ইনসাইড বাংলাদেশ

শেখ হাসিনাই ছিলেন প্রধান টার্গেট!


Thumbnail শেখ হাসিনাই ছিলেন প্রধান টার্গেট!

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একটি ভয়াল হামলার ঘটনা অত্যন্ত বিরল! এমন নৃশংশতম হত্যাকাণ্ড, লাখো লাখো মানুষের জীবনের ইতিকথার চিহ্ন এঁকে দেয়া, এমন ভয়াল হামলার ঘটনা খুব একটা আছে বলে আমার মনে হয় না। যুদ্ধে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। এক পক্ষ অন্য পক্ষের মানুষদের হত্যা করে। প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে, বাংলাদেশের বা ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধে, রাশিয়া, চীন, আলজেরিয়ার কমিউনিস্ট যুদ্ধসহ বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা কিংবা গোত্রীয় যুদ্ধে অগণিত মানুষের মৃত্যু হয়। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে একটি স্বাধীন রাজনৈতিক দলীয় প্রধান এবং বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমাবেশে প্রকাশ্য দিবালোকে ধরনের নৃশংসতম হত্যার হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে নেই!

কিন্তু কেমন হত্যাকাণ্ড? কেমন নারকীয় হামলা?- জাতির কাছে এখনও প্রশ্নের পর প্রশ্ন জাগ্রত হতে থাকে আবডালে, অন্তরালে, প্রকাশ্যে। প্রশ্ন ওঠে, কেমন নৃশংসতম ভয়ানক হামলা? কেমন সেই রাষ্ট্র? কেমন সেই রাষ্ট্র্র প্রধান? কেমন সেই রাষ্ট্রের জননিরাপত্তা ব্যবস্থা? - এই মাতৃতূল্য স্বাধীন বাংলাদেশটা একটি সময় এমনই সন্ত্রাসের রাজত্বে ভয়ানক মৃত্যুর হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল। ওই মৃত্যুর হোলি খেলার একটি ভয়ানক, বিভিষিকাময়, ভয়াল দিন ২১ আগস্ট। 

আজ ভয়াল ২১শে আগস্ট। রক্তাক্ত বিভীষিকাময় ২১ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। আজ ২১ আগস্ট (সোমবার) নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ১৯তম বার্ষিকী। ২০০৪ সালের এই দিনে (২১ অগাস্ট) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়।    

গ্রেনেড হামলার ঘটনা প্রবাহ

২০০৪ সাল, তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার। সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে  ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দুর্নীতি বিরোধী’- শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। আজকের প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন। সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সমাবেশের আগে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে স্থাপিত অস্থায়ী ট্রাকমঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরপরই তাকে লক্ষ্য করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা শুরু হয়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে থাকে একের পর এক গ্রেনেড।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই মুহুর্মুহু ১৩টি গ্রেনেড বিস্ফোরণের বীভৎসতায় মুহূর্তেই মানুষের রক্ত-মাংসের স্তুপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। স্পিন্টারের আঘাতে মানুষের হাত-পাসহ বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে। সভামঞ্চ ট্রাকের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় রক্তাক্ত নিথর দেহ। লাশ আর রক্তে ভেসে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনের পিচঢালা পথ। নিহত-আহতদের জুতা-স্যান্ডেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। বাতাসে ভেসে আসে শত শত মানুষের গগন বিদারী আর্তচিৎকার। বেঁচে থাকার প্রাণপণ চেষ্টারত মুমূর্ষুদের কাতর-আর্তনাদসহ অবর্ণনীয় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য।

পরে জানা গেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়ে ঘাতকরা যে গ্রেনেড ব্যবহার করেছিল, সেটি হচ্ছেআর্জেস গ্রেনেড’, যে গ্রেনেডগুলো একমাত্র পাকিস্তানেই উৎপাদন এবং ব্যবহার করা হয়। হামলাকারী খুনি চক্রের হামলায় ধরনের গ্রেনেড ব্যবহারের জন্য- তা অবশ্যই পাকিস্তান থেকেই আনতে হয়েছিল।  

প্রধান টার্গেট শেখ হাসিনা

সেদিন রাজধানীর প্রতিটি হাসপাতালে আহতদের তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঐশ্বরিক কৃপায় নারকীয় গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। ঘাতকদের প্রধান লক্ষ্য শেখ হাসিনা বেঁচে গেছেন দেখে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে ১২ রাউন্ড গুলি করা হয়। তবে টার্গেট করা গুলি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভেদ করতে পারেনি। হামলার পরপরই শেখ হাসিনাকে মানবঢালের ব্যারিকেট দিয়ে ঘিরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর তৎকালীন বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদনে। ওই দিন ২১ আগস্টের রক্তাক্ত ঘটনায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। পরে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ জনে।

রক্তাক্ত-বীভৎস ওই ভয়াল গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমান ছাড়াও সেদিন নিহত হন ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মোশতাক আহমেদ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম, জাহেদ আলী, মোতালেব সুফিয়া বেগম।

গ্রেনেডের স্পিন্টারের সঙ্গে লড়াই করে ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফসহ আরও কয়েকজন পরাজিত হন। হামলায় আওয়ামী লীগের চার শতাধিক নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে আজও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আহত হয়েছিলেন বিভিন্ন প্রিন্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা। এখনও অনেক নেতাকর্মী সেদিনের সেই গ্রেনেডের স্পিন্টারের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। অনেক নেতাকর্মীকে তাৎক্ষণিক দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করালেও তারা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

এদিকে গ্রেনেড হামলার পর ভয়, শঙ্কা ত্রাস গ্রাস করে ফেলে গোটা রাজধানী ঢাকাকে। এই গণহত্যার উত্তেজনা শোক আছড়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। হামলার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজে বাঁচতে অন্যদের বাঁচাতে যখন ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঠিক তখনই পুলিশ বিক্ষোভ মিছিলের ওপর বেধড়ক লাঠি-টিয়ারশেল চার্জ করে। একই সঙ্গে নষ্ট করা হয় সেই রোমহর্ষক ঘটনার যাবতীয় আলামত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যক্ষ মদদে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতেজজ মিয়ানাটক সাজায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।


জজ মিয়া নাটক

নৃশংসতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার মোড় ভিন্ন দিকে নিতে সাজানো হয়েছিলজজ মিয়া নাটক। কারা ফেঁদেছিলেন এই নাটক? যাকে জজ মিয়া সাজানো হয়েছিল, সেই মো. জালাল নিজেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা আর সিআইডি আমাকে জজ মিয়া বানিয়েছিল। আমার চোখের সামনেই তো আমি জজ মিয়া হয়ে গেলাম।

জজ মিয়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সূত্রে জানা গেছে, গ্রেনেড হামলার পরদিন ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরে মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর তড়িঘড়ি করে মামলা দুটি হস্তান্তর করেন সিআইডি পুলিশের কাছে। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান জোট সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান। ২০০৫ সালের জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো. জালালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় আনা হয়। তাকে জজ মিয়া নাম দিয়ে মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে সাজানো হয়জজ মিয়া নাটক

দিনমজুর জজ মিয়াকে তার পুরো পরিবারের আজীবন ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার লোভ দেখায় সিআইডি। প্রস্তাবে রাজি হননি জজ মিয়া। এরপর জজ মিয়ার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। সিআইডির কথামতো না চললে জজ মিয়াকে ফাঁসিতে ঝুলানোর ভয় দেখানো হয়। এতেও রাজি না হলে তাকে চোখ বেঁধে অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার প্রস্তুতি নেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যান জজ মিয়া। শেষ পর্যন্ত জজ মিয়া সিআইডির প্রস্তাবে রাজি হন। তার পরিবারকে আজীবন ভরণপোষণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন সিআইডি কর্মকর্তা তৎকালীন এএসপি মুন্সী আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ এবং এসপি রুহুল আমিন। সিআইডির এই তিন কর্মকর্তাই জজ মিয়া নাটক ফেঁদেছিলেন বলে জানা গেছে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে পুরো ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়। বেঁকে বসেন জজ মিয়া। ফাঁস করে দেন আসল ঘটনা। নতুন করে তদন্ত শুরু হয়। সে সময় তদন্তে হুজি নেতা মুফতি হান্নান এবং তার সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে আদালতের সম্মতিতে সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ এর দায়িত্ব পান। অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে কিভাবে তৎকালীন সরকার এই নৃসংশ ঘটনা ঘটাতে ক্ষমতার কেন্দ্রকে ব্যবহার করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় সকলের কাছেই খটকা লাগতে থাকে যে কেবলমাত্র মুফতি হান্নানসহ তার সংগঠনকে আড়াল করাই তৎকালীন সরকারের উদ্দেশ্য ছিল না; বরং মূল উদ্দেশ্য ছিল আসল হোতাদের আড়াল করা।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা হামলা

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী-হুজির জঙ্গিরা। মুফতি হান্নানের নির্দেশনায় ওই আক্রমণে সরাসরি অংশ নেয় প্রশিক্ষিত ১২ জঙ্গি। হামলায় মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হন। আহত হয় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ প্রায় তিন নেতা-কর্মী-সমর্থক। নারকীয় ওই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তত্কালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু। পিন্টুর ভাই হুজি নেতা মাওলানা তাজউদ্দিন এই আক্রমণের জন্য আর্জেস গ্রেনেড সরবরাহ করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডি সূত্রগুলো জানায়, মুফতি আবদুল হান্নানসহ গ্রেপ্তার হওয়া তাঁর ভাই হুজি নেতা মফিজুর রহমান ওরফে অভি, আবুল কালাম আজাদ বুলবুল (ঝিনাইদহ), শরিফ শহিদুল ইসলাম ওরফে বিপুল (সিলেট), মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডা. আবু জাফর (গফরগাঁও), জাহাঙ্গীর আলম (কুষ্টিয়া), হোসাইন আহমেদ ওরফে তামীম (ঝিনাইদহ), আরিফ হাসান ওরফে সুমন (ঢাকা), রফিকুল ইসলাম গাজী ওরফে সবুজকে (মাগুরা) জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া তাঁদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি অন্যান্য তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সিআইডি নিশ্চিত হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল ওই আক্রমণের মূল লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এটা ছিল আওয়ামী লীগের ওপর সবচেয়ে পরিকল্পিত বড় আঘাত।

রাজধানীর বনানীর ১৩ নম্বর সড়কের হাওয়া ভবন, মামলার অন্যতম আসামি জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নানের বাড্ডার বাসা, আসামি আহসানউল্লাহ কাজলের মেরুল বাড্ডার ভাড়া বাসা, মিরপুরের মসজিদ- আকবর, আসামি সুমনের মোহাম্মদপুরের বাসা, তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারেরর উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডির সরকারি বাসাসহ আটটি স্থানে বৈঠক করে ২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র রচিত হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

আদালতে মুফতি হান্নান বলেছেন, এর আগে ওই দিনই তিনি তখনকার উপমন্ত্রী পিন্টুর ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা আবু তাহেরও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে মাওলানা তাজউদ্দিন আক্রমণের জন্য তাঁর কাছে গ্রেনেড হস্তান্তর করেন এবং পিন্টু ২০ হাজার টাকা দেন মুফতি আহসান উল্লাহ কাজলের হাতে।

হামলার আগের দিন ২০ আগস্ট কাজল আবু জান্দাল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে গিয়ে এলাকা পর্যবেক্ষণ (রেকি) করে আসেন। ২১ আগস্ট সকালে একই বাসায় উল্লিখিত সবাই এবং হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিতরা একত্র হন। সিদ্ধান্ত হয়, মোট ১২ জন হামলায় অংশ নেবে। এতে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন কাজল আবু জান্দাল। এরপর বাড্ডার ওই বাসায় তাঁরা সবাই একসঙ্গে জোহরের নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খান। সেখানে তাঁরা সর্বশেষ বৈঠক করেন। মাওলানা সাইদ জিহাদবিষয়ক বয়ান করেন। তারপর মুফতি হান্নান হামলার জন্য নির্বাচিত ১২ জনের হাতে ১৫টি গ্রেনেড তুলে দেন।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আসরের নামাজের সময়ে সবাই যার যার মতো গিয়ে গোলাপ শাহ মাজারের কাছে মসজিদে মিলিত হয়। সেখান থেকে তারা সমাবেশে মঞ্চ হিসেবে ব্যবহূত ট্রাকটির চারপাশে অবস্থান নেয়। শেখ হাসিনার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর পর আবু জান্দাল প্রথম গ্রেনেড ছুড়ে মারেন। তারপর অন্যরা একে একে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে যার যার মতো এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের পর এটিকেই সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ, যেখানে দিনের আলোতে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারের ছত্রছায়ায় পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে সুপরিকল্পিত উপায়ে ঘটানো হয় নৃসংশ এই ঘটনা। দীর্ঘ ১৪ বছর অপেক্ষার অবসান ঘটেছে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায়ের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে আরেকটি কলঙ্ক মোচনের দিন হিসেবে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কুশীলবের ভূমিকায় থাকা তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দীনসহ ১৯ জনের প্রাণদণ্ডের রায় এসেছে।

তৎকালীন সরকারের নেপথ্য চালক এবং হাওয়া ভবনে বসে সরকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা তারেক রহমান এবং সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। এই মামলার মোট আসামি ছিল ৫২ জন। এদের মধ্যে অন্য মামলায় জনের মৃত্যুদণ্ড কর্যকর হওয়াতে আসামির সংখ্যা ৪৯।

মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছে ৩৮ জন। বাকি ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। এর আগে যখন ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয় তখন ২২ জনকে আসামি করে চার্জশিট দেয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হলে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি কর্মকর্তা আব্দুল কাহহার আকন্দ আরও অধিকতর তদন্তের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরলে আদালতের সম্মতি পান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গভীরভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সুন্দরভাবে এই ঘটনার নেপথ্যের চালকদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।

২০১১ সালে সম্পূরক চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত হওয়া ৩০ জনের সবাই এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে বাবর, পিন্টু, তারেক, হারিছসহ অনেকের মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজার মত রায় এসেছে। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে এই মামলা নিঃসন্দেহে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। যদি এমনটা না করা হতো তাহলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আসামি এই মামলা থেকে ছিটকে পড়ত এবং আইনের শাসনেও ছেদ পড়ত।

কিন্তু ইতিহাসের ভয়াবহতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনার ১৯ বছর পার হতে চললেও, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ওই ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলা এখনও হাইকোর্টে ঝুলছে। যদিও বিচারিক আদালত ২০১৮ সালে মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তা শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই ভয়াল, নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার ডেথ রেফারেন্স আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও পেপারবুক পড়া শেষ হয়নি। ফলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স অন্যান্য আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় রায় কার্যকর করা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, দ্রুতই শেষ হবে মামলার আপিল ডেথ রেফারেন্স শুনানি। যার মাধ্যমে চলতি বছরই হাইকোর্ট থেকে রায় ঘোষণার প্রত্যাশা করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ।

২১ আগস্ট স্মরণে

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১১ টা ১৫ মিনিটে ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


শেখ হাসিনা   ২১ আগস্ট   গ্রেনেড হামলা   প্রধান টার্গেট  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ভোটের আগে সব থানার ওসি বদলি

প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থানার ওসিদের বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পর্যায়ক্রমে তাদের বদলির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে কমিশন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের নিমিত্তে সব থানার ওসিদের পর্যায়ক্রমে বদলি করার জন্য নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এ লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে যেসব থানার ওসিদের বর্তমান কর্মস্থলে ০৬ মাসের অধিক চাকরিকাল সম্পন্ন হয়েছে তাদের অন্য জেলায় বা অন্যত্র বদলির প্রস্তাব আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করা প্রয়োজন।

চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককেও পাঠানো হয়েছে।

থানার ওসি   বদলি   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নিউজউইকে প্রধানমন্ত্রীর নিবন্ধ

প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিখ্যাত আমেরিকান সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিন নিউজউইকে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের সিইও প্যাট্রিক ভারকুইজেনের সঙ্গে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। যখন বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উপায় খুঁজে বের করার জন্য বিশ্ব নেতারা দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে সমবেত হয়েছেন। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে নিচে দেওয়া হলো:

লেটস পুট ব্যাক পিপল অ্যাট দ্য হার্ট অফ ক্লাইমেট অ্যাকশন

জলবায়ু পরিবর্তন হল একটি বৈশ্বিক বিপর্যয় যা গরীবদের ওপর ধনীরা চাপিয়ে দেয় এবং ক্রমবর্ধমান হারে এটি তাদের নিজেদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। দুবাইতে কোপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের জন্য আমন্ত্রিত বিশ্ব নেতাদের বুঝতে হবে যে তাদের টপ-ডাউন (উপর থেকে নিচে) পদ্ধতি কখনই কাজ করতে পারে না। বরং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার লড়াইয়ের জন্য আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদেরকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং এই লড়াইয়ে তাদের অর্থায়ন করতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতাদের মতদ্বৈততায় জলবায়ু বিপর্যয় থেমে থাকবে না। এর ফলে ইতোমধ্যেই জনপদের ওপর টাইফুন এবং বন্যা হচ্ছে এবং খরার কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষুধা ছড়িয়ে পড়ছে। জলবায়ু তহবিলের একটি ক্ষুদ্র অংশই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা লোকেদের কাছে পৌঁছায়-তাদের নিজেদের এবং জীবিকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্থান ছাড়া তারা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। জলবায়ু অনাচার ও বৈষম্য আরও বাড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্তদের প্রথম সারিতে থাকা মানুষকে রক্ষায় সাহায্য না করলে বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু কার্যক্রমের কোনো মানে হয় না। আমাদের স্থানীয়ভাবে পরিচালিত জলবায়ু-স্থিতিস্থাপক উদ্যোগের জন্য সব প্রয়োজনীয় তহবিল দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে হস্তান্তর করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য নতুন চিন্তাভাবনা এবং একটি নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনার প্রয়োজন।

কোপ২৮ এ, বিশ্বকে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত তহবিলটি অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে কার্যকর হতে হবে যাতে আমরা অবকাঠামো পুননির্মাণ এবং জলবায়ু প্রভাবগুলোর সঙ্গে আরও কার্যকরভাবে খাপ খাইয়ে নিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। এটি জলবায়ু ন্যায়বিচারের প্রতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

মুভিং ফরম গ্লোবাল টু লোকাল

গ্লাসগোতে কোপ২৬-এর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অভিযোজন অর্থের প্রবাহ দ্বিগুণ করে ৪০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অর্থ প্রদানকারীদের অবশ্যই ২০২২ এবং ২০২৫ এর মধ্যে বার্ষিক অভিযোজন প্রবাহ গড়ে কমপক্ষে ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। তবুও অভিযোজন অর্থায়ন প্রবাহ বিকাশে দেশগুলো ২০২১ সালে ১৫ শতাংশ কমে ২১.৩ বিলিয়ন হয়েছে। এই অর্থ খুবই সামান্য। তবুও এই অর্থের ৬ শতাংশেরও কম, এবং সম্ভবত ২ শতাংশের কম স্থানীয় সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে জলবায়ু-স্থিতিস্থাপকতা প্রকল্পগুলোতে পৌঁছায়। সঠিকভাবে ট্র্যাকিং এবং অর্থ প্রবাহের প্রতিবেদন না করার কারণে অনুমান পরিবর্তিত হয়-এবং এটির উন্নতি করা দরকার। এর কারণ জলবায়ু নীতি-কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ওপর থেকে নিচে প্রবাহিত হয়।

কোনো শহর, রাস্তা, মাঠ এবং বাড়ি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তা যারা জানে তারাই সেখানে বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই তাদের একত্রিত হতে এবং তাদের নিজস্ব প্রকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং ক্ষমতায়িত করতে হবে।

এটি বলা সহজ, করা কঠিন। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পগুলো পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রায়শই সময় এবং দক্ষতার অভাব হয়। প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করার জন্য তাদের সাহায্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন এবং তহবিল সুবিধা নেওয়ার জন্য তাদের মৌলিক জিনিসগুলোর প্রয়োজন যেমন- আইনিভাবে গঠিত সংস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।

বাংলাদেশ সবসময়ই স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন জলবায়ু অভিযোজনে একটি শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে এবং সম্প্রতি সরকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে জলবায়ু সহায়তা পৌঁছানোর বিভিন্ন উপায় অন্বেষণ করছে। মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা অভিযোজনের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা সহজ করে তোলে, অভিযোজনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সম্প্রদায় এবং স্থানীয় সরকারগুলোকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল রয়েছে, সবুজ ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলো প্রসারিত করে এবং বাস্তুতন্ত্র পরিষেবাগুলোর জন্য অর্থপ্রদানকারী সম্প্রদায়গুলোকে অন্বেষণ করে।

ঢাকায় গ্লোবাল হাব অন লোকালি লিড অ্যাডাপ্টেশনের মাধ্যমে সরকার সমাধান জোরদারে এবং বিশ্বের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে সর্বোত্তম অনুশীলন বিনিময় করতে সহায়তা করছে। এই প্রচেষ্টা ইতোমধ্যেই মাঠ পর্যায়ে নাটকীয় সাফল্য অর্জন করেছে।

চ্যালেঞ্জ থেকে সম্ভাবনা

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মংলায়, মেয়র এবং বাসিন্দারা তাদের জলবায়ু চ্যালেঞ্জের মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ চিহ্নিত করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করছে। অন্যান্য বড় শহরগুলোর মতো, মংলা জলবায়ু অভিবাসীদের একটি বড় আগমন দেখেছে যদিও এটি ক্রমবর্ধমান সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে লড়াই করছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলস্বরূপ-শহরের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহকে দূষিত হচ্ছে। মংলা জনবসতির মানচিত্র তৈরি করছে, জলবায়ুর প্রধান দুর্বলতা চিহ্নিত করছে এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের উন্নয়ন করছে। ব্র্যাক, একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এবং এটি যুক্তরাজ্য এবং কানাডার সরকারের সহায়তায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেশনের মাধ্যমে কাজ করছে। এটি আশা করা যায় যে মংলার জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া অন্যান্য শহর ও শহরগুলোর জন্য একটি ব্লুপ্রিন্ট হয়ে উঠতে পারে।

এটি আমাদের দেখায় যে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজনই এগিয়ে যাওয়ার পথ। কিন্তু আমাদের এই পদ্ধতিগুলো ব্যাপকভাবে জোরদার করতে হবে। এজন্য দাতাদের জন্য অযাচিত ঝুঁকি তৈরি না করে আমাদের স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে অর্থায়ন করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থাগুলোসহ বৃহৎ অর্থদাতাদের পোর্টফোলিওতে জনগণের অভিযোজন পরিকল্পনাগুলোকে ত্বরান্বিত করার জন্য একটি ট্রান্সমিশন বেল্ট হিসাবে কাজ করার জন্য শক্তিশালী মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলো এখানে মূল্যবান হতে পারে।

কোপ২৮ তখনই সফল হবে যখন এটি জলবায়ু সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটির জন্য প্রকৃত সুবিধা অর্জন করবে। এই বছরের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র সম্প্রদায়ের কাছে অর্থ প্রবাহ এবং স্থানীয় ভাবে নেতৃত্ব, উপযুক্ত এবং কার্যকর অভিযোজন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যদি এটি অর্জন করতে পারি, তাহলে সেটি হবে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর অবিচার প্রতিকারের একটি বড় পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন কমিশন কেন বিতর্কিত হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশনও বারবার বলছিল যে, তারা স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোনো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন এটিও বলেছিল যে, তারা ২০১৮ এর মতো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা আস্থা রাখতে চাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ তারা করতে পারেন কিনা তা দেখতে হবে। 

আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ হিসেবেই তারা রায় দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশনের যে কর্মকাণ্ডগুলো তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত কতটুকু নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে। কারণ নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখা দরকার, সেই ভূমিকা তারা এখন পর্যন্ত রাখতে পারছেন না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। যেমন নির্বাচন যে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে সেই মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময় ৯০ ভাগ প্রার্থী আচরণবিধি মানেননি। অথচ নির্বাচন কমিশন মাত্র কয়েক হাতে গোনা কয়েকজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এই সমস্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই এবং এবার এমন একটি নির্বাচন ঘটছে যে নির্বাচনে আর যাই হোক আওয়ামী লীগের পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই নির্বাচন কমিশনের সামনে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছিল যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার। কিন্তু সেই সুযোগ কমিশন কাজে লাগাতে পারছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। 

নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী এখন কোন প্রার্থীর প্রচার না করার কথা নয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীরা নানা রকম প্রচারণা করছে, শোডাউন করছে। অনেক স্থানেই দেখা যাচ্ছে রঙিন পোস্টারে ছেয়ে গেছে। এই সমস্ত ঘটনাগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনে আচরণবিধির লঙ্ঘন। অথচ এই জায়গায় নির্বাচন কমিশন কেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে কুণ্ঠিত, কেন কমিশন বলিষ্ঠ হতে পারছে না, সেই প্রশ্নটি বিভিন্ন মহলে উঠেছে। 

বিএনপি সহ কয়েকটি বিরোধী দল শুরু থেকেই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে। তারা বলছিল যে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতপূর্ণ এবং ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সব সময় বলছিল যে তারা কারও আজ্ঞাবহ নয়। বরং স্বাধীনভাবে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায়। কিন্তু মনোনয়ন জমা দেওয়া পর্যন্ত সময়ে নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আর এর ফলে পশ্চিমা দেশগুলো এখন আগামী নির্বাচনে কমিশন কতটুকু বলিষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। আর নির্বাচন কমিশন যদি একবার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, নির্বাচন কমিশন নিয়ে যদি একবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের আস্থা নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা সঙ্কটে পড়বে। কারণ নির্বাচন কমিশনের একটি শক্ত দৃশ্যমান এবং শক্তিশালী অবস্থান আন্তর্জাতিক মহল দেখতে চায়। সেরকম একটি অবস্থান যদি কমিশন তৈরি করতে না পারে তাহলে কমিশনই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


নির্বাচন কমিশন   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

৩০০ আসনের বিপরীতে ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী

প্রকাশ: ০৬:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ এই তথ্য জানান।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে মোট মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে ৩০৩টি। পাঁচটি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদল জাতীয় পার্টি ২৮৬টি আসনে ৩০৪টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ১৮টি আসনে তাদের দুজন করে প্রার্থী রয়েছে।

অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮টি, তৃণমূল বিএনপি ১৫১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি ১৪২টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১১৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৮২টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফোরাম-বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম ৪৯টি, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন-বিটিএফ (ফুলের মালা) ৪৭টি, ইসলামী ঐক্যজোট ৪৫টি, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯টি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি) ৩৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে।

এ ছাড়াও গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫টি, জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৩টি, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২টি গণফোরাম উদীয়মান (সূর্য) ৯টি, সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ম্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল (হাত [পাঞ্জা]) পাঁচটি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুটি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (খেজুর গাছ) একটি, খিলাফত মজলিস (রিকশা) একটি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল একটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।

এদিকে বিএনপিসহ (ধানের শীষ) নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা), সিপিবি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (কোদাল), খিলাফত মজলিস (দেয়াল ঘড়ি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (সিংহ), ইনসানীয়ত বিপ্লব বাংলাদেশ (আপেল), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (মোটরগাড়ি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি (গরুর গাড়ি) এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল আর্মি পার্টি বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী) নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন   স্বতন্ত্র প্রার্থী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

স্বতন্ত্র বিপ্লব হবে এবার নির্বাচনে

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৩


Thumbnail

এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় যে, ২৭৪১ জন এবার নির্বাচনে তিনশ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯৮ জন। আর অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএসপির প্রার্থী সব মিলিয়ে ৩১০ জন। জাতীয় পার্টি জমা দিয়েছে ২৭০ জনের মতো। আর বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের-ই প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী আছে এবং তারা নির্বাচনে শক্ত লড়াই করবেন সেটি নিশ্চিত। 

বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে এত সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী কখনও নির্বাচন করেনি। এর ফলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তিনশ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ যে ২৯৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে তার সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। যারা এলাকায় পরিচিত, জনপ্রিয় এবং দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, প্রচারণা অব্যাহত রেখেছিলেন। যে ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের মধ্যে সংসদ সদস্য আছেন ৬৩ জন। ফলে এই সংসদ সদস্যরা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এলাকায় আলাদা প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। তাদের একটি আলাদা অবস্থান হবে। অন্যদিকে যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ছিলেন তারাও এবারের নির্বাচনের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। 

বিভিন্ন হিসাব করে দেখা গেছে যে, একশটি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের হুমকি হতে পারে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপর্যয় ঘটতে পারে। আরও অন্তত ৩০ টি আসন চিহ্নিত করা গেছে যে সমস্ত আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মত বিরোধের কারণে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে। আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের ফলে ভোট কাটা যাবে আওয়ামী লীগের। তখন অন্য কোন দলের প্রার্থী বা অন্য কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয়ী হতে পারে। ফলে এবারের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগের ইতোমধ্যেই ১৩০ টি আসন ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আর এ কারণেই এবারের নির্বাচন শেষ পর্যন্ত উৎসবমুখর আনন্দমুখর পরিবেশে এবং উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই এবার নির্বাচনে ভোট আনার ক্ষেত্রে প্রধান বাহনে পরিণত হবে। তারাই যেন অধিক সংখ্যক ভোটার ভোট কেন্দ্রে আসে সেজন্য চেষ্টা করবে। তবে শঙ্কা অন্য জায়গায়, তা হল আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের এই লড়াইয়ে যদি কোন এক পক্ষ নির্বাচনে কারচুপি করতে চায় বা প্রভাবিত করতে চয়, প্রশাসন মদদ দেয়, সেক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। কারণ উভয়পক্ষই প্রভাবশালী এবং উভয় পক্ষই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাবে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী   দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন