জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ৬৯তম জন্মদিন আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর)। তিনি ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে ‘ছোট আপা’ হিসেবেই তিনি পরিচিত। শেখ রেহানা যিনি ‘ছোটো আপা’ নামে পরিচিত, পিতা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে তিনি একটি সাধারণ জীবনধারা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। তিনি প্রফেসর ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিককে বিয়ে করেন এবং তাদের তিন সন্তান রয়েছে, তাদের মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
তাদের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এবং আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর ট্রাস্টি, মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির এমপি এবং কনিষ্ঠ মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তি লন্ডন-ভিত্তিক কন্ট্রোল রিস্কস-এর গ্লোবাল রিস্কস অ্যানালিসিস এডিটর হিসেবে কাজ করছেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের ৩০ মে থেকে ১৯৫৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। পুনরায় তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর। অর্থাৎ শেখ রেহানার জন্ম থেকে বেশ কয়েক বছর বঙ্গবন্ধুর মুক্ত জীবনে বিচরণের সুযোগ ঘটেছিল। বড় মেয়ের মতোই ছোট মেয়ের প্রতি ছিল তার স্নেহ ও মমত্ববোধ। তার প্রকাশ রয়েছে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’য়। যেমন:একটি অংশ—‘ছোট মেয়েটার (শেখ রেহানা) শুধু একটা আবদার। সে আমার কাছে থাকবে। আর কেমন করে কোথায় থাকি তা দেখবে। সে বলে, থেকে যেতে রাজি আছি।’ (সূত্র: ১৫ জুন ১৯৬৬, বুধবার, কারাগারের রোজনামচা)
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে দুই কন্যা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর পুরো পরিবারকে কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য নির্মমভাবে হত্যা করে। সে সময় শেখ রেহানা তার বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনিও পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জিম্মায় ধানমন্ডিতে গৃহবন্দি ছিলেন।
১৯৭৫ সালের শোকাবহ কালোদিবসে সূর্য ওঠার আগে খুব ভোরে সেনাবাহিনীর বিপদগামী সদস্যরা ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সে সময় প্রাণে বেঁচে যান। বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে সে সময় জার্মানীতে ছিলেন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার স্বামী এম ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল ছিল জার্মানির কার্লসরুইয়ে। সেখান থেকে পরে ভারতে চলে যান দুই বোন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ব্রিটিশ সরকার তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। সেই সময় থেকেই জাতির পিতার ছোট কন্যা শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থান করছেন। লন্ডন প্রবাসী হলেও শেখ রেহানা বছরের একটি বড় সময় দেশেই কাটান।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও সক্রিয় রাজনীতির সামনের সারিতে আসেননি শেখ রেহানা। তবে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে বিদেশে জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন শেখ রেহানা।
২০০৭-০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থা চলাকালে শেখ হাসিনা কারাবন্দি হয়েছিলেন। সে সময়ও শেখ রেহানা তাঁর বোনের মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পর্দার আড়ালে থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে লন্ডন থেকেই তিনি ব্যাপক তৎপরতা চালান। ওই দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের সাহস জোগান তিনি।
শেখ রেহানা ১৯৭৯ সালে তার ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে বিচারের জন্য প্রথম বিশ্বব্যাপী আহ্বান জানান। তিনি ১৯৭৯ সালে সুইডেনের স্টকহোমে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু এবং ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে নিহত জাতীয় চার নেতার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আহ্বান উত্থাপন করেন।
তিনি স্টকহোমে ১৯৭৯ সালের ১০ মে ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রধান, জাতিসংঘ প্রধান এবং আন্তর্জাতিক এনজিও’র উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে একটি ‘সর্ব-ইউরোপীয় বাকশাল’ সম্মেলনে বক্তৃতার মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়ের দিকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সে সময় শেখ হাসিনা দিল্লিতে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন সামরিক সমর্থিত বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য আওয়াজ তুলতে ইউরোপে থাকা তার ছোট বোনকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন। সেই আবেগঘন বক্তৃতার মধ্য দিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বৈশ্বিক চাপ সৃষ্টির জন্য তার কণ্ঠস্বর উত্থাপিত হওয়ায়, সেই ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা শেখ রেহানা
মন্তব্য করুন
নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বতন্ত্র প্রার্থী
মন্তব্য করুন
স্বতন্ত্র প্রার্থী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। নির্বাচন কমিশনও বারবার বলছিল যে, তারা স্বাধীন নিরপেক্ষ ভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোনো ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। এমনকি নির্বাচন কমিশন এটিও বলেছিল যে, তারা ২০১৮ এর মতো নির্বাচন বাংলাদেশে হতে দেবে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে তাদের কঠোর অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। আর এ কারণেই বিএনপির আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র এবং সংস্থা আস্থা রাখতে চাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল যে, নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে। তাদের যে ক্ষমতা আছে তা প্রয়োগ তারা করতে পারেন কিনা তা দেখতে হবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০টি আসনে সর্বমোট ২ হাজার ৭১১টি মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে ৭৪৭টি। এ ছাড়া ৩২টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ১ হাজার ৯৬৬টি।
এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। সর্বশেষ হিসেবে দেখা যায় যে, ২৭৪১ জন এবার নির্বাচনে তিনশ আসনের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৯৮ জন। আর অন্যদিকে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএসপির প্রার্থী সব মিলিয়ে ৩১০ জন। জাতীয় পার্টি জমা দিয়েছে ২৭০ জনের মতো। আর বাকি সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের-ই প্রায় ৪৫০ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এবার নির্বাচনে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লব হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন ভোট বিশ্লেষকরা। কারণ প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে আওয়ামী লীগের বিকল্প প্রার্থী আছে এবং তারা নির্বাচনে শক্ত লড়াই করবেন সেটি নিশ্চিত।
সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তৃণমূল বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরীও এখানে প্রার্থী হয়েছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরী মহাজোটের প্রার্থী নাহিদকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে এবার নুরুল ইসলাম ছাড় দেবেন কি না, এ প্রশ্ন এখন অনেক ভোটারের মুখে মুখে ঘুরছে।