ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: ঢাকায় আসেন ইয়াহিয়া - ১৫ মার্চ ১৯৭১


Thumbnail

 ১৯৭১-এর ১৫ মার্চ ছিল সোমবার। এই দিন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিবস। এই দিনটিতেও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত বর্জনের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল। এছাড়া আন্দোলনে নিহত বীর শহীদদের উদ্দেশ্যে শোক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের আশা-আকাক্ষাকে তোয়াক্কা না করে এক তরফাভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উড়তে থাকে।

মার্চ মাস বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের অসহযোগ আন্দোলনের মাস। এই মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র পঞ্চদশ পর্বে থাকছে ১৫ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ। 

১৩ মার্চ জারিকৃত ১১৫ নং সামরিক আইন আদেশে সরকারি কর্মচারীদের কাজে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হলেও কোন বিভাগের কোন সরকারি কর্মচারী এদিন কাজে যোগ দেননি। বরং তারা সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং ঢাকার নাখালপাড়ায় এক প্রতিবাদ সভা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচীর প্রতি পুনর্বার একাত্মতা ঘোষণা করেন।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এমএলআর অর্থাৎ মার্শাল ল’ রেগুলেশনস অমান্য করে সামরিক বিভাগের অধীনে অর্ডিন্যান্স ডিপোর প্রায় ১১ হাজার কর্মচারীর কেউই এইদিন কাজে যোগদান করেননি। সরকারী কর্মচারীগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এএলআর অর্থাৎ আওয়ামী লীগ রেগুলেশনস অনুযায়ী তাদের কর্মসূচী পালন করে। বস্তুত বাংলাদেশ তখন এমএলআর-এর বিপরীতে এএলআর দ্বারা পরিচালিত হতে থাকে।

এ সময় অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল পূর্ব পাকিস্তানে আসেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান নবনিযুক্ত সামরিক গভর্নর ‘বাংলার কসাই’খ্যাত লেফটেনেন্ট জেনারেল টিক্কা খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাদা রঙ্গের গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করতে যান। ১৬ মার্চ শুরু হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-ইয়াহিয়া খানের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। 

সমঝোতার নাটক করতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসলেও মুক্তিকামী বাঙালি তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। দেশবাসীকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন করেন। শিল্পাচার্য জয়নুলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে।

বিকেলে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশে কেবল বাংলার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কোন নির্দেশ জারি করতে পারেন এবং বাংলার জনসাধারণ কেবলমাত্র সেই বিধিই মেনে চলবে। কেননা বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির নির্বাচিত নেতা।’

জনসভা শেষে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মিছিলটি কাকরাইল, বেইলি রোড হয়ে প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে দিয়ে অতিক্রম করে। ইয়াহিয়া খান তখন ওই ভবনেই অবস্থান করছিলেন। ভবনের সামনে সামরিক বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য উপস্থিতি ছিল। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ঢাকার চেকপোস্টগুলো তুলে নেয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেতার ও টিভিশিল্পীরা দেশাত্মবোধক গান করেন।

চিকিৎসকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সভা থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং মুক্তি আন্দোলনের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামে প্রস্তুত হওয়ার জন্য জনতার প্রতি আহ্বান জানান। 

তোপখানা রোডে বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের নারী সমাবেশ থেকেও বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সকল কর্মসূচীর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। এদিকে ঢাকা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া স্বেচ্ছাসেবকরা গোলযোগ তৈরির চেষ্টা করলে এদিন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বিবৃতিতে বলেন, ‘কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পোশাক ও টুপি নকল করে জনসাধারণের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এসব দুষ্কৃতকারিদেরকে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে প্রেরণ করতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।’

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সব শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীকে রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জনের আহ্বান জানায়। দেশবাসী উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেয়ে নিজেদের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে। এ দিনে ঢাকা শহরে শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক সবার সভা-সমাবেশ অব্যাহত থাকে।

বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি টেলিভিশন নাট্যশিল্পী সংসদ এদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আবদুল মজিদ। বক্তব্য রাখেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফরিদ আলী, শওকত আকবর, আলতাফ হোসেন, রওশন জামিল, আলেয়া ফেরদৌস প্রমুখ।

একইদিনে ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরেও সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং চলতে থাকে। এদিনে নেত্রকোনায় স্ইুপার ও ঝাড়ুদাররা ঝাড়ু, দা, লাঠি ও কোদাল নিয়ে মিছিল বের করে। বগুড়া, খুলনা, রংপুর, লাকসাম, কুমিল্লা ও কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে স্বাধীনতার সপক্ষে মিছিল-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের বিশাল সমাবেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবুল ফজল। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, সাংবাদিক নূর ইসলাম প্রমুখ। 

সময় তখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে অনিবার্য পরিণতির দিকে; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে চলছে পূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন। একাত্তরের ১৫ মার্চেও ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। সরকারি-বেসরকারি ভবনে এবং যানবাহনে উড়ছিল কালো পতাকা।

এদিন ১৪ মার্চ করাচির সভায় পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টোর দুই দলের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হয়।

পশ্চিম পাকিস্তানে জমিয়তে উলামায়ে পাকিস্তান, ন্যাপ (ওয়ালী), মুসলীম লীগ (কাউন্সিল) এবং পিডিপির নেতারা এক বিবৃতিতে ভুট্টোর ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্যে তাকেই দায়ী করেন।

রাতে ঢাকায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের এই আহ্বানে জনগণের নিরঙ্কুশ সাড়া পাওয়া গেছে।’

খুলনার হাদীস পার্কে এক সমাবেশে জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, ‘বাংলার প্রতিটি মানুষ আজ বঙ্গবন্ধুর পেছনে একতাবদ্ধ। রেডিও, টিভি, ইপিআর, পুলিশ বাহিনী, সেক্রেটারিয়েট প্রভৃতি আজ আওয়ামী লীগ প্রধানের আজ্ঞাবাহী।’

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশমাস’)।


উত্তাল মার্চ   দিনগুলো   ঢাকা   ইয়াহিয়া   ১৫ মার্চ   ১৯৭১  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘মার্চের উত্তাল দিনগুলো’: ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত - ২২ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২২ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

একাত্তরের লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস ২২ মার্চ। স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষের ‘উত্তাল’ সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্লোগানে ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত। এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানের উভয় অংশের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনাক্রমে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পরিবেশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য ২৫ মার্চের অধিবেশন স্থগিত রাখা হয়েছে।

অসহযোগ আন্দোলনের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক নতুন একটি মানচিত্র ঘোষণার মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ মাসেই বীর বাঙালি বঙ্গবন্ধুর আহবানে স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র দ্বাবিংশ পর্বে থাকছে ২২ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

সকালে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও জুলফিকার আলী ভুট্টো আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এদিন ছিল প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ষষ্ঠ দফা বৈঠক। বৈঠক সোয়া ঘন্টা স্থায়ী হয়। প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজ বাসভবনে ফিরে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি এবং লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যায়। বাসভবনে সমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বন্দুক, কামান, মেশিনগান কিছুই জনগনের স্বাধীনতা রোধ করতে পারবে না।’

দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক প্রহরায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এই বৈঠক শেষে ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতৃবৃন্দ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে ভুট্টো ফেরার সময় হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। সেখান থেকে ফিরে হোটেল লাউঞ্জে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের জন্য একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে এ ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।

এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে তারা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না।

রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী লিখেছেন, ঢাকার কয়েকটি পত্রিকায় এদিন ‘বাংলার স্বাধিকার’ শিরোনামে একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়। ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হয় বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত একটি বাণী। ওই ক্রোড়পত্রে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক রেহমান সোবহান প্রবন্ধ লেখেন। অবজারভার গ্রুপের পত্রিকাগুলো সেদিন এই ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেনি। তারা পরদিন ছাপে। এই ক্রোড়পত্রে মূল পরিকল্পনায় ছিলেন নাট্য আন্দোলনের কর্মী রামেন্দু মজুমদার।   

২২ মার্চ সাংবাদিকদের সংগ্রহ করা  ভুট্টো-বিরোধীদের অবস্থানের খবর ও আলোকচিত্রের একটি আলোকচিত্র পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। এদিন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে মিছিলের ঢল ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। দৈনিক পত্রিকাগুলো পরদিন সেই খবর প্রকাশ করে লেখে, একদিনে এত মিছিল এর আগে কখনও ৩২ নম্বরে যায়নি।

বাসভবনে জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু এদিনও বেশ কয়েকবার বক্তৃতা দেন। জনতার গগনবিদারী শ্লোগান‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনি ও করতালির মধ্যে জনগণের নেতা ঘোষণা করেন, ‘সাত কোটি বাঙালি যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন আমি অবশ্যই দাবি আদায় করে ছাড়ব। ২৩ বছর মার খেয়েছি, আর মার খেতে রাজি নই। শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। কিন্তু এবার সুদে-আসলে বাংলার দাবি আদায় করে আনব।’

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।


উত্তাল মার্চ   বঙ্গবন্ধু  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: ভুট্টোর আগমণে বিক্ষোভে উত্তাল ঢাকা- ২১ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২১ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

‘বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অহিংস অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। নীতির প্রশ্নে কোনই আপস নাই এবং আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত পরিষ্কার’- একাত্তরের ২১ মার্চ এই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্পষ্ট ঘোষণা।

অসহযোগ আন্দোলনের, মুক্তির সংগ্রামের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক নতুন একটি মানচিত্র সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র একবিংশ পর্বে থাকছে ২১ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের ২১ তম দিন বিকেলে ধানমণ্ডির বাসভবনে সবমবেত জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বুলেট-বেয়োনেট দ্বারা কখনো সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দাবিকে স্তব্ধ করা যাবে না।’ গুজব ও বিভেদসৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের পঞ্চম দফা বৈঠক হয়। সেটি ছিল অনির্ধারিত বৈঠক। ৭০ মিনিটের ওই বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি বঙ্গবন্ধু। তিনি বলেন, আগের বৈঠকের আলোচনায় উদ্ভূত কিছু বিষয়ের ব্যাখ্যার জন্য এই বৈঠক। এর আগে ধানমণ্ডির বাসভবনে পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌঁসুলি এ কে ব্রোহির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বসেন বঙ্গবন্ধু।

এদিকে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো বিকেলে সদলবলে করাচী থেকে ঢাকায় আসেন। ভুট্টোর আগমনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকা। ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরে সেনা মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। ভুট্টোকে বিমানবন্দর থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নিয়ে আসার সময় রাস্তর দু’পাশের পথচারীরা ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দেয়।

সন্ধ্যায় পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো কড়া সেনা প্রহরায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। সেখানে ভুট্টো দু’ঘন্টারও বেশি সময় প্রেসিডেন্টের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক শেষে হোটেলে ফিরেই ভুট্টো তাঁর উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।


এর আগে হোটেল লাউঞ্জে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ভুট্টো বলেন, এ মুহূর্তে আমি এটুকু বলতে পারি যে, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ভুট্টো সাংবাদিকদের আর কোন সময় না দিয়ে সরাসরি লিফটে চড়েন। সাংবাদিকরা তাঁর সহগামী হতে চাইলে ভুট্টোর ব্যক্তিগত প্রহরীরা অস্ত্র উঁচিয়ে বাধা দেয়।

ওইদিন সেনাবাহিনীর লোকেরা হোটেল কর্মচারীদের জামায় কালোব্যাজ ও বাংলার পতাকা খুলে ফেলার জন্য চাপ দেয়। তবে বাঙালি হোটেল কর্মীরা পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, তারা ‘ভাত-পানি’ বন্ধ করে দেবেন। পরে সামরিক কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামলাতে কয়েকজন সামরিক সদস্যকে সরিয়ে নেয়।

পরদিন দৈনিক ইত্তেফাক ভুট্টোর ঢাকা সফরের বর্ণনা দিয়ে খবর প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল, ‘হঠ যাও - সব কুছ ঠিক হো যায়ে গা।’

কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসকে ‘প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানায় এবং কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ২৩ মার্চের ‘প্রতিরোধ দিবসে’এর কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন ঘোষণা করে। মগবাজারে মহিলা সংগ্রাম পরিষদের এক সমাবেশে সেনাবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারা-মিলিটারি বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জনের সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়।

এদিকে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বিকালে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বলেন, ‘আলোচনায় ফল হবে না। এ দেশের হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি থেকে চাপরাশি পর্যন্ত যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে মানে না, তখন শাসন ক্ষমতা শেখ মুজিবের হাতে দেওয়া উচিত।”

১৯ মার্চ জয়দেবপুরে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার পর কারফিউ জারি করা হয়েছিল। ২১ মার্চ দুপুর ১২টায় তা ছয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার কারফিউ জারি করা হয়।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।


উত্তাল মার্চ   মুক্তিযুদ্ধ   অসহযোগ আন্দোলন   বঙ্গবন্ধু  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন - ২০ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২০ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

১৯৭১ সালের এই দিনে মুজিব-ইয়াহিয়ার মধ্যে চতুর্থ দফায় বৈঠক হয়। সেদিনও খুব বেশি এগোয়নি কোনও আলাপ-আলোচনা। সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে পরবর্তীতে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ১৩০ মিনিট আলোচনা শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মীরা প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন। 

অসহযোগ আন্দোলন, সেই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে ঝপিয়ে পড়ার মাস মার্চ। একটি নতুন বাংলাদেশ নামক সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র বিংশ পর্বে থাকছে ২০ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু যখন প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বাইরে এলেন, তখন শত শত কণ্ঠের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তাঁকে আচ্ছন্ন করে।

বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ছয় শীর্ষ সহযোগী - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমদ ও কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বঙ্গবন্ধু দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। সময় এলে অবশ্যই আমি সবকিছু বলব। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের পথে তারা এগোচ্ছেন।’

পরে রাতে এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক অনুপ্রেরণাদায়ী দৃষ্টান্ত।’

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন মেজর সিদ্দীক সালিকের বই থেকে জানা যায়, ২০ মার্চ ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর, জেনারেল মিঠঠাসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি গোপন বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে তিনি সামরিক প্রস্তুতির পর্যালোচনা করেন। শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক ব্যর্থ হলে কী করণীয় হবে সে বিষয়েও আলোচনা হয় এবং ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদন করা হয়। একাত্তরের ২০ মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ অনুমোদনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির স্বাধীকারের আন্দোলন চিরতরে দমনের নীলনকশা বাস্তবায়নের অনুমোদন দেয়।

এদিকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ছয়টি থেকে ১৭টি পর্যন্ত পিআইএ ফ্লাইটে করে সৈন্য ও রসদ ঢাকায় আনা হচ্ছিল। কয়েকটি জাহাজ পূর্ণ করে সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র আনা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। অসহযোগ আন্দোলনের শুরুতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর শক্তি ছিল এক ডিভিশন, ২০ মার্চ তা হয় দুই ডিভিশনের বেশি।

ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই বিমান চলাচল বন্ধের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায়। জয়দেবপুরে সেদিনও সান্ধ্য আইন অব্যাহত ছিল। 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাবেক নৌসেনাদের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতার জন্য একটি সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী কমান্ড গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এদিন একের পর এক শোভাযাত্রা ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশে একাধিক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘মুক্তিপাগল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির চূড়ান্ত বিজয়কে পৃথিবীর কোনো শক্তিই রুখতে পারবে না।’

করাচিতে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো সাংবাদিকদের জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে সন্তোষজনক জবাব পেয়ে ঢাকা যাচ্ছেন। সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম কৌসুলী এ কে ব্রোহি এদিন সকালে করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’: মুক্তিযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ- ১৯ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৯ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একাত্তরের ১৯ মার্চ একটি বিশেষ দিন। এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ হয় গাজীপুরের জয়দেবপুরে। এদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মরণেই নির্মিত হয়েছে ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। জয়দেবপুরে পাক হানাদারদের সঙ্গে এ সম্মুখ যুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সমগ্র বাংলাদেশে স্লোগান ছিল ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’

অসহযোগ আন্দোলনের মাস মার্চ, মুক্তিযুদ্ধের মাস মার্চ। বিশ্বের মানচিত্রে নতুন একটি বাংলাদেশ নামক মানচিত্র সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র উনবিংশ পর্বে থাকছে ১৯ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ। দেশ যখন অসহযোগ আন্দোলনে উত্তাল তখন গাজীপুরের শান্তিকামী জনতা স্বাধীনতার জন্য পাক হানাদারদের মুখোমুখি হয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। গাজীপুরের তৎকালীন নাম ছিল জয়দেবপুর। ১৯৭১ সালে জয়দেবপুর সেনানিবাসের ভাওয়াল রাজবাড়ীতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর দ্বিতয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কার্যালয় ছিল। সেখানে ২৫-৩০ জন ছাড়া সবাই ছিলেন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা। পাকিস্তানিরা বাঙালি দমনের নীল নকশা অনুযায়ী ১৫ মার্চের মধ্যে অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়। 

বাঙালি সৈন্যরা রাজি না হলে ১৯ মার্চ সকালে ঢাকা ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব অস্ত্র ও  গোলা বারুদ নিতে জয়দেবপুর সেনানিবাসে আসেন। এ খবর জানাজানি হলে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে জনতা, লাঠি, তীর-ধনুক নিয়ে জয়দেবপুর বটতলায় জড়ো হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ওই প্রতিরোধ যুদ্ধে মনু খলিফা, কিশোর নিয়ামত, ফুটবলার হুরমত আলী ও কানু মিয়া শহীদ হন। আহত হন আরও অনেকে। জয়দেবপুরে পাক হানাদারদের সঙ্গে এ সম্মুখ যুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সমগ্র বাংলাদেশে স্লোগান ছিল ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। 

১৯৭১ সনের ১৯ মার্চ জয়দেবপুর থেকে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিরোধে অংশ নেয়া মো. নুরুজ্জামান আকন্দ। তিনি তৎকালীন গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। 

ওই দিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি জানান, বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে রাণী বিলাসমনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে জয়দেবপুর থেকে পাক বাহিনীর অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনা জানায়। পরে ওই দুই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি আসে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে ভিপি আসকর আলী সরকার, মাইরাল চেয়ারম্যানের ছেলে দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রনেতা নিয়ত আলী ওরফে আমজাদসহ তারা সকল নেতাকর্মী, শিক্ষার্থী একযোগে জয়দেবপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। ততক্ষণে পাক বাহিনী অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে রাজবাড়ি ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে পড়ে। 

অস্ত্রসহ কমপক্ষে ১৫টি জীপ গাড়তে করে দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে পাক বাহিনীর সদস্যরা রাজবাড়ি থেকে বের হয়। ওইসব নেতাকর্মী শিক্ষার্থীরা রাজবাড়ি সড়কের বর্তমান পোস্ট অফিসের সামনে অবস্থান নেয়। প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ছিল আনুমানিক ৫’শ ফুট। পাক বাহিনীর কয়েকজন বাঙালি জোয়ান বাংলা ভাষায় ছাত্র-জনতাকে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে। 

ছাত্র-জনতা অবরোধে অনড় থাকলে পাক বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হবে বলে ঘোষণা দেয়। এক পর্যায়ে একটি বাঁশির আওয়াজ শোনা যায়। তাৎক্ষণিক পাক বাহিনীর সদস্যরা গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে অবরোধকারীদের লক্ষ্য করে সড়কের দুই পাশে অস্ত্র তাক করে অবস্থান নেয়। এবারও অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করে। কিছুক্ষণ পর আবারও আরেকটি বাঁশির আওয়াজ হওয়ার সাথে সাথে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর মুহুর্মুহু গুলি ছোঁড়ে পাক বাহিনীর সদস্যরা।      

বীর বাঙালির এই সশস্ত্র প্রতিরোধের কারণেই ব্যর্থ হয় জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা। জয়দেবপুরের ‘সংঘর্ষের’ খবর বিদ্যুৎবেগে ছড়িয়ে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশে। এদিন সন্ধ্যায় জয়দেবপুর শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

জয়দেবপুরে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর সেনাবাহিনীর গুলির তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যারা বুলেট ও শক্তি দিয়ে গণআন্দোলনকে স্তব্ধ করবেন বলে ভেবেছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। বাংলাদেশের মানুষ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। কিন্তু এর অর্থ এই নয়, তারা শক্তি প্রয়োগে ভয় পায়।’

একদিন বিরতির পর এদিন ঢাকায় বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তৃতীয় দফা একান্ত বৈঠক হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে কালো পতাকা উত্তোলন অব্যাহত থাকে। সরকারি-আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি চলে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে।

সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠক হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, কামাল হোসেন এবং সরকারের পক্ষে বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান অংশ নেন। দুই ঘণ্টার বৈঠকে আলোচনার ‘টার্ম অব রোফারেন্স’ ঠিক করা হয়।

এদিনও বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অনেক মিছিল যায়। সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে শেখ মুজিব বলেন, ‘শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাঁচার ব্যবস্থা করে যাব।’

ন্যাপ প্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় সময় নষ্ট করছেন। ইয়াহিয়া খানের বোঝা উচিত শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মনে রাখা উচিত যে, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন।’

করাচিতে জাতীয় পরিষদের স্বতন্ত্র সদস্যসহ সংখ্যালঘিষ্ঠ দলগুলোর পার্লামেন্টারি পার্টির নেতারা এক বৈঠকে পশ্চিম পাকিস্তানে ভুট্টোবিরোধী একটি যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন পশ্চিম পাকিস্তানে গণআন্দোলন শুরুর লক্ষ্যে তার দলের প্রস্তুতি গ্রহণের কথা ঘোষণা করে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ক্ষমতার ব্যাপারে পিপলস পার্টিকে হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র হলে আমি চুপ করে বসে থাকব না। পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, এবার আপনারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের শক্তি দেখবেন।’

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।


উত্তাল মার্চ   দিনগুলো   মুক্তিযুদ্ধ   প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ   ১৯ মার্চ   ১৯৭১  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’:বঙ্গবন্ধুর বাসভবন অসহযোগ আন্দোলন পরিচালনা কেন্দ্র- ১৮ মার্চ ১৯৭১

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ১৮ মার্চ, ২০২৩


Thumbnail

পরপর দুদিন মুজিব-ইয়াহিয়ার বৈঠকের পর পরবর্তী বৈঠকের কোনো সময় নির্ধারণ না হওয়ায় জনমনে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়। একাত্তরের ১৮ মার্চ ভোর থেকে রাত পর্যন্ত জনতা তাদের আশা-আকাক্ষার প্রতীক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভিড় জমান। অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবসে সরকারি-বেসরকারি ভবনের শীর্ষে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস আদালতে অনুপস্থিত থেকে সর্বশ্রেণীর কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচিকে সফল করে তোলেছিলেন। সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর সাথে ইয়াহিয়া খানের দ্বিতীয় দিনের বৈঠক। তাই ভোর রাত থেকেই পরবর্তী দিক নির্দেশনা পেতে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে জমা থাকেন সংগ্রামী জনতা।   

অসহযোগ আন্দোলনের মাস মার্চ। বিশ্ব মানচিত্রে নতুন একটি বাংলাদেশ নামক মানচিত্র সৃষ্টির মাস এই মার্চ মাস। এ মাসেই বীর বাঙালি স্বাধীনতার নেশায় মহান মুক্তিযদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। উত্তাল এই মার্চেই জন্ম হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। ‘উত্তাল মার্চের দিনগুলো’র অষ্টদশ পর্বে থাকছে ১৮ই মার্চের ঘটনাপ্রবাহ।

পহেলা মার্চ থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনটি হয় হয়ে উঠেছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জনগণের পরিচালন কেন্দ্রই শুধু নয়, এই বাড়িটি হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের মহামিলন ক্ষেত্রও। সব পথ যেন মিশেছে ওই বাড়িতে।

সারাদিন ধরে মিছিলের পর মিছিল করে বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়কের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে এলে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সাথে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বারবার উঠে এসে শোভাযাত্রাকারীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমরা চরম প্রস্তুতি নিয়ে ঘরে ঘরে সংগ্রামী দুর্গ গড়ে তোল। যদি তোমাদের ওপর আঘাত আসে তা প্রতিহত করে শত্রুর ওপর পাল্টা আঘাত হেনো।’ জনতাকে চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘মুক্তি সংগ্রামের পতাকা আরো ওপরে তুলে ধরো। সাতকোটি শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির সার্বিক মুক্তি না আসা পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাও।’

এদিন বিপুল সংখ্যক দেশি- বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আরো সৈন্য আনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু কিছু জানেন কি না, জনৈক বিদেশি সাংবাদিকের এই প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমার দেশের মাটিতে যা কিছু ঘটছে তার সব খবরই আমি রাখি।’ 

তিনি বলেন, ‘বিদেশি বন্ধুরা দেখুন। আমার দেশের মানুষ প্রতিজ্ঞায় কি অটল। সংগ্রাম আর ত্যাগের মর্মে কত উজ্জীবিত, কার সাধ্য এদের রোখে। স্বাধীনতার জন্য জীবনদানের অগ্নিশপথে দীপ্ত জাগ্রত জনতার এ জীবন জোয়ারকে, প্রচণ্ড গণবিস্ফোরণকে স্তব্ধ করতে পারে- এমন শক্তি মেশিনগানেরও আজ আর নেই।’

এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ওয়ালী ন্যাপ প্রধান ওয়ালী খান একঘন্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি গাউস বক্স বেজেঞ্জোও উপস্থিত ছিলেন। রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, আগামীকাল সকাল এগারোটায় প্রেসিডেন্ট ভবনে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট সম্পর্কে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁয়ে ও মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। সৈন্যরা এই দুই স্থানে নিরস্ত্র আরোহীদের নির্মমভাবে প্রহার করে এবং তাদের টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এসব ঘটনায় নগরীতে জনসাধারণের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, নিরস্ত্র মানুষের ওপর উসকানিমূলক আচরণ, তা যে কোনো মহলেরই হোক না কেন, আমরা আর সহ্য করব না। এর ফলাফলের দায়িত্ব উসকানিদাতাদেরই সম্পূর্ণ বহন করতে হবে।’

বাংলাদেশের জন্য খাদ্যশস্যবাহী ‘ইরনা এলিজাবেথ’ নামের একটি জাহাজের গতিপথ বদল করে চট্টগ্রাম থেকে করাচি নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় বিমান বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন।

করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শাসনতান্ত্রিক প্রশ্নে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা পাঠিয়ে, গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানির নিবৃত্তি করার অনুরোধ জানান।

চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণ ও অন্যান্য ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিন তদন্তের জন্য বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যান। ঢাকায় বিমানবাহিনীর প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শপথ নেন সর্বশক্তি ও সম্পদ নিয়োগ করে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যেকোন ত্যাগ স্বীকারের।

(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী ‘৭১ এর দশ মাস’)।



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন