মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন যেকোনো ব্যক্তির উপর যে কোন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে। গত ২৪ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করা হয় তা ইতোমধ্যে কার্যকর শুরু হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর কয়েকজনের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ম্যাথিউ মিলার সুস্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যে, যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তির উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আবার প্রয়োগ করা হতে পারে।
কেন কিভাবে কখন এই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে এই সম্পর্কে কূটনৈতিক সূত্র থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। একাধিক কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেকোন সময় ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে পারে। কেন এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে? সাধারণত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে নুতন ভিসা নীতি যেটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোষণা করা হয়েছে তা ৫টি কারণে যেকোনো ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য হতে পারে:
১. তিনি যদি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো বক্তব্য রাখেন: ধরা যাক কেউ বললেন যে, বিএনপি আসুক না আসুক নির্বাচন হবেই। নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। আগামী নির্বাচনেও আমরা জয়ী হবো। এই এ ধরনের বক্তব্য দিলে তা নতুন ভিসা নীতিমালার আওতায় আসতে পারে এবং ওই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হতে পারে।
২. কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান করে: ধরা যাক কোন মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা বা উর্ধ্বতন সরকারি আমলা কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা অথবা বিচার বিভাগের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যদি এমন কোনো কর্মকান্ড করেন যা একটি বিশেষ দলকে বা ক্ষমতাশীল দলকে সমর্থন করে কিংবা যার ফলে ক্ষমতাসীন দল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাভবান হয়, সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
৩. নির্বাচন কমিশন যদি যথাযথ ভূমিকা পালন না করে: নির্বাচন কমিশন যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে যথাযথ ভূমিকা পালন না করে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছেন বা ক্ষমতাশীল দল বা অন্য কারোর পক্ষে কাজ করছেন, সেক্ষেত্রে তার জন্য ভিসা নীতি প্রযোজ্য হতে পারে।
৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করে বা কোনো রাজনৈতিক দলের উপর চড়াও হয়, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাজ করে তাহলে সেক্ষেত্রে তার উপরও যেকোন সময় ভিসানীতি আরোপ করা হতে পারে।
৫. যদি বিরোধী পক্ষকে দমন করা হয়: বিরোধী পক্ষের উপর যদি দমন নীতি পরিচালনা করা হয়, যে সমস্ত দমন নীতির কারণে তারা নির্বাচনে যেতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে এবং তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়, সেক্ষেত্রেও মার্কিন ভিসা নীতি আরোপ করা হতে পারে।
এই সমস্ত কারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হতে পারে বলে বিভিন্ন কূটনীতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
কিভাবে ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে?
সাধারণত এ ধরনের অভিযোগ প্রাপ্তির পর মার্কিন দূতাবাস এ ধরণের কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করার পর এ ব্যাপারে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করে, সত্যতা যাচাই করে। প্রকৃত অর্থে এ ধরনের বক্তব্য তিনি দিয়েছেন কিনা এবং এই ধরনের বক্তব্যের ফলে নির্বাচন কিভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে, সেটি যাচাই বাছাই করেন এবং যাচাই বাছাই করার পর যদি এই ধরনের বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে ভিসা নিতে প্রয়োগ করা হয়।
কখন ভিসা নীতি প্রয়োগ করা হবে?
যখন এই অভিযোগ প্রমানিত হবে যে ওই ব্যক্তি বা ওই প্রতিষ্ঠান এমন কোনো কর্মকান্ড করেছেন, বক্তব্য রেখেছেন বা কোনো বিষয়ে এমন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যে ওই প্রতিক্রিয়ার কারণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্থ হতে পারে, তাহলে তার জন্য এই ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিক ভাবেই প্রয়োগ করা হবে।