ইনসাইড বাংলাদেশ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ প্রশ্নে জাতিসংঘ: বাংলাদেশের ভূমিকা?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

গতকাল শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এতে জাতিসংঘ সনদের সঙ্গে সংগতি রেখে অবিলম্বে ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় সংস্থাটি। তবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গতকাল বৃহস্পতিবারের (২৩ফেব্রুয়ারি) ভোটাভুটিতে নিরব ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বাংলাদেশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো ভোট দেয়নি। এই ভোটাভোটিতে শুধু বাংলাদেশ নয় চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ মোট ৩২টি দেশ এই ভোটদানে বিরত ছিল। এই নিয়ে দেশের কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছিরল নানা আলোচনা। 

কূটনৈতিক মহল মনে করেছিল, এই ভোট দানে বিরত থাকার কারণে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন হতে পারে। এর আগে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞায় থাকা একটি জাহাজ ‘উড়সা মেজর’- কে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি বাংলাদেশ। পরে এই কারণে রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল মস্কো। কূটনেতিক মহলে গুঞ্জন ওঠেছিল, এই বুঝি বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ফাঁটল হয়ে গেলো। আবার কূটনৈতিকদের মধ্যে কেউ কেউ ভিন্ন মতামতও পোষণ করেছিলেন। তাঁরা বলেছেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একদিকে আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। কোনোটিই বাংলাদেশের সাথে সম্পৃক্ত নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার উপরও আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশের মূল বিষয় হচ্ছে কিভাবে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়া যায়।       

এদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকায় বাংলাদেশ এবং রাশিয়া সম্পর্কের ব্যাপারে কূটনৈতিকদের নেতিবাচক মন্তব্য করার ফলাফল হাটছে উল্টোরথে। যুদ্ধ বন্ধ করে রাশিয়াকে ইউক্রেন ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আনীত রেজুলেশনে ভোটদানে বিরত থাকায় বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে মস্কো। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাস এক টুইট বার্তায় বাংলাদেশকে এই ধন্যবাদ জানায়। টুইটে বলা হয়, ভোটদানে বিরত থাকার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ।     

ইউএন নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি বিশেষ অধিবেশনে প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১৪১টি। ইউক্রেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোর প্রায় সবই অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আর প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে সাতটি। এই সাতটি দেশ হলো- রাশিয়া, বেলারুশ, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, মালি ইরিত্রিয়া ও নিকারাগুয়া।

অন্যদিকে সাধারণ পরিষদের প্রস্তাবটিতে ভোটদানে বিরত ছিল ৩২টি দেশ। এই তালিকায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশ হলো- বাংলাদেশ, চীন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আলেজিরিয়া, বলিভিয়া, ইরান, কিউবা, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে।

সূত্রমতে, গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করে ইউরোপবাসী। যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তি হয় শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)। এর আগে যুদ্ধ বন্ধ ও অবিলম্বে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাব পাস করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জার্মানির উত্থাপন করা ১১ প্যারার এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে ‘অবিলম্বে, সম্পূর্ণ এবং নিঃশর্তভাবে’ নিজেদের সমস্ত সেনা সরিয়ে নিতে হবে রাশিয়াকে। যত দ্রুত সম্ভব, শত্রুতা বন্ধ করতে হবে।

এসব বিষয়ে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভূমিকা আছে। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে গৃহীত প্রস্তাবে আমাদের পক্ষে রাশিয়ার সমর্থন ছিল। সেটা একবার না দুই দু'বার ছিল। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের সময়েও বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি তখনও কিন্তু গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে বাংলাদেশ রাশিয়া একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সুতরাং ভোট দেওয়া না দেওয়ার মতো ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে রাশিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের ফাঁটল হতেই পারে না। তবে এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরব ভূমিকা পালন করা ছিল যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। বর্তমান বাংলাদেশের মূল বিষয় হলো বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ওপর আমেরিকার যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া। সেজন্য বাংলাদেশকে পশ্চিমা দেশগুলোর আস্থা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট দিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বলয়ে যেতে পারতো। কিন্তু নিরপেক্ষতাই বাংলাদেশের মূলনীতি। ‘সবার সাথেই বন্ধুত্ব- কারো সাথেই বৈরিতা নয়’- এই নীতিতেই চলছে বাংলাদেশ। এখন দেখার বিষয় জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভোট প্রদানে বাংলাদেশের বিরত থাকার ব্যাপারে কী ভাবছে পশ্চিমা দেশুগুলো?

ইউক্রেন-রাশিয়া   জাতিসংঘ   বাংলাদেশ   রাশিয়া  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

তিনদিনের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, স্বস্তিতে নগরবাসী

প্রকাশ: ১২:৩৩ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী এবং সাপ্তাহিক দুইদিনের ছুটি মিলিয়ে মোট তিনদিনের ছুটিতে ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। নগরের ব্যস্ততম জীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে। টানা তিনদিনের ছুটি কাজে লাগিয়ে বুধবার রাতেই রাজধানী ছেড়েছেন অনেক মানুষ। কেউ গেছেন গ্রামের বাড়িতে আবার কেউবা পরিবার নিয়ে বেড়াতে গেছেন কোনো পর্যটন এলাকায়। এর ফলে রাজধানীর সড়কে কমেছে মানুষের চাপ। কোথাও ব্যস্ততা নিয়ে ছুটে চলা মানুষের জনজট নেই। সবখানেই প্রায় ফাঁকা ফাঁকা ভাব।

সাধারণত বৃহস্পতিবারে ঢাকার রাস্তাঘাটে যানবাহন ও যাত্রীদের প্রচুর চাপ থাকলেও সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সড়কে নেই কোনো যানজট। আসাদ গেট, বিজয় সরণি, কুড়িল, বাড্ডা, রামপুরা, শান্তিনগর ও পল্টন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ঢাকার রাজপথে যানবাহন ও যাত্রীদের উপস্থিত খুবই কম।

তবে যাত্রী উপস্থিতি কম হলেও জানজট না থাকায় সন্তুষ্ট বাস চালকরা। মিরপুর থেকে থেকে সায়েদাবাদগামী একটি বাসের চালক জাকির হোসেন বলেন, যাত্রী কম হলেও ফাঁকা রাস্তায় গাড়ি চালাইয়া আরাম পাচ্ছি।

মোটরবাইকে রাইড শেয়ার করা নুরুল কাদেরও জানান একই অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, সাধারণত মিরপুর থেকে গুলিস্তান আসতে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টার মতো লেগে যায়। আজ এসেছি মাত্র ২০ মিনিটে।

যাত্রীরা বলছেন, টানা ছুটিতে রাস্তা প্রায় ঈদের ছুটির মতো ফাঁকা রয়েছে। এক ঘণ্টার রাস্তা এখন ১০-১৫ মিনিটেই ভ্রমণ করা যাচ্ছে।

ছুটির দিনে রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর বাড্ডায় কর্মরত এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকাল (বুধবার) অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। সে কারণে রাস্তায় গাড়ির অনেক চাপ ছিল। কিন্তু আজ থেকে টানা তিনদিনের ছুটি শুরু হওয়ায় রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেক কমে গেছে। যানজট নেই বললেই চলে। তবে বিকেলের দিকে গাড়ির চাপ কিছুটা বাড়তে পারে, কারণ ছুটির দিনে অনেক মানুষ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে বের হবেন।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সিনেটর-কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

প্রকাশ: ১১:১৪ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিএনপি টাকার মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ছে; আপনারা নৈতিকতা-আদর্শ দিয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সেখানকার প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন; সেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি আছে, সিনেটররা আছে, কংগ্রেসম্যানরা আছে; আপনারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান; বাংলাদেশ এবং আওয়ামী লীগ সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরুন।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত টাকা দিয়ে বিদেশিদের কিনে নিচ্ছে। আপনারা টাকা নয়, নৈতিকতা-আদর্শ দিয়ে বিদেশি নীতিনির্ধারণীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা আর প্রধানমন্ত্রী হবে না, আওয়ামী লীগ আর একবারও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এখন বিএনপি আর একবার ক্ষমতায় যেতে পারে কি না দেখা যাক....।’

এরপরই উপস্থিত নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে ‘পাকিস্তানে চলে যা’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মজার ছলে বলেন, ‘ওনারে পাকিস্তানও নেবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি এখন মিছিল করছে, সভা করছে। আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। তারা তো ক্ষমতায় থাকতে অনেক টাকা কামিয়েছে, ওইগুলো তো কিছুটা শেষ করতে হবে। এখন তারা টাকা দিয়ে মানুষ ভাড়া করে মিছিল করছে।’


সিনেটর   কংগ্রেসম্যান   প্রধানমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি নেই, বললেন চিকিৎসকেরা

প্রকাশ: ১০:০২ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

৫০ দিন ধরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।

তাঁর লিভার, কিডনিসহ মূল প্রত্যঙ্গগুলোর জটিলতা বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁর কিডনি ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাও জটিল হচ্ছে। এসব জটিলতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছেন না।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের জটিলতা বা সমস্যাগুলো এমন পর্যায়ে গেছে যে এখন দেশে চিকিৎসা দিয়ে সেসব সমস্যার উন্নতি আশা করা যায় না।

গত ৯ আগস্ট ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন।


খালেদা জিয়া   চিকিৎসা   এভারকেয়ার হাসপাতাল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

স্মৃতির দখিন দুয়ার


Thumbnail

আজ প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষ্যে শেখ হাসিনার আত্ম স্মৃতিচারণ মূলক এই লেখাটি বাংলা ইনসাইডার প্রকাশ করলো-

গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামখানি একসময় মধুমতি নদীর তীরে ছিল। বর্তমানে মধুমতি বেশ দূরে সরে গেছে। তারই শাখা হিসেবে পরিচিত বাইগার নদী এখন টুঙ্গীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে কুল কুল ছন্দে ঢেউ তুলে বয়ে চলেছে। রোদ ছড়ালে বা জ্যোৎস্না ঝরলে সে নদীর পানি রুপোর মতো ঝিকমিক করে।

নদীর পাড় ঘেঁষে কাশবন, ধান-পাট-আখ ক্ষেত, সারিসারি খেজুর, তাল- নারকেল আমলকি গাছ, বাঁশ-কলাগাছের ঝাড়, বুনো লতা-পাতার জংলা, সবুজ ঘন ঘাসের চিকন লম্বা লম্বা সতেজ ডগা। শালিক-চড়ুই পাখিদের কল-কাকলি, ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘুর ডাক। সব মিলিয়ে ভীষণরকম ভালোলাগার একটুকরো ছবি যেন। আশ্বিনের এক সোনালি রোদ্দুর ছড়ানো দুপুরে এ টুঙ্গীপাড়া গ্রামে আমার জন্ম। গ্রামের ছায়ায় ঘেরা, মায়ায় ভরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এবং সরল-সাধারণ জীবনের মাধুর্যের মধ্য দিয়ে আমি বড় হয়ে উঠি।

আমাদের বসতি প্রায় দু'শ বছরের বেশি হবে। সিপাহী বিপ্লবের আগে তৈরি করা দালান-কোঠা এখনও রয়েছে। আমাদের আত্মীয়-স্বজনরা সেখানে বসবাস করেন। তবে বেশিরভাগ ভেঙে পড়েছে, সেখানে এখন সাপের আখড়া। নীলকর সাহেবদের সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের অনেক গোলমাল হতো। মামলা-মোকদ্দমা হয়েছে। ইংরেজ সাহেবদের সঙ্গেও গণ্ডগোল লেগেই থাকত। একবার এক মামলায় এক ইংরেজ সাহেবকে হারিয়ে জরিমানা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে সে ভাঙা দালান এখনও বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাবাহিনী ঐ দালানের ওপর হামলা চালিয়েছিল। আমার দাদা-দাদিকে সামনের রাস্তায় বসিয়ে রেখে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিল।

আমাদের গ্রামে ঢাকা থেকে স্টিমারে যেতে সময় লাগত সতেরো ঘন্টা। রাস্তা- ঘাট ছিলই না। নৌকা ও পায়ে হাঁটা পথ একমাত্র ভরসা ছিল। তারপরও সে গ্রাম আমার কাছে বিরাট আকর্ষণীয় ছিল। এখন অবশ্য গাড়িতে যাওয়া যায়। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্পীডবোটেও যাওয়া যায়। গোপালগঞ্জ থেকে টুঙ্গীপাড়া নৌকায় যেতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে।

আমার শৈশবের স্বপ্ন-রঙিন দিনগুলো কেটেছে গ্রাম-বাংলার নরম পলিমাটিতে, বর্ষার কাদা-পানিতে, শীতের মিষ্টি রোদ্দুরে, ঘাসফুল আর পাতায় পাতায় শিশিরের ঘ্রাণ নিয়ে, জোনাক-জ্বলা অন্ধকারে ঝিঁঝির ডাক শুনে, তাল- তমালের ঝোপে বৈচি, দীঘির শাপলা আর শিউলি-বকুল কুড়িয়ে মালা গেঁথে, ধুলোমাটি মেখে, বর্ষায় ভিজে খেলা করে।

আমার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করতেন। বেশির ভাগ সময় তাঁকে তখন জেলে আটকে রাখা হতো। আমি ও আমার ছোট ভাই কামাল মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদির কাছে থাকতাম। আমার জন্মের সময় বাবা কলকাতায় পড়তেন, রাজনীতি করতেন। খবর পেয়েও দেখতে আসেন বেশ পরে।

আমার বাবা যখনই সময় ও সুযোগ পেতেন একবার বাড়ি এলে আমরা কিছুতেই তাঁকে ছেড়ে নড়তাম না। বাবার কোলে বসে গল্প শোনা, তার সঙ্গে খাওয়া, আমার শৈশবে যতটুকু পেয়েছি তা মনে হতো অনেকখানি।

বাবাকে একবার গোপালগঞ্জ থানায় আনা হলে দাদার সঙ্গে আমি ও কামাল দেখতে যাই। কামালের তো জন্মই হয়েছে বাবা যখন ঢাকায় জেলে। ও বাবাকে খুব কাছ থেকে তখনও দেখেনি। আমার কাছেই বাবার গল্প শুনত মুগ্ধ হয়ে। গোপালগঞ্জ জেলখানার কাছে পুকুর পাড়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, বাবাকে নিয়ে যাবে কোর্টে তখনই আমরা দেখব। কামাল কাছ ঘেঁষে বলল : হাচুপা, তোমার আব্বাকে আব্বা বলতে দেবে। আমার শৈশবের হৃদয়ের গভীরে কামালের এ অনুভূতিটুকু আজও অম্লান হয়ে আছে। বাবাকে আমাদের শৈশবে-কৈশোরে খুব কমই কাছে পেয়েছি। শৈশবে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত ছিলাম বলে দাদা-দাদি, আত্মীয়- স্বজন, গ্রামের মানুষের অশেষ স্নেহ-মমতা পেয়েছি।

আমাদের পরিবারের জন্য মৌলভী, পণ্ডিত ও মাস্টার বাড়িতেই থাকতেন। আমরা বাড়ির সব ছেলেমেয়ে সকাল-সন্ধ্যা তাঁদের কাছে লেখাপড়া শিখতাম। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলেও কিছুদিন পড়াশোনা করেছিলাম। আমার কৈশোরকাল থেকে শহরে বাস করলেও গ্রামের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল। ১৯৫২ সালে আমার দাদার সঙ্গে আমাদের বাড়ির নিজস্ব নৌকায় চড়ে প্রথম ঢাকা শহরে আসি। আমার স্নেহময়ী দাদা-দাদি আত্মীয়-স্বজন বেশিরভাগ গ্রামে বাস করতেন। স্কুলে ছুটি হলে বা অন্যান্য উৎসবে বছরে প্রায় তিন-চারবার গ্রামে চড়ে যেতাম। আজও আমার গ্রামের প্রকৃতি, শৈশব আমাকে ভীষণভাবে পিছু টানে।

আমার শৈশবের দিনগুলো ভীষণরকম স্মৃতিময়। আজ সেসব দিনের কথা যেন স্মৃতির  দুখিন দুয়ার খোলা পেয়ে বারবার ভেসে আসছে। একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করে পারছি না। আমার বাবার এক চাচাতো বোন, আমার চেয়ে বয়সে তিন-চার বছর বড় হবে। সে ফুফুর সঙ্গে বাড়ির সব ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছি। খালের ওপর ছিল বাঁশের সাঁকো। সে সাঁকোর ওপর দিয়ে যেতে হবে। প্রথমদিন কি দারুণ ভয় পেয়েছিলাম। আমার হাত-পা কাঁপছিল। ফুফুই আমাকে সাহস দিয়ে হাত ধরে সাঁকো পার করিয়ে দিয়েছিল। এরপর আর কখনো ভয় করেনি। বরং সবার আগে আমিই থাকতাম।

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নদীর ধারে বেড়ানো, শীতের দিনে নদীর উষ্ণ পানিতে পা ভেজানো আমার কাছে ভীষণরকম লোভনীয় ছিল। নদীর পানিতে জোড়া নারকেল ভাসিয়ে অথবা কলাগাছ ফেলে সাঁতার কাটা, গামছা বিছিয়ে টেংরা পুঁটি খল্লা মাছ ধরা। বর্ষাকালে খালে অনেক কচুরিপানা ভেসে আসত। সে কচুরিপানা টেনে তুললে তার শেকড় থেকে বেরিয়ে আসত কই ও বাইন মাছ। একবার একটি সাপ দেখে খুব ভয় পেয়েছিলাম।

বৈশাখে কাঁচা আম পেড়ে কুচি কুচি করে কেটে সর্ষেবাটা ও কাঁচা মরিচ মাখিয়ে, তারপর কলাপাতা কোনাকুনি করে সে আম মাথা পুরে, তার রস টেনে খাওয়ার মজা ও স্বাদ আমাকে এখনও আপ্লুত করে রাখে। কলাপাতায় এ আম মাথা পুরে যে না খেয়েছে, কিছুতেই এর স্বাদ বুঝবে না। আর কলাপাতায় এ আম মাথা পুরলে তার ঘ্রাণই হতো অন্যরকম। এভাবে আম খাওয়া নিয়ে কত মারামারি করেছি। ডাল ঝাঁকিয়ে বরই পেড়ে কাড়াকাড়ি করে খেতাম। গ্রামের বড় তালাবের (পুকুর) পাড়ে ছিল বিরাট এক বরই গাছ। ঝাঁকুনির ফলে লালের আভা লাগা সব থেকে টলটলে বরইটি পুকুরের গভীর পানিতে গিয়ে পড়ত এবং কারও পক্ষে কিছুতেই সেটি যখন তুলে আনা সম্ভব হতো না তখন সে বরইটির জন্য মন জুড়ে থাকা দুঃখটুকু এখনও ভুলতে পারলাম কই?

পাটক্ষেতের ভেতর দিয়ে আমরা ছোট ডিঙ্গি নৌকা চড়ে ঘুরে বেড়াতাম। আমার দাদার একটি বড় নৌকা ছিল, যার ভেতরে দুটো ঘর ছিল, জানালাও ছিল বড় বড়। নৌকার পেছনে হাল, সামনে দুই দাঁড় ছিল। নৌকার জানালায় বসে নীল আকাশ আর দূরের ঘন সবুজ গাছপালা ঘেরা গ্রাম দেখতে আমার বড় ভালো লাগতো। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় সে নৌকা ভেঙে নষ্ট হয়ে যায়। শৈশবের ফেলে আসা সে গ্রাম আমার কাছে এখনও যেন সুভাষিত ছবির মতো।

আমার বাবার জন্মস্থানও টুঙ্গীপাড়ায়। তিনি এখন ঐ গ্রামের মাটিতেই ছায়াশীতল পরিবেশে ঘুমিয়ে আছেন। তার পাশেই আমার দাদা-দাদির কবর। যারা আমার জীবনকে অফুরন্ত স্নেহমমতা দিয়ে ভরিয়ে তুলেছিলেন, আজ আমার গ্রামের মাটিতেই তারা মিশে আছেন। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে আমার মা, বাবা, ভাই ও আত্মীয়-পরিজন অনেককে হারাই। দেশ ও জাতি হারায় তাদের বেঁচে থাকার সকল সম্ভবনা, আশা-আকাঙ্খার স্বাধীন সত্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ঘাতকের দল বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকা থেকে সরিয়ে সে মহাপুরুষকে নিভৃতে পল্লীর মাটিতেই কবর দিয়েছে। ইতিহাসের পাতা থেকে তাঁকে মুছে ফেলার ব্যর্থ প্রয়াস চালিয়েছে – কিন্তু পেরেছে কী?

বাবার কাছাকাছি বেশি সময় কাটাতাম। তাঁর জীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক আলোচনা করার সুযোগও পেতাম। তাঁর একটি কথা আজ খুব বেশি করে মনে পড়ে। তিনি প্রায়ই বলতেন, 'শেষ জীবনে আমি গ্রামে থাকবো। তুই আমাকে দেখবি। আমি তোর কাছেই থাকব।' কথাগুলো আমার কানে এখনও বাজে। গ্রামের নিঝুম পরিবেশে বাবার মাজারের এ পিছুটান আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেন, আমাকে বারবার আমার গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

আমি এখন নিজেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছি। দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পেরে আমি গর্বিত। আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গীপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই। খুব ইচ্ছে আছে নদীর ধারে একটি ঘর তৈরি করার। আমার বাবা-মার কথা স্মৃতিকথামূলকভাবে লেখার ইচ্ছে আছে। আমার বাবা রাজনীতিবিদ মুজিবকে সবাই জানতেন। কিন্তু ব্যক্তি মুজিব যে কতো বিরাট হৃদয়ের ছিলেন, সেসব কথা আমি লিখতে চাই।

গ্রামকে তো আমি আমার শৈশবের গ্রামের মতো করেই ফিরে পেতে চাই। কিন্তু চাইলেই তো আর হবে না। এখন সময় দ্রুত বদলাচ্ছে। যান্ত্রিকতার স্পর্শে গ্রামের সরল সাধারণ জীবনেও ব্যস্ততা বেড়েছে, চমক জেগেছে। মানুষও ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। এ শতাব্দীতে বাস করে বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর গ্রামীণ জীবনের মানোন্নয়ন ও শ্রমের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।

আমার শত ব্যস্ততা থাকলেও এবং একটু সময় পেলেই আমি গ্রামে চলে যাই । কেন যে মনে হয় আমার শৈশবের গ্রামকে যদি ফিরে পেতাম! গ্রামের মেঠোপথটি যখন দূরে কোথাও হারিয়ে যায় আমার গলা ছেড়ে গাইতে ইচ্ছে করে, ‘গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ, আমার মন ভোলায় রে......।’

 

(শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১।। পৃষ্টা: ২৫-২৮)



মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নিরাপত্তা জোরদারে র‌্যাবের রোবাস্ট পেট্রোল ও চেকপোস্ট

প্রকাশ: ০৯:৪৬ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশেষ রোবাস্ট প্যাট্রলের মাধ্যমে পিকআপ ও মোটরসাইকেল টহল ডিউটি ও চেকপোস্ট মোতায়েন করেছে র‌্যাব।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) র‌্যাব-১-এর আওতাধীন রাজধানীর ৩০০ ফিট রাস্তা সংলগ্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার সামনের রাস্তায় এই রোবাস্ট প্যাট্রল ও চেকপোস্ট বসানো হয়।

এ সময় র‌্যাব-১-এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারকরণে র‌্যাব-১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোশতাক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য র‌্যাব সদা তৎপর। তাই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা বিভিন্ন আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

র‌্যাব-১ সহ দেশের সব ব্যাটালিয়ন তাদের নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় রোবাস্ট প্যাট্রল ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট পরিচালনা করছে।


নিরাপত্তা   র‌্যাব   রোবাস্্‌ পেট্রোল   চেকপোস্ট  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন