অঘটনের আশঙ্কা থাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে
অনিরাপদ ভাবছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ কারণে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ করতে
পল্টন এলাকার বাইরে যেতে চায় না দলটি।
তাদের ধারণা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অনেকটাই
খাঁচার মতো। সেখানে সমাবেশে কোনো মহল ‘অঘটন’ ঘটালে এর দায় বিএনপির ওপর চাপাতে পারে
সরকার। এ ছাড়া ১১ দিন আগেই সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে পুলিশের লিখিত অনুমতি, তার আগে
থেকে এখানেই সমাবেশ করার জন্য সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্য এবং বিএনপির সুবিধার কথা
বলে ছাত্রলীগের সম্মেলন দুই দিন এগিয়ে আনার ঘটনা বিএনপির সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে
বলে মন্তব্য করছেন তারা।
ফলে, ১০ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের
পরিবর্তে নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ
সমাবেশে এই আহ্বান জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘দয়া করে
সংঘাতের পথে যাবেন না। নয়াপল্টনেই যেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক মাস আগে দলের
পক্ষ থেকে ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি যে আমরা নয়াপল্টনের সামনে
বিভাগীয় সমাবেশ করতে চাই। এখানে বহু সমাবেশ হয়েছে। এখানে জাতীয় সমাবেশ হয়েছে। মহাসমাবেশ
হয়েছে। সেখানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেছেন। ২০-দলীয় জোটের সমাবেশ হয়েছে। কোনো দিন
কোনো সমস্যা হয়নি। সুতরাং আমরা যে চিঠি দিয়েছি, অনেক ভেবেচিন্তে দিয়েছি। এটা ঢাকা বিভাগীয়
সমাবেশ, এটা জাতীয় সমাবেশ নয়।’
যানজট ও জনদুর্ভোগ হতে পারে, এ কারণে
নয়াপল্টনে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে ডিএমপি যে কথা বলেছে, সেটাকে ‘খোঁড়া যুক্তি’ দাবি
করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই দিন শনিবার সরকারি ছুটির দিন। সেদিন যানবাহনের জট থাকে না
এখানে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন,
‘সমাবেশের জন্য যে জায়গা আপনারা দিতে চান, সেখানে চারদিকে দেয়াল দিয়ে আবদ্ধ করা। একটা
মাত্র গেট। যে গেট দিয়ে একজন মানুষ ঠুকতে পারে, বেরোতে পারে না।’ তিনি দলের নেতা-কর্মীদের
উদ্দেশে বলেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে গণসমাবেশ সফল করতে হবে।
এদিকে গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে
এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি যাতে
সুন্দরভাবে সমাবেশ করতে পারে, সে জন্যই ১০ জানুয়ারি তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের
অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখানে দুরভিসন্ধি বা বিশৃঙ্খলার প্রশ্নই আসে না। তিনি বলেন, বিএনপি
বিশৃঙ্খলা করলে ভুল করবে। বিশৃঙ্খলা করলে বরদাশত করবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিএনপির সূত্র জানায়, এরই মধ্যে বিএনপির
একটি প্রতিনিধিদল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শন করে গেছে। তাদের একজন প্রথম আলোকে জানান,
বর্তমানে দেয়ালে ঘেরা উদ্যানে যেভাবে খাঁচার মতো আবদ্ধ, তা তাঁদের জন্য অনিরাপদ। বিশেষ
উদ্যানে ঢোকা ও বের হওয়ার পথ এতটাই সংকীর্ণ যে ভেতরে কোনো অঘটন ঘটলে লাখো মানুষের সমাবেশে
তা মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এটাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঝুঁকিপূর্ণ বা অনিরাপদ
ভাবার অন্যতম কারণ।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা বলেন,
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজেদের অনিরাপদ ভাবার মূল কারণ, সরকার ও প্রশাসনের ওপর অবিশ্বাস।
আর পল্টন এলাকাকে কিছুটা নিরাপদ ভাবা হচ্ছে কারণ, এ এলাকা খোলামেলা। কোনো অঘটন ঘটলে
লোকজন সহজে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পাবে।
বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আজ বৃহস্পতিবার
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে দেখা করতে যাবে বলেও
দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
বিএনপির নেতারা বলছেন, এ পর্যন্ত তাঁরা
আটটি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছেন। কুমিল্লা ছাড়া প্রতিটি সমাবেশ ঘিরেই বাধা-প্রতিবন্ধকতা
ছিল। তারপরও প্রতিটি গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর পর
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশের মধ্য দিয়ে এই বিভাগীয় কর্মসূচি শেষ হবে।
গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানির প্রতিবাদ
গতকাল নয়াপল্টনে বিক্ষোভ সমাবেশটি ছিল
পুলিশের মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও হয়রানির প্রতিবাদে। আয়োজন করে
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে বলেন,
হঠাৎ সরকার এত ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছে যে তারা বিভাগীয় সমাবেশ বন্ধ ও আন্দোলন দমন করার
জন্য এখন মরিয়া হয়ে আক্রমণ করছে। গায়েবি মামলা দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা নিচ্ছে। বাড়ি বাড়ি
গিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে, গ্রেপ্তার করছে। তিনি বলেন, ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত সাত
থেকে আট দিনের মধ্যে ১৬৯টি মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় আসামি হিসেবে বিএনপির ৬ হাজার
৭২৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫০ জনকে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাতের বেলায়
নেতা-কর্মীদের পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে
যে কায়দায় দেশের মানুষের আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল, সেই একইভাবে আবার তারা শুরু
করেছে। তবে মানুষকে স্তব্ধ করে রাখা যায়নি। আজকে মানুষ জেগে উঠেছে।
গায়েবি মামলা দেওয়া বন্ধ করার জন্য
পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রতিটি মামলার হিসাব নিচ্ছি।
সাক্ষীদের কথা শুনছি। কিছুই হয়নি। সাজিয়ে সাজিয়ে আর মামলা দেবেন না। হিসাব একদিন হয়।
নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আবার জনগণের নিষেধাজ্ঞা যদি আসে, তখন আরও বড় বিপদ সৃষ্টি হবে।’
লুটপাট করে ব্যাংক খাত শেষ করে দিয়েছে
বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা
কোথায় গেল? ভুয়া কোম্পানি তৈরি করে টাকা নিয়ে চলে গেছে। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের
কিছুই হয় না। হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, কিছুই হয় না।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী
কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, দলের
জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, প্রচার সম্পাদক
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী (এ্যানি) প্রমুখ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির
আহ্বায়ক আমানউল্লাহ। সঞ্চালনা করেন মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ
বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম।
বিএনপি গণসমাবেশ নয়াপল্টন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপনির্বাচন বিএনপি আওয়ামী লীগ উকিল আব্দুস সাত্তার
মন্তব্য করুন
বিএনপি রাজশাহী বাংলা ভাই তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
গণ অধিকার পরিষদ রেজা কিবরিয়া নুরুল হক নুর
মন্তব্য করুন
চলমান যুগপৎ আন্দোলন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণে যুগপৎ আন্দোলন ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।’
রোববার (২৯ জানুয়ারি) ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। পরে বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, মোহাম্মাদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু বৈঠকে অংশ নেন বলে জানান দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলন নিয়ে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে এ বৈঠক হয়। এতে চলমান আন্দোলন ও আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সরকার পতনের আন্দোলন আরও বেগবান করতে আলোচনা হয়েছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুল। ছবি: সংগৃহীত
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণের কাছে স্পষ্ট, একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। মানুষ জানে না তারা ভোট দিতে পারবে কি না। এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশের তিনদিন আগে থেকে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমাদের কোনো কর্মসূচি করতে দিতে চান না তারা। আর তাদের কর্মসূচিতে রাষ্ট্রীয় সব শক্তিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। মুখে বলে একটা, বাস্তবে করে আরেকটা। দেশের পুরো চরিত্রটাই বদলে দিয়েছে। গোটা দেশকে অশান্ত অবস্থায় নিয়ে গেছেন ক্ষমতাসীনরা।’
বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের মোস্তফা জামাল হায়দার, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, সৈয়দ এহসানুল হুদা, শাহাদাত হোসেন সেলিম, মো. আবু তাহের, গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, রাশেদ প্রধান, আব্দুল করিম, আবুল কাশেম, মো. তফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটি বৈঠক মির্জা ফখরুল
মন্তব্য করুন
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এ মাসের পরেই। কিন্তু উপনির্বাচনের মাঠে নেই বিএনপি। এর আগে নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত শেখ রেজাউল ইসলাম রেজু প্রার্থী হয়েছিলেন, কিন্তু ভোটযুদ্ধে পাশ করতে পারেননি। কিন্তু এবার বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এসব উপনির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জয়জয়কার দেখা যাবে এটাই স্বাভাবিক।
বার বার মত পাল্টাচ্ছে ‘গণতন্ত্র মঞ্চের’ অন্যতম শরিক দল ডাকসু’র সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ। গত ১৯ জানুয়ারি এক জরুরী বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে রেবিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও সে সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে গণ অধিকার পরিষদ। ১৯ জানুয়ারির ওই বৈঠকে পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়াও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। অর্থাৎ গণতন্ত্র মঞ্চ ভেঙে যাওয়া যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল এখন আর সেটি হচ্ছে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে কেন বার বার পরিষদ মত পাল্টাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।