পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর দাবি করা হলেও পলাতক দেখিয়ে হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস বহাল রয়েছে এখনো। পুলিশ সদর দফতরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই নোটিস বহাল রেখেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
ইন্টারপোলের তথ্যানুযায়ী, প্রতিটি রেড নোটিস নবায়ন করা হয় ৫ বছর পরপর। এই নবায়নের আবেদন করে থাকে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। জানা গেছে, ২০২৫ সালে হারিছ চৌধুরীর রেড নোটিসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি এনসিটি তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারে তাহলে সেই রেড নোটিস বহাল রাখার আবেদন আবারও করার সম্ভাবনা রয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মনজুর রহমান জানান, তাঁদের কাছে অফিশিয়ালি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই। অফিশিয়ালি নিশ্চিত না হতে পারলে হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিস থেকে যাবে।
গত বছরের শুরুর দিকে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হলে তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সংস্থাটি জানায়, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিশ্চিত হতে সিআইডিকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ সদর দফতর। এরপর সেটি তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগ। ২৫ জানুয়ারি সেই বিভাগ থেকে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে সেটি তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. রাসেল। তার তদন্ত শেষে গত বছরের ১৮ মার্চ পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠায় সিআইডি। এই চিঠির বিষয়ে এনসিবি বলছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। আর সিআইডির প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীসহ ওই মামলার পলাতক কয়েক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছিল।
গতকাল ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের নামে রেড নোটিস রয়েছে, তাদের তালিকার ১৫ নম্বরে হারিছ চৌধুরীর নাম রাখা হয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ শারীরিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিসে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নথিতে হারিছ চৌধুরী মৃত নন। মৃত হিসেবে নথিভুক্ত আছেন মাহমুদুর রহমান। আর এই মাহমুদুর রহমানের লাশটিই হারিছের বলে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী। কারণ হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কোনো নথি না থাকলে তার নামে থাকা সম্পদ সন্তানদের নামে স্থানান্তরিত হবে না। আবার মাহমুদুরই যে হারিছ সেটি নিয়েও তারা রহস্যের মধ্যে ছিলেন। কারণ এক মাসের ব্যবধানে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর হারিছের ছোট ভাই সেলিম চৌধুরীরও মৃত্যু হয়। সেলিম চৌধুরীর বাসা রাজধানীর শান্তিনগরের কনকর্ড টাওয়ারে। ব্রেইন স্ট্রোকে তার মৃত্যু হলে সিলেটের কানাইঘাটে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর পরিবারের ভাষ্য, হারিছ ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। তার আগে ১১ বছর মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন তিনি। এই বাসায় হারিছের শ্যালিকা নিশার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। লাশ সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়িন মাদরাসায় কবরস্থানে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়। দাফনের সবকিছু করেছিলেন হারিছ চৌধুরীর শ্যালক জাফর ইকবাল মাসুম। মিরপুর-১০ এর বেনারসি পল্লীর শওকত কাবাবের পাশের গলির ‘লস্কর বাড়ি’ নামে তিন তলা বাড়িটি তার।
হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সিআইডির যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এভারকেয়ার থেকে মাহমুদুর রহমান নামে যে মৃত্যুসনদ নেওয়া হয়েছে, তার ঠিকানা লেখা হয়- রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি বাসার ২বি ফ্ল্যাট। সেখানে ২বি নম্বরের কোনো ফ্ল্যাট নেই। তবে এবি-২ নম্বরের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম মাহমুদুর রহমান এবং তিনি জীবিত আছেন। মাহমুদুর রহমান নামে যে পাসপোর্ট নেওয়া হয়েছে সেখানে জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বাবা মৃত আবদুল আজিজ। মা মৃত রোকেয়া বেগম। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এসব কাগজপত্র তৈরিতে সহায়তা করেন হারিছের শ্যালক মাসুম। এই মাসুম হারিছের নামে থাকা একটি দুর্নীতি মামলার আসামিও ছিলেন। আর হারিছ নামে থাকা নথিতে জন্ম তারিখ ১৯৫২ সালের ১ নভেম্বর।
জানা গেছে, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়। ১৫ বছর ধরে এই নোটিস ঝুললেও তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না বা তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।
মন্তব্য করুন
আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশকে সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। এ সংস্থার
ওয়েবসাইটে ওয়ান্টেড তালিকায় রয়েছে ৬২ বাংলাদেশির নাম।
জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খুনি, সাইবার ক্রাইম, মাদক চোরাকারবারি, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, মানবপাচারে অভিযুক্ত তারা। তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। রয়েছে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর নামও।
বাংলাদেশ পুলিশের চাওয়া সহযোগিতার কারণে এসব বাংলাদেশির নাম ও ছবি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। তালিকায় থাকা এসব ব্যক্তির বর্তমান অবস্থান জানার চেষ্টা করছে ইন্টারপোল। এরপর তাদের স্থানীয় আইনে গ্রেফতার করে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
কয়েকদিন দেশে ইন্টারপোল প্রসঙ্গ নিয়ে বেশ চর্চা চলছে। দুবাইয়ে পালিয়ে থাকা পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে ঘিরে এ চর্চা।
কোন অপরাধী কোন দেশে অবস্থান করছেন- সেটা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে ইন্টারপোল। ইন্টারপোলকে সহয়তা করে পুলিশ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) নামে একটি শাখা। এ শাখাটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইন্টারপোলের তালিকায় থাকা অপরাধীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদানে কাজ করে থাকে।
এনসিবি সূত্রে জানা গেছে, অপরাধীর অবস্থান নিশ্চিত হতে পারলে অনেক সময় ধরা যায়। তবে অনেক সময় দেখা যায়, অবস্থান নিশ্চিত হতে হতেই অপরাধীরা অবস্থান বদলে ফেলে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের ফাঁক গলিয়ে অধরা থেকে যায়। ইন্টারপোলের কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। ইন্টারপোলের এ লাল নোটিশে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়।
ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৬২ শীর্ষ অপরাধীর নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছেন যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি, জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা।
ইন্টারপোলের লাল তালিকাভুক্ত ৬২ বাংলাদেশি
ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, মোল্লা নজরুল ইসলাম, মিয়া মিন্টো, খান মো. শহীদ উদ্দিন, ওয়াসিম, খোরশেদ আলম, গিয়াস উদ্দিন, অশোক কুমার দাস, মিয়া মিজান, চন্দন কুমার রায়, রাতুল আহমেদ বাবু, মো. মোস্তফা সিরাজ লালু, আব্দুল হারিস চৌধুরী, জাহিদ হোসেন খোকন, সৈয়দ মো. হোসাইন ওরফে হোসেন, সৈয়দ মো. হাসান আলী, রহমান আজিজুর, অজয় বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, হানিফ, আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফোকিদ, মোহাম্মদ মনির ভুঁইয়া, শফিক-উল, আমান উল্লাহ শফিক, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. নাঈম খান ইকরাম, ফেরদৌস কালা জাহাঙ্গীর, মো. ইউসুফ, আব্দুল আলিম শরীফ, মজনু আহমেদ, নুরুল দিপু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাবেদ, এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী, আব্দুর রশীদ খন্দকার, নাজমুল আনসার, শারফুল হোসেন আহমেদ, শরিফুল হক ডালিম, রউফ উদ্দিন, খান মোসলেমউদ্দিন, এ ম রাশেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী, আলহাজ মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দীন মিয়া, মিন্টু সালাহউদ্দিন, গোলাম ফারুক অভি, শেখ হারুন, সুলতান সুজিদ, তৌফিকুল আলম, জাফর আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, আমিনুর রসুল, জিসান আহমেদ, সুব্রত বাইন ত্রিমতি, হোসাইন নবী, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার ও খন্দকার তানভীর ইসলাম জয়।
ইন্টারপোলের ইতিহাস
ইন্টারপোল একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার প্রধান কাজ আন্তর্জাতিক পুলিশকে সহায়তা করা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে থাকে ইন্টারপোল। প্রথমে এর নাম ছিল ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ কমিশন। পরবর্তীতে বর্তমান নামে পরিবর্তিত হয়। এটি জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংস্থা। ইন্টারপোলের বর্তমান সদস্য দেশ ১৯৪টি।
ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোল সদরদপ্তর থেকে পরিচালিত সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ‘রেড নোটিশ অব ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ১৮ জন অপরাধীর নাম, পরিচয়, ছবি ও জাতীয়তা তথা দেশের নাম উল্লেখ আছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জন অপরাধীর নাম রয়েছে।
মন্তব্য করুন
আরাভ
খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে হৃদয়ের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সোমবার
(২০ মার্চ) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালি থানার এনায়েতবাজার পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের
জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তিনি
বলেন, আরাভ খানের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করার জন্য ইন্টারপোলের কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি, সেটা ইন্টারপোল করেছে।
আইজিপি
বলেন, ‘আরাভ খানতে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনা হবে।’
দেশ
থেকে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে কি না-এমন
প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অভিনেত্রী
মাহিয়া মাহির গ্রেফতারের বিষয়ে আইজি বলেন, মাহির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে আদালত থেকে তিনি জামিন পেয়েছেন। মামলাটি তদন্ত হচ্ছে।
এ
সময় সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
গোপালগঞ্জের
কোটালীপাড়ার যুবক রবিউল ইসলাম নিজের নাম, জাতীয়তা পরিবর্তন করে জোগাড় করেন ভারতীয় পাসপোর্ট। এ পাসপোর্টেই পাড়ি
জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। দুবাই পাড়ি জমিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন ‘আলাদিনের চেরাগ’।
দুবাইয়ে
‘আরাভ জুয়েলার্স’
নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের
নাম আরাভ খান। মূলত তিনি বাংলাদেশের নাগরিক রবিউল ইসলাম। তবে ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করে রাখেন আরাভ খান।
পুলিশ
বলছে, এ আরাভ খানই
মূলত ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়া তিনি কীভাবে দেশত্যাগ করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।
দীর্ঘদিন
পলাতক থাকার পর সম্প্রতি আলোচনায়
আসেন আরাভ। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার
সাকিব আল হাসানকে দিয়ে
দুবাইয়ে তার শোরুম উদ্বোধন করা হবে- এই ঘোষণার মাধ্যমে
আলোচনায় আসেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলমকেও দুবাইয়ে নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি।
সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণাটি ছড়িয়ে পড়ার পর নড়েচড়ে বসে
গোয়েন্দারা। দীর্ঘদিন ধরে যাকে খোঁজা হচ্ছিল তিনি দুবাইয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ‘আরাভ জুয়েলার্স’
নামে সোনার দোকান দিতে যাচ্ছেন। কিনেছেন বাড়ি-গাড়ি। দুবাইয়ে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা।
দুবাইয়ের
নিউ গোল্ড সুকে উদ্বোধন করা হয়েছে আরাভ জুয়েলার্সের। কয়েক দিন আগে এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের
খ্যাতিমান তারকাদের সম্ভাব্য উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন রবিউল ওরফে আরাভ। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা টাওয়ারের ৬৫ তলায় ফ্ল্যাট
কিনেছেন। যার নম্বর ৬৫১০। আরও ৪-৫টি ফ্ল্যাটের
মালিক তিনি। পাশাপাশি রয়েছে একটি সুইমিংপুল ও বাগানসহ বড়
ডুপ্লেক্স বাড়িও।
তার ওই ফেসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই চিনে ফেলেন, তিনি বাংলাদেশে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম। ফেরারি এক আসামি দুবাইয়ে গিয়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
মন্তব্য করুন
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী মামলার আসামী রকিব সরকার গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) সকালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু জানেন না তাঁরা। মাহিয়া মাহি ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। অন্যদিকে মাহিয়া মাহির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে গত শনিবার (১৮ মার্চ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তবে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে গতকাল মাহিয়া মাহির স্বামী রকিব সরকার সৌদি আরব থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছার পর উত্তরার নিজ বাসায় যান। সেখান থেকে বিকেলে তিনি গাজীপুরে যান। কিছু সময় ছিলেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সনি রাজ কার প্যালেসেও। রকিব সরকার দেশে ফিরলে ফুল দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান স্ত্রী মাহি। পরে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি নিজের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। তবে রকিব সরকারের দেশে ফিরে আসার বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়েছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম। একই কথা জানান বাসন থানার ওসিও।
গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) দুপুরে মোবাইল ফোনে রকিব সরকার জানান, আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে দ্রুত তিনি জামিন নিতে আদালতে যাবেন। এছাড়া তাঁর শোরুম দখলের চেষ্টা, হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলাও করবেন।
রকিব সরকারের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ সম্পর্কে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’
বিরোধের নেপথ্যে ৩২ শতক জমি: গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ২ নম্বর গেটের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ঘেঁষে ৩২.৩৪ শতক জমির ওপর ‘সনি রাজ কার প্যালেস’। এই জমির মালিকানা নিয়ে রকিব সরকারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের বিরোধ চলে আসছে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে এই জমি রকিব সরকারের দখলে। ২০১২ সালে স্থাপনা নির্মাণ করে তিনি গড়ে তোলেন সনি রাজ কার প্যালেস ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে ইসমাইল হোসেন চাইছেন এই জমি তাঁর দখলে নিতে। ২০১২ সাল থেকে কয়েক দফা দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তিনি। সর্বশেষ গত শুক্রবার ভোরে আবারও চেষ্টা চালান। শনিবার রকিব সরকারের স্ত্রী মাহিয়া মাহি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর ইসমাইল হোসেন দাবি করেন, ওই শোরুম তাঁর, দখলও তাঁর।
গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শোরুমে ‘সনি রাজ কার প্যালেস’ লেখা সাইনবোর্ড। একটি ছাড়া শোরুমের সব শাটার বন্ধ। সামনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে লোহার পাইপ ও কয়েকটি টিনের বেড়া।
ভেতরে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী মুন্না সরকার (৫৩) বলেন, ইসমাইল হোসেন এসব নিয়ে এই শোরুম দখল করতে এসেছিলেন। নষ্ট করা সাইনবোর্ড গতকাল দুপুরে মেরামত করে আবার টানানো হয়েছে।
জমির মালিকানা বিষয়ে জানতে ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রকিব সরকার প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে এই জমি নেননি। এসব নিয়ে অনেক সালিস-দরবার হয়েছে। কিন্তু রকিব সরকার দখল ছাড়ছেন না। সবাই জানে এই জমির প্রকৃত মালিক আমি।’
এ প্রসঙ্গে রকিব সরকার বলেন, ‘রেকর্ডীয় মালিক ফজল বাদ্যকরের কাছ থেকে আমি দুটি দলিলে ইটাহাটা মৌজার এই জমিটি কিনেছি। নামজারির মাধ্যমে খাজনা পরিশোধ করে ভোগদখলে আছি। ইসমাইল হোসেনের দলিলে মৌজা উল্লেখ করা হয়েছে ‘আমিরাবাদের চালা’, যা টঙ্গী এলাকায়।’
সৌদি আরব থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে অভিযোগ করার পর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তাঁর স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। এ ছাড়া এক ব্যবসায়ী জমি দখলের অভিযোগ এনে মামলা করেন তাঁদের বিরুদ্ধে। দুই মামলায় গত শনিবার সকালে দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় নায়িকা মাহিয়া মাহিকে। পরে পুলিশ আদালতে পাঠালে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একই আদালত থেকে জামিন পান মাহি। অবশেষে গত শনিবার গ্রেপ্তারের সোয়া আট ঘণ্টা পর মুক্তি পান মাহিয়া মাহি।
মাহিয়া মাহি গ্রেপ্তার নেপথ্য সনি রাজ কার প্যালেস জমি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির স্বামী মামলার আসামী রকিব সরকার গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) সকালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কিছু জানেন না তাঁরা। মাহিয়া মাহি ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে সহযোগিতা করার অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে। অন্যদিকে মাহিয়া মাহির অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলে গত শনিবার (১৮ মার্চ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। তবে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি বলে জানা গেছে।