বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এ বছরের ডিসেম্বরে অথবা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে যে রাজনৈতিক উত্তেজনা- তা অন্য দিকে মোড় নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্বের আসনে বসেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আবার পুরনো রূপে ফিরে গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতির নীতিনির্ধারক এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মোড়ল হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪ মে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন এই নতুন ভিসানীতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য তারা নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছেন। এই ভিসানীতিতে ইমিগ্রেশন আইনের ২১২ ধারা প্রয়োগের কথা বলা হয়েছে। ২১২ ধারা অনুযায়ী, কোন দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যদি কেউ অন্তরায় সৃষ্টি করে, যদি সুষ্ঠ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে বা নির্বাচনে অন্য উপায় অবলম্বনের চেষ্টায় সচেষ্ট থাকে- তাহলে তার ভিসা রহিত করা হবে এবং তাকে ভিসা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকৃতি জানাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে নাইজেরিয়াতে এই নীতি প্রয়োগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নাইজেরিয়াতে এই নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল নির্বাচনের পরে। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচনের আগেই আগাম ঘোষণা দিয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হলো। এর ফলে যদি কোনো নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, প্রশাসনের ব্যক্তি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকার বা বিরোধী দলের সদস্য কিংবা অন্য কেউ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে, তাহলে তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে এক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় পক্ষই এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসানীতি ঘোষণার পরদিনই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় আমন্ত্রিত হন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ। সেখানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিকে আওয়ামী লীগ তাদের পক্ষে মনে করছে। এর ফলে বিএনপি’র জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন এবং নির্বাচনের প্রতিরোধের ডাক ভেস্তে গেল। অন্যদিকে বিএনপিও এটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। তারা বলেছে, এর মধ্য দিয়ে সরকারকে একটি সতর্কবার্তা দেয়া হলো। তারা যেন আগামী নির্বাচন ২০১৪ মতো বা ২০১৮ মতো না করে। যেটিই হোক না কেন, এই নতুন ভিসানীতির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এখন তারা রাজনৈতিক সমঝোতারও ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং তারা মনে করছে, শেষ পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
নতুন ভিসানীতির ফলে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা অনেকটাই নিশ্চিত হবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। কারণ প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কখনই চাইবেন না- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞায় তারা পড়ুন। আর এ কারণেই তাদের ভূমিকা হবে নিরপেক্ষ। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই রকম একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করলেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হতে বাধ্য। এছাড়া এই ভিসানীতি রাজনৈতিক দলগুলোকেও সজাগ রাখবে এবং কোন রকম কারচুপি করা থেকে তারা কিছুটা হলেও বিরত থাকবে। এর ফলে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ তৈরি হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গতকালের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পর- এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেফারির ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বৈঠকই শেষ বৈঠক না, সামনের দিনগুলোতে আরও বৈঠক হতে পারে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু সতর্কবার্তা দিতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একক মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এর প্রভাব রাজনীতির ওপর ব্যাপকভাবে পড়বে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিভাবকত্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কতটুকু সংহত রাখবে- সেটিই দেখার বিষয়।
জাতীয় নির্বাচন যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি রেফারি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
যশোর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা
মন্তব্য করুন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান ফরিদপুর
মন্তব্য করুন
ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্কিন দূতাবাস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে যে, আগামী মে মাসে তার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এরপরও আরও কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্বের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ধরনের বাঁক বলে মনে করা হচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা বাস্তবতায় বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য মুখী হচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে পরিবর্তিত বিশ্বে এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশকে নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকার জন্য বাংলাদেশের কয়েকটি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম কারণ হলো- বাকিতে তেল-জ্বালানি পাওয়া। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের ফলে জ্বালানি তেলের নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে কোথাও এক বছরের বাকিতে, কোথাও তারও বেশি সময় বাকিতে জ্বালানি তেল আহরণের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের ইতিবাচক সমঝোতা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
কাতারের সঙ্গেও এমন একটি সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷
দ্বিতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশের অভিবাসীদের জন্য একটি বড় বাজার। বিশেষ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এই সব দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে। যুদ্ধের ফলে এই সমস্ত দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে। অনেক শ্রমিক ছাঁটাই হতে পারে। আর এটি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝালিয়ে নিচ্ছে, যেন বাংলাদেশের শ্রমিকরা এই শ্রমিক ছাঁটাই এর আওতায় না পড়ে।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় অদূর ভবিষ্যতে নগদ সহায়তা দরকার হতে পারে, দ্রুত ঋণ দরকার হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সংকট নিরসনের একটা বড় ভরসাস্থল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর এই সমস্ত বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন মধ্যপ্রাচ্যমুখী। বাংলাদেশের ঋণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। অর্থনীতি ক্রমশ ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে থেকে উত্তরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন একটি দূরদর্শী কূটনৈতিক চিন্তা বলেই অনেকে মনে করছেন। কারণ আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণ দেনা মেটাতে হবে। এই কারণেই বাংলাদেশ কখনও যেন সংকটে না পরে সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশের দৃষ্টি দিয়ে দেখে না বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা ম্যাক্সওয়েল মার্টিন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক অভিন্ন ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ভিত্তিতে পরিচালিত। এই সম্পর্ক ভারত, চীন, রাশিয়া বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পরিচালিত নয়।
বাংলাদেশ কি কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে? সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্নটি কূটনৈতিকপাড়ায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ কাতারের আমির বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। দুই দিনের সফরে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নের একটা বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কাতার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন। সামনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসছেন।