কবি মৌলি দাসের একটি কবিতা পড়েছিলাম। কবিতাটির শিরোনাম ছিল ‘মা, তোমার সমর্পণে’। কবি মৌলি দাস তার নিজের জন্মদাত্রীকে নিয়ে লিখেছিলেন কবিতাটি। তিনি লিখেছিলেন, ‘মা, আজকের এই বিশেষ দিনটাকে/ করি তোমায় সমর্পণ/ সহ্যের অতীত যন্ত্রণা সয়ে/ পরোয়া না করে মৃত্যুকে/ করেছিলে, আমার ভূমিষ্ঠ হওয়াকে সমর্থন।’ কবি মৌলি দাস একজন জন্মদাত্রী, সন্তানকে গর্ভে ধারন করা মা’কে তার কবিতায় যে সন্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, তাতে সে মায়ের সম্মানের স্থানটা অতি উচ্চ শিখরে আরোহন করেছে। কিন্তু এমন এক মা, মাতা; যিনি নিজ গর্ভে ধারণ না করেও হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি সন্তানকে স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়ে জাগিয়ে তুলেছেন; যিনি জন্ম দিয়েছেন একটি স্বাধীন ভূখন্ডের, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের- সেই মা, মাতার সম্মানের আসনটা কোথায় থাকা উচিৎ?
এমনই একজন কিংবদন্তি মাতার কথা বলছি। যিনি বাঙালি নারীত্বের স্নেহ-মমতা ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার নিরস্ত্র, অসহায়, নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি নির্মোহ ভালোবাসায়। যিনি বাঙালি জাতির কল্যাণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে আজীবন জাতির মুক্তি কামনায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি মাতা, একটি স্বাধীন দেশের জন্মদাত্রী মাতা। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। আজ ৮ই আগস্ট, মঙ্গলবার, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন, ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। আজ তিনি বেঁচে থাকলে ৯৩ বছরে পা দিতেন। বঙ্গমাতা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেণু। বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। ১ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারী, ঘাতকদের গুলিতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে আমৃত্যু নিজের পরিবার মনে করতেন এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতার জন্য তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে যখনই কারাগারে থাকতে হয়েছে, তখনই বঙ্গমাতা তার নিজ পরিবার এবং আওয়ামী লীগ পরিবার (দল) উভয়কেই দেখাশোনা করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গমাতা সহযোগিতাটা করেছিলেন কীভাবে? এটা এমন নয় যে, বঙ্গমাতা জমিদার ছিলেন। এটা এমনটাও নয় যে, বঙ্গবন্ধু জেলে আছেন... তার প্রচুর অর্থ ও সম্পদ ছিল এবং বঙ্গমাতা তার পরিবারের ব্যয় নির্বাহের জন্য ওই সব অর্থসম্পদ ব্যয় করতেন। বঙ্গমাতা তাই অল্প পরিমাণে কিছু অর্থ সঞ্চয় করতেন এবং দুটি পরিবার- তার নিজ পরিবার ও আওয়ামী লীগের দেখাশোনার জন্য ব্যয় করতেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গমাতার হাতে যখন আর কোনো সঞ্চয় থাকতো না, তখন তিনি তার পরিবার ও তার বৃহত্তর পরিবার- আওয়ামী লীগ চালানোর জন্য আলমিরা, ফ্রিজের মতো জিনিসপত্রও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কারাগারের বাইরে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু যেমন আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করতেন, ঠিক একইভাবে তিনি জেলে থাকাকালেও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গমাতার কাছে আসতেন এবং তিনি তাদের সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করতেন।’
অধ্যাপক আরেফিন বলেন, এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন থেকে না খেয়ে বের হতে পারতেন। তবে কখনো কখনো এমনও হয়েছে যে, তার নিজের বাসার খাবারও ফুরিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে তাঁর মাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা তাদের বাসায় এসে খাবার খেতেন, তা উল্লেখ করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণের কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, ‘মাঝে মাঝে দেখা যেত খাবারের তুলনায় মেহমান অনেক বেশি। বাড়িতে খাবারের ঘাটতি হতো। তখন অতিথিদের অন্তত ডাল (রান্না করা ডাল) দিয়ে ভাত খাওয়ানো হতো। সেই মুহূর্তে কী আর করার থাকতো? তারপর মা ডালের পরিমাণ বাড়াতে কিছু পানি মিশিয়ে সবাইকে খাবার পরিবেশন করতেন। কিন্তু কেউ আমাদের বাড়িতে এসে কিছু না খেয়ে চলে যাবে- এটা আমার মায়ের কাছে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।’
অধ্যাপক আরেফিন বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে শৈশবে মাঝে মাঝে ঘুম থেকে জেগে তিনি দেখতে পেতেন যে আলমিরা বা ফ্রিজের মতো কিছু আসবাবপত্র ঘরে নেই এবং তারপর তিনি তাঁর মাকে এ বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে মা বলেতেন, ‘আমাদের এতো আসবাবপত্রের দরকার নেই। সাদাসিধে জীবন যাপন করাই ভালো। তাই সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছি।’
অধ্যাপক আরেফিন উল্লেখ করেন, একদিন ঘুম থেকে জেগে শেখ হাসিনা দেখতে পান- তাদের যে ফ্রিজ ছিল সেটি নেই এবং তখন তিনি তার মাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে বঙ্গমাতা বলেন, ‘ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খেয়ে সর্দি-কাশিতে ভুগছো। তাই বিক্রি করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আসলে বঙ্গমাতা তার আর্থিক কষ্ট লাঘব করতে এবং আওয়ামী লীগ কর্মীদের সহযোগিতা করার জন্য আসবাবপত্র বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার ছেলে-মেয়েরা যাতে এটি জেনে মর্মাহত না হয়, সেজন্য তিনি তার মতো করে বিভিন্ন উপায়ে সন্তানদের একটা কিছু বলার চেষ্টা করতেন।’
প্রফেসর আরেফিন বলেন, ‘সুতরাং, আমরা যদি এভাবে দেখি যে, একজন মা এবং একজন গৃহিণী হিসেবে তিনি কীভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, তাহলে বলতেই হবে- এটি সত্যিই অসাধারণ। এটি বেগম মুজিবের বৈশিষ্ট্য। আমরা এ ধরনের অনেক ঘটনার কথাই জানি। এগুলো শেখ হাসিনার নিজের স্মৃতিচারণ থেকে আমরা জেনেছি, পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ নেতাও এসব কথা উল্লেখ করেছেন।’
তিনি বলেন, বেগম মুজিব সম্পূর্ণরূপে একজন গৃহিণী ছিলেন, কিন্তু গৃহিণী হওয়া সত্ত্বেও তার রাজনৈতিক সচেতনা আমাদেরকে মুগ্ধ করেছে। বঙ্গমাতা ছিলেন অনেক দৃঢ়চিত্ত, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং রাজনীতি সচেতন মানুষ।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সুবেদার আবদুর রাজ্জাকের একটি মন্তব্য উল্লেখ করে অধ্যাপক আরেফিন বলেন, সুবেদার রাজ্জাক তার স্মৃতিচারণে উল্লেখ করেছেন যে, একদিন বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের আলোচনা চলছিল। কিন্তু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছিলেন না।
সুবেদার রাজ্জাকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘ঠিক আছে আমরা এখনই বৈঠক শেষ করি, পরে আবার বসব।’ বাসভবনের ভেতর থেকে বেগম মুজিব বিষয়টি শুনে সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘না, আপনারা এখানে বসুন এবং আপনারা একটি সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যান। একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরই আপনারা মিটিং শেষ করবেন।’
এভাবে বেগম মুজিব বিভিন্ন সময়ে মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন, যা দলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল এবং বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুও সর্বদা বঙ্গমাতার যে কোনো পরামর্শকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন।
গতকাল সোমবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনী কান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব (রেণু) এর জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধুর রেণু’ চলচ্চিত্রের লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, বঙ্গমাতা প্রতিবারই একটি করে খাতা ও কলম নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতেন। এ কারণে আমরা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ সহ বিভিন্ন বই পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে ছিলেন, তখন বঙ্গমাতা আমাদের বলেছিলেন, আপনারা আন্দোলন জোরদার করুন। তারপর তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হবে- যা ছিল তার (বঙ্গমাতার) দূরদর্শী চিন্তার প্রমাণ।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্র নেতারা বঙ্গমাতার কাছে পরামর্শের জন্য যেতেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অনুপ্রেরণার উৎস কিন্তু তিনি ছিলেন পর্দার আড়ালে। বঙ্গবন্ধু সব সময় বঙ্গমাতার পরামর্শকে আগ্রাধিকার দিতেন।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গমাতা তাকে তার হৃদয়ে যা বলে- তা বলতে বলেছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু সব নোট এবং কাগজপত্র গ্লাসের নীচে রেখে একই কাজ করেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতাকে খুব ভালোবাসতেন, ভালো জানতেন ও সম্মানের চোখে দেখতেন। বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবনে সুখ-দুঃখের সঙ্গী। জাতির পিতার জীবনের কঠিন দিনগুলোতে বঙ্গমাতাই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ধরে রেখেছেন। তখন দুটো সংগঠন ছিল। একটি আওয়ামী লীগ, অপরটি ছাত্রলীগ। কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সংগঠন পরে হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের শুভ জন্মদিনে তার অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। জাতির পিতার নাম স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হওয়ার নেপথ্যে ছিলেন তার প্রিয় সহধর্মিণী। আমৃত্যু নেপথ্যে থেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন এই মহীয়সী নারী। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বাঁকগুলোতে বাস্তবোচিত ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত দিয়ে তিনি বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়ায় অনন্য ও ঐতিহাসিক অবদান রেখেছেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধুর কারাজীবনের ১২টি বছর বঙ্গমাতা অপরিসীম দুঃখ-কষ্টে সংসারজীবন অতিবাহিত করেছেন। ’৫৪তে তিনি ঢাকায় আসেন এবং গেন্ডারিয়ায় রজনী চৌধুরী লেনে বাসা ভাড়া নেন। ’৫৪তে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হলে বঙ্গবন্ধু বন ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তখন গেন্ডারিয়ার বাসা ছেড়ে ৩নং মিন্টো রোডের সরকারি বাড়িতে ওঠেন। অল্পদিনের মধ্যেই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ৯২-ক ধারা জারি করে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। মাত্র দুই সপ্তাহের নোটিশে বঙ্গমাতাকে বাসা খুঁজতে হয় ও নাজিরা বাজারে বাসা নেন। ’৫৫তে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন ও একই বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু পরিবার ১৫ আবদুল গণি রোডের বাসায় ছিলেন। কিছুদিন পর মন্ত্রিত্ব অথবা দলের দায়িত্ব গ্রহণের প্রশ্ন সামনে এলে বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছায় মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বঙ্গমাতাকে বাসা বদল করতে হয়। এবার বাসা নেন সেগুনবাগিচায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন। ’৫৮-এর ৭ অক্টোবর আইয়ুবের সামরিক শাসন জারি হলে ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এবারও বঙ্গমাতা পরিবার-পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় বাসা খুঁজতে থাকেন এবং সেগুনবাগিচায় নির্মাণাধীন একটি বাড়িতে বাসা নেন। পরে সেটি পাল্টে ৭৬ সেগুনবাগিচায় অপর একটি বাড়ির দোতলায় ওঠেন। তখন বঙ্গবন্ধুর নামে ১৪টি মামলা। ’৬১তে বঙ্গবন্ধু কারামুক্ত হয়ে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকরি নেন। বঙ্গবন্ধু পরিবার ’৬১-এর ১ অক্টোবর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বসবাস করতে শুরু করেন। এই সময় থেকেই ধীরে ধীরে ধানমণ্ডি ৩২ নং-এর বাড়িটি হয়ে ওঠে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঠিকানা। বঙ্গবন্ধু দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রত্যেককে দেখতেন নিজ পরিবারের সদস্যের মতো। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণও তাই মনে করতেন। নেতা-কর্মীদের বিপদ-আপদে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন পরম হিতৈষীর মতো। মমতা মাখানো সাংগঠনিক প্রয়াস নিয়ে কর্মীদের হৃদয় জয় করে নেয়ার ব্যতিক্রমী যে ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর ছিল, সেই চেতনার আলোয় আলোকিত ছিলেন বঙ্গমাতা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবউদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটিতে সরকারি কর্মসূচি ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরান খতম, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করবে আওয়ামী লীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনসমূহ।
এছাড়া বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে বিজয়-লক্ষ্মী নারী’ শীর্ষক আলোচনা সভা করবে আওয়ামী যুবলীগ। দুপুর ২টায় বাদ যোহর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানায় এতিমদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। বিকাল ৩টায় আলোচনা সভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শ্রমিক লীগ।
এছাড়া গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ায় দিনব্যাপী ফ্রি হেলথ ক্যাম্প আয়োজন করবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ। বঙ্গমাতা শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও ‘বাংলাদেশের মাতা, বাংলাদেশের নেতা’- শীর্ষক ছাত্রী সমাবেশ করবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বঙ্গমাতা সমর্পণ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জন্মদিন
মন্তব্য করুন
১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের
'ব্যর্থতার' কারণ নিয়ে পরে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য অনুযায়ী,
অভ্যুত্থানের সামরিক প্রস্তুতি যথেষ্ট থাকলেও রাজনৈতিক প্রস্তুতি ছিল না। প্রকারান্তরে
তিনি জাসদ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ আনেন।
৬ নভেম্বর কর্নেল তাহের বিপ্লবী
সৈনিক সংস্থাকে নিয়ে যখন অভ্যুত্থানের সামরিক প্রস্তুতি চূড়ান্ত করে ফেলেছেন, তখনো
জাসদ নেতৃবৃন্দ ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ ও গণবাহিনীকে রাস্তায় নামানোর প্রাথমিক প্রস্তুতিও
নেননি। ঢাকা শহর গণবাহিনীর অধিনায়ক আমি। সরাসরি হাসানুল হক ইনুর অধীনে। তার কাছ থেকেই
দলীয় নির্দেশ পেতাম। সে সময় ঢাকায় আমার নেতৃত্বে গণবাহিনীর প্রায় ছয়শত নিয়মিত
সদস্য। হাসানুল হক ইনুর কাছ থেকে নির্দেশ চাচ্ছিলাম গণবাহিনীকে সক্রিয় করার। তিনি
জানালেন, আপাতত তাদের অভ্যুত্থান সম্পর্কে কিছু বলার প্রয়োজন নেই। শুধু আঞ্চলিক কমান্ডারদের
সতর্ক থাকতে বললেন। তার এ সিদ্ধান্তের কারণে শহর গণবাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডারদের পর্যন্ত
অভ্যুত্থান সম্পর্কে কিছুই জানানো গেল না।....তাহেরকে বলা হয়েছিল ছাত্রলীগ, শ্রমিক
লীগ ও গণবাহিনী পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি সহকারে ময়দানে থাকবে। সৈন্যরা ব্যারাক থেকে বেরিয়ে
এসে গণবাহিনীর সদস্যদের সশস্ত্র করবে। ছাত্ররা থাকবে প্রচারের দায়িত্বে এবং শ্রমিকেরা
নিয়ন্ত্রণ করবে রাজপথ। এসব আমি জেনেছি পরে। গোপন বিচার চলাকালে। নেতৃত্ব চাইলে এসব
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো শক্তি তখন জাসদের ছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে নেতৃত্ব কিছুই
করলেন না। কিংবা এমনও হতে পারে যে, তারা শুধু পরিকল্পনার সামরিক অংশটুকু বাস্তবায়নকেই
যথেষ্ট মনে করেছেন।
জিয়াকে নিয়ে তাহের যে জুয়া
খেলেছিলেন, তার মূল্য যে শুধু তিনি দিয়েছেন, তা নয়। মূল্য দিতে হয়েছে পুরো দলকে,
জাসদের হাজার হাজার কর্মীকে। অনেককে পলাতক জীবন বেছে নিতে হয়। কিছু কিছু ষড়যন্ত্রও
হয়। চক্রান্ত করে সিরাজুল আলম খানকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল ঢাকা
নগর জাসদের কোষাধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। ঢাকা নগর গণবাহিনীর হাইকমান্ড তাঁর
মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। ছিয়াত্তরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পাশ দিয়ে
রিকশায় চড়ে যাওয়ার সময় তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয় ।
পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক
কমিটির (সিওসি) এক বর্ধিত সভা ছিয়াত্তরের ২৬-৩১ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায়
বিগত দিনগুলোর কার্যক্রম এবং এর সাফল্য-ব্যর্থতা, ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে
দীর্ঘ আলোচনা হয়। আলোচনায় যে বিষয়গুলো বেরিয়ে আসে, তা বিশেষ বিভ্রান্তি' শিরোনামে
সদস্যদের মধ্যে প্রচার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়:
আমাদের পার্টির সংগঠন ও গণসংগঠনের
মধ্যে মারাত্মক ধরনের স্থবিরতা ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থবিরতার অর্থই হলো গতিহীনতা।
গতিহীনতা সৃষ্টির মূল কারণ হলো সংগঠনের ভেতরে দ্বন্দ্ব সমন্বয়ের অভাব ।... মনে রাখতে
হবে, অন্ধবিশ্বাস প্রবণতা যেমন মার্ক্সবাদ নয়, ঠিক তেমনি শুধু প্রয়োগও মার্ক্সবাদ
নয়।...
গণসংগঠন সমূহে স্থবিরতা নেমে
আসার মূল কারণ হিসেবে আমরা লক্ষ করেছি গণসংগঠন সমূহের নিজ নিজ স্বাধীন অস্তিত্বের ক্রমবিলুপ্তি
এবং ক্রমবর্ধমান হারে পার্টি সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি মাত্রাতিরিক নির্ভরশীলতা,
পরস্পরের মধ্যকার দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের অভাব, কর্মীদের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগতা,
গণসংগঠনসমূহের বাস্তব, স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত ভূমিকার অনুপস্থিতি ইত্যাদি।
নেতৃত্বে বর্তমান কাঠামো (সর্বস্তরের)
যথোপযুক্ত ও পর্যাপ্ত নয়। তাই এই বৈঠক আগামী কাউন্সিল সভার অনুমোদন সাপেক্ষে কেন্দ্রীয়
সাংগঠনিক কমিটি, স্ট্যান্ডিং কমিটি ও জরুরি স্ট্যান্ডিং কমিটিকে বাতিল ঘোষণা করে। সকল
পর্যায়ের ফোরামসমূহও বাতিল ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ফ্রন্টসমূহের সমন্বয় সাধনের জন্য
বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে প্রতিনিধি নিয়ে সর্বস্তরে কেবলমাত্র একটি করে সমন্বয় কমিটি'
গঠন করার সুপারিশ করা হয়। এই পার্টিকে বর্তমান স্থবিরতা ও অস্থিরতার হাত থেকে রক্ষা
করে গতিশীল ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য বর্তমান উপলব্ধির ভিত্তিতে সংগঠনের একজন
সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে। তিনি এ ব্যাপারে যেকোনো সদস্যের সহযোগিতা নিতে পারবেন
এবং যেকোনো দায়িত্ব যেকোনো সদস্যের ওপর অর্পণ করতে পারবেন।...
৩১ তারিখে যে বর্ধিত সভায়
'একজন সদস্যের ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত’ সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়, তিনি ওই দিন সভায় উপস্থিত
থাকতে পারেননি। পরে তাঁর সভাপতিত্বে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট এক সভায় তিনি 'একজন সদস্যের ওপর
দায়িত্ব ন্যস্ত' বিষয়কে তাত্ত্বিক দিক থেকে অপর্যাপ্ত ও ভিত্তিহীন মনে করেন। তাই
প্রশ্নটিকে সংগঠনের সর্বস্তরে মতামতের জন্য খসড়া প্রস্তাব হিসেবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত
নেওয়া হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে 'পরিচালনা
পরিষদ' গঠন না করে সব ফ্রন্ট থেকে প্রতিনিধি নিয়ে একটি 'কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি'
গঠন করা হবে উপরিউক্ত ব্যবস্থাসমূহ তিন মাসের জন্য কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে
বা অনুরূপ কোনো সময়ের মধ্যে সত্যিকার প্রতিনিধিত্বমূলক কাউন্সিল আহ্বান করা হবে এবং
সামগ্রিক অবস্থার পূর্ণ পর্যালোচনা করে সমস্ত বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা
হবে।
এই সিদ্ধান্তগুলোর ওপর লিখিত
মতামত আগামী ৩০ নভেম্বরের মাধ্য কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে হবে। এই সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে
প্রকৃতপক্ষে 'বিপ্লবী পার্টি' গঠনের প্রক্রিয়ায়। ছেন টানা হলো। সঙ্গে সঙ্গে সমাপ্ত
হলো একটা ঘটনাবহুল, ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, রক্তক্ষয়ী পর্বের। একটা বিপ্লবী পার্টির নিজেকে
নিজেই বিলুপ্ত করার উদাহরণ খুব বেশি নেই। জাসদের নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছিলেন, এই প্রক্রিয়া
আর বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে হয় না। অনেক শ্রম, ঘাম ও রক্তের বিনিময়ে এই উপলব্ধি অর্জন
করতে হলো।
ছিয়াত্তরের ২৬ নভেম্বর সিরাজুল
আলম খান ঢাকার মোহাম্মদপুরে হুমায়ুন রোডের একটা বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন। আনসার আহমদ,
খোলা চৌধুরী এবং ডা. সেলিম এই বাসার একতলায় ভাড়া থাকতেন। আনসার খোদা বখশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
পড়ার সময় জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সিরাজুল আলম খান মাঝেমধ্যে এই বাসাটি
শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত করতেন। সারা দিন ও পরদিন কোনো গণমাধ্যমে এই গ্রেপ্তারের সংবাদ
প্রচার করা হয়নি। দলের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন, তাঁকে মেরে ফেলা হতে পারে। ২৭
নভেম্বর আফতাব উদ্দিন আহমদ ও মহিউদ্দিন আহমদ সারা দিন বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদ সংস্থার
অফিসে ধরনা দেন, যাতে সিরাজুল আলম খানের গ্রেপ্তারের খবরটি ছাপানো হয়। ২৮ নভেম্বর
একমাত্র ইত্তেফাক-এর ভেতরের পাতায় এক প্যারাগ্রাফের ছোট্ট একটা সংবাদ ছাপা হয়েছিল।
শিরোনাম ছিল, ‘সিরাজুল আলম খান গ্রেপ্তার'।
করপোরাল আলতাফ হোসেনকে গ্রেপ্তার
করা সম্ভব হয়নি। তিনি পলাতক জীবন বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে সাত বছরের
কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার
এক গ্রামে টাঙ্গাইল জেলা গণবাহিনীর একসময়ের কমান্ডার খন্দকার আবদুল বাতেনসহ একদল কৃষকের
সঙ্গে আলোচনা করছিলেন আলতাফ। এ সময় পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং গুলি করতে থাকে। সবাই
নিরাপদে সরে যেতে পারলেও আলতাফ পারেননি। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর লাশ পুলিশ
গুম করে ফেলেছিল । আলতাফ ছিলেন বরগুনা জেলার হরিদ্রাবাড়িয়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক
পরিবারের সন্তান। একাত্তরে তিনি নবম সেক্টরে মেজর জলিলের সহযোদ্ধা ছিলেন। মা, স্ত্রী
ও দুটি শিশুসন্তান রেখে তিনি 'বিপ্লবের' আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। এই সর্বোচ্চ ত্যাগের
জন্য তিনি কোনো তারকাখ্যাতি পাননি। নিচু পর্যায়ের সৈনিকদের নিয়ে এ দেশে কেউ মহাকাব্য
লেখেন না।
করপোরাল আলতাফকে নিয়ে মেজর
জলিল একটি কবিতা লিখেছিলেন।
কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন
ছিল :
আর
দেবতা নয়, নয় শান্তির দূত
নহে
কাবা, নহে কবিতা। এসো বিদ্যুৎ,
এসো
বিপ্লব, এসো ঝঞ্ঝা, এসো আগুন,
এসো
সংগ্রামী সাথী রক্তঝরা ফাগুন।
(সূত্র: জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা: ২২২-২২৬)
মন্তব্য করুন
১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
১৬ জুলাই বিকেলে তাহের করপোরাল
মজিদকে তাঁর সেলে ডেকে নিলেন। বললেন, 'আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। নেক্সট টাইম
আমরা আরও কেয়ারফুল হব । এয়ারফোর্সকে রি-বিল্ড করতে হবে। ছিয়াত্তরের ১৫ জুলাই রায়
ঘোষণার কথা ছিল। রায় দেওয়া হলো ১৭ জুলাই। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তরা সবাই হইচই,
চিৎকার করছিলেন এ রায়ে তাহের, জলিল ও আবু ইউসুফের ফাঁসির আদেশ হয়। পরে রায় সংশোধন
করে জলিল ও ইউসুফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া
ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন (১২ বছর), আ স ম আবদুর রব, হাসানুল হক ইনু
ও আনোয়ার হোসেন (প্রত্যেকের ১০ বছর), সিরাজুল আলম খান, করপোরাল আলতাফ হোসেন ও করপোরাল
শামসুল হক (প্রত্যেকের সাত বছর), নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ জালালউদ্দিন, হাবিলদার এম
এ বারেক, রবিউল আলম, সালেহা বেগম ও নায়েক সিদ্দিকুর রহমান (প্রত্যেকের পাঁচ বছর) এবং
হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার ও করপোরাল আবদুল মজিদ (প্রত্যেকের এক বছর)। কারাদণ্ডের
সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাস থেকে দুই বছর
পর্যন্ত অতিরিক্ত কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয়। যাঁরা 'বেকসুর খালাস' পান, তাঁদের মধ্যে
ছিলেন আখলাকুর রহমান, আনোয়ার সিদ্দিক, মহিউদ্দিন, নায়েব সুবেদার বজলুর রহমান, মাহমুদুর
রহমান মান্না, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মো. শাজাহান, কে বি এম মাহমুদ, আম্বিয়া, হাবিলদার
সুলতান হামিদ, নায়েক আবদুল বারী, সার্জেন্ট কাজী আবদুল কাদের, কাজী রোকনউদ্দিন, নায়েব
সুবেদার আবদুল লতিফ আখন্দ, নায়েক শামসুদ্দিন ও সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আদালতের
শুনানির ওপর কোনো রকমের তথ্য বাইরে প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২১ জুলাই ভোর চারটায় তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তাহের ছিলেন অত্যন্ত সাহসী,
প্রাণবন্ত ও আশাবাদী। রায় ঘোষণার পর থেকে তাকে কখনো মন করতে দেখা যায়নি। তিনি যখন
ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যান, তখনো তিনি ছিলেন দৃপ্ত, অবিচল।
'ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার
রায় মানি না'- এই স্লোগান ব্যবহার করে জাসদ ৩১ জুলাই হরতাল আহ্বান করে। হরতাল সফল
করার জন্য ঢাকা নগর গণবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুতি নেন। কামরাঙ্গীরচরে
হুসেনের ঘরে বাদল, মুশতাক, ইদ্রিস, ইয়াকুব এবং আরও কয়েকজন ৩০- ৪০টি 'নিখিল' বানিয়েছিলেন।
একটাও ফাটেনি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তপন কুমার সাহা জুরাইনের একটি বাড়িতে
বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। ঘটনাটি ছিল খুবই মর্মান্তিক ।
৩১ জুলাই কোথাও হরতাল হয়নি।
জাসদ সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় কর্মীরা কোনো শেল্টার
পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও জনতা তাঁদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গণবাহিনীর সদস্য আবু আলম শহীদ খান গুলিস্তান ভবনে চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহিরের অফিসে
চাঁদা আনতে গেলে অফিসের কর্মচারীরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। জাসদ কেন্দ্রীয়
কমিটির তথ্য ও গণসংযোগ সম্পাদক শাহ আলম মগবাজারে চীনা দূতাবাসের একটি অফিসে প্রচারপত্র
দিতে গেলে দূতাবাসের কর্মচারীরা তাঁকে ধাওয়া করেন । তিনি দেয়াল টপকে কোনোমতে পালাতে
সক্ষম হন। সময়টা বৈরী। চারদিকে পরাজয় ও হতাশা।
সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। যে তারুণ্যের শক্তি নিয়ে জাসদ একদিন মাথা তুলে
দাঁড়িয়েছিল, চার বছরের মাথায় তা প্রায় নিঃশেষিত।
তাহেরের ফাঁসি নিয়ে বাংলাদেশের
কোনো রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় মাথা ঘামায়নি। দলের তরুণদের কাছে এটা ছিল
একটা ভীষণ দুঃখজনক ঘটনা। রায়হান ফেরদৌস মধুর উদ্যোগে একটা কবিতা সংকলন বের করা হলো।
তাহেরকে নিয়ে লিখলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাশুক চৌধুরী, অসীম সাহা, আবু করিম,
মোহন রায়হান প্রমুখ। অসীম সাহার একটা কবিতার কয়েকটা লাইন ছিল এরকম :
তাহের
তাহের বলে ডাক দিই
ফিরে
আসে মৃত্যুহীন লাশ
কার
কণ্ঠে বলে ওঠে আকাশ বাতাস
বিপ্লব
বেঁচে থাক তাহের সাবাশ।
এই মামলায় যাঁরা খালাস পেয়েছিলেন,
তাঁদের অনেককেই দীর্ঘদিন জেলে বন্দী রাখা হয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে। এঁদের
একজন ছিলেন সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তাঁকে কখনো এক মাস, কখনো ১৫ দিন, কখনো বা
এক সপ্তাহের আটকাদেশ দিয়ে আটকে রাখা হতো। ষোলো মাস পর সাতাত্তর সালের নভেম্বরে তিনি
জেল থেকে ছাড়া পান।
৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান, জাসদ-গণবাহিনীর
হঠাৎ জড়িয়ে পড়া, জিয়ার সঙ্গে তাহেরের সখ্য এবং পরিণামে প্রতারণার শিকার হওয়া এসব
দলের মধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ছাড়া তাহেরের আগবাড়িয়ে জিয়াকে প্রধান সামরিক
আইন প্রশাসক, এমনকি রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয় । জাসদের
মতো একটা গণমুখী রাজনৈতিক গণসংগঠনের এরকম 'সামরিকীকরণ' কতটুকু কাঙ্ক্ষিত ছিল, এ নিয়ে
মতপার্থক্য দেখা দেয়। এসব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
পঁচাত্তরের ডিসেম্বরে দলের এক মূল্যায়নে বলা হয়:
৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর
রহমানকে কোনো প্রকার সরকারি আদেশ ব্যতীতই বিপ্লবী সিপাহি ও বিপ্লবী গণবাহিনী কর্তৃক
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পেছনে একটিমাত্র যুক্তি
ছিল তা হলো, নিদেনপক্ষে জিয়াউর রহমান হয়তো বা এত তাড়াতাড়ি কোনো বিদেশি শক্তির কাছে
মাথা নত করবেন না, আত্মমর্যাদা বিকিয়ে নেবেন না- বিপ্লবী সিপাহিসহ সাধারণ জনতার ওপর
এত শিগগির অত্যাচারের স্কিম রোলার চালাবেন না, অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক জাতীয়
সরকার গঠন করবেন এবং অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কিন্তু
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই জিয়াউর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা বেমালুম ভুলে গেলেন
তাঁদের চার দিনের বন্দিজীবনের কথা।
জিয়া ও তাহেরের সম্পর্কের
বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এ নিয়ে তাহেরের মনোভাব সামরিক আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দিতে
কিছুটা উঠে এসেছে সত্য, কিন্তু এটা ছিল অনেক পরে বিচার চলার সময়ের মন্তব্য। নভেম্বরের
ওই মুহূর্তে তাহেরের মনে কী ছিল, তা জানার তেমন কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে তাহের সংসদের
প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অধ্যাপক আহমদ শরীফের প্রশ্ন ছিল :
কর্নেল তাহের সম্বন্ধে আমার
একটা জিজ্ঞাসা রয়েই গেল। তা এই, কর্নেল তাহের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান বলে প্রচার
করলেও মূলত এ অবসেনানী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সৈন্যদের প্রভাবিত করে তাদের দিয়েই
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট দখল করান। সিপাহি জনতার জাসদী (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নেতা কেন
পাকিস্তান ও ইসলাম পছন্দ' জিয়াউর রহমানের উপর আস্থা রাখলেন, আর কেনই বা সিআইএ এজেন্ট
খন্দকার মোশতাক আহমদকে—যিনি ট্রেইটর সর্বার্থে ও সর্বাত্মকভাবে,
তাঁকে বা-ইজ্জত স্বরে নিরাপদে বাস করার সুযোগ দিলেন, হত্যা না করে, হাজতে না পাঠিয়ে
বিচারের ব্যবস্থা না করে।
(সূত্র: জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা: ২১৯-২২২)
মন্তব্য করুন
১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
১৬ জুলাই বিকেলে তাহের করপোরাল
মজিদকে তাঁর সেলে ডেকে নিলেন। বললেন, 'আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। নেক্সট টাইম
আমরা আরও কেয়ারফুল হব । এয়ারফোর্সকে রি-বিল্ড করতে হবে। ছিয়াত্তরের ১৫ জুলাই রায়
ঘোষণার কথা ছিল। রায় দেওয়া হলো ১৭ জুলাই। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তরা সবাই হইচই,
চিৎকার করছিলেন এ রায়ে তাহের, জলিল ও আবু ইউসুফের ফাঁসির আদেশ হয়। পরে রায় সংশোধন
করে জলিল ও ইউসুফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া
ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন (১২ বছর), আ স ম আবদুর রব, হাসানুল হক ইনু
ও আনোয়ার হোসেন (প্রত্যেকের ১০ বছর), সিরাজুল আলম খান, করপোরাল আলতাফ হোসেন ও করপোরাল
শামসুল হক (প্রত্যেকের সাত বছর), নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ জালালউদ্দিন, হাবিলদার এম
এ বারেক, রবিউল আলম, সালেহা বেগম ও নায়েক সিদ্দিকুর রহমান (প্রত্যেকের পাঁচ বছর) এবং
হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার ও করপোরাল আবদুল মজিদ (প্রত্যেকের এক বছর)। কারাদণ্ডের
সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাস থেকে দুই বছর
পর্যন্ত অতিরিক্ত কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয়। যাঁরা 'বেকসুর খালাস' পান, তাঁদের মধ্যে
ছিলেন আখলাকুর রহমান, আনোয়ার সিদ্দিক, মহিউদ্দিন, নায়েব সুবেদার বজলুর রহমান, মাহমুদুর
রহমান মান্না, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মো. শাজাহান, কে বি এম মাহমুদ, আম্বিয়া, হাবিলদার
সুলতান হামিদ, নায়েক আবদুল বারী, সার্জেন্ট কাজী আবদুল কাদের, কাজী রোকনউদ্দিন, নায়েব
সুবেদার আবদুল লতিফ আখন্দ, নায়েক শামসুদ্দিন ও সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আদালতের
শুনানির ওপর কোনো রকমের তথ্য বাইরে প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২১ জুলাই ভোর চারটায় তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তাহের ছিলেন অত্যন্ত সাহসী,
প্রাণবন্ত ও আশাবাদী। রায় ঘোষণার পর থেকে তাকে কখনো মন করতে দেখা যায়নি। তিনি যখন
ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যান, তখনো তিনি ছিলেন দৃপ্ত, অবিচল।
'ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার
রায় মানি না'- এই স্লোগান ব্যবহার করে জাসদ ৩১ জুলাই হরতাল আহ্বান করে। হরতাল সফল
করার জন্য ঢাকা নগর গণবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুতি নেন। কামরাঙ্গীরচরে
হুসেনের ঘরে বাদল, মুশতাক, ইদ্রিস, ইয়াকুব এবং আরও কয়েকজন ৩০- ৪০টি 'নিখিল' বানিয়েছিলেন।
একটাও ফাটেনি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তপন কুমার সাহা জুরাইনের একটি বাড়িতে
বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। ঘটনাটি ছিল খুবই মর্মান্তিক ।
৩১ জুলাই কোথাও হরতাল হয়নি।
জাসদ সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় কর্মীরা কোনো শেল্টার
পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও জনতা তাঁদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গণবাহিনীর সদস্য আবু আলম শহীদ খান গুলিস্তান ভবনে চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহিরের অফিসে
চাঁদা আনতে গেলে অফিসের কর্মচারীরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। জাসদ কেন্দ্রীয়
কমিটির তথ্য ও গণসংযোগ সম্পাদক শাহ আলম মগবাজারে চীনা দূতাবাসের একটি অফিসে প্রচারপত্র
দিতে গেলে দূতাবাসের কর্মচারীরা তাঁকে ধাওয়া করেন । তিনি দেয়াল টপকে কোনোমতে পালাতে
সক্ষম হন। সময়টা বৈরী। চারদিকে পরাজয় ও হতাশা।
সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। যে তারুণ্যের শক্তি নিয়ে জাসদ একদিন মাথা তুলে
দাঁড়িয়েছিল, চার বছরের মাথায় তা প্রায় নিঃশেষিত।
তাহেরের ফাঁসি নিয়ে বাংলাদেশের
কোনো রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় মাথা ঘামায়নি। দলের তরুণদের কাছে এটা ছিল
একটা ভীষণ দুঃখজনক ঘটনা। রায়হান ফেরদৌস মধুর উদ্যোগে একটা কবিতা সংকলন বের করা হলো।
তাহেরকে নিয়ে লিখলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাশুক চৌধুরী, অসীম সাহা, আবু করিম,
মোহন রায়হান প্রমুখ। অসীম সাহার একটা কবিতার কয়েকটা লাইন ছিল এরকম :
তাহের
তাহের বলে ডাক দিই
ফিরে
আসে মৃত্যুহীন লাশ
কার
কণ্ঠে বলে ওঠে আকাশ বাতাস
বিপ্লব
বেঁচে থাক তাহের সাবাশ।
এই মামলায় যাঁরা খালাস পেয়েছিলেন,
তাঁদের অনেককেই দীর্ঘদিন জেলে বন্দী রাখা হয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে। এঁদের
একজন ছিলেন সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তাঁকে কখনো এক মাস, কখনো ১৫ দিন, কখনো বা
এক সপ্তাহের আটকাদেশ দিয়ে আটকে রাখা হতো। ষোলো মাস পর সাতাত্তর সালের নভেম্বরে তিনি
জেল থেকে ছাড়া পান।
৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান, জাসদ-গণবাহিনীর
হঠাৎ জড়িয়ে পড়া, জিয়ার সঙ্গে তাহেরের সখ্য এবং পরিণামে প্রতারণার শিকার হওয়া এসব
দলের মধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ছাড়া তাহেরের আগবাড়িয়ে জিয়াকে প্রধান সামরিক
আইন প্রশাসক, এমনকি রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয় । জাসদের
মতো একটা গণমুখী রাজনৈতিক গণসংগঠনের এরকম 'সামরিকীকরণ' কতটুকু কাঙ্ক্ষিত ছিল, এ নিয়ে
মতপার্থক্য দেখা দেয়। এসব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
পঁচাত্তরের ডিসেম্বরে দলের এক মূল্যায়নে বলা হয়:
৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর
রহমানকে কোনো প্রকার সরকারি আদেশ ব্যতীতই বিপ্লবী সিপাহি ও বিপ্লবী গণবাহিনী কর্তৃক
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পেছনে একটিমাত্র যুক্তি
ছিল তা হলো, নিদেনপক্ষে জিয়াউর রহমান হয়তো বা এত তাড়াতাড়ি কোনো বিদেশি শক্তির কাছে
মাথা নত করবেন না, আত্মমর্যাদা বিকিয়ে নেবেন না- বিপ্লবী সিপাহিসহ সাধারণ জনতার ওপর
এত শিগগির অত্যাচারের স্কিম রোলার চালাবেন না, অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক জাতীয়
সরকার গঠন করবেন এবং অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কিন্তু
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই জিয়াউর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা বেমালুম ভুলে গেলেন
তাঁদের চার দিনের বন্দিজীবনের কথা।
জিয়া ও তাহেরের সম্পর্কের
বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এ নিয়ে তাহেরের মনোভাব সামরিক আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দিতে
কিছুটা উঠে এসেছে সত্য, কিন্তু এটা ছিল অনেক পরে বিচার চলার সময়ের মন্তব্য। নভেম্বরের
ওই মুহূর্তে তাহেরের মনে কী ছিল, তা জানার তেমন কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে তাহের সংসদের
প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অধ্যাপক আহমদ শরীফের প্রশ্ন ছিল :
কর্নেল তাহের সম্বন্ধে আমার
একটা জিজ্ঞাসা রয়েই গেল। তা এই, কর্নেল তাহের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান বলে প্রচার
করলেও মূলত এ অবসেনানী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সৈন্যদের প্রভাবিত করে তাদের দিয়েই
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট দখল করান। সিপাহি জনতার জাসদী (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নেতা কেন
পাকিস্তান ও ইসলাম পছন্দ' জিয়াউর রহমানের উপর আস্থা রাখলেন, আর কেনই বা সিআইএ এজেন্ট
খন্দকার মোশতাক আহমদকে—যিনি ট্রেইটর সর্বার্থে ও সর্বাত্মকভাবে,
তাঁকে বা-ইজ্জত স্বরে নিরাপদে বাস করার সুযোগ দিলেন, হত্যা না করে, হাজতে না পাঠিয়ে
বিচারের ব্যবস্থা না করে।
(সূত্র: জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা: ২১৯-২২২)
মন্তব্য করুন
১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
সরকারি বাহিনীগুলোর আক্রমণের
মুখে জাসদ ইতিমধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ছিয়াত্তরের মার্চে রায়হান ফেরদৌস মধুর সঙ্গে
সিরাজুল আলম খানের কিছু কথাবার্তা হয়। তৎকালীন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মধু জানতে
চেয়েছিলেন, জিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া করে দিশাহারা জাসদ কর্মীদের বাঁচানোর একটা উপায়
বের করা যায় কি না। এখন তো তাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
সিরাজুল আলম খান টেবিলে জোরে একটা ঘুষি দিয়ে বললেন, 'কী বলিস, তাহেরের ট্রায়াল শুরু
হচ্ছে, গণ- অভ্যুত্থান হয়ে যাবে।' জাসদ নেতৃত্ব এটা কোনোভাবেই বুঝতে পারছিলেন। না,
দেয়ালে তাঁদের পিঠ ঠেকে গেছে ।
ছিয়াত্তরের ৩১ মার্চ দেশের
সব জায়গায় মিছিল আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এর নাম দেওয়া হলো 'মার্চ মিছিল'।
ঢাকার মিছিল প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে একটা
দাবিনামা পেশ করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। দাবিসংবলিত একটি প্রচারপত্র বিলি করা
হলো সারা দেশে। প্রধান দাবিগুলো ছিল:
-ভারত-রাশিয়া-আমেরিকার প্রভাবমুক্ত
শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
-ফারাক্কা সমস্যার সম্মানজনক
সমাধান করতে হবে।
-চীনের সঙ্গে বাস্তব, কার্যকর
ও স্থায়ী বন্ধুত্ব স্থাপন করতে হবে।
-নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে
হবে।
-সকল রাজবন্দীর মুক্তি দিতে
হবে।
-সেপাইদের দাবিগুলো মানতে হবে।
-শ্রমিক-কর্মচারীদের নিম্নতম
মাসিক বেতন ৩০০ টাকা ধার্য করতে হবে।
-বর্তমান সামরিক সরকারের পরিবর্তে
সর্বদলীয় ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ঘোষণা করা হয়, মিছিল থেকে
দুজন প্রতিনিধি, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ সরকার এবং জাসদ জাতীয় কমিটির সহসভাপতি
এহসান আলী খান রাষ্ট্রপতির কাছে দাবিনামা পেশ করবেন। প্রচারপত্রটি ছাপা হয় জাসদ, ছাত্রলীগ,
শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও বিপ্লবী গণবাহিনীর যৌথ নামে।
পুলিশ ও সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী
‘মার্চ মিছিল’টি শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলটি ছিল শান্তিপূর্ণ।
ছয় শতাধিক নেতা- কর্মীকে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১০ মে রাজশাহী জেল থেকে রাষ্ট্রপতি
সায়েমকে লেখা এক চিঠিতে আবু তাহের '৭ নভেম্বরের সকালে গৃহীত নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান
জানান। তিনি সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং ১৯৭৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন
অনুষ্ঠানের দাবি জানান ।
জাসদ ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছিল।
এই দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে 'দেশদ্রোহিতা' ও 'অরাজকতা' সৃষ্টির অভিযোগ এনে নির্যাতনের
মাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। গ্রেপ্তারকৃত ও পলাতক নেতাদের 'প্রহসনের বিচার' ও দলকে বেআইনি
ঘোষণার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এ সময় পার্টি একটি মূল্যায়নের চেষ্টা করে এবং কিছুটা পিছু
হটার' কৌশল নেয়। সাম্যবাদ-এর ষষ্ঠ সংখ্যায়
একটি বিশ্লেষণে বলা হয় :
এমতাবস্থায় রাষ্ট্রযন্ত্রের
সঙ্গে গায়ে পড়ে কোনোরূপ শক্তি পরীক্ষায় যাওয়া আমাদের উচিত হবে না, উচিত হবে না
এমন কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা, যাতে শত্রুরা অপপ্রচারের সুযোগ পায় এবং সে অপপ্রচারের
দরুন জনগণেরও মনে হতে পারে যে জাসদ বুঝি সত্যি সত্যিই ঐক্যবিরোধী এবং জাসদই বুঝি গণতন্ত্র,
নির্বাচন ও শান্তির অন্তরায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের আজকের প্রধান দায়িত্বই
হচ্ছে জনগণের মধ্য থেকে বুর্জোয়া গণতন্ত্র-সম্পর্কিত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রধানত নিঃশেষ
করে আনা ।....
প্রসঙ্গত উল্লেখ থাকা প্রয়োজন,
সর্বপ্রকার সন্ত্রাসবাদী ঝোঁক ও বেধড়ক খতম অভিযানের প্রবণতা চূড়ান্ত বিচারে অমার্ক্সবাদী
ও বিপ্লবের পক্ষে ক্ষতিকর বিধায় আমাদের এরূপ ঝোঁক ও প্রবণতা থেকে সর্বদাই মুক্ত থাকতে
হবে। মনে রাখতে হবে, চাপিয়ে দেওয়া হামলাকে মোকাবিলা করা এক কথা, কিন্তু খতম অভিযান,
সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, উগ্রতা ও অসহিষ্ণুতা ইত্যাদির মাধ্যমে মোকাবিলাকে ডেকে নিয়ে
আসা ভিন্ন কথা বিশ্বের দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদীরা, নিহিলিস্ট-নারদনিকেরা চরমতম মূল্যের
বিনিময়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছে—আমরা কোনোক্রমেই তার পুনরাবৃত্তি
ঘটাতে পারি না।
ছিয়াত্তরের ২১ জুন সামরিক
সরকার জাসদ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার ৩৩ জনের বিরুদ্ধে
একটি গোপন বিচার-প্রক্রিয়া শুরু করে। এঁদের মধ্যে ১৬ জন ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরিরত।
রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়। মামলার শিরোনাম ছিল 'রাষ্ট্র বনাম
মেজর জলিল ও অন্যান্য'। অভিযুক্তরা ছিলেন মেজর এম এ জলিল, আ স ম আবদুর রব, লে. কর্নেল
আবু তাহের, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন, আবু ইউসুফ খান, রবিউল আলম সরদার, সালেহা
বেগম, মোহাম্মদ শাজাহান, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখলাকুর রহমান, কে বি এম মাহমুদ, ওয়ারেসাত
হোসেন বেলাল, আনোয়ার সিদ্দিক, মেজর জিয়াউদ্দিন, নায়েব সুবেদার বজলুর রহমান, হাবিলদার
মেজর সুলতান আহমদ, নায়েব সুবেদার আবদুল লতিফ আখন্দ, নায়েক সিদ্দিকুর রহমান, ফ্লাইট
সার্জেন্ট কাজী রোকন উদ্দিন, সার্জেন্ট কাজী আবদুল কাদের, সায়েন্টি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম,
করপোরাল শামসুল হক, করপোরাল আবদুল মঞ্জিল, হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার, হাবিলদার শামসুদ্দিন,
সিরাজুল আলম খান, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, মহিউদ্দিন, হাবিলদার বারেক, নায়েক আবদুল বারী,
নায়ের সুবেদার জালাল ও করপোরাল আলতাফ হোসেন। অভিযুক্তদের মধ্যে সাতজন ছিলেন 'পলাতক'।
এ ছাড়া সাতজন রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন হাবিলদার আবদুল বারী, করপোরাল ফকরুল
আলম, করপোরাল মোজাম্মেল হক, করপোরাল মোয়াজ্জেম হোসেন, লিডিং ক্রাফটম্যান জোবায়ের
আনসারী, সিপাহি মইনউদ্দিন এবং নায়েব সুবেদার মাহবুব। সালেহা বেগম ছিলেন অভিযুক্তদের
মধ্যে একমাত্র নারী। তিনি একসময় যশোর জেলা ছাত্রলীগের সভানেত্রী ছিলেন। প্রত্যেকের
বিরুদ্ধে আলাদা আলাদা অভিযোগ আনা হয়েছিল।
কর্নেল ডি. এস ইউসুফ হায়দারকে
চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যের একটি সামরিক আদালত গঠন করা হয়। আদালতের অন্য সদস্যরা
ছিলেন কমাণ্ডার সিদ্দিক আহমদ, উইং কমান্ডার মোহাম্মদ আবদুর রশীদ, ম্যাজিস্ট্রেট মো.
আবদুল আলী এবং ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসান মোরশেদ।
সরকারপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ টি এ আফজাল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল ওহাব এবং পিপি
আবদুর রাজ্জাক। অভিযুক্তদের পক্ষে ১৬ জন আইনজীবী ছিলেন। তাঁরা হলেন আতাউর রহমান খান,
জুলমত আলী খান, কে জেড আলম, আমিনুল হক মো. জিনাত আলী, এ কে মুজিবুর রহমান, সিরাজুল
হক, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রউফ, কাজী শাহাদাত হোসেন, শরফুদ্দিন চাকলাদার, খাদেমুল
ইসলাম, আবদুল হাকিম, শামসুর রহমান, শরফুদ্দিন ভূঁইয়া এবং এ ডি এম কামরুল ইসলাম। আদালত
বসে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে। প্রথম দিন রোল কল হয়। দুবার নাম ডাকা সত্ত্বেও
সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম সাড়া দেননি। তখন একজন তাঁকে চিনিয়ে দিলে তিনি বলেন, 'আমার
নাম ঠিকভাবে ডাকা হয়নি বলে আমি জবাব দিইনি।' চেয়ারম্যান বললেন, 'আপনার নাম তো সৈয়দ
রফিকুল ইসলাম। রফিক জবাবে বললেন, 'না, আমার নাম সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক। পুরো
নাম না বললে আমি জবাব দেব না।' আদালত তাঁর দাবি মেনে নেন।
দ্বিতীয় দিনেও গোলমাল হলো।
সার্জেন্ট রফিক এফআইআর দেখতে চাইলেন। যখন আদালত থেকে বলা হলো, এটা এখন সরবরাহ করা যাবে
না, তখন সার্জেন্ট রফিক বললেন, 'তাহলে আমাকে যেতে দিন, আমি আমার সেলে গিয়ে বিশ্রাম
নেব। চেয়ারম্যান রেগে গিয়ে বললেন, 'শাট আপ অ্যান্ড সিট ডাউন। সার্জেন্ট রফিক চেয়ারম্যানকে
উদ্দেশ্য করে জুতা ছুড়ে মারলেন। দেখাদেখি আরও কয়েকজন জুতা ছুড়লেন। রব পৌঁড়ে দরজার
কাছে গিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করলেন। আদালতের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা দৌড়ে পালালেন।
ওই দিনের মতো আদালত পণ্ড হয়ে গেল। পরদিন থেকে তাঁদের আদালতকক্ষে খালি পায়ে হাতকড়া
পরিয়ে আনা হলো। এভাবেই চলতে থাকল আদালতে আসা-যাওয়া। অভিযুক্ত ও বিচারকদের বসার জায়গার
মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হলো। আদালত চলার সময় অভিযুক্তরা এমন ভাব করতেন, যেন
তাঁরা কোনো জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এই 'অবৈধ আদালতের কার্যক্রমের ব্যাপারে তাঁদের
কোনো আক্ষেপ ছিল না। হয়তো কেউ কারও কোলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে থাকেন, কেউ-বা আপন মনে
গলা ছেড়ে গান ধরেন:
মা, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয়
শান্ত ছেলে
তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে
লড়তে জানি...
আদালতে মামলা শুরু হওয়ার দু-তিন
দিন পর এমন একটা ঘটনা ঘটল, যা ব্যাখ্যার অতীত। আখলাকুর রহমানের সঙ্গে সার্জেন্ট সৈয়দ
রফিকুল ইসলামের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি সার্জেন্ট রফিককে ডেকে বললেন,
"ওবা, কর্নেল তাহেরের তো ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট অইব।' রফিক বিস্মিত হলেন, এই মামলায়
এ ধরনের সাজা হতেই পারে না। তিনি আখলাকুর রহমানকে বললেন, "আফনে কী কন? এইডা অসম্ভব।
অইতেই পারে না। আখলাকুর রহমান আপন মনেই বলে উঠলেন, 'সুলতান ফকির কইছেন। সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
বাঞ্ছারামপুর থানার রূপগুলি গ্রামের জনৈক সুলতান গুড়ির জেলগেটে আখলাকুর রহমানের সঙ্গে
দেখা করে এই কথা বলে গেছেন। সার্জেন্ট রফিক ভেবে পেলেন না, তার বাড়ির পাশের গাঁয়ের
এই ফকিরকে তিনি চেনেন না, অথচ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের আখলাকুর বহমান কী করে এই ফকিরের
খোঁজ পেলেন? সিলেটের কিংবদন্তি সাধক শাহ নাসিরউদ্দিনের বংশধর আখলাকুর রহমান মনে করতেন,
সুলতান ফকির জালালির মধ্য দিয়ে হজরত শাহজালালের পুনর্জন্ম হয়েছে।
(সূত্র: জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা: ২১৩-২১৯)
মন্তব্য করুন
১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
সিরাজুল আলম খান যদিও পার্টি ফোরামের সমন্বয়কারী ছিলেন,
তাঁর সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করা সম্ভব হতো না। ফোরামের কার্যকরী সমন্বয়কের দায়িত্ব
পালন করতেন শরীফ নুরুল আম্বিয়া। ২৬ নভেম্বর দুপুরে আনোয়ারের কাছ থেকে আম্বিয়া টেলিফোনে
জানতে পারেন, ধানমন্ডিতে একটা ঘটনা ঘটে গেছে। আনোয়ার স্পষ্ট করে বলেননি কী ঘটেছে।
বিধানকৃষ্ণ সেন টেলিফোনে আম্বিয়াকে ক্ষুব্ধ কণ্ঠে ঘটনাটির বিবরণ দিয়ে জানতে চান,
'হঠকারিতা করে সবাইকে ফাঁসানোর মতলব করছে কারা?" আম্বিয়া উত্তরে বলেন, তিনি এর
বিন্দু-বিসর্গও জানেন না। ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি নিজেও স্তম্ভিত। জাসদের নেতারা কেউ
এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল নন । ঢাকা নগর গণবাহিনীর রাজনৈতিক কমিসার রফিকুল ইসলাম তখন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের মাঠে বসে ছিলেন। একজন এসে তাঁকে ভারতীয় হাইকমিশনে
ঘটে যাওয়া বিষয়টি সম্পর্কে জানালে তিনি বিস্মিত হন এবং ভাবতে থাকেন, তাঁর অজান্তে
এত বড় একটা ঘটনা কীভাবে ঘটল।
তবে বোঝা যায়, বেশ কয়েক দিন ধরেই এই মিশনটি নিয়ে পরিকল্পনা
হচ্ছিল। স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য নজরুল ইসলাম বাচ্চু গণবাহিনীর সদস্য ও লালমাটিয়া
কলেজের ছাত্রী আয়েশা পারুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। পারুল থাকতেন কলেজের হোস্টেলের
দোতলার একটা কামরায়। বাচ্চু তাঁর কাছে একটা ট্রাংকে বেশ কিছু কাগজপত্র রেখেছিলেন তিনি
কয়েক দিন আগে পারুলকে বলেছিলেন, 'একটা রেকি হবে। দলে একজন মেয়ে থাকতে হবে। আমি যাব
না, তবে আপনাকে যেতে হবে। পারুলের আর রেকিতে যাওয়া হয়নি । ২৫ নভেম্বর বিকেলে বাচ্চু
হোস্টেলে এসে পারুলের সঙ্গে দেখা করে জানান, 'আগামীকাল সকালে একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে।
দুপুরে রেডিওর খবর শুনবেন।
২৬ নভেম্বর রেডিওতে সব শুনে পারুল হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। পরদিন
হোস্টেলে তাঁর খোঁজে পুলিশ আসে। হোস্টেলের সুপার নূরুন্নাহার বেগম এবং বিজ্ঞানের শিক্ষক
বদিউজ্জামান ঘটনা সামাল দেন। পারুলের বিষয়টি তাঁরা দেখেন খুবই সহানুভূতির সঙ্গে। বদিউজ্জামানের
শ্যালক খায়ের এজাজ মাসুদ জোস পার্টি ফোরামের ইমার্জেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য।
বাচ্চু ছিলেন তিতুমীর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং স্কোয়াডের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী
। তিনি ছিলেন অভিনেতা বেশী জামানের ভাগনে। পারুল বাচ্চুর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
বাচ্চুকে হারিয়ে তাঁর মা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন।
ঢাকার পূর্ব পাশে বেরাইদ গ্রামে ঢাকা নগর গণবাহিনীর একটা
জরুরি সভায় আনোয়ার হোসেন এই ঘটনার সব দায় স্বীকার করেন। সভায় শরীফ নুরুল আম্বিয়া
এবং ঢাকা নগর গণবাহিনীর অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন । অধিকাংশ সদস্য আনোয়ারের ওপর ক্ষোভ
প্রকাশ করে তাকে ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠানোর দাবি জানান। শেষে তাঁকে লঘু শাস্তি দেওয়া
হয়। তাঁকে সদর গণবাহিনীর কমান্ডারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আনোয়ারের ওপর নিয়ন্ত্রণ
না থাকার অপরাধে রাজনৈতিক কমিসার রফিকুল ইসলামকে ভৎসনা করা হয়। এত বড় একটা ঘটনা সিরাজুল
আলম খানের সম্মতি ছাড়া ঘটতে পারে বলে অনেকেরই বিশ্বাস হয়নি। আবুল হাসিব খান কিছুদিনের
জন্য ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মানিকগঞ্জের গণবাহিনীর কমান্ডার
আনিসুর রহমান মানকে ঢাকা নগর গণবাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযান চালানোর কয়েক দিন আগে সৈনিক সংস্থা
ও গণবাহিনীর কয়েকজন সদস্য রায়ের বাজারে বসবাসকারী জনৈক জয়নুল হক শিকদারের কাছ থেকে
দুটো পিস্তল জোর করে নিয়ে এসেছিলেন। সেনাবাহিনীর একটা জিপ নিয়ে গিয়েছিলেন। পিছলগুলো
লাইসেন্স করা ছিল। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অন্য অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গে এই পিস্তল দুটোও
উদ্ধার করে। পরে অনুসন্ধান করে পুলিশ এগুলোর মালিকের নামধাম জোগাড় করে। শিকদারকে পুলিশ
গ্রেপ্তার করে। অস্ত্র 'খোয়া যাওয়ার বিষয়ে পুলিশকে তথ্য না দেওয়ার কারণে শিকদারের
জেল হয়।
জাসদের পার্টি ফোরাম থেকে ২৬ নভেম্বরের ঘটনার বিষয়ে একটা
সার্কুলার প্রকাশ করা হয়। ভারতীয় হাইকমিশনে অভিযানকে একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে
উল্লেখ করে বলা হয়, যাঁরা এটা করেছেন, তাঁরা বিপ্লবীও নন, প্রতিবিপ্লবীও নন । তারা
হচ্ছেন অবিপ্লবী। এটা পড়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ হন এবং এ ধরনের মন্তব্যকে তারা নিহতদের প্রতি
চরম অবজ্ঞা ও অবমাননা হিসেবে দেখেন।
[জাসদের নেতা-কর্মীদের পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। গ্রেপ্তার
এড়ানোর জন্য সবাই গা ঢাকা দেন। তবু গ্রেপ্তার এড়ানো কঠিন হয়ে পড়ল। একে একে আখলাকুর
রহমান, মোহাম্মদ শাজাহান, আ ফ ম মাহবুবুল হক, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং বিপ্লবী সৈনিক
সংস্থার অনেক সংগঠক গ্রেপ্তার হন। পুলিশের একটি দল সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে মেজর জিয়াউদ্দিনকে
ধরে নিয়ে আসে। প্রথমে তাঁকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। খুলনা শহরে তখন একটা মেলা চলছিল।
মেলা প্রাঙ্গণে তাঁকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, যাতে সবাই দেখতে পান।
ছিয়াত্তরের জানুয়ারিতে জাসদের পার্টি প্রক্রিয়ায় কিছু
পরিবর্তন আসে। কেন্দ্রীয় ফোরাম ভেঙে দিয়ে একটি 'সেন্ট্রাল অর্গানাইজিং কমিটি' (সিওসি)
গঠন করা হয়। এই কমিটিতে ৩৭ জন সদস্য ছিলেন। মনে হচ্ছিল, সারা দেশ জিয়ার নেতৃত্বে
জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে নিয়োজিত, সব রাজনৈতিক দল সামরিক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার কৌশল
নিয়েছে। একমাত্র জাসদ থেকে গেল স্রোতের বিপরীতে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাসদ চেষ্টা করল একটি 'গণতান্ত্রিক
বিরোধী দল হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকারের
যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে ১৯৭৬ সালের ২ মার্চ প্রকাশিত এক পুস্তিকায় জাসদ ১৯৭২-৭৫
সালের সরকারের একটা সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন করে এভাবে:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর দীর্ঘ চার বছর শেখ
মুজিবের একদলীয় শাসনামলে পরিকল্পনাহীন অবাস্তব অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, দুর্নীতি,
অযোগ্যতা, জেল-জুলুম-সন্ত্রাস, অকথ্য নির্যাতন, চোরাকারবার, মজুতদারি, খুন-রাহাজানি,
গুন্ডামি এবং ভারত, রাশিয়া ও আমেরিকা, বিশেষ করে ভারত-রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা গোটা
দেশ ও জাতিকে চরম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অরাজকতার মধ্যে ফেলে দেয়। স্বাধীনতা
লাভের পরপরই স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা দেশের মানুষের জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে
বাস্তবায়িত করার জন্য গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার গঠন এবং পরবর্তীকালে মুজিবের স্বৈরাচারী
শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য স্বৈরাচারবিরোধী সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক জাতীয় সরকার
গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় এবং দাবিও করা হয়।
(সূত্র: জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা:
২১০-২১২)
মন্তব্য করুন
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো: