ইনসাইড আর্টিকেল

সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় বাংলার ‘ভাষা আন্দোলন'

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

ভাষা আন্দোলনের শুরু ১৯৪৮ সালে। ঢাকায় তখন প্রধান দৈনিক পত্রিকা আজাদ এবং ইংরেজি মর্নিং নিউজ। দুটিই ছিল মুসলিম লীগের সমর্থক সংবাদপত্র। ভাষা আন্দোলন, বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা করার জন্য ছাত্র প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর (তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমউদ্দীন) চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর- ইত্যাদি খবর মুসলিম লীগ সমর্থক কাগজগুলোতে ছাপা হতো, কিন্তু তেমন গুরুত্ব ও সমর্থন পেতো না। বড় দুটি দৈনিকের সমর্থন ও সাহায্য না পেলেও ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১ এই তিন বছর ভাষা আন্দোলনকে জিইয়ে রেখেছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই দৈনিক ইত্তেহাদ এই আন্দোলনে জোরালো সমর্থন দেয়। পত্রিকাটি তখনও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল এবং আজাদের মতো, ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কাগজটির ঢাকায় আসা নিষিদ্ধ করে দেন। এই কাগজের উদ্যোক্তারা ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক হিসেবে ইত্তেহাদ প্রকাশের চেষ্টা করে। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকারের বাধার ফলে ব্যর্থ হয়। পরে তারা সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করেন। এই সাপ্তাহিক ইত্তেফাক ভাষা আন্দোলনে জোরালো সমর্থন জানায়। 

ইতিহাস বলছে, পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই ভাষা বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। ‘বাংলা’ নাকি ‘উর্দু’- কী হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা! পাকিস্তান সৃষ্টির পর বিষয়টি পূর্ব বাংলার সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত প্রশ্নে রূপ নেয়। এ নিয়ে সে সময়কার সংবাদপত্রগুলোতে এই ভাষা বিতর্কের মতামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। সংবাদপত্রগুলোতে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানান সংবাদ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ হতে দেখা যায়। সংবাদপত্রগুলোতে এই ভাষার ইস্যুটি নিয়ে লাগাতার লেখা প্রকাশ- বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সে সময়ে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক মিল্লাত, মাসিক সওগাত, মাসিক মোহাম্মদীতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

দেশভাগের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- এমন মনোভাব প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তার বিপরীতে বাংলা ভাষাভাষী সংবাদপত্রগুলো রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এ সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত মুসলিম লীগ সমর্থিত পত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপা হতে দেখা যায়- যে প্রবন্ধগুলো মূলত উর্দু ভাষাকে সমর্থন করে। অন্যদিকে বাংলা ভাষার পক্ষে তখন প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক আজাদ। এই পত্রিকা দুটোতে বাংলা ভাষার সমর্থনে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপা হয়। 

দেশভাগের আগে ভাষার প্রশ্নে দৈনিক আজাদে বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও এ ব্যাপারে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি শুরু থেকেই ছিল রহস্যঘেরা। আজাদে কখনো বাংলা ভাষার পক্ষে, কখনো বিপক্ষে বক্তব্য প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ভাষার প্রশ্নে পত্রিকাটির কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান ছিল না। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে ভাষার প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা-না উর্দু?’- শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। পুস্তিকায় ইত্তেহাদ সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদের প্রবন্ধও সে সময় ছাপা হয়েছিল।

দেশভাগের প্রথম থেকেই মর্নিং নিউজ বাংলা ভাষার তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল। ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে পত্রিকাটিতে অব্যাহতভাবে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও খবর নিয়মিত প্রকাশিত হতো। ১৯৪৭ সালে ১৭ ডিসেম্বর মর্নিং নিউজের সম্পাদকীয় কলামে উর্দু-সমর্থকদের একটি তাত্ত্বিক বক্তব্যও প্রকাশিত হয়- যা বাংলা ভাষার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে লেখা। এই পত্রিকাটি সে সময় বাংলা ভাষার দাবিতে যে আন্দোলন- সে আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করে।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাংলা ভাষার প্রতি পাকিস্তান সরকারের একচোখা নীতির বিষয়ে তমদ্দুন মজলিসের কয়েকজন নেতা তৎকালীন মন্ত্রী ফজলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। মন্ত্রী এসব বিষয়কে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দায় এড়ান। তাঁর এই বক্তব্যের ওপর ইত্তেহাদ ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।


১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি তোলেন। ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি অমৃত বাজার পত্রিকা এই খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণপরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর মনোভাব রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে। তাঁর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদকীয়র বক্তব্য সে সময় বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো সমর্থন করে। কিন্তু একই বছর মার্চ মাসে ভাষা আন্দোলনের সময় পত্রিকাটিকে সর্বতোভাবে উর্দুকেই সমর্থন করতে দেখা যায়।

সে সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বাংলার ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপ দিতে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদে ‘ইনসাফ’, ‘জিন্দেগী’ ও ‘দেশের দাবী’ পত্রিকা থেকে তিনজন করে প্রতিনিধি নেওয়া হয়।

১৯৪৮-৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনে সবচাইতে বেশি শক্তিশালী সমর্থন জোগায় সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকা। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন তখনকার প্রগতিশীল যুব নেতা মাহমুদ আলী। নওবেলালের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মাসিক সীমান্ত পত্রিকাটিও। এই সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধুরীই প্রথম ভাষা শহীদদের ওপর কবিতা লেখেন, আমি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি, কাঁদতে আসিনি।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সমাবর্তনে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। ছাত্ররা ‘না’, ‘না’ বলে প্রতিবাদ জানান। 

১৯৪৮ সালের পর বাংলা ভাষা আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের বাংলা ভাষাবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের চেষ্টা ছিল এই ষড়যন্ত্রের একটি রূপ। ১৯৫০ সালের ২৪ মে দৈনিক আজাদ- এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবর বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে।

১৯৫১ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস উপলক্ষে সংগ্রাম পরিষদের পুরোনো কমিটি পুনর্গঠন করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ৩০ দিনের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এ পরিস্থিতিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব খবরগুলো বেশ জোড়ালোভাবেই প্রকাশ করে ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ ‘দৈনিক আজাদ’। 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালেই ছাত্রছাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। তৎকালীন আমতলায় বসে সভা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে-বিপক্ষে চলে তর্ক-বিতর্ক। একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা আসে। স্লোগান ওঠে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন একদল ছাত্রছাত্রী। এরপর দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। বিকেলে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী। শহীদ হন সালাম-বরকত-রফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ভাষার প্রশ্নে আগের রহস্যের জাল ছিন্ন করে ‘দৈনিক আজাদ’। 

এদিন সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদ প্রকাশ করে বিশেষ টেলিগ্রাম। ব্যানার হেডলাইন করা হয়, ‘ছাত্রদের তাজা খুনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত’। মুসলিম লীগ সরকার দৈনিক আজাদের এই সংখ্যা সে সময় বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রাদেশিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরবর্তী কয়েক দিন দৈনিক আজাদ প্রচুর সংবাদ ছাপে। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা নেয়।

মর্নিং নিউজ ছিল উর্দু ভাষার সমর্থক একটি পত্রিকা। পত্রিকাটি সে সময় ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও উগ্র প্রচারণা চালায়। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকেও তারা বিকৃত করে ২২ ফেব্রুয়ারি খবর প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ জনতা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে অবস্থিত মর্নিং নিউজের প্রেস ও অফিস জ্বালিয়ে দেয়। বাংলা ভাষাপ্রেমী জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় মর্নিং নিউজ পত্রিকার অফিস।

সংবাদ-এ কর্মরত অধিকাংশ সাংবাদিকই ছিলেন বাংলা ভাষার সমর্থক। কিন্তু মালিকানার কারণে পত্রিকাটি ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির খবরও পত্রিকাটি খুব কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি ক্ষুব্ধ জনতা রথখোলা মোড়ে সংবাদ অফিসে হামলা চালায়। ভাষা আন্দোলনবিরোধী ভূমিকার জন্য পত্রিকাটি থেকে তরুণ সাংবাদিক মুস্তফা নূরউল ইসলাম ও ফজলে লোহানী পদত্যাগ করেন। 

আগে বাঙালি মুসলমান পরিচালিত সংবাদপত্রের নাম রাখা হতো উর্দু, ফার্সি অথবা আরবিতে। যেমন-সোলতান, তকবির, আজাদ, সওগাত ইত্যাদি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের প্রভাবেই সম্ভবত বাঙালি মুসলমান তাদের সংবাদপত্র ও সাময়িকীর নাম বাংলায় রাখা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ক্ষমতাসীন প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যে দৈনিক সংবাদপত্রটি প্রকাশ করেন, তার নাম রাখা হয় ‘সংবাদ’। মুসলিম লীগ সমর্থক পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদ’ এই নামকরণের প্রতিবাদ জানান। ‘আজাদের’ সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, পত্রিকাটির নামকরণে হিন্দুয়ানি বাংলাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। মুসলমানি বাংলায় পত্রিকাটির নাম রাখা উচিত ছিল ‘খবর’।

ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন খবর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতো। এ কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অবজারভারের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সম্পাদক আবদুস সালাম ও মালিক হামিদুল হক চৌধুরীকে সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়। 

সাপ্তাহিক সৈনিক ২১ ফেব্রুয়ারির বিশেষ সংখ্যা বের করে। পত্রিকাটি লাল কালিতে ব্যানার করে, ‘শহীদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ সৈনিক অফিস ঘেরাও করে। সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক ইনসাফ ও দৈনিক আমার দেশ। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় দৈনিক মিল্লাত ব্যানার শিরোনাম করে: ‘রাতের আঁধারে এত লাশ যায় কোথায়?’। ঘটনার পর মিল্লাত সম্পাদক মো. মোদাব্বেরের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ভাষা আন্দোলনে সাপ্তাহিক ইত্তেফাকও জোরালো ভূমিকা পালন করে।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

'এপ্রিল ফুল' এর ট্র্যাজেডিতে কি জড়িয়ে আছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।

পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস তৈরি হতে পারে।

এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।

একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।

ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে। ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু ১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু করে।

ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।

ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয় দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।

মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?

বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন। আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।

কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।

"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হয়েছিল।"

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।

"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি। আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক সংযোগ নেই।"

মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন করে না।

মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।

মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে। 


এপ্রিল ফুল   পহেলা এপ্রিল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

রাতে মশা দিনে মাছি, এই নিয়ে রাজধানীবাসী

প্রকাশ: ০৯:১৪ এএম, ৩১ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।

গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।

মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।

অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।

বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।

আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।

মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।

মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।


মশা. মাছি   রাজধানী   জনজীবন   সিটি কর্পোরেশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

সুশিক্ষা প্রয়োগেই হতে পারে প্রজন্মের বিকাশ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে  সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।

 সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।

শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।

শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।

দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?

যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।

শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?

যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।

তবে, দেশের বড় বড় দায়িত্বতে থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্য ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।


সুশিক্ষা   প্রজন্ম   বিকাশ   তরুণ তরুণী   শিক্ষা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নারীর প্রতি এক পৃথিবী সম্মান থাকুক প্রতিটি পুরুষের

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায় ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায় এক পৃথিবী সমপরিমাণ।

পুরুষের কাছে নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই হয় এই নারীর কারণেই।

পুরুষবিহীন যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।

পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য  হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।

যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।

এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়,  একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।

তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।

তবে, পুরুষ সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান, আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত। এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।


নারীর প্রতি সম্মান   পুরুষের ভালোবাসা   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

অধিকার আদায়ের স্মারক নারী দিবস

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ০৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

“পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’’ কবি কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা হতো না। এর জন্য করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

১৮৫৭ সালের ৮ই মার্চ নারীদের জন্য একটি স্মরণীয় দিন বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়, অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। কিন্তু পুলিশ এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। বহু শ্রমিককে আটক করা হয়। এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮ মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি অতিক্রম করে।

১৯০৮ সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের ২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি পালিত হয়। ১৯১৪ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫ সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি পালন করতে থাকে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ সুগম হয়। নারীর অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে। নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের শিকার না হয় তার আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায় বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে। যে নারী শ্রমিকদের মধ্য থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশে নারীদের জন্য অনেক আইন ও বিধি বিধান থাকলেও বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত। নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়। তবে এখন এর এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়।

 

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা আজও নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয় না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো সফলতা নেই।

বর্তমান যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়।  নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী উন্নয়ন করতে হলে নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। নারী উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে একসাথে কাজ করতে হবে। নারীর প্রধান শক্তি  শিক্ষা, এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে সহায়ক সেবা প্রদান করতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা। নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন সার্থক হবে।

নারী উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সব সময় পুরুষের অধীন এবং ছোট করে দেখা হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে না। এটিও নারী উন্নয়নের পথে এক বড় অন্তরায়। নারী যদি শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হয় তবে সে সচেতন হয় না। তার আয় বাড়ে না। ফলে সে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়। এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।

নারী দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী, ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে। নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে হবে।

প্রতিবছর নারী দিবস উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৪ এর প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস। নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।


অধিকার   স্মারক   নারী দিবস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন