ইনসাইড পলিটিক্স

ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন: বর্ণহীন সংলাপকে রঙ্গিন করলো আওয়ামী লীগ?

প্রকাশ: ১১:৪৩ এএম, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২


Thumbnail ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন: বর্ণহীন সংলাপকে রঙ্গিন করলো আওয়ামী লীগ?

গত এক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রেন্ডিং টপিকগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল 'রাষ্ট্রপতির সংলাপ'। নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে ৩২টি দলকে বঙ্গভবন সংলাপের আমন্ত্রণ জানায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির ডাকা  এ সংলাপকে কয়েকটি রাজনৈতিক দল লোক দেখানোর সংলাপ বললেও শেষ মূহুর্তে আওয়ামী লীগের ক্যারিশমেটিক সিদ্ধান্তে ইউটার্ন নিয়েছে সব দলের রাজনৈতিক সমীকরণ। বিশেষ করে সব রাজনৈতিক দলের চাওয়া ও সুশীল সমাজের ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের দাবি গতকাল সোমবার মন্ত্রীপরিষদে পাস হয়েছে এবং  সে আইনে বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এমতাবস্থায় সার্চ কমিটি ও নির্বাচক কমিশনে কে কে থাকবে, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বলা হয়ে থাকে যে, কামান না দাগানোর ১০১টি কারণ থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু বারুদ না থাকলে বাকি একশটি কারণ জানারই দরকার নেই৷ তেমনি একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলো একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন ৷ সেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গত ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টিকে দিয়ে শুরু হওয়া রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ গতকাল শেষ হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনার মাধ্যমে। এর আগে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপ বর্জন করে। প্রথম দিকে অনেকেরই মনে হচ্ছিল সংলাপ বুঝি জলে যাচ্ছে। দিন চারেক আগেও মনে হচ্ছিল রাজনীতির গন্তব্য অনিশ্চিত। কিন্তু এক সময়ে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ করা আন্দালিব রহমান পার্থের দল বিজেপির সংলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্জন অর্জনে ইউটার্ন নেয়। আসলে রাজনীতির কৌশল কখন কোন পথে হাঁটতে শুরু করে তা বলতে পারা খুবই মুশকিল। বিএনপিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় না আসলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টিসহ বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি রাষ্ট্রপতির আহ্বানে বঙ্গভবনে নিজেদের কথা বলে যায়। 

সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ইসি শক্তিশালীকরণসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়ে কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি আইন প্রয়োজন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ এবং সে আইন প্রণয়নের খসড়া ইতোমধ্যে মন্ত্রীপরিষদে পাসও হয়েছে। খসড়ায় যেহেতু বলা হয়েছে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, কাজেই সংলাপের পরবর্তী ধাপ সার্চ কমিটি হবে এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। সেই নির্বাচন কমিশন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলেই সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো আশ্বস্ত করেছেন। তবে ক্ষমতাসীন দলের আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছে না বিএনপিসহ কয়েকটি দল। এরকম পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, রাষ্ট্রপতি যদি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারেন, তাহলে প্রথমেই হোঁচট খাবে বিএনপিসহ সংলাপ বর্জনকারী দলগুলো। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সঠিক ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা গেলে তা সব মহলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

তবে বিএনপির হুমকি-ধামকিও খুব একটা আমলে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের নেতারা। এমনকি বিএনপিসহ সংলাপ বর্জনকারী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করলেও শেষ পর্যন্ত সেটি নির্বাচনের পথে কোন বাঁধা হবে না বলেও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল মহল মনে করছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভিত্তিকই হবে। ইতোমধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বে গঠিত নতুন গণঅধিকার পরিষদ আগামী  নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দলও নির্বাচনে আসবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিএনপির ভেতরেও গৃহযুদ্ধ চলছে। দলটির একটি অংশ বিশেষ করে তারেক পন্থীরা নির্বাচনে আসতে না চাইলেও তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনের পক্ষে বলে জানা গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি রাজনৈতিক সংলাপ নিঃসন্দেহে অর্থবহ উচিত। রাষ্ট্রপতি দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ এবং তিনি জাতির অভিভাবক। তিনি যখন এ ধরনের বৈঠক করেন তখন সেই বৈঠকটি অবশ্য অর্থপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে এবার বিএনপিসহ কয়েকটি দল সংলাপে যায়নি। যতই ভিন্নমত পোষণ করেন না কেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংলাপের বিকল্প কিছুই নেই। আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সংকট নিরসনের ওষুধ লুকায়িত আছে। ফলে যারা বর্জন করেছে তাদের বর্জন করাটি উচিত হয়নি। আবার উল্টো দিকে আওয়ামী লীগ ব্যতীত যেসমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এবারের সংলাপটি হয়েছে, সেসমস্ত দলগুলো বাংলাদেশের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াতে কতটুকু অবদান রাখতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে বিশ্লেষকদের।
 
বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচন পছন্দ করেন এবং ভোটের মাধ্যমে মতপ্রকাশ করার এই সংস্কৃতি দেশের গণতন্ত্রের জন্য আশাবাদের একটি জায়গা। আর এই নির্বাচন কার্য পরিচালনা করা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। কিন্তু বিগত কিছু নির্বাচনের কারণে জনমনে নানা আশঙ্কা আর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বর্তমান ইসির গ্রহণযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে খোদ ইসির ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। এরকম পরিস্থিতিতে আমরা এখন রাষ্ট্রপতির দিকে তাকিয়ে আছি। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে। তার আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন অত্যাবশকীয়। ফলে নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সার্চ কমিটি গঠিত হবে। এখন পর্যন্ত যাই হোক না কেন, এগুলোকে কোনো বিষয় বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা। বরঞ্চ তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশনে কারা বসছে, সেটিই হলো আসল বিষয়। ইসি যদি নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে কাজ করে এবং তারা যদি ব্যক্তিত্ববান হন, তাহলে কে বর্জন করলো, কে আসলে সেটি ম্যাটার করবে না এবং শেষ পর্যন্ত সব দলই ইসিকে গ্রহণ করবে। এমতাবস্থায় একটি নিরপেক্ষ ইসি গঠনই এখন সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

ইসি   রাষ্ট্রপতি সংলাপ   আওয়ামী লীগ   বিএনপি   জাতীয় পার্টি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না: রিজভী

প্রকাশ: ০৬:৩৫ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি কেনেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই দাবি করেন।

নিজের পুরনো স্মৃতি তুলে রিজভী বলেন, “আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া। বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বললো, ‘কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে।’ আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ি পুরনো হলে সেটা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতে দেয়।

রিজভী বলেন, ‘এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বুনন করা যে ফসল সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করবো, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয় সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয় সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পরবে। কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হবো না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হব না। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’-এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনাসভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, গুম-খুন হওয়া পরিবারের মধ্যে চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পরে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের হাতে তারেক রহমানের ঈদ উপহার তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রুহুল কবির রিজভী   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

তৃণমূলে তছনছ আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। 

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সঙ্কট শুরু হয়েছিল বহু আগে থেকেই। বিশেষ করে যখন আওয়ামী লীগের ভিতর হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ছিল এবং দলের তৃণমূল এবং পরীক্ষিত নেতাদেরকে বাদ দিয়ে তারা নিজেরাই বিভিন্ন পদ পদবী দখল করছিল, সেসময় আওয়ামী লীগে তৃণমূলে বিভক্তি শুরু হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলে অনুপ্রবেশকারীদেরকে চিহ্নিত করা এবং বিএনপি-জামায়াত থেকে যারা এসেছেন তাদের বাদ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। এভাবে আওয়ামী লীগ একসময় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি হলো পুরনো আওয়ামী লীগ, যারা ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের সাথী। অন্যটি হলো সুবিধাবাদী, চাটুকার আওয়ামী লীগ, যারা ২০০৯ এর পরে বিভিন্ন দল থেকে নানা রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় আওয়ামী লীগে যোগদান করেছিলেন। 

গত নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। নির্বাচনের আগে আগে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেয়। নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তাদেরকে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর এটি আওয়ামী লীগের ভিতর একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতারাই তাদের পরিচয় ব্যবহার করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। এবং ৫৮ টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ধরাশায়ী করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভিতর বিভেদ এবং অনৈক্য ছড়িয়ে পড়ে। 

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচনের পরপরই এই বিভক্তি দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি একাধিক বক্তৃতায় দলের নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনের বিভক্তি পাশ কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকেও এ ব্যাপারে আহ্বান জানানো হয়। এর পর ডাকা হয় বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু তারপরও বিভক্তি কমে না। 

আওয়ামী লীগের বিভক্তি যেন আর ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করেছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, এর ফলে উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমবে। কিন্তু উন্মুক্ত নির্বাচনে বিভক্তি কমেনি, বিভক্তি আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় বিভক্তি শুধু প্রকাশ্য রূপই ধারণ করেনি, একটি সহিংস উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্টি করেছে। যেকোন সময় যেকোন উপজেলায় যদি আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের সহিংসতা ঘটে তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। 

আওয়ামী লীগের এই বিভক্তি মেটানোর জন্য, তৃণমূূলকে সংগঠিত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও এখন দায়িত্ব গুটিয়ে নিয়েছেন। 

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, এখন রোজার সময় এজন্য তারা সাংগঠনিক বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন না। কিন্তু ১৫২ টি উপজেলায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই উপজেলাগুলোতে সঙ্কট-সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করছে। সামনের দিনগুলোতে এই সহিংসতা কাটাতে না পারলে তৃণমূল আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় সর্বনাশের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।   


তৃণমূল আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুলই হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মঈন খান মহাসচিব

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন। 

বেশ কিছুদিন ধরে, বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে বিএনপিতে পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছিল। যেহেতু বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ এবং তারেক জিয়া লন্ডনে পলাতক সেজন্য এমন একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার দাবি উঠেছিলো যিনি দলের ভেতর আছেন এবং দলের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে সময় দেন। এরকম বাস্তবতা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম সামনে এসেছিলো। কিন্তু বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে প্রচন্ড বিরোধীতাও ছিলো। 

বিএনপির অনেক নেতাই বলছিলেন যে, জিয়া পরিবারের নামেই বিএনপি চলে, জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপি কয়েক টুকরো ভেঙ্গে যাবে। তবে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সাম্প্রতিক সময়ে দলের নির্বাহী নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেন। যেহেতু তিনি লন্ডনে থাকছেন, দলের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিতে পারছেন না। সেজন্য তিনি দলের উপদেষ্টা হিসেবে থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করার পরেই বিএনপিতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। 

অন্যদিকে খালেদা জিয়াও যেহেতু দলের দায়িত্ব এখন পালন করতে পারছেন না সে কারণে তিনি দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকার ব্যাপারে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া এ ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিলেও সকলে অপেক্ষা করছিলেন যে, এই ব্যাপারে বেগম খালেদা জিয়ার মনোভাব কি হবে। 

গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো এবং সেখানে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে বিএনপির এই নতুন মেরুকরণের প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সে সময় বেগম জিয়ার উত্তর ছিলো ইতিবাচক। তিনি এখন মোটেই রাজনীতিতে আগ্রহী নন এবং দলের স্বার্থে যেটি নেতারা ভালো মনে করেন সেটিই করার ব্যাপারেই তিনি সবুজ সংকেত দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর ফলে বিএনপিতে এখন পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আর কোন নিয়ন্ত্রণের বাঁধা থাকলো না। তবে এ পরিবর্তন প্রক্রিয়া বিএনপি কিভাবে করবে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, এ পরিবর্তন দুভাবে হতে পারে। প্রথমত, তাৎক্ষণিকভাবে এ পরিবর্তন করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মঈন খান হতে পারেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। তবে বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, বিএনপিতে এত বড় পরিবর্তন কোন সম্মেলন ছাড়া করা উচিত হবে না। তারা মনে করছেন যে, যথাশীঘ্র উচিত বিএনপির সম্মেলন ডাকা উচিত এবং এ সম্মেলনে সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপিতে নতুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব নির্ধারণ করা প্রয়োজন। 

তবে বিএনপিতে এ নিয়ে একটা প্রবল বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। অনেকে মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়ার বাইরে বিএনপিতে যদি কেউ নেতৃত্ব নেন তাহলে বিএনপির মধ্যে অনৈক্য দেখা দিতে পারে। এখন যেমন বেগম জিয়া বা তারেক জিয়াকে সকলে মানেন তখন হয়তো এরকম পরিস্থিতি নাও হতে পারে। এসমস্ত বাস্তবতাগুলো বিবেচনা করেই বিএনপির সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন।   

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর   বিএনপি   ড. মঈন খান  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দায়িত্ব নিবেন ব্যারিস্টার খোকন!

প্রকাশ: ০৩:৪৬ পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের চিঠির বিষয়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সংগঠনের দেওয়া চিঠিতে পুনর্নির্বাচনের দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। তবে  আমি নির্বাচিত, দায়িত্ব নেওয়া বা না নেওয়ার কী আছে? কে কী বললো, সেটার দেখার বিষয় নয়। আমার পরাজয়ের কোনো ইতিহাস নাই। সে সময় তারা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা না হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে জয়ী হতে পারতাম।’

এ সময় নিজের দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি। মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের ফোরামের একজন নেতার ভূমিকা রহস্যজনক। আমরা তার সম্পর্কে অনেক গুজব শুনে যাচ্ছি। খুব ইমপর্টেন্ট, শক্তিশালী নেতা। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার আঁতাত ছিল কিনা- এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে খুব গুজব আছে। আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি এ ব্যাপারে কি করা যায়।’ তবে এ সময় সেই নেতা কে সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি ব্যারিস্টার খোকন।

উল্লেখ্য, গতকাল ২৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদের নির্বাচনে বিএনপির প্যানেল থেকে বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে চিঠি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র কেন্দ্রীয় নেতা, উপদেষ্টামণ্ডলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিগত ৬ ও ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের পর গত ১০মার্চ ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ন্যায়সংগত যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, আপনারা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ মেয়াদকালের দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে দলীয় এই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে পালন করবেন।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভোট ডাকাতি জায়েজ করতে আপনাদের নামকাওয়াস্তে বিজয়ী দেখানো হয়েছে। আইনজীবী সমাজ ও দেশের আপামর জনগণ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারটি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে সম্পাদক পদে শাহ মঞ্জুরুল হকসহ ১০টি পদে আওয়ামী লীগের প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী বিএনপির অন্য তিনজন হলেন- সৈয়দ ফজলে এলাহি অভি, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের প্যানেল থেকে বিজয়ী অন্য ৯ জন হলেন- সহসভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও ড. দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন, ট্রেজারার পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনছারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও হুমায়ুন কবির (পল্লব), সদস্য পদে রাশেদুল হক খোকন, মো. রায়হান রনী, মো. বেল্লাল হোসেন (শাহীন) ও খালেদ মোশাররফ (রিপন)।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি   ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলায়ও পড়ছে সংসদ নির্বাচনের ছায়া

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।

তবে দলীয় প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিতে চায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১১টি নিবন্ধিত দল। আর দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—তপশিল ঘোষণার পরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাঁচটি রাজনৈতিক দল। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।

দেশে মোট উপজেলা ৪৯৫টি। আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। এরপর আগামী ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

উপজেলা নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে প্রার্থী নির্ধারিত হবে, তা বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র দুই ধরনের সুযোগই রাখা হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে অধিকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে ২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপিসহ ১০টি দল। দলীয় প্রতীকে অংশ নেবে ১১টি দল। প্রতীক ছাড়া অংশ নেওয়ার পক্ষে দুটি। এখনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই নিবন্ধিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীও ঠিক করতে শুরু করেছে।

জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে আটটি নিবন্ধিত দল। একটি ছাড়া সবগুলোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ ছাড়া সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

জাপার দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন, দলীয় প্রতীকে তারা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটিতেও তারা প্রার্থী দিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে কোনো কোনো দল।

এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও বিএনপি পরে উপজেলার ভোটে অংশ নিয়েছিল। যদিও তখন পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার বিধান চালু হয়নি। পরে ২০১৯ সালে উপজেলায় দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও বিএনপি সেখানে প্রার্থী দেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন তারা।

তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘দল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার একটা মনোভাব আছে। যারা অংশ নিতে চায় তাদের আমরা উৎসাহিত করছি। তবে দলীয়ভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর দেশে ফিরলে তখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি আরেক নতুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।

এ তথ্য জানিয়ে দলটির মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হলে, সেখানে অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তবে আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির এ ব্যাপারে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দলীয় প্রতীকে, নাকি প্রতীক ছাড়া যাব, তখন সে সিদ্ধান্তও হবে।’

কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। শিগগির উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গেলে দলীয় হাতঘড়ি প্রতীকে ভোট করবেন তাদের প্রার্থীরা।’

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘তারা দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

তবে চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ টাকা জামানত নির্ধারণ সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আগে জামানত ছিল ১০ হাজার টাকা। তাই জামানতের টাকা আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য শিগগির রিট করা হবে।’

ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাবেন না। তবে দলের কোনো প্রার্থী চাইলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, কোনো বাধা থাকবে না।’

দলীয় ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ কংগ্রেস। ডাব প্রতীকের দলটির চেয়ারম্যান কাজী রেজাউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাব।’

তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।

দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশ নেবে গণতন্ত্রী পার্টি। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়াই হওয়া উচিত।’

ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা নির্বাচন করবে দলীয় হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। একই অবস্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।

নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবিসহ পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পরিবেশ না থাকায় আমরা উপজেলা নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি না।’

দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে চায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। একই পথে হাঁটছে তরীকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমাদের কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে সুযোগ দেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অবস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলগুলোর অবস্থান ছিল উপজেলা নির্বাচনেও সে রকমই আছে। অর্থাৎ যারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা এবারের নির্বাচনেও শরিক হচ্ছে। তবে নির্দলীয় নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে হয়তো প্রার্থী কিছুটা বাড়তে পারে। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিতে পারেন।’


নির্বাচন কমিশন   ইসি   বিএনপি   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন