১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানে যান মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। এরপর তিনি আফগানিস্তানে ট্রেনিংয়ে শেখেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা। ওই সময়ে ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করে। অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা ফখরুল ইসলামসহ সংগঠনটির ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাকৃত হুজি সদস্যরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো. সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।
সিটিটিসি জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। এর ফলে হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন যে হুজি এখনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘বিদেশ থেকে জঙ্গি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মো. ফখরুল ইসলাম বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য। তিনি ১৯৮৮ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার তামিরুল মিল্লাত মাদরাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ওই বছর কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি শহরে যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। মুফতি জাকির হোসেন তখন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং আল-কায়দার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।’
তিনি বলেন, ‘মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার ছিলেন। ফখরুল ইসলামকে তিনি জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন। ফখরুল ইসলাম জিহাদি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে যান। সেখানে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ফখরুল ওই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন অস্ত্র চালনা শেখার পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। প্রশিক্ষণকালে কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭ সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা ডিউটি করতেন।’
সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘ওই সময়ে ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি প্রশিক্ষণ করার পর আবার পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে অবস্থান করেন। এরপর করাচি ফিরে তিনি পরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সনে বাংলাদেশে আসেন।’
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হন। এর পরে হরকাতুল জিহাদ নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন তিনি।’
সিটিটিসি কর্মকর্তা জানান, সশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যম ব্যবহার করে সাংঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন ফখরুল। তিনি সামাজিক যোগাযাগমাধ্যমে এনক্রিপটেড অ্যাপস বিপ (Apps Bip) ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করতেন। এভাবে তারা যে কোনো সময়ে বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের হুজি সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিলেন গ্রেফতারকৃতরা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেফতার মো. সাইফুল ইসলাম অন্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। তারা রোহিঙ্গাদের সংগঠনে সম্পৃক্ত করতে মাঠে নামেন। ওই কার্যক্রমের অংশ হিসাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা অনুদান দেন।
গ্রেপ্তার অপর আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘মোরা সত্যের সৈনিক’র অ্যাডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি পরিচালনা করেন বলেও জানান সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন অ্যাপসে নিজেকে মামুনুল হিসেবে ছদ্মনাম ধারণ করেন। হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে মেসেজ আদান-প্রদান করেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড অ্যাপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতি’র কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট শেয়ার করা হয়। একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো সংক্রান্ত বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড অ্যাপসের চ্যানেল থেকে পাওয়া কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দুই-একজনকে হাতে-কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিতে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তারা টেলিগ্রাম গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। গ্রেফতাররা তাদের অন্য সহযোগীদের সঙ্গে মিলে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করতেন। তারা ওই গ্রুপে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক প্রশিক্ষণের বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি সচিত্র প্রশিক্ষণ ডকুমেন্টস (পিডিএফ, ভিডিও, অডিও) আদান-প্রদান করতো। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানিয়েছে সিটিটিসি।
জঙ্গি হুজি আফগানিস্তান ট্রেনিংপ্রাপ্ত ফখরুল আল-কায়েদা ওসামা বিন লাদেন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
দুদক দুর্নীতি রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএসএমএমইউ দুর্নীতি মামলা ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ
মন্তব্য করুন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মিন্টো রোড যৌন হয়রানি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে। গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর আগে তিন মেয়াদে যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেরই দায়িত্ব পালনের সময়টি স্বচ্ছতার ছিল না। তারা নিজেদেরকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি। আর এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মেয়াদ এ রকম অন্তত এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ এখন বিভিন্ন সংস্থাগুলো তদন্ত করছে।