বাংলাদেশে এই
মুহুর্তে সবচেয়ে ব্যস্ত কূটনীতিক কে? এর উত্তর কেউ না ভেবেই দিতে পারেন। পিটার ডি.
হাস। মার্কিন এই রাষ্ট্রদূত এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত কূটনীতিবিদ। শুধু
কূটনীতিকদের মধ্যেই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মোটামুটি কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন তিনি।
প্রতিদিনই খবরের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি। তার ব্যস্ত ছোটাছুটি, বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে
তার কথাবার্তা, তাকে অভিভাবকের আসনে বসিয়েছে। আর এজন্য বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতাও
কম দায়ি নয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত যেন এখন বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন এবং মানবাধিকারের
ত্রাতা হয়ে সামনে এসেছেন। তার আদেশ নির্দেশ প্রতিপালন করাই যেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের
প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে।
পিটার ডি. হাস
আসলে কি করছেন? তিনি বাংলাদেশে কি করতে চান? এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা রকম প্রশ্ন
উঠেছে। কিন্তু সবকিছুই ফিসফাস। কেউই মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে রাজি
নন। তার ভিসা যদি বাতিল হয়ে যায়? কিংবা তিনি যদি মার্কিন রোষানলে পরেন? মার্কিন রোষানলে
পরলে তারতো আর রক্ষা নেই। এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গত ৬-৭ মাস ধরে। বিশেষ করে
২৪ মে নতুন মার্কিন ভিসানীতির পরপরই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত
যেন ড্রাইভিং সিটে বসে গেছেন।
কিন্তু এমনটি
হবার কথা নয়। বাংলাদেশে নির্বাচন হতে এখনও বাকি ছয় মাসের কিছু বেশি সময়। আগামী নির্বাচন
কিভাবে হবে না হবে সেটি নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার। নির্বাচন কমিশন এখনও নির্বাচনের
তফসিলই ঘোষণা করেননি। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দৌড়ঝাঁপ দেখে মনে হতেই পারে নির্বাচন
বোধহয় আগামীকালই।
একটি দেশের
নির্বাচন সম্পূর্ণ দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এই নির্বাচনে কোন দল কিভাবে নির্বাচন করবে,
কোন কৌশলে নির্বাচন করবে সেটি একান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নিজের
ইচ্ছায় রেফারির ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। কারো কারো মনে প্রশ্নের
উদয় হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে কতজন পর্যবেক্ষক
ছিল? সেই নির্বাচন কতটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ছিল? ডোনাল ট্রাম্প এখনও দাবি করেন সেই
নির্বাচন পক্ষপাত দুষ্টু হয়েছে, জনমত পাল্টে দেয়া হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭৭ভাগ
মানুষ মনে করেন সেখানকার গণতন্ত্র ভঙ্গুর এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ খুবই অনুজ্জ্বল। সেই
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে অবিরত কথা বলে যাচ্ছেন।
তার কাছে বৈঠক করে ধন্য হচ্ছেন রাজনীতিবিদরা।
গতকাল তিনি
বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছেন। মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে একান্ত বৈঠক করেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বৈঠককে
এতই গোপনীয় বিবেচনা করেছেন যে, এ ব্যাপারে কোন আনুষ্ঠানিক কথা বলেননি। একটি রাজনৈতিক
দলের নেতা বিদেশী রাষ্ট্রের দূতের সাথে যখন এ ধরণের বৈঠক করেন এবং এ ব্যাপারে যখন দেশের
জনগণকে অবহিত করেন না, তখন এটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা নয় কিনা সেটি বিবেচনা করা দরকার।
এ প্রসঙ্গে
চিলির সাবেক রাষ্ট্রপতি আইয়েন্দের একটি উক্তি খুব মনে পরে। তিনি বলেছিলেন, কোন রাষ্ট্রদূত
দেশের কোন রাজনীতিবিদদের সাথে যদি কথা বলে তাহলে তা শিষ্টাচার লঙ্ঘন, জেনেভা কনভেনশনের
লঙ্ঘন। আমাদের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিনমিন করে এ ব্যাপারে কিছু বলেছিলেন। কিন্তু
সেই বলার পর তিনি আবার চুপসে গেছেন। শাহরিয়ার আলম সম্প্রতি বলেছিলেন, কোন রাষ্ট্রদূত
যদি সীমা লঙ্ঘন করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু তিনি যে কোন ব্যবস্থা
নিতে পারবেন না তা সবাই জানে। প্রশ্ন হচ্ছে পিটার ডি. হাস আসলে কি চাচ্ছেন? কি করতে
চাচ্ছেন বাংলাদেশকে নিয়ে? শুধুই কি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন? নাকি এর পেছনে অন্য
কোন উদ্দেশ্য আছে?
অনেকেই মনে
করেন নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তার কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা
করতে চায় এবং এই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাদের হাতে প্রচুর রশদ আছে, অস্ত্র আছে।
আর এই অস্ত্রগুলোর কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা পিটার হাসের কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছেন
এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা যদি দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদায়
দাঁড়াতে না পারে তাহলে মার্কিন প্রেসক্রিপশনেই নির্বাচন হবে। পিটার ডি. হাস এই নির্বাচনের
পরে এমন একটি সরকারকে নির্বাচনে বসাবে যে সরকার একান্ত মার্কিন অনুগত হবে। আর তিনি
নিজে করছেন না, উপযাচক হয়েও করছেন না। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বাস্তবায়ন করাই তার দায়িত্ব
এবং সে দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আমাদের রাজনীতিবিদরা
মোটেও নিষ্ঠার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না।
মন্তব্য করুন
মাধ্যপ্রাচ্য শেখ হাসিনা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান
মন্তব্য করুন
কাতারের আমির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি
মন্তব্য করুন
চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিট এলার্ট জারি
মন্তব্য করুন
নাটোর সিংড়া উপজেলা পরিষদ ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি জুনায়েদ আহমেদ পলক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন