দিনাজপুরের দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে বিভিন্ন স্তরে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে তা থেকে ৩০ বছরে ৯ কোটি মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে এর চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ। এখন কেবল প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির অপেক্ষা। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি পেলেই শুরু হবে এ কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের কাজ।
২০১৬ সালে দেশের অভ্যন্তরে ৫টি কয়লা খনির মধ্যে মজুতের হিসাবে দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুর দীঘিপাড়ার খনি থেকে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দেশের কয়লা উত্তোলন সক্ষমতা ৪০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালেই শুরু হয় এর সম্ভাব্যতা যাচাই। এ দায়িত্ব দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানিকে (বিসিএমসিএল)। পরে শেষ হয় এর চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ।
সম্ভাব্যতা যাচাই তথ্য অনুযায়ী, এই কয়লা ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্তরে যে পরিমাণ কয়লা মজুত আছে তা থেকে ৩০ বছরে ৯ কোটি মেট্রিক টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যার বর্তমান বাজার মূল্য আড়াই লাখ কোটি টাকা। এখানে সর্বোচ্চ ৪৩৪.৪৯ মিটার ও সর্বনিম্ন ৩২৩ মিটার গভীরে ৭২.৩৬ মিটার পুরুত্বের কয়লা আছে। এছাড়াও খনিতে রয়েছে সাদা মাটি, বালু মিশ্রিত সিলিকা যা গ্লাস ফ্যাক্টরিতে এবং সিরামিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতি পেলেই এখানে কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ ও হাকিমপুর উপজেলার দীঘিপাড়ায় এই কয়লা খনিটি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করে ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি)। এর উন্নয়নে ২০০৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ পেট্রোবাংলাকে লাইসেন্স প্রদান করে। পরে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য খনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ফুগরো, জার্মানির প্রতিষ্ঠান মিবরাগ কনসালটিং ইন্টারন্যাশনাল ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রাঞ্জ পিনকক মিনারকো এই তিন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে কনসোর্টিয়াম গঠনের পর তাদের সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের চুক্তি হয়।
চুক্তিতে জরিপ সম্পাদন কাজে মোট ব্যয় ধরা হয় ১৬৭ কোটি টাকা। চুক্তির মেয়াদ ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এ সময় তারা সকল তথ্য সংগ্রহ করে তৃতীয় মাত্রার ভূ-কম্পন (থ্রি-ডি সিসমিক), অধিকতর জরিপ, টপোগ্রাফিক সমীক্ষা, অনুসন্ধান কূপ খনন, খনির নক্সা এবং প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ করে। যা চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমাতে আমরা শুরু থেকেই দেশীয় কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যে কাজ করছিলাম। আর এ জন্যই দীঘিপাড়া কয়লা খনি বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শেষ। বড়পুকুরিয়ার মতোই দীঘিপাড়া কয়লা খনিতে ভূ-গর্ভের সুড়ঙ্গ ব্যবস্থার মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করা হবে। কারণ উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করলে অনেক বড় এলাকা অধিগ্রহণ করতে হবে। যা আপাতত সম্ভব নয়। তাই সুড়ঙ্গ পদ্ধতিতেই এখানে কয়লা উত্তোলন করা হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতির ওপর। দেশের ইতিহাসে এমন একটি বড় কাজের অনুমতি নিশ্চয়ই তিনি দেবেন। এর পরই আমরা কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।
দীঘিপাড়া কয়লা খনি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে অপেক্ষা করছি। খনি বাস্তবায়ন এখন নির্ভর করছে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকদের ওপর। সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দিলেই পেট্রোবাংলার মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ, আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করে খনি উন্নয়ন ও কয়লা উৎপাদনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
দেশে বর্তমানে পাঁচ খনিতে ৭ হাজার ৮০৩ মিলিয়ন টন কয়লার মজুত রয়েছে বলে তথ্য জ্বালানি বিভাগের। যে ক’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রয়েছে বা নির্মাণাধীন রয়েছে সেগুলোর দীর্ঘ সময়ের জ্বালানি হিসেবে এই মজুত কয়লা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু বিশাল মজুত সত্ত্বেও এ পর্যন্ত দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত বড়পুকুরিয়া ছাড়া অন্য কোনো খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করেনি সরকার। এ খনিটি ১৯৮৫ সালে আবিষ্কার হয়। এখানে প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুত রয়েছে। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। খনির পাশেই স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদা পূরণ করছে এ কয়লা।
দীঘিপাড়ায় প্রাথমিক জরিপে ভূগর্ভের ৩২০-৫০৬ মিটার গভীরতায় উন্নত মানের বিটুমিনাস কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। এই কোল বেসিনে ১১.০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় মোট ৭০৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লার মজুত রয়েছে। মোট ১১টি কোল সিম, তার মধ্যে ৩টি সিম উল্লেখযোগ্য পুরুত্বের (সিম সি, বিস্তৃতি ১০.৫০ বর্গকিলোমিটার, পুরুত্ব ৩১.৬৯ মিটার, ভূতাত্ত্বিক মজুত ৪২৮ মিলি. মেট্রিক টন, সিম সি, বিস্তৃতি ১১.০০ বর্গকিলোমিটার, পুরুত্ব ৯.৯৫ মিটার, ভূ-তাত্ত্বিক মজুত ১৩৯ মিলি, মেট্রিক টন)।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাল্টিস্লাইস লংওয়াল টপ কোল কেভিং মেথড পদ্ধতিতে মাইনিং করার সুপারিশ করেছে। মাল্টিস্লাইস এলটিসিসি পদ্ধতিতে মাইনিংয়ের জন্য ৬টি স্লাইস নির্মাণ করা হয়েছে। যার প্রতিটি গড় পুরুত্ব ৭.২০। খনির নির্মাণ কাল ১২ বছর তবে নির্মাণ শুরুর ৮ বছর পর হতে আংশিক উৎপাদন শুরু হবে। খনি নির্মাণকালের ৪ বছর আংশিক উৎপাদনকালসহ মোট উৎপাদনকাল ৩৫ বছর। খনির পূর্র্ণাঙ্গ নির্মাণ শেষে পরবর্তী ৩১ বছর বার্ষিক ২.৮ মিলিয়ন মে. টন (সর্বনিম্ন ১.৭০ মিলিয়ন, মে. টন থেকে সর্বোচ্চ ৩.৪৯ মি. মে. টন গড় উৎপাদন সম্ভব বলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মত প্রকাশ করেছে।
আর্থিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী খনি নির্মাণে ১,৬৪৪.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধনী (ক্যাপিটাল) ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজন হবে। কয়লার টনপ্রতি বিক্রয় মূল্য ১৭৬ মার্কিন ডলার, রেট অব রিটার্ন ৯.৭% এবং ডিসকাউন্ট রেট ৮% ধরে এনপিভি ১৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে দেশে নির্মিত ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি বছর ২১-২২ মিলিয়ন টন কয়লার প্রয়োজন। দীঘিপাড়া কয়লাক্ষেত্র থেকে প্রতি বছর তিন মিলিয়ন টন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
দীঘিপাড়া খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হলে পাশাপাশি দুটি জেলার শিল্প-কারখানাগুলোও চালু রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দীঘিপাড়া কয়লা খনি আড়াই লাখ কোটি টাকা
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন অথচ করযোগ্য আয় নেই- এমন ব্যক্তিদের ওপরও ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে। বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেছেন। এর আগে দুপুর ৩ টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
এই প্রস্তাব পাস হলে করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও নির্ধারিত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) ধারীদের রিটার্ন দাখিলে ন্যূনতম ২ হাজার কর দিতে হবে।
এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ২৩তম ও বাংলাদেশের ৫২ তম বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেট ২৬ জুন অনুমোদন হবে আর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা; যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
রিটার্ন দাখিল আয়কর অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব
মন্তব্য করুন
বিদেশ থেকে ফেরার সময় বাংলাদেশিদের আনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে স্বর্ণালংকার ও সোনার বার নিয়ে আসেন। তবে এখন থেকে সোনা আনলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ কর পরিশোধ করতে হবে। আগে যেখানে এক ভরি স্বর্ণের জন্য ২ হাজার টাকা কর দিতে হতো, সেখানে এখন তা বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। স্বর্ণের পরিমাণও কমানো হয়েছে। এতো দিন সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম বা ২০ দশমিক শূন্য ৬ ভরি পর্যন্ত সোনা আনা যেত, যা কমিয়ে ১১৭ গ্রাম বা ১০ দশমিক শূন্য ৩ ভরি করা হচ্ছে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর বৃদ্ধির এই প্রস্তাবগুলো দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ (আমদানি) বিধিমালা, ২০১৬–এর বিধি ৩–এর উপ-বিধি (১০) মোতাবেক একজন যাত্রী বিদেশ হতে আসার সময় ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড সকল প্রকার শুল্ক–কর পরিশোধ সাপেক্ষে আমদানি করতে পারেন। দেশে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি করার জন্য উক্ত স্বর্ণের পরিমাণ ২৩৪ গ্রামের পরিবর্তে ১১৭ গ্রাম করার প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে এর বেশি অতিরিক্ত স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড বহন করলে শাস্তির বিধান সুস্পষ্ট না থাকায় তা বাজেয়াপ্তকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ব্যাগেজ বিধিমালা সংশোধন করার প্রস্তাব করছি।’
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় একজন যাত্রী বিদেশ থেকে আসার সময় স্বর্ণবার বা স্বর্ণপিণ্ড আনার ক্ষেত্রে প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রাম (এক ভরি) স্বর্ণের জন্য সর্বমোট ২ হাজার টাকা শুল্ক–কর পরিশোধ করে থাকেন। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় প্রতি ১১.৬৬৪ গ্রাম স্বর্ণের জন্য ৪ হাজার টাকা শুল্ক-কর পরিশোধের বিধান করার প্রস্তাব করছি।’
বিদেশফেরত যাত্রীদের মধ্যে সোনা নিয়ে আসার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এভাবে ২০২২ সালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৫৪ টন সোনা এসেছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর পরিমাণের দিক দিয়ে তা এর আগের ২০২১ সালের তুলনায় ৫৩ শতাংশ বেশি। যাত্রী (অপর্যটক) ব্যাগেজ বিধিমালার আওতায় বিমানযাত্রীরা বৈধ পথেই এসব সোনা এনেছেন। তবে সোনা আনা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার ওপর প্রভাব পড়ছে। সে জন্যই সোনা আনার ওপর কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
মন্তব্য করুন
সিগারেটের সব কটির মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আজ উত্থাপিত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি একটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য বিড়ির দাম না-ও বাড়তে পারে। কারণ, বিড়িতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সিগারেটে কর বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাড়তি ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেল ৩টা থেকে জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি। নিম্ন স্তরে মূল্য ৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা, মধ্যম স্তরে ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭, উচ্চ স্তরে ১১১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৩ এবং অতি উচ্চ স্তরে ১৪২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক ১ শতাংশ বাড়বে শুধু নিম্ন স্তরে। এতে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেশি বাড়তে পারে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ২০২০–২১ অর্থবছরে বিড়ির দাম ২৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। তাই এবারের বাজেটে না বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়াও তামাকজাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডার্মাল ইউজ নিকোটিন ইত্যাদি পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। ইলেকট্রনিক সিগারেট ও সমজাতীয় ইলেকট্রিক ভ্যাপোরাইজার ডিভাইসের দাম বাড়তে পারে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এসব পণ্য এবং এর খুচরা যন্ত্রাংশের শুল্কহার সমান নয়। যন্ত্রাংশের শুল্কহার বাড়িয়ে মূল পণ্যের সমান, ২১২ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ভ্যাপোরাইজার ডিভাইস সাধারণভাবে ভ্যাপ নামে পরিচিত। এই পণ্য অনেকে ব্যবহার করেন। তবে এটি ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।
তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে বিদায়ী অর্থবছরের (২০২২–২৩) বাজেটে এতে অতিরিক্ত করারোপ করা হয়। প্রতিবছরই বাজেটে তামাকের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়ে থাকে। আর এ জন্য করারোপও আগের বছরের চেয়ে বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে তামাক থেকে সরকারের রাজস্ব আয়।
২০১০-১১ অর্থবছরে তামাক ও তামাকজাত পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ৭ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার বেশি। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে এ আয় বেড়ে হয় ২৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকার বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ আয় ৩০ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা ছাড়ায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে প্রিমিয়াম, উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন স্তরের ৭ হাজার ১৫৯ কোটির বেশি সিগারেট শলাকা বিক্রি হয়েছে। পরের বছর তা বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৫৬৪ কোটির বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ৫ হাজার ১৯৫ কোটি সিগারেট শলাকা বিক্রি হয়েছে। যদি মাসভিত্তিক হিসাব বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাতে দেখা যায়, এ বছরও সিগারেটের বিক্রি আগের বছরকে ছাড়িয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যানুপাতে রেমিট্যান্স আহরণের গতি ততটা সন্তোষজনক নয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কর্মীদের প্রাক বহির্গমন অবহিতকরণসহ বিভিন্ন কারিগরি কোর্সে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ( ১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ তথ্য জাানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এমনকি কোভিডকালেও দেশে উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স এসেছে। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৪৯ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত আছেন। আমাদের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত এক যুগে মোট ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪২ জন কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত হয়েছে। গত এক যুগে প্রায় ১০ লাখ নারী বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা নতুন নতুন শ্রমবাজারের সন্ধান করছি। প্রধান গন্তব্যের বাইরে পোল্যান্ড, সেশেলস, আলবেনিয়া, রোমানিয়া, স্লোভেনিয়া, উজবেকিস্তান, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কম্বোডিয়া ইত্যাদি দেশেও কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রেমিটেন্স
মন্তব্য করুন
আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন অথচ করযোগ্য আয় নেই- এমন ব্যক্তিদের ওপরও ন্যূনতম কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে। বৃহস্পতিবার (১ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় এ প্রস্তাব করেছেন। এর আগে দুপুর ৩ টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
বিদেশ থেকে ফেরার সময় বাংলাদেশিদের আনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে স্বর্ণালংকার ও সোনার বার নিয়ে আসেন। তবে এখন থেকে সোনা আনলে আগের চেয়ে দ্বিগুণ কর পরিশোধ করতে হবে। আগে যেখানে এক ভরি স্বর্ণের জন্য ২ হাজার টাকা কর দিতে হতো, সেখানে এখন তা বাড়িয়ে ৪ হাজার টাকা দিতে হবে। স্বর্ণের পরিমাণও কমানো হয়েছে। এতো দিন সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম বা ২০ দশমিক শূন্য ৬ ভরি পর্যন্ত সোনা আনা যেত, যা কমিয়ে ১১৭ গ্রাম বা ১০ দশমিক শূন্য ৩ ভরি করা হচ্ছে।
সিগারেটের সব কটির মূল্যস্তর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আজ উত্থাপিত ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি একটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে সিগারেটের দাম বাড়তে পারে। অবশ্য বিড়ির দাম না-ও বাড়তে পারে। কারণ, বিড়িতে নতুন করে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সিগারেটে কর বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী বাড়তি ছয় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যানুপাতে রেমিট্যান্স আহরণের গতি ততটা সন্তোষজনক নয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কর্মীদের প্রাক বহির্গমন অবহিতকরণসহ বিভিন্ন কারিগরি কোর্সে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ( ১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩–২৪ অর্থ বছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি এ তথ্য জাানান।