ইনসাইড বাংলাদেশ

সে করে টিকটক, সে হলো জোকার, সে কেন এমপি হতে চায়?


Thumbnail সে করে টিকটক, সে হলো জোকার, সে কেন এমপি হতে চায়?

তখন জিওগ্রাফিতে অনার্সে পড়ি, মনমনসিংহে অবস্থিত আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ছাত্র। ময়মনসিংহের সাহিত্য, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বেশ জানা-শোনা, যাওয়া-আসা। আবৃত্তি নিকেতন কিংবা শব্দ ও আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রে নিয়মিত অনুশীলন করি। টুকটাক দু’চারটা কবিতা লিখেই বন্ধু-পরিজন মহলে কবি হিসেবে সম্বোধন পেতে শুরু করি। ভালোই লাগে, উৎসাহ পাই, আরও লিখি। দু’চারটা গানও করি নিজের লেখা, জাতীয় পর্যায়ে প্রকাশিত বা প্রচারিতও হয়। অনুপ্রেরণার উৎসগুলো দিন দিন প্রসার ও বিস্তার লাভ করতে শুরু করে। কেউ কেউ আবার বলে, কবি দুই লাইন কবিতা লিখে জীবনটা নষ্ট করে দে.... একজন আরেকজনকে নিয়ে লিখতে বলে। বন্ধুদের কেউ কেউ আবার কবিতা লেখা ডায়েরির পাতা সমানভাবে স্টিলের স্কেল দিয়ে কেটে চুরি করে নিয়ে যায়, প্রেমিকাকে উপহার দেয়- বলে, তার নিজের লেখা কবিতা তাকে (বন্ধুর প্রেমিকা) নিয়ে, তাদের প্রেম আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ভালোই লাগে, মনে মনে আনন্দ পাই।     

এরই মধ্যে বাজারে এলো নতুন কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। লাল-কালো মলাটের বইটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কবিতাপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। কবি হেলাল হাফিজের লেখা ‘অশ্লীল সভ্যতা’ শিরোনামের কবিতার দুইটি লাইন- ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না!’। প্রশ্ন ওঠেছিল আসলে কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল কবিতাটি বা কাদের উদ্দেশ্য করে এই প্রশ্ন কবি হেলার হাফিজের। পরে কোনো এক বিজ্ঞ কবি আমাকে বুঝিয়েছিলেন যে, কোনো এক নারী বা কবি তার প্রেমিকা- কোনো এক নারীকে উদ্দেশ্য করে কবিতাটি লিখেছিলেন। বাস্তবিক অর্থে ঘটনাটি সত্য না হলেও কবির কবিতার যে শিরোনাম ‘অশ্লীল সভ্যতা’, সে অশ্লীল সভ্যতার যুগে আমরা পা রেখেছি। কেননা নিছকই একটি ক্ষুদ্র ঘটনা নিয়ে খুদ জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৩টি দেশের রাষ্ট্রদূত বিবৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের নির্বাচনে একটু আধটু মারামারি, দৌড়ঝাপ- এটি যুগ যুগ ধরেই দেখে আসছি আমরা। শুধু বাংলাদেশে নয়, পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এমনকি বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রেই এ ধরনের ঘটনা চোখে পড়ে অহরহ। নির্বাচনের মৌসুমে পত্রিকার পাতা খুললেই এ ধরনের অনেক খবর দেখা যায়। পাল্টাপাল্টি দলগুলোর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, মারামারি। আসলে  ক্ষমতায় কে না থাকতে চায়? খুদ আমেরিকাও চায় বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে অন্যের উপর মাতব্বরি ফলাতে। আর জাতিসংঘ, সেওতো ওই আমেরিকারই তলপিবাহক। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর বেশ কৌতুহল। যে কারণেই নানা ধরনের বিবৃতি, নানা ধরনের তৎপরতা, ভিসা নীতি, স্যাংশন আরও কি যে হতে পারে, তার কোনো গ্যারান্টি নেই। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই কিংবা ক্ষমতা দখলের লড়াই।

বলছিলাম কবি হেলাল হাফিজের ‘অশ্লীল সভ্যতা’ কবিতার দুটি লাইন ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না!’। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের প্রাক্কালে সাততলা বস্তিতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে স্থানীয় নারীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছিলেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। সাততলা বস্তির নারীরা বলতে থাকেন, ‘তুই টিকটকার, তুই টিকটক করবি, তুই ক্যান নির্বাচন করবি?’ আসলে সাততলা বস্তির নারীরাও বুঝে গিয়েছিলেন, কার কি যোগ্যতা, কার কোথায় থাকা উচিৎ। কবি হেলাল হাফিজের ‘অশ্লীল সভ্যতা’ কবিতার দুটি লাইন ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না!’- বিজ্ঞ বয়জেষ্ঠ্য কবির বিশ্লেষণ মোতাবেক যদি নারীদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়ে থাকে, তবে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত সাততলা বস্তির নারীদের ক্ষেত্রে কবি হেলাল হাফিজের সে উক্তি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলেই আমি মনে করি। কেননা সাততলা বস্তির নারীরা মানুষ বুঝেছিলেন। বস্তুত সাততলা বস্তির নারীরা অধিকাংশই অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত পোশাক শ্রমিক। অথচ তারা ঠিকই বুঝেছিলেন টিকটকার বা ইউটিউবার আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের অবস্থা এবং অবস্থান। কিন্তু অতি উচ্চ শিক্ষিত কূটনীতিক রাষ্ট্রদূতরা বুঝলেন না, বুঝলেন না জাতিসংঘের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস। হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত মঙ্গলবার এক টুইটে নিন্দা জানান গোয়েন লুইস। তিনি লিখেছেন, ‘সহিংসতামুক্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ সবার মৌলিক অধিকার এবং সেটিকে রক্ষা করা উচিত।’    

জা‌তিসং‌ঘের প্রতি‌নি‌ধি বা রাষ্ট্রদূতরা দলবেধে এ ঘটনার প্রতি‌ক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশ্বের অতি উচ্চশিক্ষিত কূটনীতিক মানুষদের, তাহলে কি বোঝার ভুল ছিল? নাকি অন্য কোনো মতলব? অতি উচ্চ শিক্ষিত মানুষরা কি মতলববাজ হয়? নাকি তারা হিরো আলমের অবস্থা এবং অবস্থান বুঝতে অক্ষম? বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে আজ এসব প্রশ্ন দানা বেধে উঠেছে। জনসাধারণ জানতে চায়, একজন টিকটকারকে নিয়ে রাষ্ট্রদূতদের বিবৃতি কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিবৃতি বা জাতিসংঘের বিবৃতি কেন? তবে কি তারা অতি উচ্চশিক্ষিত কূটনীতিক ব্যক্তি হয়েও হিরো আলমের অবস্থা, অবস্থান বুঝতে অক্ষম? তাই হেলাল হাফিজের সেই ‘অশ্লীল সভ্যতা’ শিরোনামের কবিতাটি আজ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়, ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না!’
         
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৭ জুলাই (সোমবার)। নির্বাচন দিবসের শেষ বিকেলে কয়েকজন যুবক হিরো আলমকে ধাওয়া দেয়, মারধর করে। ধাওয়ার আগে, তারাও বলে একই কথা, ‘তুই টিকটকার, তুই টিকটক করবি, তুই ক্যান পার্লামেন্টে যাবি?’ সেদিন হিরো আলমের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত যুবকদের আরও বলতে শোনা যায়, ‘সে করে টিকটক, সে হলো জোকার, সে কেন গুলশান-বনানীর এমপি হতে চায়? এমপির মানে সে জানে?’ কেউ কেউ আবার বলছিলেন, ‘তারে খালি দৌড়ানি দে, মারধর করা লাগব না।’

তবে হিরো আলমকে মারা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ- সবাই গরম। কিন্তু হিরো আলমকে মারলো কারা? এবং কেন? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, সাততলা বস্তিতে হিরো আলমকে যারা প্রতিরোধ করেছে তারা স্থানীয় কাউন্সিলর কালা নাসিরের অনুসারী। এক সময়ে বিএনপি নেতা কালা নাসির এখন আওয়ামী লীগের তাবেদার। আর বনানীতে হিরো আলমকে যারা মেরেছে তাদের একজন মহানগর যুবদলের নেতা। হিরো আলমের ওপর আওয়ামী লীগ-বিএনপির আক্রোশের কারণ কী? এর জবাব আক্রমণকারীরা দিয়েছে- ‘তুই টিকটকার, তুই টিকটক করবি। তুই কেন নির্বাচনে যাবি?’

নির্বাচনে যাওয়াটাই হিরো আলমের কাল হয়েছে। হিরো আলম এবং বিএনপি বার বার নির্বাচনের বিরোধিতা করছে। আবার এই সরকারের আমলেই হিরো আলম ৬ বার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। হিরো আলম নিজেই বলেছে, ‘নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে শুধু বার বার মারই খাচ্ছি। এই সরকারের আধীনে আর নির্বাচন করবো না।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হিরো আলমের এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা কি সরকারকে বিব্রত, বিতর্কিত করার জন্যই নয়?   

নির্বাচন দিবসের বিকেলে কয়েকজন যুবক হিরো আলমকে মারধর করেছেন, ধাওয়া দিয়েছেন- যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা নিয়ে সে সময়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেন। চায়ের দোকান থেকে রাজনৈতিক অঙ্গন, সবখানেই আলোচনায় ওঠে এসেছে হিরো আলমকে মারধরের ঘটনা। কেউ হিরো আলমের প্রতি দয়া দেখিয়ে বলেছেন, এই কাজটি করা আওয়ামী লীগের লোকদের ঠিক হয়নি। আবার কেউ বলেছেন, বগুড়াতে নির্বাচন করাটাই হিরো আলমের জন্য ভালো ছিল, গুলশানে নির্বাচনে আসাটা তার ঠিক হয়নি। কিন্তু এ ঘটনায় যে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা হচ্ছে- হিরো আলমকে মারলো কারা? এই প্রশ্নের উত্তরও ইতিমধ্যে জানা গেছে। জানা গেছে, বনানীতে হিরো আলমকে যারা মেরেছে তাদের একজন মহানগর যুবদলের নেতা। কিন্তু বিএনপির লোকেরা হিরো আলমকে মারবে কেন? 

হিরো আলমের সাথে বিএনপির পুরনো বিরোধ। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে মির্জা ফখরুলের সাথে একই আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন হিরো আলম। সেই নির্বাচনে মির্জা ফখরুলের সমর্থকরা হিরো আলমকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছিল। কিন্তু তখন জাতিসংঘ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রদূতদের কোনো ধরনের বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি। আবার আওয়ামী লীগও চায় না হিরো আলম নির্বাচনে যাক। হিরো আলম নির্বাচনে গেলে আওয়ামী লীগে রুচির দুর্ভিক্ষ লেগে যায়। সামান্য এক কৌতুক অভিনেতা বার বার আওয়ামী লীগ-বিএনপির আতে ঘাঁ দিচ্ছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় সহজ টার্গেট হিরো আলমের ওপর আক্রমণ। কিন্তু যে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে- তা হচ্ছে হিরো আলমের উপর আক্রমণ করার ঘটনাটির সাথে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মী জড়িত নয়, তবে সেখানে গোপালগঞ্জের বেশ কয়েকজন লোক হামলার সাথে জড়িত বলে গণমাধ্যম সূত্রে তথ্য পাওয়া গেছে।  

হিরো আলম একজন কৌতুক অভিনেতা, সে কেন নির্বাচন করবে? তাঁর কৌতুকও আবার ‘মার্জিত রুচি’র বা বাইবেলধোয়া কিংবা সমাজ সচেতন নয়। উপরন্তু অনেক কৌতুক নারীবিদ্বেষী। এই রুচি নিয়ে কেন তাঁর নির্বাচন করার খায়েশ? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একজন কৌতুক অভিনেতা। তাঁর সব কৌতুক কি মার্জিত রুচির? একটু অন্তর্জালে ঢুঁ মারলেই এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। এরপরও কি এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত রাজনীতিবিদ জেলেনস্কি নন? আমাদের এই উপমহাদেশে কৌতুক অভিনেতারা কেউ নির্বাচন করেননি? ভারতের লোকসভা বা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৌতুক অভিনেতাদের নির্বাচন করার ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। সর্বশেষ ঢাকা-১৭ আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক, যিনি একজন কৌতুক অভিনেতা হিসেবে বিখ্যাত। তাহলে?

হিরো আলমের পেশা কৌতুক অভিনয় হলেও সে কিন্তু অভিনেতা পরিচয়ে রাজনীতিতে আসেনি। ২০১৬ সালে আলোচিত হওয়ার আগেই দুইবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে হিরো আলম। এর মধ্যে একবার মাত্র ৭০ ভোটে পরাজিত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে বগুড়া-৪ আসনে মাত্র ৮৩৪ ভোটে হেরে যায় হিরো আলম। অর্থাৎ অভিনয়ে পরিচিতি পাওয়ার অনেক আগে থেকেই রাজনীতির অঙ্গনে তাঁর এক ধরনের জনপ্রিয়তা ছিল। অভিনয়ের ব্যাপ্তি তাঁর জনপ্রিয়তার মাত্রাকে বাড়িয়েছে। একই সাথে যারা তাকে পছন্দ করেন না, তাদের মধ্যে সমালোচনাও বেড়েছে। নির্বাচনী প্রচারণার শেষদিনেও সাততলা বস্তিতে যান হিরো আলম। সেখানে তিনি বলেন, ‘হিরো আলম সব সময় গরীবের পক্ষে। গরীবের ভোটে আমি গরীবের নেতা হতে চাই।’ কিন্তু সাততলা বস্তির লোকেরা কি তাকে ভোট দিয়েছিলেন? ভোটের রাজনীতিতে হিরো আলম পরাস্ত। তবে কি কবি হেলাল হাফিজের কবিতা- ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না!’- এখানেও মিথ্যা প্রমাণিত যে, সাততলা বস্তির মানুষেরা মানুষ বুঝেছিল?  

নির্বাচনী রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলে গত ১৪ বছরে ৬ বার নির্বাচন করেছে হিরো আলম। ঘটনার পরিক্রমায় মনে হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সে অংশ নেবে। কে জানে- নির্বাচিত হয়ে সংসদেও বসতে পারে হিরো আলম!

হিরো আলম   উপনির্বাচন   ঢাকা-১৭  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নিউজউইকে প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধ

প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিখ্যাত আমেরিকান সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজউইকে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। যখন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিশ্ব নেতারা দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে সমবেত হয়েছেন। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নিচে দেওয়া হলো:

লেটস পুট ব্যাক পিপল অ্যাট দ্য হার্ট অফ ক্লাইমেট অ্যাকশন

জলবায়ু পরিবর্তন হল একটি বৈশ্বিক বিপর্যয় যা গরীবদের ওপর ধনীরা চাপিয়ে দেয় এবং ক্রমবর্ধমান হারে এটি তাদের নিজেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতাদের বুঝতে হবে যে তাদের টপ-ডাউন (উপর থেকে নিচে) পদ্ধতি কখনই কাজ করতে পারে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইয়ের জন্য আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং এই লড়াইয়ে তাদের অর্থায়ন করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতাদের মতদ্বৈততায় জলবায়ু বিপর্যয় থেমে থাকবে না। এর ফলে ইতোমধ্যেই জনপদের ওপর টাইফুন এবং বন্যা হচ্ছে এবং খরার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। জলবায়ু তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা লোকেদের কাছে পৌঁছায়-তাদের নিজেদের এবং জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্থান ছাড়া তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জলবায়ু অনাচার ও বৈষম্য আরও বাড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথম সারিতে থাকা মানুষকে রক্ষায় সাহায্য না করলে বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু কার্যক্রমের কোনো মানে হয় না। আমাদের স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উদ্যোগের জন্য সব প্রয়োজনীয় তহবিল দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে হস্তান্তর করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনার প্রয়োজন।

কোপ২৮ এ, বিশ্বকে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত তহবিলটি অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে হবে যাতে আমরা অবকাঠামো পুননির্মাণ এবং জলবায়ু প্রভাবগুলোর সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মুভিং ফরম গ্লোবাল টু লোকাল

গ্লাসগোতে কোপ২৬-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অভিযোজন অর্থের প্রবাহ দ্বিগুণ করে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অর্থ প্রদানকারীদের অবশ্যই ২০২২ এবং ২০২৫ এর মধ্যে বার্ষিক অভিযোজন প্রবাহ গড়ে কমপক্ষে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। তবুও অভিযোজন অর্থায়ন প্রবাহ বিকাশে দেশগুলো ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ কমে ২১.৩ বিলিয়ন হয়েছে। এই অর্থ খুবই সামান্য। তবুও এই অর্থের ৬ শতাংশেরও কম, এবং সম্ভবত ২ শতাংশের কম স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পগুলোতে পৌঁছায়। সঠিকভাবে ট্র্যাকিং এবং অর্থ প্রবাহের প্রতিবেদন না করার কারণে অনুমান পরিবর্তিত হয়-এবং এটির উন্নতি করা দরকার। এর কারণ জলবায়ু নীতি-কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ওপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয়।

কোনো শহর, রাস্তা, মাঠ এবং বাড়ি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা যারা জানে তারাই সেখানে বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাদের একত্রিত হতে এবং তাদের নিজস্ব প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং ক্ষমতায়িত করতে হবে।

এটি বলা সহজ, করা কঠিন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রায়শই সময় এবং দক্ষতার অভাব হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য তাদের সাহায্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন এবং তহবিল সুবিধা নেওয়ার জন্য তাদের মৌলিক জিনিসগুলোর প্রয়োজন যেমন- আইনিভাবে গঠিত সংস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

বাংলাদেশ সবসময়ই স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজনে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে এবং সম্প্রতি সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু সহায়তা পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অভিযোজনের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা সহজ করে তোলে, অভিযোজনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল রয়েছে, সবুজ ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলো প্রসারিত করে এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলোর জন্য অর্থপ্রদানকারী সম্প্রদায়গুলোকে অন্বেষণ করে।

ঢাকায় গ্লোবাল হাব অন লোকালি লিড অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে সরকার সমাধান জোরদারে এবং বিশ্বের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে সহায়তা করছে। এই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

চ্যালেঞ্জ থেকে সম্ভাবনা

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলায়, মেয়র এবং বাসিন্দারা তাদের জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। অন্যান্য বড় শহরগুলোর মতো, মংলা জলবায়ু অভিবাসীদের একটি বড় আগমন দেখেছে যদিও এটি ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলস্বরূপ-শহরের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকে দূষিত হচ্ছে। মংলা জনবসতির মানচিত্র তৈরি করছে, জলবায়ুর প্রধান দুর্বলতা চিহ্নিত করছে এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের উন্নয়ন করছে। ব্র্যাক, একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং এটি যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সরকারের সহায়তায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। এটি আশা করা যায় যে মংলার জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া অন্যান্য শহর ও শহরগুলোর জন্য একটি ব্লুপ্রিন্ট হয়ে উঠতে পারে।

এটি আমাদের দেখায় যে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনই এগিয়ে যাওয়ার পথ। কিন্তু আমাদের এই পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে জোরদার করতে হবে। এজন্য দাতাদের জন্য অযাচিত ঝুঁকি তৈরি না করে আমাদের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে অর্থায়ন করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাগুলোসহ বৃহৎ অর্থদাতাদের পোর্টফোলিওতে জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি ট্রান্সমিশন বেল্ট হিসাবে কাজ করার জন্য শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলো এখানে মূল্যবান হতে পারে।

কোপ২৮ তখনই সফল হবে যখন এটি জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির জন্য প্রকৃত সুবিধা অর্জন করবে। এই বছরের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র সম্প্রদায়ের কাছে অর্থ প্রবাহ এবং স্থানীয় ভাবে নেতৃত্ব, উপযুক্ত এবং কার্যকর অভিযোজন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি এটি অর্জন করতে পারি, তাহলে সেটি হবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর অবিচার প্রতিকারের একটি বড় পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন কমিশন কেন বিতর্কিত হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশনও বারবার বলছিল যে, তারা স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোনো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন এটিও বলেছিল যে, তারা ২০১৮ এর মতো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা আস্থা রাখতে চাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ তারা করতে পারেন কিনা তা দেখতে হবে। 

আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হিসেবেই তারা রায় দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের যে কর্মকাণ্ডগুলো তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত কতটুকু নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। কারণ নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা দরকার, সেই ভূমিকা তারা এখন পর্যন্ত রাখতে পারছেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। যেমন নির্বাচন যে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে সেই মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় ৯০ ভাগ প্রার্থী আচরণবিধি মানেননি। অথচ নির্বাচন কমিশন মাত্র কয়েক হাতে গোনা কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এই সমস্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই এবং এবার এমন একটি নির্বাচন ঘটছে যে নির্বাচনে আর যাই হোক আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই নির্বাচন কমিশনের সামনে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার। কিন্তু সেই সুযোগ কমিশন কাজে লাগাতে পারছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। 

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এখন কোন প্রার্থীর প্রচার না করার কথা নয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীরা নানা রকম প্রচারণা করছে, শোডাউন করছে। অনেক স্থানেই দেখা যাচ্ছে রঙিন পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এই সমস্ত ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনে আচরণবিধির লঙ্ঘন। অথচ এই জায়গায় নির্বাচন কমিশন কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কুণ্ঠিত, কেন কমিশন বলিষ্ঠ হতে পারছে না, সেই প্রশ্নটি বিভিন্ন মহলে উঠেছে। 

বিএনপি সহ কয়েকটি বিরোধী দল শুরু থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তারা বলছিল যে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ এবং ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সব সময় বলছিল যে তারা কারও আজ্ঞাবহ নয়। বরং স্বাধীনভাবে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়া পর্যন্ত সময়ে নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আর এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলো এখন আগামী নির্বাচনে কমিশন কতটুকু বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। আর নির্বাচন কমিশন যদি একবার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, নির্বাচন কমিশন নিয়ে যদি একবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। কারণ নির্বাচন কমিশনের একটি শক্ত দৃশ্যমান এবং শক্তিশালী অবস্থান আন্তর্জাতিক মহল দেখতে চায়। সেরকম একটি অবস্থান যদি কমিশন তৈরি করতে না পারে তাহলে কমিশনই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


নির্বাচন কমিশন   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

৩০০ আসনের বিপরীতে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী

প্রকাশ: ০৬:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এই তথ্য জানান।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে ৩০৩টি। পাঁচটি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ২৮৬টি আসনে ৩০৪টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ১৮টি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে।

অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮টি, তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি ১৪২টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফোরাম-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ৪৯টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন-বিটিএফ (ফুলের মালা) ৪৭টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯টি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

এ ছাড়াও গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫টি, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩টি, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২টি গণফোরাম উদীয়মান (সূর্য) ৯টি, সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ম্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত [পাঞ্জা]) পাঁচটি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (খেজুর গাছ) একটি, খিলাফত মজলিস (রিকশা) একটি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।

এদিকে বিএনপিসহ (ধানের শীষ) নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা), সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (কোদাল), খিলাফত মজলিস (দেয়াল ঘড়ি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (সিংহ), ইনসানীয়ত বিপ্লব বাংলাদেশ (আপেল), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (মোটরগাড়ি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (গরুর গাড়ি) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্মি পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী) নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   স্বতন্ত্র প্রার্থী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

স্বতন্ত্র বিপ্লব হবে এবার নির্বাচনে

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় যে, ২৭৪১ জন এবার নির্বাচনে তিনশ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯৮ জন। আর অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএসপির প্রার্থী সব মিলিয়ে ৩১০ জন। জাতীয় পার্টি জমা দিয়েছে ২৭০ জনের মতো। আর বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের-ই প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী আছে এবং তারা নির্বাচনে শক্ত লড়াই করবেন সেটি নিশ্চিত। 

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এত সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনও নির্বাচন করেনি। এর ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তিনশ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তার সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। যারা এলাকায় পরিচিত, জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, প্রচারণা অব্যাহত রেখেছিলেন। যে ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য আছেন ৬৩ জন। ফলে এই সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এলাকায় আলাদা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তাদের একটি আলাদা অবস্থান হবে। অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছিলেন তারাও এবারের নির্বাচনের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। 

বিভিন্ন হিসাব করে দেখা গেছে যে, একশটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপর্যয় ঘটতে পারে। আরও অন্তত ৩০ টি আসন চিহ্নিত করা গেছে যে সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মত বিরোধের কারণে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে। আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের ফলে ভোট কাটা যাবে আওয়ামী লীগের। তখন অন্য কোন দলের প্রার্থী বা অন্য কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারে। ফলে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগের ইতোমধ্যেই ১৩০ টি আসন ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এ কারণেই এবারের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর আনন্দমুখর পরিবেশে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই এবার নির্বাচনে ভোট আনার ক্ষেত্রে প্রধান বাহনে পরিণত হবে। তারাই যেন অধিক সংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসে সেজন্য চেষ্টা করবে। তবে শঙ্কা অন্য জায়গায়, তা হল আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের এই লড়াইয়ে যদি কোন এক পক্ষ নির্বাচনে কারচুপি করতে চায় বা প্রভাবিত করতে চয়, প্রশাসন মদদ দেয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ উভয়পক্ষই প্রভাবশালী এবং উভয় পক্ষই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

প্রকাশ: ০৪:৩৫ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

গ্যাসের পাইপলাইন প্রতিস্থাপন কাজের জন্য শনিবার (২ ডিসেম্বর) কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মোট ৬ ঘণ্টা টঙ্গী, ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পশ্চিম পার্শ্ব আব্দুল্লাহপুর থেকে বোর্ড-বাজার পর্যন্ত সব শ্রেণির গ্রাহকদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এছাড়া আশেপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করবে।

গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে তিতাস কর্তৃপক্ষ।  

গ্যাস   তিতাস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন