ইনসাইড আর্টিকেল

ভারতে পবিত্র মাহে রমজান মাস যেভাবে পালিত হয়

প্রকাশ: ০৮:৩২ এএম, ১৬ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail ভারতে পবিত্র মাহে রমজান মাস যেভাবে পালিত হয়

পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পার মাস। রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের মাস এই রমজান। তাই এই মাসের বিশ্বের সমস্ত মুসলিম উম্মাহ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। তেমনি আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মুসলমানরাও আনেকটা আমাদের দেশের মতো করেই পবিত্র রমজান উদযাপন এবং রোজা পালন করে থাকেন।    

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ। হিন্দু প্রধান এই দেশটিতে সংখ্যালঘু হিসাবে বসবাস করছেন আনুমানিক ২০০ মিলিয়ন মুসলমান।রপিউ রিসার্চ সেন্টারের নতুন তথ্য অনুসারে, আগামী কয়েক দশকে ভারত ইসলাম এবং হিন্দুধর্ম পালনকারী জনসংখ্যার সর্ববৃহৎ দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। ২০৫০ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ৩১১ মিলিয়নে গিয়ে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১১ শতাংশ।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে এবারের রমজানকে কিছুটা ভিন্নমাত্রায় উদযাপন করছেন দেশটির মুসলিমরা। রমজান মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র মাস, এ সময় সুবহে সাদিক থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোজা রাখা হয়। বেশি বেশি ইবাদত, আত্মসংযমের মাধ্যমে রবের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা হয়।

ঠিক তেমনি ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পবিত্র রমজান মাসকে একটি আলাদা পরিচয় দেয়। রমজানে রাজধানী নয়াদিল্লির মুসলমানরা তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসারে পবিত্র মাসের আবির্ভাব উদযাপন করতে একত্রিত হয়ে রমজানকে একটি আলাদা পরিচয় দিয়েছেন।

ভারতের অন্যতম পুরোনো শহর দিল্লিতে রোজাদারদের ঘুম ভাঙাতে গান, গজল, তেলাওয়াত পরিবেশন করেন সেহরিওয়ালারা। এটি ভারতের অত্যন্ত পুরোনো একটি ঐতিহ্য। অনেক কিছু পরিবর্তিত হলেও দিল্লি তার এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি শহরের একটি পুরোনো মোঘল সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করে। পবিত্র রমজান মাসে সেহরিওয়ালারা সূর্যোদয়ের আগে শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। আল্লাহ ও নবীর নাম উচ্চারণ করে রোজাদারদের সেহরি গ্রহণ করতে আহ্বান জানায়। তারা বাড়ির দরোজা, দেয়ালে টোকা দেওয়ার জন্য লাঠি বা বেত বহন করে। সেহরিওয়ালারা এ দায়িত্ব বংশ-পরম্পরায় পালন করে থাকে। নতুন নতুন পেশায় অংশগ্রহণ বাড়ছে, ফলে তাদের সংখ্যা কমছে; তবুও পুরোনো দিল্লিতে এ প্রথা এখনও চালু রয়েছে।

ভারতের মুসলমানরা জুমার নামাজের সময় মসজিদে সমবেত হয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন। নতুন দিল্লির মাদ্রাসায় তরুণ ছাত্ররা কুরআন তেলওয়াত করে। যে সমস্ত ছাত্ররা পুরো কুরআন মুখস্ত করে অর্থাৎ কোরআনে হাফেজ হয়, তাদের দিল্লির বিভিন্ন মসজিদে নামাজের সময় কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য পাঠানো হয়।

ভারতে পুরো রমজান মাসে মসজিদগুলো মুসল্লিদের চাপে থাকে একেবারে ঠাসা। বিশেষ করে, তারাবির নামাজে মসজিদে ঠাঁই নেই অবস্থার সৃষ্টি হয়। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ ছাড়িয়ে রাস্তায় পর্যন্ত কাতার ছড়িয়ে পড়ে। বিপুলসংখ্যক মানুষ নামাজের জামাতে শরিক হয়। শান্তি-সৌহার্দ্যের জন্য মোনাজাত করে। ভারতের মসজিদগুলোতে সাধারণভাবে ২৭ রমজানের মধ্যেই তারাবিতে পুরো কোরআন খতম হয়। তবে কোনো কোনো মসজিদে প্রতি ৫ রোজায় একবার পবিত্র কোরআন পাঠ সম্পন্ন করা হয়। সময়-সুযোগের আলোকে মুসল্লিরা সংশ্লিষ্ট মসজিদে তারাবি আদায় করেন। কোনো কোনো স্থানে মসজিদ কমিটি বিশেষ নামাজের পর স্থানীয় ভাষায় পবিত্র কোরআনের তাফসির মাহফিলের আয়োজন করেন।

ভারতের মুসলমানরা এই মাসে দরিদ্রদের সাহায্য করাকে সওয়াবের কাজ বলে মনে করে। রমজানে ভারতের বাজারগুলোতে প্রচুর জনসমাগম থাকে। এসময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইফতারের জন্য ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। এই দেশে সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে বিভিন্ন ধরণের খেজুর আমদানি করা হয়। এই মাসে বাজারগুলো খেজুরে ভরে যায়। কারণ এ দেশের মুসলমানরা খেজুর দিয়ে তাদের ইফতারি করতে পছন্দ করে।

ভারতের মুসলিমরা সাধারণত মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করে। তবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র‍্যে ভরপুর এখানকার একেক রাজ্যের ইফতারির আয়োজন একেক রকম। যেমন হায়দরাবাদের লোকজনের খাবারের তালিকায় থাকে হালিম, কলকাতার ইফতারে থাকে খেজুর ও বিভিন্ন ধরনের ফল এবং চিকেন শর্মা, বটি কাবাব, কাটলেটের মতো মুখরোচক খাবার। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত বিশেষ করে তামিলনাড়ু ও কেরালায় ইফতারের প্লেটে থাকে ননবো কাঞ্জি নামের এক ধরনের খাবার।


ভারত   পবিত্র   রমজান   মাস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারের মৃত্যু যেভাবে ঘটেছিল

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ৩০ মে, ২০২৩


Thumbnail

হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণ করলে সেটির পরিণাম যে নির্মম হয় সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। পঁচাত্তরে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ড, এরপর ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী জেনারেল জিয়াউর রহমান একের পর এক ক্যূ-পাল্টা-ক্যূ, হত্যাকাণ্ড, মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি, চাকরিচ্যুতি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে চেষ্টা করেছেন তার পথ ধরেই নিজেও নির্মমভাবে নিহত হন। আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী

জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন। 

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নানা সময় বিভিন্নভাবে সেনা-অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীর একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ সেই সময়ে ঘটে চলেছিল নিয়মিতভাবেই।

বলা যায়, এমন পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সামরিক বাহিনীর একদল অফিসারের হামলায় নিহত হন দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান। ছয় বছর আগে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সামরিক বাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তিনি দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। এর পরের বছরগুলিতে তাকে উৎখাতের জন্য বিভিন্ন সময় সামরিক বাহিনীতে চেষ্টা করা হলেও তাঁর অনুগত সেনা অফিসার এবং সদস্যরা সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাগুলি দমন করেন।

কিন্তু ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান নিহত হন সেনা অফিসারদের হামলাতেই। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে তখন যে সেনা অফিসাররা ছিলেন তাদের অনেকেই জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও ঘটে যায় এই হত্যাকাণ্ড। প্রশ্ন ওঠে, অনুগত অফিসাররাই কি জিয়াকে হত্যা করেছিলেন? নাকি তার অনুরাগী অফিসারদের ব্যবহার করে অন্য কোনো গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থের জন্য হত্যা করেছিল তাকে?

এই হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের প্রভাবশালী অফিসাররা কয়েকদিন চট্টগ্রামে কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখলেও ঢাকা সেনা সদর এবং দেশের অন্যান্য সেনানিবাস তাদের সঙ্গে নেই এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতেই তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি বা ডিভিশনাল কমান্ডার জেনারেল আবুল মঞ্জুর তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দ্রুতই ধরা পড়ে যান এবং তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনেই হত্যা করা হয়। বলা হয়, উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে।

জেনারেল মঞ্জুরকে বিচারের সম্মুখীন না করে এভাবে হত্যা করা অনেক প্রশ্ন আর সন্দেহের জন্ম দেয় স্বাভাবিকভাবেই। জিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় যে সেনা অফিসারদের তাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। চট্টগ্রাম কারাগারে গোপনে এবং খুব তাড়াহুড়ো করে বিচারের পর ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসি দেওয়া হয়, অনেককে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয় আরও বেশ কিছু অফিসারকে।

সত্তরের দশকের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অফিসাররা একাধিকবার জিয়াকে উৎখাতের চেষ্টা করেন। ১৯৮০ সালে দুই মুক্তিযোদ্ধা অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদারুল আলম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুন্নবী খানের মাধ্যমেও এই অফিসাররা জিয়ার বিরুদ্ধে সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। নুরুন্নবী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়ার নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্সের একটি বাহিনীতে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন। জিয়ার বিরুদ্ধে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানসমূহের কোনোটাই অবশ্য সফল হয়নি।

এমন জটিল এক পরিস্থিতিতেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সফরের সময় শেষ রাতে এক সামরিক হামলায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মঞ্জুরের অধীনস্থ সেনা অফিসাররা এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই হত্যাকাণ্ডের পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরকেই এই পরিস্থিতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।

৩০ মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ওপর আক্রমণ চালানো হবে তা কি জেনারেল মঞ্জুর জানতেন? সেই সময় চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায়, যেদিন রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম পৌঁছান তখন তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জেনারেল মঞ্জুর বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। মঞ্জুর কেন আসেননি সে ব্যাপারে জিয়া চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অন্য একজন উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেসও করেন (এই প্রসঙ্গে আবার অন্য বর্ণনায় জানা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়াই নাকি জেনারেল মঞ্জুর যেন বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে না আসেন সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন)।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের তাৎপর্য

প্রকাশ: ০৮:৩১ এএম, ২৯ মে, ২০২৩


Thumbnail

২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি এদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সশস্ত্রবাহিনী থেকে এ অবধি ১,৮৩,৩৭৮ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত হয়েছেন।শান্তি রক্ষায় কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন ১৩৯ জন,আহত হয়েছেন ২৪০ জন।২০২২ সালে এসে আমরা সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৬৩২৪ জন সদস্যকে শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত দেখতে পাচ্ছি। এ ভেতর নারী সদস্য রয়েছেন ৩৭১জন। বর্তমানে ৯টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্য কাজ করছেন।উল্লেখ্য, সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৪৩টি দেশে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি কতটা গুরুত্ববহ। 

২. শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল। এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল পুরুষ-নারীকে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারী মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

আগেই উল্লেখ করেছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করেছে ৭৫ বছর। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের অধীনে চলতি বছর বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৩৫ বছর পূর্ণ করল(১৯৮৮-২০২৩)। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধরত সিরিয়াতে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শান্তি রক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর সাথে তাঁর সরকারের বন্ধুত্ব স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রশংসিত হয়েছেন দেশ-বিদেশে। যেমন, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা কোভিড-১৯(২০২০-২০২১)মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অব্যাহত ও নিবেদিতভাবে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ আরও  বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, শান্তিরক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের ‘নারী, শান্তি ও সুরক্ষা’ বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মূল কৌশলের একটি।এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেসময় বলেছিলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্রবাহিনীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি আর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সবাই বিশ্বশান্তি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। সে আলোকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিভিন্ন দেশের জাতিগত সংঘাত মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বিচিত্র দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা অনুকরণীয় দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হচ্ছেন।

অর্থাৎ বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বড় অংশ এবং পুলিশ ও অন্যান্য সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। ‘দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা’- এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। এখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন ‘কম্বোডিয়া’, ‘কুর্দিস্তানের দিনগুলি’ লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। আরো অনেকের গ্রন্থ রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। ফলে শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদেশে ‘সামরিক সাহিত্যে’র একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়েছে।   

জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৪৩টিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

দুর্ঘটনা ও জনভোগান্তি এড়াতে তিতাস গ্যাসের পুরাতন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন জরুরি

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৭ মে, ২০২৩


Thumbnail

সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পুরাতন ঢাকার ধূপখোলা বাজারে রাস্তার পাশে তিতাস গ্যাস পাইপলাইন লিকেজ থেকে বিষ্ফোরণে পাশ্ববর্তী দোকান ও বাড়িঘরে আগুন লেগে শিশু, নারীসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন।

গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বিকালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো থেকে বিষ্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ এলাকায় Dhaka-Narayangonj-Demra (DND, ডিএনডি) Paddy field project এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত একটি পাকা মসজিদের নীচে থাকা গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানী ঢাকা ৪ ও ৫ এবং নারায়নগঞ্জ-৪ নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি বেশকিছু এলাকা নিয়ে গঠিত ডিএনডি প্রকল্প এলাকায় অবহেলায় পড়ে থাকা ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের মধ্যকার বিশাল বিলে অব্যবহৃত জমিতে ধান চাষের আওতায় আনার জন্য ১৯৬২ সালে জাপানের অর্থনৈতিক সহায়তায় চারিদিকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ধানক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই বাঁধের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা খাল খনন করা হয়। কিন্তু মেগাশহর ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট আবাসন সংকট মোকাবেলায় ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁচাপাকা অসংখ্য বাড়ীঘর নির্মাণ হতে থাকে। ধানক্ষেতের আইল ধরে নিজেদের সুবিধামত রাস্তা তৈরি করা হয়। প্রথমে কাঁচা রাস্তা, পরে ইট বিছানো রাস্তা, সর্বশেষ পাকা রাস্তা। চারিদিকে নির্মিত বাঁধ এর লেবেল থেকে প্রায় ১৫-২০ ফুট নীচে ধানক্ষেতে গড়ে উঠে অপরিকল্পিত জনবসতি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এই সকল অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আবাসিক বাড়িঘরের বাসিন্দাদের জ্বালানী চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে ঐ সকল অপরিকল্পিত রাস্তায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে। চারিদিকে রয়েছে উঁচু বাঁধ। ফলে গভীর নলকূপে উত্তোলিত নিত্যদিনের ব্যবহার্য পানি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অপরিকল্পিত বসতি ও রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকলে সমর্থ্য অনুযায়ী যে যার বাড়িতে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন রাস্তাঘাট, অলিগলি গুলো মেরামতের নামে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সর্বশেষ, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে স্থানীয় রাস্তা ও তার শাখা-প্রশাখাসমূহ উঁচু করে  চারিদিকে নির্মিত ডিএনডি প্রকল্পের বাঁধের সমান উচ্চতায় আনা হয়। ফলে গত দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর পূর্বে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যে পাইপলাইন স্থাপন করেছিল, লৌহনির্মিত সেই পাইপলাইন সমূহ প্রায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়।

রাস্তাসমূহ মেরামতের পূর্বে, কদমতলীর অনেক জলমগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্যাস পাইপলাইন থেকে বুঁদ বুঁদ করে গ্যাস নির্গত হতে দেখা গিয়েছিল। এবিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরেজমিনে তদন্ত করে এই সমস্যা নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট এলাকার কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ২ ফুট মাটির নীচে ২ ইঞ্চি ব্যাসের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করে অনুমোদিত প্রত্যেক গ্রাহককে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। ঐ নতুন সংযোগপ্রাপ্ত গ্রাহকদের তরফ থেকে বর্তমানে তেমন কোন অভিযোগ না থাকলেও, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার বৃহৎ এলাকায় ২০-২৫ বছর পূর্বে স্থাপিত তিতাস গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। বাড়িতে অপ্রতুল গ্যাস সরবরাহের অভিযোগতো রয়েছেই। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যাসের চুলার সুইচ অন করার পর প্রথমে পানি নির্গমন হয়, পরে খুবই ক্ষীণ চাপে গ্যাস পাওয়া যায়। রান্নার কাজে ভোগান্তির শেষ নেই। অনেক বাড়ীতে লাকড়ির চুলা বা কেরোসিনের চুলায় রান্না করতে হয়। যদিও গ্যাস বিল নিয়মিত করে যাচ্ছে গ্রাহকগন।

এমনি পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস পূর্বে কদমতলী থানার ৫৩ নং ওয়ার্ডের হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডের বাসিন্দারা স্থানীয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অফিসে গিয়ে উপরোক্ত অভিযোগ দায়ের করলে, ১৫-২০ বছর পূর্বে স্থাপিত ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের ধ্বংস প্রাপ্ত পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো খুঁজতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে মাটি খুড়তে শুরু করে। ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পুকুর খনন করেও পাইপে ফুটো বা ফাটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঐ সকল এলাকায় চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, স্থানীয় বাসিন্দারা, একই এলাকায়, ইতিপূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে গৃহীত প্রকল্পের ন্যায় পুরাতন পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে  দিয়ে দুই ফুট মাটির নীচে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার পরামর্শ দেন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষ পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে রাস্তায় পুকুর খননের কাজ বন্ধ করলেও নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার কাজ অদ্যাবধি শুরু করেননি।

২৫-৩০ বছর পূর্বে স্থাপন করা লোহার তৈরি পাইপগুলোর টেম্পার নষ্ট হওয়া এবং ১৫-২০ ফুট নিচে মাটির চাপে ঐ পাইপলাইন গুলো ফেটে যাওয়া বা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই ফেটে যাওয়া স্থান বা ছিদ্র দিয়ে পানি বা কাঁদা ঢুকে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া ২৫-৩০ বছর পূর্বের স্বল্পসংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দার চাহিদা অনুযায়ী যে ব্যাসার্ধের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল, পরবর্তিতে প্রয়োজনের তাগিদে সেই একই পাইপলাইন থেকে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত সরু পাইপলাইনে সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের চাপও কমেছে। 

এমতাবস্থায়, ফেটে যাওয়া বা ফুটো হওয়া গ্যাস পাইপলাইন থেকে নির্গমিত গ্যাস থেকে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস সরবরাহে নিশ্চিত করতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বাতিল করে অধিক ব্যাসার্ধের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা সময়ের দাবী।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

মোকা নাকি মোখা

প্রকাশ: ০৬:২২ পিএম, ১২ মে, ২০২৩


Thumbnail

একটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসছে। রোববার সকাল নাগাদ এটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টির নামের বানান ও উচ্চারণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে দেশের মিডিয়া জগত। মোচা, মোকা, মোখা, মকা, মখা, মউকা  ইত্যাদি নামে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দরকার ? আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আসল নাম কোনটি ? নাকি সবই সঠিক ?  

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন?
একটি ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে করা হয়। একটি ঘূর্ণিঝড়কে সনাক্ত করতে  বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়, মিডিয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপক এমনকি সাধারণ মানুষ নামটি ব্যবহার করে। ঘূর্ণিঝড়ের নাম এর উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে, এই অঞ্চলে আরো ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে বিভ্রান্তি দূর করতে এবং ব্যাপক জনগণের কাছে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সতর্কবার্তা প্রচার করতে সহায়তা করে।

কারা নামকরণ করে?
২০০০ সালে, এসকেপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনের ২৭তম অধিবেশনে বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্যানেলে ১৩টি সদস্য দেশ রয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে ভারত, বাংলাদেশ, ইরান, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, ইয়েমেন, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও কাতার।

কবে থেকে নামকরণ শুরু হয় ?
২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে সদস্য দেশগুলো বিভিন্ন নাম প্রস্তাব করলে ঘূর্ণিঝড়গুলোর নামকরণ শুরু হয়।

Mocha কোন দেশের দেয়া নাম ?
ইয়েমেনের প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে mocha। এটি একটি ইতালিয়ান শব্দ। লোহিত সাগর উপকূলের একটি ছোট শহরের নাম mocha। ইয়েমেনের একটি বন্দর। এই শহরেই ১৫ শতক থেকে ১৮ শতকের গোড়ার দিকে mocha কফির প্রধান বাজার ছিল।

Mocha কেন মোকা বা মোখা ?
ইতালিয়ান শব্দে ch কে 'ক' উচ্চারণ করা হয়। সে হিসেবে mocha এর উচ্চারণ দাঁড়ায় 'মোকা'। এটি আমেরিকান উচ্চারণ। তবে বৃটিশ উচ্চারণে যা দাঁড়ায় সেটি হচ্ছে 'মোখা'। দুটি উচ্চারণই  কেমব্রিজ ডিকশনারি সমর্থন করে। তবে আমাদের মিডিয়া আমেরিকা নাকি ব্রিটিশ ইংরেজি উচ্চারণ অনুসরণ করবে সেটির একটি নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তাহলে জাতি, বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে না।

'মোকা' বা 'মোখা'- যেটিই হোক না কেন, আমাদের প্রার্থনা এটির তান্ডব যেন সীমিত হয়। আমরা যেন দৃঢ়তার সাথে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারি।। 'মোকা' বা 'মোখা' নিয়ে কেউ যাতে মউকা নিতে না পারে সেটির জন্য সবাই সজাগ থাকি।

ঘূর্ণিঝড় মোখা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড আর্টিকেল

প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্মদিন আজ

প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ।

‘ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো- ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো- ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা- ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা ... ’- এভাবেই বাংলার প্রকৃতি আর প্রাণের প্রতি ভালবাসা জানিয়েছিলেন প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ। 

সেই ভালবাসার আকাক্ষায় ছিল শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সেই সুবাদে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রবল সোচ্চার ছিলেন এই প্রথাবিরোধী লেখকের কলম। ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ নামের উপন্যাস লিখে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি। শিকার হতে হয়েছিল নৃশংস জঙ্গী হামলার। কয়েকজন তুচ্ছ মানুষের চাপাতির আঘাতে হুমায়ুন আজাদের মতো একজন মেধাবী লেখক ও অধ্যাপকের মৃত্যু হয়। 

আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল)  একুশে পুরস্কারজয়ী এই বহুমাত্রিক লেখকের ৭৭তম জন্মদিন ও ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই কীর্তিমান লেখক। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে অনন্য মননশীল, বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়, প্রথা ভাঙার রূপকার ছিলেন হুমায়ুন আজাদ।

আরেকজন হুমায়ুন আজাদকে এই বাংলায় ফিরে পাওয়া কি সম্ভব? চাইলেই কি সবাই পারবেন তার মতো সাহসী লেখক হতে? চাইলেই কি লেখা যাবে ‘লাল নীল দীপাবলী’ কিংবা ‘কতো নদী সরোবর’র মতো বই। সৃজনশীলতার ভুবনে বহুমুখী পথে বিচরণ করেছেন হুমায়ুন আজাদ। লিখেছেন পাঠকসমাদৃত কবিতা থেকে উপন্যাস। একই সঙ্গে ছিলেন তিনি ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক ও গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। কর্মজীবনে বেছে নেন শিক্ষকতা পেশাকে। সবশেষ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় এই লেখকের আলোচিত ও সমালোচিত প্রবন্ধের বই ‘নারী’। মূলত গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ুন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

বাংলা সাহিত্যে প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে হুমায়ুন আজাদ যোগ করেন এক ভিন্ন মাত্রা। তাঁর সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে, তার প্রবচনগুচ্ছ এ দেশের যুক্তিবাদী পাঠকসমাজকে করে তুলেছে সচেতন।

হুমায়ুন আজাদের লেখাতে বাঙালি মুসলমান সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে যুক্তিনির্ভর বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ভিন্ন মতবাদ তুলে ধরা হয়েছে। এতে একদিকে তিনি যেমন নন্দিত হয়েছেন, আবার নিন্দিতও হয়েছেন। এর সপক্ষে তাঁর জবাব ছিল, তিনি এই গোত্রেরই মানুষ, তাই এ জাতির কাছে তাঁর প্রত্যাশা অনেক; কিন্তু যখন দেখেন বাঙালি অনিবার্যভাবে পতনকেই বেছে নিচ্ছে, তখন তিনি তার সমালোচনা করেছেন। তিনি কুসংস্কারহীন এক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মৌলবাদীরা তাঁর স্বপ্নকে সত্যি হতে দেয়নি। তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং পরবর্তীকালে মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর মতবাদকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। 

এই প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক ও কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই। হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। তিনি ৭০টির বেশি বই লিখেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন ধারা।

ছাত্রজীবনে হুমায়ুন আজাদ অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইনস্টিটিউশন থেকে পাকিস্তানের মধ্যে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় ক্ষেত্রে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।

গবেষক ও প্রাবন্ধিক হুমায়ুন আজাদ নব্বইয়ের দশকে প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। হুমায়ুন আজাদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অলৌকিক ইস্টিমার’, ‘লাল নীল দীপাবলি (বাঙলা সাহিত্যের জীবনী)’ ‘জ্বলো চিতাবাস’, ‘শামসুর রাহমান-নিঃসঙ্গ শেরপা’, 'Pronominalization in Bengali’, ‘বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র’, ‘বাক্যতত্ত্ব’, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসেন’, ‘কতো নদী সরোবর (বাঙলা ভাষার জীবনী)’, ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’, ‘আমার অবিশ্বাস’, ‘সীমাবদ্ধতার সূত্র’, ‘নারী’, ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’, ‘আধার ও আধেয়’, ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’, ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’, ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রভৃতি।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের ওপর শারীরিক আক্রমণ করেন ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ুন আজাদ পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী শিশু-সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪) এবং ২০১২ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।


প্রথাবিরোধী   বহুমাত্রিক   লেখক   হুমায়ুন আজাদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন