টালিন মলদ্বারে প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে।

১৫. যোনিদ্বার বা প্রস্রাবের রাস্তায় ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হবে না।

১৬. বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রমজান মাসে রাজনীতিতে ইফতার পার্টি, কতটুকু শোভনীয়?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৯ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইফতার পার্টির নামে গরীব-দুঃখী অসহায় জনসাধারণকে একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে রাজনৈতিক দলে ভেড়ানোর চেষ্টা আমরা হরহামেশাই অবলোকন করে থাকি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজানে এসব ইফতার পার্টির নামে রাজনীতি ইসলামে কতটুকু শোভন? সংযমের মাস মাহে রমজান। বছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসকে গুরুত্ব দিয়েছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালা। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে, গরীব-দুঃখী মানুষকে রাজনৈতিক দলে ভেড়ানোর চেষ্টা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রায়শই চোখে পড়ে। কিন্তু এসব কর্মকাণ্ড আসলে কতটুকু সঠিক?- তাই বলছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা।  

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, রমজান মাসে আলোচনা সভা ও ইফতার ‘পার্টির’ নামে এখন বিকৃত ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের সুমহান ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বিতর্কিত করে চলেছে। কারণ, লৌকিকতা, জৌলুসে ভরা বে-হিসেবী তথা অবৈধ উৎসের অর্থে কেনা বা সংগৃহীত খাবার মুমিনদের ইফতারের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে না। তাই এখনই সতর্ক হয়ে সে সকল পথ পরিহার করা আমাদের আশু করণীয়।

রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতার করে একজন রোজাদার তার দেহ-মনের পবিত্রতা ও প্রফুল্লতা লাভ করে থাকেন। শুধু খাদ্য সামগ্রী দিয়ে রোজা ভঙ্গ করাই নয়, ইফতারির সময় দোয়া কবুলেরও সময়। এ সময় খাঁটি রোজাদাররা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া করে পানাহ চেয়ে থাকেন। এতে রোজারদের দেহ-মনে স্বর্গীয় প্রশান্তি আসে।

আমদের দেশে পবিত্র রমজানের রোজাকে সামনে রেখে আলোচনা সভা ও ইফতার একসঙ্গে করার হিড়িক পড়ে যায়। অনেক রাজনৈতিক দলকে ইফতার পার্টির নামে সভা-সমাবেশ করতে দেখা যায়। একবেলা খাবারের লোভে অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষ এসব ইফতার পার্টিতে ভিড় জামান। এরকম কোনো কোনো আয়োজনে দীর্ঘ সময়ব্যাপী নানা ধরনের পার্থিব বিষয় নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা, বিতর্ক, এমনকি গালাগালি, বিষোদগার, ঝগড়াঝাটি করতেও দেখা যায়। পরে এসব  শেষে ইফতার করা হয়। অনেক সময় হাস্যকর বিষয়েও ইফতারে হট্টগোল বাঁধতে দেখা যায়। এতে ইফতারের মতো একটি মহান ধর্মীয় বিষয়ের মাহাত্ম্য, সৌন্দর্য ও স্বর্গীয় আমেজ-অনুভূতি নষ্ট হয়ে পড়ে।

অনেকে আজকাল ইফতারকে নিছক পার্টির আবরণে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ইফতার তো কোনো বিয়ে-জন্মদিন বা রাজনৈতিক-ব্যবসাপাতির কোনো বিষয় নয়। রোজাদারগণ ভুলেই বসেন কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ অথবা কোনটা গিবত, কোনটা রিয়া আর কোনটা শিরক্, কোনটা তাকওয়া ! তাই রিয়া, বেদআত, ও তাক্ওয়া বিষয়গুলো বোঝাটা এখন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মনে করছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা।

পবিত্র কোরআন এবং হাদিসের আলোকে তারা বলছেন, রিয়া হলো অহেতুক লোক দেখানো বিষয়। ইসলাম অহেতুক জৌলুস করে লোক দেখানো বিষয় সমর্থন করে না। রোজা একটি সাধনার ব্যাপার ও সর্বোপরি এটা আত্মিক ইবাদত। এখানে লৌকিকতার কোনো স্থান নেই। রোজা আল্লাহর প্রদত্ত বিধান। মানুষের অধ্যাত্মিক শিক্ষা ও প্রগতির জন্য রোজা হচ্ছে একটি উপায়। রোজা মানুষকে অশালীন প্রবৃত্তিরোধ করে শৃংখলাবদ্ধ হতে সক্ষম করে। এটা ধনী-গরীব সব মানুষকে একই ক্ষুৎ-পিপাসার অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে। তাই একজন খাঁটি মুসলমান শুধু মিডিয়ায় প্রচারের জন্য স্বার্থপরের মত ভোগবিলাসী বড়লোকী খানাপিনায় মত্ত হবার মতো ইফতার করতে পারেন না।

আর বেদআত হলো যেটা মূল বিষয় থেকে বিকৃত করে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। ধর্মকাজে নতুনত্ব সৃষ্টি করা বা পরিবর্তন করাকে বেদআত বলে (ওয়াজ ও খুতবা ১০৯, ২৬০)। শরীয়তের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি বা সংমিশ্রণ করে মনগড়া ও বিকৃত জিনিস হলো বেদআত। এর ফলে শয়তানের ধোঁকার মধ্যে পড়ে গুমরাহির পথ প্রশস্থ হয়।

তাক্ওয়া হলো- খোদাভীরু হওয়া, মুত্তাক্কী হওয়া। সবসময় আল্লাহর কথা স্মরণ করা ও তাঁর ভয়ে ভীত থাকা। আল্লাহতায়ালা সবসময় বিরাজমান, সঙ্গে আছেন, সব কাজ দেখছেন-মানুষের অন্তরে এমন বিশ্বাস হওয়াটাই তাক্ওয়া । রোজাদার ব্যক্তির মধ্যে মুত্তাকীর ভাব চলে আসে। তাই সে খারাপ কাজ করতে চায় না।

 ইসলামী চিন্তাবিদরা বলছেন, বলা হয়ে থাকে আমরা বাংলাদেশিরা সংকর বাঙালি। এ জাতির ভাবনা চিন্তাও সংকর ও কিছুটা মিশ্র। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষতার একটি মুলনীতি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। তাই সব ধর্মের মানুষ এদেশে সমান ধর্মীয় সুবিধা ও অধিকারের সুযোগ পেয়ে থাকেন।

আজকাল এসব ইফতার ‘পার্টিতে’ রঙ-রেজিনী দিয়ে সুদৃশ্য গেট সাজানো হয়, রঙীন আলো দিয়ে মঞ্চ তৈরি হয়। দেশের হোমড়া-চোমড়া মানুষরাই এখানে দাওয়াত পেয়ে থাকেন। জৌলুসে ভরা, লোক দেখানো এসকল ইফতার পার্টিতে আদৌ কোনো ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য থাকে না। পাক-নাপাক, পর্দা-বেপর্দার সমন্বয়ে আজকাল ব্যবসা অথবা রাজনৈতিক প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ইফতারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আজ অমুকের সম্মানে ইফতার-তা হবে কেন? এসব ইফতার ‘পার্টিতে’ দামী রেস্টুরেন্ট বা পাঁচতারকা হোটেলের বহু পদের বাহারী খাবার আনানো হয়। ইফতার ‘পার্টি’র সুস্বাদু বহুপদের স্বাদ নিতে গিয়ে মাগরিবের নামাজের কথা অনেকেরই খেয়াল থাকে না। অনেকে অশালীনভাবে সেজেগুজে ইফতার করতে বসেন। প্রতিদিন টিভিতে এসব দেখানোও হয়ে থাকে। এগুলো রোজার সংযম, আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্টা নয়। বরং এগুলো দ্বারা রমজান মাস, রোজা ও ইফতারের মর্যাদাকে প্রহসনে রুপান্তরিত করা হয় মাত্র। লৌকিক, ভোগবাদী এ সকল ইফতার ‘পার্টি’র বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বর্তমানে আমরা আসল ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছি।

আবার কেউ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে উচ্চস্বরে মাইক বজিয়ে শতপদের ইফতারীর পসরা নিয়ে বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে উল্লাস করে ইফতার করবেন-আর প্যান্ডেলের পাশের অভাবী মানুষের খোঁজ নেবেন না অথবা কেউ একটু ছোলা-মুড়ি পাবার আশায় থালা হাতে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াবে- এটা রোজার শিক্ষা নয়। পাশাপাশি আলোচনা সভার নামে ইফতার করতে এসে ‘পার্টি’তে বসে রোজার আহকাম-আরকান ভুলে গিয়ে আমরা কোনটা গিবত, কোনটা রিয়া আর কোনটা বেদআত গুলিয়ে ফেলছি।

 ইসলামী চিন্তাবিদরা আরও বলছেন, এ সকল ইফতার ‘পার্টি’র আয়োজন ধর্মীয় কাজের মোড়কে আমাদের ধর্মে নব্য অপচয় সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। আজকাল মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসার ফুরসৎ হয় না। সবাই একত্রে ইফতার করার সময় যেন একবারেই উধাও হয়ে গেছে। এতে চিরায়ত পারবারিক বন্ধন কমে যাচ্ছে। মা-বাবারা তাদের উঠতি বয়সের সন্তানদের সাথে ভালো করে কথা বলার সময় পান না। একটি ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে থাকলে নৈতিকতা শাণিত হয়। সাথে বাবা মায়ের স্নেহের বচন, উপদেশ পরামর্শ ইত্যাদি থেকে সুসন্তান তৈরি হয়। এভাবে একটি ইতিবাচক জনগোষ্ঠী তৈরি হয়ে থাকে। নব্য ইফতার পার্টি সংস্কৃতির আলোচনা অনুষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক নেতাদের একে অপরের মুখের বিষোদ্গার শুনে নবীনরা নেতিবাচক মানসিকতা অর্জন করছে।

ইসলামে মানুষ মানুষে ভেদাভেদের কোন স্থান নেই। সকল মানুষের সম-সুযোগের ভিত্তিতে সামাজিক সহ-অবস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক বৈষম্য আরো প্রকট হবে। সামাজিক বৈষম্য প্রকট হলে সামাজিক বঞ্চনা থেকে নানামুখি সংকট তৈরি হতে থাকবে। সামাজিক এসব সংকট আজকাল অপরাধ বৃদ্ধি করে চলেছে। বর্তমানে সুবিধাভোগী রং সাইডে চলা পাতি নেতারা এবং তাদেরকে অবৈধ মদদদাতা একশ্রেণির নৈতিকতা বিবর্জিত কর্মকর্তা ও সংগঠকরা চরম অনৈতিক কাজে ভীষণভাবে সক্রিয়। এসব লুটেরা এখন দেশের নিম্ন ও মধ্যমশ্রেণির কর্মজীবি, সৎ, ধর্মভীরু মানুষের ঝুলি ও হাঁড়ির ওপর নজর দিয়েছে।

আসুন আমরা সবাই পবিত্র রমজানের সুযোগকে কাজ লাগিয়ে সংযমী হই, কল্যাণ, ক্ষমা, মুক্তি তথা মাগফেরাত ও নাজাতের এই ভরা মৌসুমকে কাজে লাগিয়ে নেতিবাচক ইফতার সংস্কৃতি পরিহার করে খাঁটি রোজাদার ও পূণ্যবান হয়ে উভয় জগতের সাফল্য খোঁজার চেষ্টা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রমজানে একজন রোজাদারের যেসব গুণ থাকা অবশ্যক

প্রকাশ: ০৮:০৫ এএম, ২৮ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

পবিত্র মাহে রমজান মুমিন মুসলমানের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসে বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। এই মাসে কিছু গুণাবলি অর্জনের দীক্ষা নেন মুমিন। যে শিক্ষাগুলো ধারণ করলে জীবন হয় আলোকিত। আল্লাহ তাআলা বরকতময় রমজান মাসকে মুসলিম উম্মাহর জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের উসিলা বানিয়েছেন। রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কিছু বিশেষ গুণের অধিকারী হয়ে থাকেন- যা পরবর্তী সময়ে তার যাপিত জীবনে একটি উত্তম চরিত্রের মানুষ হিসেবে মর্যাদা দান করে। 

মুসলিস উম্মাহর সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ওপর কোরআন নাজিলের পবিত্র মাস রমজান। এ মাসেই মানুষের জন্য জীবন বিধান হিসেবে কোরআন নাজিল করা হয়েছে। পবিত্র রমজানে একজন রোজাদার যেসব গুনগুলো অর্জন করবেন তাই আজকের আলোচনা বিষয়বস্তু।  

তাকওয়া অর্জন

রোজার প্রধান শিক্ষা তাকওয়া অবলম্বন করা। তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা ও ভয় করা। পরিভাষায়- মহান আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার হতে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলে। আর দীর্ঘ এক মাস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বান্দাকে তাকওয়া অবলম্বন করার যোগ্যতা তৈরি করেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সিয়াম ফরজ করার উদ্দেশ্যও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত- ১৮৩)

মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার মাস রমজান

রমজানে মসজিদের সঙ্গে রোজাদারের সম্পর্ক স্থায়ী হয়। কোনো মুমিন মুসলমানের জন্য এমনটি হওয়া উচিত নয় যে, সে শুধু রমজানেই নামাজ পড়তে মসজিদে যাবে। বরং বছরজুড়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করার সম্পর্ক এই রমসজানে তৈরি হবে। যেন মুমিনের জন্য দুনিয়াতেই মসজিদ হবে জান্নাতের সর্বোত্তম নমুনা।

বিশুদ্ধ কোরআন শিক্ষার মাস রমজান

বরকতময় রমজান কোরআন নাজিলের মাস। মাসটি কোরআন শেখার জন্য বিশেষ সহায়ক। রমজানে কোরআনের সঙ্গে তৈরি হোক স্থায়ী সম্পর্ক। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক যেন রমজান কেন্দ্রিক না হয়। রমজানে কোনো ইসলামিক স্কলার কিংবা কোনো ব্যক্তির উপদেশ যেন এমন না হয় যে,- ‘কোরআন তেলাওয়াত করতে না পারলে বা না জানলে ‘কুল হুওয়াল্লাহ’ সুরা বা ‘সুরা ইখলাস’ কিংবা কোনো দোয়া-জিকিরের অজিফা দুই শত বার কিংবা চার শত বার পড়ুন!’

বরঞ্চ তাদের বক্তব্য যেন হয় এমন যে, রমজান মাস হলো কোরআন শেখার সর্বোত্তম মাস। কোরআন পড়তে না জানলে ২/৪/৬ কিবাং হাজার বার কোনো সুরা, দোয়া পড়ার তালিম নয়; বরং আউজুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ থেকে শুরু করে এক আয়াত, দুই আয়াত, একটি সুরা, দুই সুরা, এক পারা, দুই পারা- এভাবে কোরআন শেখানো বা শেখার উপদেশই সর্বোত্তম। কোরআন নাজিলের মাস রমজানেই মুমিন মুসলমানের জন্য তেলাওয়াত শেখার সর্বোত্তম সুযোগ।

নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন, কোরআন ও রোজা আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশ মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম।’ কোরআন বলবে, ‘আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন।’ তখন আল্লাহ তাআলা সুপারিশ কবুল করে নিবেন (মুসনাদে আহমদ)।

সহিহ মুসলিমে আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (সা:) বলেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪)। 

সহমর্মিতা

মহানবী (সা:) রমজান মাসকে ‘সহমর্মিতার মাস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। দীর্ঘদিন রোজা রাখার কারণে রোজাদারের মধ্যে দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত হয়। সহমর্মিতা জ্ঞাপন করার জন্য মহানবী (সা:) রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (সা:) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজান মাসে তিনি আরও অধিক দানশীল হয়ে ওঠতেন...’ (সহি বুখারী: ৬)।

ধৈর্যধারণ

হাদিসে রমজান মাসকে ‘ধৈর্যের মাস’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রোজাদারের সামনে সুস্বাদু খাবার থাকলেও তিনি আহার করেন না, রূপসী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সহবাস করেন না। এমনকি আচার-আচরণেও ধৈর্যধারণ করেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার’ (বুখারি: ১৯০৪)।

ইখলাস

রোজা এমন একটি ইবাদত, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে পানাহার ও যৌনাচার করার সুযোগ পরিহার করেই রোজা রাখেন একজন রোজাদার। এজন্যই হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব।’ (সহি বুখারী: ১৯০৪)।

ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব

রমজানে ধনী-গরীব, সাদা-কালো একসঙ্গে তারাবির নামাজ, একই দস্তরখানে সম্মিলিতভাবে ইফতার করা এবং জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। এই ভ্রাতৃত্ববোধ মুসলমানদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার একান্ত অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তার নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন, যাতে তোমরা সৎ পথ লাভ করতে পারো।’ (সুরা আল ইমরান: ১০৩)।

নাজাত পাওয়ার মাস রমজান

রমজান মাসে দেখে দেখে পুরো কোরআন পড়ার যোগ্যতা অর্জন করার মাধ্যমে রমজানের রহমত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করা। তাই রমজানের শুরু থেকেই কোরআন শেখার মেহনত করা জরুরি। প্রয়োজনে আরবি ২৯ হরফ শেখার মাধ্যমে তা শুরু করা যেতে পারে।

কোরআন শেখার হুকুম হচ্ছে ফরজ। বিশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শেখা সবার উপর ফরজ। কোরআন শেখার জন্য কোনো অজুহাত-ওজরের প্রয়োজন নেই। আর কোনো ওজর দিয়ে পার পাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। কোরআন শেখার মাধ্যমে রমজান মাসে আল্লাহর কাছে নাজাত পাওয়ার চেষ্টা করাই হবে সর্বোত্তম নেক আমল ও ইবাদত।

কোরআন শেখার কাজে শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবার জন্য সমান গুরুত্ব বহন করে। তাই সবার জন্য পুরো কোরআন তথা সুরা ফাতেহা থেকে নাস পর্যন্ত দেখে দেখে বিশুদ্ধভাবে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করা জরুরি। আর রমজানই হোক সবার জন্য কোরআন শেখার সর্বোত্তম সময়।

তবে কোনো লোক নিজে মিথ্যাবাদী। কথা ও কাজে মিথ্যা ত্যাগ করে না। কিন্তু সে কোরআন তেলাওয়াত করছে। তার কোরআন তেলওয়াত আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করবেন না। মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত বা অভিশাপ। আবার কোনো লোক নিজে অন্যের উপর অত্যাচারী। মানুষের উপর জুলুম করছে। হয়ত সেও কোরআন পড়ছে। তার কোরআন তেলওয়াতও আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করবেন না। অত্যাচারীদের উপর আল্লাহর লানত। এভাবে কোরআন তেলাওয়াতকারী নিজেই নিজের ধ্বংসের জন্য আল্লাহর কাছে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে ধ্বংস প্রার্থনা করে। তাই কোরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি।

মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানে মসজিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়া, কোরআন তেলাওয়াত শেখা, নাজাত পাওয়া এবং কোরআনের লানত থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা। নিজেদের মিথ্যা ও অত্যাচার থেকে মুক্ত থাকাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের রোজায় মসজিদমুখী হওয়ার অভ্যাস গঠন করার তাওফিক দান করুন। বিশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত শেখার সুযোগ দান করুন। কোরআনের অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকতে বদগুণগুলো থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন