অর্থনৈতিক সংকট ও রিজার্ভ বাড়াতে মধ্য মেয়াদে (২০২৪-২৬) ৫টি খাতে বড় ধরনের সংস্কার কর্মসূচি নিচ্ছে অর্থ বিভাগ। যার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ঋণের সুদ হারে করিডোর বা বাজারভিত্তিক চালু ও একক মুদ্রা বিনিময় হার বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।
এছাড়া অস্বাভাবিক ভর্তুকির অঙ্ক ও সরকারের ঋণ ব্যয় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে কম ঋণ নেওয়া। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যাংক কোম্পানি এবং ফাইন্যান্সিয়াল আইন সংশোধনের কথাও বলা হয়েছে। সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে আগামীতে রাজস্ব আয় (বর্তমান পর্যায় থেকে ১.৭ শতাংশ) বাড়ানো এবং তিন মাস অন্তর জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। শিগগিরই এই সংস্কার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরি জানান, ডলারের মূল্য এখন অনেক বেশি। মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে ধারণা করা হচ্ছে ডলারের মূল্য কিছুটা বাড়তে পারে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ হারে করিডোর চালু করা দরকার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজারভিত্তিক সুদহার চালু করা যেতে পারে।
সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানো প্রসঙ্গে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ জানান, সঞ্চয়পত্র এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হিসেবে কাজ করছে। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল। কারণ এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা বা সুদ অন্য ক্ষেত্র থেকে বেশি পাওয়া যায়। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকে সঞ্চয়পত্র বেছে নিচ্ছেন। সরকার এ খাত থেকে ঋণ নেওয়া কমালে এর বিক্রি কমবে। এতে অনেকেই কিনতে পারবে না। এখানে খুব বেশি কড়াকড়ি না করাই ভালোই। জানা গেছে, চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে। সেখানে ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং একক মুদ্রানীতি হার বাজারভিত্তিক চালুর ঘোষণা আসতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সুদ হারে করিডোর এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা ধীরে ধীরে তুলে নেওয়া হবে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার কত হবে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা আগামী জুলাই থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তা-ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান ব্যাংক ঋণের সুদ হারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্যাপ আরোপ করে রেখেছে। যে কারণে আমানত ও ঋণের সুদ ৬-৯ শতাংশের মধ্যে বিরাজ করছে। অপরদিকে ডলারের মূল্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করে দিয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সংস্কারের আওতায় সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কাজ হবে ভর্তুকি ব্যয় কমিয়ে আনা বা যৌক্তিককরণ। টাকার অবমূল্যায়ন ও বিশ্ব বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ, সার, প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলে সরকারের অস্বাভাবিক ভর্তুকি ব্যয় বেড়েছে। এ ব্যয় সরকারের দায়কে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রস্তাবিত (২০২৩-২৪) বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ৫০ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে।
ভর্তুকি ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগ সংস্কার কর্মসূচির প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে গত আগষ্টে পেট্রোলিয়াম পণ্যের মূল্য বাড়ানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় একটি ফর্মুলাভিত্তিক নতুন পদ্ধতি চালু করা হবে। যা পেট্রোলিয়াম পণ্যের ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা দূর করবে।
ভর্তুকি কমানো ছাড়াও সংস্কার কর্মসূচিতে সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কম নেওয়া, নগদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে ট্রেজারির সঙ্গে অ্যাকাউন্ট আওতা বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) ব্যবহার বাড়ানো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মধ্যমেয়াদি এই সংস্কার কর্মসূচির পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং ৯ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, মধ্যমেয়াদে সরকার সতর্ক রাজস্বনীতি অনুসরণ করবে। এর মধ্যে বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখা হবে। যা প্রস্তাবিত বাজেটে আছে জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। সেখানে আরও বলা হয়, এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে করনীতি এবং রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার করা হবে।
অর্থ বিভাগ সংস্কার কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছে, বৈশ্বিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা দরকার। এ উদ্দেশ্যে মধ্যে মেয়াদে বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
অর্থনৈতিক সঙ্কট সরকার সংস্কার কর্মসূচি
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজুস
মন্তব্য করুন
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে প্রভাব পড়েছে চলমান
অর্থনৈতিক সংকট। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪২.৩০
শতাংশ। আর টাকার হিসাবে ব্যয় হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যদিও গত
অর্থবছরের তুলনায় এবার এডিপি বাস্তবায়ন বেড়েছে। আগের বছর ৯ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪১.৬৫
শতাংশ।
অর্থবছরের বাকি আছে আর তিন মাস থাকলেও এই সময়ের মধ্যে শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়ন করতে হবে ৫৭.৭০ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ৪৬ হাজার ৭৭৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এই সময়ের মধ্যে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
গতকাল মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন
পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে
এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থবছরের ছয় মাসে যেখানে অর্ধেকও বাস্তবায়ন
হয়নি, সেখানে মাত্র তিন মাসে কী করে ৫৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়
ও বিভাগকে জবাবদিহির আওতায় না আনলে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন কোনো অর্থবছরেই সম্ভব হবে
না।
আইএমইডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি
বাস্তবায়ন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির চলতি অর্থবছরে একটি প্রকল্পের
আওতায় বরাদ্দ ছিল ছয় কোটি ১৯ লাখ টাকা। ৯ মাসে তারা ব্যয় করেছে পাঁচ কোটি ৯৯ লাখ টাকা,
যা শতাংশের হিসাবে ৯৬.৮৫ শতাংশ। আর শতাংশের হিসাবে বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকলেও টাকা খরচে
এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বিভাগটির ২৬৩টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ছিল ৪২
হাজার ৯৫৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
অর্থবছরের ৯ মাসে ব্যয় হয়েছে ১৯ হাজার ৭৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা
শতাংশের হিসাবে ৪৬.০৩ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ
বিভাগ। চলতি অর্থবছরে তাদের বরাদ্দ ছিল ২৪২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৯ মাসে ব্যয় করেছে ৩৩
কোটি ৭২ লাখ টাকা, যা শতাংশের হিসাবে ১৩.৮৯ শতাংশ।
বিদ্যুৎ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৬৩.৮৭ শতাংশ। বরাদ্দ ছিল
৩০ হাজার ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ব্যয় করেছে ১৯ হাজার ২০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৮০৩ কোটি ৪৫ লাখ
টাকা। ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ১৭৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা। শতাংশের হিসাবে ৪০.১৯ শতাংশ। পানি
সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ৯ মাসে ব্যয় করেছে সাত
হাজার ৮১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। শতাংশের হিসাবে ৫৩.৯৮ শতাংশ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ছিল ১২ হাজার ১৯২ কোটি
৭৫ লাখ টাকা। ব্যয় করেছে চার হাজার ২১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন হার ৩২.৯৯ শতাংশ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ৫০.৯২ শতাংশ। তাদের বরাদ্দ ছিল ৪৫৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বিপরীতে ৯ মাসে ব্যয় করেছে ২৩৪ কোটি ছয় লাখ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন হার ২৪.৪২ শতাংশ। পরিকল্পনা বিভাগের
বাস্তবায়ন হার ৩৮.৫৬ শতাংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৪.৪২ শতাংশ। ইআরডির ৭১.৬৭ শতাংশ,
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২৩.৭৯ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ৩১.৬৭ শতাংশ, অর্থ বিভাগের
৫০.০৮ শতাংশ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৩৩.৬৯ শতাংশ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৪৯.৯১ শতাংশ,
সেতু বিভাগের ৪৬.৬৮ শতাংশ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১৯.৪৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়ার বিষয়ে আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘গত অর্থবছরের চেয়ে এবার বাস্তবায়ন হার বেশি। আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বসছি। যেসব প্রকল্প শেষ পর্যায়ে আছে তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প শেষ করছি। প্রকল্প পরিচালক দক্ষতা বাড়াতেও উদ্যোগ নিচ্ছি।’
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি বাংলাদেশ ব্যাংক
মন্তব্য করুন
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে
শর্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে ঢাকায় এসেছে সংস্থাটির ১০ সদস্যের একটি মিশন। মিশনটি
গত ডিসেম্বর নাগাদ দেওয়া বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে
আজ বুধবার থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসবে।
এসব বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত
ও রাজস্ব সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেবে পর্যালোচনা দলটি বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা
গেছে।
আইএমএফ-এর এই প্রতিনিধি দলটি শুরুর দিন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ
ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে বৈঠক করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক,
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, জ্বালানি বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ কয়েকটি
সরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। দলটি ঢাকায় থাকবে ৮ মে পর্যন্ত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ এরই মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের
কাছে শতাধিক প্রশ্ন পাঠিয়েছে। সফররত মিশনটি দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার
জন্য জ্বালানি ভর্তুকি, সরকারি ঋণ, আসন্ন বাজেট ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলোর
পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করবে।
গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশের কর রাজস্ব জিডিপির অনুপাত ৮ থেকে
৯ শতাংশ। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচিতে রাজস্ব খাতে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আইএমএফ
প্রতিনিধি দল এ সফরে ব্যাংকিং খাতে বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাব, ব্যাংক কোম্পানি আইন
বাস্তবায়নসহ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের
বৈঠকের এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক
কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছিলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। আইএমএফ গত
বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণপ্রস্তাব অনুমোদন করে। এরই মধ্যে
দুই কিস্তিতে ১১৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী মে মাস নাগাদ তৃতীয়
কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট
সাত কিস্তিতে পুরো অর্থ দেওয়ার কথা।
প্রাথমিকভাবে আইএমএফের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত
সময়ে নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা
দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রিজার্ভের উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশের
অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তা কমিয়ে ১৭ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়। এর পরও বাংলাদেশ
লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৫৮ মিলিয়ন ডলার পিছিয়ে ছিল।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন,
আইএমএফের ঋণের ১০টি শর্তের ৯টি পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। তাই ঋণের পরবর্তী কিস্তি
পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। জানা গেছে, তৃতীয় কিস্তির জন্য নির্ধারিত ছয়টি পরিমাণগত
লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া পাঁচটি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এগুলোর মধ্যে গত
বছরের ডিসেম্বরে কর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০
কোটি টাকা। সরকার এরই মধ্যে এটি পূরণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কর রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা।
আইএমএফ বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার
মন্তব্য করুন
ব্যাংক একীভূতকরণ বাংলাদেশ ব্যাংক
মন্তব্য করুন
চলতি মাসে তিন দফা বাড়ানোর পর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম আরও ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে।
এর আগে গত তিনদিন পূর্বে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। নতুন দাম নির্ধারণের তিন দিন না যেতেই এবার আবারও স্বর্ণের দাম কমালো দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেল ৪টা থেকেই নতুন দাম কার্যকর হবে বলে বাজুস। এদিন বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠক করে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরবর্তীতে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম কমেছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা মঙ্গলবার বিকেল ৪টা থেকে কার্যকর হবে।
নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। আর ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম তিন হাজার ৯ টাকা কমিয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৫৬৬ টাকা কমিয়ে ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম দুই হাজার ৭৬ টাকা কমিয়ে ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অবশ্য স্বর্ণের অলঙ্কার কিনতে এর থেকে বেশি অর্থ গুনতে হবে ক্রেতাদের। কারণ বাজুসের নির্ধারণ করা দামের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ করে স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রি করা হয়। সেইসঙ্গে ভরি প্রতি মজুরি ধরা হয় ন্যূনতম তিন হাজার ৪৯৯ টাকা। ফলে আগামীকাল থেকে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের অলঙ্কার কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হবে এক লাখ ২৫ হাজার ৬০৪ টাকা।
স্বর্ণ বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বাজুস
মন্তব্য করুন
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে প্রভাব পড়েছে চলমান অর্থনৈতিক সংকট। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪২.৩০ শতাংশ। আর টাকার হিসাবে ব্যয় হয়েছে এক লাখ সাত হাজার ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় এবার এডিপি বাস্তবায়ন বেড়েছে। আগের বছর ৯ মাসে বাস্তবায়ন হয়েছিল ৪১.৬৫ শতাংশ।
ব্যাংক একীভূত হওয়া নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত খবর সঠিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে না মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে ভাবে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃত তথ্যনির্ভর নয় বলে মনে করছে ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রক এই প্রতিষ্ঠানটি। আর এটি দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তি করেছে।
চলতি মাসে তিন দফা বাড়ানোর পর দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম আরও ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে।