দেশের রাজনীতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সঙ্কটের শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, সেটা কেটে যাবে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সোমবার (৬ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা। সচিবালয়ের সভাকক্ষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন।
ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে বিরোধের কারণে রাজনীতিতে যে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, সেটা কেটে যাবে। তবে বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ফিরবে না’ বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো মেঘ আসে, সেটা আমাদের দেশে নতুন নয়। কী হবে সেটা পূর্বানুমাণ করে তো বলা যাবে না। তবে আমি আশাবাদী মানুষ, মেঘ কেটে যাবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়; কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটেনি যে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে এবং এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে। সংবিধানের বাইরে কোনো ছাড় দেব না। অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই হবে। সংবিধান পরিবর্তন করে কারও সঙ্গে আপস করতে হবে এমন বিপদে পড়িনি। এ সংবিধান কাটাকাটির কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও প্রয়োজন হলে কথা বলার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘সেক্ষেত্রে তিনিও যেমন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করতে পারেন, তেমনি বিএনপি নেতাও তাকে কল করতে পারেন। তবে যাই হোক না কেন, সব প্রকাশ্যে হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘গোপনে’ কিছু তারা করেন না।’
নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা বা ‘গোপনে’ কোনো আলোচনা হচ্ছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, ‘আমরা যা করি প্রকাশ্যে করি, গণতন্ত্রে ব্যাক ডোরে (গোপনে) আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। দরকার হলে আমিই ফখরুল সাহেবকে ফোন করব, না হয় উনি দেবেন।’
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যে দুই পক্ষকে সংলাপে বসে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্যে গত শনিবার (৪ মার্চ) বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরুর আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।
গত শনিবার (৪ মার্চ মান্না বলেন, ‘তথাকথিত সংলাপের কথাবার্তা বাজারে ছাড়ছেন। কার সঙ্গে সংলাপ? যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে সংলাপে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) বললেন, তার স্বর্গীয় পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, তার কসম খেয়ে বললেন- আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আমি বলছি আপনারা নির্বাচনে আসেন। আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করব। সেই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা (জনগণ) দেখেছেন। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (প্রধানমন্ত্রী) না যাচ্ছেন, তার এ সমস্ত কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারপর আমাদের কথা আছে।’
সচিবারয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তরকালে- বিএনপির আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক সংকট কোনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, ‘বিএনপির আন্দোলনের হুমকি তারা ‘পাত্তা দিচ্ছেন না’। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়াকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, বিএনপির আন্দোলন বাস্তবে ‘যত গর্জে তত বর্ষে না’। তর্জন গর্জনই সার। পদযাত্রা, নীরব পদযাত্রা থেকে এখন তারা নিঃশব্দ মানববন্ধনে। আন্দোলনের যতটুকু গতি আশা করেছিল, সেটা নেই। আন্দোলনে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ কিছুটা থাকলেও জণগণের অংশগ্রহণ নেই। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। আর আন্দোলন করলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব, সহিংসতা করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা করার প্রয়োজন তাই করব।
কাদের বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ অচিরেই থেমে যাবে এমন নয়। ফলে সারা দুনিয়াতে সংকট আছে, বাংলাদেশেও সংকট আছে। আমাদের বেশি দামে আমদানি করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সংকট সামাল দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সরকারের সেই চেষ্টার ওপর জনগণের আস্থা আছে। তারা (বিরোধী রাজনৈতিক দল) উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে সাড়া পায়নি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সঙ্কট শঙ্কা ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।