প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বাজেটের তিনটি বিষয়ের ওপর বিশেষ মূল্যায়ন করেছেন। এগুলো হলো- এক. অবশেষে এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থনীতিতে বিদ্যমান সমস্যার একধরনের স্বীকৃতি আছে; ২. এসব সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সমন্বিত মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি অনুপস্থিত। ৩. বাজেটের সঙ্গে আয়-ব্যয়ের কাঠামোতে সংগতিপূর্ণ পরিবর্তন নেই, আয় কাঠামোতে যা-ও আছে, ব্যয় কাঠামোতে তা–ও নেই।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগে যেসব খাত বা কর্মকাণ্ড করের আওতার বাইরে ছিল বা অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল, এবার সেখানে করারোপ করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে করহার সমন্বয়ের চেষ্টা করা হয়েছে। পদ্ধতিগত সংস্কারের চেষ্টা আছে সরকারের। উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে করের সাযুজ্য আনার চেষ্টা আছে।
সমন্বয়ের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ শিল্পের কর–সুবিধা কিছুটা অনুকূল। কিন্তু ব্যয়কাঠামোর ক্ষেত্রে পরিবর্তন দেখছি না। শিক্ষা খাতে এখনো জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ—২ শতাংশের নিচে; স্বাস্থ্য খাতে শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ—জিডিপির ১ শতাংশের নিচে এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
আমাদের প্রস্তাব ছিল, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বরাদ্দের হার বৃদ্ধি করার, কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ভর্তুকি বেড়েছে; কিন্তু এর সিংহভাগ চলে যাবে পিডিবিতে; তার মধ্যে আছে ব্যক্তি খাতের অলস কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া অন্যায্য সুবিধা।
তবে সরকার সংযতভাবে বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এই প্রথম সরকারি ব্যয় জিডিপির অনুপাতে হ্রাস করা হয়েছে। অন্যদিকে জিডিপির প্রাক্কলন অপরিবর্তিত রয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। ফলে জিডিপির হিসাব যা বাস্তব অর্থনৈতিক সূচক নয়; বরং তা যেন রাজনৈতিক সূচকে পরিণত হয়েছে। প্রবৃদ্ধির হারকে যে সুতাকাটা ঘুড়ির সঙ্গে তুলনা করেছিলাম, তার যৌক্তিকতা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, কিন্তু ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে তা কীভাবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে যাবে, তার পথরেখা নেই। বিলাসদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করে সীমিত ফল পাওয়া যাবে। আর ব্যয়প্রবাহ সংকোচনের সুযোগও কম।
পরিশেষে বলব, বিভিন্ন ধরনের করহারের মধ্যে সাযুজ্য আনার চেষ্টা করা হলেও তা শেষমেশ মনে হয় কর–ন্যায্যতার পরিপন্থী বাজেট হয়ে গেল। করপোরেট করহার কমানো হলো, কিন্তু ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা হলো না, এখানেই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পায়।
আবার পাচার হওয়া সম্পদ বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হলো। যদিও বলা হয়েছে, বিদেশি অর্জিত সম্পদ; আদতে তা পাচার হওয়া সম্পদ। নির্বাচনমুখী বছরে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রশ্নের জন্ম দেবে, বিশেষ করে বিদেশে যখন প্রবাসীদের অবৈধ সম্পদের খোঁজ হচ্ছে। এ সময় এমন পদক্ষেপের তাৎপর্য আরও বেশি।
আবার এতে আদৌ অর্থ দেশে আসবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কেউ বিশ্বাস করবেন কি না, তা-ও নিশ্চিত নয়। প্রস্তাবিত এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে এই সরকারের ভেতরে সবচেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী কারা—গরিব মানুষ যেখানে সামাজিক সুরক্ষা ভাতায় জিডিপির ১ শতাংশের বেশি পাবেন না, সেখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাচার হওয়া অর্থ ফেরতের সুবিধা পাবেন।
বলা বাহুল্য, এটা শাসক দলের জন্য অর্থনৈতিক সংকটকালে অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক প্রশ্ন হিসেবে আসবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। ব্যবসায়িক লেনদেন ঠিক রাখতে মুদ্রা বিনিময়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া বিশ্বের নানা দেশে প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি বসবাস করেন। তারা বাংলাদেশের জন্য সম্পদ। মূলত, তাদের পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থে সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের লেনদেনের সুবিধার্থে টাকায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার তুলে ধরা হলো-
মন্তব্য করুন
চলতি অর্থবছরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক)
অষ্টম সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। আর এটিই হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত
নতুন সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভা। এই সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ১১টি প্রকল্প
অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার। এর বাইরেও অনুমোদন পাচ্ছে আরো ৩০টি প্রকল্প।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকাল
১০টায় রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে চলতি অর্থবছরের ৮ম একনেক সভা অনুষ্ঠিত
হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপনের
জন্য এরই মধ্যে ৪১টি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এর মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মেয়াদ বৃদ্ধি, সংশোধন এবং নতুন উন্নয়ন প্রকল্প
প্রস্তাব ১১টি।
এর বেশির ভাগই নতুন প্রকল্প। সংশোধিত প্রকল্প রয়েছে চারটি।
অর্থাৎ নতুন প্রকল্প রয়েছে সাতটি। এর বাইরে পরিকল্পনামন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত ৩০টি
প্রকল্প প্রস্তাব একনেক সভাকে অবহিত করা হবে।
নতুন সরকারের দ্বিতীয় একনেক সভায় যেসব প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের
জন্য উপস্থাপন করা হবে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থানীয় সরকার বিভাগের। এই বিভাগের
রয়েছে তিনটি প্রকল্প। স্থানীয় সরকার বিভাগের বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের জেলাগুলোর পল্লী
অবকাঠামো উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (৩য় পর্যায়) এবং অবকাঠামো, উন্নত
দক্ষতা এবং তথ্যে অ্যাকসেসের মাধ্যমে দুর্বলদের জন্য স্থিতিস্থাপকতা প্রচার করা (পোভার্টি)
(১ম সংশোধিত)।
এ ছাড়া একটি মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা
হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ বেতার, শাহবাগ কমপ্লেক্স,
আগারগাঁও, ঢাকায় স্থানান্তর, নির্মাণ ও আধুনিকায়ন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পটি তৃতীয়
বার সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর বাইরেও একনেক সভার অবগতির জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রস্তাবিত ৩০টি প্রকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে।
এর মধ্যে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ সংশ্লিষ্ট ১৪টি, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ৯টি, শিল্প
ও শক্তি বিভাগের একটি এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ছয়টি প্রকল্প।
একনেক জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
রেমিট্যান্স প্রবাসী আয় বাংলাদেশ ব্যাংক
মন্তব্য করুন
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করার মধ্য দিয়ে ব্যাংকিং খাতে যে সঙ্কট তা নিরসনের যে উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রহণ করেছে তার অংশ হিসাবে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক একটি শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে। এই ব্যাংকটির অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত দুর্বল এবং খেলাপি ঋণে ব্যাংকটি প্রায় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যাংকটির আর্থিক সঙ্কট এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছে যে, গত মাসে তারা তাদের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে বেতন দিতে পারেনি। তিন শতাধিক কর্মচারী এই ব্যাংকে একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এই ব্যাংকটিকে একীভূত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলেই একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ১ সপ্তাহের ব্যবধানে আরও কিছুটা কমেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চায়ন স্থির হয়েছে ২৪ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গণনায় তা দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে। এদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।