বাঙালি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান তার দীর্ঘ আন্দোলন
ও সংগ্রামের একটি বড় সময়
কাটিয়েছেন কারাগারে। কারাগারে থাকা অবস্থায় তার
স্মৃতিচারণ নিয়ে একটি অনন্য
গ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। ‘কারাগারের
রোজনামচা’এই গ্রন্থটিতে পাওয়া
যায় কারাগারে বঙ্গবন্ধু কি অমানবিক ও
দুঃসহ জীবন কাটিয়েছেন। ‘কারাগারের
রোজনামচা’গ্রন্থটিতে ১৯৬৬ সালের আগস্টে
বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের বিশদ বিবরন পাওয়া
যায়। শোকের মাস আগস্টে বঙ্গবন্ধুর
স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে ‘কারাগারের রোজনামচা’এর স্মৃতিময় আগস্টের
অংশটুকু প্রকাশ করছি।
আজ
অনেকক্ষণ হাঁটাচলা করলাম। বিকালে চা খেতে বসেছি,
দেখি সিকিউরিটি ব্রাঞ্চের সিপাহি সাহেব এসেছে আমাকে জেলগেটে নিতে। ‘দেখা’এসেছে—জহিরুদ্দিন
সাহেব, আবুল সাহেব ও
আমার স্ত্রী। ছোট তিনটা বাচ্চাদের
নিয়ে এসেছে। মামলা সম্বন্ধে আলোচনা হলো কিছুটা। আইবি
অফিসারদের সামনেই আলোচনা করতে হবে। দুইজন
ইন্সপেক্টর দিয়েছে। সামনেই বসে থাকে কোনো
কিছু আলাপ করার উপায়
নাই। কিভাবে মামলা চালাব তাহাই আইবি জানতে চায়।
আর আমরা তা বলব
কেন? বললাম, নকল (পবৎঃরভরবফ পড়ঢ়ু)
নিতে। নকল না দিলে
মামলা করব না। বলে
দিব, যাহা ইচ্ছা করুক।
কাগজপত্র না পেলে মামলা
চালাইব কি করে? সালাম
সাহেবও আসবেন। শুনলাম অনেক উকিল আসবেন
৮ তারিখে জেল গেটে মামলা
করার জন্য। রেণুকে বললাম, কিছু টাকা দিতে
নকল নেওয়ার জন্য। ছোট্ট ছেলেটা আমার কানে কানে
কথা বলে। একুশ মাস
বয়স। বললাম, আমার কানে কানে
কথা বললে আইবি নারাজ
হবে, ভাববে একুশ মাসের ছেলের
সাথে রাজনীতি নিয়ে কানে কানে কথা
বলছি। সকলেই হেসে উঠল। এটা
রাসেলের একটা খেলা, কানের
কাছে মুখ নিয়ে চুপ
করে থাকে আর হাসে।
আজ আমার কাছ থেকে
ফিরে যাবার চায় না। ওর
মায়ের কাছে দিয়ে ভিতরে
চলে আসলাম। ছোট্ট মেয়েটা—রেহানা আমার কাছ থেকে
সরতে চায় না, তাই
তাকে একটু আদর করলাম।
মামলায় যে কি হবে
জানি না। তবে সরকারের
উৎসাহ একটু বেশি মনে
হয়। অনেকগুলি মামলাই তো আছে। জেল
থেকে কবে যে বের
হতে পারব জানি না।
সন্ধ্যার একটু পূর্বে আসলাম,
‘আমার সেই পুরানা বাড়িতে’।
বাইরে
থেকে তালা বন্ধ করে
দিল। একজন সিপাহি আমাকে
জিজ্ঞাসা করল, ‘স্যার আপনাকে নাকি আপনার বাবা
ত্যাজ্য পুত্র করে দিয়েছে, রাজনীতি
করার জন্য আর বারবার
জেলখাটার জন্য?’ বললাম, এরকম কথা জীবনে
আমি অনেক শুনেছি। আমার
বাবা আজও আমাকে যে
স্নেহ করেন বোধহয় অনেক
পুত্রের কপালেই তা জোটে না
জীবনে। আমার আব্বা কখনও
আমার সাথে মুখ কালো
করে কথা বলেন নাই।
এখনও কাছে গেলে ছোট
ছেলের মতো আদর করেন।
আর কোনোদিন আমাকে কোনো কিছুর জন্য
নিরাশ করেন নাই। আমার
বাবা কখনও বড়লোক ছিলেন
না। অনেক কষ্ট করেছেন,
কিন্তু আমার প্রয়োজন তিনি
মিটাইয়াছেন। এমনকি আমি জেলে থাকলেও
আমার ছেলেমেয়ের দরকার হলে ধান, পাট
বিক্রি করে টাকা পাঠাতে
কৃপণতা করেন নাই। সিপাহিকে
দেখালাম কয়েকদিন পূর্বের চিঠি। তাতে লিখেছেন ‘তাঁর
(আমার বাবার) মতো সুখী এ
জগতে কয়জন আছে।’
মনে মনে বললাম, ওরে আমার রাজনীতি, তোমার জন্য জীবনে কত কথাই না আমাকে শুনতে হলো । এগার মাস মন্ত্রীত্ব করেছিলাম। ‘চোর’ বলতে কারও বাঁধলো না। আমি নাকি সিনেমা হল করেছিলাম! একজন সিপাহি জিজ্ঞাসা করে বসল, ‘আপনার বলাকা সিনেমা হলটা সরকার নিয়ে গিয়াছিল, ফেরত দেয় নাই, না।’ হাসতে হাসতে উত্তর দিলাম, ‘আমার সিনেমা হল বলাকা, নিশ্চয়ই বলাকা সিনেমার মালিক এ খবর পেলে হার্টফেল করে মারা যাবে। কারণ বেচারা বহু টাকা খরচ করে ইস্টার্ন ফেডারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানীর কাছ থেকে হলটা কিনেছে। আমার একআনা শেয়ারও যদি থাকত তবে আর কষ্ট করতে হতো না।’ বেচারা অবাক হয়ে চেয়ে রইল আমার দিকে। ‘বলেন কি স্যার, আজও তো অনেকে বলে।’ বললাম, ‘বলতে দিন, ওটা তো আমাদের কিসমত—যাদের জন্য আমি রাজনীতি করি তাদের কেউ কেউ আমাদের বিশ্বাস করে না।’ অনেকক্ষণ ভাবলাম, এই তো দুনিয়া! জনাব সোহরাওয়ার্দীকে ‘চোর’ বলেছে, হক সাহেবকে ‘চোর’ বলেছে, নেতাজি সুভাষ বসুকে, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে এই বাঙালিরা ‘চোর’ বলেছে, দুঃখ করার কি আছে!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোকের মাস আগস্ট
মন্তব্য করুন
নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী
মন্তব্য করুন
স্বতন্ত্র প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশনও বারবার বলছিল যে, তারা স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোনো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন এটিও বলেছিল যে, তারা ২০১৮ এর মতো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা আস্থা রাখতে চাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ তারা করতে পারেন কিনা তা দেখতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় যে, ২৭৪১ জন এবার নির্বাচনে তিনশ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯৮ জন। আর অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএসপির প্রার্থী সব মিলিয়ে ৩১০ জন। জাতীয় পার্টি জমা দিয়েছে ২৭০ জনের মতো। আর বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের-ই প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী আছে এবং তারা নির্বাচনে শক্ত লড়াই করবেন সেটি নিশ্চিত।
সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তৃণমূল বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীও এখানে প্রার্থী হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী মহাজোটের প্রার্থী নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে এবার নুরুল ইসলাম ছাড় দেবেন কি না, এ প্রশ্ন এখন অনেক ভোটারের মুখে মুখে ঘুরছে।