সেদিন আকাশে ভোরের আলো ভেঙ্গে উঠেনি সূর্য। রক্তাক্ত আলোকজ্জ্বল সূর্যটা পূর্ব দিগন্তে ভেসে ওঠতে লজ্জা পেয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অনন্য কালো অধ্যায়ের রচয়িতা এক-এগারোর তৎকালীন সরকার গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে কারাবন্ধী করেছিল। সেদিন লজ্জা পেয়েছিল গ্রহ, তারা, আকাশ, বাতাস, তরুলতা, বৃক্ষরা- নিরবে, নিভৃতে কেঁদেছিল ভোরের প্রহর। আজ ১৬ জুলাই - গণতন্ত্রের মানসকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবন্দী দিবস। ২০০৭ সালের এই দিনে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ২০০৮’র ১১ জুন দেশের ছাত্র-জনতার দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
সেদিন
ভোরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক সদস্য
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বাসভবন
সুধা সদন ঘেরাও করে।
এ অবস্থায় শেখ হাসিনা ফজরের
নামাজ আদায় করেন। সকাল
সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর
সদস্যরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সুধা সদন
থেকে বের করে নিয়ে
আসে এবং তাকে বন্দি
অবস্থায় ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে।
তবে
আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত
সময়ের প্রায় ২ ঘণ্টা আগেই
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনার জামিন আইনবহির্ভূতভাবে নামঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট।
আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর
নির্দেশ দেয়ার পর পরই শেখ
হাসিনাকে সংসদ ভবন চত্বরে
স্থাপিত বিশেষ কারাগারে নিয়ে বন্দি করে
রাখা হয়। শেখ হাসিনাকে
গ্রেপ্তারের আগে তার বিরুদ্ধে
বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়। ওইসব
মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস তাকে
কারাগারে আটক রাখা হয়।
ওই বিশেষ কারাগারের পাশেই সংসদ ভবন চত্বরে
অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে তাঁর বিচার
প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়।
গ্রেপ্তার
হওয়ার প্রাক্কালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য,
বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান। ভারপ্রাপ্ত
সভাপতি জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা শেখ
হাসিনার মুক্তি এবং নির্বাচনের দাবিতে
সংগঠিত হতে থাকে। সরকার
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে
বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংগঠিত, প্রতিবাদ ও ধীরে ধীরে
আন্দোলন গড়ে তোলে। দলের
সভাপতির অনুপস্থিতি ও প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের
মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে
নিয়ে যান।
এই কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজেও
বার বার দলের নেতাকর্মীদের
ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তার আইনজীবী ও
চিকিৎসকরা তার সঙ্গে দেখা
করতে গেলে তাদের মাধ্যমে
তিনি দলকে এ ব্যাপারে
বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে নেতাদের কাছে
বার্তা পাঠান। অনেক ক্ষেত্রে বন্দী
সভাপতি শেখ হাসিনার পরামর্শ
নিয়েই দল পরিচালনা ও
বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এ সময় কারা অভ্যন্তরে
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শারীরিক
অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেখ
হাসিনা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে
মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারের
মধ্যেই তার চোখ, কানসহ
বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা চলতে থাকে। তার
উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি অবস্থার
মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর
সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে তাকে
বিদেশে পাঠানোর দাবি ওঠে। এক
পর্যায়ে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ২০০৮ সালের ১১
জুন ৮ সপ্তাহের জামিনে
মুক্তি দেয়া হয় কারাবন্দি
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ
হাসিনাকে।
আওয়ামী
লীগ নেতারা জানান, সাহসিকা বঙ্গবন্ধু কন্যা আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায়
৩৬ মিনিটের অগ্নিঝরা বক্তৃতার মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের
বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে তিনি
দেশবাসীর উদ্দেশে একটি চিঠির মাধ্যমে
দেশের জনগণ এবং আওয়ামী
লীগের নেতাকর্মীদের গণতন্ত্র রক্ষায় মনোবল না হারিয়ে অন্যায়ের
বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান
জানান।
শেখ
হাসিনার নির্দেশে দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীরা
জেগে ওঠে। শেখ হাসিনার
মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী
লীগ ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর
সংগ্রহ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
কাছে জমা দেয়। আওয়ামী
লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠন ও গণতন্ত্রপ্রত্যাশী দেশবাসীর ক্রমাগত
প্রতিরোধ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু কন্যার আপোষসহীন ও দৃঢ় মনোভাব
এবং দেশবাসীর অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে
২০০৮ সালের ১১ জুন দীর্ঘ
১১ মাস কারাভোগ ও
নানামুখী ষড়যন্ত্রের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার
শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এদেশের
মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরায় ফিরে আসে। বিকাশ
ঘটে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের।
বাংলাদেশে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের হারানো স্বপ্ন ও সোনার বাংলা
বাস্তবায়িত হচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যার
নেতৃত্বে। এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় পিতার ন্যায় আপোষহীন মনোভাব নিয়েই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার যাত্রা
শুরু হয়। জনগণের মুক্তির
আন্দোলনে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সহ্য
করতে হয়েছে অনেক জেল-জুলুম
ও অত্যাচার-নির্যাতন।
অসংখ্যবার
মৃত্যুর সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।
তবে জনগণের অশ্রুসিক্ত ভালোবাসায় সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা
করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অকুতোভয় নির্ভীক
সেনানীর মতো নিরবচ্ছিন্নভাবে পথ
চলেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সব
বাধা-বিপত্তি জয় করে আজ
শুধু বাংলাদেশেই নয়; বিশ্ব দরবারেও
স্বমহিমায় উজ্জ্বল জনগণের প্রাণপ্রিয় এ নেত্রী।
শেখ
হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে এ
দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পুনরায় ফিরে আসে। যুগপৎভাবে
বিকাশ ঘটে গণতন্ত্র ও
উন্নয়নের। আওয়ামী লীগ এবং তার
অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন
দিনটি ‘শেখ হাসিনার কারাবন্দি
দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে।
এ বছরও দিবসটি উপলক্ষে
আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি
গ্রহণ করেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর
ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী
সংগঠনসমূহ পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ
করেছে।
কারাবন্দি
দিবসে যার যার অবস্থান
থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য
ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশবাসীকে প্রার্থনা
করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে তিনি
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে
উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বাঙালির
হৃদয়ে দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে সংকট জয়ের
ঐক্যবদ্ধ সুরক্ষাব্যুহ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী
মন্তব্য করুন
স্বতন্ত্র প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় যে, ২৭৪১ জন এবার নির্বাচনে তিনশ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯৮ জন। আর অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএসপির প্রার্থী সব মিলিয়ে ৩১০ জন। জাতীয় পার্টি জমা দিয়েছে ২৭০ জনের মতো। আর বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের-ই প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী আছে এবং তারা নির্বাচনে শক্ত লড়াই করবেন সেটি নিশ্চিত।
সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তৃণমূল বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীও এখানে প্রার্থী হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী মহাজোটের প্রার্থী নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে এবার নুরুল ইসলাম ছাড় দেবেন কি না, এ প্রশ্ন এখন অনেক ভোটারের মুখে মুখে ঘুরছে।